দাস-দাসীদের নিয়ে
প্রশ্নের উত্তরঃ
দীর্ঘদিন ধরে
আমাদের পেইজের অনেক দ্বীন ভাই ও বোনদের প্রশ্ন ও অনুরোধের প্রেক্ষিতে আজকে দাসপ্রথা
সম্পর্কে কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি।
কোন ‘জিহাদে’ বিজয় লাভের ফলে কাফের পুরুষ বা নারী
যদি যুদ্ধবন্দী হিসেবে মুসলমানদের হাতে
ধরা পড়ে, তাহলে মুসলমানদের ‘খলিফা’ বা বৈধ নেতা সেই কাফেরদের ব্যপারে
নীচের যেকোন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনঃ
(ক) প্রাপ্ত বয়ষ্ক কাফের পুরুষদের কৃত অপরাধের কারণে তাদেরকে হত্যা করতে পারেন।
(খ) কোন শর্ত ছাড়াই তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা করে তাদেরকে মুক্তি দিতে
পারেন।
(গ) মুক্তিপণের বিনিময়ে তাদেরকে মুক্ত করে দিতে পারেন।
(ঘ) কাফেরদের হাতে ধৃত মুসলমান বন্দীর বিনিময়ে তাদেরকে মুক্তি দিতে
পারেন।
(ঙ) তাদেরকে দাস ও দাসী হিসেবে বন্দী করে রাখতে পারেন।
উপরোক্ত পঞ্চম পদ্ধতিতে কোন কাফের যদি মুসলমানদের হাতে
ধরা পড়ে, তাহলে তাকে দাস/দাসী বানানো হবে। মুসলমানদের খলিফা বা বৈধ নেতা ‘মুজাহিদ’ বা মুসলমান যোদ্ধাদের মাঝে ‘গনীমত’ এর সম্পদ বন্টনের
ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী দাস-দাসী ভাগ করে দেবেন। এই হচ্ছে ইসলামে দাস বা দাসীর বিধান।
উল্লেখ্য, যুদ্ধে লব্ধ
দাস-দাসী কোন মুজাহিদ নিজে রাখতে পারেন, কিংবা তার
প্রয়োজনে অন্য কারো কাছে বিক্রি করতে পারেন। এইভাবে কেনা-বেচা বৈধ। সেই দাসী-দাসীকে যতদিন পর্যন্ত না তার
মালিক মুক্ত করে দিচ্ছে, তারা মালিকের কাছে বন্দী হিসেবে থাকবে।
.
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন, “কেনো তাদেরকে দাস-দাসী বানানো হবে? মানুষ
হিসেবে তাদের কি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার নেই।”
উত্তর হচ্ছে,
(১) তারা তাদের কৃত অপরাধ যেমন কুফুরী, শিরক, ইসলাম গ্রহণ
না করা, মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার কারণে আল্লাহর নাযিলকৃত শরিয়ত অনুযায়ী
স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার হারিয়েছে।
(২) ইসলামের বিরুদ্ধে কঠোর, যুদ্ধে আটক এমন শত্রুদেরকে যদি
মুক্ত করে দেওয়া হয়, তাহলে তারা ভবিষ্যতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে আবার যুদ্ধ করবে,
মুসলমানদের ক্ষতি করার চেষ্টা করবে।
(৩) নিজের জীবন ও সম্পদকে ঝুঁকিতে ফেলে আল্লাহ তাআ’লার মহান দ্বীনকে সমুন্নত করার জন্য
যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য অন্যান্য গনীমতের সম্পদের সাথে দাস-দাসী হচ্ছে মুজাহিদ
ভাইদের জন্য উপহার স্বরূপ।
(৪) দাস-দাসীদেরকে কাজে লাগিয়ে মুসলিমরা উপকৃত হবে।
(৫) দাসীর গর্ভ সঞ্চার দ্বারা মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি
পাবে।
উল্লেখিত কারণ সমূহের জন্য তাদেরকে হত্যা না করে তাদেরকে
বন্দী করে দাস-দাসী বানানো হবে, মুসলমানেরা তাদের দ্বারা উপকৃত হবে। কোন কাফেরকে
হত্যা না করে যদি তাকে দাস/দাসী বানানো হয়, তাহলে মূলত তার উপর অনেক বড় রহম করা হয়।
কেননা, যুদ্ধে ধরা পড়ার পর যদি তাকে ‘কাফের’ অবস্থায় সরাসরি হত্যা করা হয়, এমতাবস্থায় সে চির
জাহান্নামী হবে। আর যদি তাকে দাস/দাসী বানিয়ে রাখা হয়, তাহলে আশা করে যেতে পারে
যে, মুসলমানদের সংস্পর্শে এসে সে ইসলাম ধর্ম কবুল করে পরকালে মহা ভাগ্যবানদের
অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে।
কোন কাফের মহিলা, যে মুসলমানদের হাতে ধরা পড়েছে এবং কোন
মুসলমানের অধীনে দাসী হিসেবে রয়েছে,
ঐ দাসীর মালিকের জন্য সেই দাসীকে বিয়ে করে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে অথবা, বিয়ে ব্যতীত দাসীর মালিক
হিসেবে তার সাথে যৌন সম্পর্ক করতে পারে। ইসলাম এর অনুমতি দিয়েছে। দলীলঃ
(১) মহান আল্লাহ তাআ’লা মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হিসেবে ক্বুরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেনঃ
আ’উযুবিল্লা-হিমিনাশ শায়তানীর রাজীম। “যারা নিজেদের যৌন অঙ্গকে সংযত রাখে।
নিজেদের পত্নী অথবা অধিকারভুক্ত দাসী ব্যতীত;
এতে তারা নিন্দনীয় হবে না।” সুরা মুমিনুনঃ আয়াত ৫-৬।
(২) ‘আওতাস’ এর যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে ধৃত কাফের যুদ্ধ বন্দীদের সম্পর্কে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, “তোমরা
গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করো না,
যতক্ষণ পর্যন্ত না সে সন্তান প্রসব করে এবং যে নারী গর্ভবতী নয়, তার সাথে (সঙ্গম) করো না যতক্ষণ পর্যন্ত না
তার একটি ঋতুচক্র সম্পন্ন হয়।”
আবু দাউদঃ ২১৫৭, হাদীসটি
সহীহ, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ।
(৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ‘হুনাইন’ এর যুদ্ধের দিন বলেছিলেন,
“আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয় অন্যের ফসলে
পানি দেওয়া (অর্থাৎ কোন গর্ভবতী নারীর সাথে সঙ্গম করা)। এবং আল্লাহ ও আখেরাতে
বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয়, কোন যুদ্ধবন্দিনী নারীর সাথে সঙ্গম করা, যতক্ষণ
পর্যন্ত না এটা প্রতিষ্ঠিত হয় যে, সে গর্ভবতী নয়। এবং
আল্লাহ ও আখেরাতে বিশ্বাসী ব্যক্তির জন্য বৈধ নয়, বণ্টন
হবার পূর্বে গনীমতের কোন সম্পদ বিক্রয় করা।” আবু দাউদঃ ২১৫৮, হাদীসটি হাসান, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ।
উপরের ক্বুরআনের আয়াত এবং সহীহ হাদীস দ্বারা স্পষ্টভাবে
প্রমানিত হয় যে, মুসলমান পুরুষদের জন্য তার অধিকারভুক্ত দাসীর সাথে যৌন সম্পর্ক
করা জায়েজ।
দাস-দাসী নিয়ে কতগুলো প্রায়ই জিজ্ঞাস করা হয় এমন কতগুলো প্রশ্নের
উত্তরঃ
(১) একজন ব্যক্তি স্ত্রীর পাশাপাশি তার ইচ্ছা, সামর্থ্য ও
চাহিদা অনুযায়ী বৈধ উপায়ে প্রাপ্ত এক বা একাধিক দাসী রাখতে পারে। এতে তার স্ত্রীর
অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।
(২) একজন ব্যক্তির বৈধ উপায়ে প্রাপ্ত দাসীর সাথে বিবাহ ছাড়া
যৌন সম্পর্ক জায়েজ আছে, এটা ‘জিনা’ বা ব্যভিচার নয়। আল্লাহ তাআ’লা এর অনুমতি দিয়েছেন। এই নিয়ম কারো ভালো
লাগুক, বা খারাপ লাগুক, তাতে কিছু যায় আসেনা। আল্লাহ তাআ’লা যা বলেন, সেটাই চূড়ান্ত। আল্লাহর কোন
বিধানের ব্যপারে প্রশ্ন তোলা, তার সমালোচনা করা ‘কুফুরী’ কাজ। যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত
বিধানকে ঘৃণা করে, তার সমালোচনা করে কিংবা অস্বীকার করে, তাহলে সেই ব্যক্তি কাফের
হয়ে যাবে। যদিও সে নামায, পড়ে, যদিও সে রোযা করে এবং নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করে।
কিন্তু অন্তরে কুফুরী রাখার কারণে সে কাফের, চির জাহান্নামী হয়ে যাবে। আল্লাহ
আমাদেরকে হেফাজত করুন, আমিন।
(৩) মুসলমানেরা দুর্বল হয়ে যাওয়ায় এবং কাফেরদের সাথে নিয়মিত
জিহাদ চালু না থাকায় বর্তমান যুগে বিশ্বের কোথাও কোন দাস/দাসী
নেই। তবে ভবিষ্যতে যদি মুসলমানেরা শক্তিশালী হয় এবং কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে,
তাহলে কোন যুদ্ধবন্দী ধরা পড়লে মুসলমানদের ইমাম প্রথমে উল্লেখিত পাঁচটির যেকোন
একটি পদ্ধতি অবলম্বন করবেন। আর সে হিসাবে তখন মুসলমানদের হাতে পুনরায় দাস/দাসী
আসতে পারে।
(৪) বর্তমানে
যেই সমস্ত পুরুষ
ও নারীরা বাসা-বাড়িতে কাজ
করে এরা মোটেও দাস-দাসী নয়, এরা হচ্ছে কর্মচারী বা শ্রমিক। দাস-দাসী এবং কর্মচারী/শ্রমিক
সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।
(৫) কোন পুরুষ
যদি বাসা-বাড়িতে কাজের মহিলাদের সাথে যৌন সম্পর্ক করে এবং ইসলামী আদালাতে তা
প্রমানিত হয়, তাহলে তাকে ইসলামী দন্ড বিধি অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে। সে অবিবাহিত
হলে তাকে ১০০-টা দোররা মারা হবে। আর সে যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে রজম করে হত্যা
করা হবে।
(৬) দাস-দাসীর
বিধান ‘মানসুখ’ বা রহিত হয়ে যায়নি। যারা বলে দাসীর বিধান বর্তমানে রহিত হয়ে গেছে তার মনগড়া,
ভুল কথা বলে। হক্ক কথা হচ্ছে, দাস-দাসী বিদ্যমান না থাকায় এ সম্পর্কিত আয়াত ও
হাদীসগুলো বর্তমানে আমল করা হচ্ছেনা। তবে ভবিষ্যত যদি দাস-দাসী আসে, তখন এ
সম্পর্কিত আয়াত ও হাদীসের বিধানগুলো পুনরায় চালু হবে।
(৭) ইসলামী
শরিয়াত অনুযায়ী কোন দাসী তার মনিবের সাথে যৌন সম্পর্ককে অস্বীকৃতি জানাতে পারেনা,
যেমন কোন স্বাধীন মহিলা তার স্বামীকে না করতে পারেনা। মোহর দ্বারা বিয়ে করার
বিনিময়ে যেমন স্ত্রীর লজ্জাস্থানকে হালাল করে নেওয়া হয়, ঠিক তেমনি কোন দাসীর উপর
তার মনিবের ঠিক তেমনি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়।
(৮) হে মুসলমান
ভাই ও বোনেরা সাবধান! কাফেরদেরকে দাস দাসী বানানো সম্পর্কিত জ্ঞানের অভাবে অনেক
মুসলিম ইসলামের এই বিধানকে সমালোচনা করে বা ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখে, নিজের মনগড়া
অপব্যখ্যা দাঁড় করায়। একজন ইউটিউব বক্তা যে কিনা খৃস্টান থেকে মুসলমান হয়েছিলো,
কিন্তু ইসলামে দাসের বিধান পড়ে সে ২০১৬ সালে মুরতাদ হয়ে যায়। অথচ ইসলাম গ্রহণের পর
থেকে সে দীর্ঘদিন ধরে ইউটিউবে ইসলামের উপর লেকচার দিত এবং কাফের মুশরেকদের
বিরুদ্ধে ইসলামের পক্ষে কথা বলতো। অজ্ঞতা মানুষে বড় দুশমন, আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত
করুন, আমিন।
(৯) দাস-দাসী
সম্পর্কিত ইসলামের বিধি-বিধান অনেক দীর্ঘ ও ব্যখ্যাসাপেক্ষ। এ সম্পর্কিত সামান্য
কিছু কথা এখানে তুলে ধরা হলো। আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর দ্বীনকে সঠিকভাবে জানার ও
মানার তোওফিক দান করুন, আমিন।