অধ্যায়ঃ জামাতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলিমিন
__________________________________________
(১) জামাতে ইসলামী ও তাবলীগ জামাত, এই দুইটি দলের মূল
সমস্যা কোথায়?
(২) “দ্বীন কায়েম কর” কথাটির
তাফসীর কি?
(৩) ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড ও হামাসের
ব্যপারে আলেমদের ফতোয়া।
(৪) ইসলামে রাজনীতি? রাজনীতির নামে যা চলছে তা কি
ইসলাম? (পর্ব-১৪)।
(৫) রাফেজী শীয়া, ইসলামিক রাষ্ট্র ইরান এবং শিয়া প্রেমী
জামাত-শিবির, ইখোয়ানীদের হাকীকত।
(৬) ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য ‘জামাতী’ নেতাদের আপোষের নীতি।
(৭) ইসলামী
গণতন্ত্র?
(৮) গণতন্ত্র না করে মুসলিমরা কিভাবে ক্ষমতায় যাবে?
(৯) ইসলাম হরতাল সমর্থন করেনা।
(১০) শিয়াদের ঈমান-আকীদা কেমন?
(১১) সাহাবীরা সর্বক্ষেত্রে বিজয়ী ছিলেন, কিন্তু
বর্তমান কেনো আমরা প্রায় সব দেশেই পরাজিত?
(১২) মুহাম্মদ আল-আরিফী? সে কি কোন আলেম?
(১৩) আল-দাদ্দু, আত-তারিফী, আল-আরিফী
–
মুনহারিফুন, মানহাজে ইখোয়ানী।
(১৪) খোমেনীঃ মুসলমানদের মাঝে সমস্ত
রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দায়ী।
(১৫) বিক্ষোভ মিছিল, প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশান করা যাবে?
(১৬) মিযানুর রহমান আযহারী (পর্ব-১)।
(১৭) মিযানুর রহমান আযহারী (পর্ব-২)।
(১৮) মিযানুর রহমান আযহারী
(পর্ব-৩)।
(১৯) মিযানুর রহমান আযহারী
(পর্ব-৪)।
(২০) মিযানুর রহমান আযহারী একজন “ইউনিক” বক্তা।
(২১) জামাত
শিবিরের আসল পরিচয় (পর্ব-১)।
(২২) জামাত
শিবিরের আসল পরিচয় (পর্ব-২)।
(২৩) জামাত
শিবিরের আসল পরিচয় (পর্ব-৩)।
(২৪) মওদুদীর ভ্রান্ত আকিদাহ (পর্ব-১)।
(২৫) মওদুদীর ভ্রান্ত আকিদাহ (পর্ব-২)।
(২৬) মওদুদীর
ভ্রান্ত আকিদাহ (পর্ব-৩)।
(২৭) মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব-৪)।
(২৮) মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব-৫)।
(২৯) মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব-৬)।
(৩০) প্রশাসন, নেতৃত্ব ও মুসলিম শাসক
নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর।
(৩১) তারেক মনোয়ারঃ মিথ্যুক জামাতী বক্তার কেরামতির নামে ভন্ডামী (পর্ব-১).....................
(৩২) তারেক মনোয়ারঃ মিথ্যুক জামাতী বক্তার কেরামতির নামে ভন্ডামী (পর্ব-২).....................
(৩৩) Compulsive liar তারেক মনোয়ার.........................................................................
(৩৪) কাসেম সোলায়মানির মৃত্যু (পর্ব-১)
(৩৫) কাসেম সোলায়মানির মৃত্যু (পর্ব-২)
(৩৬) ফেতনার সময় দুই প্রকার মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
(৩৭) ইমাম মাহদী নিয়ে বিভ্রান্ত আরেক বক্তা
সাদিকুর রহমান আযহারী।
(৩৮) ইখোয়ানী এবং খারেজী মানহাজের
বক্তা ও লিখকদের নাম।
(৩৯)
কাতার
মুসলিম বিশ্বে বিশৃংখলা সৃষ্টির জন্য উস্কানিদাতা।
(৪০) ইখোয়ানুল
মুসলিমিনের পরিচয়।
(৪১) দেশের সব পাপ মুছে ফেলার জন্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন করা জরুরী?
(৪২) সংবাদ মাধ্যম বা মিডিয়াঃ “ইসলামের শত্রুদের হাতে শক্তিশালী
একটি অস্ত্র”।
(৪৩) মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব-৭)।
(৪৪) আবু হুরায়রার দুই ব্যাগ হাদীস নিয়ে বাতেনী মতালম্বীদের
বিভ্রান্তি।
(৪৫) ক্বুরআন ও হাদীসে মিছিল করার কোন দলীল আছে?
(৪৬) দেশের জনগণ খারাপ হয়ে গেলে তাদের উপর আযাব হিসেবে
সবচেয়ে খারাপ লোকদেরকে তাদের শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়।
(৪৭) সব দোষ শুধু রাজা-বাদশাহদের...গালি দেওয়া ছাড়া আমাদের কি করার আছে?
(৪৮) আবুল আলা
মওদুদীর রহমতের
জন্য দুয়া করা যাবে?
(৪৯) সালাউদ্দিন মাক্কির মানহাজ সম্পর্কে জানতে চাই?
(৫০) সাহাবাদের সমালোচনা করা বা তাঁদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা
হারাম এবং কবীরাহ গুনাহ।
(৫১) কোন ব্যক্তি মাজলুম অবস্থায় নিহত হয় তাহলে তার
দলের লোকেরা কি ক্ষমতায় আসবে?
__________________________________________
জামাতে ইসলামী ও তাবলিগ জামাত, এই দুইটি দলের মূল সমস্যা
কোথায়?
মানুষের আমল, মুখের দাবী এইগুলো দেখে ধোঁকায় পড়বেন না। কারণ, কারো আকীদা (ধর্মীয় বিশ্বাস) যদি খারাপ হয়,
তাহলে সে যতই আমল করুক, তার সমস্ত আমল বর্বাদ হয়ে যাবে। অথবা কেউ আহলে সুন্নতের মানহাজ বা মূলনীতির বিরোধীতা করে
অথবা বিদআ’তীদের মানহাজে চলে, তাহলে সে ৭২টা বিদআ’তী, জাহান্নামী দলের মধ্যে গণ্য হবে। তাই কোন ব্যক্তি বা
দলকে বিচার করতে হলে সবার আগে তাদের আকীদাহ কেমন, সেটা দেখতে হবে। তাদের আকীদাহ যদি কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবাদের অনুরূপ হয় তাহলে তারা
নাজাতপ্রাপ্ত দলের মধ্যে গণ্য হবে। কিন্তু যেই দল কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবাদের আদর্শের বিপরীত চলে, তারা দেখতে যতই ধার্মিক বা আমল
করনেওয়ালা বলে মনে হোক, তারা ভ্রান্ত দলের লোক বলেই গণ্য হবে।
বিংশ শতাব্দীতে জন্ম নেওয়া বর্তমানে বহুল প্রচলিত এমন দুইটি
দল হচ্ছে ‘জামাতে ইসলামী’ ও ‘তাবলিগ
জামাত’। তাদের প্রতিষ্ঠাতা
হচ্ছে যথাক্রমে মাওলানা আবুল আলা মওদুদী ও মাওলানা ইলিয়াস সাহেব। তাদের ও তাদের প্রতিষ্ঠা করা দলের কি সমস্যা রয়েছে,
অত্যন্ত সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেছেন শায়খ আব্দুর রাক্বীব, যা নীচে বর্ণনা করা হলো। আল্লাহ শায়খকে উত্তম প্রতিদান দিন, আমিন।
__________________________________________
নীতি ভুল, তো সব ভুল!
সংকলন করেছেনঃ শায়খ আব্দুর
রাক্বীব বুখারী হা’ফিজাহুল্লাহ (কিছুটা সম্পাদিত)।
নীতি হল, ট্রেনের
ইঞ্জিনের মত। যেদিকে ইঞ্জিন চলবে পিছনে পিছনে বাকি সব ট্রেন চলতে থাকবে। উদাহারণ স্বরূপঃ নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের
নীতি। তাঁর দাওয়াতের মূল বিষয় ছিলঃ “তাওহীদ।” জগতের মানুষ আল্লাহকে বিশ্বাস করে যেন শুধু
তাঁরই ইবাদত করে, অন্যের পূজা না করে। তাই মক্কার মুশরিকরা
আল্লাহকে বিশ্বাস করলেও নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের
মাঝে ১৩ বছর তাওহীদের দাওয়াত দিতে থাকেন।
আল্লাহ সকল নবী প্রেরণের উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেন, “আমি তোমার
পূর্বে যত রাসূল প্রেরণ করেছি, তাদের
এ আদেশই দিয়েছি যে, আমি ব্যতীত আর কোন উপাস্য নেই, তাই তোমরা শুধুমাত্র আমারই ইবাদত করো।” সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২৫।
=এবার কিছু চিন্তাবিদ?
তারা নবী রাসুলদের দুনিয়াতে পাঠানোর উদ্দেশ্য (তাওহীদ
বাস্তবায়ন, অর্থাৎ মানুষ যাতে এক
আল্লাহর ইবাদত করে এবং অন্য কারো পূজা না করে) না বুঝে, এর
মূল উদ্দেশ্যকে উপেক্ষা করে কিংবা ভুল ব্যখ্যা দাড় করিয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়াতের মুখ্য
উদ্দেশ্যের অপব্যখ্যা করে বলেছেঃ
“নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছিলেন ইসলামী দেশ
গঠন করতে - ইকামতে দ্বীন করতে।”- সৈয়দ
আবুল আলা মওদুদী, জামাতে
ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা।
তাই সে এবং তার অনুসারীরা ইকামতে দ্বীন নাম দিয়ে “ইসলামী
রাষ্ট্র গঠনকে” নিজের জীবনের উদ্দেশ্য করে নিয়েছেন।
প্রথম কথা হচ্ছে, তাদের নীতিটাই হচ্ছে ভুল। “ইকামতে
দ্বীনের” যে অপব্যখ্যা মাওলানা মওদুদী দাঁড় করিয়েছেন, এটা সম্পূর্ণ তার মনগড়া
অপব্যখ্যা। অতীত থেকে আজ পর্যন্ত কোন আলেম এইরকম ব্যখ্যা দাঁড় করান নি।
= অতঃপর, কিভাবে সেই রাষ্ট্র গঠন করতে হবে?
এই যুগতো ভোটের যুগ, ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করে তারা, তাই তারাও বলল, আমরাও নিরুপায় হয়ে এই
নিয়মেই ইকামতে দ্বীন করবো, এই ভাবে মিশে গেল তাদের সাথেই,
যাদেরকে সরিয়ে তারা ইসলামী দেশ তৈরি করতে চাচ্ছিল!
আর এটা হল, তাদের
নীতির দ্বিতীয় ভুল এবং এই ভুলের উপর থেকেই তারা সকলেই নিজেদেরকে হক্কপন্থী দাবী
করতে থাকেন বা হক্বপন্থী মনে করেন। অনেক জনগনও তাদের হক্ক ভাবেন, কারণ তারা দাবী করে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত করতে
চায়, কিন্তু তাদের গোড়াতেই যে গলদ হয়েছে, সেটা এখন কেউ ফিরে
দেখতে চায়, না দেখার প্রয়োজন মনে করে!
= অন্য দিকে আরেক চিন্তাবিদ(!) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়াতের নীতি না
বুঝে বা উপেক্ষা করে আরেক নীতি তৈরী করলো – “তাওহীদ” নয়, দাওয়াতের নীতি করতে হবে “ফযীলতের” বর্ণনা দিয়ে। তাতে সাধারণ মানুষ
সহজেই আকৃষ্ট হবে এবং অনেক ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবে। কারণ, লোকদেরকে প্রথমেই শির্ক থেকে নিষেধ করলে,
বিদআ’ত থেকে বাঁধা দিলে, গুনাহের কাজ থেকে বাঁধা দিলে তারা রেগে যায়
(এর প্রমান হিসেবে দেখুন আমাদের পোস্টগুলোতে, শিরক বিদআ’তের
সমালোচনা করলে মানুষ কি জঘন্য ভাষায় গালি দেয়), দূরে সরে যায় (পেইজ আনলাইল/ব্লক করে রিপোর্ট করে), কাছে
আসে না। তাই ফযীলতের দাওয়াতই দেওয়াই নিরাপদ, মানুষ ফযীলতের লোভে
দলে যোগ দিবে (সেটাই হচ্ছে বর্তমানে, দাওয়াত ও তাবলীগ নাম দিয়ে। শিরকি, বিদআ’তী আকীদার
লোকদেরকে ফযীলতের আশা দিয়ে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে, – ফযীলত দেখে
যাকে দাওয়াত দেওয়া হয় সেও খুশি, শির্ক বিদআ’তের
সংশোধন না করেই দাওয়াত কবুল করে মানুষ তাই মুবাল্লিগও খুশী তার দলের লোক বাড়ছে)। - তাবলিগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা ইলিয়াস সাহেব ও তাদের
লিখক মাওলানা জাকারিয়া।
এটা ছিল আরো এক নীতিগত ভুল, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাওহীদের দাওয়াত ও শির্ক থেকে সাবধান করার সময় এই সহজ
পদ্ধতি নিতে পারতেন কিন্তু নেন নি। ১৩ বছর ধরে দাওয়াতের কারণে খুবই সামান্য লোকই মেনে ছিলেন,
কিন্তু তাদের ফযীলতের লোভ দেখান নি, শির্ক থাকা সত্ত্বেও দল ভারী করার জন্য তাদের সাথে আপোস করেন নি বরং ঘোর
শত্রু হয়ে শেষে নিজ জন্মভূমিও ছাড়তে হয়, তিনি কিন্তু
শত্রুতার ভয় করেন নি।
= এবার এই প্রকার লোকেরা তাদের তৈরিকৃত এই নীতির সফলতা (দলে
দলে লোক দিয়ে দল ভারী করা, যারা শিরকে
বিদআ’তে লিপ্ত থাকবে কিন্তু মিথ্যা ফযীলতের ধোকায় পড়ে আসলে তারা
বিভ্রান্ত!) দেখে মনে করছে আমরাই হক্বপন্থী কারণ আমাদের দাওয়াতে সকলেই সাড়া দিচ্ছে, সারা বিশ্বে ছড়াচ্ছে। তাই গোড়ার দিকে দেখার
আর সুযোগ নেই, বা সেটা নিয়ে চিন্তা
করার আর প্রয়োজনও তারা মনে করেনা। ঘায়ের উপর প্রলেপ লাগিয়ে এই প্রকার লোকেরা অনেক মানুষকে
হয়তো চকচকে করে দিচ্ছে , কিন্তু
ভিতরের পুঁজ তো থেকেই যাচ্ছে! আর এসব হচ্ছে সেই নীতি ভুলের কারণে।
কেউ কি আছে যে গভীরভাবে চিন্তা করবে? নাকি সবাই গড্ডালিকায় গা ভাসিয়ে চলবে?
*চকচকে অর্থঃ মিথ্যা ফযীলতের আশায় শিরক
বিদাত মিশ্রিত অনেক আমল। আর ভেতরের পূজ অর্থঃ অন্তরের ভেতর শিরক বিদআ’তের
সংশোধন না হওয়া, ফযীলত খুজতে খুজতে
অজ্ঞতা ও কুসংস্কার নিয়েই পড়ে থাকা, কুরআন হাদীস বাদ দিয়ে
ভেজাল আমল নিয়ে পড়ে থাকা।
__________________________________________
“দ্বীন কায়েম
কর” কথাটির তাফসীর কি?
জামাতে ইসলামী, ইখোয়ানুল মুসলিমিন, আল-কায়েদা, আইসিস,
হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ বা এমন আরো অনেক দলের অনুসারীরা ক্বুরআনের একটি
আয়াতের অপব্যাখ্যা করে মারাত্মক গোমরাহীর শিকার হয়েছে।
মহান আল্লাহর
বাণীঃ “তিনি তোমাদের
জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন, যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে, আর যা আমি ওহী করেছি
আপনাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছিলাম ইবরাহীম, মূসা এবং ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীন কায়েম কর (বা প্রতিষ্ঠা কর) এবং তার (অর্থাৎ দ্বীনের মধ্যে কোন
প্রকার) দলাদলি বা বিচ্ছিন্নতা
সৃষ্টি করো না।” সুরা শূরাঃ
১৩।
উক্ত, আয়াতে আল্লাহর আদেশঃ “তোমরা
দ্বীন কায়েম করো”, বিভ্রান্ত দলের অনুসারীরা এর অর্থ করেঃ
(১) ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা,
(২) কারো মতেঃ খিলাফত কায়েম করা,
(৩) কারো মতে, জিহাদ করা।
চলুন, আমাদের সালফে সালেহীনরা “তোমরা
দ্বীন কায়েম করো” - এই কথার দ্বারা কি বুঝেছেন, সে সম্পর্কে আলোকপাত
করি।
ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু জারীর তাবারী রহি’মাহুল্লাহ
(মৃত্যু ৩১০ হিজরী) বলেছেন,
“দ্বীন প্রতিষ্ঠা
কর” কথাটির অর্থ
হচ্ছে ‘দ্বীন পালন
কর’ বা ‘দ্বীন অনুসারে
কর্ম কর’, যেভাবে তোমাদের
জন্য তা বিধিবদ্ধ করা হয়েছে এবং ফরয করা হয়েছে, যেমনটি আমরা ইতোপূর্বে ‘সালাত প্রতিষ্ঠা
কর’ কথাটির অর্থ
প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছি। পূর্ববর্তী (সাহাবী, তাবিয়ী, তাবি-তাবিয়ী যুগের) মুফাসসিরগণ
এই আয়াত এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন।
তাবিয়ী ইসমাঈল ইবনু আব্দুর রাহমান সুদ্দী রহি’মাহুল্লাহ
(মৃত্যু ১২৮ হিজরী) বলেছেন ‘দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর’ অর্থ হচ্ছে
দ্বীন পালন কর।
উৎসঃ তাবারী, তাফসীর (জামিউল বায়ান) ২১/৫১৩।
একই অর্থে তাবিয়ী মুজাহিদ ইবনু জাবর রহি’মাহুল্লাহ
(মৃত্যু ১০৪ হিজরী) বলেন, “আল্লাহ যত নবী প্রেরণ করেছেন সকলকেই সালাত কায়েম
করতে, যাকাত প্রদান করতে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের স্বীকৃতি দিতে ও তাঁর আনুগত্য করতে
নির্দেশ দিয়েছেন, আর এটাই হচ্ছে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা।” আবু হাইয়ান
মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (মৃত্যু ৭৪৫ হিজরী), আল-বাহরুল মুহীতঃ ৯/৪৮২।
অন্য তাবিয়ী আবুল আলিয়া রুফাইয় ইবনু মিহরান (মৃত্যু ৯০ হিজরী)
বলেন, “দ্বীন প্রতিষ্ঠা অর্থ হচ্ছে আল্লাহর জন্য ইখলাস ও তাঁর ইবাদত
করা।” আবু হাইয়ান,
আল-বাহরুল মুহীতঃ ৯/৪৮২।
কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, “দ্বীন প্রতিষ্ঠার
অর্থ হচ্ছে দ্বীনের রুকনগুলি যথাযথভাবে পালন করা, দ্বীনের মধ্যে বিকৃতির অনুপ্রবেশ
থেকে তাকে সংরক্ষণ করা, দ্বীন পালনে নিয়মানুবর্তী হওয়া এবং তা যথাযথ পালনের জন্য পূর্ণ
উদ্দ্যমী হওয়া।” ইবনু আজীবাহ, আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ (মৃত্যু ১২২৪ হিজরী), আল-বাহরুল
মাদীদঃ ৫/৪২৩।
হিজরী সপ্তম শতাব্দীর প্রসিদ্ধ আলিম আব্দুল আযীয ইয্য ইবনু
আব্দুস সালাম (মৃত্যু ৬৬০ হিজরী) সুরা শূরার ১৩ নাম্বার আয়াতের তাফসীরে বলেছেন, “দ্বীন প্রতিষ্ঠা
কর” কথাটির অর্থ
হচ্ছে দ্বীন পালন কর অথবা দ্বীনের প্রতি আহবান কর।” ইয্য ইবনু আব্দুস সালাম, তাফসীরুল
ইয্যঃ ১/১০৫১।
কোনো কোনো মুফাসসির দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা বলতে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীনকে
আঁকড়ে ধরা বুঝিয়েছেন; কারণ এই আয়াতে বলা হয়েছে “দ্বীন প্রতিষ্ঠা
কর এবং তাতে দলাদলি করো না”, এখান থেকে বুঝা যায় যে, দ্বীনের বিষয়ে
ঐক্যবদ্ধ হওয়াই দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা এবং দ্বীনের বিষয়ে দলাদলি করার অর্থ দ্বীন
প্রতিষ্ঠা না করা।
মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াকূব ফিরোযাবাদী (মৃত্যু ৮১৭ হিজরী) তার
সংকলিত ‘তানবীরুল মিকবাস’ নামক তাফসীর গ্রন্থে সাহাবী
আ’ব্দুল্লাহ ইবনু আ’ব্বাস রদিয়াল্লাহু আ’নহুমা থেকে
উদ্ধৃত করেছেন যে, তিনি বলেছেনঃ
“দ্বীন প্রতিষ্ঠা
কর” – আল্লাহ সকল
নবীকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর, অর্থাৎ দ্বীনের বিষয়ে ঐকমত হও, “এবং তাতে দলাদলি করো না” – অর্থাৎ দ্বীনের বিষয়ে মতভেদ করো না। ফিরোযাবাদী,
তানবীরুল মিকবাস (শামিলা) ২/৪।
ইমাম তাবারী ও অন্যান্য মুফাসসির প্রসিদ্ধ তাবিয়ী মুফাসসির
কাতাদা ইবনু দিআমাহ রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ১১৫ হিজরী) থেকেও অনুরূপ তাফসীর উদ্ধৃত করেছেন।
তাবারী, তাফসীর (জামিউল বায়ান) ২১/৫১৩।
এ বিষয়ে আল্লামা ইবনু কাসীর রহি’মাহুল্লাহ
(মৃত্যু ৭৭৪ হিজরী) বলেন, “দ্বীন প্রতিষ্ঠা কর এবং তাতে দলাদলি করো না, অর্থাৎ
মহান আল্লাহ সকল নবীকে (আ’লাইহিমুস সালাম) নির্দেশ
দিয়েছেন ভালবাসা ও ঐক্যের এবং নিষেধ করেছেন দলাদলি ও মতভেদ থেকে।” ইবনু কাসীর,
তাফসীরুল কুরআনিল আযীম (শামিলা) ৭/১৯৫।
উৎস এবং কৃতজ্ঞতাঃ ইসলামের নামে জংগীবাদ, ড. খন্দকার
আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রহি’মাহুল্লাহ।
__________________________________________
ইখোয়ানুল
মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড ও
হামাসের ব্যপারে আলেমদের ফতোয়া
আমাদের দেশে যেমন “জামাতে ইসলামী”, ঠিক তেমনি
মিশরের একটি রাজনৈতিক দল হচ্ছে “ইখোয়ানুল
মুসলিমিন” বা ইংরেজীতে মুসলিম ব্রাদারহুড। তাদের শীর্ষস্থানীয় কিছু নেতা
হচ্ছেন হাসান আল-বান্না, সাইয়েদ কুতুব, ইউসুফ আল-কারযাভী, মুহাম্মদ হাসসান এবং অন্যান্যরা। ইখোয়ানুল মুসলিমিনের ব্যপারে আহলে সুন্নাহর আলেমদের ফতোয়াঃ
(১) শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “ইখোয়ানুল মুসলিমীন ও তাবলীগ জামাত ৭২টা বিদআ’তী দলের অন্তর্ভুক্ত, যাদের ব্যপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নামের ভয় দেখিয়েছেন।”
(২) শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরউদ্দিন
আল-আলবানী রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “ইখোয়ানুল
মুসলিমিনকে
আহলে সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত মনে করা ঠিক নয়, বরং তারা
আহলে সুন্নাহর সাথে যুদ্ধ করছে।”
(৩) শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “ইখওয়ানুল মুসলিমীন হচ্ছে হিজবী একটা দল, যাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা দখল করা। তারা মানুষকে সঠিক আক্বিদাহর
দিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য উৎসাহী নয় এবং তারা তাদের অনুসারীদের মাঝে সুন্নী এবং
বিদআ’তির মাঝে কোন পার্থক্য করেনা।”
(৪) শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদী রহি’মাহুল্লাহকে ফিলিস্থিনে ইখোয়ানুল
মুসলিমিনের অংগ সংগঠন “হামাস” সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিলোঃ “দখলকৃত ফিলিস্থিনের ভূমিতে হামাসের ‘ইসলামিক জিহাদ’ ও ‘আন্দোলন’ সম্পর্কে আপনি কি বলেন?”
শায়খ মুক্ববিল রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “হামাসের ইসলামিক জিহাদ ও আন্দোলন ইসলামকে
সাহায্য করবেনা, (কারণ) এই দলে রয়েছে শীয়া এবং হিযবী ইখোয়ানী। এই দল হচ্ছে হিযবীদের, তারা সৎ কাজের আদেশ করেনা এবং অসৎ
কাজের নিষেধ করেনা। বরং, তারা আহলে সুন্নাহকে তিরস্কার করে। হামাসকে যদি সাহায্য করা হয় তাহলে তারা তা-ই করবে, যা করা
হয়েছে আফগানিস্থানে। (আফগানিস্থানের যোদ্ধারা) একজন আরেকজনের
বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করেছে, কারণ তাদের অন্তরগুলো একত্রিত নয়।” তুহফাতুল মুজীবঃ ২২৮ পৃষ্ঠা।
reference:
(১) তাবলীগ জামাত ও ইখোয়ানুল মুসলিমিনের
ব্যপারে শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহিমাহুল্লাহর ফতোয়াঃ
https://www.youtube.com/watch?v=Y6c1UHTzaPY
জনপ্রিয় কিছু বক্তা ও লিখক সাহেবরা
মানুষকে এই বলে বিভ্রান্ত করে থাকে যে, শায়খ বিন
বাজ রহি’মাহুল্লাহ নাকি তার মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাবলীগ জামাত ও ইখোয়ানুল মুসলিমিনের
প্রশংসা করেছেন। এই
মিথ্যা প্রচারণার জবাব
দিয়েছেন শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহঃ
https://www.youtube.com/watch?v=BpFGR2f2jqw
(২) ইখোয়ানুল মুসলিমিনের ব্যপারে
শায়খ মুহাম্মাদ নাসিরউদ্দিন আল-আলবানী রাহিমাহুল্লাহর ফতোয়াঃ “ইখোয়ানুল মুসলিমিন আহলে সুন্নাহর সাথে যুদ্ধ করছে।”
https://www.youtube.com/watch?v=16uvOFQhpYA&index=1&list=PL5Os9JN2k8EcpA3MEA8olzV95ywwr7Azh
(৩) ইখোয়ানুল মুসলিমিনের ব্যপারে
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহর
ফতোয়াঃ “ইখোয়ানুল মুসলিমিন শুধুমাত্র রাজনীতি, সংসদ ও ভোটের বিষয়কে গুরুত্ব দেয়।”
al-Ikhwan
al-Muslimun only care about positions, parliaments, votes etc:
http://ahlulbidahwalhawa.com/2013/07/01/al-ikhwan-al-muslimun-only-care-about-positions-parliaments-votes-etc-imam-al-albani/
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=Qj2NuwWJBFY
(৪) শায়খ মুক্ববিল রহি’মাহুল্লাহর বক্তব্যের ভিডিও লিংক –
https://www.youtube.com/watch?v=lnlMaV3OUBE
__________________________________________
ইসলামে
রাজনীতি?
রাজনীতির নামে যা চলছে তা কি ইসলাম? (পর্ব-১৪)
“ইসলামিক রাজনীতি” নামে ভারত, বাংলাদেশ পাকিস্থানে “জামাতে ইসলামী” ও মিশরসহ অন্যান্য দেশে
“ইখওয়ানুল মুসলিমিন” বা Muslim Brotherhood যে ফেতনাহ, অরাজকতা ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করা হয়েছে, সেটা উম্মতকে ধোঁকা
দেওয়া ছাড়া আর কিছুইনা। ইসলামী শাসন কায়েমের নামে দিনের পর দিন মুসলিম উম্মাহকে লাশ উপহার
দেওয়া তাদের কাছে এখন কোনো ঘটনাই না, বরং ক্ষমতা
পাওয়ার নেশায় আজ তারা চোখ থাকতেও অন্ধ। যাইহোক, “ইসলামী আন্দোলন” নামের সংগঠনের
কর্মীদেরকে আহবান জানাবো, নীচের এই কথাগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার জন্য।
জামাতে ইসলামী, ইখওয়ানুল মুসলিমিন বা Muslim
Brotherhood এর যারা মাথার মুকুট, যাদের নির্দেশনা তাদের চলার পথের মশাল, নিম্নে
তাদের উক্তি সমূহের মধ্য হতে কিছু উক্তি পাঠ মহোদয়ের জ্ঞাতার্থে উল্লেখ করা হল,
যা বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ইন্টারনেট হতে সংগৃহীত হয়েছে। এইগুলোর
প্রমান অনেক ভিডিওতেও রয়েছে, যা উৎসুক পাঠকদের মোটেও অজানা নয়।
(১) ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানরা মুসলিম – ইউসুফ আল-কারদাবী।
(২) শিয়া-সুন্নির পার্থক্য মাজহাব সমূহের মধ্যে পার্থক্যের মতই।
(৩) ইসলামের শুরা আর গণতন্ত্র একই - ইউসুফ আল-কারদাবী।
(৪) ঈমান ও তাওহীদের দাওয়াত উম্মতের ঐক্যকে দুর্বল করে - ইউসুফ
আল-কারদাবী।
(৫) ধর্মের বিভিন্নতা মানুষের জন্য কল্যাণময় - ইউসুফ আল-কারদাবী।
(৬) জিহাদ শুধু ইসলাম রক্ষার জন্য নয় বরং সকল ধর্মের রক্ষার জন্য - ইউসুফ
আল-কারদাবী।
(৭) আমরা একটি রাজনৈতিক ও সুফী জামাত - হাসান আল-বান্না।
(৮) ইয়াহুদীদের সাথে আমাদের অমিল রাজনৈতিক, ধর্মীয়
নয় - ইউসুফ আল-কারদাবী।
(৯) ইরানকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষ থেকে উম্মতের নেতৃত্বের জন্য বাছাই করা
হয়েছে - গান্নুষী।
(১০) শিয়া- সুন্নি এক উম্মাহ - খায়রাত সাতের।
(১১) ইরানের আন্দোলনে সকল মুসলমানের শরীক হওয়া ফরজ – সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী।
(১২) হামাস আমাদের, আমরা হামাসের - মাহদী আকেফ।
(১৩) মুরসির সম্মান ও অপমান কা’বার চাইতে অধিক গুরুত্বপূর্ণ - মুহাম্মাদ বদী’।
(১৪) সমালোচনা করবেন না, পারলে আমাদের মত একটি
দল গঠন করুন – মতিউর রহমান নিজামী।
(১৫) ২০ উসুলের উপর শিক্ষা যে নেয়নি, তাকে আমরা
কিছুই মনে করি না - মাহদী আকেফ।
(১৬) খৃস্টান ও মুসলমানের মধ্যে পার্থক্যটি ডায়নামিক - মুহাম্মাদ মুরসি।
ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ব্যাপারে নিরপেক্ষ বরেণ্য আলেমগনের কিছু উক্তি
নিম্নে পেশ করা হলোঃ
(১) ইখওয়ানুল মুসলিমীন ৭২টি জাহান্নামী দলের মধ্যে একটি – আব্দুল আজীজ ইবনু বাজ।
(২) ইখওয়ান ইয়াহুদীদের চাইতে বেশী ক্ষতিকর – মুহাম্মাদ নাসিরউদ্দিন আলবানী।
(৩) তারা বাঘের সাথে শিকার করে আর মালিকের সাথে কাঁদে - সাঈদ রাসলান।
(৪) ইখওয়ানের দাওয়াত বিধ্বংসী, যার অর্থের যোগান দেয় ইয়াহুদীরা - আহমাদ শাকের।
(৫) তারা মরার ফাঁদ তৈরি করে, আর সেখানে পতিত
হয় অন্যরা - বাসীর ইব্রাহীমী।
(৬) ইখওয়ান সকল ফিতনার মূল - নায়েফ বিন আব্দুল আজীজ।
__________________________________________
রাফেজী শীয়া, ইসলামিক রাষ্ট্র ইরান এবং শিয়া প্রেমী
জামাত-শিবির, ইখোয়ানীদের হাকীকত
আধুনিক শিয়া রাষ্ট্র ইরানের উত্থান হয়েছিলো ১৯৭৯ সালে, তৎকালীন রাজা মুহাম্মাদ রেজা শাহ পাহলভীকে
ক্ষমতাচ্যুত করে কথিত “ইসলামিক বিপ্লবের” মাধ্যমে। ইরানের এই বিপ্লব কোন
“ইসলামিক বিপ্লব” নয়, বরং
এটা হচ্ছে “রাফেজী শিয়া” বিপ্লব।
যদিও আমাদের দেশের অনেক লোকেরা ইরানকে “ইসলামিক
রাষ্ট্র” বলে মনে করে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই রাফেজী শিয়াদের
অসংখ্য, অগণিত মারাত্মক শিরকি ও কুফুরী আকিদাহর কারণে আমাদের আলেমরা বহু পূর্বেই
তাদেরকে “কাফের” বলে ঘোষণা করেছেন।
রাফেযী শিয়াদের ব্যাপারে “ইমাম আহলে
সুন্নাহ” আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন,
"ليست الرافضة من الإسلام في شيء"
“রাফেযী (শিয়ারা) মুসলিম নয়, ইসলামে তাদের কোন অংশ নেই।” তাবাক্বাত
হানাবিলাহঃ ৩২।
হাদীস শাস্ত্রের “আমিরুল মুমিনুন” ইমাম
বুখারী রহি’মাহুল্লাহ
(মৃত্যুঃ ২৫৬ হিজরী)। পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত, বিশ্বের প্রতিটি মুসলমান এক
নামে সবাই তাঁকে চেনে। ইমাম বুখারী রহি’মাহুল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় রাফেজী
শিয়াদেরকে কাফের ঘোষণা করে বলেছেন,
“আমার দৃষ্টিতে একজন জাহমী অথবা একজন রাফেজী (শিয়ার) পেছনে নামায পড়া আর একজন খ্রীস্টান অথবা একজন
ইয়াহুদীর পেছনে নামায পড়ার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তাদেরকে (অর্থাৎ জাহমী এবং রাফেজী শিয়াদেরকে) সালাম দেওয়া
হবে না, তাদেরকে দেখতে যাওয়া যাবে না, তাদের কাউকে বিয়ে করা যাবেনা, তাদের সাক্ষ্য
গ্রহণ করা হবেনা, তাদের কুরবানী পশু খাওয়া যাবেনা।” খালক্ব আফআ’লুল ই’বাদঃ পৃষ্ঠা ১৪।
আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ, ইমাম বুখারী রহি’মাহুল্লাহ
রাফেজী শিয়াদের
বিরুদ্ধে এমন কঠোর বক্তব্য কেনো দিয়েছেন?
হক্ক কথা হচ্ছে, আপনি যদি রাফেজী শিয়াদের আকিদাহ কত নিকৃষ্ট
এবং তাদের উত্থানের পর থেকে আজ পর্যন্ত মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের আক্রমন ও
নির্যাতনের ইতিহাস জানেন, আপনিও তাদেরকে কাফের বলতে বাধ্য হবেন।
(১) কথিত “ইসলামিক রাষ্ট্র” ইরান
প্রতিষ্ঠার জন্য রাফেজী শিয়াদের সবচাইতে বড় ধর্মগুরু হিসেবে ছিলেন সৈয়দ রুহুল্লাহ
মুসাভি খোমেনি (জন্মঃ ১৯০২, মৃত্যু ১৯৮৯)। রাফেজী শিয়ারা তাকে উপাধি দিয়েছিলো “আয়াতুল্লাহ” অর্থাৎ
আল্লাহর আয়াত, এবং এই উপাধি থেকেই মানুষ তাকে “আয়াতুল্লাহ খোমেনি” নামেই বেশি চেনে।
সৈয়দ রুহুল্লাহ মুসাভি খোমেনি আয়াতুল্লাহ নয়, বরং সে হচ্ছে “আয়াতুশ-শয়তান” বা
শয়তানের আয়াত। এই খোমেনি তার অনুসারী লক্ষ লক্ষ রাফেজী শীয়াদেরকে শিরক আর
কুফুরী শিক্ষা দিয়েছে। খোমেনি তার নিজের হাতে লিখা “হুকুমাতাল ইসলামিয়া” বইয়ে
লিখেছে,
“ইমামরা (অর্থাৎ রাফেজীদের অনুসৃত ১২-জন ইমাম), তাঁরা হচ্ছেন নিষ্পাপ। তারা এই মহাবিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা
রাখেন।”
নাউযুবিল্লাহি মিং যালিক। হিন্দুরা তাদের
দেব-দেবীদের প্রতি যেমন শিরকি আকিদাহ রাখে, রাফেজীরাও তাদের ইমামদের প্রতি সেই একই
আকিদাহ। খোমেনির কথা থেকে যা স্পষ্ট।
এই মহাবিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখেন একমাত্র আল্লাহ তাআ’লা।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “পুণ্যময় তিনি, যাঁর হাতে
রাজত্ব। তিনি
সবকিছুর উপর সর্বশক্তিমান।” সুরা আল-মুলকঃ ১।
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন, “তিনি (আল্লাহ) আকাশ হতে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত বিষয় পরিচালনা করেন।”
সুরা আস-সাজদাহঃ ৫।
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেছেন, “আল্লাহ
আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীকে (ধরে) স্থির রাখেন, যাতে তারা কক্ষচ্যুত না হয়।” সুরা ফাতিরঃ ৪১।
যে ব্যক্তি দাবী করবে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ মহাবিশ্বের প্রতিটি অণু-পরমাণুকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রাখেন, সে আল্লাহর রুবুবিয়াতের সাথে শিরক করার কারণে মুশরিক হয়ে
যাবে। সুতরাং, নিঃসন্দেহে খোমেনি একজন মুশরিক, যে তার
অনুসারীদেরকে শিরক শিক্ষা দিয়েছে।
(২) ইরানের রাফেজী শিয়ারা
মুসলমানদের কত বড় দুশমন, এই একটি ঘটনাতেই পরিষ্কার হবে যে, বর্তমান
ইরানে আবু লুলু নামক একজন
অগ্নিপূজারীর কবরকে সম্মান করে বিশাল বড় মাযার বানিয়ে রেখেছে। এই আবু লুলু হচ্ছে
সেই ব্যক্তি, যে খুলাফায়ে রাশেদীন উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহুকে
ফযরের নামাযরত অবস্থায় বিষাক্ত ছুড়ি দিয়ে
মারাত্মকভাবে আহত করে, এবং একারণেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
রাফেজী শিয়ারা উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর মতো
সম্মানিত সাহাবী, খুলাফায়ে রাশেদীন, যার ব্যাপারে আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, “আমার পরে
কেউ যদি নবী হতো, তাহলে সে হতো উমার”, তাঁর হত্যাকারীর মাযার বানিয়ে তাকে
সম্মানিত করে। তাহলে চিন্তা করে দেখুন, এরা ইসলাম থেকে কতটা দূরে আছে। আল্লাহ তাআ’লা কবর
পূজারীদেরকে লাঞ্চিত করুন, আমিন।
(৩) ২০১১ সাল থেকে আজ পর্যন্ত শুধুমাত্র সিরিয়াতে লক্ষ লক্ষ
মুসলমানদেকে নির্দয়ভাবে হত্যা করেছে মধ্যপ্রাচ্যের কসাই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট
বাশশার আল-আসাদ। এই বাশশার হচ্ছে আলাভী শিয়া, যারা প্রকাশ্য কাফের। বাশশারকে সিরিয়াতে
মুসলমান হত্যা করে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য সবচাইতে বেশি যারা সাহায্য করছে,
তারা হচ্ছে ইরানী রাফেজী শিয়াদের বিপ্লবী সেনা দল “হিজবুল্লাহ”।
(৪) ইরান হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেই দেশের রাজধানীতে
আহলে সুন্নাহর মসজিদ নেই। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, আমেরিকা, রাশিয়া, এমনকি
ইসরায়েলের মতো দেশের রাজধানীতে আহলে সুন্নাহর মসজিদ আছে। কিন্তু ইরান হচ্ছে
আহলে সুন্নাহর সবচাইতে বড় শত্রু, যেই দেশের রাজধানীতে আহলে সুন্নাহ নিষিদ্ধ, যেই
দেশে আহলে সুন্নাহর আলেমদের বন্দী ও খুন করা হয়।
ইসলামী আকিদাহ বা ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে যাদের কোন জ্ঞান
নেই, এমন আবেগী কিছু মুসলমানেরা “ইসলামিক রিপাবলিকান ইরান” নাম দেখে
আবেগে আপ্লুত হয়ে যায় এবং তাদেরকে ইসলামিক দেশ বলে প্রশংসা করে। এছাড়া কিছু রাজনৈতিক
উচ্চাভিলাষী দল, যারা নিজেদেরকে “আহলুস সুন্নাহ” বলে দাবী
করে, কিন্তু রাজনৈতিক স্বার্থে ইরানের রাফেজী শিয়াদের প্রশংসা করে, তাদেরকে
অনুকরণীয় আদর্শ বলে মনে করে। এমনই কিছু পথভ্রষ্ট দল
হচ্ছে মিশরের ইখোয়ানুল মুসলিমিন, বাংলাদেশ, ভারত এবং পাকিস্থানের জামাতে ইসলামী,
ফিলিস্থিনের হামাস।
(৫) সম্প্রতি হামাসের সর্বোচ্চ নেতা ইসমাঈল হানিয়া এবং
খালিদ মশাল ইরান ভ্রমণের সময় মুশরিক খোমেনীর মাযার যিয়ারত করে এবং ফুল দিয়ে তার
প্রতি সম্মান জানায়। লিংক –
http://www.ikhwanis.com/articles/ysztzka-ikhwani-hamas-leaders-paying-respect-at-the-wathan-idol-of-ayatollah-khomeini.cfm
(৬) তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান, যাকে
ইখোয়ানুল মুসলিমিন ও জামাতে ইসলামীর লোকেরা “খলিফাতুল
মুসলিমিন” বলে মনে করে, তিনিও ইরান ভ্রমণের সময় খোমেনির মাযারে ফুল
দিয়েছেন। আমি মানুষের ছবি প্রচার করিনা, একারণে তাঁর কোন ছবি দেওয়া
হলোনা, নয়তো এর প্রমান আপনারা অনেক পাবেন।
(৭) আমাদের দেশের জামাতে ইসলামীর ধর্মীয় গুরু দেলোয়ার হোসেন
সাঈদী ইরানের প্রশংসা করেছেন, এবং খোমেনিকে “ইমাম” বলে
সম্বোধন করেছিলেন।
(৮) বাংলাদেশ “ইসলামী ছাত্র শিবিরের” সাবেক কেন্দ্রীয় শিক্ষা
সম্পাদক ও গ্লোবাল লাইট হাউস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান জনাব ড. আহসান হাবিব ইমরোজ
রেডিও তেহরানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইসলামি প্রজাতন্ত্র
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনির চিঠিটি পড়ে আমার কাছে মনে
হয়েছে ঘোর অমানিশার মধ্যে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।”
ছাত্রশিবির নেতার আয়াতুশ-শায়তানকে প্রশংসা করার লিঙ্কঃ
http://goo.gl/wKcSoO
খেয়াল করে দেখুন, এই সংবাদটি ছাপায় হয়েছে
ইরানী সংবাদ মাধ্যমে।
(৯) জামাতী ইসলামীর রাজনীতি ঘেঁষা
পত্রিকা “দৈনিক নয়া দিগন্তের” নির্বাহী সম্পাদক, জনাব মাসুদ মজুমদার
রেডিও তেহরানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “ইসলামী প্রজাতন্ত্র
ইরানের বর্তমান রাহাবার হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনী...গোটা বিশ্বের মুসলিম
উম্মাহর একজন প্রাগসর চিন্তাবিদ। তার চিন্তাদর্শ এবং লেখা বিভিন্ন বইয়ের সাথে আমি পরিচিত।”
দৈনিক নয়া দিগন্তর নির্বাহী সম্পাদকের বক্তব্য, “ইরানের সর্বোচ্চ নেতার বাণী বিশ্বের মানুষকে সঠিক
পথের দিশা দেবে।” লিঙ্কঃ
http://goo.gl/WusKXz
এই সমস্ত অজ্ঞ জাহেল এবং পথভ্রষ্ট ব্যক্তি, যারা ইসলাম ধর্ম
সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন না করেই লোকদেরকে অজ্ঞতা ও মূর্খতা শিক্ষা দেয়, তাদের থেকে
আপনারা সতর্ক থাকবেন।
সর্বশেষ, আহলে সুন্নাহর লোকদেরকে হত্যা ও নির্যাতন করার
জন্য সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মিশরসহ কয়েকটি সুন্নী দেশ সম্মিলিতভাবে রাফেজী ইরানী
শীয়া, তাদের অনুসারী ব্যক্তি এবং দল, এবং শিয়া প্রেমী ইখোয়ানুল মুসলিমিন এবং তাদের
পথভ্রষ্ট নেতাদেরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, তাদের লিখা সমস্ত বই-পুস্তক, পত্রিকা ও
ম্যাগাজিন ছাপানো নিষিদ্ধ করে। সম্প্রতি ছয়টি সুন্নী কর্তৃক কাতারকে বর্জন করার সিদ্ধান্ত
রাফেজী শিয়াদেরকে সমর্থন ও সুন্নী দেশগুলোর বিরুদ্ধে তাদেরকে সাহায্য করার জন্যই
করা হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে, শিয়া এবং শিয়াপ্রেমী দলগুলোর অনুসারী এই
ঘটনাকে নিজেদের মতো অপব্যাখ্যা করে দলীল প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে। আপনারা ইসলামী আকিদাহ
সম্পর্কে জানুন এবং ভয়ংকর শিয়া ও খারেজীদের ব্যপারে সতর্ক থাকুন।
__________________________________________
‘জামাতী’ নেতাদের আপোষের নীতি
১৯৯৬ সালের পূর্বে জামাতে ইসলামীর ভাইয়েরা খুব প্রচার করতো, “নারী নেতৃত্ব হারাম, নারী নেতৃত্ব হারাম।”
প্রধানমন্ত্রী নারী হলে দেশের উপর আল্লাহর কত বড় গজব নাযিল হবে, সেই চিন্তায় চিন্তায় তাদের কর্মীদের খাওয়া-ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো। ইসলাম ধর্মকে ব্যবহার করে
বিরোধী দলকে কাবু করার জন্যে “যেই দেশের বা পার্টির লোকেরা নারী নেতৃকে ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বানায় তারা ১০০%
কাপুরুষ, হিজড়া” – এমন কথাও তারা প্রচার করেছিলো, এবং সেটা কিন্তু ‘ইসলাম কায়েম’ এর নামেই!
বলে রাখা ভালো, এরকম প্রচারণার টার্গেট
ছিলোঃ শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া।
যাইহোক, আস্তে আস্তে রাজনীতির
মারপ্যাচে পড়ে কিছুদিন পরে দেখলাম তাদের ফতোয়া পরিবর্তন হয়ে গেলো! কারণ তারা সেই
দুইজনের একজনকে তাদের বড় হুজুরনী বলে মেনে নিয়েছিলো। যুগের সাথে তাল মেলানোর জন্য
হেকমত, হুদাইবিয়ার সন্ধি, (নিজেদের
মনমতো!) ইসলাম কায়েমের জন্যে সাময়িক আপোস ইত্যাদি বলে নারী নেতৃত্বকে মেনে নেওয়া
যায় - এই মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার জন্য তারাই আবার কোমর বেঁধে মাঠে নামলো।
সেইদিন অতীত হয়েছে। বয়স কম হওয়ার কারণে বর্তমান ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের অনেকেই হয়তো
তাদের দলের অতীত ইতিহাস জানেনা। তাই নির্দ্বিধায় নারী নেতৃত্বের সাথে আপোসের পক্ষে উকালতি করতে
তাদের বাধেনা।
প্রয়োজনীয় কিছু নোট –
> নারী নেতৃত্ব হারাম, এবিষয়ে এই উম্মতের ইজমা
আছে, কারণ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট বলেছেনঃ “যে জাতি নিজেদের শাসকক্ষমতা কোন মহিলার উপর অর্পণ
করে, সে জাতি কখনোই কল্যান লাভ করতে পারেনা।” সহীহুল বুখারীঃ ৬৬১৮, আত-তিরমিযীঃ ২২৬২।
নারী নেতৃত্ব নিয়ে কি হুকুম, বিস্তারিত
জানতে এটা পড়ুনঃ
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1108720025827410:0
>>
অনেকে বলতে পারেন, আমরা কেনো
আওয়ামীলীগ-বিএনপির বিরুদ্ধে বলছিনা? যেখানে জামাতের
লোকেরা মুখে ইসলাম এর কথা বলে…
জবাবঃ আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি – এরা হচ্ছে দুনিয়া পূজারী, অত্যাচারী লোভী এবং
পাপীষ্ঠদের দল। একমাত্র অশিক্ষিত, লোভী ছাড়া কোন ধার্মিক
মুসলমান এই সমস্ত ভন্ডদের সমর্থন করেনা। কিন্তু জামাত-শিবির ‘ইসলাম কায়েম’ এর অপব্যখ্যা দিয়ে একমাত্র তারাই ইসলামের ধারক ও বাহক বলে মনে করে। জামাতীদের ক্বুরআন ও হাদিসের
অপব্যখ্যা, দ্বিমুখী ভন্ডামি নীতির বিরুদ্ধে বললেই
তারা অন্যদেরকে নাস্তিক, আওয়ামী লীগের দালাল বলে গালি
দেওয়া শুরু করে। তাদের এমন প্রতারণাপূর্ণ কাজ দ্বারা দ্বীনকে ভালোবাসে, কিন্তু সঠিক জ্ঞান নেই এমন অনেক তরুণ ভাইয়েরা প্রভাবিত হয়ে গণতান্ত্রিক
ভ্রষ্ট রাস্তায় জান্নাত খুঁজে বেড়ায়। জামাতে ইসলামীর নেতাদেরকে বাঁচানোর জন্যে বা নিজদের দলীয় স্বার্থে
মুসলিমদের গাড়ি ভাংচুর করাকে তারা ওহুদ-বদরের জিহাদ বলে মনে করছে। সেইজন্য তাদের ভ্রষ্ট এবং
গোমরাহী সবার সামনে তুলে ধরা উচিত, যাতে করে
মুসলমান সন্তানেরা তাদের চমকপ্রদ কথাবার্তার দ্বারা ধোঁকায় না পড়ে।
>>>
গণতন্ত্র একটি ইসলাম বিরোধী মতবাদ, গণতান্ত্রিক
পদ্ধতিতে ভোট দেওয়া জায়েজ নয়। বিস্তারিত দেখুন –
গণতন্ত্র একটা শিরকী ব্যবস্থাঃ
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=681783831854367&set=pb.125167817515974.-2207520000.1388080559.&type=3&src=https%3A%2F%2Ffbcdn-sphotos-a-a.akamaihd.net%2Fhphotos-ak-prn2%2F1470052_681783831854367_813273773_n.jpg&size=515%2C558
ভোট দেওয়া, গণতন্ত্র ও নির্বাচন নিয়ে
ফাতওয়াঃ
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/694309127268504/
>>>
অনেক বলতে পারেন, জামাতে ইসলামীর নেতারা
নারী নেতৃত্বকে জায়েজ বলেনা। নারী নেতৃত্বের অধীনে ক্ষমতায় যাওয়ার পরে জামাতে ইসলামীর
শীর্ষস্থানীয় মুফতি, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর
বক্তব্য তাঁর নিজের মুখ থেকে শুনুন –
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী বলেছেন, “নারী নেতৃত্বকে আমরা হারাম বলিনি, ইসলাম এটাকে হারাম বলেনি। নারী নেতৃত্বকে ইসলাম হারাম বলেনি।”
https://www.facebook.com/video.php?v=10205902288387040&fref=nf
__________________________________________
ইসলামী গণতন্ত্র?
আল্লামাহ
সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ
বলেছেন, “ইসলামী গান কথাটি একটা বিদআ’ত। কারণ, ইসলাম মানুষকে গান গাওয়ার
হুকুম দেয় নি যে, কিছু গানকে ইসলামী গান বলা হবে।”
চিন্তা
করে দেখুন একশ্রেণীর রেডিও, টিভি, ইউটিউব চ্যানেলের পরিচালকদের মূর্খতা, যারা ‘নাশিদ’ বা ইসলামী
গান নাম দিয়ে জেইন বিখা, সামি ইউসুফ, মাহের জেইন, আহমাদ বুখাতির বা অন্যান্য কন্ঠ শিল্পীদের
গাওয়া ‘লাহুয়াল হাদীস’ (vain
talk, বেহুদা কথা-বার্তাকে) সাধারণ মুসলমানদের মাঝে প্রচার করছে। আর সরলমনা মুসলমানেরা এইগুলোকে ‘ইসলামী’ মনে করে,
জায়েজ বা ভালো জিনিস মনে করে শুনছে, তাদের মূল্যবান সময় ও মনোযোগ নষ্ট করছে।
আধুনিক
যুগে মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত এমনই আরেকটি প্রতারণার নাম হচ্ছেঃ “ইসলামী গণতন্ত্র”। ক্ষমতা অর্জনের জন্য ইসলামী আন্দোলন
নাম দিয়ে একশ্রেণীর হুজুর মাওলানারা গণতন্ত্রের নাম পরিবর্তন করে ‘ইসলামী গণতন্ত্র’ নাম দিয়েছে। আর কথিত ইসলামী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার
জন্য তারা ফিতনা-ফাসাদে লিপ্ত হচ্ছে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য নিয়ে কথিত এই ইসলামী আন্দোলনের জন্য হরতাল/মিছিল
করে তাদের কোন কর্মী নিহত হলে তাকে ‘শহীদ’ বলে জান্নাতের সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের সময় তাদের দলের মুফাসসির
সাহেবরা ‘ক্বুরআনের তাফসীর’ নাম নিয়ে
মূলত তাদের দলের পক্ষে ক্যানভাস করে।
তাদের দলকে ভোট দিলে তাতে নাকি ওহুদ-বদরের মতো জিহাদের সমান সওয়াব হয়,
তাদেরকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় আনলে জান্নাতে যাবে বলে জনগণকে লোভ দেখাচ্ছে। মূলত পীর-মুরিদীর মতোই এরা ক্বুরআনকে
বিক্রি করে খাওয়া একপ্রকার ধর্ম ব্যবসায়ী।
যাই হোক,
আব্রাহাম লিংকনের পদ্ধতিতে যারা ইসলাম/খিলাফত/আল্লাহর আইন কায়েম করার অলীক কল্পনাতে
বিভোর, তাদের জন্য আমি কিছু দার্শনিকের বক্তব্য তুলে ধরছি।
(১) জর্জ
বার্নাড শ’ বলেছেন, “স্বল্প সংখ্যক দুর্নীতিপরায়ণ লোকের নিয়োগ ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে
গণতন্ত্র দান করেছে; অসংখ্য অযোগ্য ব্যক্তির নির্বাচন ব্যবস্থা।”
(২) টমাস
কার্লাইল বলেছেন, “Democracy
is a government of fools, for the fools and by the fools.”
অর্থাৎ,
“গণতন্ত্র হচ্ছে “মূর্খদের
দ্বারা পরিচালিত, মূর্খদের জন্য এবং মূর্খদের শাসন।”
(৩) এমিল
ফাগুয়ে বলেছেন, “গণতন্ত্র
হচ্ছে অনভিজ্ঞদের শাসন।
কেননা বিজ্ঞ ও জ্ঞানী লোকেরা কখনো মানুষের দুয়ারে
দুয়ারে ধর্ণা দিয়ে ভোট চায় না।
ফলে শুধুমাত্র লোভী ও অপদার্থ লোকেরাই ভোট নিয়ে ক্ষমতায় আসে। তারা অগ্নিঝরা ভাষণ দ্বারা মানুষকে
ভুলিয়ে ভোট নেয়। অথচ, শাসনকার্য
এত সহজ নয় যে, কয়েক দিনের মধ্যেই সে সবকিছু রপ্ত করে নিবে। এজন্য দক্ষ ও নিপুণ হাতের প্রয়োজন।”
(৪) ইবসেন
তার একটি নাটকে প্রধান চরিত্রকে দিয়ে বলিয়েছেন, “গণতন্ত্র
কখনও দেশের জন্য ভাল বয়ে আনতে পারে না।
কারণ, গণতন্ত্র হচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের শাসন। আর একটা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ
কি কখনও জ্ঞানী হয়? কক্ষণো না, বরং সব দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ লোকই হচ্ছে মূর্খ।”
আফসোস!
ইয়াহুদী খ্রীস্টানরা দার্শনিকেরা গণতন্ত্রের অসারতা বুঝতে পেরেছে, অথচ একশ্রেণীর ‘আলিম’ নামধারী
লোকেরা ক্বুরআন-হাদীস পড়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে গণতন্ত্র ও ভোটের পেছনে ছুটে ইহকাল
ও পরকাল নষ্ট করছে।
__________________________________________
গণতন্ত্র না করে মুসলিমরা কিভাবে ক্ষমতায় যাবে?
মুসলিমরা
কিভাবে ক্ষমতায় যাবে প্রশ্ন না করে, আসলে প্রশ্ন করা উচিতঃ বর্তমান মুসলিমরা কি ক্ষমতা
বা আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার যোগ্য?
২০১১ সাল
থেকে মাত্র পাচ বছরে শুধুমাত্র সিরিয়াতে দেড় লক্ষের অধিক মুসলিমদের হত্যা করা হয়েছে,
ফিলিস্তিনে বিগত প্রায় ৬৭ বছর ধরেই চলছে মুসলিমদের উপর নির্যাতন, ইরাক, আফগানিস্তান,
সোমালিয়া, চেচনিয়া, বসনিয়া, মালি, আফ্রিকান বিভিন্ন দেশে, ভারতসহ প্রায় সব দেশেই বর্তমান
মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।
মুসলিমরা
আজ আল্লাহর অবাধ্য, দ্বীন থেকে বেড়িয়ে অনেকে কাফের মুশরেকদের সাথে মিশে যাচ্ছে। আপনি দেখে বুঝবেন না কে গণেশ, কার্তিক
আর কে হাসান, কে হুসাইন! কে স্বরস্বতী কে আয়িশাহ, ফাতেমা। নামধারী মুসলিমরা হিন্দুদের মতো
কপালে সিদুর, তিলকচিহ্ন পড়ে, ধুতি পড়ে, উল্কি আকে, স্মৃতি স্তম্ভ বানিয়ে মুশরেদের মতোই
ইট পাথরের গায়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দিচ্ছে, অলি আওলিয়া নাম দিয়ে, মাযার বানিয়ে, পীরপূজা করা
হচ্ছে, তাদেরকে দেবতার মতো উপাসনা করা হচ্ছে।
এরকম প্রকাশ্য
শিরক এবং আল্লাহদ্রোহীতার কারণে মুসলিমদেরকে আল্লাহ বিভিন্নভাবে শাস্তি দিচ্ছেন। ২০১৩ সালে আমাদের দেশের সাভারে একটা
মাত্র বিন্ডিং ধসে ১৫০০র অধিক মানুষ নিহত হলো। সেই বছরই আফগানিস্থানে পাহাড় ধসে
অল্প কিছু সময়ের মাঝেই একটা গ্রামের ২৫০০-র বেশি মানুষ নিহত হলো। এই সবগুলো হচ্ছে আল্লাহর গজব। মুসলিমদের মাঝে শিরক বেদাত, হারাম
কাজ, অবাধ্যতা ও নাফরমানি ঢুকে গেছে।
একারণে আল্লাহ তাআ’লা দুনিয়াবী
কিছু আজাব গজব দিয়ে মুসলিমদের দ্বীনে ফিরে আসার জন্য সতর্ক করছেন।
মহান আল্লাহ
তাআ’লা বলেন, “আল্লাহ
কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা
পরিবর্তন করে।” সুরা রা’দঃ ১১।
আল্লাহ
তাআ’লা আরো বলেছেন, “তোমাদের
মধ্যে যারা ঈমান আনে ও নেককাজ করে, আল্লাহ তাদের সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই
পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন।
যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্বে যারা ঈমানদার ছিলো তাদেররকে,
এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের
ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে নিরাপত্তা দান করবেন। তারা শুধুমাত্র আমারই ইবাদত করবে
এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না।” সুরা আন-নূরঃ ৫৫।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমরা
ঈনা পদ্ধতিতে (ব্যবসা নাম দিয়ে কৌশলে সুদ খাওয়ার একটা পদ্ধতি) কেনা-বেচা করবে, গরুর
লেজ আকড়ে থাকবে (অর্থাৎ পশু পালনে বেশি মনোযোগী হয়ে যাবে), কৃষিকাজ নিয়েই সন্তুষ্ট
থাকবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের
‘দ্বীনে’ প্রত্যাবর্তন
করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে সেই অপমান উঠিয়ে নেওয়া হবেনা।” সহীহ,
সিলসিলাতুল আহা’দীস আস-সহীহা’হঃ ১১।
সুতরাং
দেখা যাচ্ছে যে, বর্তমানে মুসলিমদের উপর যে দুঃখ দুর্দশা এসেছে, যে লাঞ্চনা-গঞ্জনা,
কাফেরদের পক্ষ থেকে নির্যাতন ও অপমানের শিকার হচ্ছে মুসলিমরা প্রতিনিয়ত, বিভিন্ন আসমানী
জমীনের বালা মুসীবত আসছে মুসলিমদের উপরে, যেমন -
(১) ইন্দোনেশিয়াতে
সুনামিতে লক্ষাধিক মানুষ পানিতে ডুবে নিহত,
(২) বাংলাদেশের সাভারে বিন্ডিং ধ্বসে ১৫০০র
মতো নিহত,
(৩) আফগানিস্তানে ভূমিধ্বসে নিমিষের মাঝে
~২৫০০র মতো মাটিচাপা পড়ে নিহত,
(৪) বার্মা, ভারতের গুজরাট, আসাম, আফ্রিকার
বিভিন্ন দেশে, মিশর, সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলিমদের গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ,
বাড়ি থেকে উচ্ছেদ ইত্যাদি
এসবই হচ্ছে
মুসলিমদের পাপের ফসল।
মুসলিমদেরকে আল্লাহ তাআ’লা বিশেষ
দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন (আল্লাহর ইবাদত করা, মানুষকে সেইদিকে আহবান করা…) সেটা তারা করছেনা – এরফলে
তাদের উপর অপমানের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ। এই অপমানের ও আজাবের শিকার হয়েও
যারা নিজেদের সংশোধন করবেনা, পাপাচার ও অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকবে, আল্লাহ তাদের কাছ থেকে
দ্বীনকে কেড়ে নিয়ে তাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে আনবেন। যেমনটা আমরা দেখতে পাই, আন্দালুস
বা স্পেনে। এক সময়
সেখানে মুসলিমদের রাজত্ব ছিলো, কিন্তু সেখানকার মুসলিমরা দ্বীনকে ভুলে দুনিয়াকে নিয়ে
ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ইমাম ইবনে হাজম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মুসলিম সমাজের অবস্থা এতো খারাপ
হয়েগেছিলো যে, মেয়েরা প্রকাশ্যে তাদের কপালে টাকার অংক লিখে রাখতো। একের পর এক মুসলিম দেশের পতন হচ্ছিলো
– মুসলিমরা আল্লাহর দ্বীনে ফিরে না এসে পাপাচারে লিপ্ত ছিল। তাদের আল্লাহদ্রোহীতা ও সীমা লংঘনের
জন্য দেখুন – আজকে স্পেনে স্থানীয় মুসলিম নেই
বললেই চলে, সেখানকার মসজিদগুলো হয়ে গেছে যাদুঘর!
আজকে বাংলাদেশসহ
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করে দেখুন –
(১) কোটি কোটি মানুষ কবর মাযার পূজা, পীর
পূজায় লিপ্ত। সূফীবাদের
শিরক, বেদাত ও কুসংস্কারে ডুবে আছে গোটা সমাজের লোকেরা। এমন অনেক মুসলমান আছে যাদের আকীদা
আসলে কাফের মুশরেকদের মতোই।
যেমনটা রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, আমার উম্মতের একটা অংশ মুশরেকদের সাথে মিশে
যাবে, তারা মূর্তি পূজা করবে।
(২) দেশ চলে হয় খ্রীস্টান আব্রাহাম লিংকনের
গণতন্ত্র, নয়তো নাস্তিক কার্ল মার্ক্স, লেলিন এর সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ সহ বিভিন্ন
ইসলামবিরোধী মানবরচিত মতবাদ, আইন ও সংবিধান দিয়ে (আল্লাহর আইনের বিপরীতে মানব রচিত
আইন=কুফুরী, শিরক)।
(৩) অধিকাংশ মানুষই হচ্ছে বেনামাযী (বেনামাযী=কাফের)।
(৪) রাস্তাঘাটে, প্রত্যেকে মোড়ে মোড়ে সুদী
ব্যংক বা এনজিওর ব্রাঞ্চ। (সুদখোর=আল্লাহ
ও তার রাসুলের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত)।
(৫) রাস্তা-ঘাটে প্রকাশ্যে খুন করছে অত্যাচারী,
জালেম সম্প্রদায় কোন বিচার নেই, আইন আদালাত নেই।
(৬) বেহায়া, বেপর্দা, অর্ধনগ্ন নারী যারা
পতিতা শ্রেণী নারীদেরকে (দেশি-বিদেশী নায়িকা, গায়িকা) অনুকরণ করে (জীবনযাত্রা, চালচলন,
পোশাক আশাকে)।
(৭) স্কুল কলেজ, অফিস রাস্তা-ঘাটসহ পুরো
সমাজ ব্যবস্থায় জিনা ব্যভিচার, পরকীয়া, অশ্লীলতার ব্যপকতা।
যতদিন পর্যন্ত
না, মুসলিমরা নিজেদেরকে সংশোধন করে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করে, ততদিন পর্যন্ত তাদের সমস্যার
সমাধান হবে না। আবার একশ্রেণীর
মানুষ যেটা মনে করে, দ্বীন প্রতিষ্ঠ মানে শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী আইন চালু করা,
শুধুমাত্র এতেই যথেষ্ঠ না।
ক্বুরআন হাদীসে শুধু খলিফা, সুলতান, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীকে সংশোধন
করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে, একথা বলা হয়নি। বরং বলা হয়েছে – জাতির পরিবর্তন, মুসলিম জাতিকে দ্বীনে ফিরে আসা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তোওফিক
দান করুন, আমিন।
__________________________________________
ইসলাম
হরতাল সমর্থন করেনা
=> রাস্তা থেকে
কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা নেকীর কাজঃ
(১) আল্লাহর রাসুল (সা.)
বলেছেন, “ঈমানের ৬০ অথবা ৭০টির
বেশি শাখা রয়েছে। তার মধ্যে সর্বোচ্চ শাখা হলো ‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ এই সাক্ষ্য দেওয়া। আর সর্বনিম্ন শাখা হলো
রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া।” সহীহ বুখারীঃ ৯, সহীহ
মুসলিমঃ ১৬২।
(২) নবী (সা.) বলেছেন, “একদা আমার নিকট উম্মতের
ভালো ও মন্দ আমলগুলো পেশ করা হলো। তার মাঝে ভালো আমল সমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি
আমল দেখলাম, তা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করা।” সহীহ মুসলিমঃ ১২৬১।
(৩) একদা সাহাবী আবু
বাররাহ (রা.) বললেন, “হে আল্লাহর নবী! আমাকে এমন একটি আমল বলে
দিন, যার দ্বারা আমি উপকৃত হতে পারব।” নবী (সা.) বললেন,
"মুসলিমদের রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করো।” সহীহ মুসলিমঃ ৬৮৩৯।
=> রাস্তায় কোন
কষ্টদায়ক বস্তু ফেলে পথচারীদেরকে কষ্ট দেওয়া হারামঃ
(৪) বিশ্বনবী মুহাম্মাদ
(সা.) বলেছেন, “তোমরা তিনটি অভিশাপ আনয়নকারী কাজ থেকে বেচে থাকো। আর তা হলোঃ ঘাটে, মাঝ
রাস্তায় এবং ছায়ায় পায়খানা করা।” আবু দাউদঃ ২৬, ইবনে
মাজাহঃ ৩২৮, সহীহ তারগীবঃ ১৪১।
=> আল্লামাহ মুহা'ম্মদ
বিন সালিহ আল-উষায়মিন (রহ.) বলেছেন, “রাস্তা থেকে কোন কষ্টদায়ক
বস্তু সরিয়ে দেওয়া নেকীর কাজ হয় তাহলে রাস্তায় কষ্টদায়ক কোন বস্তু ফেলা অত্যন্ত
নিকৃষ্ট একটি পাপ কাজ।” শারহ রিয়াদুস সালেহীনঃ ৩/৩৭।
=> রাস্তা বন্ধ করে
মুসলমানদের জীবনযাত্রা বন্ধ করা জুলুমঃ
উপরের আলোচনা থেকে স্পষ্ট
প্রমানিত হয় যে, একজন ঈমানদার ব্যক্তির লক্ষণ হচ্ছে সে রাস্তায় কোন কষ্টদায়ক বস্তু
ফেলবে না। বরং রাস্তায় কোন কষ্টদায়ক বস্তু থাকলে সে তা সরিয়ে
দেবে, যাতে মানুষেরা কষ্ট না পায়।
রাস্তাতে যদি কষ্টদায়ক
জিনিস ফেলা নিষিদ্ধ হয়, এটা খুব সহজেই বোঝা যায় যে, বল প্রয়োগ করে মুসলমানদের
রাস্তা-ঘাট বন্ধ রাখা এবং তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধা দেওয়া আরো বড় পাপ।
মুসলমান অধ্যুষিত কোন
দেশে (যেমন বাংলাদেশে) নিজের কিংবা দলের স্বার্থ আদায় করার জন্য রাস্তা বন্ধ করে
মুসলমানদের জীবন যাত্রা স্তব্ধ করে দেওয়া, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, কল-কারখানা
বন্ধ করে শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য ব্যহত করে লোকদের ক্ষতি করা, জন-জীবন বিপর্যস্ত
করে তোলা, হরতাল সফল করার জন্য আইন শৃং্খলা বাহিনী এবং বিপক্ষ দলের লোকদের সাথে
মারামারি ও খুনাখুনিতে লিপ্ত হওয়া সম্পূর্ণ হারাম এবং জঘন্য কাজ।
আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয়
পার্টি হরতাল ডাকে নিজ দলীয় স্বার্থ হাসিল করার জন্য, তারা কখনো এটাকে ইবাদত বলে
দাবী করেনা। তাদের হরতাল ডাকা ‘কবীরাহ গুনাহ’ বলে বিবেচিত হবে।
পক্ষান্তরে, জামাতে
ইসলামী, চরমোনাই পীর বা এমন কথিত ‘ইসলামিক দলগুলো’ হরতাল ডাকে আর তারা দাবী
করে এইভাবে তারা ইসলাম কায়েম করবে। হরতাল ডাকা, হরতাল সফল করার জন্য লোকদেরকে
মারধর করা, পুলিশ এবং সরকারী দলের লোকদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া, গাড়ি এবং
জনগণের সম্পদ ভাংচুর করাকে তারা ওহুদ বদরের মতো ‘পবিত্র জিহাদ’ এবং ‘সবচাইতে বড় ইবাদত’ বলে মনে করে। এমনকি হরতাল করতে গিয়ে
তাদের কেউ নিহত হলে তারা তাকে ‘শহীদ’ বলে সার্টিফিকেট দেয়। একারণে তাদের এই কাজ
ইসলামের নামে "বিদআ'ত" বলে গণ্য হবে।
অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন,
এখন তো আমাদের দেশে কোন হরতাল হচ্ছেনা, তাহলে হরতাল নিয়ে লেখার প্রয়োজন কি?
আমাদের দেশে এখন কোন
হরতাল হচ্ছেনা কারণ আওয়ামীলীগ অত্যন্ত কঠোরভাবে বিরোধী দলকে পংগু করে রেখেছে। প্রয়োজনে বিরোধী দলের
লোকদেরকে গ্রেফতার করে, গুম করে, অন্যায়ভাবে খুন করে, মিছিলের মাঝে এলোপাতাড়ি গুলি
করে যেকোন ধরণের হরতাল বা বিক্ষোভ বন্ধ করে রেখেছে। কিন্তু কেউই ক্ষমতায়
চিরদিন টিকে থাকেনা। বাংলাদেশে গণতন্ত্রবাদী বিরোধী দল যখনই সুযোগ পাবে তখনই
তারা আবার হরতাল ডেকে দেশ ও জাতির ক্ষতি করবে। সেইজন্য ভবিষ্যতে কোন দল
যদি হরতাল ডাকে, সেটা আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি কিংবা জামাতে ইসলামী, তারা
যে যুক্তিতেই হরতাল ডাকুক না কেনো, আমি মুসলিম ভাই ও বোনদেরকে সতর্ক করতে চাই - এই
ধরণের কাজ ইসলাম সমর্থন করেনা। কেউ যদি এইধরণের কাজ ‘ইসলাম’ নাম দিয়ে করতে চায় তাহলে
তারা বিদআ'তী এবং মুসলমানদের মাঝে বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী। এদের থেকে নিজেরা সাবধান
থাকুন, অন্যদেরকেও সাবধান করুন।
ইসলামের প্রচার ও
প্রসারের দুইটি মাধ্যম রয়েছেঃ দাওয়াত এবং জিহাদ। হরতাল করে লোকদের কাজ কর্ম
বন্ধ করে দেওয়া এটা না দাওয়াত, না এটা কোন জিহাদ। এইভাবে ইসলামের কোন
উপকার ছাড়া শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের ক্ষতি করা ছাড়া আর কিছুই হয়না।
সর্বশেষ, ইয়াহুদী ও
খ্রীস্টানদের আবিষ্কৃত গণতান্ত্রিক মতবাদের মাঝে শিরক, কুফর, ধর্মদ্রোহীতা এবং
ধর্মহীনতা মিশ্রিত রয়েছে। এই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ, বিএনপি,
জামাতে ইসলামী বা এমন অন্য দলের লোকগুলো নিজেদেরকে মুসলমান বলে দাবী করে, কিন্তু
কাজ করে ইসলামের বিপরীত। এদের মাঝে কিছু কিছু লোক ধর্মকে পূজি করে রাজনীতি করে। নিজেদের স্বার্থ রক্ষার
জন্য তারা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক এমন কাজ করে। কিন্তু ক্বুরআন বা
হাদীসের মনগড়া অপব্যখ্যা দিয়ে তারা নিজেদের কুকর্মের পক্ষে সাফাই গায়।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে
হেফাজত করুন, আমাদেরকে পাপাচার ও গোমরাহী থেকে দূরে রাখুন, আমিন।
__________________________________________
শিয়াদের
ঈমান-আকীদা কেমন?
অনেক ভাইয়েরা
শিয়াদের ঈমান কেমন জানার জন্য প্রশ্ন করেন।
শিয়াদের ঈমান-আকীদা সম্পর্কে জেনে নিন।
শিয়া ইসনা-আশারিয়াদের আকীদা-বিশ্বাসের সংখিপ্ত পরিচয় নিন্মে তুলে দেওয়া হলো। সাথে আরো ঈমান ও ইসলাম ভঙ্গের কারণগুলো
দেওয়া হলো। যাতে করে
পাঠক তার নিজ বিবেচনায় শিয়াদের নাস্তিক ও মুরতাদ হওয়ার বিষয়ে সঠিক ধারণা লাভ করতে পারেন।
(১) আল্লাহ
আলী রাঃ এর কাছে ওয়াহী নাযিল করেছিলেন, কিন্তু জিব্রাইল ভুলে সেই ওয়াহী নিয়ে আসে মুহাম্মাদ
সঃ এর কাছে। আল মুনিয়া
ওয়াল আমালঃ ৩০।
(২) আল
ক্বুরআন ‘কামিল’ (সম্পূর্ণ) নয়। যখন সমস্ত সাহাবারা
মুরতাদ হয়ে যান তখন আসল ক্বুরআন আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। আত-তানবিহ অররাদ্দ-আল মুলিতিঃ ২৫।
(৩) ক্বুরআনের
অনেক আয়াত আসলে আয়াত নয়, তা বাজে কথা (নাউজুবিল্ললাহ)। আল-অসীকাঃ ২২১।
(৪) রাসুল
সঃ নিজেই আংশিক শিয়া দর্শন প্রচার করে গেছেন। বাকিটা হজরত আলী প্রচার করেছেন। এহকাকুল হক-তাসাত্তুরীঃ ২/৮৮।
(৫) শিয়া
ইমামরা আল্লাহ ও তাঁর সৃষ্টির মাঝখানে মধ্যস্থতাকারী। বিহারুল আনোয়ারঃ ৯৯/২৩।
(৬) শিয়া
ইমামদের কবর জিয়ারত কা’বায় হজ্জ
করার চাইতে উত্তম। সাওয়াবুল
আ’মালঃ ১২১।
(৭) যে
হুসাইন রাঃ এর কবর জিয়ারত করে সে যেন আল্লাহর আরশ জেয়ারত করে। আল-মাজার
আল-মুফিদঃ ৫১।
(৮) হুসাইন
রাঃ এর কবরের মাটি সকল রোগের ঔসুধ।
আল-আমালিঃ ৯৩/৩১৮।
(৯) আল্লাহ
ও শিয়া ইমামদের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই (নাউজুবিল্লাহ)। মাসাবিহুল আনোয়ারঃ ২/৩৯৭।
(১০) নক্ষত্র
ও তারকা রাজি মানুষের সুখ-দুঃখ ও জীবন-মরনের উপর হস্তক্ষেপ করে। রাওদা মিনাল কাফিঃ ৮/২১০৩।
(১১) আলী
রাঃ গায়েব জানেন। মির’আতুল আনোয়ারঃ ৫৯। তিনি দুনিয়া ও আখেরাতের বিষয়ে হস্থক্ষেপ
করেন। উসুল আল-কাফিঃ ১/৩০৮। তিনি মৃতকে জীবিত
করেন। উসুল আল-কাফিঃ ১/৩৪৭।
(১২) যে বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ অবতরণ করেন, সেই ব্যক্তি কাফের। উসুল আল-কাফিঃ ১/৯০।
(১৩) কালেমা শাহাদাতের সাথে আরো বলতে হবে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে,
আলী রাঃ আল্লাহর অলী।
তারা এমন কালেমা নব জাতকের কানে বলে এবং মৃত ব্যক্তির শয্যায় শিয়রে উচ্চারন
করে। ফুরুউল কাফিঃ ৩/৮২।
(১৪) যারা আবু বকর, ওমর, ওসমান, মুয়াবিয়া, আয়েশা ও হাফসা রাঃ কে
প্রত্যেক নামাজের পর গালি দিবে তারা আল্লাহকে সবচাইতে বড় উপহার প্রদান করবেন।
ফুরুউল কাফিঃ ৩/২২৪)।
(১৫) শিয়া ইমামরা অন্যের জন্য জান্নাতে প্রবেশ নিশ্চিত করতে পারে। রিজালুল কাশিঃ
৫/৪৯০।
১৬) মুতা
বিয়ে না করলে তার ইমান পূর্ণতা লাভ করেনা।
আর মুতা বিয়ে হল অলি ও সাক্ষী ছাড়াই কোন মহিলাকে চুক্তির মাধ্যমে সাময়িক
সময়ের জন্যে যৌন সঙ্গী করা। যে কোন মুমিনা নারীর সাথে মুতা করলো
সে ৭০ বার কা’বা ঘর জেয়ারত করার সমান সাওয়াব পায়। (নাউজুবিল্লাহ)।
মিসবাহুত তাহাজ্জুদ-আত তুরসিঃ ২৫২।
(১৭) শিয়াদের ইমাম খোমেনী বলেছে, “মুতা ছাড়া যত রকমের নষ্টামি আছে তাতে কোনই দোষ নাই যদিও তা শিশুর
সাথে হোক না কেন।” (নাউজুবিল্লাহ)! তাহরিরুল অসিলাঃ ২/২২১।
(১৮) আল্লাহ শিয়া ইমামদের নুর থেকে ফেরেস্তা সৃষ্টি করেছেন। ৪০০০ ফেরেস্তা এ কারনে হুসাইন রাঃ’র কবরে কেয়ামত পর্যন্ত কান্না রত আছেন। জামিউল
ফাওয়ায়েদ-কারাস্কি: ৩৩৪।
(১৯) ফেরেস্তাদের মধ্যে গোলযোগ হলে আল্লাহ আলী রাঃ কে ফেরেস্তা
পাঠিয়ে আসমানে তুলে নিয়ে যান মিমাংশা করার জন্যে। ইখতিসাসঃ ২১৩।
(২০) শিয়া শাইখ ‘বিন দ্বারা’ বলেছে, “আল্লাহ
আলীকেই মুহাম্মাদ করে পাঠিয়েছিলেন।” নিহারুল আনোয়ারঃ
২৫/৩০৫।
(২১) শিয়া ইমাম গন ‘ওয়াহী’ ছাড়া কিছু বলেন না। বিহারুল আনোয়ারঃ ১৭/১৫৫।
(২২) খোমেনী বলেছেন, “আমাদের ইমামদের মর্যাদার আসন এতই উচ্চে যে যেখানে আল্লাহর নিকটতম
ফেরেস্তা এবং রাসুল পৌঁছাতে পারেন না।” হুকুমাহ ইসলামিয়াঃ ৫২।
(২৩) শিয়াদের ‘খোমেনী’ পদবী ধারণকারী কোন আলেম মুসা নবীর চাইতে বেশি মর্যাদাবান। দাওলা ইসলামিয়াঃ ১০৭।
(২৪) কবরে প্রথম জিজ্ঞাসা করা হবে আহল-বাইতের ভালবাসা সম্পর্কে। মানে আলী রাঃ’র পরিবারের সঙ্গে মহাব্বত সম্পর্কে। বিহারুল
আনোয়ারঃ ২৭/৭৯।
২৫) জান্নাতের
আটটি দরজার তিনটি ইরানের ‘ক্বুম’ নামক শহরবাসীর জন্যে নির্ধারিত। বিহারুল
আনোয়ারঃ ৫৭/২১৮।
(২৬) শিয়া শাইখ হুররুল আমেলি বলেছে, “কেয়ামতের দিন সকল সৃষ্টির হিসাব নেওয়া
হবে শিয়া ইমামগণের মাধ্যমে।” আল ফুসুলুল মুহিম্মাঃ ১/৪৪৬।
(২৭) শিয়া শাইখ আল জাজায়েরী বলেন, “রাসুল সঃ এর মরণের পর চারজন সাহাবী ছাড়া সকলেই মুরতাদ বা নাস্তিক হয়ে যায়। তারা হলেন সালমান
ফারেসি, আবু জর আল-গিফারী, মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ ও আম্মার ইবনু ইয়াসের। আল
আনোয়ারুন নো’মানিয়াঃ ১/৮১।
(২৮) আবু বকর রাঃ জীবনের বেশীর ভাগ সময় মূর্তির খেদমত করেছেন। তার ঈমান
ছিল ইয়াহুদী ও নাসারাদের ঈমানের মত। সে রাসুলের পিছে নামাজ পড়তো মূর্তি
কাঁধে ঝুলিয়ে। সিরাতুল মুস্তাকীমঃ ২৫/১৫৫।
(২৯) ওমার রাঃ হিজড়া ছিলেন? তার নাকি এমন বদাভ্যাস ছিল যে, পুরুষের
শুক্রাণু ছাড়া তিনি স্বাভাবিক থাকতেন না! আনোয়ার নুমানিয়াঃ ১/৬৩।
(৩০) উমর রাঃ’র কুফুরী নাকি ইবলিসের কুফুরীর চাইতেও কঠিন। তাফসীর আইয়াশিঃ ২/২৪০,
সুরা ইবরাহীম। যে তাঁকে
মুসলমান মনে করে তার উপর আল্লাহর লা’নত। ওমর রাঃ’র মৃত্যু দিবসকে তাদের উৎসবের দিন হিসাবে পালন করে। জালাউল উয়ুনঃ ৪৫।
(৩১) যারা আবু বকর ও ওমার রাঃ কে মুহাব্বাত করে তারা কাফের। হাক্কুল ইয়াক্কীনঃ ৫২২।
(৩২) রাসুল সাঃ এর
দুইজন স্ত্রী আয়েশা রাঃ ও হাফসা রাঃ কাফের। তাফসীর কাম্মিঃ ৫৯৭।
(৩৩) আয়েশা রাঃ জেনা কারিনী।
(নাউজুবিল্লাহ!)। ইমাম মাহদি
এসে তাঁকে কবর থেকে তুলে বিচার করবেন। ইলালুশ শারাইয়ীঃ ২/৫৬৫।
(৩৪) শিয়া শাইখ আলী গারওয়াবী বলেছে, “রাসুল সঃ এর পুলিংগ জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে কেননা তিনি কাফের
মহিলাদের সাথে সঙ্গম করেছেন।” (নাউজুবিল্লাহ!)। কাশফুল আসরার- মুসাবীঃ ২৪।
(৩৫) শিয়া ইমাম ও অলীদের কবর জেয়ারত করা
ফরজ, যে করেনা সে কাফের। কামিল জিয়ারাতঃ ১৮৩।
(৩৬) কোন ক্ষতির আশঙ্কায় সত্য গোপন করা,
শিয়া ইমান ও আকীদা প্রকাশ না করার নাম ‘তাকিয়া’ বা তুকিয়া। এই তাকিয়া যে করেনা তার কোন ইমান
নাই। শারহ আকায়েদ সাদুকঃ ২৬১, উসুলুল
কাফীঃ ২/৫৭৩। যে তুকিয়া করেনা সে কাফের। মাকাসিব মুহাররামাহঃ
২/১৬৩।
(৩৭) মক্কা ও মদীনার ইমামের পিছনে শিয়া
নামাজ পড়ে তুকিয়া হিসাবে।
তাতে তাদের ইমামের পিছনেই নামাজ পড়া হয়। জামিউল আখবারঃ ১১০।
(৩৮) অনেক শিয়া মরার পরে পুনর্জীবন লাভ
করে। আওয়ায়েল
মাকালাতঃ ৪৬।
(৩৯) শিয়াদের কল্পিত ইমাম মাহদি তার পিতা
হাসান আল আস্কারীর কোন দালানের তলায় লুকিয়ে আছে আত্মপ্রকাশের অপেক্ষায়। আল মাকালাত ওয়াল ফেরাকঃ ১০২।
(৪০) তাদের ইমাম মাহদি আত্মপ্রকাশ
করার পূর্ব পর্যন্ত শিয়াদের জন্য জুমার নামাজ ফরজ নয়। কাওয়ায়েদ আল আমেলিঃ ২/৬৯।
(৪১) কেয়ামতে শিয়াদের গুনাহ সুন্নীদের
উপর চাপানো হবে, আর সুন্নীদের সাওয়াব শিয়াদেরকে দেওয়া হবে। ইলালুশ শারাইয়ীঃ ২/৪৭৮।
(৪২) সুন্নিরা জাহান্নামী। তারা নাপাক। তাদের জবাই খাওয়া হালাল নয়। তারা জেনার সন্তান। তারা বান্দর ও শূকর।
তাদেরকে হত্যা করা ফরজ। তাদের মাল-সম্পদ চুরি করা, ও তাদের সাথে সমস্ত বিষয়ে বিরোধীতা
করা ফরজ।
আহলুস সুন্নাহর উপর লা’নত করা উত্তম ইবাদাত! বিহারুল আনোয়ারঃ ৮/৩৬৮-৩৭০।
(৪৩) সাবেক শিয়া শাইখ মুছাবী বলেন, “কত মুতা বিবাহকারী যে মেয়ে ও মাকে, দুই
বোনকে, মহিলা ও তার ফুফুকে এবং খালাকে বিছানায় নিয়েছে তার কোন হিসাব দিতে পারবেনা। এমন জঘন্য কাজ তাদের বড় বড় ইমাম
ও শাইখেরাও করে।” (নাউজুবিল্লাহ)
কাশফুল আসরারঃ ৪৬।
(৪৪) শিয়ার জন্যে সুন্নিদের দেশে কাজ করা
জায়েজ যদি সে ইনকিলাব ঘটানো (অর্থাৎ
বিপ্লবের মাধ্যমে সুন্নী রাজত্ব ধ্বংস করার) নিয়ত রাখে। বিলায়াত
আল-ফকীহ-খোমেনীঃ ১৪২-১৪৩।
(৪৫) শিয়া শাইখ নে’মাতুল্লাহ আল জাজায়েরী বলেছে, “সুন্নিদের রব আমাদের রব নয়, সুন্নিদের নবী আমাদের নবী নয়, সুন্নিদের
ইমাম আমাদের ইমাম নয়।” আনোয়ার নো’মানদিয়াঃ ২/২৭৮।
(৪৬) আলী রাঃ এর
কবর জেয়ারত করতে গেলে প্রতি কদমে একটি করে কবুল হজ্জ ও ওমরার সমান সাওয়াব হয়। তাহজীবুল আহকামঃ ৬/১৩০৬।
**সজ্ঞানী
সকল পাঠকের কাছে প্রশ্ন, উল্লেখিত শিয়া আকীদাগুলি কোন ও জাহেল, মূর্খ ও সাধারন মানুষের
মগজে গ্রহণীয় হবে? মানুষ কি ঈমান ও ইসলামের দাবী করে এমন বিশ্বাস
ধারণ করতে পারে? এবং এমন সব গর্হিত ও জঘন্য কাজ করতে পারে?
http://www.ahlalhdeeth.com/vb/showthread.php?t=176551
*এবার একটু
দেখে নেওয়া যাক কি করলে ও কি জাতীয় ঈমান ধারন করলে মুসলমান
হওয়া যায়না, এবং কেউ নিজেকে মুসলমান বলে দাবী করলেও সে ইসলাম
থেকে বের হয়ে যায়ঃ
(১) শিরক করলে।
কথায়, কাজ কিংবা বিশ্বাসে আল্লাহর সাথে তাঁর
সৃষ্টির কোন কিছু বা কোনকিছুতে অংশীদার মনে করা, বলা, এবং
সে জাতীয় কোন আমল করা।
(২) আল্লাহ ও বান্দার মাঝখানে কোন মাধ্যম সাব্যাস্ত করা।
(৩) কাফের মুশরিকদেরকে কাফের মুশরিক মনে না করা। অথবা কাফেরদের
ধর্মকে সঠিক মনে করা।
(৪) রাসুলের সুন্নাহ বা তরীকা ব্যতীত অন্য
কোন তরীকা অথবা দর্শনে বিশ্বাস করা।
(৫) রাসুলের কোন প্রতিষ্ঠিত সুন্নাহ বা তরীকার প্রতি অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা।
(৬) রাসুলের আনীত দ্বীনের কোনও বিষয়, সেটা
ফরয-ওয়াজিব কিংবা সুন্নত হোক, তার প্রতি বিদ্রুপ করা।
(৭) জাদু-টোনা ইত্যাদি
শয়তানি কাজকর্মের উপর আস্থা প্রকাশ করা।
(৮) কাফের মুশরিকদেরকে মুসলমানদের নিধনে ব্যবহার করা।
(৯) কোন ব্যক্তি বা অলি-আওলিয়ারা নবীর
শরিয়ত মানা থেকে মুক্ত হতে পারে এমন বিশ্বাস স্থাপন করা।
(১০) আল্লাহর শুদ্ধ দ্বীন থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া। উক্ত দ্বীনের মূল
তালিম ও শিক্ষা না নেওয়া।
উল্লেখ্য
যে, উলামা কেরাম উক্ত দশটি কারনের পক্ষে ক্বুরআন ও হাদীস
থেকে দলীল সহ ব্যখা দিয়েছেন।
কিন্তু সংক্ষেপ করার উদ্দেশ্যে তা উল্লেখ করা হয়নাই। উক্ত দশটি
কারণের সব কয়টিই শিয়াদের ঈমান ও আমলে
পাওয়া যায়, এতে কোন সন্দেহ নাই।
http://www.alukah.net/sharia/0/7874/
(সংগৃহীত
পোস্ট)
__________________________________________
সাহাবীরা সর্বক্ষেত্রে বিজয়ী হয়েছিলেন, কিন্তু বর্তমান কেনো আমরা
প্রায় সব দেশেই পরাজিত?
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিশ্চয়ই বনী ইসরাঈলের
লোকেরা ৭২-টি দলে বিভক্ত ছিল। আর আমার উম্মত বিভক্ত হবে ৭৩-টি দলে। এই সবগুলো দল-ই
জাহান্নামে যাবে, শুধুমাত্র একটি মাত্র দল ছাড়া।” সাহাবায়ে
কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, “সেই দলটি কারা?” নবীজী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “যারা আমার ও আমার সাহাবাদের
মত ও পথ অনুসরণ করবে।” তিরমিযীঃ ২৬৪১, আল মুজামুল কাবীরঃ ৭৬৫৯।”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর
পর সাহাবীদের যুগ থেকেই কিছু লোকেরা ক্বুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীদের আদর্শ
থেকে বিচ্যুত হয়ে নতুন নতুন পথভ্রষ্ট দল তৈরী করা আরম্ভ করে, আর এভাবেই মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি ও মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সর্বপ্রথম,
যেই বিদআ’তী দলগুলো তৈরী হয় তাদের মাঝে রয়েছে খারেজী, ক্বাদরীয়া,
মুঅতাজিলা, আশআরী-মাতুরিদী, সূফী ইত্যাদি। সেই থেকে যত সময় যাচ্ছে ইতিহাসের পরিক্রমায় মুসলমানদের মাঝে
নিত্য নতুন বিভিন্ন দল, উপদল, মতবাদ বা
ফেরকা সৃষ্টি হচ্ছে এবং মুসলমানদের মাঝে বিভক্তি ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবুল আলা মওদুদী, হাসান
আল-বান্না, সাইয়েদ কুতুব, ইউসুফ
কারযাভী, বায়েজীদ খান পন্নী এমন কিছু লোকের “দ্বীন কায়েম মানে হচ্ছে
ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা” এই ভুল ব্যাখ্যা নিয়ে বিংশ
শতাব্দীতে কিছু নতুন দল সৃষ্টি হয়েছে। এই দলসমূহের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে
রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যাওয়া। আর এজন্য তারা নিত্য নতুন মতবাদ আমাদের সামনে পেশ করছে
এবং নিজেদের মনগড়া কিছু কাজ করে তারা সেইগুলোকে ইসলামের নামে চালিয়ে দেয়।
‘শরীয়াহ’ বা আল্লাহর
আইন কায়েম করা কিংবা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নিয়ে যেই সমস্ত দলগুলো ‘সিরাতাল মুস্তাক্বীম’ থেকে বিচ্যুত
হয়েছে তারা সাধারণত নিজেদেরকে ‘জিহাদী’ দল বলে
আত্মতৃপ্তি বোধ করে এবং তাদের সমালোচনা কারীদেরকে দরবারী, সরকারের
দালাল, তাগুতের গোলাম, ইহুদীদের দালাল
ইত্যাদি আজেবাজে ভাষায় গালি-গালাজ করে। যাই হোক, কথিত এই
জিহাদী দলগুলো দুইটি বড় দলে বিভক্ত।
(১) তাদের
প্রথম দল গণতন্ত্র বা ভোটের মাধ্যমে আল্লাহর আইন কায়েম করার আন্দোলনে ব্যস্ত।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ইসলাম কায়েম করাকে তারা ‘পবিত্র জিহাদ’ বলে মনে করে
এবং এই প্রক্রিয়ায় ইলেকশান বা নির্বাচনকে তারা ওহুদ-বদর যুদ্ধের ময়দানের সমান বলে
মনে করে। ভারত, পাকিস্থান ও বাংলাদেশে এই দলের নাম হচ্ছে
জামআ’তে ইসলামী, আর মিশর ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশসমূহে তাদের
নাম হচ্ছে ইখোয়ানুল মুসলিমিন বা মুসলিম ব্রাদারহুড।
(২) জিহাদীদের
দ্বিতীয় দলটি সারা বিশ্বে জংগী কার্যকলাপ দ্বারা মুসলমান ও কাফের নিধন করে,
আর তারা মনে করে এইভাবে তারা আল্লাহর আইন কায়েম করবে। এই দলগুলো
নিজেদেরকে আল-কায়েদাহ, আইসিস, বোকো
হারাম, জেএমবি ইত্যাদি নামে পরিচয় দেয়। এদের মতে জিহাদ মানে
হচ্ছে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে মানুষ হত্যা করা।
যাইহোক, এই উভয় দলের
লোকেরা মনে করে তারা জিহাদ করছে, আর অন্যরা জিহাদ করছেনা।
বিশ্বের নানা দেশে মুসলমান হত্যা করা হচ্ছ্ব, তারা তার
প্রতিবাদ করে কিন্তু অন্যরা চুপ করে দালালী করছে।
এটা আসলে কথিত ‘জিহাদী’ দলগুলোর
দ্বীন ও দুনিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই না। নীচে আমি কিছু আলোচনা তুলে ধরে
তাদের জবাব দিচ্ছি ইন শ আল্লাহ।
বিশ্ব রাজনীতি ও ইতিহাস
সম্পর্কে যারা সামান্য খোঁজ-খবর রাখেন, আশা করি সকলেই এই একটি
ব্যাপারে একমত যে, আজ বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই মুসলমানেরা
নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, মুসলমানদেরকে প্রকাশ্যে জবাই করা
হচ্ছে, তাদের ঘর-বাড়ি জালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মুসলমান নারীদের ইজ্জত নষ্ট করা হচ্ছে, মুসলমান
শিশুদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। মুসলমানদের উপরে কাফের মুশরেকদের অত্যাচার নির্যাতনের
যেই ভয়াবহ চিত্র বর্তমান মিডিয়ার যুগে প্রকাশ পাচ্ছে, তা
সত্যিই হৃদয় বিদারক। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ’ন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছেঃ
বর্তমান যুগে মুসলমানদের এই শোচনীয় অবস্থার কারণ কি? মুসলমানদের এমন লাঞ্চণাকর
অবস্থা থেকে মুক্তির উপায় কি?
সত্য সন্ধানী আল্লাহ অভিমুখী
প্রতিটি ভাই ও বোনকে আমি অনুরোধ করবো নীচের এই ঘটনাটি মনোযোগ দিয়ে পড়া এবং অনুধাবন
করার জন্য।
আবু ইসহাক আল ফাজারি রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের
সাহাবীদের বিরুদ্ধে তাঁদের শত্রুরা যুদ্ধের ময়দানে কখনোই মোকাবেলা করতে সক্ষম
হতোনা। যখন এন্টিওখে সাহাবীদের বিরুদ্ধে রোমানদের পরাজয়ের সংবাদ তাদের বাদশাহ
হেরাক্লিয়াসের কাছে পৌঁছাল, সে তখন তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে জিজ্ঞাসা
করলো, “হায় আফসোস! তোমরা আমাকে বলো, এই লোকগুলো যারা তোমাদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তারা কি তোমাদের মতো মানুষ নয়?” লোকেরা উত্তর
দিলো, “হ্যা, নিশ্চয় তারা আমাদের মতোই মানুষ।”
হেরাক্লিয়াস পুনরায় প্রশ্ন
করলো, “তোমরা কি তাদের চাইতেও
সংখ্যায় বেশি ছিলে না?” লোকেরা বলল, “সব যুদ্ধেই আমাদের সৈন্য
তাদের চাইতে অনেক বেশি ছিলো।”
হেরাক্লিয়াস আবার প্রশ্ন
করলো, “তাহলে এটা কেমন করে হতে পারে, তোমরা যখনই
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো আর সবসময় তোমরাই পরাজিত হও?”
হেরাক্লিয়াসের রাজদরবারের
একজন সম্মানিত, বয়ষ্ক ও জ্ঞানী ব্যক্তি উত্তরে বলেছিলো, “আমরা তাঁদের (অর্থাৎ
সাহাবাদের) বিরুদ্ধে সবসময় পরাজিত হই কারণ
-
তাঁরা রাত জেগে সালাত আদায় করে আর দিনের বেলায়
সাওম পালন করে, তাঁরা তাঁদের চুক্তি এবং প্রতিশ্রুতি সমূহ যথাযথভাবে রক্ষা
করে, তাঁরা সৎ কাজের আদেশ করে এবং খারাপ কাজে নিষেধ করে,
আর তাঁরা নিজেদের মধ্যে ন্যায়পরায়ণতা ও সদাচারণ বজায় রাখে।
পক্ষান্তরে,
-
আমরা পরাজিত হই কারণ আমরা মদ
পান করি, ব্যাভিচারে লিপ্ত হই, আমরা গুনাহর কাজ করি, আমরা আমাদের চুক্তিসমূহ ভঙ্গ করি, আমরা চুরি করি,
অত্যাচার করি এবং অন্যায় কাজে লিপ্ত থাকি, আমরা
একজন আরেকজনকে এমন কাজ করতে উৎসাহিত করি যা আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করে, আল্লাহ আযযা ওয়া যাল যেই কাজে সন্তুষ্ট হন আমরা একজন আরেকজনকে সেই কাজগুলো
করতে নিষেধ করি এবং আমরা জমীনে দুর্নীতি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করি।”
হেরাক্লিয়াস তার কথা শুনে
বললেন, “তুমি আমাকে সত্যি কথাই বলেছো।”
উৎসঃ আবু বকর আল-দায়নূরি, আল-মুজালাসাহ
ওয়া জাওয়াহি’র আল-ই’লমঃ ৪/৯১।
অনুধাবনঃ
(১) সাহাবীরা
অধিক সৈন্য সংখ্যা, উন্নত প্রযুক্তি বা এমন অন্য কোন
দুনিয়াবী শক্তির কারণে জয়ী হতোনা। বরং তাদের ঈমান, তাদের তাক্বওয়া, সালাত, তাদের সিয়াম, তাদের ন্যায়পরায়ণতা সর্বোপরি, তাদের দ্বীনদারী দ্বারা তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পেরেছিলেন। যে
কারণে আল্লাহ তাদেরকে যুদ্ধের ময়দানে কাফেরদের বিরুদ্ধে সাহায্য করতেন। এভাবেই
তারা অল্প সংখ্যক সৈন্য বাহিনী দ্বারা বিশাল বড় কাফের বাহিনীকে পরাজিত করতে সক্ষম
হতেন।
(২)
পক্ষান্তরে, বর্তমান যুগের মুসলমানেরা দ্বীন থেকে অনেক দূরে
সরে গেছে, এ কারণে তারা আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত।
(৩) সাহাবাদের
ঈমান ছিলো আল্লাহর জন্য একনিষ্ঠ, সেখানে কোন শিরক, বিদআ’ত গোমরাহী ছিলোনা। পক্ষান্তরের বর্তমানে
অধিকাংশ মুসলমানেরা সঠিক ইসলামী ঈমান আকিদাহ কি জানেনা। এই পৃথিবীতে কোটি কোটি
মুসলমান আছে যারা নিজেদেরকে পাক্কা ঈমানদার মনে করে কিন্তু তারা “আল্লাহ সর্ব জায়গায় বিরাজমান” এমন কুফুরী
বিশ্বাস পোষণ করে। সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, হাফেজ মাওলানা,
মুফতি মুহাদ্দিস, ডক্টরেট ডিগ্রীধারী লোকেরা
মসজিদ মাদ্রাসায় বসে উম্মতের লোকদেরকে তোতা পাখির বুলির মতো শিক্ষা দিচ্ছে, “আল্লাহ সর্ব জায়গায় বিরাজমান”, আর সরলমনা
মুসলমানেরা তাদেরকে আলেম মনে করে, তাদের কথা বিশ্বাস করে এমন
কুফুরী আকিদাকে মেনে নিচ্ছে। মিশরের বাদাভী নামক একজন লোকের মাজার আছে যেখানে দশ
লক্ষের অধিক লোক যার তার পূজা করার জন্য। বাংলাদেশের চাঁদপুরে লেংটা বাবার মাজারে
দশ লক্ষের অধিক লোক যার তার পূজা করার জন্য। পাকিস্থানে লাল শাহবাজে লক্ষ লক্ষ লোক
যায়, ভারতে আজমীরে কোটি কোটি লোক যায়, ইরান
ও ইরাকের শিয়াদের ধর্মই হচ্ছে কবর পূজা। এমনিভাবে বর্তমান যুগের কোটি কোটি মানুষ
নিজেদেরকে মুসলমান দাবী করে কুফুরী বা শিরকি বিশ্বাস রাখে। এমন শিরকি বিশ্বাস
থাকলে আল্লাহ বর্তমান যুগের মুসলমানদেরকে কি সাহায্য করবেন? নাকি
তাদের উপর বিভিন্ন আযাব-গজব চাপিয়ে দিয়ে তাদেরকে দুনিয়াবী শাস্তি দিয়ে পেরেশানির
মাঝে রাখবেন?
(৪) সাহাবীরা
রাতের বড় একটা অংশ নফল সালাত আদায় করে কাটাতেন। আর বর্তমান যুগের মুসলমানেরা পাঁচ
ওয়াক্ত ফরয সালাত আদায় করেনা।
(৫) এমনিভাবে
বললে এই লিস্ট অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে যে, বর্তমান যুগের
মুসলমানেরা দ্বীন থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। যে কারণে তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে
দুনিয়াবী শাস্তি ও কাফেরদের পক্ষ থেকে অত্যাচার নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে।
(৬) সুতরাং,
কোন মুসলমান যদি চায় সে মুসলমানদের এই দুরবস্থা থেকে তাদেরকে
সাহায্য করবে, সে যেন নিজেকে পবিত্র করে, হারাম, পাপাচার ও আল্লাহর অবাধ্যতা বর্জন করে
আল্লাহর ইবাদতে মনোযোগী হয়। প্রতিটি মুসলমান যেনো নিজেকে এবং নিজ পরিবারকে সংশোধন
করে, দ্বীনের পথে আনার চেষ্টা করে। অতঃপর সে তার অর্জিত জ্ঞানের দ্বারা অন্য
মুসলমানদেরকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দেয়, সৎ কাজের আদেশ করে ও
মন্দ কাজের নিষেধ করে।
(৭) বর্তমানে
মুসলমানদের দুরবস্থার কথা সবাই জানে, কিন্তু সমাধান জানেনা।
সে কারণে মুসলমান উম্মাহর মাঝে কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই। কথিত জিহাদীরা নিজেদের
মনগড়া পদ্ধতিতে সমাধান খোঁজার চেষ্টা করে। তাদের সমাধানের পদ্ধতি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সম্মানিত সাহাবীদের
বিপরীত। এ কারণে আল্লাহর পক্ষ থেকে কথিত এই জিহাদীরা সাহায্য পায়না। বরং কথিত এই
জিহাদীরা যেই দেশে প্রবেশ সেই দেশের মুসলমানদের অবস্থা পূর্বের চাইতে আরো খারাপ
হয়। আলজেরিয়া, মিশর, তিউনিয়াসিয়া, লিবিয়া, সিরিয়া এমন অনেক দেশেই কথিত জিহাদীদের কারণে
মুসলমানদের বিপদ ও দুর্দশা পূর্বের চাইতে অনেকগুণে বেড়ে গেছে। যদিও কথিত জিহাদীরা
নিজেদেরকে হক্কপন্থী বলে মনে করছে। আল্লাহ এমন পথভ্রষ্ট লোকদের ফিতনাহ ও অনিষ্ট
থেকে মুসলিমদেরকে হেফাজত করুন, আমিন।
উল্লেখ্য, বিষয়টি
সম্পর্কে আরো বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানার জন্য আপনারা এই লেখাটি পড়ুনঃ
“বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহর
দুর্দশা নিয়ে শায়খ ফাউজানের গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া”
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/4711510198881690
__________________________________________
মুহাম্মদ
আল-আরিফী? সে কি কোন আলেম?
জসীম উদ্দিন রাহমানী, আনোয়ার আল-আওলাকি, আল-কায়েদাহ, আইসিস ভক্ত
অল্প-বয়ষ্ক কিছু ছেলেরা মুহাম্মাদ আল-আরিফীকে বড় জিহাদী আলেম বলে প্রচার করে। সে নাকি
এতো বড় আলেম যে, তারা আরিফীকে “মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণ ভোমরা” উপাধি দিয়েছে।
আসল কে এই মুহাম্মদ আল-আরিফী? সে কি কোন আলেম?
উত্তরঃ আলহা’মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআ’দ।
+ আল্লামাহ শায়খ মুহাম্মাদ বিন হাদী হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“আমি মুহাম্মদ
আল-আরিফীকে চিনি ও তার কথা শুনেছি। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলে। সে একজন জাহেল (মূর্খ), সাহিবু হাওয়া
(প্রবৃত্তির অনুসারী)। তোমরা তাঁর কথা শুনবে না।”
শায়খের ফতোয়া ও তার ইংরেজী অনুবাদ দেখুন –
https://www.youtube.com/watch?v=hjr2A_NXrhs
++ শায়খ মুহাম্মদ বিন হাদী আরিফীকে কেনো মূর্খ ও প্রবৃত্তির অনুসারী
বলেছেন?
মুহাম্মদ আল-আরিফী নামে জনপ্রিয় একজন সউদী টিভি বক্তা যাকে অনেকে
জিহাদী আলেম মনে করে বিভ্রান্ত হচ্ছেন, সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীসকে অপব্যখ্যা করে নতুন একটি বিদআ’ত রচনা করেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের আদেশ করেছেন, (মুসলিম) শাসক যদি তোমার উপর অত্যাচার করে,
তোমার সম্পদ কেড়ে নেয় এবং তোমাকে চাবুক দিয়ে পেটায়, তবুও তার আনুগত্য করো। এটা
হুযাইফা বিন ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত বিখ্যাত হাদীস, যা সহীহ মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে।
কথিত এই জিহাদী আলেম আরিফী দাবী করেছে, “এই হাদীস যদি কোন দেশের রাজা একজন
মানুষের উপর যুলুম করে তাহলে প্রযোজ্য হবে। কিন্তু কোনো শাসক যদি তার অধীনস্তদের
অনেকের উপরে যুলুম-অত্যচার করে তাহলে ঐ শাসকের কথা শোনা যাবেনা, তার বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করা জায়েজ হবে।”
এটা স্পষ্ট রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের অপব্যখ্যা ও মনগড়া বিদআ’ত, যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বীদাহ বিরোধী। সমস্ত আলেমরা একমত,
শাসক যুলুম অত্যাচার করলেও তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম ও জমীনে ফাসাদ সৃষ্টি
করার অন্তর্ভুক্ত, যা আসলে খারেজীদের কাজ।
ইমাম তাহাবী রহি’মাহুল্লাহ লিখেছেন, “আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা
অত্যাচার করে। আমরা তাদের অভিশাপ দিব না এবং আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের
আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ
দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দো‘আ করব।” আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।
এনিয়ে আরো বিস্তারিত জানার জন্য এই পোস্ট দেখার অনুরোধ করছি –
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1411864525./909241182441963/?type=1&source=42
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, আরিফীকে অনেক আলেম সতর্ক করেন এবং উপদেশ দেন। সে
আলেমদের উপদেশ ত নেয়নি বরং, শায়খ সালিহ
আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ কাছে সে মিথ্যা কথা বলে, এই অপব্যখ্যা নাকি সে ইমাম নববী রহি’মাহুল্লাহ কাছ থেকে গ্রহণ করেছে!
প্রথম কথা হচ্ছে, দলিল বিহীন কোন কথা যত বড় আলেমই বলুক না কেনো সেটা গ্রহণযোগ্য নয়।
তার উপরে এটা ইমাম নববী রহি’মাহুল্লাহ বলেন নি। শায়খ ফাউজান ইমাম নববী রচিত সহীহ মুসলিমে শরাহ বা ব্যখ্যাগ্রন্থ খুঁজে আরিফীর এইরকম বিভ্রান্তিকর কথা
বাতিল বলে প্রত্যাখ্যান করেন। আসলে ইমাম নববী এইরকম কোন কথা বলেন নি।
+++ মুহাম্মাদ আল-আরিফীর কুফুরী বক্তব্য
আরিফী একটা কবিতা লিখে তার নাম দেয় ‘সুরাতুল তুফফাহা’ (নাউযুবিল্লাহি
মিন যালিক) বা আপেলের সুরা। ক্বুরআনের মতো করে ‘সুরা তুফফাহা’ নাম দিয়ে সেই কবিতাটাকে সে ‘সুরা মারইয়ামের’ মতো গেয়ে তার শ্রোতাদেরকে শোনায়, যেইভাবে ক্বুরআনুল
কারীম তেলাওয়াত করা হয়। সে এই কাজটা করে এবং বলে আমি মানুষকে হাসানোর জন্য এই কথা বলেছি।
আরিফী কর্তৃক এই জঘন্য কাজের ব্যপারে আল্লামাহ শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহকে আরিফীর
নাম উল্লেখ না করেই, ক্বুরআন নিয়ে এমন হাসি-ঠাট্টা করার হুকুম জানতে চেয়ে ফতোয়া
জিজ্ঞেস করা হয়।
শায়খ ফাউজান বলেন, “কেউ যদি কিছু শব্দ দিয়ে কবিতা বানিয়ে আল্লাহর কালামের মতো নকল করার
চেষ্টা করে, এবং ‘সুরা’ নাম দিয়ে ক্বুরানুল কারীম তেলাওয়াতের মতো করে আবৃত্তি করে শোনায়, তাহলে
এটা ভয়ংকর একটা অপরাধ। এর কারণে সে কাফের হয়ে যাবে, যদিও সে এই কাজটা দ্বারা হাসি-ঠাট্টা
করে থাকুক না কেনো। (কারণ মহান আল্লাহ স্বয়ং নিজে তাঁকে বা তাঁর আয়াতের সাথে যে হাসি-ঠাট্টা
বা মজাক করবে, তাকে ঈমান আনার পরেও কাফের হয়ে গেছে বলে ঘোষণা করেছেন।)
মহান আল্লাহ বলেন, “আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করো, তবে তারা বলবেঃ
আমরাতো শুধু কথার কথাই বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। (হে নবী) আপনি বলুন! তোমরা
কি আল্লাহর সাথে, তাঁর আয়াতের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছিলে?
তোমরা কোন অযুহাত পেশ করোনা, কারণ তোমরা ঈমান আনার পরে পুনরায় কাফের হয়ে গেছ।” সুরা আত-তাওবাহঃ ৬৫-৬৬।
সুতরাং, যে ব্যক্তি ক্বুরআন নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে, ক্বুরআনের মতো করে
কোন কবিতা লিখে মানুষকে ক্বুরআন তেলাওয়াতের মতো করে পড়ে শোনায় এবং মানুষকে ‘সুরা’ বলে প্রতারিত করে, এই কারণে সে মুর্তাদ হয়ে যাবে।”
শায়খ উবায়েদ আল-জাবেরীও আরিফীর এই গোমরাহীর উপরে ফতোয়া দিয়েছেন।
আরিফীর কুফুরী বক্তব্যের ভিডিও এবং উপরোক্ত
দুইজন শায়খের ফতোয়া ও তার ইংরেজী অনুবাদ –
https://www.youtube.com/watch?v=DpEeB9vA7l4
++++ শায়খ ফাউজান নাম ধরে আরিফীকে কাফের বলেন নি। তবে “যে ব্যক্তি এই জঘন্য কাজটা করবে, সে কাফের হয়ে যাবে
ফতোয়া দিয়েছেন।”
আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আকীদাহ মতে, কেউ কোন কুফুরী কাজ করলে তাকে
সরাসরি কাফের বলে ঘোষণা করা হয় না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাকে সতর্ক করে দেওয়া হবে।
সতর্ক করে দেওয়ার পরেও কেউ যদি জেনে বুঝে কুফুরী কাজ করে, তাহলে সব দিক বিবেচনা
করে আলেমরা ফতোয়া
দেবেন, সে
কাফের হয়েছে কি হয়নি। আমরা সাধারণ মানুষ কাউকে কাফের বা মুর্তাদ বলবোনা, তবে আমরা
জানবো কোন কাজটা করলে মানুষ কাফের বা মুর্তাদ হয়ে যায় এবং সেই ব্যপারে মানুষকে
সতর্ক করবো। মুসলমানদের মাঝে কোন ব্যক্তি কাফের বা মুর্তাদ হয়ে গেছে নাকি, সেটা
নির্ধারণ করার দায়িত্ব আলেমদের।
+++++ সর্বশেষ আরিফীর কাছ থেকে ‘ইলম’ নেওয়া যাবে কিনা অথবা তার কথা শোনা যাবে কিনা?
আরিফী সত্য-মিথ্যা বিভিন্ন কিসসা কাহিনী বলে মানুষকে মুগ্ধ করতে চায়, যেমনটা আমাদের দেশে তাবলিগীরা
করে থাকে। এছাড়া সে মনগড়া হাদীসের অপব্যখ্যা করে যা উপরে প্রমাণসহ উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লামাহ
শায়খ আহমাদ আন-নাজমী রহি’মাহুল্লাহকে মুহাম্মদ আল-আরিফীর ব্যপারে
জিজ্ঞেস করা হলে তিনি
বলেন, “Story
teller (গল্পবাজ) লোকদের কথা শোনা জায়েজ নয়। কিসসা-কাহিনী
বলা লোকদের চারপাশে মানুষ জড়ো হয়, (এইভাবে সত্য-মিথ্যা) কাহিনী বলে বেড়ানো, এইগুলো মোটেও ঠিক নয়।”
শায়খের ফতোয়া ও তার ইংরেজী অনুবাদ দেখুন –
https://www.youtube.com/watch?v=pZsHqVYcRyo
__________________________________________
আল-দাদ্দু, আত-তারিফী, আল-আরিফী – মুনহারিফুন, মানহাজে ইখোয়ানী
মদীনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং মসজিদুন-নববী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মানিত মুদাররিস,
ফযীলাতুশ-শায়খ সুলায়মান আর-রুহাইলি হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“আমি তোমাদের জন্য একটি
ক্বাইয়িদা বা মূলনীতি বর্ণনা করছি। যদি কখনো দেখতে পাও যে হিযবী (পথভ্রষ্ট, বিদআ’তী দলের অনুসারী লোকেরা) কোন ব্যক্তির প্রশংসা
করছে এবং তাকে
- আল-হা’ফিজ,
- আল-মুহা’দ্দিষ,
- আল-ফক্বীহ,
- আল-ইমাম,
বলে মানুষের মাঝে প্রচার করছে তাহলে জেনে রাখো যে, (যার প্রশংসা করা
হচ্ছে) সেই ব্যক্তি পথভ্রষ্ট। এমনই উদাহরণ হচ্ছেঃ মুহাম্মদ ওয়ালদ আল-দাদ্দু,
আব্দুল আজীজ আত-তারিফী, মুহাম্মদ আল-আরিফী। এরা হচ্ছে মুনহারিফুন (পথভ্রষ্ট), এরা
ইখোয়ানুল মুসলিমিনের মানহাজের অনুসারী। তাদের আক্বীদাহগত ও শারঈ দিক থেকে গোমরাহী
রয়েছে যদিও
তাদেরকে “বর্তমান সময়ের সবচাইতে বড় মুহাদ্দিষ”, “কুতুবে সিত্তার হাফিজ” ইত্যাদি বড় বড় টাইটেল
দিয়ে তাদের উচ্চ প্রশংসা করা হচ্ছে। সুতরাং তোমরা যদি দেখতে পাও যে, পথভ্রষ্ট বিদআ’তী দলের লোকের পক্ষ থেকে বা মিডিয়াতে কোন
ব্যক্তির অতিরিক্ত প্রশংসা করা হচ্ছে, তাহলে জেনে রাখো যে, তাদের মধ্যে লুকানো মন্দ প্রকাশ পেয়ে গেছে।”
কৃতজ্ঞতাঃ Nasir al-Hanbali YouTube চ্যানেল।
শায়খের বক্তব্যের লিংক - https://youtu.be/U44J8-FTZL0
__________________________________________
খোমেনীঃ মুসলমানদের মাঝে সমস্ত রক্ত ক্ষয়ী যুদ্ধের জন্য নবী মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দায়ী।
১৯৭৯ সালে কথিত ইসলামী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট “শীয়া” রাষ্ট্র ইরানের
সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, আয়াতুশ-শায়তান খোমেনি বলেছিলো,
“এটা স্পষ্ট যে, নবী
মুহাম্মদ যদি (তাঁর উম্মতের লোকদের কাছে) ‘ইমামাহ’-র সংবাদ সঠিকভাবে পৌঁছে দিতেন,
যেমনিভাবে আল্লাহ তাঁকে আদেশ করেছিলেন, এবং এই ইমামাহর জন্য যুদ্ধ করতেন, তাহলে মুসলিম
দেশগুলো এইরকম যুদ্ধ, সংঘর্ষ ও মতবিরোধ থেকে রক্ষা পেত। মুসলমানদের মাঝে দ্বীনের
ব্যাপারে ছোট বা বড়, কোন ধরণের মত পার্থক্য সৃষ্টি হতো না।” খোমেনী, কাশফ আল-আসরারঃ ৫৫
পৃষ্ঠা।
মন্তব্যঃ আহলে সুন্নাহর পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সমস্ত আলেমরা এই
ব্যাপারে একমত হয়েছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা কোন একজন নবী বা রাসুল
সম্পর্কে যেই ব্যক্তি সামান্য পরিমাণ অসম্মান, কটুক্তি বা দোষারোপ করে, সেই
ব্যক্তি মুরতাদ (ধর্ম ত্যাগী) হয়ে যাবে। ইসলামিক আদালতে এমন ব্যক্তির অপরাধ
প্রমাণিত হলে এবং সে যদি তোওবা করতে রাজী না হয়, তাহলে তার শাস্তি হচ্ছে
মৃত্যুদণ্ড।
*শীয়াদের আক্বীদাহ অনুযায়ী ইমামাহ অর্থ হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মৃত্যুর পর একমাত্র আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হচ্ছেন খলিফা হওয়ার অধিকারী। ইমামাহ শীয়াদের ঈমানের সবচাইতে
গুরুত্বপূর্ণ রুকন।
কৃতজ্ঞতাঃ Jalal Abualrub, Jewish temple rebuilt by Shia,
pg 23.
__________________________________________
বিক্ষোভ মিছিল, প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশান করার কি হুকুম?
এক.
শায়খ মুহা’ম্মদ বিন সালিহ আল-উষায়মিন রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “আমাদের জন্য করণীয় হচ্ছে, যার যার সাধ্য অনুযায়ী
(কর্তৃপক্ষকে) উপদেশ দেওয়া। (কর্তৃপক্ষের সাথে) বিরোধীতা প্রদর্শন করা, বিক্ষোভ
মিছিল করা সালাফদের আদর্শের পরিপন্থী কাজ। তোমরা জান যে, এ ধরণের কাজের সাথে
ইসলামী শরীয়ার কোন সম্পর্ক নেই, এগুলো কোন সমস্যা সমাধানের মাধ্যম নয়। বরং,
বিক্ষোভ মিছিল শুধুমাত্র ক্ষতির কারণ। খলিফা মামুন যেই সমস্ত আলেমরা “ক্বুরআন
মাখলুক”, এই কথা বলতে রাজী হয়নি তাঁদেরকে হত্যা করতো। সে অনেক
আলেমদেরকে হত্যা করেছিলো এবং জনগণকে এই বাতিল কথা বলতে বাধ্য করতো। অথচ, আমরা ইমাম
আহমাদ বা তৎকালীন অন্য কোন ইমামের পক্ষ থেকে এই নজীর দেখতে পাইনা যে, তাঁদের কেউ
কখনো মসজিদে জমা হয়ে বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করেছিলেন। এছাড়া আমরা এটাও দেখতে পাই না
যে, মানুষের মনে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করার জন্য মামুনের এই গোমরাহীর কথা মানুষের
মাঝে বলে বেড়াতেন। আমরা এ ধরণের প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশান (বিক্ষোভ
মিছিল) করাকে
সমর্থন করিনা। যদিও আমাদের মুসলমানদের ভেতরে ও বাহিরে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা
গোপনে গোপনে মুসলমানদের মাঝে প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশান (বিক্ষোভ
মিছিল) করার জন্য
উস্কানি দেয়।” জারিদাতুল মুসলিমুনঃ সংখ্যা-৫৪০, পৃষ্ঠা-১০।
শায়খের বক্তব্যের লিংক –
__________________________________________
দুই.
শায়খ আ’ব্দুল মুহ’সিন আল-আ’ব্বাদ হা’ফিজাহুল্লাহকে
প্রশ্ন করা হয়েছিলো, “আপনি যদি আমাদেরকে যেই সমস্ত বিক্ষোভ মিছিল, প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশানকে শান্তিপূর্ণ বলা হচ্ছে, সে সম্পর্কে কি হুকুম তা
নিয়ে আমাদেরকে কিছু উপদেশ দিতেন, তাহলে আল্লাহ চাহে তো আমরা এর দ্বারা উপকৃত হব। আল্লাহ
আপনাকে উত্তম প্রতিদান দিন।”
উত্তরে শায়খ বলেছিলেন, “আমি এমন কোন কিছু পাইনি যা
প্রমাণ করে যে, এ ধরণের (বিক্ষোভ
মিছিল, প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশান) করা শরীয়ত সম্মত। আমরা এর কোন ভিত্তি খুঁজে পাইনা।
বরং এগুলো নব আবিষ্কৃত বিষয়, যা মুসলমানেরা তাদের পূর্বের ও পশ্চিমের শত্রুদের কাছ
থেকে আমদানী করেছে। মানে, এগুলোর কোন ভিত্তি নেই। সুতরাং, মুসলমানদের উচিৎ শরীয়ত
সম্মত পথ অবলম্বন করা এবং (বিক্ষোভ
মিছিল, প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশানের মতো) ভিত্তিহীন কাজ বর্জন করা যা বিশৃংখলা,
বিপর্যয়, হত্যা এবং রাস্তা অবরোধের দিকে নিয়ে যায়। বিক্ষোভ মিছিল, প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশানের কারণে যদি রাস্তা অবরোধের মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়,
তাহলে এগুলোর ক্ষতি স্পষ্ট করার জন্য এই একটি মাত্র বিষয়ই যথেষ্ঠ এবং কোন ব্যক্তির
জন্য এগুলোতে অংশগ্রহণ করা উচিৎ নয়।”
শায়খের বক্তব্যের লিংক –
__________________________________________
তিন.
প্রশ্নকর্তাঃ বিক্ষোভ
মিছিল করার হুকুম কি?
শায়খ সালিহ
আল-লুহাইধান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “বিক্ষোভ
মিছিল করার মাঝে কোন
কল্যাণ নেই। এ ধরণের বিক্ষোভ মিছিল ব্যক্তির (দুনিয়াবী) কাজ-কর্ম, ইবাদত বা দায়িত্ব
পালনের ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়,
এগুলো অন্য আরো
খারাপ কাজের দিকে নিয়ে যায়।
যেমন মানুষের সম্পদ ধ্বংস
করা, মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ও সন্দেহ সৃষ্টি করা, মানুষের নিরাপত্তা
ও শান্তি-শৃংখলা নষ্ট হয়। এছাড়া বিক্ষোভ
মিছিলের কারণে সমাজে অনেক অশ্লীল ও জঘন্য কাজ সংগঠিত
হয়। (বিক্ষোভ মিছিলের খারাপ দিকগুলো বর্ণনা করার মাধ্যমে) আমি এটা বলছি না যে, কোন ব্যক্তির অধিকার লংঘিত হলে তার
অধিকার দাবী জানানো জায়েজ নয়। যদি কোন ব্যক্তির অধিকার লংঘিত হয় তাহলে নিশ্চয়ই তার
সেই অধিকার (যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে) দাবী জানানোর অনুমতি রয়েছে। কিন্তু, তার সেই
অধিকার চাইতে গিয়ে কোন অন্যায় বা অশোভনীয় কাজ যেন সংগঠিত না হয়।”
শায়খের বক্তব্যের লিংক –
__________________________________________
চার.
প্রশ্নঃ বর্তমান মুসলিম উম্মাহর
উপর আপতিত বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সমাধান ও বিপর্যয় দূর করার জন্য প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশান (বিক্ষোভ
মিছিল) করা কি “দাওয়াহ” বলে গণ্য হবে?
শায়খ সালিহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ এই প্রশ্নের উত্তরে
বলেন, “আমাদের
দ্বীন বিশৃংখলা সৃষ্টি করার দ্বীন নয়, আমাদের দ্বীন হচ্ছে নিয়ম-শৃংখলা ও শান্তির
দ্বীন। বিক্ষোভ মিছিল করা মুসলমানদের কোন কাজ নয়,
পূর্ব যুগের মুসলমানেরা বিক্ষোভ
মিছিল সম্পর্কে
কিছুই জানতো না। ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম, দয়ার ধর্ম, ইসলামের মাঝে কোন ফিতনাহ,
বিশৃংখলা বা নৈরাজ্য নেই। অধিকন্তু, ইসলামী পথ ও পদ্ধতির মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিল ছাড়াই ন্যায্য অধিকার বা দাবী
আদায় করা সম্ভব। এ ধরণের বিক্ষোভ
মিছিল ফিতনা
সৃষ্টি করে, রক্তপাত এবং সম্পদ ধ্বংসের জন্য উস্কানি দেয়। সুতরাং, এ ধরণের কাজ করা
জায়েজ নয়।” ফাতাওয়া আল-উলামা ফিল ইগতিয়ালাত ওয়াত-তাফজীরাত।
শায়খের বক্তব্যের লিংক –
__________________________________________
পাঁচ.
প্রশ্নকর্তা শামীমঃ শায়খ আমার আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে, বিক্ষোভ মিছিল (প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশান) নিয়ে। বর্তমান সময়ে আমাদের আলেমদের মাঝে “ইজমা” বা ঐক্যমত রয়েছে যে, মিছিল
করা ভুল। কিন্তু কিছু মানুষ IslamQA এর
শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের ফতোয়া তুলে ধরে বলে, “কিছু শর্তসাপেক্ষে মিছিল করা জায়েজ”। অথবা ডা. জাকির নায়েকের কথা নিয়ে আসে, যেখানে তিনি ফতোয়া দিয়েছেন যে, “শান্তিপূর্ণ মিছিল করলে কোনো সমস্যা নেই”। এই ব্যাপারে কি বলা হবে?
শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“কিসের কথা বলা হচ্ছে?” (শায়খ পরিষ্কার করতে
চাচ্ছেন বিষয়টা), মানে কিছু মানুষ জমায়েত হবে আর সম্মিলিতভাবে সরকারের বিপক্ষে
স্লোগান দিবে?
প্রশ্নকর্তাঃ হ্যা, হ্যা।
শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাসঃ কোনো সন্দেহ নেই, এরকম ফতোয়া বিশ্বাস করা ভুল, এরকম ফতোয়া বিশ্বাস করা ভুল। এই কথা যেই
বলে থাকুক না কেনো, মুনাজ্জিদ বা অন্যকেউ, এটা ভুল। দেখ, যেখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে আছে, মানুষকে দ্বীন পালন করতে বাঁধা
দেওয়া হচ্ছেনা, মানুষকে নামায, রোযা ও অন্যান্য ফরয ইবাদতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছেনা, এমন অবস্থায় যখন আমাদের শক্তি-সামর্থ্য নেই
(অর্থাৎ
মুসলিমরা দুর্বল), তখন একটা “কাফির” সরকারের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়। মুসলিমরা দুর্বল অবস্থায়
যদি বিদ্রোহ করে, তাহলে
আরো বেশি ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে, মানুষের জীবন যাবে, সম্মান নষ্ট হবে। এটাই হচ্ছে প্রকৃত বাস্তবতা। আর যারা
ফতোয়া দেয় মিছিল করা, স্লোগান দেওয়া এইগুলো জায়েজ, তারা (মানুষের ক্ষতির জন্য) রাস্তা খুলে
দিচ্ছে। এই সবকিছু (বর্তমানে এই ধরণের বিক্ষোভ মিছিলের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে,
মুসলমানদের জীবন যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে) হচ্ছে এই মিছিলের কারণেই। প্রথমে ইখোয়ানুল মুসলিমিন (মিশরের জামাতে
ইসলামীর মতো একটি রাজনৈতিক দল) এই মিছিল
করা শুরু করে এবং পরবর্তীতে (মিশরীয়) সালাফী একটি দল এতে অংশগ্রহণ করে। আর এজন্য
ইখোয়ানের
যে পরিণতি, একই পরিণতি বরণ করেছে মিশরীয় সালাফী এই
দলটি, রক্তপাত ও হত্যা। এ কারণে আর্মি ও পুলিশ এই
(ফিতনার) মাঝে আসে। এই ধরণের বিক্ষোভ, বিদ্রোহ, সরকার
উচ্ছেদ –
এইগুলো শরীয়তের মাঝে নেই। একটা সরকার সরিয়ে আরেকটাকে আনবে, কয়েক মাস পরে সেই
সরকারও একই রকম করবে, আবার তারা বিদ্রোহ করবে...
আল্লাহ বলেন, “আপনি যতই চান, অধিকাংশ লোক ঈমান আনবার নয়।” সুরা
ইউসুফঃ ১০৩।
আল্লাহ বলছেন বেশিরভাগ মানুষ ঈমানই আনেনা, তাই আবার যখন বেশিরভাগ
মানুষ একবার একটা সরকার উৎখাত করে পরে নতুন একটাকে এনে আবার সেটাকেও সরাতে চাইবে। আর এইরকম
কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। এ কারণে শরীয়তে এই ধরণের বিক্ষোভ মিছিল করা মোটেও জায়েজ নয়। কাফের সরকারের বিরুদ্ধ যদি
ক্ষমতা থাকে তাহলে তাকে সরানোর চেষ্টা করবে। কিন্তু যদি ক্ষমতা না থাকে আর তারা যদি (দ্বীন পালনে) বাঁধা না দেয়, কারো
দ্বীন ও ঈমান নিরাপদ থাকে, যেইরকম ছিলো বাদশাহ নাজ্জাশীর সময়ে, তখন এইরকম সরকারের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চেষ্টা করা জায়েজ নয়।
সরকার ভুল করছে কিন্তু তার জন্য জনগণ (মিছিলের মতো) এ ধরণের কাজে জড়িয়ে পড়বেনা, বিক্ষোভ মিছিল করে স্লোগান দিবেনা।
বিক্ষোভ মিছিলের পক্ষে ফতোয়া যেই দিয়ে থাকুক থাকুক না কেনো,
মুনাজ্জিদ বা অন্য কেউ, এটা ভুল। আর ডা. জাকির নায়েক কোনো মুফতি নয়, সে মুনাজ্জিদ এবং অন্যদের কথার তাক্বলীদ করেছে এবং মানুষের মাঝে প্রচার
করছে। ডা. জাকির
নায়েক কোন আলেম নয়।”
ফতোয়া দিয়েছেনঃ শায়খ উয়াসী উল্লাহ আব্বাস হা’ফিজাহুল্লাহ।
মুদারসির এবং ডেপুটি মুফতি, মসজিদুল হারাম, মক্কা আল-মুকাররমা।
মূল ফতোয়ার লিংক, ইংরেজী অনুবাদসহঃ (৬:২০ মি. থেকে ৯:৩০ মি. পর্যন্ত)
http://www.youtube.com/watch?v=1TBpJLQtjew
__________________________________________
মিযানুর
রহমান আযহারী (পর্ব-১)
মিযানুর রহমান আযহারী নামক একজন বক্তার ব্যপারে প্রশ্ন করা হয়েছে,
তার ওয়াজ-লেকচার শোনা যাবে কিনা?
উত্তরঃ না, শোনা যাবেনা। কারণঃ
(১) মিযানুর রহমান আযহারী মূলত
একজন জামাতে ইসলামীর মতবাদে বিশ্বাসী। তাফসীরুল ক্বুরআন নামক তার প্রোগ্রামে তিনি
কৌশলে মওদুদী মতবাদ প্রচার করার চেষ্টা করেন। কিন্তু যারা মওদুদী মতবাদ সম্পর্কে
ভালো ধারণা নেই, তার কথা থেকে এমন অনেকেই বিষয়টি বুঝতে পারেনা।
আপনারা এই লিংকগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন, মিযানুর রহমান আযহারী একজন
আত্মগোপনকারী জামাতী বক্তা।
https://youtu.be/8n6bYj7IWAU
https://youtu.be/K2RhjSw20Fw
https://youtu.be/Km2wMDKoWkU
(২) মিযানুর রহমান আযহারী বা তার
মতো সমমনা বক্তা যেমন তারিক জামিল, ইয়াসির ক্বাদী, মুফতি মেংক এবং এমন অন্যান্যদের
দাওয়াত হচ্ছেঃ
“আহলে সুন্নত এবং আহলে বিদাত, এমন সমস্ত দলের
লোকদের কথা শুনতে হবে, সবার কাছ থেকে দ্বীন গ্রহণ করা যাবে।”
এমন কথা যারা বলে, এরা পথভ্রষ্ট। কারণ আহলে সুন্নাহর লোকেরা আহলে
বিদআ’হর লোকদের কথা শুনেনা, তাদের কাছ থেকে দ্বীন গ্রহণ করার জন্য উম্মতের
লোকদেরকে উপদেশ দেয়না।
(৩) মিযানুর রহমান আযহারী তার এক
ওয়াজে বলেছেন, “ (মুসলমানদের মাঝে) জামাতে
ইসলামীর মতো, হেফাজতে ইসলামীর মতো আন্দোলনের স্পিরিট থাকতে হবে।”
একথা বাতিল। কারণ, জামাতে ইসলামী এবং হেফাজতে ইসলাম - এই দুইটি দলই
হচ্ছে পথভ্রষ্ট, বিদআ’তী দল। জামাতে ইসলামীর স্পিরিট হচ্ছে মওদুদী মতবাদ, কুতুবী মতবাদ, তাকফিরী, খারেজী মতবাদ, ইসলামী(!) গণতন্ত্র, ক্বুরআন
ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে “আরব বসন্তের’ মতো সমাজে বিশৃঙ্খলা
এবং রক্তপাতের স্পিরিট। আর হেফাজতের স্পিরিট হচ্ছে পথভ্রষ্ট দেওবন্দী সূফীদের
তাক্বলীদ বা অন্ধ অনুকরণ, বিদআ’তী কাজে লিপ্ত হয়ে
ইসলামের খেদমত করার দাবী করা, পীর-মুরিদীর দাওয়াত। এমন মারাত্মক পথভ্রষ্ট দুইটি
দলের স্পিরিটের দিকে যে ব্যক্তি মানুষকে আহবান করে সেই ব্যক্তি তাদের মতোই
পথভ্রষ্ট।
মিযানুর রহমান আযহারীর বক্তব্যের লিংক -
https://youtu.be/MYHk7KUTuH4
(৪) মিজানুর রহমান আযহারী
বাংলাদেশের আহলুল হাদীষদের সমালোচনা করেন, কারণ তারা বিদআ’তী দল এবং বিদআ’তী আলেমদের থেকে মানুষকে সতর্ক করে। তার মতে এটা
নাকি কট্টরপন্থা এই কাজের দ্বারা মিজানুর রহমান মূলত বিদআ’তের প্রতি তার ভালোবাসার
প্রকাশ ঘটিয়েছেন। কারণ, বিদআ’তীদের একটা লক্ষণ হছেঃ তারা আহলুল হাদীষদের সাথে
বিদ্বেষ পোষণ করে।
বিস্তারিত জানার জন্য এই লেখাটা দেখুন – ‘আহলুল হাদীষের সাথে দুশমনি?”
https://m.facebook.com/story/graphql_permalink/?graphql_id=UzpfSTEyNTE2NzgxNzUxNTk3NDoyMzEyNTYxMDgyMTA5OTU5
(৫) মিযানুর রহমান আযহারীর মতে
পথভ্রষ্ট বিদআ’তী দল এবং তাদের আলেম বা নেতাদের সমালোচনা না করাই হচ্ছে মধ্যম পন্থা।
অথচ, আহলে সুন্নত ওয়াল জামআ’তের কাছে বিদআ’তী দল এবং বিদআ’তী আলেমদের ব্যপারে উম্মতকে সতর্ক করা ওয়াজিব। যারা শ্রোতা বাড়ানোর
জন্য, ভোট পাওয়ার জন্য বা দুনিয়াবী স্বার্থে এই কাজ থেকে বিরত থাকে তারা উম্মতের
সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, তারা বিদআ’তীদের মতোই পরিত্যাজ্য।
বিস্তারিত জানার জন্য এই লেখাটা দেখুন – “সালফে সালেহীনদের মানহাজে বিদআ'তীদের অবস্থান”
https://m.facebook.com/story/graphql_permalink/?graphql_id=UzpfSTEyNTE2NzgxNzUxNTk3NDoyMDIyMzE0NDk3ODAxMjg3
(৬) মিযানুর রহমান আযহারী তার
ওয়াজে বানোয়াট কথা এবং কাহিনী প্রচার করে৷ যেমন এক ওয়াজে সে বলে, মুসা আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন লোহিত সাগর পার হন তখন
আল্লাহ সেই সাগরের উপরে নাকি লোহা দ্বারা নির্মিত একটা ব্রীজ নির্মাণ করে
দিয়েছিলেন। অথচ, একেবারে সাধারণ একজন মানুষও এইকথা জানে যে, আসলে তখন কোন ব্রীজ
হয়নি। বরং, মুসা আ'লাইহিস ওয়া সাল্লাম যখন আল্লাহর হুকুমে সাগরে লাঠি রাখলেন তখন
সাগরের পানি দুই দিকে সরে গিয়ে রাস্তা তৈরী হয়েছিলো। এটা ছিলো একটা মুজিজা।
মিযানুর রহমান আযহারীর বানোয়াট তাফসীর এবং তার জবাব -
https://youtu.be/57lSfw6GM1w
(৭) মিযানুর রহমান আযহারী এক
প্রশ্নের উত্তরে বলেন, “যদিও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম চুলে কালো রঙ করতে নিষেধ
করেছেন কিন্তু কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীর সন্তুষ্টির জন্য চুলে কালো রঙ করতে পারে।”
স্ত্রীর সন্তুষ্টির জন্য স্বামী চুলে কালো রঙ করতে পারবে - মিযানুর
রহমান তার এই কথার প্রমাণ হিসেবে নাম না জানা স্কলারদের কথাকে দলিল হিসেবে
উপস্থাপন করেছেন, কিন্তু তিনি ক্বুরআন বা হাদীস থেকে কোন দলিল দিতে পারেন নি। অর্থাৎ, তার মতে আলেমদের কথা শুনে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের
কথা অমান্য করা যাবে! এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, তিনি আসলে ইসলামী ফিক্বহ শাস্ত্র
সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখেন না। বরং তিনি একজন মুকাল্লিদ, অর্থাৎ আলেমদের কথার
তাক্বলীদ বা দলিল ছাড়া অন্ধ অনুসরণ করেন। আর আমাদের আলেমরা উল্লেখ করেছেনঃ
মুকাল্লিদ ব্যক্তি কোন আলেম নয়, তারা শুধুমাত্র তোতা পাখির মতো বুলি আওড়ায়।
মিযানুর রহমান আযহারীর বক্তব্যের লিংক -
https://youtu.be/v98wgsu6RcI
চুলে কারো রঙ করার সম্পর্কে হাদীস সমূহ এবং সত্যিকারের আলেমদের
ফতোয়ার অনুবাদঃ
https://youtu.be/k78TzB
(৮) মিযানুর রহমান আযহারী এবং তার
মতো স্বঘোষিত কিছু মধ্যমপন্থী কিছু বক্তা ও লেখকের নীতি হচ্ছেঃ যার যা মন চায়
করুক, মানুষকে সুন্নাহ সম্পর্কে, সঠিক ও ভুল পদ্ধতি সম্পর্কে, সহীহ ও জয়ীফ
সম্পর্কে সতর্ক করার কোন প্রয়োজন নেই। এইজন্যে তাদের বক্তব্য হচ্ছে, "কারো
ইচ্ছা হলে আমিন আস্তে বলবে কারো ইচ্ছা হলে জোরে বলবে। কারো ইচ্ছা হলে নামাযে বুকে
হাত বাধবে, কারো ইচ্ছা হলে নাভীর উপরে হাত বাধবে, কারো ইচ্ছা হলে নাভীর নীচে হাত
বাধবে৷ কারো ইচ্ছা না হলে মালেকীদের মতো হাত বাধবেনা। এই সবগুলো সুন্নতে আছে,
এইগুলো নিয়ে ঠেলাঠেলির দরকার নেই।”
তাদের মতে মানুষকে সুন্নাহ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না দিয়ে যে যেই
পদ্ধতিতে চলে, তাকে সেই পদ্ধতিতে চলতে দিতে হবে। তাদের কাছে এটাই হচ্ছে
মধ্যমপন্থা!
এইভাবে তারা উম্মতকে দ্বীনের জ্ঞান থেকে অজ্ঞ রেখে মানুষের কাছে
গ্রহণযোগ্যতা পেতে চায়৷ আল্লাহ তাআ'লা এমন অজ্ঞতা থেকে মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন,
আমিন।
মিজানুর রহমান আযহারীর বক্তব্যের লিংক -
https://youtu.be/jGVsJ-hyXac
=> সর্বশেষঃ
মিজানুর রহমান আযহারী সম্পর্কে আরো ভালোভাবে খোজ নিলে তার এমন আরো
অনেক গোমরাহী সম্পর্কে জানা যাবে। কিন্তু আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ
তাআ'লা আমাদেরকে বিদআ’ত এবং বিদআ’তের দিকে আহবানকারী বক্তা ও লিখকদের থেকে হেফাজত করুন, আমিন।
__________________________________________
মিযানুর রহমান আযহারী (পর্ব-২)
ধর্মের নামে মিথ্যা কাহিনী বলা বক্তাদের থেকে সাবধান!
জামাতে ইসলামীর বক্তা এবং কন্ঠশিল্পী মিযানুর রহমান আযহারীর দুই
দিন পরপর উলটা পালটা কথা-বার্তা বলা যেন তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি মিযানুর
রহমান আযহারী তার এক ওয়াজে বলেছেন,
“হযরত উমার রাদিআল্লাহু তাআ’লা আ’নহুর এক পুত্র আবু শাহামা মাতাল অবস্থায় উমারকে বলেছিলেন, “আবে হালায় আব্বা! তোমারে তো হালায় আমি চিনবার পারছি না।”
এটা সম্পূর্ণ বানোয়াট একটা কথা, কারণ আবু শাহামা ছিলেন মিশরে এবং
তিনি নিজেই সেখানকার গভর্নরের কাছে দোষ স্বীকার করে ধরা দিয়েছিলেন, মাতাল অবস্থায় গ্রেফতার
হন নি। পরবর্তীতে আবু শাহামাকে তার পিতা উমার রাদিআল্লাহু তাআ’লা আ’নহুর কাছে মদীনাতে পাঠানো হয়৷
অর্থাৎ, আবু শাহামা মাতাল অবস্থায় তার পিতার নিকট যান নি।
সুতরাং, উমারের সাথে তার ছেলের মাতাল অবস্থায় দেখা হওয়ার প্রশ্নই
আসেনা। এছাড়া, উমারের সাথে দেখা হওয়ার পর তার ছেলে আবু শাহামা তাকে “আবে হালায় আব্বা” বলে সম্বোধন করেছিলেন - এমন কথা
সাহাবীদের জীবনীর কোন একটা কিতাবে বর্ণিত হয়নি।
=> মিযানুর রহমান আযহারী লোকদেরকে হাসানোর জন্য নিজেই এই অশোভনীয়,
উদ্ভট কাহিনীটা ঢাকাইয়া ভাষায় রচনা করে আবু শাহামার উপরে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছেন। একজন
ইসলামী বক্তা নাম নিয়ে কোন ব্যক্তি যদি এমন বানোয়াট কাহিনী প্রচার করে, এমন বক্তার
কাছ থেকে মানুষ কি শিখবে?
=> এছাড়া, ইতিপূর্বে মিযানুর রহমান আযহারী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করে বলেছিল, “রাসুলুল্লাহর শরীর সিক্স প্যাক ছিলো।”
আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে তার এই মিথ্যা রচনার সমালোচনা করে পোস্ট
করি, তখন তার কিছু ভক্ত ও শ্রোতা দাবী করেছিলেন, আমরা নাকি সিক্স প্যাক কথার অর্থ বুঝতে
পারিনি। সিক্স প্যাক দ্বারা নাকি সুদর্শন চেহারা বুঝায়। আসুন দেখি ইংলিশ ডিকশনারী অনুযায়ী
সিক্স প্যাক কথাটির অর্থ কি বুঝায়।
ক্যামব্রিজ ডিকশনারী অনুযায়ীঃ a set of well-developed muscles on
someone's stomach. (কোন ব্যক্তির পেটে
সুগঠিত মাংশপেশীর সমষ্টি।)
অক্সফোর্ড ডিকশনারী অনুযায়ীঃ A man's set of visibly well-developed
abdominal muscles. (কোন ব্যাক্তির উদরে
স্পষ্টত দৃশ্যমান সুগঠিত মাংশপেশীর সমষ্টি।)
আযহারীর যেই সমস্ত ভক্ত শ্রোতারা সিক্স প্যাক অর্থ সুদর্শন বলে
দাবী করেছিলেন, তারা নির্ভরযোগ্য কোন ইংলিশ ডিকশনারী থেকে এই অর্থ গ্রহণ করেছেন তা
আমাদেরকে জানাবেন। আর যদি না পারেন, তাহলে আযহারী সাহেব কোন হাদীস থেকে “সিক্স প্যাক” এবং “আবে হালা আব্বা” কথাগুলো গ্রহণ করেছেন, তা আমাদেরকে
জানাবেন। যদি না পারেন, তাহলে তার এবং তার ভক্ত শ্রোতা যারা ইতিপূর্বে সিক্স প্যাক
কথাটি সঠিক বলে সাফাই গেয়েছিলেন, তারা সবাই আল্লাহর কাছে তোওবা করবেন। কারণ রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলা কবীরাহ গুনাহ এবং জাহান্নামে
যাওয়ার কারণ।
=> জাল হাদীস প্রচার করা হারাম এবং কবীরাহ গুনাহঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে আমার প্রতি মিথ্যারোপ করে সে যেন জাহান্নামে তার
বাসস্থান নির্ধারণ করে নেয়।” বুখারী ও মুসলিম।
=> এক শ্রেণীর জাহিল এবং বিদআ’তী লোকেরা হারাম এবং কবীরাহ গুনে জেনেও তাদের ওয়াজ-লেকচারে বা বই-পুস্তকে
ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় জাল হাদীস বয়ান করবে, এটা কেয়ামতের একটা লক্ষণঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “শেষ যুগে আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোকের আবির্ভাব ঘটবে যারা তোমাদের
এমন এমন হাদীস শোনাবে যা তোমরা কিংবা তোমাদের পূর্ব পুরুষরা কেউ কখনো শোননি। অতএব,
তোমরা তাদের সংসর্গ থেকে সাবধান থাকবে এবং তাদেরও তোমাদের থেকে দূরে রাখবে।” সহীহ মুসলিম।
=> মিযানুর রহমান আযহারীর এক ভক্ত আমাদের পোস্টে কমেন্ট করেছিলেন,
“আগে তিনি ইউটিউবে নাচ গান দেখতেন আর এখন তিনি আযহারী হুজুরের ওয়াজ শুনেন।”
আমি সমস্ত মুসলমান ভাই ও বোনদের বলতে চাই, ইউটিউব ফেইসবুকে বা
ইন্টারনেটে অনেক হারাম এবং অশ্লীল জিনিস রয়েছে। আবার এইগুলো ব্যবহার করে অনেক হুজুর
মাউলানারা শিরক বেদাত এবং অজ্ঞতা মূর্খতা প্রচার করছে। আপনারা উস্তাদ গ্রহণের ব্যাপারে
সতর্কতা অবলম্বন করবেন।
=> আল্লাহ তাআ’লা আমাদেরকে এবং মিযানুর
রহমান আযহারীকে হেদায়েত দান করুন এবং ধর্মের নামে বানোয়াট কিচ্ছা-কাহিনী থেকে মুসলমানদেরকে
হেফাজত করুন, আমিন।
__________________________________________
মিযানুর রহমান আযহারী (পর্ব-৩)
জামাতে ইসলামীর লোকেরা “মওদুদী মতবাদ” প্রচার করার জন্য হাজার হাজার টাকা খরচ করে অল্প ইলম সম্পন্ন কিন্তু জনপ্রিয়
বক্তাদেরকে ভাড়া করে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন করে। এই বক্তারা ক্বুরআন
ও হাদীস বলার পাশাপাশি লোকদেরকে মুগ্ধ করে নিজের মার্কেট বাড়ানোর জন্য নাকি সুরে কিছু
আবেগী গান গেয়ে শ্রোতাদের মনোরঞ্জন করার চেষ্টা করে।
বাউল গানের ভক্ত এমনই জনৈক জামাতী বক্তা তার এক ওয়াজ মাহফিলের
স্টেইজে উঠে হাজার হাজার মানুষের সামনে উদাস গলায় গেয়ে উঠেঃ
“পরের জায়গা
পরের জমি
ঘর বানাইয়া আমি রই
আমি তো এই ঘরের মালিক নই।”
এই গান গেয়ে সেই বক্তা সাহেব দাবী করেনঃ
“এই দুই লাইনের
গানের ভেতরে গোটা আখেরাতটা আছে, এই দুই
লাইনের সংগীতের মধ্যে পুরো ইসলামটা আছে, এই দুই লাইনের সংগীতের
মধ্যে ৩০ পারা ক্বুরানটা আছে....”
((নাউজুবিল্লাহি মিন যালিক))
আমরা যখন বিদআ’তী দলগুলোর সাথে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মাধ্যমে
লোকদের মাঝে জনপ্রিয়তা অর্জনকারী কথিত “মধ্যমপন্থী” বক্তাদের সমালোচনা করি তখন তাদের ভক্ত/শ্রোতারা দাবী
করে,
“তারাতো সহীহ
কথাই বলেন”, অথবা তারা বলে,
“আমরা তাদের
ভালোটা নেই আর খারাপটা বর্জন করি।”
এমন লোকেরা আসলে ইসলাম সম্পর্কে নিজেদের অজ্ঞতার কারণে এমন বক্তাদের
গোমরাহী ধরতে পারেনা। একারণে তাদের
গোমরাহী মিশ্রিত দাওয়াতী কার্যক্রম দ্বারা ধোঁকা খেয়ে মনে করে, তারাতো মানুষকে ইসলামের দিকেই দাওয়াত দিচ্ছে। আমি আরেকটু
সহজ ভাষায় বলছি।
কোন মানুষ যদি জানে ২+২=৪ হয় আর এমন অবস্থায় কেউ যদি বলে ২+২=৫ হয়, তাহলে এটা যে ভুল সে তা
ধরতে পারবে। কেননা এই ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান তার পূর্ব থেকেই ছিলো।
পক্ষান্তরে কোন মানুষ যদি না জানে ২+২= কত হয়, আর এমন অবস্থায় তার উস্তাদ বা শিক্ষক যদি তাকে শেখায় যে ২+২=৫, তাহলে এটা যে ভুল সে তা ধরতে
পারবে না। কেননা এই ব্যাপারে সঠিক জ্ঞান তার পূর্ব থেকে ছিলো
না, আর সেইজন্যেই সে একজন উস্তাদের শরণাপন্ন হয়েছে। এখন সেই উস্তাদই যদি তাকে ভুল শেখায় তাহলে অজ্ঞতার কারণে তিনি সেই উস্তাদের
ভুল শিক্ষাটাকেই সঠিক বলে মনে করবেন। আর তাকে যদি সঠিকটা কেউ
বলে ২+২=৪ হয়, তাহলে
সে সঠিকটাকেই ভুল বলে প্রত্যাখ্যান করবে।
বর্তমান যুগে ফেইসবুক, ইউটিউব চালানো অধিকাংশ মুসলমানদের অবস্থা অনেকটা এইরকম। যারা আহলে সুন্নতের আক্বীদাহ ও মানহাজ স্টাডি করেনা, সত্যিকারের আলেমদের পরিচয় ও যোগ্যতা সম্পর্কে জানেনা এমন লোকেরা ফেইসবুক,
ইউটিউবে কিছু কন্ঠ ব্যবসায়ীর ওয়াজ লেকচার শুনে দ্বীন শিখতে আরম্ভ করেন।
সমস্যা হচ্ছে দুনিয়ালোভী এই সমস্ত বক্তারা ক্বুরআন ও হাদীস শেখানোর ফাঁকে
ফাঁকে অজ্ঞতাবশত গোমরাহী ও বিভ্রান্তিকর কথা-বার্তা তাদের শ্রোতাদের কানে ঢেলে দেয়। আর সরলমনা মুসলমানেরা
এই সমস্ত বক্তাদেরকে আলেম মনে করে তাদের গোমরাহীকেই হক্ক বলে বিশ্বাস করে। কেউ যদি তাদের সেই গোমরাহীর সমালোচনা করে, তাহলে এমন বক্তাদের অন্ধভক্তরা সেই
গোমরাহীর পক্ষে উকালতি করা আরম্ভ করে।
মানুষ যদি সত্যিই আল্লাহকে, আল্লাহর দ্বীনকে ভালোবাসতো তাহলে
ক্বুরআন ও হাদীস সম্পর্কে, দ্বীন সম্পর্কে এমন জঘন্য
কুফুরী বক্তব্য দেওয়ার পরেও দ্বীন শিখার জন্য হাজার হাজার টাকা
খরচ করে এমন ভ্রষ্ট বক্তাদেরকে ওয়াজ শুনতো না।
যারা বুঝতে পারছেন না যে, “এই দুই লাইনের
সংগীতের মধ্যে ৩০ পারা ক্বুরানটা আছে” - এই কথাটা কুফুরী হয় কিভাবে,
তাদের জন্য সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা হলোঃ
মহাগ্রন্থ আল-ক্বুরআন “ক্বালামুল্লাহ” বা
আল্লাহর কথা। এটা দুনিয়ার অন্যান্য জিনিসের মতো আল্লাহর কোন ‘মাখলুক্ব’ বা
সৃষ্টি নয়। বরং আল-ক্বুরআন হচ্ছে আল্লাহর একটা সিফাত। একারণে আল-ক্বুরআন সমগ্র
মানুষ এবং জিন জাতির জন্য একটা মুজিজাহ যে, সারা দুনিয়ার মানুষ ও জিন একত্রিত হয়েও
এই ক্বুরআনের ছোট্ট একটা সুরার মতো করে একটা সুরা লিখতে পারবেনা।
মহান আল্লাহ বলেন, “আমি আমার বান্দা (মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি সালামের) প্রতি যেই (ক্বুরআন) নাযিল করেছি তা (আল্লাহর
পক্ষ থেকে নাযিল করা কিনা এনিয়ে) তোমাদের কোন সন্দেহ থাকলে তোমরা তার মত কোন একটি সুরাহ
(বানিয়ে) নিয়ে আসো আর তোমরা যদি সত্যবাদী হও, তবে আল্লাহ ছাড়া তোমাদের সকল সাহায্যকারীকে
আহবান কর। যদি তোমরা (ক্বুরআনের মতো একটি সুরা বানাতে) না পার এবং তোমরা সেটা কক্ষনো
পারবেও না, তাহলে সেই আগুনকে ভয় কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর, যা প্রস্তুত রয়েছে
কাফেরদের জন্য।” সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২৩-২৪।
অর্থাৎ, মহান আল্লাহ এই ক্বুরআনে তাঁর বক্তব্য, বিষয়বস্তু
এতো অনিন্দ্য সুন্দর, হৃদয়গ্রাহী, সহজভাবে ব্যক্ত করেছেন যে, এর অনুরূপ কোন রচনা
করা সমগ্র মানুষ ও জিন জাতির পক্ষে সম্ভব না। পক্ষান্তরে, উক্ত জামাতী বক্তা দাবী
করেছেন, কোন এক বাউলা শিল্পী দুই লাইন গান লিখেছে, যেই দুই লাইনের মাঝে নাকি সমগ্র
৩০ পারা ক্বুরআন আছে! লা হা’উলা ওয়ালা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ!
ক্বুরআনের সবচাইতে বড় এবং বেশি আলোচনা আছে কালিমা লা- “ইলাহা
ইল্লাল্লাহ” বা তাওহীদের কথা। একারণে হাফিজ ইবনুল কাইয়্যিম রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “পুরো ক্বুরআনের (আলোচনার মূল
বিষয়বস্তু) হচ্ছে তাওহীদ।” মাদারিজ আস-সালেকীনঃ ৩/৪১৬।
এই দুই লাইন বাউলা গানের মাঝে ৩০
পারা ক্বুরআন তো দূরে কথা ক্বুরআনের তাওহীদের মহান কালিমার বিন্দু পরিমাণ নাই।
তারপরেও এই বক্তা কি করে সাহস করে, আল্লাহর কিতাব সম্পর্কে এমন জঘন্য কথা বলার?
সর্বশেষ, এমন জাহিল বক্তাদের একের
পর এক এমন জঘন্য কীর্তির পরেও একশ্রেণীর অন্ধ ভক্তরা যখন তাদের পক্ষে উকালতি করা
বন্ধ করে না, তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সেই হাদীসের কথা মনে পড়ে। আজ
থেকে ১৪০০ বছর পূর্বেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন, “কেয়ামতের একটা লক্ষণ হচ্ছে যে, মানুষ জাহেল (মূর্খ) লোকদের কাছ থেকে ইলম (দ্বীনের জ্ঞান) অর্জন করবে।” তাবারানী, জামি আস-সাগীরঃ ২২০৩।
বিঃদ্রঃ যারা প্রমাণ হিসেবে ভিডিও
দেখতে চান তারা এই লিংকে দেখুন –
https://www.facebook.com/125167817515974/posts/4094664010566315/
__________________________________________
মিযানুর রহমান আযহারী (পর্ব-৪)
আজকাল একশ্রেণীর জনপ্রিয় কিন্তু দুনিয়ালোভী বক্তা বের
হয়েছে, যারা ওয়াজ মাহফিল করার জন্য উচ্চ মূল্য দাবী করছে। এতদ্বসত্ত্বেও, মাহফিল
আয়োজনকরা লোকদেরকে আকৃষ্ট করে মাহফিল জমানোর জন্য, লোকদের কাছ হতেকে বেশি টাকা
কালেকশানের জন্য এমন লোভী বক্তাদেরকেও ভাড়া করে আনছে। এইভাবে চড়া মূল্যের বিনিময়ে
কনট্রাক্ট করে ওয়াজ করা যে খারাপ, এটা আলেম কিংবা জাহেল সকলেই জানে এবং বুঝে।
এইজন্যে এতোদিন পর্যন্ত, এই সমস্ত লোভী বক্তারা এই কাজটা মাহফিল আয়োজকদের সাথে
পর্দার আড়ালে গোপনে করতো। কিন্তু আখেরী যামানা যত কাছে আসছে, যেমন জাহেল নারী ও
পুরুষদের লজ্জা-শরম কমে গেছে, অনুরূপভাবে ক্বুরআন হাদীস পড়ুয়া এই সমস্ত লোভী
বক্তাদেরও লজ্জা কমে গেছে। এইজন্য ২০২০ সালে বাংলার জনগণ ইতিহাসে এই প্রথমবারের
মতো, কোন বক্তাকে “কনট্রাক্ট করে ওয়াজ করা জায়েজ”-এর পক্ষে
উকালতি করার নির্লজ্জতা দেখতে পেলো।
উদাহরণঃ ১ -
হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী (কুয়াকাটার পীর ওরফে হেলিকপ্টার
হুজুর)
দেওবন্দীরা মাদ্রাসা থেকে কিছু ক্বুরআন ও হাদীস পড়ে ঠিকই, কিন্তু না বুঝে পড়ার কারণে শিরক আর বেদাতের
গর্তে পড়ে। মানুষ এই সমস্ত বিদাতী
আলেমদের মুখে আরবীতে ক্বুরআন ও হাদীষ শুনে তাদেরকে বড় আলেম মনে করে ধোঁকা খায়।
এমনই একজন বিদআ’তী আলেম হচ্ছে হাফিজুর রহমান সিদ্দিকী, বর্তমানে যাকে ভাড়া
করে ওয়াজ করতে সবচাইতে বেশি টাকা লাগে। এমনকি সে নিজেই গর্ব করে দাবী করে, “আমার
হাদীয়া বেশি!”
এই লিংকে দেখুন তার দম্ভোক্তি এবং কন্ট্রাক্ট করে বয়ান করার
স্বীকারোক্তি শুনুন -
“ব্যাটা তুই
দশ হাজার? আমাকে লাখ টাকা অগ্রীম দিয়া ডেইট
পায়না আর তুই আমাকে দশ হাজার টাকা দিয়ে কিনে ফেলছো?”
https://youtu.be/Px40CXlr9Zg
উদাহরণঃ ২ -
মিযানুর রহমান আযহারী
আলেমদের ফতোয়া হচ্ছে, “কনট্রাক্ট
করে ওয়াজ করা জায়েজ!”
আজ পর্যন্ত কোন একজন আলেম এমন ফতোয়া দেন নাই। জামাতে
ইসলামীর এই কন্ঠশিল্পী আলেমদের নামে মিথ্যাচার করেছেন। বিস্তারিত দেখুন -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/videos/717744018755777/
দুনিয়ালোভী বক্তাদের বিভ্রান্তির জবাবঃ
একজন মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, মাদ্রাসার শিক্ষক, আল্লাহর
পথে আহবানকারী দ্বাইয়ী তাঁর কাজের বিনিময়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে উপযুক্ত
পারিশ্রমিক নিতে পারেন, এটা বৈধ। কিন্তু কোন মুসলমান ইমাম, মুয়াজ্জিন বা মাদ্রাসার
শিক্ষকতাকে দুনিয়া অর্জনের মাধ্যম হিসেবে নিতে পারেন না। তিনি দ্বীনের কাজ করবেন
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, পক্ষান্তরে পারিশ্রমিক গ্রহণ করবেন দুনিয়াতে তাঁর
অত্যাবশ্যকীয় চাহিদা পূরণের জন্য। কোন ব্যক্তি যদি পয়সা অর্জনের জন্য দ্বীনের কাজ
করে তাহল এই কাজের বিনিময়ে কিয়ামতের দিন সে কোন সওয়াব পাবেনা। বরং এটা একপ্রকার
শিরক, যে কারণে তাঁর জন্য কঠিন শাস্তির আশংকা রয়েছে।
ক্বুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন নেওয়া জায়েয কিনা, এ ব্যাপারে সৌদী আরবের ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী
কমিটিকে জিজ্ঞেস করা হলে তাঁরা এই জবাব দিয়েছিলেন, “হ্যাঁ; আলেমগণের দুইটি মতের মধ্যে বিশুদ্ধ মত
হচ্ছেঃ ক্বুরআন
শিক্ষা দিয়ে বেতন নেওয়া
জায়েয। দলীল হচ্ছে,
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের বাণীর ব্যাপকতা, “তোমরা যে যে কাজের জন্য
পারিশ্রমিক গ্রহণ করো
তার মধ্যে আল্লাহর কিতাব সবচাইতে বেশি উপযুক্ত।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
এছাড়া যেহেতু এর (ক্বুরআন শিক্ষা দিয়ে বেতন নেওয়ার) প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আল্লাহ-ই উত্তম তোওফিক দাতা। আমাদের নবী মুহাম্মদের
প্রতি আল্লাহর শান্তি ও দয়া বর্ষিত হোক।
উৎসঃ ফতোয়া বিষয়ক স্থায়ী
কমিটির ফতোয়া সমগ্রঃ খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৯১।
ক্বুরআন শিক্ষা দিয়ে টাকা উপার্জন করাকে ‘নিয়ত’ বা উদ্দেশ্য বানানো যাবেনা। অর্থাৎ, যেই ব্যক্তি ক্বুরআন শিখাবেন
তিনি ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারবেন, কিন্তু তার অন্তরে উদ্দেশ্য থাকতে হবে ‘শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির’। ক্বুরআনের
শিক্ষক মাত্রা অতিরিক্ত টাকা নিয়ে ছাত্রদেরকে কষ্টে ফেলবেন না, বা টাকা উপার্জন
করাকে তার উদ্দেশ্য বানাবেন না। কারণ নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “তোমরা
ক্বুরআন পড়ো, ক্বুরআনের উপর আমল করো, কিন্তু ক্বুরআনকে খাওয়া-পরার মাধ্যম হিসেবে
নিয়ো না।”
একারণে কোন মসজিদের ইমাম, তারাবীর নামায পড়ানোর জন্য হাফেজ,
ওয়াজ মাহফিলের বক্তার জন্য তাদের কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিক কত হবে, এমন কোন চুক্তি
বা ডিমান্ড করা উচিত নয়। বরং সে আল্লাহর ওয়াস্তে তাঁর দায়িত্ব পালন করবে আর
কর্তৃপক্ষ যা দেবে, তাতে সন্তুষ্ট থাবে। অবশ্য কর্তৃপক্ষের উচিত, ব্যক্তির অবস্থা
অনুযায়ী তাঁকে উপযুক্ত মূল্যায়ন করা। তারা যদি এটা না করে অর্থের দিক থেকে কষ্ট
দেয়, তাহলে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবে।
(১) ইমাম ইবনে মাজাহ রহি’মাহুল্লাহ
তার সুনানে ইবনে মাজাহ গ্রন্থে “ব্যাবসা বাণিজ্য” নামক
অধ্যায়ে “কুরআন মাজীদ শিক্ষাদানের বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ” শিরোনামে
একটি পরিচ্ছেদ নিয়ে এসেছেন। সেখানে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের এই হাদীষ বর্ণনা করেছেনঃ
উবাদা ইবনুস সামিত রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আহলে সুফ্ফার কিছু সংখ্যক লোককে কুরআন মাজীদ ও লেখা শিখাই।
তাদের একজন আমাকে একটি ধনুক উপহার দেয়। আমি (মনে মনে) বললাম, এটি তেমন উল্লেখযোগ্য
মাল নয়। এটির সাহায্যে আমি আল্লাহর পথে তীর মারতে পারবো। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট বিষয়টি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম।
তিনি বলেনঃ তোমাকে জাহান্নামের জিঞ্জীর পরানো হলে তাতে তুমি খুশি হতে পারলে এটি
গ্রহণ করো। সুনানে ইবনে মাজাহঃ ২১৫৭।
(২) উবাই বিন কাব রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে কুরআন শিক্ষা দিলে সে আমাকে একটি ধনুক উপহার
দেয়। আমি তা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উল্লেখ করলে তিনি
বলেনঃ তুমি এটি গ্রহণ করলে (জানবে যে,) তুমি জাহান্নামের একটি ধনুক গ্রহণ করেছো।
অতএব আমি তা ফেরত দিলাম।
(৩) ইমাম আবূ দাঊদ রহি’মাহুল্লাহ
বলেন, “ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহকে
এমন একজন ইমামের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, যে বলে যে “আমি এত এত
(টাকার) বিনিময়ে রমযানে তোমাদের নামাযে ইমামতি করবো।” ইমাম
আহমাদ রহি’মাহুল্লাহ বললেন, “আল্লাহু মুস্তাআ’ন
(আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাই)। এমন ব্যক্তির পেছনে কে নামায পড়বে?” মাজমুআতু
রাসাইল ফিক্বহুস সালাহঃ ৯৯ পৃষ্ঠা।
(৪) শায়খ আব্দুল হামীদ ফাইজী হা’ফিজাহুল্লাহ
বলেন, “ইমামতির জন্য সৌজন্য সহকারে ইমামকে বেতন, ভাতা বা বিনিময়
দেওয়া মুক্তাদীদের কর্তব্য। ইমামের উচিৎ, কোন চুক্তি না করা; বরং মুক্তাদীদের
বিবেকের উপর যা পায় তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে আল্লাহর ওয়াস্তে ইমামতির দায়িত্ব পালন করা।
পক্ষান্তরে জামাআতের উচিৎ, ইমামের এই দ্বীনদারীকে সস্তার সুযোগরুপে ব্যবহার না
করা। বরং বিবেক, ন্যায্য ও উচিৎ মত তাঁর কালাতিপাতের ব্যবস্থা করে দেওয়া। যেমন
উচিৎ নয় এবং আদৌ উচিৎ নয়, ইমাম সাহেবকে জামাআতের ‘কেনা
গোলাম’ মনে করা।” সালাতে মুবাশশির।
সর্বশেষ, চুক্তি করে ওয়াজ করা জায়েজ নয়। যেই সমস্ত বক্তা
চুক্তি করে ওয়াজ করে তাদের ওয়াজ শোনাও জায়েজ নয়।
___________________________________
মিযানুর রহমান আযহারী একজন “ইউনিক” বক্তা
(১) মিযানুর রহমান আযহারী
হচ্ছেন সর্বপ্রথম বক্তা, যিনি লজ্জা শরম ভেংগে টিভি ক্যামেরার সামনে “কন্ট্রাক্ট করে ওয়াজ করা জায়েজ” বলে ফতোয়া দিয়েছেন।
অবশ্য এর জন্য তিনি “আলেমরা এটাকে জায়েজ বলেছেন” বলে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। অথচ হক্ক কথা হচ্ছে, আজ পর্যন্ত কোন একজন
আলেম তো দূরের কথা, যারা কন্ট্রাক্ট করে ওয়াজ এমন কোন লোভী বক্তা এই দাবী করেনি যে,
চুক্তি করে ওয়াজ করা জায়েজ।
(২) মিযানুর রহমান আযহারী হচ্ছেন সেই বক্তা, যিনি ওয়াজ মাহফিলে
সর্বপ্রথম বাংলা এবং হিন্দী সিনেমার গানের সুর নকল করে প্যারোডি গান গেয়ে দাওয়াত দেওয়ার
নামে বাংলার বুকে নতুন একটা বিদআ’ত চালু করেছেন।
(৩) মিযানুর রহমান আযহারী হচ্ছেন ইতিহাসে সেই বক্তা, যিনি ওয়াজ
মাহফিলে সবার সামনে
“এই দুই লাইন বাউলা গানের মাঝে গোটা ৩০ পারা ক্বুরআনটা আছে”
বলে মহাগ্রন্থ আল-ক্বুরআন অবমাননা করার দুঃসাহস দেখিয়েছেন।
(৪) মিযানুর রহমান আযহারী হচ্ছেন সেই বক্তা, যিনি ওয়াজ মাহফিলে
লোকদেরকে হাসানোর জন্য
“আল্লাহ হালা তাবলীগ করেছেন...নবী হালা তাবলীগ করেছেন” (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)
বলে আল্লাহ এবং তার নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে গালি দেওয়ার দুঃসাহস দেখিয়েছেন।
(৫) মিযানুর রহমান আযহারী হচ্ছেন সেই বক্তা, যিনি ওয়াজ মাহফিলে
সুযোগ পেলেই নাকি সুরে গান গাওয়ার জন্য সুনাম (নাকি দুর্নাম?) কুড়িয়েছেন।
(৬) মিযানুর রহমান আযহারী হচ্ছেন ইতিহাসে প্রথম ব্যক্তি, যিনি
বিমানে করে কাতার থেকে মিশর যাওয়ার পথে হিমালয় পর্বত দেখতে পেয়েছেন।
মিজানুর রহমান আযহারীকে যারা “ইসলামী বক্তা” হিসেবে মানুষের মাঝে প্রশংসা বা প্রমোট করে কিংবা তার ব্যাপারে চুপ থেকে
নীরব সমর্থন জানায় তারা কেমন?
(১) যেই সমস্ত সাধারণ মুসলমানেরা ইলমের অভাবে তার সুর শুনে বিভ্রান্ত
হয়েছেন, ইলমের ঘাটতির কারণে আমি তাদেরকে দোষারোপ করিনা। দুয়া করি মহান আল্লাহ মুসলমান
ভাই ও বোনদেরকে এই সমস্ত বিভ্রান্ত বক্তাদের ধোকা থেকে হেফাজত করুন।
(২) জামায়েতে ইসলামীর অনুসারী মুসলমান, যারা দলীয় স্বার্থে এই
সমস্ত বিভ্রান্ত বক্তাদেরকে সমর্থন করে, দুয়া করি আল্লাহ তাদের অন্তরে দলীয় প্রেমের
চাইতে ইখলাসকে বড় করে দিন। যাতে করে করে এই সমস্ত বক্তার পেছনে না ছুটে তারা সত্যিকারের
আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখতে পারে।
(৩) জনপ্রিয় “শায়খ” যারা মার্কেট ধরে রাখার জন্য এমন বিভ্রান্ত বক্তার প্রশংসা করে বা তাদের
ব্যাপারে চুপ থাকে; এমন বক্তারা হচ্ছে দুইমুখী সাপের মতো। এরা না পারে আল্লাহর সন্তুষ্টিকে
প্রাধান্য দিতে, না পারে তাদের শ্রোতাদেরকে সঠিক পথ দেখাতে। অথচ পথভ্রষ্ট বক্তাদের
ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করার মাঝে কত বড় সওয়াব রয়েছে সেটা যদি তারা জানতো, তাহলে এই
ব্যাপারে তারা অন্যদের সাথে প্রতিযোগিতা করতো।
___________________________________
জামাত
শিবিরের আসল পরিচয় (পর্ব-১)
জামআ’তে ইসলামী কতিপয় বিভ্রান্তির সংক্ষিপ্ত তালিকা
এক ভাই “জামাতে ইসলামী একটি বিদআ’তী দল”, আমার এই কথার কিছু প্রমাণ জানতে চেয়েছেন। নিন্মে জামাতে ইসলামীর কিছু
বিদআ’তী এবং
অনৈসলামিক কর্মকান্ডের কথা সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
(১) খিলাফত বা ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার “মওদুদী মতবাদ” নিয়ে জামাতে ইসলামী নামক নতুন একটি বিদআ’তী দল গঠন করা।
(২) দ্বীন কায়েমের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ক্বুরআনের অপব্যাখ্যা।
(৩) বর্তমান যুগে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনকে দ্বীন কায়েমের রাস্তা
বলে মনে করা।
(৪) ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের আবিষ্কৃত নির্বাচন পদ্ধতিকে উহুদ-বদরের
জিহাদের মতো ফরয এবং পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করা।
(৫) নারী নেতৃত্বকে স্বীকৃতি এবং বৈধতা দেওয়া।
(৬) হরতালের ও অবরোধের মতো সন্ত্রাসী এবং সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডকে “ইসলামী আন্দোলন” নামে জায়েজ সাব্যস্ত করা।
(৭) নিজ দলীয় নেতাদেরকে জেল থেকে মুক্ত করার জন্য কর্মীদের “রোযা দিবস” পালন করা।
(৮) মুশরিক জাতি হিন্দুদের পূজা নামক শিরকী কর্মকান্ড উপলক্ষ্যে তাদেরকে
শুভেচ্ছা জানানো।
(৯) বিভিন্ন জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে ইট-পাথরের স্তম্ভ ও মিনারে ফুল দেওয়া।
(১০) তাফসীরুল ক্বুরআন বা ক্বুরআনের মাহফিল নাম দিয়ে মওদুদী মতবাদ,
কুতুবী মতবাদের বিষ প্রচার করা।
(১১) কাল্পনিক “বায়তুল মাল” নামে মুসলমানদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করা এবং সেই সম্পদের খিয়ানত
করা।
(১২) ইরানী শীয়াদের সাথে বন্ধুত্ব ভালোবাসা আর মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নী দেশ
সমূহের সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষ প্রচার করা।
(১৩) কর্মীদেরকে সংগঠনের কাছে বাইয়াত গ্রহণ করা।
(১৪) মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা। যেমন সাইদীকে চাঁদে দেখা গেছে, মুহা'ম্মদ বিন সালমান মৃত্যু বরণ করেছেন
ইত্যাদি।
(১৫) নাকি সুরে আবেগী গান ও গজল গেয়ে ইলম বিহীন ভক্ত-শ্রোতাদেরকে আকৃষ্ট
করা।
(১৬) গানের সুরে ক্বুরআন তিলাওয়াত করা।
(১৭) হরতাল করতে গিয়ে কেউ মারা গেলে তাকে শহীদ বলে ঘোষণা করা।
(১৮) গুপ্ত হত্যার আহবান করা।
(১৯) আরব বসন্ত নামে মুসলমান দেশ-সমূহে বিদ্রোহ, রক্তপাত ও বিশৃঙ্খলাকে “ইসলামিক বিপ্লব” হিসেবে মনে করা।
(২০) মুসলমান শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কানি দেওয়া।
(২১) জনপ্রিয়তা, ভোট বা মানুষের কাছে
গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য সত্য কথা বলা থেকে বিমুখ থাকা।
(২১) মওদুদীর লেখা সাহাবীদের অন্যায় সমালোচনা ও মানহানী করা হয়েছে এমন
বই-পুস্তক অনুবাদ করে ছাপানো এবং মানুষের মাঝে সেইগুলো প্রচার করা।
(২২) মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর সাথে শত্রুতা পোষণ করা, খিলাফাহ ধ্বংসের জন্য তাকে দোষারোপ করা।
(২৩) মিছিলের জন্য নারীদেরকে রাস্তায় নামিয়ে জমীনে ফিতনা সৃষ্টি করা।
(২৪) সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর বাধা থাকা সত্ত্বেও খালি হাতে রাস্তায় নেমে
বিক্ষোভ সমাবেশ করে কর্মীদেরকে পাখির মতো গুলি খেয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।
(২৫) হেফাজতের মতো বিদআ’তী দলের সরকার বিরোধী অবরোধ এবং সমাবেশকে সমর্থন
জানানো।
__________________________________________
জামাত
শিবিরের আসল পরিচয় (পর্ব-২)
এক নজরে জামাতে ইসলামীর গোমরাহী (প্রমাণসহ বিস্তারিত)
বিগত ২৪-শে জুন রাতে আমরা একটা
পোস্ট করেছিলাম এই শিরোনামেঃ
“জামআ’তে ইসলামী কতিপয় বিভ্রান্তির
সংক্ষিপ্ত তালিকা”
পোস্টের লিংক -
https://www.facebook.com/125167817515974/posts/3772347309464655/
আমাদের সেই পোস্টে এক ভাই মন্তব্য
করেছিলেন, এখানে সবগুলো পয়েন্ট মিথ্যা আর নয়তো ভুল।”
তার প্রেক্ষিতে আমরা কথা
দিয়েছিলাম, আমরা যে ২৫-টা পয়েন্ট লিখেছি তার অন্তত ১০-টা পয়েন্টের বিস্তারিত
ব্যাখ্যা ও প্রমাণ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করবো ইন শা আল্লাহ। সচেতন পাঠকদের প্রতি
আহবান, আপনারা যাচাই করুন, কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী।
উল্লেখ্য, অনেকে আমাদেরকে কাফের,
নাস্তিক, মূর্খ ইত্যাদি খারাপ গালি-গালাজ করে নিজেদেরকে বিজয়ী মনে করে আত্ম-তৃপ্তি
বোধ করছেন। এমন গালিবাজ লোকদের উদ্দেশ্যে আমরা ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল
রহি'মাহুল্লাহর এর একটা মূল্যবান কথা পেশ করছি। তিনি বলেছিলেন,
“আমি হক্ক কথা বলার জন্য মানুষকে খুশি
করা ত্যাগ করেছি।” সিয়ার আ’লাম আন-নুবালাহ।
(১) খিলাফত বা ইসলামিক রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করার “মওদুদী মতবাদ” নিয়ে জামাতে ইসলামী নামক নতুন একটি বিদআ’তী দল গঠন করা।
“জামাতে ইসলামী” ও “তাবলিগ জামাত” – এই দুইটি দলের মূল সমস্যা কোথায়?
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1879972368702168&id=125167817515974
মুসলমানদের মূল জামাত থেকে আলাদা
হয়ে কেনো নতুন উপদল করা সৃষ্টি করা হারাম
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1111071588925587&id=125167817515974
(২) “দ্বীন কায়েম” এর ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ক্বুরআনের
অপব্যাখ্যা।
আবুল আলা-মওদুদী, সাইয়েদ কুতুবের
মতো জামাতে ইসলামীর পথভ্রষ্ট মুফাসসির সুরা শূরার ১৩-নং আয়াতে উল্লেখিত
"দ্বীন কায়েম" এর অর্থ করেছে “রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা” বা “ইসলামিক রাষ্ট্র গঠন করা”।
অথচ, সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে-তাবেয়ী
বা পূর্ববর্তী কোন একজন ইমাম বা আলেম দ্বীন কায়েমের এমন অর্থ করেন নি।
“দ্বীন কায়েম” বলতে কি বুঝায়?
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3176697365696322&id=125167817515974
দ্বীন কায়েমের নামে জামাতে ইসলামী,
আল-কায়েদা, আইসিসের মতো দলের লোকেরা কত বড় বিভ্রান্তির শিকার হয়েছে, এ সম্পর্কিত
বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রহি’মাহুল্লাহ রচিত “ইসলামের নামে জংগীবাদ” বইটি পড়ুন। বইটা আপনারা hadithbd এপে সম্পূর্ণ ফ্রী এবং খুব সহজেই
পড়তে পারবেন।
(৪) ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের আবিষ্কৃত
নির্বাচন পদ্ধতিকে উহুদ-বদরের জিহাদের মতো ফরয এবং পবিত্র দায়িত্ব বলে মনে করা।
জামাতে ইসলামীর সবচাইতে বড় মুফতি
দেলোয়ার হোসেন সাঈদী সাহেব এই ভ্রান্ত ফতোয়া দিয়েছিলেন। তার নিজের ওয়াজের ক্যাসেট
এটা রেকর্ড করা আছে।
(৫) নারী নেতৃত্বকে স্বীকৃতি এবং
বৈধতা দেওয়া।
নারী নেতৃত্ব নিয়ে জামাতের
লুকোচুরি -
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2019685674730836&id=125167817515974
(৬) হরতালের ও অবরোধের মতো
সন্ত্রাসী এবং সমাজ বিরোধী কর্মকান্ডকে “ইসলামী আন্দোলন” নামে জায়েজ সাব্যস্ত করা।
জামাতে ইসলাম আওয়ামী লীগ, বিএনপির
মতো গণতান্ত্রিক দলগুলোর অনুকরণে আন্দোলনের নামে হরতাল ডেকে দেশ ও জাতির ক্ষতি
করে। এই কথা তাদের কেউ অস্বীকার করেনা। এমনই দুইটি খবরের লিংক -
“জামায়াতের হরতালে অচল দেশ”
এটা বিগত ৩১/১০/২০১৪ ইং তারিখে
জামায়েতে ইসলামীর মুখপাত্র “দৈনিক সংগ্রাম” পত্রিকার প্রথম পাতার একটা সংবাদ শিরোনাম ছিলো। সাথে এটাও
শিরোনাম ছিলোঃ
আহত দেড় শতাধিক গ্রেফতার ৬ শতাধিক
সংবাদের লিংক -
https://www.dailysangram.com/post/162702-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A7%87-%E0%A6%85%E0%A6%9A%E0%A6%B2-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6
২০১৬ সালের মে মাসের খবরঃ
জামায়াতের ডাকে দেশব্যাপী হরতাল
পালিত
সংবাদের লিংক -
https://www.dailysangram.com/post/234173-%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%A4%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A1%E0%A6%BE%E0%A6%95%E0%A7%87-%E0%A6%A6%E0%A7%87%E0%A6%B6%E0%A6%AC%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%80-%E0%A6%B9%E0%A6%B0%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%B2%E0%A6%BF%E0%A6%A4
হরতাল ডেকে মানুষের কাজ বন্ধা রাখা
জায়েজ নয়
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2069212826444787&id=125167817515974
হরতাল পালন করা কি ইসলাম সম্মত?
কাজী মুহাম্মাদ ইব্রাহীম এবং শায়খ
আব্দুর রাজ্জাক্ব বিন ইউসুফের বক্তব্য -
https://youtu.be/sr8i4p87W50
(১১) কাল্পনিক “বায়তুল মাল” নামে মুসলমানদের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন
করা এবং সেই সম্পদের খিয়ানত করা।
জামাতে ইসলামীর লোকেরা তাদের
সংগঠনের সদস্য, অনুসারী এবং তাদের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত লোকদের কাছ থেকে
"বায়তুল মাল" এবং "ইয়ানত" নামে জোরপূর্বক চাদা সংগ্রহ করে।
অথচ, বায়তুল মালের টাকা তোলার অধিকার শুধুমাত্র ইসলামিক রাষ্ট্রের, কোন ব্যক্তি বা
সংগঠনের বায়তুল মাল নামে চাদা তোলার এখতিয়ার নেই। আবার, বায়তুল মাল খরচ করতে হয়
সাধারণ মুসলমানদের কল্যাণে। কিন্তু জামাত-শিবির বায়তুল মালের নামে চাদা তুলে
সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে তাদের নেতারা খেয়াল খুশি মতো খরচ করে। এই কথা যে অস্বীকার করে
সে হয় জামাত সম্পর্কে কিচ্ছু জানেনা, আর নয়তো সে সত্য জেনেও সত্য গোপনকারী।
(১২) ইরানী শীয়াদের সাথে বন্ধুত্ব
ভালোবাসা আর মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নী দেশ সমূহের সাথে শত্রুতা ও বিদ্বেষ প্রচার করা।
রাফেজী শীয়া, ইসলামিক রাষ্ট্র ইরান
এবং শিয়া প্রেমী জামাত-শিবির, ইখোয়ানীদের হাকীকত
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2343847995647934&id=125167817515974
ইরানী মুশরিক খোমেনী হচ্ছে জামাতে
ইসলামীর মুফতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর “ইমাম”
https://youtu.be/QXvvZ2QzTdM
(১৪) মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা।
যেমন সাইদীকে চাঁদে দেখা গেছে, মুহা’ম্মদ বিন সালমান মৃত্যু বরণ করেছেন ইত্যাদি।
এই ভিডিওতে দেখুন, কুখ্যাত জামাতী
বক্তা তারেক মনোয়ার কিভাবে সাঈদীকে চাঁদে দেখার মিথ্যা কাহিনী বর্ণনা করছে। লক্ষ্য
করুন, ওয়াজ মাহফিলে হাজার হাজার ভক্ত শ্রোতাদের সামনে তারেক মনোয়ার এমন মারাত্মক
আজগুবী কাহিনী বলে যাচ্ছে, আর মানুষ নীরবে তা হজম করছে। এর কারণ হচ্ছে, সেটা
জামাতে ইসলামীর আয়োজিত মাহফিল। উপস্থিত মানুষের মধ্যে অনেকেই জামাত সমর্থক।
এইজন্যই সাঈদীর নামে এমন মিথ্যা কাহিনী তারা বিনা দ্বিধায় গলাধঃকরণ করছে।
ভিডিও লিংক -
https://m.youtube.com/watch?feature=youtu.be&v=UqNh3T9vbAE
তারেক মনোয়ারের বক্তব্যের উপরে
আলোকপাত (পর্ব-১)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3271082726257785&id=125167817515974
তারেক মনোয়ারের বক্তব্যের উপরে
আলোকপাত (পর্ব-২)
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3276264735739584&id=125167817515974
(১৫) নাকি সুরে আবেগী গান ও গজল
গেয়ে ইলম বিহীন ভক্ত-শ্রোতাদেরকে আকৃষ্ট করা।
- ওয়াজ মাহফিলে জামাতে ইসলামীর
আইকন মিজানুর রহমান আজহারীর হিন্দী গানের নকল সুরে এবং বাংলা সিনেমার গানের মহড়া
দেখুন নীচের এই ভিডিওতে।
সাথে শাহ ওয়ালী উল্লাহ হা’ফিজাহুল্লাহর প্রতিবাদ -
https://youtu.be/TxyxdeQGqTc
- আরেক জামাতী বক্তা রফিকুল্লাহ
আফসারী সাহেবের ওয়াজ মাহফিলে মিজানুর রহমান আযহারীর বন্দনায় ইংরেজী কবিতা আবৃত্তির
বিরল প্রতিভা -
https://youtu.be/dgmOlSXcRsQ
মিযানুর রহমান আজহারীর “বড় ভাই” তারেক মনোয়ারের নাশিদ সন্ধ্যা
https://youtu.be/Aw7aLHoi91c
কথিত ইসলামিক গান বা নাশিদ
সম্পর্কে আলেমদের ফতোয়া -
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3435500623149327&id=125167817515974
(২৪) সশস্ত্র পুলিশ বাহিনীর বাধা
থাকা সত্ত্বেও খালি হাতে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ করে কর্মীদেরকে পাখির মতো
গুলি খেয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া।
২০১৩ সালে কথিত যুদ্ধপরাধ মামলায়
দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর ফাসির রায় হলে সারা দেশে সরকারের আদেশ অমান্য করে বিক্ষোভ
মিছিল বের করে জামায়েতে ইসলামী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংঘর্ষে পুলিশ গুলি করে অসংখ্য
জামাত কর্মীদেরকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
১-লা মার্চ, ২০১৩ বিবিসির সংবাদঃ
“জামায়াতে ইসলামী দাবি করছে, গতকাল
পর্যন্ত তাদের অন্তত ৪৪ জন সমর্থক নিহত হয়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে
নিহতের সংখ্যা তিরিশ হতে পঞ্চাশ পর্যন্ত বলে উল্লেখ করা হচ্ছে।”
সংবাদের লিংক -
https://www.bbc.com/bengali/news/2013/03/130301_mh_bd-violence.shtml
আমাদের মন্তুব্যঃ
স্পষ্টতই জামাতের নেতারা দলীয়
এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য তাদের আবেগপ্রবণ কর্মীদেরকে নিরস্ত্র অবস্থায় পুলিশের
গুলির সামনে ফেলে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দেয়। সাধারণ মানুষের আবেগকে পূজি করে
এতোগুলো মানুষ পুলিশের গুলি খেয়ে মরার জন্য আওয়ামী লীগ জালেম সরকারের পাশাপাশি
জামাতের মূর্খ নেতারাও দায়ী।
__________________________________________
জামাত
শিবিরের আসল পরিচয় (পর্ব-৩)
জামাত
শিবিরের লোকেরা আমাকে বলে,
(১) আমি
ইসলাম বুঝিনা, ক্বুরআন হাদীস বুঝিনা, ইসলাম শুধুমাত্র তারাই বুঝেন।
(২) আমি
সুবিধাবাদী, আমি ইসলাম কায়েম করছিনা, শুধুমাত্র তারাই ইসলাম কায়েমের জন্যে যুদ্ধ
করছেন।
(৩) আমি
আওয়ামী লীগের দালাল, মুনাফেক...আর তারা হচ্ছেন সাচ্চা মুসলমান।
=> জামাত শিবিরের লোকেরা রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম করার জন্যে জীবন দিতে রাজি,
কিন্ত তাদের বেশির ভাগ ভক্তরাই নিজেদের জীবনে ইসলাম মানতে রাজিনা। এদের বেশির ভাগই
দলীল-প্রমান ছাড়াই অশ্লীল আজেবাজে গালি দেয়, তাদের বিরোধীতা করলে অন্যদেরকে উঠতে
বসতে কাফের বা মুনাফেক বলে ফতোয়া দেয়।
=> অথচ যে কোন মুসলমানকে গালি দেয় সে একজন ফাসেক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুসলমানদেরকে
গালমন্দ করা ফাসেকী, আর তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা কুফরী।” বুখারী ও মুসলিম।
=> যে কোন মুসলমানকে কাফের অথবা মুনাফেক বলে, সে নিজেই একজন কাফের বা
মুনাফেক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “যে
ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে, তাহলে তা দুইজনের যেকোন একজনের দিকে ফিরবে।
যদি সে যা (কাফের) বলেছে বাস্তবে তাই হয়, তাহলেতো ঠিক আছে। আর সে যদি কাফের না হয়
তাহলে উক্ত বিষয়টি (কুফুরী) যে বলেছে, তার দিকেই ফিরে আসবে।” সহীহ মুসলিমঃ ২২৫।
=> বেশিরভাগ জামাত শিবির ভক্তরাই নিজেদের প্রোফাইল পিকচার দিয়ে রেখেছে
একেবারে মেয়েদের মতো চকচকে গাল নিয়ে। অথচ চার মাযহাবের ফুকাহারা, সমস্ত আলেমরাই এ ব্যপারে
একমত হয়েছেন যেঃ দাড়ি রাখা ওয়াজিব, যে ব্যক্তি দাড়ি রাখেনা সে একজন ফাসেক।
একবার
এমনই এক শিবির লেখকের একটা লেখা আমি ফেইসবুকে দেখলাম। কিছুদিন পূর্বে সৌদি আরবের
প্রধান মুফতি, আল্লামাহ শায়খ আব্দুল আজিজ আলে-শায়খের নামে একটা মিথ্যা
প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছিলো, শায়খ নাকি ফিলিস্থিনের বিপক্ষে আর ইসরায়েলের পক্ষে
ফতোয়া দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ, মিথ্যুকদের উপরে আল্লাহর লানত, কত বড় মিথ্যা কথা
ছড়ানো হয়েছিলো একজন বড় আলেমের নামে। জামাতের রাজনীতির পক্ষে লেখালিখি করে জনপ্রিয়
এমন একজন ফেইসবুক লিখক এই মিথ্যা খবর বিশ্বাস করে সৌদি প্রধান মুফতিকে কাফের ও বলে
শয়তান বলে গালি দিলো, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। কত বড় বোকা একটা লোক, আর আমি
আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম তার ভক্ত প্রায় ৪০০-৫০০ মানুষ সেই জঘন্য মিথ্যাচারের
পোস্টে লাইক দিয়ে রেখেছে। আমি লেখক সম্পর্কে জানার জন্যে তার টাইম লাইন একটু ঘেটে
দেখি সে দুই দিন আগেই তার একটা ছবি পোস্ট করেছে, একেবারে মেয়েদের মতো গাল,
ছিটাফোঁটা দাড়ি নাই, হয় এখনো দাঁড়ি উঠার মতও বয়স হয়নি, অথব দাড়ি রাখার মতো ঈমান
অর্জন করতে পারেনি। এমন লোকেরাই ক্বুরআন হাদীস না বুঝে আলেম-ওলামাদের গালি গালাজ
করে, জাহেল বক্তাদের কথা শুনে নিজেরা গোমরাহ হয় তারাও অন্যদেরকে গোমরাহ বানায়।
একেতো
দাঁড়ি রাখেনা, আবার বুক ফুলিয়ে সেই ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করে সবাইকে দেখাচ্ছে!
সুবহানাল্লাহ! লজ্জা-শরম ঈমানের অংগ। কোথায় গেলো লজ্জা-শরম? দাঁড়ি না রাখার
ফাসেকীতে লিপ্ত, অন্তত সেই চেহারা মানুষকে দেখানো থেকে বিরত থাকো। আর দাঁড়ি ছাড়া
এমন চেহারা নিয়ে (যেই চেহারার দিকে তাকাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ঘৃণা বোধ করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন), এমন
লোকদের নিজেদের অল্প বুঝ আর বিভ্রান্ত বক্তা ও লেখকদের (মওদুদী, সাঈদী, নিজামী গং)
ক্বুরআন হাদীসের অপব্যখ্যা নিয়ে ইসলাম কায়েমের বড় বড় কথা বলা কতটা মানানসই, সেটা
আমি বিজ্ঞ পাঠকদের বিবেচনার উপরেই ছেড়ে দিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত করুন,
আমিন।
__________________________________________
মওদুদীর
ভ্রান্ত আকিদাহ (পর্ব-১)
জামাতে
ইসলামীকে “মওদুদী জামাত” বলা হয়, কারণ তারা তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা আবুল
আলা মওদুদী রহি’মাহুল্লাহর ভ্রান্ত মতবাদের অন্ধ অনুসারী।
প্রথম উদাহরণঃ
“বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির”-এর সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি শফিকুল ইসলাম মাসুদ
(আল্লাহ তাকে হেদায়েত দান করুন) সম্প্রতি তার এক ভিডিও বক্তব্যে বলেনঃ
“আল-আক্বিমুদ-দ্বীনের কাজ হচ্ছে সমস্ত ইবাদতের মূল
কেন্দ্রবিন্দু। This is the central point. নামাযের মূল টার্গেট হচ্ছে আক্বীমুদ-দ্বীন, রোযার টার্গেট হচ্ছে
আক্বীমুদ-দ্বীন, হজ্জের টার্গেট হচ্ছে আক্বীমুদ-দ্বীন, যাকাতের টার্গেট হচ্ছে
আক্বীমুদ-দ্বীন, সদাক্বার টার্গেট হচ্ছে আক্বীমুদ-দ্বীন, তাহাজ্জুদের টার্গেট
হচ্ছে আক্বীমুদ-দ্বীন।”
জনাব মাসুদ সাহেবের এই বক্তব্যের উৎস হচ্ছে কথিত “ইসলামী চিন্তাবিদ” আবুল আলা মওদুদী।
যেমন আমাদের ইবাদতের উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে মওদুদী সাহেব বলেছিলেন, “বস্তুতঃ ইসলামের নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত
ইত্যাদি ইবাদতসমূহ এই উদ্দেশ্যে (ইসলামী হুকুমাত কায়েম করার) প্রস্তুতির জন্যই
নির্দিষ্ট করা হয়েছে।” ইসলামের বুনিয়াদি শিক্ষাঃ পৃষ্ঠা-২৭৩।
মওদুদী সাহেব অন্যত্র বলেছিলেন, “মূলত মানুষের নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, যিকির,
তাসবীহকে ঐ বড় ইবাদাত (খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার) জন্য প্রস্তুত করার ট্রেইনিং কোর্স।” তাফহীমাতঃ ১/২৯ উর্দু।
আসুন এবার আমরা ক্বুরআনুল কারীম থেকে জেনে নেই, আমাদের ইবাদত সমূহের
প্রকৃত উদ্দেশ্য কি?
আমাদের “ইবাদত” যেমন নামায, রোযা হজ্জ, যাকাতের উদ্দেশ্য কি?
=> আমাদের সমস্ত ইবাদতের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য হচ্ছেঃ “তাক্বওয়া অর্জন করা”
দলীল নং-১
মহান আল্লাহর বাণীঃ
یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اعۡبُدُوۡا رَبَّکُمُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ وَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
অর্থঃ হে মানুষ সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের সেই রব্বের
(প্রতিপালকের) ইবাদাত (উপাসনা) কর, যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদেরকে
সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা মুত্তাক্বী (পরহেজগার) হতে পার। সুরা আল-বাক্বারাহঃ ২১।
এই আয়াতে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত....এমন সমস্ত ইবাদতের উদ্দেশ্য
বলা হয়েছেঃ
لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
“যাতে তোমরা মুত্তাক্বী (পরহেজগার) হতে পার।”
=> এবার অন্য একটি আয়াতে দেখুন, মহান আল্লাহ রোযার উদ্দেশ্য সম্পর্কে একই
কথা পুনরাবৃত্তি করেছেনঃ
দলীল নং-২
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الصِّیَامُ کَمَا کُتِبَ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّکُمۡ تَتَّقُوۡنَ
অর্থঃ হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর সিয়াম (রোযা) ফরয করা হয়েছে, যেমন
তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর ফরয করা হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাক্বী হতে পার।
সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১৮৩।
সুতরাং, ক্বুরআনের বিপরীতে গিয়ে যারা দাবী করবে যে, আমাদের নামায
রোযার উদ্দেশ্য হচ্ছে কথিত “আক্বিমুদ-দ্বীন” (ইসলামী রাষ্ট্র বা খিলাফত) কায়েম করা, তাদের এই মতবাদ বিদআ’তী মতবাদ।
__________________________________________
মওদুদীর
ভ্রান্ত আকিদাহ (পর্ব-২)
মওদুদীপন্থীদের সবচাইতে বড় ভুল হচ্ছে “দ্বীন
কায়েম” নিয়ে বিভ্রান্তি। মওদুদীপন্থীরা দ্বীন কায়েমের কি ভুল
ব্যাখ্যা করে তা বিস্তারিত উল্লেখ করা হবে ইন শা আল্লাহ তৃতীয় পর্বে।
আজকে আমরা ক্বুরআন এবং হাদীসে “দ্বীন” বলতে কি
বুঝায়? দ্বীনের central point বা মূল বিষয় কোনগুলি তা জেনে নেই।
=> দ্বীন বলতে কি বুঝায়? দ্বীনের central point বা মূল বিষয়বস্তু কি?
ক্বুরআন থেকে দলীলঃ ১
মহান আল্লাহর বাণীঃ
وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ
অর্থঃ তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা
আল্লাহর ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে। আর তারা নামায
প্রতিষ্ঠা করবে আর যাকাত দিবে। আর এটাই হচ্ছে সঠিক সুদৃঢ় দ্বীন। সুরা আল-বাইয়্যিনাহঃ
আয়াত নং-৫।
আয়াত থেকে শিক্ষাঃ
যেই বিষয়গুলোকে আল্লাহ তাআ'লা دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ বা “সঠিক
সুদৃঢ় দ্বীন” বলেছেনঃ
(১) বান্দা আল্লাহর ইবাদাত করবে খাঁটি মনে,
(২) একনিষ্ঠভাবে তাঁর আনুগত্য করবে,
(৩) নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং
(৪) যাকাত দিবে।
সুরা আল-বাইয়্যিনাহর এই আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা
দ্বীনের মূল বিষয়বস্তু অত্যন্ত সহজ এবং সুন্দরভাবে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন এবং
এইগুলোকেدِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ বা “সঠিক সুদৃঢ় দ্বীন” বলেছেন।
ক্বুরআন থেকে দলীলঃ ২
মহান আল্লাহর বাণীঃ
فَاَقِمۡ وَجۡہَکَ لِلدِّیۡنِ حَنِیۡفًا ؕ فِطۡرَتَ اللّٰہِ الَّتِیۡ فَطَرَ النَّاسَ عَلَیۡہَا ؕ لَا تَبۡدِیۡلَ لِخَلۡقِ اللّٰہِ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ ٭ۙ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
অর্থঃ কাজেই দ্বীনের প্রতি তোমার মুখমন্ডল নিবদ্ধ কর
একনিষ্ঠভাবে। এটাই আল্লাহর প্রকৃতি, যে প্রকৃতি তিনি মানুষকে দিয়েছেন, আল্লাহর
সৃষ্টি কার্যে কোন পরিবর্তন নেই, এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন, কিন্তু অধিকাংশ মানুষ
জানে না।
مُنِیۡبِیۡنَ اِلَیۡہِ وَ اتَّقُوۡہُ وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ لَا تَکُوۡنُوۡا مِنَ الۡمُشۡرِکِیۡنَ
তাঁর অভিমুখী হও, আর তাঁকে ভয় কর, নামায প্রতিষ্ঠা কর, আর
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
সুরা আর-রুমঃ ৩০-৩১।
আয়াত দুইটি থেকে শিক্ষাঃ
সুরা রুমে যেই বিষয়গুলোকে আল্লাহ তাআ’লাدِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ বা “সঠিক
সুদৃঢ় দ্বীন” বলেছেনঃ
(১) বান্দা দ্বীনের প্রতি একনিষ্ঠভাবে তার মুখমন্ডল নিবদ্ধ
করবে। অর্থাৎ সমস্ত মানব রচিত দ্বীন ও বাতিল মতবাদ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বান্দা
পরিপূর্ণরূপে দ্বীন ইসলামে প্রবেশ করবে।
(২) বান্দা সমস্ত মিথ্যা মাবূদ ত্যাগ করে আল্লাহর অভিমুখী
হবে,
(৩) আল্লাহকে ভয় করবে,
(৪) নামায প্রতিষ্ঠা করবে এবং,
(৫) শিরক থেকে দূরে থাকবে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, সুরা বাইয়্যিনাহর ৫-নং আয়াতের মতো
সুরা আর-রুমের ৩০-৩১ নং আয়াত দুইটিতে মহান আল্লাহ শিরকমুক্ত ঈমান, ইখলাস,
তাক্বওয়া, নামায এবং রোযাকে আমাদের দ্বীনের মূল বিষয়বস্তু হিসেবে তুলে ধরেছেন।
হাদীস থেকে দলীলঃ ৩
عَنْ أَبِي عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا قَالَ: سَمِعْت رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه و سلم يَقُولُ: " بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ: شَهَادَةِ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلَاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَحَجِّ الْبَيْتِ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ". [رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ] ، [وَمُسْلِمٌ].
অর্থঃ আবু আব্দির রহমান আব্দুল্লাহ ইবনু উমার ইবনু
আল-খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, “ইসলামের
বুনিয়াদ (খুটি বা ভিত্তি) পাঁচটি জিনিসের উপর প্রতিষ্ঠিতঃ
(১) সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা’বূদ নেই
এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল,
(২) নামায কায়েম করা,
(৩) যাকাত আদায় করা,
(৪) বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা এবং
(৫) রমযানের রোযা রাখা।”
সহীহ বুখারীঃ ৮, সহীহ মুসলিমঃ ২১।
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
এই হাদীস থেকে দ্বীন ইসলামের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি
জিনিসের নাম জানা গেলো। সমস্ত আলেমগণ এই পাচটি জিনিসকে ইসলামের পাঁচটি “রুকন” বা খুটি
হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং যে ব্যক্তি এই পাঁচটি জিনিস কায়েম করবে বিনা বাক্য
ব্যায়ে তাকে “মুসলিম” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
হাদীস থেকে দলীলঃ ৪
দ্বীন সম্পর্কে উপরে ক্বুরআনুল কারীমের দুইটি আয়াতে কারীমা
এবং একটি হাদীস শরীফ আলোচনার পর যেই হাদীসটিকে আমি দলীল হিসেবে পেশ করবো, তা খুবই
ব্যাপক এবং গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হচ্ছে “হাদীসে জিবরাঈল”। এই
একটিমাত্র হাদীসে উপরের তিনটি দলীলে বর্ণিত সমস্ত বিষয় একসাথে বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া
এই হাদীসে দ্বীনের এতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একসাথে বর্ণিত হয়েছে যে, মুহাদ্দিসগণ
এই হাদীসটিকে “উম্মুল আসার” বা নবী সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া
সাল্লাম থেকে বর্ণিত সমস্ত “হাদীস সমূহের জননী” বলে
অভিহিত করেছেন।
গুরুত্বের দিক বিবেচনায় হাদীসটিকে,
- ইমাম মুসলিম রহি’মাহুল্লাহ তাঁর সংকলিত
‘সহীহ
মুসলিম’ এর প্রথম হাদীস হিসেবে এই হাদীসটিকে নির্বাচন করেছেন।
- ইমাম বুখারী রহি’মাহুল্লাহ সংকলিত
"সহীহ বুখারী"র ঈমান অধ্যায়ে এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
- ইমাম বাগাবী রহি'মাহুল্লাহ কর্তৃক বিখ্যাত “মিশকা-তের”র দ্বিতীয়
হাদীস
- ইমাম আন-নববী রহি’মাহুল্লাহ কর্তৃক
প্রণীত বিখ্যাত ৪০ হাদীসের দ্বিতীয় হাদীস
হাদীসে জিবরাঈলঃ
উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আ’নহু এই
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি আমাদের মজলিসে এসে উপস্থিত
হলেন। তার পরণের পোশাক ছিল ধবধবে সাদা এবং মাথার চুল ছিলো কুচকুচে কালো। তার মধ্যে
সফরের কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতেও পারছিল না।
তিনি এসেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে বসলেন এবং
নিজের দুই হাটু তাঁর দুই হাটুর সাথে মিলিয়ে এবং তাঁর দুই হাত নিজের দুই উরুর উপর
রেখে বললেন, “হে মুহাম্মদ! আমাকে ইসলাম কি জিনিস, সে সম্পর্কে বলুন।”
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “ইসলাম হচ্ছে তুমি এই সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন
ইলাহ (অর্থাৎ মাবূদ) নেই এবং মুহা’ম্মদ আল্লাহর রাসুল। আর তুমি সালাত
কায়েম করবে, যাকাত দেবে, রমজান মাসের সাওম পালন করবে এবং হজ্জে যাওয়ার সামর্থ্য
থাকলে হজ্জ করবে।” আগন্তক ব্যক্তিটি বললেনঃ “আপনি ঠিক
বলেছেন।”
উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, তাঁর এই
আচরণে আমরা (উপস্থিত সাহাবারা) খুবই বিস্মিত হলাম। কারণ, তিনি নবীর কাছে প্রশ্ন
করছেন আবার তাঁর জবাব তিনি নিজেই সত্যায়ন করছেন। আগন্তুক ব্যক্তিটি আবার বললেন, “এবার
আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন।” নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “ঈমান হচ্ছে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর
আসমানী কিতাব সমূহের প্রতি, তাঁর রাসুলগণের প্রতি, আখিরাত বা পরকালের প্রতি এবং
তাক্বদীর (আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যের) ভালো ও মন্দের প্রতি তোমার বিশ্বাস স্থাপন
করা।” আগন্তক ব্যক্তিটি বললেন, “আপনি
সত্যিই বলেছেন।”
আগন্তক ব্যক্তিটি আবার বললেন, “আমাকে
ইহসান সম্পর্কে বলুন।” নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, “(ইহসান হচ্ছে) তুমি এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, যেন তুমি
তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি তাকে দেখতে নাও পারো, তবে তুমি মনে কর যে, তিনি
তোমাকে দেখছেন।”
আগন্তক আবার বললেন, “আমাকে ক্বিয়ামত
সম্পর্কে অবহিত করুন।” নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, “এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাকারীর চাইতে জিজ্ঞাসিত ব্যক্তি বেশি
জানে না।”
আগন্তক বললেন, “তাহলে আমাকে ক্বিয়ামতের কিছু আলামত
সম্পর্কে বলুন।”
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, “(যখন) ক্রীতদাসীরা তাদের মনিবকে প্রসব করবে এবং তুমি খালি
পা ও নগ্নদেহ গরীব মেষ রাখালদের (অর্থাৎ, নিচু শ্রেণীর, খারাপ লোকদেরকে) উঁচু উঁচু
দালান-কোঠা নির্মাণ করতে দেখবে এবং তা নিয়ে গর্ব করতে দেখবে, (তখন ক্বিয়ামত হবে)।”
উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, “অতঃপর
আগন্তক লোকটি চলে গেলেন এবং আমি অবাক হয়ে অনেকক্ষণ সেখানে অতিবাহিত করলাম। অতঃপর
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন, “হে উমর!
তুমি কি জানো, প্রশ্নকারী ব্যক্তিটি কে ছিলেন?” আমি
(উমার) বললাম, “আল্লাহ ও তাঁর রাসুল-ই ভালো জানেন।” নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তিনি
ছিলেন জিবরাঈল, তিনি তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়ার জন্যে এসেছিলেন।”
উৎসঃ সহীহ বুখারীঃ ৪৮, সহীহ মুসলিমঃ ১, আবু দাঊদঃ ৪৬৯৫,
নাসায়ীঃ ৪৯৯০, সহীহ আত-তারগীবঃ ৩৫১, মুসনাদে আহমাদঃ ৩৬৭।
হাদীসে জিবরাঈল থেকে শিক্ষাঃ
হাদীসে জিব্রাঈলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছিলেন, "জিব্রাঈল আ'লাইহিস সালাম তোমাদেরকে “দ্বীন” শিক্ষা
দিতে এসেছিলেন।"
সেখানে “দ্বীন” এর স্তর
হিসেবে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিলো।
১ – ইসলাম। ইসলামের পাঁচটি রুকন বা খুটি
হচ্ছেঃ
- শাহাদাতাইন বা দুইটি স্বাক্ষী দেওয়া, আল্লাহ ছাড়া আর কোন
সত্য মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল,
- নামায কায়েম করা,
- যাকাত দেওয়া,
- রমযান মাসে রোযা রাখা এবং,
- সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করা।
২ – ঈমান। ঈমানের ছয়টি রুকন বা খুটি হচ্ছেঃ
- আল্লাহর প্রতি,
- ফেরেশতাদের প্রতি,
- আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি,
- নবী-রাসূলদের প্রতি,
-আখেরাত বা মৃত্যুর পরের জীবনের প্রতি এবং
- তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।
৩ – ইহসান। ইহসান অর্থ হচ্ছে, এমনভাবে
ইবাদত করা যেন আমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি। এটা সম্ভব না হলে, অন্তত এই ধারণা রেখে
ইবাদত করা যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে দেখছেন।
উপরের ক্বুরআন ও হাদীসের আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি,
"দ্বীন বলতে কি বুঝায়? দ্বীনের central point বা মূল বিষয়বস্তু কি?"
এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছেঃ
দ্বীন হচ্ছে ইসলাম, ঈমান, এবং ইহসানের নাম। আর ইসলাম, ঈমান
ও ইহসান বলতে কি বুঝায়, হাদীসের জিবরাঈল থেকে আমরা আরো বিস্তাতিরভাবে জানতে পারি।
ক্বুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত দ্বীনের পরিচয়কে অস্বীকার করে
যেই ব্যক্তি দাবী করবে যে,
=> দ্বীনের central
point বা মূল বিষয় হচ্ছে কথিত “আক্বিমুদ-দ্বীনের
কাজ করা”, সেই ব্যক্তি দ্বীন সম্পর্কে মনগড়া এবং মিথ্যা রচনা করলো।
দ্বীনের মধ্যে এমন অভিনব বিদআ’তী মতবাদ শিক্ষা দিয়ে আমাদের পাক-ভারত
উপমহাদেশে যেই ব্যক্তি জামাতে ইসলামীর অনুসারীদেরকে বিভ্রান্ত করেছেন তার নাম
হচ্ছে আবুল আলা মওদুদী।
__________________________________________
মওদুদীর
ভ্রান্ত আকিদাহ (পর্ব-৩)
আমাদের দেশের জামাতে ইসলামী ভক্ত অনুরাগী
লোকদের “শীয়া প্রেম” কারো অজানা কোন বিষয় নয়। একারণে, জামাতে ইসলামীর ধর্মীয়
গুরু, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী খোমেনী নামক মুশরেক ও শয়তানকে “ইমাম” খোমেনি বলে সম্বোধন করতেন। জামাতে
ইসলামীর প্রতি দুর্বল পত্রিকা নয়া দিগন্ততে ইরানী আলেমদের(!) সাক্ষাৎকার ছাপানো
হয়। যাই হোক, অনেকের
মনে প্রশ্ন আসতে পারে, নিজেদেরকে সুন্নী মুসলমান দাবী করেও
কেনো জামাতে ইসলামীর লোকেরা নিকৃষ্ট এই বিদাতীদের সাথে মোহব্বত রাখে। এর উৎস হচ্ছে,
জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী। যেহেতু জামাতে ইসলামী
দলের অনুসারারীরা তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর মতবাদ দ্বারাই পরিচালিত হয়,
একারণে তারাও মওদুদীর মতো শিয়াদের প্রতি মহব্বত রাখে।
একবার একজন শীয়ার লেখা
চিঠির জবাবে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেব বলেছিলেন, “শীয়াদের জন্য জামাতে
ইসলামীর দরজা কখনও বন্ধ ছিল না। আর আপনাদের কাছ থেকে এটি দাবি করছি না যে, আপনারা শীয়া আকীদাহ বা মাযহাব ত্যাগ করবেন। আর না আপনারা আমার কাছে
সুন্নী মাযহাব
ত্যাগ করার জন্যে দাবি করবেন।
আমার সুন্নি শীয়া মুসলিম
মিলে ইসলামের খিদমত করব।” গ্রন্থঃ
“মাকাতিব”, সাইয়েদ
আবুল আলা মুাওদূদী। ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৬। ইসলামী পাবলিশার্স, শাহ আলম মার্কেট, লাহোর।
মন্তব্যঃ উপরের বক্তব্য দ্বারা মওদুদীর
আকিদাহ স্পষ্ট, সে
শিয়াদেরকে তোওবা করে আহলে সুন্নাহর আকিদাহ গ্রহণ করতে দাওয়াত দেয়না। বরং, সে এতেই খুশি যে, শিয়ারা তার দলে যোগ দিবে, যদিও তারা অন্তরে নিকৃষ্ট কুফুরী ও শিরকি আকিদাহ পোষণ করবে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে।
__________________________________________
মওদুদীর
ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব-৪)
মূল প্রসংগ শুরু করার পূর্বে কিছু কথা,
=> কিছু
মানুষ বলছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাকে কে কি লিখেছে বা ভুল করেছে এটা জিজ্ঞাস করবেন
না, যারা অন্যদের ভুল ধরে তারা ফেতনাবাজ!
আমাদের
জবাবঃ আমরা শিরক অথবা বেদাতের বিরুদ্ধে বলার কারণে ফেতনাবাজ নই, বরং আপনি অল্প বিদ্যা
নিয়ে শিরক বেদাতের বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করাকে ‘ফেতনা’ আখ্যায়িত করে দাওয়াতের
বিরোধীতা করছেন।
মাওলানা
মওদুদী ও সাইয়েদ কুতুবের বইগুলো বা সূফীবাদীর শিরকি-বেদাতী বইগুলো তাদের অন্ধভক্তরা
ইসলাম মনে করে অনুবাদ করে মানুষের মাঝে প্রচার করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করছে। এইগুলোর
বিরুদ্ধে লেখালিখি না করলে সরলমনা মুসলমানেরা ‘ইলমের’ অভাবে এই সমস্ত ভ্রান্ত মতবাদের গর্তে পড়বে। এইজন্য, শিরক ও বেদাতের
বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া কারো নফল নামায রোযা থেকে উত্তম। দয়া করে যদি না
জানেন, জানার চেষ্টা করুন। আর কিছু না পারেন, অজ্ঞতাবশত আন্দাজে কথা বলে হক্কের বিরোধীতা
করবেন না। বিস্তারিত দেখুন এই পোস্টে –
https://www.facebook.com/…/a.130928300273…/925619510804130/…
=> আরো
কিছু মানুষ বলছে, আমিতো মাওলানা মওদুদীর তাফসীরে কোন ভুল পাইনি!
আমাদের জবাবঃ ১ম কথা, মাওলানা মওদুদীর তাফসীর পড়ার জন্য আপনাকে কে বলেছে? কোন আলেম
কি আপনাকে এই বই পড়তে উপদেশ দিয়েছেন? মার্কেটে বই পাওয়া যায় আর কোন অন্ধভক্ত ইসলামী
বই বলে আপনাকে চাপিয়ে দিলো, আর আপনি চোখ বন্ধ করে সেই বই কিনে পড়া শুরু করলেন? রাস্তায়
ফুটপারে কোন কবিরাজ যদি হার্টের চিকিৎসা করে, আপনি কি যাবেন সেখানে আপনার বাবার চিকিৎসা
করাতে? যদি না যান, তাহলে যাচাই-বাছাই ছাড়াই আপনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে সব বই
পড়তে যাচ্ছেন?
ভালো করে
লক্ষ্য করুন, এক বালতি দুধে সামান্য একটু পেশাব পড়লে পুরো বালতির দুধই নষ্ট হয়ে যাবে।
মানুষের আকীদার বিষয়টা এমন, ১০০০-২০০০ পাতা সঠিক কথা বললো, আর ২-৪টা পাতায় শিরকি-কুফুরী
কিংবা ভ্রান্ত মতবাদ ঢুকানো থাকলো, একজনের আকীদা নষ্ট করার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ঠ।
বিগত শতাব্দীর
দুই জন বড় আলেম
শায়খ আল-আলবানী ও শায়খ উসায়মিন উভয়েই সাধারণ মানুষকে ‘তাফসীর ইবনে কাসীর’ পড়তে উপদেশ
দিয়েছেন। আর আমিতো ভুল পাইনি বা রাস্তা-ঘাটে যে কেউ কোন বইকে ভালো বললেই সেটা পড়া শুরু
করবেন না। কারণ প্রথম কথা হচ্ছে, আপনি কি সঠিক আর বাতিল বুঝতে সক্ষম? আপনার কি সেই
যোগ্যতা আছে ভালো ও মন্দ পার্থক্য করার মতো? গতকালকে আমি স্ক্রিনশটসহ দিয়েছি, মওদুদী
সুরা হিজরের আয়াতের তাফসীরে শিরকি আকীদা ‘ওহদাতুল
ওজুদ’ এর বয়ান করেছেন। আপনি কি জানেন ‘ওহদাতুল ওজুদ’ আকীদা
কি? এটা কত জঘন্য আকীদা? বিগত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে কারা এই আকীদা প্রচার করেছে, এবং
মুসলমান শাসকেরা তাদের কয়জনকে হত্যা করেছে?
এইগুলো
যদি না জানেন আর না জেনে সেই তাফসীর পড়তে থাকেন, তাহলে আপনি ঐ আকীদা না জেনেই সঠিক
মনে করবেন এবং এইরকম শিরকি চিন্তা-ভাবনা অন্তরে রাখবেন কিন্তু আপনি কোনদিন টেরও পাবেন
না। আর এটাইতো হয়েছে, আপনি জানেন না এই ভ্রান্ত আকীদা, কিন্তু এটা তাফহীমে আছে, আর
তারপরেও আপনি বলেছেন, আমিতো তাফহীমে কোণ ভুল পাইনি। ভাই/বোন, আল্লাহর ওয়াস্তে বিষয়টা
নিজেই বিচার করুন।
=> অনেকে
বলছেন তিনি দেওবন্দী আলেমদের কাছ থেকে আলেম হয়েছেন!
আমাদের জবাবঃ তাই নাকি? দেওবন্দীরাই তার সবচাইতে বড় সমালোচনাকারী। আর দেওবন্দীদের ভ্রান্ত
আকীদা তার মাঝেও ছিলো। যেমন দেওবন্দীরা-বেরেলুবীরা আঃকীদার দিক থেকে আশারি-মাতুরিদী,
মাওলানা মওদুদী সেই আকীদার অনুসারী। নিচে স্ক্রিনশটসহ তার প্রমান দেখুন।
মাওলানা
মওদুদী তার অপ-তাফসীরের কিতাব ‘তাফহীমুল
কুরান” এর সুরা ফাজর এর ২২ নম্বর আয়াত,
وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا
এর অর্থ করেছেন, “এবং তোমার
রব এমন অবস্থায় দেখা দেবেন।”
১ম কথা
- তিনি আয়াতের অর্থ করেছেন ভুল। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, ‘আল্লাহ আসবেন’, কিন্তু
অর্থ করেছেন দেখা দেবেন! সূক্ষ্মভাবে অর্থের বিকৃতি করা হয়েছে এবং পরে তার ব্যখ্যাও
করেছেন অপব্যখ্যা। মওদুদীর ভ্রান্ত ব্যখ্যাঃ
“মূলে বলা হয়েছে ( جَاءَرَبُّكَ ) এর শাব্দিক
অনুবাদ হচ্ছে, “তোমার রব আসবেন”, তবে আল্লাহর জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই
ওঠে না। তাই একে রূপক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে। এর উদ্দেশ্য এমনি ধরনের একটি ধারণা দেয়া
যে, সে সময় আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, শাসন ও প্রতাপের নিদর্শনসমূহ পূর্ণরূপে প্রকাশিত
হবে। দুনিয়ায় কোন বাদশাহর সমগ্র সেনাদল এবং তার মন্ত্রীপরিষদ ও সভাসদদের আগমনে ঠিক
ততটা প্রভাব ও প্রতাপ সৃষ্টি হয় না যতটা বাদশাহর নিজের দরবারে আগমনে সৃষ্টি হয়। এই
বিষয়টিই এখানে বুঝানো হয়েছে”
কোথায় ভুল?
মওদুদীর
এই কথা ঠিক আছে, “মূলে বলা
হয়েছে ( جَاءَرَبُّكَ ) এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, “তোমার রব আসবেন”
এটা সঠিক
কথা লিখে পরে তিনি বলছেন, “তবে আল্লাহর
জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই একে রূপক অর্থেই গ্রহণ
করতে হবে”।
- এটা হচ্ছে
আশারি-মাতুরিদিদের ভ্রান্ত আকীদা, যা তারা ক্বুরানের আয়াতের অর্থের অপব্যখ্যা করে থাকে।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা হচ্ছে, কেয়ামতের দিনে “আল্লাহ আসবেন” এবং মীযান
স্থাপন করে মানুষের হিসাব নিবেন। কিন্তু ‘আল্লাহ
কিভাবে আসবেন’ এটা আমরা জানিনা, আমাদেরকে জানানো
হয় নাই। আমাদেরকে জানানো হয়েছে আল্লাহ আসবেন ব্যস, আমরা এর প্রতি ঈমান আনি। কিন্তু
এই কথাটাকে আমরা জাহমিয়াদের মতো অস্বীকার করিনা, কিংবা আশারি-মাতুরিদিদের মতো ভ্রান্ত
অপব্যখ্যাও করিনা, যেইভাবে আছে ঠিক সেইভাবেই বিশ্বাস করি। এটাই সমস্ত সাহাবী, ইমাম
আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল সহ সমস্ত তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের
আকীদাহ। কিন্তু তাদের যুগের অনেক পরে আশারি-মাতুরিদী মতবাদে বিশ্বাসী লোকেরা ক্বুরানের
আয়াতের ভুল ব্যখ্যা করে তার অর্থ পরিবর্তন করে, একে আশারি-মাতুরিদী আকীদা বলা হয়।
আর আশারি-মাতুরিদী
ভ্রান্ত মতবাদের লোকদের ক্বুরানের আয়াতের এইরকম অপব্যখ্যার একটা অপবখ্যা হচ্ছে – ‘কেয়ামতের
দিন আল্লাহ আসবেন’ ক্বুরানের
আয়াতের অপব্যখ্যা করেছে – ‘আল্লাহর জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে
না। তাই একে রূপক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে। এর উদ্দেশ্য এমনি ধরনের একটি ধারণা দেয়া যে,
সে সময় আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, শাসন ও প্রতাপের নিদর্শনসমূহ পূর্ণরূপে প্রকাশিত
হবে’।
আল্লাহ
আমাদেরকে ভ্রান্ত আকীদা ও আমল থেকে বেঁচে থাকার তোওফিক দান করুন, আমিন।
__________________________________________
মওদুদীর
ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব-৫)
মওদুদীদেরকে
নিয়ে আমাদের পোস্টে রেফারেন্স দেওয়া ছিলো, যারা আমাদের বিরোধীতা করছেন তাদের উচিত ছিলো
তাদের নিজেদেরই যাচাই করে দেখা। অনেকেই স্ক্রীনশটে প্রমান চেয়েছেন, যাই হোক আজকে আমি
দুইটি শিরকী আকীদার স্ক্রিনশট দিলাম
(১)
শিরকি আকীদাহঃ মানুষের মাঝে আল্লাহর সিফাতের প্রতিচ্ছবি!
মাওলানা
মওদুদী সাহেব সুরা আল-হিজরের ২৯ নাম্বার আয়াত “যখন আমি
তাকে পূর্ণ অবয়ব দান করবো এবং তার মধ্যে আমার রূহ থেকে কিছু ফুঁকে দেবো” এর তাফসীরে লিখেছেন, “এ থেকে
জানা যায়, মানুষের মধ্যে যে রূহ ফুঁকে দেওয়া হয় অর্থাৎ প্রাণ সঞ্চার করা হয় তা মূলত
আল্লাহর গুণাবলীর একটি প্রতিচ্ছায়া। জীবন, জ্ঞান, শক্তি, সামর্থ্য, সংকল্প এবং অন্যান্য
যতগুলো গুণ মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়, যেগুলোর সমষ্টির নাম প্রাণ, সেসবই আসলে আল্লাহর
গুণাবলীর একটি প্রতিচ্ছায়া। মানুষের মাটির দেহ-কাঠামোটির ওপর এ প্রতিচ্ছায়া ফেলা হয়।
আর এ প্রতিচ্ছায়ার কারণেই মানুষ এ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হয়েছে এবং
ফেরেশতাগণসহ পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টি তাকে সিজদা করেছে।”
এটা বড়
শিরক, কারণ আল্লাহর সিফাত শুধুমাত্র তাঁর জন্য প্রযোজ্য। “মানুষ বা সৃষ্টি জগত আল্লাহর গুণাবলীর একটি প্রতিচ্ছায়া” - এটা সূফীদের ওহদাতুল ওজুদের শিরকী আকীদাহ, যাকে ওলামারা ফিরাউনের
শিরকের চাইতে জঘন্য বলেছেন। মওদুদী আরো লিখেছেন, “আল্লাহর
সিফাতের প্রতিচ্ছায়ার কারণেই নাকি ফেরেশতারা আদম আ’লাইহিস
সালামের সিজদা করেছিলো” - মনগড়া
শিরকি অপব্যখ্যা, এই শিরকি ব্যখ্যা দিয়ে হিন্দুরা মূর্তিপূজা করে।
(২)
রাসুল সাঃ আন্দাজে মনগড়া কথা বলেছেন (নাউযুবিল্লাহ)
তর্জমানুল ক্বুরআন, রবিউল আউয়াল ১৩৬৫ (উর্দুতের মূল বইয়ের স্ক্রিনশট)। রাসুল সাঃ এর
ধারণা ছিলো, তাঁর জামানাতে বা তাঁর জামানার কাছাকাছি সময়েই দাজ্জাল বের হবে, কিন্তু
১৩৫০ বছরের মধ্যেও দাজ্জাল বের হয়নি। এটাই প্রমান করে যে, এই হাদীসগুলো ঠিক নয়, এইগুলো
প্রচার করা ইসলামী আকীদাহও নয়। মওদুদী আরো বলেন, দাজ্জালের কাহিনীর কোন ভিত্তি নেই,
দাজ্জালের হাদীসগুলো ইসলামী আকীদা নয়, আর রাসুল সাঃ দাজ্জালের কথাগুলো আন্দাজে, চিন্তা-ভাবনা
করে বলেছেন (অর্থাৎ ওয়াহী নয়, নাউযুবিল্লাহ)। তিনি আন্দাজ করে (দাজ্জালের) যেই কথাগুলো
বলেছেন সেইগুলো ভুল এতে কোন সন্দেহ নেই, আর রাসুল সাঃ আন্দাজে যেই ভুলগুলো করেছেন,
সেইগুলো তাঁর নবুওতির জন্য অসম্মানজনক নয়।
(৩)
“মহানবী (সঃ) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ
পোষন করেছেন।” তরজমানুল
কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী।
কেউ যদি
বলে - মহানবী (সাঃ) নিজের মনগড়া কথা বলেছেন, এটা মারাত্মক কুফুরী ও শিরকি একটা কথা।
কারণ, আল্লাহ তাআ’লা কুরানুল
কারীম ঘোষণা করেছেন -
“তিনি তাই বলেন যা তাকে ওয়াহী করা হয়।” সুরা নাজম।
__________________________________________
মওদুদীর
ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব-৬)
সুরা ইখলাসঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর vs সাইয়েদ কুতুবের তাফসীর (ফী যিলালিল ক্বুরআন)
একসাথে সুরা ইখলাসের তাফসীর উভয় তাফসীর গ্রন্থ থেকে পড়লাম।
এ সুরায় আল্লাহ তাআ’লার গুনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে। ইবনে কাসীর রহি’মাহুল্লাহ
সেগুলোই সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করেছেন।
কিন্তু সাইয়েদ কুতুবের ফী যিলালিল ক্বুরআন পড়তে গিয়ে দেখলাম, তিনি রব্বের গুণাবলী ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এমন তাওহীদের
অবতারণা করেছেন, যাতে ওয়াহদাতুল ওযুদের
মতবাদ প্রকাশ পায়। আমি তার এ তাফসীরের ভ্রান্তির ব্যাপারে নেটে আগেই পড়েছিলাম।
আজকে বইতে সরাসরি প্রত্যক্ষ করলাম। আমি কয়েকটি অংশ তুলে দিচ্ছি -
(১) আল্লাহ তায়ালার একত্বের অর্থ হচ্ছে তাঁর অস্তিত্বে তিনি
একা। তাঁর অস্তিত্বের একথা ছাড়া আর কিছুই সত্য নয়, তাঁর অস্তিত্ব ছাড়া অন্য কিছুরই কোনো অস্তিত্ব নেই।
(২) তিনি ছাড়া কোন করনেওয়ালা নেই। অন্য কোনো করনেওয়ালার
কোনো প্রভাবও নেই।
(৩) আল্লাহ তাআ’লা ছাড়া অন্য কোনো কিছুর অস্তিত্বই আসল
নয়।
(৪) অস্তিত্বের মূলগত ব্যাপারে যখন আল্লাহ তাআ’লা ছাড়া
সে অন্য কোনো সত্যকে দেখতে পায় না এমন ধরনের একটি ধারণা তার মনে সৃষ্টি হলে, তখন তার মনে এই ধারণাও সৃষ্টি হয় যে, সবকিছুর অস্তিত্বের মূলে সেই আসল ও খাঁটি অস্তিত্বই
ক্রিয়াশীল। কেননা সব অস্তিত্বের ধারণা ও সৃষ্টি তো মূল সত্তার অস্তিত্ব থেকেই
এসেছে। আর এই হচ্ছে সে পর্যায় যখন যাই দেখে তাতে সে আল্লাহর হাতকেই দেখতে পায়।
(৫) এর আরো এক স্তর ওপরে উঠে সে এই কায়েনাতের সর্বত্র
আল্লাহ ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না। কেননা দেখার মতো আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুই তো
নেই।
লিখেছেন - Mohsin
Zaman
__________________________________________
প্রশাসন, নেতৃত্ব ও মুসলিম শাসক
নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর
১-নং প্রশ্নঃ মুসলিম ‘আমীর’ বা শাসক কে?
উত্তরঃ মুসলিম শাসক হচ্ছে –
ক. যিনি কোন মুসলিম ভূখন্ডের শাসন কর্তৃত্ব দখল করে আছেন,
খ. যিনি নিজে মুসলিম এবং সালাত পড়েন,
গ. প্রকাশ্য বড় শিরক, কুফুরী অথবা ইসলাম ভংগকারী কোন কাজে লিপ্ত
হয়না,
ঘ. দেশবাসীকে সালাত পড়তে বা দ্বীন ইসলামের মূল বিধি-বিধান মানতে
বাঁধা দেন না,
ঙ. দেশবাসীকে প্রকাশ্য বড় শিরক ও কুফুরী করতে বাধ্য করেন না,
চ. যিনি ‘আহলুল হাল ওয়াল আক্বদ’ কর্তৃক স্বীকৃত বা মনোনীত। ‘আহলুল হাল ওয়াল আক্বদ’ হচ্ছেন শীর্ষস্থানীয় আলেম সমাজ, বিভন্ন মুসলিম গোত্রের
প্রধান, মুসলিম সামাজের নেতা, এমন নেতৃস্থানীয় সম্মানিত লোকেরা।
এই গুণগুলো কোন শাসকে মাঝে বিদ্যমান থাকলে তিনি একজন মুসলিম শাসক।
এখন ব্যক্তি জীবনে সেই শাসক নেককার কিংবা অত্যাচারী পাপীষ্ঠ বা জালেম যাই হয়ে থাকুন
না কেনো, যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় থাকবেন ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি মুসলিম ‘আমীর’ বা শাসক বলে বিবেচিত হবেন।
২-নং প্রশ্নঃ মুসলিম ‘আমীর’ বা শাসকের আমাদের উপর কি অধিকার রয়েছে?
উত্তরঃ “তাকফিরী, কুতুবী ও খারেজী” – এই অধ্যায়ে
“মুসলিম আমীর বা
শাসকদের অধিকার” শিরোনামে এই প্রশ্নের
উত্তর দেওয়া হয়েছে। ফেইসবুক লিংক -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1448331918532884:0
৩-নং প্রশ্নঃ মুসলিম ‘আমীর’ বা শাসকের বিরুদ্ধে যে বিদ্রোহ বা যুদ্ধ ঘোষণা করে তার হুকুম কি?
উত্তরঃ ‘আহলে সুন্নত ওয়াল জামআত’ এর আক্বীদাহ হচ্ছে, মুসলিম ‘আমীর’ বা শাসকের অন্যায়, পাপ বা
দ্বীনের ব্যপারে ত্রুটির কারণে যে ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কিংবা তার বিরুদ্ধে
যুদ্ধে লিপ্ত হয়, সে ব্যক্তি একজন খারেজী। এ ব্যপারে ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ
(মৃত্যু ৩২৯ হিজরী) তার লিখিত বিখ্যাত আক্বীদাহর কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ (যুদ্ধ) করে সে
১. খারেজীদের অন্তর্ভুক্ত একজন,
২. সে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো,
৩. সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের
বিরোধীতা করলো এবং
৪. তার মৃত্যু যেন ‘জাহেলী’ যুগের মৃত্যুর মতো।
শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।
এনিয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে আমাদের এই পোস্ট দেখুন –
“বিদ্রোহ করা আহলে সুন্নতের
মূলনীতি বিরোধী”
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1411518355547574
৪-নং প্রশ্নঃ উত্তরঃ রাজতন্ত্রের মাধ্যমে ‘মুসলিম শাসক’ নির্বাচন করা কি জায়েজ?
উত্তরঃ মুসলিমদের জন্যে আদর্শ হচ্ছে
নেতৃস্থানীয় শূরা সদস্যরা পারস্পরিক সমঝোতা ও পরামর্শের ভিত্তিতে মুসলিম শাসক নির্বাচন করবেন। যেমনটা আল্লাহ তাআ’লা আদেশ করেছেন, “(মুমিনরা যেন) পারস্পরিক পরামর্শের
ভিত্তিতে কাজ করে।” সুরা শুরাঃ ৩৮।
শুরা সদস্যের মাধ্যমে শাসক নির্বাচন করা
হচ্ছে সর্বোত্তম। তবে মুসলিমদের ইতিহাসে এর পাশাপাশি, শুরা বিহীন পূর্ববর্তী
শাসক কর্তৃক একার সিদ্ধান্তে পরবর্তী শাসক নিয়োগের অসংখ্য দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআ’লা সুলাইমান (আঃ) এর বংশধরদেরকে রাজতন্ত্র দিয়ে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত
করেছিলেন।
অনেক নবীর আমীরে মুয়াবিয়া (রাঃ) নিজ ছেলে
ইয়াজীদকে পরবর্তী শাসক নিয়োগ করে যান যা তখনকার অধিকাংশ সাহাবী তাকে মেনে নেন, যদিও অনেকেই তাকে সবচাইতে
যোগ্য ব্যক্তি মনে করতেন না। কিন্তু শাসক যদি কাউকে ক্ষমতার অধিকারী দিয়ে যান,
তাকে মেনে নেওয়া সাহাবীদের আদর্শ।
রাজন্ত্র সম্পর্কে সংক্ষেপে বলা যায়, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সহীহ হাদীস অনুযায়ী
তাঁর মৃত্যুর মাত্র ৩০ বছর পরেই খলিফাহর পরিবর্তে রাজতন্ত্রের আদর্শে মুসলিম নেতা নিয়োগ
করা শুরু হয়। এবং তার পর থেকে ১৯২৪ সাল পর্যন্ত তুর্কী খেলাফতের প্রায় পুরোটাই রাজতন্ত্র
অনুযায়ী নেতা নির্বাচিত হয়ে আসছে। এই পুরো সময় জুড়ে হাজার হাজার সাহাবী, তাবেয়ী, চার
মাযহাবের ৪ ইমাম, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী ও ইমাম আহমাদ, হাদীস গ্রন্থগুলোর
সংকলনকারী ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসায়ী সহ অন্যান্যরা, পরবর্তী
যুগের অন্যান্য মুজতাহিদ ইমামরা যেমন ইবনে তাইমিয়্যা, ইবনে হাজার আসকালানী, ইমাম নববী,
আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি রহম করুন, তাদের কেউই এই ফতোয়া দেন নি যে, “রাজার ছেলে রাজা হবে, ইসলামী
শরিয়াতে এই বিধান হারাম বা কুফুরী।”
সাহাবা, তাবেয়ী কিংবা আমাদের পূর্ববর্তী কোন আলেম
রাজতন্ত্রকে হারাম বলে ফতোয়া দেন নি, সুতরাং আমরা কেউই তাদের
আগ বেড়ে রাজতন্ত্রকে হারাম বলে ফতোয়াবাজি করবোনা। আর এনিয়ে মাওলানা মওদুদী,
সাইয়েদ কুতুব, জামাতে ইসলামী, ইখোয়ানুল মুসলিমিন, হিজবুত তাহরীর, আল-কায়েদাহ, আইসিস, আধুনিক
যুগের পথভ্রষ্ট ব্যক্তি বা দলের মনগড়া ফতোয়ার দিকে লক্ষ্য করবোনা।
এনিয়ে বিস্তারিত জানার জন্যে আমাদের এই পোস্ট দেখুন –
প্রসংগঃ রাজতন্ত্র কি ইসলামে জায়েজ?
অনেকে রাজতন্ত্র
হারাম, ইসলাম বিরোধী বলে ফতোয়া দিচ্ছেন। এই ধরণের মানুষেরা কয়েকভাগে বিভক্তঃ
=> ভ্রান্ত
মতবাদে বিশ্বাসী শিয়া, যারা অনেক সাহাবিকে কাফের মনে করে (নাউযুবিল্লাহ)!
=> শিয়াপ্রেমী
জামাতে ইসলামী, ইখোয়ানুল মুসলিমিন এইরকম ইসলামী আন্দোলনের লোকেরা যারা ইসলামের নামে
গণতান্ত্রিক শিরকি মতবাদের মাধ্যমে ক্ষমতা পেতে চায়, হিকমতের নামে নারী নেতৃত্ব জায়েজ
ফতোয়া দেয়।
=> জেএমবি
বা সমমনা খারেজী মনোভাবের লোকেরা যাদের মেইন কাজ হচ্ছে মানুষ্কে পাইকারি হারে কাফের
ফতোয়া দিয়ে বোমাবাজি করা, নিজে ঘরে বসে থেকে অন্যদেরক জিহাদ নিয়ে গালি দেওয়া। এই মূর্খ
ফতোয়াবাজরা ৯/১১ এর মতো টুইন টাওয়ারে সন্ত্রাসী আক্রমনকেও জিহাদ মনে করে, আত্মঘাতী
বোমা হামলা নামের বর্বর আত্মহত্যা করে নিজেকে ধ্বংস করা ও নির্বিচঁারে মানুষ হত্যা
ও সম্পদ নষ্ট করার সিস্টেমকে অনেক ফযীলতের কাজ বলে মনে করে।
যাই হোক,
রাসুল সাঃ সহীহ হাদীসে বলেছেন - তোমাদের মাঝে খিলাফত থাকবে ৩০ বছর, এর পর হবে রাজত্বের
যুগ। যেই সাহাবী এই হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেনঃ আমীরে মুয়াবিয়া রাঃ রাজতন্ত্র
প্রতিষ্ঠা করেছিলেন (ইয়াজীদকে তার পরবর্তি খলিফা নিয়োগ দেওয়ার মাধ্যমে)।
লক্ষ্য
করে দেখুন, রাসুল সাঃ কে আল্লাহ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন, মুসলমদের মাঝে রাজতন্ত্র চালু
হবে - তবুও কোন একটি সহীহ হাদিস পাওয়া যায়না যেখানে রাসুল সাঃ রাজতন্ত্রকে হারাম ফতোয়া
দিয়েছেন, রাজাদের কাছে বায়াত করতে, তাদের আনুগত্য করতে নিষেধ করেছেন। বরং এটা পাওয়া
যায়, নেতা যতই অত্যাচারি জুলুমবাজ হোক, যতদিন পর্যন্ত তারা নামায কায়েম করে, ভালো কাজে
তাদের আনুগত্য করা ফরয। এ সম্পর্কে অনেক হাদিস আছে যার কিছু পাবেন সহীহ মুসলিমের কিতাবুল
ইমারাতে।
এছাড়াও,
সোলায়মান আঃ সহ অনেক নবীকে আল্লাহ রাজত্ব দান করেছিলেন যা অনেক ক্ষেত্রে বংশ পরম্পরায়
চালু ছিলো।
রাজত্ব
ইসলামে সর্বোত্তম পদ্ধতি নয়, সর্বোত্তম হচ্ছে শুরার মাধ্যমে খলিফা নির্বাচন করা, তবে
পূর্বের খলিফা যদি পরবর্তী খলিফা নির্বাচন করে দিয়ে যান, সেটাও জায়েজ যা আবু বকর রাঃ
করেছিলেন। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা করেছেন ইমাম ইবনে কাসীর সুরা বাক্বারার তাফসীরে।
ক্বুরান
ও হাদিসের সুস্পষ্ট বক্তব্যের উপর ভিত্তি করে বড় বড় সাহাবী যেমন হাসান রাঃ, আব্দুল্লাহ
ইবনে উমার রাঃ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ সহ সমস্ত সাহাবি, সমস্ত তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী,
ইমাম আবু হানীফাহ, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ি, ইমাম আহমাদ রাজতন্ত্রের রাজাদের আনুগত্য
করেছেন, এবং আমাদের জন্য ভালো কাজে রাজার আনুগত্য করা ফরয বলে ফতোয়া দিয়েছেন। এমনকি
সুন্নতের কঠোর পাবন্দী বিজ্ঞ সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ যারা ইয়াজিদের বাইয়াত
ভংগ করেছিল তাদের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করেছিলেন এবং তাদেরকে তোওবা করে
ইয়াজীদের বাইয়াত করতে উপদেশ দেন। এছাড়া আরো বহু ঘটনা দ্বারা প্রমানিত, রাজা বাদশাহ
অত্যাচারি হলেও সাহাবাদের আদর্শ হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করা, নেকের কাজে তাদের
আনুগত্য করা, মানুষের সামনে তাদের দোষ ত্রুটি বর্ণনা করে তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে খেপিয়ে
না তোলা। বরং তাদেরকে প্রাইভেটলি উপদেশ দেওয়া, নসিহত করা, বোঝানো। আর সাহাবীদের তরিকাই
হচ্ছে প্রকৃত ইসলাম, এর বিরোধীতা যারা করে তারা হচ্ছে শিয়া বা খারেজী।
সর্বশেষ,
রাজা যদি ক্বুরান ও সুন্নাহ দিয়ে দেশ পরিচালনা করে, নামায কায়েম রাখে, তাহলে ভালো কাজে
তার আনুগত্য করা ফরয। আর কেউ যদি অন্যায়ভাবে সেই রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, চাই সে
ভালো হোক বা অত্যাচারি হোক, তাহলে সে খারেজী বলে গণ্য হবে। হানাফি মাযহাবের বড় আলেম
ইমাম তাহাবী তার বিখ্যাত আকীদাহ তাহাভিয়াতে এই কথাগুলো উল্লেখ করেছেন। দুঃখের বিষয়
হচ্ছে মাওলানা মওদুদি, সাইয়েদ কুতুব, হাসান আল বান্নার মত বিংশ শতাব্দীর দার্শনিক চিন্তাভেদেরা
এইগুলো বিশ্বাস করতোনা, কারণ তারা শিয়াপ্রেমী ছিলো। আর বর্তমানে তাদের অন্ধ ভক্তরা
সাহাবিদের তরিকার বিরোধীতা করে ও সুন্নাহ নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করে। আল্লাহু মুস্তাআন।
__________________________________________
মিথ্যুক জামাতী বক্তার কেরামতির নামে ভন্ডামী
নাকি সুরে গজল বলে শ্রোতাদেরকে মোহিত করা, মিথ্যা গল্প বলে
মাহফিল জমানো আর মাঝে মাঝে জোরে চিল্লায়া “ঠিক কিনা বলেন” বলে
হুংকার ছেড়ে জামাত শিবিরের মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে যিনি তার নাম হচ্ছে
তারেক মনোয়ার। যেমন, জামাতে ইসলামীর উঠতি বয়সী নতুন বক্তা মোল্লা নাজিম উদ্দীন তার
এক মাহফিলে জোর গলায় তারেক মনোয়ারের উচ্চ প্রশংসা করে বলেছিলো,
“তারেক
মনোয়ার....তারেক মনোয়ার কি জিনিস বুঝ নাই? এদেশের বেদাতীরা, ভন্ডরা একমাত্র তারেক
মনোয়ারকে সবচাইতে বেশি ভয় পায়।”
ঐ মাহফিলে উপস্থিত তারেক মনোয়ার ভক্তরা মোল্লা নাজিম
উদ্দিনের উচ্চ কন্ঠে উদ্ধেলিত হয়েভজোরে চিৎকার করে বলে উঠে, “ঠিইইইক!”
যাই হোক, জামাতে ইসলামী বক্তাদের মাঝে মিথ্যা কাহিনী বলে
মানুষকে উত্তেজিত করার মাঝে সবচাইতে বেশি উস্তাদ হচ্ছে তারেক মনোয়ার। ধর্মের নামে
তার মিথ্যা গাল-গল্প বলে ওয়াজ করার কিছু নমুনা পেশ করা হলো।
২০১৩ সালের ২৮-শে ফেব্রুয়ারীতে আওয়ামী লীগের বিতর্কিত
কোর্টে দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধপরাধের মামলায় প্রথম দফায় ফাসির
রায় বের হলে জামাতে ইসলামীর অনুসারী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন শিবিরের ছেলেদের মাঝে
মারাত্মক একটা গুজব মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়ে। সাঈদীর ফাসির রায় হলে জামাত শিবিরের
মধ্যে নিতান্ত বোকা, ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞ লোকেরা ফেইসবুক, ইন্টারনেটে প্রচার করা
আরম্ভ করে, দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। সামান্য বিবেক বুদ্ধি যাদের
আছে এমন মুসলমানেরা যখন জামাত শিবিরের এই মিথ্যা প্রোপাগান্ডাকে প্রত্যাখ্যান করে
এবং এর ব্যাপারে মুসলমানদেরকে সতর্ক করে তখন মিথ্যা কাহিনী বলে ওয়াজ করার জন্য
কুখ্যাত জামাতী বক্তা তারেক মনোয়ার কেরামতির কথা বলে বাংলার মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়
যে,
“যারা নফল
বেশি পড়ে, নফল পড়তে পড়তে তাদের হাত আল্লাহর হাত হয়ে যায়। তাদের পা এমন হয়, আল্লাহর
কুদরতি পা তাদের উপর ভর করে। তারা যখন দেখে, আল্লাহর নূর দিয়ে দেখে। এ কারণে,
তাদেরকে আকাশেও দেখা যায়, এমনকি চাঁদেও দেখা যায়। ঠিক কিনা বলেন? আমাদের দেশের
অনেক পান্ডা নেতারা এর (সাঈদীকে চাঁদে দেখার বিষয়টি) বিরোধীতা করেছে। গত দুই
সপ্তাহ আগে সৌদি রিয়াদের একজন মসজিদের ইমাম একটা বই নিয়ে এসে আমাকে বলেছেন,
"আমি ঐ যে আল্লামাকে (সাঈদীকে) নিজে চাঁদে দেখেছি।”
তিনি (কথিত রিয়াদের ইমাম) “কেরামতুল
আওলিয়া” নামে ছোট্ট একটা চটি বই লিখে আমার কাছে পৌঁছালেন। আর আমার
দেশের টুন্ডারা আজেবাজে কথা বলে এটাকে উড়িয়ে দিয়েছে। একজন মানুষ যখন কেরামতি দেখায়
তখন তিনি নিজেও এটা জানেন না। এটা দেখান কে? কে দেখান? আল্লাহ!”
বক্তব্যের জন্য ভিডিও দেখুন। ভিডিও সংগ্রহেঃ মাহবুব রহমান।
তারেক মনোয়ার কি ভালো হয়েছেন?
ভ্রান্ত বিদআ’তী দলের অনুসারী হলে মানুষের বিবেক
বুদ্ধি নষ্ট হয়ে যায়। আজ থেকে প্রায় ছয় বছর পূর্বে ২০১৩ সালে এতো বড় মিথ্যা গল্প
বানিয়ে বাকোয়াজ করে তারেক মনোয়ার হাতেনাতে ধরা পড়েন। কেননা, পরবর্তীতে জামাতে
ইসলামের কিছু কেন্দ্রীয় নেতা সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার সংবাদকে উদ্দেশ্য প্রণোদিত
“মিথ্যা
গুজব” বলে বিবৃতি দেয়। এরপরেও তারেক মনোয়ার ওয়াজের নামে মিথ্যা
কথা বলা ত্যাগ করেনি।
গ্রেফতার এবং নির্যাতন আতংকে ২০১৪ সাল থেকে বিদেশ প্রবাসী
তারেক মনোয়ার পাঁচ বছর পর বিগত ২০১৯ সালের অক্টোবর মাসে দেশে আসে। দেশে আসার পর
সর্বপ্রথম যেই মাহফিলে তারেক মনোয়ার ওয়াজ করে সেখানে সে এক উদ্ভট দাবী করে বসে,
“সারা
পৃথিবীর আলেমরা একমত, আগামী ২-৪
বছরের মাঝেই আমাদের মাঝে আবির্ভূত হবেন ইমাম মাহদী আ’লাইহিস
সালাম।”
বক্তব্যের লিংক -
https://youtu.be/1SML1eeRiFY
এর কয়দিন পরে সে ২-৪ বছর সময়কে বাড়িয়ে ৬-৮ বছর বাড়িয়ে বলে, "বায়তুল মুকাদ্দাস মসজিদের ইমাম খালিদ
আল-মাগরিবীর মতে ২০২৪-২০২৬ সালের মাঝেই ইমাম মাহদী আসবে।"
বক্তব্যের লিংক -
https://youtu.be/U9rratDWPWs
এই ভিডিওতে তারেক মনোয়ার ইমাম মাহদীকে নিয়ে তার এইরকম
উল্টাপাল্টা বক্তব্য দেওয়ার ব্যাপারে তার গুরু কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীমের নাম
নিয়েছেন।
যেই কাজী ইব্রাহীম ২০১৭ সালে দাবী করেছিলেন, “২০১৯ থেকে
২০২৪ সালের মাঝে ইমাম মাহদীর আগমন ঘটতে পারে।”
https://youtu.be/TxFHNGEU4KM
কাজী ইব্রাহীম ২০১৯ সালের মার্চ মাসে,দাবী করেন, ইমাম মাহদী
জন্ম গ্রহণ করেছেন, একজন লোককে ইমাম মাহদী নামে সন্দেহ করা হচ্ছে, মাহফিলে উপস্থিত
একজন শ্রোতা হজ্জে গিয়ে ইমাম মাহদীর সাথে সাক্ষাত করে এসেছেন।"
কাজী মুহাম্মদ আরো বলেছেন, “প্রেসিডেন্ট
ট্রাম্প এবং ইসরাইলী নেতাদের নেতৃত্বে দাজ্জালের অভিষেক হয়ে গেছে। ইসরায়েলে অতি
গোপনীয় এক মিটিং-এ এক চোখা এক যুবক এসে খ্রীস্টানদেরকে “আনাল মাসীহ” - আমিই
হচ্ছি মাসীহ বলে ধোকা দিয়েছে।”
https://youtu.be/imTCQVyfSP4
ইমাম মাহদী এবং দাজ্জাল সত্যিকার অর্থে আত্মপ্রকাশ করার পূর্ব
পর্যন্ত এই সমস্ত কল্প কাহিনী বলে যারা মুসলমানদেরকে ধোকা দেয় এরা মিথ্যুক এবং পথভ্রষ্ট।
তারেক মনোয়ার, কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম, ইমরান নজর হোসেনের মতো এই সমস্ত বানোয়াট কল্প কাহিনী বলে যারা ওয়াজ করে, এরা যতদিন পর্যন্ত না তোওবা করে নিজেদেরকে
সংশোধন করে নেয় ততদিন পর্যন্ত আপনারা তাদের ওয়াজ শুনবেন না। এদেরকে ওয়াজ করতে বা
খুতবা দেওয়ার জন্য দাওয়াত করবেন না। বর্তমানে এমন মুখোশধারী বিভ্রান্ত বক্তাদেরকে শুধুমাত্র
জামাতে ইসলামীর অনুসারী কিংবা অজ্ঞ লোক ছাড়া অন্য কেউ দাওয়াত দেয় না।
__________________________________________
মিথ্যুক জামাতী বক্তার কেরামতির নামে
ভন্ডামী (পর্ব-২)
২০১৯ সালের নভেম্বরে এই শিরোনামে আমাদের একটি লেখার উপরে
অনেকের অনেক মন্তব্য, অভিযোগ এবং গালি-গালাজের প্রেক্ষিতে আমাদের কিছু কথা সবার
সামনে তুলে ধরছি।
(১) অনেকে তারেক মনোয়ার যে মিথ্যা কথা বলেছেন, তার ভিডিও
প্রমাণ চেয়েছেন। সেইজন্য, এই পোস্টের সাথে তারেক মনোয়ারের সাঈদীকে চাঁদে দেখার
মিথ্যা ওয়াজের আরো কিছু ভিডিও দেওয়া হলো।
সাঈদিকে চাঁদে দেখা নিয়ে মিথ্যা কাহিনীর লিংক -
https://youtu.be/UqNh3T9vbAE
লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, তারেক মনোয়ার এখানে দুইটি মিথ্যা
তথ্য দিয়েছেন।
প্রথমতঃ তারেক মনোয়ার হাদীষের অপব্যখ্যা করে বুঝাতে
চেয়েছেন, সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাওয়ার ঘটনাটি বাস্তব। অথচ, তিনি যদি একজন আলেম
হওয়াতো দূরের কথা, সামান্য ইলম ও সুস্থ জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি হলে এমন উদ্ভট কথা
প্রত্যাখ্যান করে তার বলা উচিত ছিলো, "সাঈদীকে চাদে দেখার কথাটি সত্য নয়। এটা
কোন অন্ধ ভক্ত, মূর্খ ব্যক্তির অপপ্রচার। আপনারা কেউ এমন ফালতু কথা বিশ্বাস করবেন
না।" এটা না করে তারেক মনোয়ার উল্টা একটা হাদীষের অপব্যখ্যা করে বুঝাতে
চেয়েছেন, এটা সত্যি ঘটিনা। বরং, যারা এই ফালতু কথাটা অস্বীকার করেছে, নিতান্তই
অবিবেচকের মতো তাদের সবাইকে তিনি "পান্ডা নেতা" বলে কটাক্ষ করেছেন।
দ্বিতীয়তঃ সৌদি রিয়াদের একজন মসজিদের ইমাম নাকি একটা বই
নিয়ে এসে তাকে বলেছে, “আমি ঐ যে আল্লামাকে (সাঈদীকে) চাদেঁ দেখেছি।”
এটা হচ্ছে, মিথ্যার উপরে মিথ্যা।
যদি সত্যিই রিয়াদের কোন একজন ইমাম এই কথা বলে থাকে, তাহলে
তারেক মনোয়ারকে বলুন, সৌদি রিয়াদের কোন ইমাম নিজে সাঈদীকে চাঁদে দেখে তার কাছে
বলেছে? তার নাম, ঠিকানা কি? তার দাবীকৃত “কেরামাতুল আওলিয়া” লেখা
বইটা কোথায়?
এইগুলো যদি সত্যিই সে দেখাতে পারে, তাহলে সৌদি রিয়াদের
ইমামের কাহিনী আমরা বিশ্বাস করবো। আর সে যদি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে না পারে,
তাহলে আমরা ধরে নিবো সাঈদীকে চাদে দেখার মতো সৌদি রিয়াদের ইমামের কাহিনীটাও তারেক
মনোয়ারের বানোয়াট কাহিনী।
(২) একভাই বলেছেন, তারেক মনোয়ার হয়তো ভুল জেনেছে বা শুনেছে।
কিন্তু তিনি মিথ্যা বলেন নি। সুতরাং, তাকে সরাসরি মিথ্যুক বলা উচিত নয়।
আমাদের জবাবঃ তারেক মনোয়ার যদি অন্যের কাছে শুনে শুনে এই
সংবাদ পরিবেশন করে, তাহলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীষ
অনুযায়ী আমাদের কাছে তিনি মিথ্যাবাদী বলে সাব্যস্ত হবেন। কেননা, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন
ব্যক্তির মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তাই বলে
বেড়ায়।” সহীহ মুসলিমঃ ৫।
সুতরাং, একজন মানুষের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে সে যা শুনে, অন্যকে
বলার পূর্বে যাচাই বাছাই করা। আর বিশেষ করে যারা ওয়াজ করে, যাদের কাছে মানুষ ইসলাম
শিখতে যায়, তাদের জন্য আরো বেশি জরুরী হচ্ছে যাচাই বাছাই করে দলীল ভিত্তিক কথা
বলা। যে ব্যক্তি ওয়াজ করার নামে একের পর এক মিথ্যা কথা প্রচার করে, সেটা সে নিজে
ইচ্ছা করেই বলুক কিংবা অন্যের কাছ থেকে শুনে বলুক, উপরোক্ত হাদীষ অনুযায়ী সে
মিথ্যুক বলে সাব্যস্ত হবে।
তারেক মনোয়ার শুধুমাত্র এই একটি মিথ্যা বলেছেন, বিষয়টি এমন
নয়। বরং, জামাতে ইসলামীর মতবাদ প্রচারের জন্য, মানুষকে হাসানোর জন্য কিংবা মাহফিল
জমানোর জন্য তিনি আরো অনেক মিথ্যা কথা বলে ওয়াজ করেন।
তারেক মনোয়ারের মিথ্যা কাহিনী পরিবেশন করার আরো দুইটি
উদাহরণঃ
(৩) ২০১৩ সালে আব্দুল
কাদের মোল্লার ফাসির পর তারেক মনোয়ার তাকে আল্লাহর ওলী বানানোর জন্য একটা মিথ্যা
স্বপ্ন বয়ান করে।
“আহমদ শফী,
আপনারা চিনেন তাকে....তিনি একটি স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি দেখেছেন দূর থেকে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ানো আর আব্দুল
কাদের মোল্লা তার সাথে মোলাকাত করছেন।”
বক্তব্যের লিংক -
https://youtu.be/02WbKHMPAys
(৪) তারেক মনোয়ার মিথ্যা কথা বলতে বলতে এতোটাই বেপরোয়া এবং
ব্যালান্সহীন হয়ে গেছে যে, সে এখন আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা বলতেও ভয় করেনা।
তারেক মনোয়ার সাদা পোশাকের ফযীলত বর্ণনা করতে গিয়ে তার এক ওয়াজে বলেছে,
“আল্লাহ
যদি কোন ড্রেস পড়তেন, তাহলে সাদা ড্রেস পড়তেন।”
নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
আল্লাহ সম্পর্কে যে মিথ্যা কথা রচনা করে তাকে দুনিয়ার
সবচাইতে বড় জালেম বলে ঘোষণা করে আল্লাহ বলেছেন,
فَمَنۡ اَظۡلَمُ مِمَّنِ افۡتَرٰی عَلَی اللّٰہِ کَذِبًا
অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা রচনা করে, তার
চাইতে বড় জালেম আর কে আছে? সুরা আল-কাহাফঃ ১৫।
বক্তব্যের ভিডিও পোস্টের সাথে সংযুক্ত করা হলো।
(৫) তারেক মনোয়ারের মিথ্যা ওয়াজ এবং গোমরাহী মানুষের সামনে
তুলে ধরায় একভাই রাগ করে লিখেছেন, "Aponader moto manusder karone ajj muslimder ei korun
obostha".
আমাদের জবাবঃ আপনারা মিথ্যাবাদীদের ব্যাপারে নীরবতা অবলম্বন
করে কিংবা তাদের পক্ষে সাফাই গেয়ে মুসলমানদের কি উপকার করছেন?
(৬) মিথ্যাবাদী কণ্ঠশিল্পী তারেক মনোয়ারের কিছু ভক্তদের
আমাকে, আমার পিতা মাতাকে নিয়ে অশ্লীল ও আপত্তিকর গালি-গালাজের কারণে পেইজ থেকে
তাদেরকে বিনা নোটিশে ব্যান করা হয়েছে, আলহা’মদুলিল্লাহ।
(৭) যদিও প্রথম পর্বে কাযী ইব্রাহীমকে নিয়ে কিছু বলার ইচ্ছা
ছিলোনা কিন্তু প্রসংগক্রমে তার নাম চলে আসে। যেহেতু তার সম্পর্কে একটু বিস্তারিত
বলা প্রয়োজন, সময় হলে ইন শা আল্লাহ তার সম্পর্কে লিখবো।
(৮) একভাই বলেছেন, “আপনি যাদের বিরুদ্ধে
কথা বলতেছেন, আমার তো মনে হয়না যে আপনার এরকম যোগ্যতা আছে, একটু ভেবে চিন্তে কথা
বলা উচিত।”
আমাদের জবাবঃ আপনি সত্যি বলেছেন। ধর্মের নামে মিথ্যা কাহিনী
বলে ওয়াজ করার যোগ্যতা খুব কম মানুষের হয়।
(৯) মেজাজ গরম হয়ে যায় যখন কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে কথা বললে
দলের ভিতরে ঢুকিয়ে কথা দেখি, মনে হয় আপনার মাঝে বড় ভেজাল আছে।
আমাদের জবাবঃ আপনার মেজাজ খারাপ হওয়ার জন্য দুঃখিত। কিন্তু,
যখন পথভ্রষ্ট বক্তারা মিথ্যা কথা বলে মানুষের ধর্ম নষ্ট করে, তখন আপনার মেজাজ খুব
ঠান্ডা থাকে বুঝি?
(১০) আল্লাহ! আমি তো কাজী ইব্রাহীম এর রেগুলার ওয়াজ শুনি।
আর আমি কাজী ইব্রাহিম কে একজন ভাল মানুষ হিসেবে জানি।
আমাদের জবাবঃ বর্তমানে তিনি বিভ্রান্তদের নেতা। ধর্মের নামে
কল্প কাহিনী প্রচার করা আরম্ভ করেছেন।
(১১) কার বক্তবা শুনব এখন তো দিধায় পড়লাম।
আমাদের জবাবঃ শায়খ আবু বকর জাকারিয়া, মতিউর রহমান মাদানী,
আব্দুল হামীদ ফাইজী, আব্দুর রাক্বীব বুখারী, সাইফুদ্দীন বেলাল, আব্দুল্লাহিল হাদী,
আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী আরো অনেকেই আছেন, উনাদের কথা শুনতে পারেন।
(১২) ভাই! UNIVERSAL
VISION নামে একটা চ্যানেল এ প্রায়
ই কাজী ইব্রাহীম এর সাথে সাইফুল্লাহ, মনজুর ইলাহী, আবু বকর জাকারিয়া উনারা প্রশ্ন
উত্তর মূলক ভিডিও ক্লিপ আপলোড করেন! উনার কি কাজী ইব্রাহীম কে প্রমোট করছেন নাহ? শেষ
১৮ নভেম্বর একসাথে ভিডিও আপলোড করেছেন।
আমাদের জবাবঃ UNIVERSAL
VISION কারা চালায়, তারা কেনো এখন
পর্যন্ত কাজী ইব্রাহীমকে প্রমোট করে আমি জানিনা। কাজী ইব্রাহীম মারাত্মক রকমের
গোমরাহীতে হাবুডুবু খাচ্ছেন, শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী হা'ফিজাহুল্লাহ ২০১৪
সাল থেকে এই লোকের গোমরাহীর জবাব দিয়ে আসছেন। সবকিছু জেনে বুঝেও যারা কাজী
ইব্রাহীমের পক্ষে কথা বলবে, সে তার মতোই বলে গণ্য হবে। আর কিছু পেইজ, চ্যানেল আর
ব্যক্তি আছে, যারা হক্ক আর বাতিল বুঝতে না পেরে মিক্সড করে ফেলে। এরা দাওয়াতের
অযোগ্য।
(১৩) শিরক, বিদাত প্রচারকারী বক্তা ও লেখকদের সমালোচনা করলে
অনেকে রাগ করেন আর বলেন,
আমরা আলেমদের নামে গীবত করছি,
আমরা উম্মতকে বিভক্ত করছি,
আমরা অমুকের প্রতি জেলাস...ইত্যাদি।
যাই হোক, এই ভাইদের বিস্তারিত জবাব এই পোস্টে দেওয়া হয়েছে -
“আপনারা আলেমদের
নামে গীবত করেন কেনো?” (পর্ব ১-২)।
যারা বিবেক সম্পন্ন মানুষ, আশা করি তারেক মনোয়ারের গোমরাহী স্পষ্ট
করার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ঠ। যারা এতোগুলো দলীল প্রমাণ দেওয়ার পরেও জামাতে ইসলামীর সাপোর্টার
হওয়ার কারণে কিংবা উক্ত কন্ঠশিল্পীর কন্ঠে মজে তার পক্ষে সাফাই গাইবেন তাদের জন্য ক্বুরআনের
একটি আয়াত তুলে ধরছিঃ
اَفَلَمۡ یَسِیۡرُوۡا فِی الۡاَرۡضِ فَتَکُوۡنَ لَہُمۡ قُلُوۡبٌ یَّعۡقِلُوۡنَ بِہَاۤ اَوۡ اٰذَانٌ یَّسۡمَعُوۡنَ بِہَا ۚ فَاِنَّہَا لَا تَعۡمَی الۡاَبۡصَارُ وَ لٰکِنۡ تَعۡمَی الۡقُلُوۡبُ الَّتِیۡ فِی الصُّدُوۡرِ ﴿۴۶﴾
অর্থঃ তারা কি যমীনে ভ্রমণ করেনি? তাহলে তারা জ্ঞান বুদ্ধিসম্পন্ন
হৃদয় ও শ্রুতি শক্তিসম্পন্ন শ্রবণের অধিকারী হতে পারতো। বস্তুত চোখ তো অন্ধ
নয়, বরং অন্ধ হচ্ছে বুকের মধ্যে অবস্থিত হৃদয়। সুরা আল-হাজ্জঃ ৪৬।
ওয়া ছল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামা আ’লান-নাবী।
__________________________________________
Compulsive liar তারেক মনোয়ার
Compulsive liar বলা
হয় তাকে, যেই ব্যক্তির স্বভাব হচ্ছে মিথ্যা বলা। অর্থাৎ সে এতো বেশি মিথ্যা বলে
যেন, মিথ্যা বলা তার জন্য বাধ্যতামূলক।
কিয়ামতের একটা লক্ষণ হচ্ছে, চতুর্দিকে মিথ্যা আর মিথ্যার
ছড়াছড়ি। যেমন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতা, মন্ত্রী, এমপি, মেয়র, চেয়ারম্যান,
মেম্বাররা বলে থাকে। এরা সামান্য দুনিয়ার জন্য দিনকে রাত আর রাতকে দিন বানিয়ে
দিচ্ছে। আবার এক শ্রেণীর বক্তারা নিজের মার্কেট বাড়ানোর জন্যও প্রচুর মিথ্যা কথা
বলে। আমার দেখা মতে, ইসলামিক বক্তা পরিচয়ে ক্যামেরার সামনে সবচাইতে বেশি মিথ্যা
কথা বলতে অভ্যস্ত এমন একজন বক্তার নাম হচ্ছে তারেক মনোয়ার। আসুন, আজ আমরা দেখি
মানুষকে ইসলাম শিখানোর আড়ালে কিভাবে মিথ্যা কথা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে এই
মিথ্যুক বক্তা।
(১) “সৌদি আরব এতো বড় মুসলমান দেশ কিন্তু
বার্মা থেকে একজন রোহিংগা মুসলমানকে নিলোনা।”
মন্তব্যঃ সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। যারা মক্কা বা মদীনাতে জীবনে একবার
হজ্জ করতে গেছেন তারা নিশ্চয়ই জানেম, সৌদি আরবে প্রচুর রোহিংগা কাজ করছে।
উইকিপিডিয়া থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে সৌদি আরবে প্রায় ১,৯০,০০০ (এক লক্ষ
নব্বই হাজার) মুসলমান বার্মা থেকে হিজরত করে সেখানে শান্তিতে বসবাস করছে। তারা
সেখানে বিভিন্ন ছোট বা বড় পেশায় নিয়োজিত আছেন। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, ক্বারী
মুহাম্মাদ আইয়ুব রহি'মাহুল্লাহ, যিনি ২০১৬ সালে ইন্তেকাল করেছিলেন, তিনি দীর্ঘদিন
মসজিদে নববীতে ইমাম হিসেবে সম্মানের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার পিতৃপুরুষের
বাড়ি ছিলো বার্মাতে যারা বার্মার নির্যাতনে মক্কায় হিজরত করেছিলেন।
মুহাম্মদ আইয়ুবকে যারা চেনেন না তারা ইউটিউবে তাঁর তিলাওয়াত
শুনেতে পারবেন।
(২) NASA বলছে, "Any time sun can rise from West, instead of East. Within
75 years this world is going to be destroyed."
অর্থাৎ, আমেরিকার সবচাইতে বড় আকাশ গবেষণা কেন্দ্র নাসা
বলছে, “যেকোন সময় সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উঠতে পারে। আগামী ৭৫ বছরের
মধ্যে সারা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।”
এই সবগুলো কথা নাসা হাদীষ থেকে বলছে।
মন্তব্যঃ তারেক মনোয়ার নাসার বরাত দিয়ে যা বলেছে তা
সম্পূর্ণ মিথ্যা। আসলে নাসার নামে এইগুলো তার নিজস্ব মনগড়া কাহিনী, যা সে অশিক্ষিত
শ্রোতাদেরকে চমক লাগানোর জন্য বলে থাকে। NASA যা বলে তা কোন না কোন আন্তর্জাতিক গবেষণা
জার্নালে প্রকাশিত হয়। আপনারা যারা তারেক মনোয়ারকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করেন, তারা
সারা জীবন খুজলেও নাসার বরাত দিয়ে এমন কোন খবর আন্তর্জাতিক জার্নাল থেকে দেখাতে
পারবেন না, এটা আমি আপনাদের জন্য চ্যালেঞ্জ দিয়ে গেলাম। আপনারা যারা কম বুঝেন,
তারা তারেক মনোয়ারকে সরাসরি ফোন করে জিজ্ঞেস করতে পারেন, সে নাসার কাছ থেকে এই কথা
কোথায় শুনেছে বা পড়েছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সে কেয়ামত পর্যন্ত এর কোন
প্রমাণ দিতে পারবেনা। কারণ, নাসা আকাশ নিয়ে গবেষণা করে, তারা গণক ঠাকুরের মতো
ভবিষ্যত বাণী করে বেড়ায় না।
(৩) নাসা বলছে, “পৃথিবী বড় একটা
যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে যেই যুদ্ধে পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ মারা যাবে,
এক-তৃতীয়াংশ মানুষকে হত্যা করা হবে আর এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বিকলাঙ্গ হয়ে বেচে থাকবে।”
মন্তব্যঃ নাসার নামে আরেকটি মিথ্যাচার।
(৪) “এই ট্রাম্পের হাতেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
শুরু হবে।” - বিশ্বনবীর হাদীষ।
মন্তব্যঃ তারেক মনোয়ারকে কিয়ামত পর্যন্ত সময় দিলেও বিশ্বনবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কোন একটি সহীহ হাদীষতো দূরের কথা,
এমনকি জাল অথবা জয়ীফ হাদীষের ট্রাম্পের নাম দেখাতে পারবেনা।
উপরের ৪টি বক্তব্য দেখুন এই লিংকে –
https://youtu.be/aWp0VQ_9v-o
(৫) “আমি হেলিকপ্টারের পছন্দ করিনা, এটা
স্বাস্থ্যকর না। আমি এর চাইতে দ্রুতগামী রকেটে চড়েছি অনেকবার।”
লিংক –
https://youtu.be/XX0G34Vhr6E
মন্তব্যঃ রকেট কি জিনিস, রকেট দিয়ে মানুষ কোথায় যায়, সম্ভবত এটা
তারেক মনোয়ার জানেন না। যদি সত্যিই তিনি জানতেন রকেট কি জিনিস তাহলে "রকেটে
চড়েছি অনেকবার" বলা তো দূরের কথা, জীবনে একবার রকেটে চড়েছি এই কথা বলার সাহস
করতেন না।
(৬) "আফগানিস্থানে যত বম্বিং করেছে একটাও ফুটেনাই। ব্রিটিশ এক
মেজর বললেন, ‘‘I have seen Almighty in Afgan.’’ আফগানিস্থানে আমি আল্লাহকে দেখেছি। আফাগানিস্থানে রাতের বেলা আকাশ থেকে
বোমা ফেললে পাগড়ি পড়া আল্লাহর ফেরেশতারা বোমাগুলো হাতে ক্যাচ ধরে সেইগুলো নদীতে
ফেলে দিত।
লিংক -
https://youtu.be/4pnAzZD2VcM
মন্তব্যঃ কি আশ্চর্যজনক মিথ্যা এই দাজ্জালের।
যারা ২০০১ সালে সাবালক ছিলেন তারা নিশ্চয়ই জানেন, ইংগ-মার্কিন সামরিক জোটের
নির্বিচার বোমা হামলায় আফাগানিস্থানের কত হাজার হাজার নিরীহ নিরপরাধ মুসলমান নারী,
পুরুষ ও শিশু শাহাদত বরণ করেছে। এমনকি সর্বশেষ, ২০১৭ সালের ১৩-ই এপ্রিলে আমেরিকা
আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত সবচাইতে মারাত্মক বোমা, ৯৮০০ কেজি ওজনের Mother of all Bombs আফগানিস্থানে নিক্ষেপ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।
Brown University এর Watson Institute এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ইংগ-মার্কিন হামলায় ২০০১ সাল থেকে ২০১৮ সালের
নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১,৪৭,০০০ (এক লক্ষ সাতচল্লিশ হাজার) মানুষ নিহত হয়েছে, যার
মধ্যে প্রায় ৩৮,০০০ (আটত্রিশ হাজার) মানুষ হচ্ছে সাধারণ মুসলমান, যাদের সাথে
যুদ্ধের কোন সম্পর্ক ছিলোনা।
আমেরিকার একটা বোমা যদি না ফুটে, তাহলে এতোগুলো মুসলমান
আমেরিকা মারলো কিভাবে?
(৭) একের ভিতরে তিন –
মানুষ বিভিন্ন সভা বা মাহফিলে আসে বক্তাদের কাছ থেকে
ক্বুরআন ও হাদীষের কথা শুনে নিজেদের জান্নাত খোজার জন্যে। আর এই সুযোগে বক্তারা
"হাদীয়া" নামে বিশাল বড় এমাউন্টের টাকা নিয়ে নিজেদের মার্কেট বাড়ানোর
জন্যে নিজেদের গুণকীর্তনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। যেমন, এক ওয়াকে তারেক মনোয়ার দাবী করে,
১৯৯০ সালে সে ইংলিশ লীগে ফুটবল খেলে অনেক টাকা ইনকাম করতো। আরেক জায়গায় সে দাবী
করে, ১৯৯০ সালে অক্সফোর্ডের বেস্ট টিচার এওয়ার্ড পেয়েছিলো। আবার আরেক ওয়াজে বলে,
১৯৯০ সালে সে ইংল্যান্ডের ব্রাইটন মসজিদের খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করতো।
অর্থাৎ, ১৯৯০ সালে তিনি মসজিদে ফযরের নামায পড়িয়ে স্কুলের
ক্লাস নিতো, বিকালে ইংলিশ লীগে খেলে অনেক টাকা ইনকাম করতো। এমন বহুমুখী প্রতিভার
লোক তারিক মনোয়ার ছাড়া আজ পর্যন্ত আর কেউ হতে পারে? বক্তব্যের ভিডিও পেইজে আপলোড
করা হলো, তারেক মনোয়ারের ভক্তরা নিজ দায়িত্বে দেখে নিবেন।
মন্তব্যঃ অক্সফোর্ডের বেস্ট টিচার এওয়ার্ড নির্ভেজাল চাপা।
ইংলিশ লীগে খেলার খবর ভুয়া। মসজিদের খতিব হওয়ার খবরটা সত্যি হতে পারে, কারণ
ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তখন তার বয়স ছিলো প্রায় ৩০ বছর।
তারেক মনোয়ারের এমন অসংখ্য মিথ্যা বক্তব্য আছে যে, সামান্য
বিবেক যার আছে তিনিও খুব সহজেই বুঝবেন এই লোক ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা কাহিনী বলে ওয়াজ
করে। আমরা জামাতে ইসলামী ভাইদেরকে অনুরোধ করবো, আপনারা এমন জনপ্রিয়তা লোভী অল্প
শিক্ষিত লোকদের কথা শুনে বিভ্রান্ত না হয়ে ক্বুরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন
করেছেন এমন সত্যিকারের আলেম ও তালেবে ইলমদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করুন। আল্লাহ
আমাদের সবাইকে বুঝার তোওফিক দান করুন, আমিন।
__________________________________________
কাসেম সোলায়মানির মৃত্যু (পর্ব-১)
৩-রা জানুয়ারী, ২০২০
বর্তমান বিশ্বে সামরিক দিক থেকে মুসলমানদের সবচাইতে বড়
শত্রু হচ্ছে আমেরিকা এবং আক্বীদাহগত দিক থেকে সবচাইতে বড় শত্রু হচ্ছে ইরান। ইরান
মুসলমানদের সবচাইতে বড় শত্রু তার কারণ হচ্ছে, আমেরিকার খ্রীস্টান বা ইসরায়েলের
ইহুদীরা মুসলমানদেরকে হত্যা করে কাফের পরিচয় নিয়ে। কিন্তু, ইরানী শীয়ারা নিজেদেরকে
মুসলমান দাবী করে ইহুদী এবং খ্রীস্টানদের চাইতে বেশি মুসলমানদেরকে হত্যা করে।
এছাড়া তারা ক্বুরআন মানার দাবী করে কিন্তু ক্বুরআন একটি বিকৃত কিতাব দাবী করে তারা
ক্বুরআনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। যদিও শীয়া রাষ্ট্র ইরান এবং ইহুদীদের মূল
চালিকাশক্তি আমেরিকা মিডিয়াতে একজন আরেকজনকে সবচাইতে বড় শত্রু হিসেবে প্রদর্শন
করে, কিন্তু বিশ্ব রাজনীতি সম্পর্কে সচেতন সকলেই জানেন, মূলত আমেরিকা ও ইউরোপের
প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ মদদে আজকে শীয়া রাষ্ট্রের এই উত্থান। ইরান হচ্ছে সত্যিকারের
ইসলামের অগ্রযাত্রাকে নস্যাত করার জন্য পাশ্চাত্য ষড়যন্ত্রের একটা অংশ। ইরানের
প্রত্যক্ষ সামরিক ও আর্থিক সহায়তায় সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-খবিস কর্তৃক লক্ষ
লক্ষ মুসলমান হত্যার পরেও তার ব্যাপারে আমেরিকার মৌন সম্মতির উদাহরণে এই বিষয়টা
এখন দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।
যাই হোক, বিগত দুই দশক ধরে
(১) মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নী রাষ্ট্রগুলোতে আক্রমন করে হাজার
হাজার মুসলমান হত্যা করা,
(২) সাদ্দামকে উতখাতের পর ইরাকে শীয়াদের ক্ষমতা নিশ্চিত
করা,
(৩) লেবাননে শীয়া রজত্ব কায়েম করা,
(৪) ইয়েমেনে হুউষী শীয়াদের বিপ্লবের মাধ্যমে দেশটিকে
গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেকে দেওয়া,
(৫) মধ্যপ্রাচ্যের কসাই বাশারকে সিরিয়ায় ক্ষমতায় রাখার জন্য
আর্থিক, সামরিক সর্বাত্মক সাহায্য করা
এমন বহুবিধ কর্মকান্ডের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ সুন্নী মুসলমান
হত্যার জন্য সরাসরি দায়ী ইরানের শীর্ষস্থানীয় সামরিক একজন কর্মকর্তা হচ্ছেঃ ইরানের
এলিট ফোর্স কথিত “ইসলামিক রেভুলোশানারি গার্ড ফোর্স” এর
প্রধান মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি। আজ আমেরিকার এক হামলায় এই কাসেম সোলাইমানি
নিহত হয়েছে। আলহা’মদুলিল্লাহ!
আল্লাহ তাআ’লা কখনো এক জালেমকে দ্বারা অন্য জালেম
গোষ্ঠীকে প্রতিহত করেন, এটা আল্লাহর সুন্নাহ। তিনি যদি এটা না করতেন তাহলে তার
নিরীহ বান্দারা এই পৃথিবীতে শান্তিতে বসবাস করতে পারতোনা।
এটা খুবই ব্যতিক্রমধর্মী এবং বাস্তব সমাধানমুখী ঘটনা। এই
প্রথম একজন মেজর জেনারেলকে হত্যার মাধ্যমে আমেরিকা ইরানের আধিপত্যবাদ বিস্তার রোধে
রেড লাইট প্রদর্শন করলো। মধ্যপ্রাচ্যের সুন্নী রাষ্ট্রগুলোর চাপে, কিংবা আমেরিকান
দূতাবাসে আক্রমন করে মার্কিন নাগরিক হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে, আমেরিকা যে কারণেই
কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে থাকুক না কেনো, লক্ষ লক্ষ মুসলমান হত্যার সাথে জড়িত
কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ায় প্রতিটা মুসলমান আজ আনন্দিত।
পক্ষান্তরে কুফুরী এবং শিরকের পতাকাবাহী ইরানী শীয়ারা এবং
রাজনৈতিক কারণে ইরানী শীয়াদের দালালি করা ইখোয়ানুল মুসলিমিন, জামাতে ইসলামী,
ইয়াসির ক্বাদীর মতো মডারেট বক্তা এবং তাদের জাহিল ভক্ত-শ্রোতারা এই ঘটনায় আজ ব্যাথিত।
=> যারা শীয়াদের সম্পর্কে জানেন না, তারা আমাদের নীচের
এই লেখাটা অবশ্যই পড়বেনঃ
“রাফেজী
শীয়া, ইসলামিক রাষ্ট্র ইরান এবং শিয়া প্রেমী জামাত-শিবির, ইখোয়ানীদের হাকীকত”
__________________________________________
কাসেম সোলায়মানির মৃত্যু (পর্ব-২)
৭-ই জানুয়ারী, ২০২০।
আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা নামক ইয়াহুদী
মুনাফেক মুসলমান নাম নিয়ে বিভ্রান্ত এবং যিন্দীক একটি দল তৈরী করেছে, তার নাম
হচ্ছে শীয়া।
=> এই শীয়ারা মুখে
ঈমানের দাবী করে কিন্তু কাজ করে বিপরীত। যেমন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি
ওয়া সাল্লামের নির্দেশ হচ্ছেঃ মৃত ব্যক্তিকে দ্রুত কবর দেওয়া।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা জানাযার (লাশ) নিয়ে যেতে তাড়াতাড়ি
কর। কেননা, সে যদি পুণ্যবান হয়, তাহলে ভালো; ভালো (গন্তব্যের) দিকেই তোমরা তাকে পেশ
করবে। আর যদি তা এর উল্টো হয়, তাহলে তা মন্দ; যা তোমরা তোমাদের ঘাড় থেকে নামিয়ে
দেবে।” সহীহ বুখারীঃ ১৩১৫, সহীহ মুসলিম ৯৪৪।
নবীর কথা না মেনে, ইরানের রাফেজী
শীয়াদের মাঝে সোলায়মানির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চরমপন্থা বিস্তার লাভের জন্য গত
৩-রা ডিসেম্বর, ২০১৯ সাল শুক্রবার নিহত কাশেম সোলায়মানিকে আজ মংগলবার পর্যন্ত তারা
কবর দেয়নি। বরং, তার লাশ কফিনে করে বিভিন্ন শহরে মিছিল বের করে তার ভক্তদেরকে
সুইসাইড বম্বিং বা এমন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য উদ্ধুদ্ধ করছে।
আলহা’মদুলিল্লাহ!
ইসলাম নাম নিয়ে শীয়াদের এমন ঘৃণ্য কাজের সামান্য শাস্তি আজ তার পেয়ে
গেছে। এখন পর্যন্ত সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, আজ ইরানের কিরমান শহরে সোলায়মানির লাশ
নিয়ে মিছিলে ভীড়ের মাঝে পদদলিত হয়ে অন্তত ৩৫ জন অভিশপ্ত শীয়া দুনিয়া থেকে বিদায়
নিয়েছে। এছাড়া, আরো ১৯০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ক্বুরআনের একটি
আয়াত উল্লেখ না করে পারছিনা।
মহান আল্লাহ বলেন, “যারা কুফুরী করে তাদের কার্যকলাপের
কারণে তাদের উপর কোন না কোন বিপদ আসতেই থাকে কিংবা তাদের ঘরের আশেপাশেই বিপদ নাযিল
হতে থাকে, যতক্ষণ না আল্লাহর ওয়াদা পূর্ণ হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহ তার ওয়াদার ব্যতিক্রম
করেন না।” সুরা রদঃ ৩১।
কাশেম সোলায়মানিকে নিয়ে পোস্ট দেওয়ায়
অনেকে আমাদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করেছেন। আমরা নাকি সৌদি আরবের দালাল, ইয়াহুদী
খ্রীস্টানদের অনুসারী, উম্মতের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করছি....আরো কত কি!
এছাড়া, বিশ্বের এক নাম্বার সন্ত্রাসী
রাষ্ট্র এমেরিকা কর্তৃক এই রাফেজী কমান্ডার নিহত হওয়ায় এই সুযোগে অনেক শীয়া এবং শীয়াদের
দালাল কিছু মিডিয়া সোলায়মানিকে “মুসলমান বীর” বানিয়ে সরলমনা মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত
করতে চাচ্ছে। অথচ অনেকে হয়তো জানেই না যে, সোলায়মানি ছিলো বর্তমান যুগে সুন্নীদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাফেজীদের প্রধান সেনাপতি।
রাফেজী
সাহাবাদের দুশমন শীয়ারা বহু দল-উপদলে বিভক্ত হয়েছে, যেমন জায়েদী,
রাফেজী, ইসমাঈলী বা আগা খানী, বোহরা ইত্যাদি। বর্তমান শীয়া রাষ্ট্র ইরানের
ক্ষমতাসীন শাসক এবং অধিকাংশ জনগণ রাফেজী শিয়া ফেরকার অন্তর্ভুক্ত, এদের আরেকটি নাম
হচ্ছে ইসনে আশারি, কারণ তারা ১২ জন ইমামের অনুসারী।
রাফেজী কারা?
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহকে তার ছেলে আব্দুল্লাহ রহি’মাহুল্লাহ জিজ্ঞেস করেছিলো, “রাফেজী কারা?” ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ উত্তরে বলেছিলেন, “যারা হযরত আবু বকর ও হযরত উমর
রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমাকে লানত ও গালি-গালাজ করে তারা হচ্ছে রাফেজী।” আব্দুল্লাহ তার পিতাকে পুনরায় প্রশ্ন
করেন, “যারা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কোন একজন সাহাবীকে
লানত করে তারা কেমন?” উত্তরে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আমি তাদেরকে মুসলমান বলে মনে করিনা।” মানাক্বিবে ইমাম আহমাদঃ ১৬৫, ইমাম
ইবনুল জাউযি রহি’মাহুল্লাহ।
সাহাবীদের সাথে রাফেজীদের শত্রুতা
ইরানের রাফেজী শীয়ারা সম্মানিত
সাহাবীদের সম্পর্কে কতটা খারাপ আক্বীদা রাখে আধুনিক ইরানের শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরুর
বক্তব্য দেখুন -
“আমি সেই আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখি না
যিনি উষমান ইবনে আফফান এবং মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের মতো বদমাশ লোকদেরকে রাজত্ব
দিয়েছেন।” অভিশপ্ত আয়াতুশ-শয়তান খোমেনী, কাশফ-উল-আসরা।
রাফেজী শীয়া যারা আবু বকর, উমর এবং
অন্যান্য সাহাবাদের সম্পর্কে কটুক্তি করে তাদের ব্যাপারে ইসলাম কি বলে?
(১) আবু যুর’আহ রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “যখন তুমি কোনো ব্যক্তিকে দেখ যে সে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কোনো একজন সাহাবীকে অসম্মান করছে, জেনে
নাও সেই ব্যক্তি আসলে একজন যিন্দিক (মুসলমান নাম নিয়ে গোপনীয় কাফের)। তার কারণ, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হক, ক্বুরআনও হক। আর যা রাক্বুরআন ও সুন্নতকে
আমাদের নিকট পৌঁছিয়েছেন তারা হচ্ছেন সম্মানিত সাহাবীগণ। (সুতরাং, সে ব্যক্তি
সাহাবীদেরকে গাল-মন্দ করে) এই ব্যক্তি চায় যে, সাহাবীগণ মিথ্যা ও বাতিল বলে
প্রমাণিত হোক, যার পশ্চাতে ক্বুরআন ও সুন্নাহ স্বাভাবিক ভাবেই বাতিল প্রমাণিত হবে,
প্রকৃতপক্ষে এমন লোকেরাই বাতিল ও যিন্দিক, এটাই হচ্ছে হক্ক।” খতীব বাগদাদী রহি’মাহুল্লাহ তার “আল-কিফায়াহ” গ্রন্থের ৪৯নং পৃষ্ঠায় এটা বর্ণনা
করেছেন।
(২) ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “রাফেজী শীয়াদের ইসলামকে ধ্বংস করা ছাড়া
আর কোন উদ্দেশ্য নেই।” মিনহাজুস সুন্নাহঃ ৭/৪১৫।
(৩) মহান আল্লাহর বাণীঃ “আর মুহাজির ও আনসারদের মধ্যে যারা প্রথম
অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে; আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট
হয়েছেন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন
জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণা প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আর এটাই হচ্ছে
মহাসাফল্য।” সুরা তোওবাহঃ ১০০।
হাফিয ইমাম ইবন কাষির রহি’মাহুল্লাহ আল্লাহ তাআ’লার উক্ত আয়াতের তাফসীর প্রসঙ্গে বলেছেনঃ “আল্লাহ তাআ’লা এ আয়াতে জানাচ্ছেন যে, তিনি মুহাজির ও
আনসারদের উপর সন্তুষ্ট, অনুরূপ সন্তুষ্ট ইহসানের সাথে পরবর্তীতে মধ্যে তাদের অনুসারীদের
উপর। সুতরাং যে ব্যক্তি মুহাজির ও আনসার সাহাবীদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে অথবা তাদের
সবাইকে গাল-মন্দ করে অথবা তাদের কোনো একজনকে অপছন্দ বা গাল-মন্দ করে তার জন্য
ধ্বংস অবধারিত। বিশেষভাবে সাহাবীদের সরদার, রাসুলের পর সর্বোত্তম ও শ্রেষ্ঠ
ব্যক্তিদের সাথে যে অসদাচরণ করে, যেমন প্রথম সিদ্দিক ও মহান খলিফা আবু বকর ইবন আবু
কুহাফা। রাফেযীদের হতভাগা একটি দল শ্রেষ্ঠ সাহাবীদেরকে অপছন্দ ও গাল-মন্দ করে,
তাদের আচরণ থেকে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্ত রাখুন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, তাদের
অন্তরগুলো বক্র ও দিক ভ্রান্ত। আল্লাহ যাদের উলর সন্তুষ্ট, তাদেরকে যখন তারা
গাল-মন্দ করে, তখন ক্বুরআনের প্রতি তাদের ঈমান কোথায় থাকে?”
কৃতজ্ঞতাঃ শায়খ আব্দুল মুহসিন ইবন হামদ
আল-আব্বাদ হা’ফিজাহুল্লাহ, আবু আম্মার ইয়াসির, আবু রুক্বাইয়া আ’ব্দুস সামাদ।
__________________________________________
ফেতনার সময় দুই প্রকার মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ত হয়
শায়খ সাইফুদ্দিন বেলাল হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“ফেতনার সময় দুই প্রকার মানুষ
ক্ষতিগ্রস্ত হয়ঃ
(১) যিনি নিজেকে পণ্ডিত ভাবেন ও
ফিতনার ব্যপারে উঁকি দেন ও সে ব্যপারে বিভিন্ন মন্তব্য করেন।
(২) সাধারণ মানুষ যারা জানেনা,
যাদেরকে শিকার করে এক শ্রেণীর জানা মানুষেরা।”
আজকে আমি প্রথম শ্রেণীর মানুষের
সত্যিকারের কয়েকটি উদাহরণ আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
=> ২০১৪ সালে যখন আইসিস, আইএস
বা দায়েশের ফেতনাহ প্রকাশ পায়, তখন আইসিস ও তাদের খলিফাহর ব্যপারে আমাদের দেশের
একেক জন একেক রকম মতামত পেশ করা আরম্ভ করে।
(১) আল কায়েদাহর ভক্ত যারা ভেতরের
কাহিনী তখনো জানতে পারেনি, আইসিসকে আল-কায়েদাহর অংশ মনে করে কোমর বেঁধে আবু বকর
আল-বাগদাদীর মিথ্যা খিলাফতের পক্ষে ব্যপক প্রচারণা শুরু করলো। অনেকে অনলাইনে আবু
বকর খারেজীকে ভার্চুয়াল বাইয়াত দেওয়া ফরজ এবং তার পক্ষে আমাদের সবার প্রোপিক কালো
পতাকা দেওয়া উচিৎ বলে ফতোয়া দিলো। অথচ দুদিন পর তারা জানতে পারলো, আইসিস
আল-কায়েদাহকে মুর্তাদ ফতোয়া দিয়ে পাখির মতো নির্বিচারে হত্যা করছে। অবশ্য এরপর
তাদের কেউ কেউ পুনরায় আল-কায়েদাহর দিকে ফিরে আসলো, আবার তাদের অনেকে আজ পর্যন্ত আইসিসকে
আল-কায়দাহর অংশ মনে করে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে আছে।
(২) আইসিস শিয়াদের বিরুদ্ধে জিহাদ
করে, আইসিস কবর মাযার ভাংছে...এমন প্রচারণার জের ধরে একশ্রেণীর আহলে হাদীস ভাইয়েরা
অজ্ঞতা ও আবেগের বশে আইসিসকে সহীহ আকিদাহর অনুসারী বলে মনে করা শুরু করলো। শুরুর
দিকে আইসিস ইরাক এবং সিরিয়াতে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করার কারণে অনেকে তাদের
ব্যপারে বিভ্রান্ত হলো, তাদের খিলাফত সারা বিশ্বে কায়েম হবে এই ব্যপারে আকাশ-কুসুম
স্বপ্ন দেখা আরম্ভ করলো।
- সহীহ আকিদাহর মুখোশধারী একজন
শায়খতো আজ পর্যন্ত তাদেরকে ইমাম মাহদীর সৈনিক বলে মূর্খ লোকদেরকে বিভ্রান্ত করছে।
- আরেকজন আহলে হাদীস শায়খের ছেলে
দাবী করেছিলো, আইসিসের সমালোচনা করা ঠিক নয়, তাদের ব্যপারে আমাদের চুপ থাকা উচিৎ
বলে মতামত পেশ করলো। আইসিসের ব্যপারে আরব বিশ্বের বড় আলেমদের বক্তব্য যখন তাকে
দেওয়া হলো, সেগুলোকে সে অস্বীকার করলো। বর্তমান যুগের জীবিত আলেমরা অতটা
নির্ভরযোগ্য নন, তারা হয়তোবা টিভি দেখে ফতোয়া দেন, আলেমদের ব্যাপারে এমন মিথ্যা
সংশয় প্রকাশ করলো।
- আরেকজন সহীহ আকিদাহর প্রচারকারী
শায়খ আরব বিশ্বের আলেমদের ফতোয়া প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, আইসিসের পক্ষে বিপক্ষে
সবাই যে যা-ই বলছে, তার সব-ই নাকি অনুমান নির্ভর! তাদের ব্যপারে আমাদের আরো
অপেক্ষা করতে হবে।
=> সৌদি আরব ইয়েমেনে হুউষী
শীয়াদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করার পর থেকে ফেইসবুকে হঠাৎ Salauddin Ayube নামক একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক(!) এর আবির্ভাব হলো। সৌদী
বাদশাহ এবং বিশেষ করে তাঁর ছেলে মুহাম্মদ বিন সালমানের কিছু ছবি ও অতিভক্তি প্রচার
করে আবেগ প্রবণ আহলে হাদীস ভাইদের মনোযোগ কেড়ে নিলো। অনেকে যাচাই বাছাই না করেই
এমন বহু বক্তার লেখা লাইক ও শেয়ার করেন, আস্তে আস্তে যখন তারা খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে
আসে তখন তাদের আসল চেহারা প্রকাশিত হয়। পরবর্তীতে Salauddin Ayube নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা সেই ব্যক্তি দাবী করে, তার
গবেষণা(!) অনুযায়ী
- ৯/১১-এর টুইন টাওয়ার হামলার কথা
নাকি ক্বুরআনে আছে, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
- বর্তমানের সিরিয়ার যুদ্ধই হচ্ছে
হাদীসে বর্ণিত বড় যুদ্ধ,
- আগামী কয়েক বছরের মাঝেই ঈসা আ’লাইহিস সালাম নেমে আসবেন...
এছাড়া সে আরো অনেক ব্যপারেই
বাড়াবাড়ী ও মনগড়া কথাবার্তা বলে এবং তার ভুল ধরিয়ে দিলে কমেন্ট মুছে ফেলে।
যাই হোক, যখন ফিতনাহ প্রকাশ পাবে
সাধারণ মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে, ফিতনার ব্যাপারে নিজের অল্প বুদ্ধির উপরে
নির্ভর করে কোন ফতওয়া বা মতামত দেবে না। অথবা অল্প ইলম সম্পন্ন বক্তা ও লিখকদের
কথার দিকে লক্ষ্য করবেনা। বরং, জীবিত বড় আলেমদের কাছ থেকে দলীল ভিত্তিক সঠিক জ্ঞান
অর্জন করবে এবং সে অনুয়ায়ী আমল করবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পথভ্রষ্ট, মনপূজারী,
জাহিল বক্তা ও লেখকদের পাশাপাশি একশ্রেণীর অল্প বয়ষ্ক আহলে হাদীস, সালাফী, সহীহ
আকিদাহর প্রচারকারীর সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে গেছে যারা আলেমদের কাছে থেকে উপকৃত হতে
চায়না, অথবা আলেমদের কথাকে কাটছাঁট করে গ্রহণ করে। এমন ইসলাম প্রচারকারী ফেইসবুক
ইন্টারনেটে খুব বেশী হওয়ায় এবং আলেমদের সাথে যোগাযোগ কম থাকার কারণে অনেক সৎ ও নিষ্ঠাবান
ভাইয়েরাও তাদের দ্বারা বিভ্রান্ত হয়।
__________________________________________
ইমাম মাহদী নিয়ে বিভ্রান্ত আরেক বক্তা সাদিকুর রহমান আযহারী
কাযী মুহাম্মদ ইব্রাহীম, তারেক মনোয়ারের মতো ইমাম মাহাদীকে নিয়ে অতি উৎসাহী হয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন
এমন আরেক বাংলাদেশী বক্তার নাম হচ্ছে সাদিকুর রহমান আযহারী। তিনি তার এক ওয়াজে
দাবী করেন,
“চার বছর
পর ফোরাত নদীর ভেতর থেকে স্বর্ণের খনি বের হয়ে আসবে। এই দুঃশ্চিন্তায় নাসার
বিজ্ঞানীদের কপালের ভেতর ভাজ পড়ে গেছে।
স্কাই নিউজে খবর আসছে, পত্রিকায় ছাপানো হয়েছে। স্কাই নিউজে আসছে, ৩০-শে
এপ্রিল পত্র-পত্রিকায় আসছে, নাসার বিজ্ঞানীরা অবাক হয়ে
যাচ্ছে, আল্লাহর ক্বুরআনে আল্লাহ যা বলেছেন, আল্লাহর নবী ভবিষ্যৎবাণীতে যা বলেছেন, আস্তে আস্তে
তা সত্যায়নের দিকে যাচ্ছে।"
তার এই মনগড়া বক্তব্যের লিংক -
https://youtu.be/m5aiMq0WUSI
এই সমস্ত গল্পবাজ বক্তারা প্রায়শই নাসার কথা
বলে মুসলমানদেরকে ধোকা দেয়। নাসা গ্রহ, নক্ষত্র, মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করে। ফোরাত নদীতে
স্বর্ণ পাওয়া যাবে কিনা, ইমাম মাহাদী কবে আসবে, কেয়ামত কবে হবে - এইগুলো তারা বিশ্বাস করেনা, এইগুলো
তাদের গবেষণার কোন বিষয়ও না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সরলমনা মুসলমানেরা
এই সমস্ত গল্পবাজ বক্তাদের মুখে নাসা বা বিজ্ঞানের লম্বা চওড়া কথা শুনে ধোকা
খাচ্ছে।
সাদিকুর রহমান আযহারী অন্যত্র বলেন,
“আজকে
পৃথিবীর ডাক্তাররা বলে দিচ্ছেন, আর
বেশি সময় নেই....আমিতো আশা করি আগামী ১৫-২০ বছরের মাঝে ইমাম মাহদীর আগমন হয়ে যাবে
ইন শা আল্লাহ।”
তার এই মনগড়া বক্তব্যের লিংক -
https://youtu.be/H-d4wsikLrY
ভিডিওটির লিংক মাস দুয়েক পূর্বে নেওয়া, সম্ভবত তার ভক্ত ইউটিউবার এই কথাটা
মারাত্মক গোমরাহী বুঝতে পেরে ভিডিওটা ডিলিট করে দিয়েছে। উপরে যা লেখা হয়েছে তা আমি
নিজে শুনে লিখেছিলাম।
যাই হোক, ইমাম
মাহদী কবে আসবেন, দাজ্জাল কবে বের হবে, কেয়ামত কবে হবে....এইগুলো গায়েবের বিষয়, যা একমাত্র
আল্লাহ তাআ'লা ভালো জানেন। যেই ব্যক্তি প্রবৃত্তির বশবর্তী
হয়ে ইমাম মাহদী বা গায়েবের কোন বিষয় সম্পর্কে গণক-ঠাকুরের মতো ভবিষ্যতবাণী করে সে
নিজের মূর্খতা প্রকাশ করলো।
ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “মানুষের
মধ্যে সবচাইতে বড় মিথ্যুক লোক হচ্ছে গল্পকার বক্তা এবং অধিক প্রশ্নকারী।
কিচ্ছাকারদের প্রতি মুখাপেক্ষী ব্যক্তি সত্যবাদী নয়; কেননা তারা মৃত্যু এবং কবরের আযাব সম্পর্কেও মিথ্যা কথা বলে।”
তারত্বুশী, আল-হাওয়াদিছ ওয়াল বিদা।
মহান আল্লাহ এই সমস্ত গল্পবাজ বক্তাদের ফেতনা থেকে
মুসলমানদেরকে হেফাজত করুন, আমিন।
বিঃদ্রঃ যেই সমস্ত অল্প ইলম সম্পন্ন বোকা লোকেরা এমন গল্পবাজ
বক্তাদের ওয়াজ লেকচার প্রচার করে তাদেরকে সুন্দরভাবে বর্জন করুন, তাদের মিথ্যা এবং গোমরাহীর ব্যাপারে অন্যদেরকে সতর্ক করুন।
__________________________________________
ইখোয়ানী এবং
খারেজী মানহাজের বক্তা ও লিখকদের নাম
ইখোয়ানুল মুসলিমিন, জামাতে ইসলামী
কিংবা তাকফিরী, খারেজী মানহাজের অনুসারী এই সমস্ত বক্তা এবং লিখকদের বর্জন করুন।
এরা সঠিক পথ প্রাপ্ত নয়। এরা দ্বীন কায়েমের নামে ভ্রান্ত বান্না, মওদুদী কিংবা
কুতুবী মতবাদের অনুসারী। এদের বিভ্রান্তি বুঝার জন্য ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগী রহি’মাহুল্লাহ রচিত “ইসলামের নামে জংগীবাদ” বইটি পড়ুন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দ্বীন হচ্ছে নসীহত।”
- এটা আমাদের নসীহত। যার ভালো
লাগবে সে মানবে, যার ভালো লাগবেনা সে এভয়েড করবে। প্রয়োজনে আনলাইক, ব্লক বা
রিপোর্ট করবে।
- বাজে মন্তব্য বা গালি-গালাজ করার
কোন প্রয়োজন নেই।
বাংলাদেশীঃ
(১) লুতফুর
রহমান
(২) তারেক
মনোয়ার
(৩) মিযানুর
রহমান আযহারী
(৪) আমির
হামযা
(৫) আলী
হাসান উসামা
(৬) মনোয়ার
হোসাইন
(৭) শাবীব
তাশফী
(৮) আসিফ
সিবগাত ভূঁইয়া
(৯) ড.
এম আব্দুস সালাম আজাদী
(১০) কামাল
উদ্দিন জাফরী
(১১) কাযী
মুহাম্মদ ইব্রাহীম
(১২) ড.
আবুল কালাম আজাদ (বাশার)
(১৩) মোল্লা
নাজিম
(১৪) Rain
Drops ফেইস বুক পেইজ, পাবলিকেশান
(১৫) Muslim(.)tv ইউটিউব
চ্যানেল
(১৬) আসিফ
আদনান
(১৭) Ummah
Network
(১৮) জসীম
উদ্দিন রাহমানী
(১৯) হাফিজ
মুনীর আহমেদ (আল-ক্বুরআন একাডেমী লন্ডন)
(২০) মতিউর
রহমান নিজামী
(২১) দেলোয়ার
হোসেন সাঈদী
(২২) আব্দুস
শহীদ নাসিম
(২৩) তামিম
আল-আদনানী
(২৪) হারুন ইযহার
(২৫) মুনিরুল ইসলাম বিন জাকির
(২৬) রফিক উল্লাহ আনসারী
বিদেশীঃ
(১) আহমাদ
মুসা জিব্রীল
(২) আনোয়ার
আল-আওলাকি
(৩) আবু
মুহাম্মদ আল-মাকদিসী
(৪) উসামা
বিন লাদিন
(৫) আব্দুল্লাহ
আযযম
(৬) আয়মান
আল-জাওয়াহিরি
(৭) আবু
বকর আল-বাগদাদী
(৮) হাসান
আল-বান্না
(৯) সাইয়েদ
কুতুব
(১০) আবুল
আলা মওদুদী
(১১) মুসা
সেরান্টানিও
(১২) ইউসুফ
আল-কারযাভী
(১৩) আবু
কাতাদাহ
(১৪) আবু
বারা
(১৫) আলী
দাওয়া
আরব বিশ্বের
(১) সফর
আল-হাওয়ালি
(২) সালমান
আল-আওদাহ
(৩) ড.
আব্দুর রহমান আরিফী
(৪) আব্দুল
আজিজ তারিফী
(৫) মুহাম্মদ
হাসান উলদ আল-দাদ্দু
(৬) সুলায়মান
আল-উলওয়ান
(৭) নাসির
আল-ফাহাদ
__________________________________________
কাতার মুসলিম বিশ্বে বিশৃংখলা সৃষ্টির
জন্য উস্কানিদাতা
(১) ২০১৯ সালে সৌদি আরবসহ ছয়টি আরব দেশ কাতারের বিরুদ্ধে
সন্ত্রাসীদেরকে মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে।
(২) কাতার এই অভিযোগ সম্পূর্ণভাবেভাবে অস্বীকার করে।
কাতারের মন্ত্রী সাবরা বলেছিলেন, “কারো কাছে এমন কোন প্রমান নেই যে, কাতার সন্ত্রাসীদের মদদ
দিয়েছে...।”
(৩) ইখোয়ানুল মুসলিমিনের শীর্ষস্থানীয় ধর্মগুরু ইউসুফ
আল-কারদ্বাভীর মুখে শুনুন, আরব বসন্তের
সাথে কাতারের কি যোগসূত্র রয়েছে।
ইউসুফ আল-কারদ্বাভী বলেছেন,
- কাতার আরর বসন্তের সকল বিপ্লবে আমাদের সহযোগী ছিল।
- কাতার টাকা-পয়সা দিয়ে, রাজনীতির
মাধ্যমে, মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের পাশে থেকেছে।
- কাতার লিবিয়া, মিশর, ইয়ামেন,
সিরিয়া, তিউনিসিয়াসহ সকল বিদ্রোহে অবদান রেখেছে!
- কাতার আল-জাজিরার মাধ্যমে সকল আন্দোলনে অবদান রেখেছে।
কাতারের অবদান কোনভাবে ভোলা যাবেনা। কাতার আসলেই
সংগ্রামীদের বন্ধু!
ইউসুফ আল-কারদ্বাবীর বক্তব্যের লিংক-
https://youtube.com/watch?v=lLiP31I-49Y
____________________________________
ইখোয়ানুল মুসলিমিনের পরিচয়
ইখোয়ানুল মুসলিমিন বা ইংরেজীতে Muslim Brotherhood হচ্ছে একটি মিশরীয় রাজনৈতিক দল, যা
কিনা ১৯২৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো। ধারণা করা হয়, জামাল উদ্দিন আফগানী নামক একজন
মডার্নিস্ট ব্যক্তির আদর্শে উদ্ধুদ্ধ হয়ে হাসান আল-বান্না এই দল প্রতিষ্ঠা
করেছিলেন। হাসান আল-বান্না ছিলো একজন আশআ’রী, সূফী। ইখোয়ানুল মুসলিমিন হাসান আল-বান্না এবং সাইয়েদ
কুতুবে এই দুইজনের আদর্শ দ্বারা প্রভাবিত। হাসান আল-বান্না ইখোয়ানুল
মুসলিমিনের মূলনীতি “আমরা যে ব্যাপারে একমত, সেই ব্যাপারে
একে অন্যকে সহযোগীতা করি। আর যেই ব্যাপারে আমরা একমত নই, সেই ব্যাপারে একজন
আরেকজনকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখি” চালু করেন, যার মাধ্যমে তারা শীয়া,
সূফী, মডার্নিস্টসহ বিভিন্ন পথভ্রষ বিদআ’তী দলের সাথে ঐক্য করে জনসমর্থন লাভ
করে। আর সাইয়েদ কুতুব ইখোয়ানুল মুসলিমিনকে দান করেন তাকফীর এবং ক্ষমতাসীনদের
বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের আদর্শ। ইখোয়ানুল মুসলিমিন তাদের এই দুই প্রধান ধর্মগুরুর
আদর্শ অনুযায়ী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং আধুনিক মুসলিম বিশ্বে অনেক
অন্যায়, বিশৃংখলা ও রক্তপাত সংঘটিত করেছে।
সৌদি আরবের জিজান অঞ্চলের মুফতি, শায়খ
আহমাদ ইবনে ইয়াহইয়া আন-নাজমী রহি’মাহুল্লাহ বলেন,
“ইখোয়ানুল মুসলিমিন হচ্ছে হাসান আল-বান্নার অনুসারী একটি দল।
তাদের আদর্শ ও তরীকা সম্পর্কে কতগুলো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়।
তাদের দশটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলোঃ
(১) ইখোয়ানুল মুসলিমিন তাওহীদুল ই’বাদাহ বা ইবাদতে আল্লাহর একত্ববাদকে কম গুরুত্ব
দেয়, যদিও তাওহীদুল ইবাদাহ ছাড়া একজন ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণযোগ্য হয়না।
(২) যেই সমস্ত লোকেরা নিজেকে মুসলিম বলে পরিচয় দেয় কিন্তু বড় শিরকে লিপ্ত,
যেমন আল্লাহ ছাড়া অন্যের কাছে দুয়া করা, অলি-আওলিয়াদের কবরের চারপাশে তাওয়াফ করা, মাযারে শায়িত মৃত
পীরের কাছে বাইয়াত করা, তাদের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা,
ইখোয়ানুল মুসলিম এমন নামধারী পথভ্রষ্ট মুসলিমদের ব্যাপারে চুপ থেকে নীরব
সমর্থন দেয়।
(৩) ইখোয়ানুল মুসলিমিনের প্রতিষ্ঠাতা (হাসান আল-বান্না) ছিল একজন সূফী, সূফীবাদের
সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিলো। হাসান আল-বান্না আব্দুল ওহহাব আল-হাসসাফী নামক এক ব্যক্তির কাছে
“শাযালী তরীকার” উপরে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলো।
(৪) তাদের সাথে অনেক বিদআ’ত রয়েছে এবং এই বিদআ’তের মাধ্যমে তারা আল্লাহর ইবাদত করে। প্রকৃতপক্ষে, ইখোয়ানুল মুসলিমিনের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল-বান্নার আক্বীদাহ
ছিলোঃ তাদের যিকিরের মজলিসে স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম উপস্থিত হন এবং তাদের
পূর্বের সমস্ত গুণাহ মাফ করে দেন।
(৫) ইখোয়ানুল মুসলিমিন মানুষকে “খিলাফাহ” প্রতিষ্ঠা করার দাওয়াত দেয়, এটা একটা বিদআ’ত। কারণ সমস্ত নবী ও রাসুলগণ এবং যেই সমস্ত নেককার
লোকেরা তাদেরকে অনুসরণ করেছেন তাঁদের কেউই মানুষকে খিলাফার দিকে দাওয়াত দেন নি।
(৬) ইখোয়ানুল মুসলিমিন দলের অনুসারীদের মাঝে “আল-ওয়ালা ওয়াল বারা” অর্থাৎ, শুধুমাত্র আল্লাহর
জন্যেই কাউকে ভালোবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যে কাউকে ঘৃণা
করার নীতি খুঁজে পাওয়া যায় না, বা থাকলেও তা খুবই দুর্বল।
নিজেদেরকে সুন্নী দাবীদার ইখোয়ানুল মুসলিমিনের অনুসারীদের সাথে শিয়াদের
ঘনিষ্ঠতার দ্বারা ইখোয়ানুল মুসলিমিনের আল-ওয়ালা ওয়াল বারা
নীতির প্রতি উদাসীনতা খুব স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়। এ ব্যাপারে তাদের প্রতিষ্ঠাতা
হাসান আল-বান্নার নীতি হচ্ছে, “আমরা যে ব্যাপারে একমত, সেই ব্যাপারে
একে অন্যকে সহযোগীতা করি। আর যেই ব্যাপারে আমরা একমত নই, সেই ব্যাপারে একজন
আরেকজনকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখি।”
(৭) ইখোয়ানুল মুসলিমিন আহলে তাওহীদ
(তাওহীদের অনুসারীদেরকে) এবং সালফে সালেহীনদের মানহাজের উপর যারা চলে তাদেরকে ঘৃণা
করে এবং তাঁদের সাথে বিদ্বেষ পোষণ করে। একারণে তারা তাওহীদের উপর প্রতিষ্ঠিত
বিশ্বের একমাত্র সালাফী রাষ্ট্র সৌদি আরব, ক্বুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দানকারী সৌদি
আরবের ধর্মীয় শিক্ষক, সৌদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে ঘৃণা করে। একারণে তারা
আফগানিস্থানের সালাফী আলেম জামিলুর রহমান আফগানী রহি’মাহুল্লাকে হত্যা করেছিলো, কারণ তিনি
তাঁর মাদ্রাসায় তাওহীদ শিক্ষা দিতেন।
(৮) ইখোয়ানুল মুসলিমিন মুসলিম দেশের
শাসকদের দোষ-ত্রুটি এবং সীমাবদ্ধতা খুঁজে বেড়ায়, সেইগুলো সত্যি হোক বা মিথ্যা হোক,
অনভিজ্ঞ যুবকদের মাঝে ফলাউ করে প্রচার করে তাদের অন্তরে মুসলিম শাসকদের প্রতি ঘৃণা
ও বিদ্বেষ দিয়ে ভর্তি করে।
(৯) ইখোয়ানুল মুসলিমিনের মাঝে রয়েছে
জঘন্য হিজবীয়া বা ফেরকাবাজি। তারা তাদের দলের প্রতি আনুগত্যকে মানুষের সাথে
বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার মানদন্ড বানিয়েছে।
(১০) ইখোয়ানুল মুসলিমিন তাদের দলের
প্রতিষ্ঠাতার দশটি শর্তের উপর ভিত্তি করে “ইখোয়ানী মানহাজে” কাজ করার জন্য বাইয়াত গ্রহণ করে।
এছাড়া তাদের ব্যাপারে আরো কিছু
পর্যবেক্ষণ রয়েছে, যা আমরা পরবর্তীতে উল্লেখ করতে পারবো।”
উৎসঃ আল-ফাতাওয়া আল-জালিয়্যা আ’নিল মানহাজ আদ-দ্বাইয়িয়াহঃ ১০২-১০৪
পৃষ্ঠা।
___________________________________
দেশের সব পাপ মুছে ফেলার জন্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন করা জরুরী?
অনেকে মনে করেঃ “দেশের সব পাপ
মুছে ফেলার জন্যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন করা জরুরী”
> আল্লাহ কি আপনাকে দেশের
সব পাপ মুছে ফেলার দায়িত্ব দিয়েছেন? নাকি আপনার হাতে যেই ক্ষমতা
দিয়েছেন, শুধুমাত্র সে অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করতে বলেছেন?
> দেশের সব পাপ মুছে ফেলার
দায়িত্ব যদি আল্লাহ আপনাকে না দিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি কেনো সারা
দেশের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে টেনে আনতে যাচ্ছেন?
- এইসব হচ্ছে শরিয়তের জ্ঞান
বর্জিত, আবেগী কথা।
“আল্লাহ কারো সাধ্যের বাইরে বোঝা তার উপরে চাপিয়ে দেন না।” সুরা আল-বাক্বরাহঃ ২৮৬।
আল্লাহ আপনাকে যতটুকু ক্ষমতা
দিয়েছেন, সেটা নিয়ে ভাবুন। আল্লাহ কাউকে রাষ্টীয় ক্ষমতা দিয়ে পরীক্ষা করেন, কাউকে না দিয়ে পরীক্ষা করেন। সবাই নিজের নিজের অবস্থান থেকে শরিয়াতের আদেশ-নিষেধ মেনে সফল হওয়ার চেষ্টা করবে। ক্ষমতা অর্জন করা বা না করা সফলতার জন্যে শর্ত নয়। ইউনুস আঃ, ইব্রাহীম
আঃ, ঈসা আঃ...এমন অনেক নবী রাসুলরাও ক্ষমতায়
ছিলেন না, কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব পূর্ণ করে গেছেন। ঠিক তেমনি, আল্লাহ
আমাদের যাকে ক্ষমতা দেন নি, তাদের উচিত ক্ষমতা নয়, বরং সমস্ত ক্ষমতার মালিক আল্লাহর সন্তুষ্টি তালাশ করা।
সকল মানুষ ঈমান আনবেনা, এটাই আল্লাহর ইচ্ছা, কারণ
আল্লাহ আমাদের জীবনকে পরীক্ষা হিসেবে বানিয়েছেন। এই পরীক্ষায় যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে, তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে নেকের জীবন গড়বে,
তারা পুরষ্কৃত হবে। আর যারা আল্লাহকে অবিশ্বাস
করবে, নবী-রসুলদের
অবাধ্য হবে, তারা শাস্তি পাবে।
(১) আর মানবজাতি একই সম্প্রদায়ভুক্ত ছিল। পরবর্তীকালে তারা মতভেদ করল। সুরা ইউনুসঃ ১৯।
(২) আর আল্লাহ যদি চাইতেন তাহলে তোমাদের সবাইকে
তিনি একটি মাত্র উম্মত (বা জাতিতে) পরিণত
করে দিতেন। কিন্তু তিনি তোমাদের যা
দিয়েছেন তা দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে চান। অতএব তোমরা সৎ কাজে পরস্পর প্রতিযোগিতা করো। সুরা আল মায়েদাঃ ৪৮।
(৩) যদি আল্লাহ চাইতেন (সব মানুষই ঈমান আনতে বাধ্য হত)
তবে তারা শেরক করত না (কিন্তু এটা আল্লাহর বিধান
নয়)। (হে নবী!) আমি আপনাকে তাদের
সংরক্ষক করিনি এবং আপনি তাদের অভিভাবক নন। সুরা আনআ’মঃ ১০৭।
(৪) আর তোমার প্রতিপালক যদি চাইতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি সকল
মানুষকে এক উম্মত বানিয়ে দিতেন। কিন্তু তারা সব সময় মতভেদ
করতেই থাকবে। সুরা হুদঃ ১১৮।
এমনকি মুসলমান নামধারী যারা, তাদের মাঝেও কিছু লোক থাকবে যারা মতবিরোধ করবে,
অবাধ্যতা ও পাপাচারে লিপ্ত হয়ে অন্যায় ও বিশৃংখলায় লিপ্ত থাকবে।
(১) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘আমি আমার উম্মাতের
ব্যাপারে পথভ্রষ্ট ইমাম বা নেতাদেরকে ভয় করছি। অচিরেই আমার উম্মাতের কোনো কোনো গোত্র বা সম্প্রদায় প্রতিমা
পূজায় লিপ্ত হবে, এবং আমার উম্মতের
কতগুলো গোত্র মুশরিকদের সাথে যোগ দিবে।’’ আবু দাউদঃ ৪২৫২; ইবনু মাযাহঃ
৩৯৫২; শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানি (রহঃ)
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “তোমরা ইয়াহুদী
ও খ্রীস্টানদের পদে পদে অনুসরণ করবে। এমনকি তাদের মধ্যে কেউ
যদি প্রকাশ্যে তার মায়ের সাথে জেনা করে, তাহলে তোমরাও তা করবে।” বাযযারঃ ১২১০৫।
(৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “আমার উম্মতের
কিছু সংখ্যক লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। তাদের মাথার উপরে গান-বাজনা ও নারী-নৃত্য চলতে থাকবে। আল্লাহ তাদেরকে মাটিতে ধসিয়ে দেবেন। আর তাদেরকে বানর ও শূকরে পরিণত করে দেবেন।” ইবনে মাজাহঃ ২/৩২৪৭।
(৪) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “জেন রাখ! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বে ছিল যারা ছিলো
(ইয়াহুদী এবং খ্রীস্টানরা) তারা ৭২টি দলে বিভক্ত
হয়েছিল, এবং নিশ্চয়ই আমার এই উম্মত (মুসলমানেরা)
৭৩টি দলে বিভক্ত হবে। এদের মাঝে প্রত্যেকটি দল
জাহান্নামে যাবে, শুধুমাত্র একট
দল ছাড়া।”
সাহাবারা (রাঃ) জিজ্ঞেসা করলেন,
“ইয়া রাসূলুল্লাহ, (মুক্তিপ্রাপ্ত) সেই দল
কোনটি?”
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “আজকে আমি এবং আমার সাহাবীরা যার উপরে আছি, সেই পথের উপর যারা থাকবে (তারাই মুক্তি পাবে)।” তিরমিজী ও আবু দাউদ, মিশকাতঃ ১৬৩।
সুতরাং, আপনি যতই আশা করেন না কেনো, বর্তমানে সমস্ত মুসলমানেরা এক হয়ে যাবে, কথিত সবগুলো
ইসলামী দল এক হয়ে যাবে - এটা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুইনা। বরং, ঈসা আঃ আসার
পূর্ব পর্যন্ত মুসলমানদের মাঝে কিছু লোক থাকবে, যারা মুসলমান
দাবী করবে কিন্তু কুরান ও হাদীস মানতে অস্বীকার করবে, কুরান হাদীসকে
অবজ্ঞা করে, পাশ কাটিয়ে নিজে নিজে দল তৈরী করে মুসলিমদের জামাত
থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকবে। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, নিজের ও নিজের পরিবারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন
করা। আর যার যতটুকু সামর্থ্য
আছে সে অনুযায়ী মুসলিম-অমুসলিম সমস্ত
মানব জাতির মাঝে ইসলামের কথা, আল্লাহ ও তার রসুল সাঃ এর কথা মানুষের
কাছে পৌছে দেওয়া। যা করে গেছেন, সমস্ত নবী-রাসুলরা। আপনি কুরানে বর্ণিত সমস্ত নবী-রসুলদের তাদের জাতির প্রতি দাওয়াতের বক্তব্য
দেখুন, সবাই নিজ নিজ জাতির লোকদেরকে আল্লাহর ইবাদতের দিকে আহবান জানিয়েছেন,
যাবতীয় তাগুত ও শিরক থেকে বেচে থাকার আহবান জানিয়েছেন। তাদের মাঝে আল্লাহ তাআ'লা তার ইচ্ছা অনুযায়ী অল্প কিছু নবীকে ক্ষমতা দিয়েছেন, আর অধিকাংশ নবীই ক্ষমতা ছাড়াই তাদের দাওয়াতী কাজ করে গেছেন। কিন্তু কোন নবী এসে এ কথা দাবী করেন নি, লোকদেরক দ্বীনে আনার জন্যে আমাদেরকে প্রথমেই
ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আপনারা কুরান পড়ুন, কুরান বুঝার চেষ্টা করুন। আল্লাহকে ভয় করুন। কুরান না বুঝে, নবী-রসুলদের দাওয়াত না
বুঝে দ্বীনের ব্যপারে আবেগের বশে নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করবেন না, আলেমের পোশাক পড়া অজ্ঞ মুফতি মুহাদ্দিসদের অন্ধভাবে অনুসরণ করবেন না।
সর্বশেষ, নীচের কথাগুলো লক্ষ্য করুনঃ
(১) জাতির লোকদের সংশোধন করার জন্যে প্রথমেই আমাদেরকে ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। (এটা জামাতে
ইসলামী, ইখোয়ানুল মুসলিমিনের মতো দলগুলোর প্রচারিত মতবাদ)।
(২) রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অর্জন করা কিংবা ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সবচাইতে বড়
ইবাদত। এর তুলনায় নামায-রোযা হচ্ছে ছোট ইবাদত বা, ট্রেনিং কোর্সের মতো। এটা আবুল আলা মওদুদীর বক্তব্য।
(৩) ইসলামী আন্দোলন করা ফরয, ইসলামী আন্দোলনের জন্যেই আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন।
(৪) বর্তমান যুগে খলিফা নাই, এটা আমাদের সবচাইতে বড় সমস্যা। খিলাফাহ ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা আমাদের সবচাইতে বড় দায়িত্ব। এটা হিযবুত তাহরীর এবং কথিত জিহাদী দলগুলোর দাওয়াত।
(৫) শরিয়াহ কায়েম করার জন্যে জিহাদ করা ফরয। সুতরাং আমাদেরকে মুসলিম রাষ্ট্র যেইগুলো শরিয়াহ বাস্তবায়ন করছেন
তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে হবে। এটা কথিত জিহাদী দলগুলোর
আকিদাহ।
এই সমস্ত কথা যারা বলে, তারা হচ্ছে আবুল আলা-মওদুদি, হাসান আল-বান্না,
সাইয়েদ কুতুব, ইউসুফ কারযাভীর মতো লোকদের অনুসারী। এদের ব্যপারে সাবধান থাকুন, দ্বীন কায়েম নিয়ে এদের গোমরাহী মতবাদ সম্পর্কে জানুন, তাদের ব্যপারে লোকদেরকে সতর্ক করুন।
___________________________________
সংবাদ
মাধ্যম বা মিডিয়াঃ “ইসলামের
শত্রুদের হাতে শক্তিশালী একটি অস্ত্র”
ইরান ভিত্তিক রাফেজী শিয়াদের
ইংরেজী টিভি চ্যানেল ‘প্রেসটিভি’ (PressTV) বিগত ২৪-শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫
তারিখে একটা সংবাদ প্রচার করেঃ
“Prince Salman convoy
triggered Hajj stampede.”
অর্থঃ সৌদি যুবরাজ সালমানের
গাড়িবহর হজ্জের দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী।
এই মিথ্যা সংবাদটি আজ পর্যন্ত
প্রতারক শিয়ারা তাদের ওয়েব সাইটে বুক ফুলিয়ে প্রচার করছে। নিউজের লিংক –
http://www.presstv.ir/Detail/2015/09/24/430582/Saudi-stampede-hajj-prince-Salman
প্রেসটিভি তাদের রিপোর্টের উৎস
হিসেবে ‘আল-দিয়ার’ নামক একটি আরবী সংবাদপত্রের নাম উল্লেখ করেছে। আল-দিয়ার হচ্ছে বর্তমানে
শীয়াদের দখলে থাকা লেবানন থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকা, যারা ইসলামের
প্রকাশ্য দুশমন, সিরিয়ার আলাভী-শীয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল-‘খবিসের’ কট্টর সমর্থক। সুতরাং দেখা
যাচ্ছে, ‘সৌদি যুবরাজের গাড়ি বহরের কারণে হজ্জের দুর্ঘটনা ঘটেছে’ - এই সংবাদ আসলে ইসলামের দুশমন
রাফেজী ও আলাভী শীয়াদের প্রচারিত একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুইনা, যার
প্রমান ইন শা’ আল্লাহ নিচে আমি আপনাদেরকে দেবো।
রাফেজী শিয়া এবং আলাভী শিয়ারা
তাদের আবির্ভাবের পর থেকে আজ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মুসলিমদেরকে হত্যা করেছে, এবং এখন
পর্যন্ত তারা মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার মুসলিমদেরকে নির্দয়ভাবে হত্যা করে যাচ্ছে।
এই শিয়াদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মক্কা ও মদীনা দখল করে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ এর পরিবর্তে ‘লাব্বাইক ইয়া হুসাইন লাব্বাইক’ তালবিয়া ধ্বনি চালু করা। আল্লাহ
এই সমস্ত মুশরেকদের অনিষ্ট থেকে মুসলিমদেরকে নিরাপদ রাখুন।
যাই হোক, ইসলামের শত্রুরা যাতে মিথ্যা
সংবাদ দিয়ে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সেই জন্য আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা কোন ‘ফাসেক’ (পাপাচারী) মুসলিম ব্যক্তিও যদিও
কোন সংবাদ দেয়, সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা বলেন,
“হে মুমিনগণ! যদি কোন ‘ফাসেক’ (পাপাচারী) ব্যক্তি তোমাদের কাছে
কোন সংবাদ নিসে আসে, তবে তোমরা সেটা পরীক্ষা করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা
কোন জাতির ক্ষতিসাধন করতে উদ্ধত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত
না হও।” সুরা হুজুরাতঃ
৬।
ক্বুরানুল কারীমের এই আয়াত অনুযায়ী
আপনি যদি কোন মুত্তাক্বী (আল্লাহভীরু) মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে, কোন নাস্তিক,
কাফের, মুশরেক, ইয়াহুদী, খ্রীস্টান, মাজুসী (অগ্নিপূজারী) তো পরের কথা, এমনকি একজন
‘ফাসিক্ব’ (পাপী মুসলিম) ব্যক্তিও যদি
আপনাকে কোন সংবাদ দেয়, সেটা যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করা ‘হারাম’ বা নিষিদ্ধ। অথচ, এমন লক্ষ-লক্ষ,
কোটি-কোটি মুসলিম আছে যারা শিয়াদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে প্রচারিত এই মিথ্যা
সংবাদের উপর ভিত্তি করে যুবরাজ সালমান ও সৌদি সরকারকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ ও গালি
দিচ্ছেন, আল্লাহু মুস্তায়ান।
যাই হোক এবার আপনাদের সামনে আমি
শিয়াদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডার ‘হাকীকাত’ তুলে ধরছি বি ইজনিল্লাহি তাআ’লা।
প্রথম কথা হচ্ছে, যুবরাজ মুহাম্মাদ
বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজের যেই গাড়ি বহরের ভিডিও দেখানো হয়েছে প্রেস টিভিতে,
যার কারণে হজ্জের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মিথ্যুকরা দাবী করেছে, সেটা আসলে এই বছরের
কোন ভিডিও নয়। সেটা ২০১২ সালের একটা ভিডিও দেখিয়ে শীয়ারা লোকদেরকে বোকা বানিয়েছে।
অনুরূপভাবে তারা আরেকটি ভিডিও দেখিয়ে দাবী করেছে, হাজীদেরকে সরিয়ে দিয়ে সৌদি
বাদশাহ একা কাবাঘর তাওয়াফ করছেন। আসলে সেই ভিডিও বাদশাহর তাওয়াফ করার কোন ভিডিও
নয়, বরং তখন হাজীদেরকে সরিয়ে দিয়ে কাবার গিলাফ পরিবর্তন করার ভিডিও। এইভাবে শিয়ারা
মিথ্যা কথা বলে সৌদি বিদ্বেষী প্রচারণার অপচেষ্টা করেছে।
কিন্তু মূল প্রশ্ন হচ্ছে, হজ্জের
দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর কারণ কি? এই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ‘পীসটিভি বাংলার’ বক্তা আহমাদ উল্লাহ, যিনি নিজে
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং যার বক্তব্য বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকাতে
প্রকাশিতও হয়েছে।
(২) ঘটনাস্থল অর্থাৎ ২০৪নং সড়কে
কৃষ্ণবর্ণের দীর্ঘদেহী আফ্রিকান ও এরাবিয়ান হাজীদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। আর হজ্জ
বা উমরায় আসা যেকোন লোকই জেনে থাকবেন নাইজেরিয়ান, কেনিয়ান ও অন্যান্য দেশী
কৃষ্ণাঙ্গ হাজীরা সাধারণত অনেক বেশি হুড়োহুড়ি করে চলতে অভ্যস্ত। দুর্ঘটনাস্থলে
তাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়াটাও ভিড়ের ভয়াবহতা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। আর
মৃতদের মধ্যে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়া থেকেও বুঝা যায় যে এই পথে তাদের সংখ্যা
অনেক বেশি ছিল।
(৩) এই পথে ইরানী হাজীদের
গ্রুপগুলোর আধিক্যও চোখে পড়ার মতো ছিল। আমার ধারণা, পুরো পথে প্রায় শতকরা ৩০ জনই
ছিলেন ইরানী হাজী! ইরানী হাজীদের একটি চরিত্র হলো, তারা কখনোই গ্রুপ বিহিন চলাফেরা
করেন না। কোন ইরানীকে বিশেষ করে হজ্জ বা উমরার কোন কাজ সম্ভবত কেউ একা করতে দেখেন
নি। তাদের প্রতিটি গ্রুপকে ঘিরে থাকে শক্তিশালী কিছু লোক। যারা অন্যদেরকে ঠেলাঠেলি
করে হলেও নিজেদের গ্রুপকে বিচ্ছিন্ন হতে দেয় না। ফলে স্বাভাবিক পথ চলা অনেক সময়
রুদ্ধ হয়ে যায়। মিনা ট্রাজেডির ঘটনাস্থ ২০৪নং রোডেও তাদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি
এবং যথারীতি গ্রুপ আকারে। এটিও অতিরিক্ত ভিড় সৃষ্টির অন্যতম কারণ। তাছাড়া বেশ কিছু
লোক ভয়াবহ এই ভিড়ের বিপরীত দিক থেকে আসতে থাকে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোক ছিল
ইরানী শিয়া। তারা কোনরূপ নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই কংকর নিক্ষেপ শেষে ২০৪নং সড়ক
দিয়ে বিপরীত দিক থেকে প্রবেশ করতে থাকে। আল আরাবিয়া চ্যনেল একজন ইরানী কর্মকর্তার
স্বীকারোক্তির বরাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রমাণ স্বরূপ তারা
দৃর্ঘটনার সময়কার একটি ভিডিও ক্লিপও প্রচার করেছে। একারণে অনেকের ধারণা, ইয়েমেনের
ক্ষমতাদখলকারী হুথী শিয়াদের বিরোদ্ধে সৌদি আরবের যুদ্ধের কারণে শিয়াগোষ্ঠি সৌদি
সরকারকে বিপদে ফেলার জন্যও ইচ্ছাকৃতভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। মিশরের
সাবেক স্বাস্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বর্তমানে সৌদিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত
ডাক্তার আবদুল হামীদ ফাউজী মক্কা, মিনা আজিজিয়া ও জেদ্দার বিভিন্ন হাসপাতলে
দুর্ঘটনার স্বীকার মৃত ও চিকিৎসাধীন লোকদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত করেছেন যে,
ঘটনাস্থলে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছে। যার কারণে আশ্চর্যজনক ভাবে বেশিরভাগ
আহত লোকেরই মস্তিষ্ক অনেকটা বিকল হয়ে আছে! এই তথ্যটি তিনি সৌদি বাদশার নিকটও পৌঁছে
দিয়েছেন। সংবাদ বহুল প্রচারিত স্থানীয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘আজেল’ এর।
মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে মাথা গজিয়ে ওঠা ‘শিয়া ফেতনা’ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। আর শিয়াদের
আশ্রয়-প্রশ্রয় ও উস্কানী দেওয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা ইয়াহুদী-খ্রীস্টান শক্তি ইসলামী
শক্তিকে দুর্বল করে রাখতে চায়। সৌদি বাদশাহ সালমান শুরু থেকেই শিয়াদের বিষয়ে কঠোর
অবস্থান নিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই সৌদি নেতৃত্ব নতুন এক চ্যলেঞ্জের মুখোমুখি।
ভিতরে-বাহিরে বর্তমান নেতৃত্বকে কঠিন প্রতিপক্ষের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ সকল
কারণে এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে, খুবই সূক্ষ কোন পরিকল্পনার আলোকে
একটি প্রতিকূল অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে ইরান জাতিসংঘে
তোলপাড় সৃষ্টি করবে।
(৪) প্রচণ্ড ভিড় ও চাপাচাপির মধ্যে
আমরা চলতে থাকি। এরই মাঝে কিছু দুর্বল লোক পেছনের চাপ সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে
লাগলেন। আর ভয়াবহ এই ভিড়ে দু’একজন পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই তাদের আশপাশের লোকেরাও হুমড়ি
খেয়ে তাদের উপরে পড়ে সেখানে পতিত মানুষের স্তুপ সৃষ্টি হয়ে যেতো লাগলো। কারণ,
পেছনের মহাসড়ক থেকে আসা মানুষের স্রোতের চাপে কেউ পড়ে গেলেই পিছনের লোকেরা শরিরের
ভারসাম্য ধরে রাখতে না পেরে তারাও মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে লাগলেন পতিতি লোকদের উপর।
পড়ে যাওয়া মানুষের কারণে যখন আর সামনে এগুনো যাচ্ছিল না তখন আশপাশের মানুষ
সর্বশক্তি দিয়েও দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নি। পেছনের চাপে তারাও একের পর এক পড়ে যেতে
লাগলেন। এভাবে একজন পড়ে গেলে মুহুর্তের মধ্যে তার উপর আরো বহু লোক পড়ে ভয়াবহ
অবস্থার সৃষ্টি হতে লাগলো। এদিকে এমত পরিস্থিতে আশপাশের সকল তাবুর গেটগুলো ছিল
বন্ধ। আমরা বহু চিৎকার করে গেট খুলে পথের বৃদ্ধ ও নারীদের অন্তত ভেতরে প্রবেশের
সুযোগ দিতে বললেও সম্ভবত হুড়োহুড়ি সৃষ্টি হয়ে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির ভয়ে তারা
গেট খোলেনি কেউ। অপরদিকে কর্তব্যরত নিরাপত্তা ও স্বাস্থকর্মিরা এখানে হতাহতের খবর
পেয়ে উদ্ধারের জন্য বিপরীত দিক থেকে একটি এ্যম্বুলেন্স প্রবেশ করানোর ব্যর্থ
চেষ্টা শুরু করলেন। যার ফলে সামনের লোকগুলোর বের হওয়ার পথও অনেকটা রুদ্ধ হয়ে গেলো।
একদিকে সমুদ্রের স্রোত ছোট একটি খালে প্রবাহিত করা হয়েছে, অপর দিকে খালের মুখেও
এ্যম্বুলেন্স প্রবেশের ফলে স্রোত বের হওয়ার সরু পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। আর তখনই কয়েক
মিনিটের মধ্যে পেছন থেকে আসা মানুষের স্রোত থমকে যাওয়া লোকগুলোর উপর একের পর এক
আছড়ে পড়তে থাকে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই রচিত হয়ে গেলো ইতিহাসের বিষাদময় ট্রাজেডিক
উপাখ্যান। যারা আশপাশের তাবুর গ্রীল বেয়ে উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন তারাই কেবল বেঁচে
ছিলেন।
আপনারা স্বচক্ষে দেখুনঃ
কিভাবে শিয়ারা নিরাপত্তা বেষ্টনী
ভংগ করে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করে প্রায় ১৫০০ মুসলিম হত্যার ঘটনার সূত্রপাত
করেছিলো -
https://www.youtube.com/watch?v=gfzJ20fSFEQ
সুতরাং প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা
টিভি ইন্টারনেটে কোন খবর পেলেই সেটা অন্ধের মতো বিশ্বাস করবেন না। মনে রাখবেন ‘মিডিয়া’ সেটা দেশি প্রথম আলো,
ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এটিএন বা চ্যানেল আই হোক, কিংবা বিদেশী বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স
হোক না কেনো, এদের নিয়ন্ত্রন ইসলামের বন্ধুদের হাতে নয়, বরং ইসলামের শত্রুদের
হাতে। এই মিডিয়া দিয়ে সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী এবং মিথ্যাবাদীকেই সত্যবাদী বানানো
হচ্ছে। মিডিয়ার কারসাজি দিয়ে দিনকে রাতে এবং রাতকে দিন বানানো যায়। সেইজন্য আপনারা
দ্বীন শিক্ষা করুন, ক্বুরান ও সুন্নাহ শিক্ষা করুন, যাতে করে আপনি কে সত্যবাদী কে
মিথ্যাবাদী, কোনটা হক্ক আর কোনটা বাতিল সেটা ধরতে পারেন। সর্বশেষ, দুয়া রইলো
আল্লাহ তাআ’লা এই বছরের সকল হাজীদের হজ্জ কবুল করে নিন, যারা হজ্বে দুর্ঘটনাজনিত কারনে
মারা গেছেন আল্লাহ তাদের প্রত্যেক কে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুক এবং পাশাপাশি
যারা যারা এই হজ্জের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন তাদের যেন আল্লাহ জাজায়ে খায়ের
দান করেন (আমিন)।
___________________________________
মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব-৭)
পাক-ভারত উপমহাদেশের অবিস্মরণীয় আলেমে-দ্বীন এবং প্রখ্যাত সংগঠক আল্লামাহ আব্দুল্লাহিল কাফী আল-কুরায়শী রহি’মাহুল্লাহ জামাতে ইসলামী সম্পর্কে বলেছিলেন,
“(আবুল আলা) মওদুদী সাহেব ইংরেজী শিক্ষিত মানুষ, তার হাদীসের জ্ঞান
তেমন নেই। এ কারণে
তার অনুসারীদের মধ্যে বেশিরভাগ ইংরেজী শিক্ষিত লোক।”
উৎসঃ “একটি পত্রের জওয়াব” নামক বই থেকে পরিমার্জিত।
আবুল আলা মওদুদী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসের জ্ঞান অর্জন না করেই ক্বুরআনের
তাফসীর লিখতে গিয়ে মারাত্মক বিভ্রান্তির শিকার হয়েছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় মওদুদীর আদর্শে উজ্জীবিত
হয়ে বর্তমান যুগের জামাত-শিবির কর্মীরা ক্বুরআন ও হাদীস শিক্ষা না করেই রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম
কিভাবে করতে হবে, তা নিয়ে বড় বড় লেকচার দেওয়া আরম্ভ করেছে।
আমাদের “মওদুদী মতবাদ” এর প্রথম পর্বে ছাত্র শিবিরের
সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদের গোমরাহী সম্পর্কে
লিখেছিলামঃ
“নামায, রোযা, হজ্জ,
যাকাতের মূল উদ্দেশ্য (central point) হচ্ছে আক্বিমুদ-দ্বীন।”
জনাব মাসুদ সাহেব এই কথা বলার পর তার এই
গোমরাহীর সপক্ষে দলীল হিসেবে সুরা মুযযাম্মিলের প্রথম পাচটি আয়াত তিলাওয়াত করার চেষ্টা
করেন।
আয়াতগুলো হচ্ছেঃ
بِسۡمِ اللّٰہِ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ
یٰۤاَیُّہَا الۡمُزَّمِّلُ ۙ﴿۱﴾
قُمِ الَّیۡلَ اِلَّا قَلِیۡلًا ۙ﴿۲﴾
نِّصۡفَہٗۤ اَوِ انۡقُصۡ مِنۡہُ قَلِیۡلًا ۙ﴿۳﴾
اَوۡ زِدۡ عَلَیۡہِ وَ رَتِّلِ الۡقُرۡاٰنَ تَرۡتِیۡلًا ؕ﴿۴﴾
اِنَّا سَنُلۡقِیۡ عَلَیۡکَ قَوۡلًا ثَقِیۡلًا ﴿۵﴾
আপনারা লক্ষ্য করে দেখুন, ২-৫ নং পর্যন্ত চারটি আয়াতের সবার শেষের হরফের সাথে দুই যবর যুক্ত আছে। সুতরাং এই আয়াতগুলোর শেষে আপনি যদি ‘ওয়াক্বফ’ করতে চান, অর্থাৎ দম ফেলতে চান বা থামতে
চান, তাহলে নিয়ম হচ্ছেঃ আপনাকে দুই যবরের পরিবর্তে এক যবর এক আলিফ পরিমাণ লম্বা
করে টেনে পড়তে হবে। দুই যবর যুক্ত হরফের ক্ষেত্রে ওয়াক্বফ করার এই নিয়মকে “মাদ্দে এওয়াজ” বলা হয়।
সুতরাং, শুদ্ধ উচ্চারণ হবেঃ
ক্বুমিল-লাইলা ইল্লা ক্বলীলা-।
নিছফাহু আভীনক্বুছ মিনহু ক্বলীলা-।
...
কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, জনাব মাসুদ সাহেব
চারটি আয়াতের প্রত্যেকটির শেষে ওয়াক্বফ করতে গিয়ে সাক্বিন হিসেবে উচ্চারণ করেছেন।
চিন্তাশীল পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমাদের
প্রশ্ন, যেই ছেলে
- রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশ মোতাবেক দাঁড়ি
রাখেনা, কেটে-ছেটে ফ্যাশানের দাঁড়ি রাখে,
- ক্বুরআন থেকে (সুরা মুযযাম্মিলের) পাঁচটি ছোট ছোট আয়াত তিলাওয়াত করতে
গিয়ে একটানা কয়েকটি “লাহনে জলী” (ক্বিরআতে এমন প্রকাশ্য ভুল যার কারণে অর্থের
বিকৃতি ঘটে),
- তদুপরি ক্বুরআনের আয়াতের
মনগড়া অপব্যাখ্যা করে,
এমন ব্যক্তি কি করে একটি সংগঠনের সভাপতি
হতে পারে?
যেই সংগঠনের সভাপতি এতো বড় জাহেল, তাদের
অনুসারীদের অবস্থা কি পরিমাণ শোচনীয় হতে পারে?
এমন লোক, যারা নিজেদের সাড়ে তিন হাত বডির
উপরেই দ্বীন কায়েম করেনা, তারা কিভাবে সমাজে “দ্বীন কায়েম” করবে?
সর্বশেষ, এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে আমাদের
উপদেশ,
দ্বীন কায়েম নিয়ে বড় বড় লেকচার দেওয়া বন্ধ
করে বাড়ির পাশের মসজিদ বা মকতবে বসে শুদ্ধরূপে ক্বুরআন পড়ার সবক নিন।
___________________________________
আবু হুরায়রার দুই ব্যাগ হাদীস নিয়ে বাতেনী মতালম্বীদের বিভ্রান্তি
কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম (আল্লাহ তাঁকে সঠিক পথ দেখান) আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর দুই ব্যাগ
হাদীস নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তিনি নাকি আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর বর্ণনা না করা হাদীস নিয়ে
গবেষণা করে খুঁজে পেয়েছেন। আরেক বিভ্রান্ত জামাতী বক্তা তারেক মনোয়ার তো হাদীসে ট্রাম্পের
নাম আছে বলে জাল হাদীস বর্ণনা করা আরম্ভ করেছে। আসুন দেখি আসলে কি হাদীস, আর সেই হাদীসের
অর্থ কি।
وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ ﷺ وِعَاءَيْنِ فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ فِيْكُمْ وَأَمَّا الْآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ يَعْنِى مَجْرَى الطَّعَامِ. رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ
অর্থঃ আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু
আ’নহু
হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “আমি রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে দুই ব্যাগ
(দুই প্রকারের ইলম) শিখেছি। এর মধ্যে এক ব্যাগ আমি তোমাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি, কিন্তু
অপর ব্যাগের ইলম যদি আমি তোমাদেরকে বলে দিই, তাহলে আমার এই গলা কাটা যাবে।” সহীহ বুখারীঃ ১২০।
ব্যাখ্যা
শায়খ উবায়দুল্লাহ
মুবারকপুরী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, হাদীসে আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু কর্তৃক দুই ব্যাগ ইলম শিক্ষার কথা উল্লেখ আছে। দুই ব্যাগ
ইলম শিক্ষা কথাটির মর্মার্থ হচ্ছে, যদি সে ইলম লিখা হয় তাহলে দুইটি ব্যাগ পূর্ণ হয়ে
যাবে। এক পাত্র ইলমকে তিনি মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়েছেন। অন্য পাত্রের ইলম যা তিনি মানুষের
সামনে প্রকাশ করেননি; তা মূলত ফিতনাহ্ (ফিতনা) ও ব্যাপক যুদ্ধের খবরসমূহ, শেষ যামানাতে
অবস্থাসমূহের বিবর্তন এবং যে ব্যাপারে রসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম কতিপয় কুরায়শী নির্বোধ ক্রীতদাসের হাতে দীন নষ্ট হওয়ার খবর দিয়েছেন।
আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
কখনো কখনো বলতেন, “আমি চাইলে
তাদের নামসহ চিহ্নিত করতে পারি।”
অথবা আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু কর্তৃক গোপন করা ইলম দ্বারা ঐ হাদীসসমূহও হতে পারে, যেই
গুলোতে অত্যাচারী আমীরদের নাম, তাদের অবস্থাসমূহ ও তাদের যামানার বিবরণ আছে। আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু কখনো কখনো এদের কতক
সম্পর্কে ইশারা করতেন তাদের থেকে নিজের ওপর ক্ষতির আশংকায় তা স্পষ্ট করে বলতেন না যেমন
তাঁর উক্তি, “আমি ষাট দশকের মাথা ও তরুণদের নেতৃত্ব থেকে আল্লাহর কাছে
আশ্রয় চাই।”
আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
উল্লিখিত উক্তি দ্বারা ইয়াযীদের খিলাফাতের
দিকে ইশারা করতেন, কেননা তার খিলাফাত ছিল ষাট হিজরী সন। আল্লাহ আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
দুয়াতে সাড়া দিলেন। অতঃপর আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
ষাট হিজরীর এক বছর পূর্বেই মারা যান।
ইবনুল মুনীর রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “বাতেনী
সম্প্রদায় এই হাদীসটিকে বাতিলপন্থীদের সঠিক বলার কারণ স্বরূপ উপস্থাপন করে থাকে। যেমন
তারা বিশ্বাস করে, “শারীআতের একটি বাহ্যিক ও একটি আভ্যন্তরীণ দিক রয়েছে”, এই
উক্তির মাধ্যমে ঐ বাতিলপন্থীদের অর্জিত বিষয়টি হলো দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাওয়া।
ইবনুল মুনযীর রহি’মাহুল্লাহ বলেন, আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
তার উক্তি- قطع দ্বারা
উদ্দেশ করেছেন, অত্যাচারী ব্যক্তিরা যদি আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু কর্তৃক তাদের দোষ-ত্রুটি
বর্ণনা ও তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেয়ার কথা জানতে পারে তাহলে তার মাথা কেটে নিবে।
এ বিশ্লেষণটি ঐ কথাকে আরো জোরদার করছে যে, আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর গোপন
করা বিষয়টি যদি শারী‘আতী কোন হুকুম-আহকাম হতো তাহলে তা গোপন করা বৈধ হতো না।
কারণ তিনি এমন বাক্য উল্লেখ করেছেন যা ইলম গোপনকারী ব্যক্তির নিন্দা জ্ঞাপন করে।
ইবনুল মুনযীর ছাড়াও অন্য আরেকজন বলেছেন, আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু তার গোপন করা ইলম
সাধারণ ব্যক্তিদের কাছে ব্যক্ত করা থেকে বিরত থেকেছেন, বিশেষ ব্যক্তিদের কাছে নয়। অতএব
বাতিলপন্থীরা কিভাবে এর দ্বারা দলীল উপস্থাপন করছে যে, শারী‘আতে এক
প্রকার বাত্বিনী ইলম আছে? কিংবা আমরা যা জানি আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু তার গোপন করা বিষয়
প্রকাশ করেননি। অতএব আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু যা গোপন করেছেন বাতিলপন্থীরা তা কোথা থেকে জানতে পারলো?
এরপরও যে ব্যক্তি এ ধরনের দাবী করবে তার উচিত সে ব্যাপারে দলীল পেশ করা।
উৎসঃ মিরআতুল
মাফাতীহ শারহু মিশকাতুল মাসাবীহ।
___________________________________
ক্বুরআন ও হাদীসে মিছিল করার কোন দলীল আছে?
উত্তরঃ না, নেই।
সম্প্রতি (নভেম্বর, ২০২০) ভ্রষ্ট পথের পথিক কাযী মুহাম্মদ
ইব্রাহীম মিছিল করা সম্পর্কে দুইটি ভুয়া দলীল উপস্থাপন করেছেন।
কাযী ইব্রাহীমের বক্তব্যরে লিংক -
https://youtu.be/y0a246WruNk
এমনকি তিনি
সালাফী দ্বাইয়ী যারা মিছিল করাকে প্রত্যাখ্যান করেন তাঁদেরকে কটাক্ষ করে বলেছেন, “তারা মক্কা মদীনাতে বসে নাকি মিছিল করার
পক্ষে কোন হাদীস খুঁজে পায়না!”
https://youtu.be/7SFtczag2zA
কাযী ইব্রাহীমের
বিভ্রান্তির জবাবঃ
কাযী মুহাম্মদ ইব্রাহীমের উপস্থাপিত দুইটি দলীলের বাস্তবতা
তুলে ধরা হলো।
=> (এক)
ভ্রষ্ট পথের দিকে আহবানকারী কিছু বক্তা এবং লিখকেরা প্রায়শই মিছিল করা সম্পর্কে হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু সম্পর্কে একটা হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করে।
আমরা সেই হাদীসের সনদ এবং সেটা কতটুকু নির্ভরযোগ্য তা যাচাই করে দেখবো ইন শা আল্লাহ।
মূল হাদীসের অনুবাদঃ
মুজাহিদ রহি’মাহুল্লাহ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস
রাদিয়ল্লাহু আ’নহুমা হতে বর্ণনা করেছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, আমি উমর বিন খাত্তাব
রাদিয়ল্লাহু আ’নহুকে জিজ্ঞেস করলাম, “কী কারণে
আপনাকে ‘ফারূক’ বা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী এই উপাধি দেওয়া হয়েছিলো।”
তখন উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু আমাকে বললেন, “আমার তিনদিন পূর্বে
হযরত হামযাহ রাদিয়ল্লাহু আ’নহু মুসলিম হয়েছিলেন। তারপর তিনি তাঁর
ইসলাম গ্রহণের ঘটনা বর্ণনা করে শেষে বললেন যে, আমি যখন মুসলিম হলাম তখন আমি বললাম
হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম!আমরা কি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত নই, যদি
জীবিত থাকি কিংবা মৃত্যুবরণ করি?”
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন, “নিশ্চয়ই। সেই সত্ত্বার শপথ
যাঁর হাতে আমার জীবন! তোমরা যদি জীবিত থাক কিংবা মৃত্যুমুখে পতিত হও তাহলে তোমরা
সত্যের উপরেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছ।”
উমর রাদিয়ল্লাহু আ’নহু বলেন, “তখন আমি
সকলকে লক্ষ্য করে বললাম, (আমাদের ইসলামের) গোপনীয়তার আর কী প্রয়োজন আছে? সেই সত্ত্বার শপথ!
যিনি আপনাকে সত্য সহকারে প্রেরণ করেছেন আমরা অবশ্যই গোপনীয়তা পরিহার করে বাইরে
যাব।
তারপর আমরা দুইটি সারি বেঁধে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে দুই
সারির মধ্যে নিয়ে বাইরে এলাম। এক সারির অগ্রভাগে ছিলেন হযরত হামযাহ রাদিয়ল্লাহু আ’নহু আর
অন্য সারির অগ্রভাগে ছিলাম আমি। আমাদের চলার কারণে রাস্তায় যাঁতার আটার মতো হালকা
ধূলি কণা উড়ে যাচ্ছিল। এভাবে যেতে যেতে আমরা মসজিদুল হারামে গিয়ে প্রবেশ করলাম।
উমর রাদিয়ল্লাহু আ’নহু বলেছেন, “ক্বুরাইশগণ যখন আমাকে এবং হামযাহকে মুসলিমদের সঙ্গে দেখল
তখন মনে মনে তারা এত আঘাতপ্রাপ্ত হল যে, ইতিপূর্বে আর কখনো হয়নি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সেই দিনই আমার উপাধি দিয়েছিলেন ফারুক্ব
বা (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী)।”
হাদীসের উৎস এবং সনদঃ
(১) ইমাম আবু নুয়াইম রহি’মাহুল্লাহ
তাঁর “আল-হিলইয়া” গ্রন্থের প্রথম খন্ডের ৪০ পৃষ্ঠাতে
তাঁর নিজস্ব সনদে এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন। হাদীসের সনদে রাবীগণের নামঃ
ইমাম আবু নুয়াইম রহি’মাহুল্লাহ বলেন,
মুহাম্মদ ইবনে আহমাদ বিন হাসান আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, মুহাম্মাদ ইবনে উষমান
বিন আবি শায়বাহ বর্ণনা করেছেন, আব্দুল হামীদ বিন সালিহ বর্ণনা করেছেন, মুহাম্মাদ
ইবনে আবান “ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ”
থেকে, “ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ”
আবান বিন সালিহর কাছ থেকে, আবান বিন সালিহ মুজাহিদের কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন,
মুজাহিদ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়ল্লাহু আ’নহুমার
কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন....।”
(২) ইমাম ইবনে জাওযী রহি’মাহুল্লাহ
তাঁর “তারীখে উমার বিন খাত্তাব রাদিয়ল্লাহু আ’নহুর” ৬-৭ পৃষ্ঠাতে এই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন।
(৩) আল-হা’ফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ
এই ঘটনা তাঁর “আল-ইসাবা” গ্রন্থে মুহাম্মাদ ইবনে উষমান বিন আবি
শায়বাহর কিতাবের বরাত দিয়ে এবং তাঁর “ফাতহুল বারী”-তে
আল-বাযযার-এর বরাতে বর্ণনা করেছেন।
(৪) এছাড়া আধুনিক যুগের আলেমদের মধ্যে আল্লামাহ শফিউর রহমান
মুবারকপুরী রহি’মাহুল্লাহ রচিত বিখ্যাত সীরাত গ্রন্থ “আর-রাহীকুল
মাখতুমে” এই ঘটনা নকল করেছেন।
এই হাদীসের সনদ কতটুকু নির্ভরযোগ্য?
এই হাদীস “মুনকার” (বাতিল
বা পরিত্যাক্ত)। এই হাদীস দলীল হিসেবে পেশ করা জায়েজ নয়।
এই হাদীসের সমস্যা মূলত “ইসহাক্ব
ইবনে আব্দুল্লাহ”কে কেন্দ্র করে। আল-মিযযী রহি’মাহুল্লাহ
তাঁর “তাহযীব আল-কামাল”-এ উল্লেখ করেছেন, তার
পুরো নাম হচ্ছে ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়া। এই হাদীস ইসহাক্ব ইবনে
আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়া আবান বিন সালিহর কাছ থেকে বর্ণনা করেছেন। জারহ ওয়া
তাদীলের ইমামগণ ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়া সম্পর্কে যা বলেছেন, তা
বর্ণনা করা হলো।
(১) ইমাম নাসায়ী রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “ইসহাক্ব
ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়ার হাদীস মুনকার (পরিত্যাক্ত)।” আদ-দুআ’ফা ওয়াল
মাতরুকিনঃ ৫০নং রাবী।
(২) হা’ফিয ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “ইমাম আন-নাসায়ী রহি’মাহুল্লাহ শুধুমাত্র
তখনই কোন রাবীর হাদীস বাতিল করতেন, যখন সমস্ত আলেমগণ তাকে পরিত্যাগ করেছেন।” শারহুন নুখবাতুলঃ ৬৯ পৃষ্ঠা।
(৩) ইমাম আল-বুখারী রহি’মাহুল্লাহ
ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়া সম্পর্কে বলেছেন, “(মুহাদ্দিসগণ)
তাকে বর্জন করেছেন।” আদ-দুআ’ফা আল-কাবীরঃ ২০নং রাবী।
(৪) ইমাম দারা ক্বুতনী রহি’মাহুল্লাহ
ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়া সম্পর্কে বলেছেন, “(মুহাদ্দিসগণ)
তাকে বর্জন করেছেন।” আদ-দুআ’ফা ওয়াল মাতরুকিনঃ ৯৪নং রাবী।
(৫) ইমাম ইবনে হিব্বান রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়া হাদীসের সনদ উল্টা
পালটা করতেন। তিনি মুরসাল হাদীসকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কথা
বলে চালিয়ে দিতেন। ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ
তার হাদীস গ্রহণ করতে নিষেধ করতেন।”
আল-মাজহুরিনঃ ১/১৪১, দার আস-সুমাঈ ছাপা, ২০০০ খ্রীস্টাব্দ।
(৬) ইবনে আবি হাতিম রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “আমি আমার পিতার কাছ থেকে শুনেছি, ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ
ইবনে আবি ফারওয়ার হাদীস মুনকার (পরিত্যাক্ত)।” আল-জারহ
ওয়া তাদীলঃ ২/২২৮, ৭৯২ নং রাবী।
(৭) ইমাম ইয়াইয়াহ ইবনে মাঈন রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়া কিছুই না, সে একজন
মিথ্যাবাদী।” আল-জারহ ওয়া তাদীলঃ ২/২২৮, ৭৯২ নং রাবী।
(৮) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “আমি মনে করি ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়ার কাছ
থেকে হাদীস বর্ণনা করা জায়েজ নয়।” আল-কামিলঃ ১/৫৩০-৫৩৫।
(৯) ইমাম মালিক রহি’মাহুল্লাহ ইসহাক্ব
ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়ার হাদীস লিখতেন না। আল-কামিলঃ ১/৫৩০-৫৩৫।
উপরের এই দীর্ঘ আলোচনা থেকে স্পষ্ট, উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
সম্পর্কে ইসহাক্ব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আবি ফারওয়ার বর্ণিত উপরোক্ত হাদীস মুনকার বা
বাতিল। এটা কোন দলীল হতে পারেনা।
=> (দুই)
এছাড়া কাযী মুহাম্মদ ইব্রাহীম মিছিল করার দলীল খুঁজতে গিয়ে
সুরা তোওবার ১২০-১২১ নাম্বার আয়াত উল্লেখ করে বলেন, এই আয়াত অনুযায়ী কাফিরদের মনে
ভয় ধরানোর উদ্দেশ্যে মিছিল করলে সেটা আল্লাহর কাছে বড় নেক আমল বলে গণ্য হবে!
- সুরা তোওবার ১২০-১২১ নাম্বার আয়াতে তাবুক যুদ্ধে
মুজাহিদদের জিহাদের উদ্দেশ্যে সফরের সময় দৃপ্ত পদক্ষেপে হাঁটা এবং উপত্যকা
অতিক্রম করা, যার কারণে কাফিরদের মনে ভয়ের উদ্রেক হয়, তাকে নেক আমল বলে উল্লেখ করা
হয়েছে। একথা সকলের জানা, জিহাদের উদ্দেশ্যে হাঁটা আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি
আমল। এমনকি এক হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর রাস্তায় (অর্থাৎ জিহাদের জন্য) যে পায়ে
ধূলিবালি লাগে তা জাহান্নামে যাবেনা!
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, মিছিল আর জিহাদ তো এক জিনিস না। জিহাদ
ইসলামের সবচাইতে উঁচু মানের একটা ইবাদত। আর মিছিল হচ্ছে আধুনিক যুগে কাফিরদের
উদ্ভাবিত একটা কর্ম, যার দ্বারা নানারকম ফিতনা ফাসাদের সৃষ্টি হয়।
“মিছিল করা
জিহাদ” - এই কথা কোন অতি উৎসাহী আবেগী মানুষতো দূরের কথা, কোন
পাগলেও বলবে কিনা সন্দেহ।
- মিছিল করলে কাফিরদের মনে ভয়ের উদ্রেক হয় না। বরং প্রকৃত
বাস্তবতা হচ্ছে, ইসলামী আন্দোলন, তোওহিদী জনতার ঢল নামে জাহিল লোকদের দ্বারা
পরিচালিত বিশৃংখলায় পূর্ণ মিছিল নামক ফেতনা দ্বারা মুসলমানদের যে মারাত্মক ক্ষতি
হয়, এটা দেখে কাফির গোষ্ঠী ভয় পায়না; বরং হাসে। এমন তিনটা উদাহরণ আমি আপনাদের
সামনে তুলে ধরছি -
(১) কথিত আরব বসন্তঃ
হোসনি মুবারকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হিসেবে কিছু
অপরিণামদর্শী লোকেরা ৯-ই ফেব্রুয়ারী, ২০১১ সালে মিশরের তাহরির স্কয়ারে সরকার
বিরোধী মিছিল আরম্ভ করে। কালক্রমে তা ব্যাপক আকার ধারণ করে যে, হোসনি মুবারক
সরকারের পতন হয়। ইয়াহুদী এবং খ্রীস্টান গোষ্ঠী মিডিয়ার মাধ্যমে এই আন্দোলনকে
ব্যাপকভাবে উস্কানি দিয়েছিলো।
আরব বসন্ত নামক সেই ষড়যন্ত্রে হাজার হাজার মুসলমানদের
জীবনহানি এবং রক্তপাতের চূড়ান্ত পরিণতি কি হয়েছিলো? মুসলমানদের রক্ত নিয়ে খেলা করে
ইখোয়ানীরা মিশরীয়দেরকে এক সৈর শাসক থেকে আরেক সৈর শাসকের খপ্পরে ফেলেছে।
(২) ২০১২ সালের জুন মাসে ইয়াহুদী এবং খ্রীস্টানরা
ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে বিদ্রুপ করে একটি ইসলাম বিদ্বেষী
সিনেমা বের করে। এর বিরুদ্ধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলমানেরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। এই
সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু জাহিল লোক একপাল আবেগী মুসলমানদেরকে রাস্তায় নামিয়ে
মিছিল, বিক্ষোভ, কাফির দেশ সমূহের দূতাবাস ঘেরাও ও আক্রমনের সহিংসতায় লিপ্ত করে।
এর ফলশ্রুতিতে মুসলমানদের দেশে মুসলমান নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে পাকিস্থানে ২৩ জন,
আফগানিস্থানে ১২ জন, ইয়েমেনে ৪ জন, তিউনিসিয়ায় ৪ জনসহ সারা বিশ্বে ৫০ জনের বেশি
মুসলমান নিহত হয় এবং আরো ৭০০ জনের বেশি মুসলমান আহত হয়।
প্রশ্ন হচ্ছে, এতো এতো মুসলমানদের জীবন এবং রক্ত দিয়ে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিয়ে বিদ্রুপকারী ইয়াহুদী খ্রীস্টানদেরকে
তাদের কৃত অপকর্মের বিন্দু পরিমাণ শাস্তি দেওয়া সম্ভব হয়েছিলো? নাকি তাদের কোন
ক্ষতি হয়েছিলো?
এই সমস্ত মিছিলে কাফিরদের কোন ক্ষতি হয়না, তারা এইগুলো নিয়ে
কখনোই চিন্তিত হয়না।
(৩) হেফাজতের আন্দোলনঃ
২০১৩ সালে আওয়ামী সেকুলারদের পৃষ্ঠপোষকতায় নাস্তিকদের
উত্থানের বিপরীতে হেফাজতে ইসলাম মাঠে নাম। লং মার্চ, মিছিল, ঢাকা অবরোধের কর্মসূচী
দেয়। পরিণতি কি হয়েছিলো?
কতগুলো নিরপরাধ মুসলমানের জীবন দানের মাধ্যমে ৫-ই মে
অপমানজনকভাবে তাদের এই কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘটানো হয়েছিলো। ঘটনা এখানেই সীমাবদ্ধ
না। ইসলামকে ভালোবেসে যারা জীবন দিয়েছিলো, তাদের রক্ত বিক্রি করে হেফাজতের মূর্খ
এবং লোভী কিছু নেতারা নিজেদের পেট ভর্তি করেছে।
(৪) সর্বশেষ, এই কিছুদিন পূর্বে ২০১৯ সালে ভোলাতে
নাস্তিকদের বিরুদ্ধে মিছিলের পরিণতি কি হয়েছিলো?
গোল্ড ফিশের মতো যাদের মেমোরি তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেওয়ার
জন্য ভোলার ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত দেখুন এই পোস্টে -
“ইসলাম নয়, ইসলামের নামে রাজনীতি”
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3218463574853034&id=125167817515974
মিছিলের পক্ষে যারা কথা বলে, এরা এতোটা বোকা হয়
কি করে?
এরা কি চায়, এইভাবে মুসলমানেরা একের পর এক ইস্যু নিয়ে বেকার
মিছিল করবে আর নিরপরাধ মুসলমানদের জীবন যাবে? আর তারা মুসলমানদের আবেগকে কাজে
লাগিয়ে নিজেদেরকে নেতার আসনে নিয়ে যাবে?
নেতৃত্ব লোভী এই সমস্ত মূর্খ বক্তা এবং লিখকদের থেকে
সাবধান!
সর্বশেষ, বিক্ষোভ মিছিল, প্রটেস্ট বা ডেমনস্ট্রেশান
আয়োজন করার কি হুকুম?
এই প্রশ্নের উত্তরে আধুনিক যুগের আট জন প্রখ্যাত
ফক্বীহ ও মুহা’দ্দিষের ফতোয়ার অনুবাদঃ
https://www.facebook.com/1440162482922579/posts/2807125359559611/
___________________________________
দেশের জনগণ খারাপ হয়ে গেলে তাদের উপর আযাব হিসেবে সবচেয়ে
খারাপ লোকদেরকে তাদের শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়।
মহান আল্লাহর বাণীঃ
وَكَذَٰلِكَ نُوَلِّي بَعۡضَ ٱلظَّٰلِمِينَ بَعۡضَۢا بِمَا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ١٢٩
“আর এভাবেই আমি যালিমদের কতককে কতকের বন্ধু
বানিয়ে দেই, তারা যা অর্জন করত তার কারণে।” সুরা আনআ’মঃ ১২৯।
আয়াতের তাফসীরঃ
(১) সুলায়মান ইবনে মিহরান আল-আ’মাশ রহি’মাহুল্লাহ একজন প্রখ্যাত তাবেয়ী বিদ্বান
ছিলেন, যিনি হাদীসের রাবী এবং আলেম হিসেবে প্রসিদ্ধ। তাঁর জন্ম হয়েছিলো কুফাতে ৬১
হিজরী সনে, আর মৃত্যু হয়েছিলো ১৪৭ হিজরী সনে। সাহাবারা সুরা আনআ’মের ১২৯-নং হাদীসের অর্থ বা ‘তাফসীর’ কি বুঝেছিলেন, তা সাহাবাদের থেকে আল-আ’মাশ রহি’মাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন।
মানসুর ইবনে আবি আল-আসওয়াদ রহি’মাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন। আমি আল-আ’মাশ রহি’মাহুল্লাহকে আল্লাহ তাআ’লা এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
“আর এভাবেই আমি যালিমদের কতককে কতকের বন্ধু
বানিয়ে দেই, তারা যা অর্জন করত তার কারণে।” সুরা আনআ’মঃ ১২৯।
আপনি এই আয়াত সম্পর্কে (সাহাবাদের) কাছ
থেকে কি শুনেছেন?”
উত্তরে আল-আ’মাশ রহি’মাহুল্লাহ বললেন, “আমি তাঁদেরকে (অর্থাৎ সাহাবাদেরকে) বলতে
শুনেছি, “যদি জনগণ খারাপ হয়ে যায়, তাহলে তাদের মধ্যে সবচাইতে খারাপ
লোকদেরকে তাদের উপর শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হবে।” হিলইয়াতুল আওলিয়াঃ ৫/৫০।
(২) ইমাম ইবনে কাসীর রহি’মাহুল্লাহ (জন্ম ৭০২ হিজরী, মৃত্যু ৭৭৪ হিজরী),
তিনি বলেছেন, “এই আয়াতে কারীমার অর্থ হচ্ছে, যেইভাবে আমি ঐ ক্ষতিগ্রস্ত মানবদের বন্ধু তাদেরকে
পথভ্রষ্টকারী জ্বিন ও শয়তানদেরকে বানিয়েছি, তেমনিভাবে যালিমদের মধ্য হতে এককে অপরের
বন্ধু বানিয়ে দেই এবং একে অপরের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়। আর আমি তাদের অত্যাচার, দুষ্টামি
এবং বিদ্রোহের প্রতিফল একে অপরের দ্বারা প্রদান করিয়ে থাকি।”
(৩) শায়খ সালাহউদ্দিন ইউসুফ রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৪৪২ হিজরী), তিনি এই
আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন, “(আয়াতে উল্লেখিত) বন্ধু শব্দের একাধিক অর্থ বর্ণিত হয়েছে। একটি
অর্থ হচ্ছে, যেইভাবে আমি মানুষ ও জ্বিনদেরকে একে অপরের সঙ্গী ও সাহায্যকারী বানিয়েছি,
(যেমন, পূর্বের আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে), অনুরূপ আচরণ আমি অত্যাচারীদের সাথেও করি। একজন
যালেমকে অপর যালেমের উপর (প্রবল বা শক্তিশালী করে) চাপিয়ে দিই। আর এইভাবে একজন অত্যাচারী
অপর অত্যাচারীকে ধ্বংস করে এবং এক যালিমের প্রতিশোধ অপর যালিম দ্বারা নিয়ে নিই। এই
আয়াতের আরেকটি অর্থ হচ্ছে, জাহান্নামে তাদেরকে একে অপরের কাছাকাছি রাখবো।” তাফসীর আহসানুল বায়ান।
(৪) শায়খ আবু বকর জাকারিয়া হা’ফিজাহুল্লাহ এই আয়াত ব্যাখ্যা করে লিখেছেন,
“শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া, বন্ধু বানিয়ে
দেওয়া। যারা তাদেরকে তাদের কর্মের কারণে পথভ্রষ্টতার দিকে চালিত করবে। আব্দুল্লাহ
ইবন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা, ইবন যায়েদ, মালেক ইবনে দীনার রহিমাহুমুল্লাহ প্রমূখ
মুফাসসিরীন থেকে এই অর্থের দিক দিয়ে আয়াতের তাফসীর এরূপ বর্ণিত আছে যে, “আল্লাহ তাআ’লা একজন যালিমকে অপর যালিম জনগোষ্ঠীর উপর
শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেন, এবং এইভাবে একদল লোককে অপর লোকের হাতে শাস্তি দেন। তাদের
অপরাধের কারণে আল্লাহ তাআ’লা তাদের উপর এমন কাউকে বসাবেন, এমন কাউকে সাথে জুড়ে দেবেন
যারা তাদেরকে হক পথে চলা থেকে দূরে রাখবে, হক পথের প্রতি ঘৃণা ছড়াবে। খারাপ কাজের
প্রতি উৎসাহ দেবে। এভাবেই মানুষের মধ্যে যখন ফাসাদ ও যুলুমের আধিক্য হয়, আর আল্লাহর
ফরয আদায়ে মানুষের মধ্যে গাফিলতি সৃষ্টি হয়, তখনই আল্লাহ্ তাআ’লা মানুষের উপর তাদের পাপ এবং সীমা লংঘনের
শাস্তিস্বরূপ এমন কাউকে বসিয়ে দেন, যারা তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করবে।”
বিস্তারিত দেখুন তাফসীর ইমাম বাগাভী রহি’মাহুল্লাহ, তাফসীর ইবনে কাসীর রহি’মাহুল্লাহ, তাফসীর সা’দী, শায়খ
আব্দুর রহ’মান ইবনে নাসির আস-সা’দী রহি’মাহুল্লাহ।
___________________________________
সব দোষ শুধু রাজা-বাদশাহদের...গালি দেওয়া ছাড়া আমাদের কি করার আছে?
(১) বর্তমান যুগের অনেক আবেগী মুসলমানেরা মনে করে, অমুক বাদশাহ
সমস্ত নষ্টের মূল। অমুক বাদশাহ ঠিক নেই বলে আজকে ফিলিস্থিনে
মুসলমানেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, অমুক বাদশাহর কারণেই ইরাক, আফগানিস্থান ধ্বংস হলো, অমুকের কারণে মায়ানমারের মুসলমানেরা
দুঃখে আছে।
এইভাবে ইলম থেকে বঞ্চিত একশ্রেণীর মুসলমানেরা
বাস্তবতা ভুলে, মুসলমানদের পাপের সমুদ্রের ব্যপারে গাফিল থেকে উম্মতের সমস্ত সমস্যার জন্য
রাজা-বাদশাহদেরকে দোষারোপ করে। এটা ঠিক যে, বর্তমান যুগের মুসলিম রাজা-বাদশাহদের দোষের অভাব নেই, তবে তার মানে এই না যে,
সব দোষ শুধুমাত্র রাজা-বাদশাহদের।
বরং সামগ্রিকভাবেই বর্তমান যুগের মুসলমানদের
মাঝে দ্বীনের অনুসরণ এবং আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে মারাত্মক ত্রুটি করছে। দ্বীনের ব্যপারে উদাসীনতার কারণেই মুসলমানেরা
আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত। একারণেই
কাফেররা মুসলমানদের উপরে চড়াও হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
(২) ইমাম ইবনে আবি আল-ইয (মৃত্যু ৭৯২
হিজরী) রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আমাদের অপকর্ম ব্যতীত অন্য কোন কারণে আল্লাহ
তাআ'লা আমাদের উপর খারাপ শাসক চাপিয়ে দেন না। জেনে রাখো! প্রত্যেক কাজের
(ভালো কিংবা মন্দ) প্রতিদান রয়েছে।” শারহে আক্বীদাহ আত-ত্বহাভীয়াঃ ২/৩৪৫।
(৩) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “যদি কোন সময়ে মুসলিমরা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং
তাদের শত্রুরা যদি তাদের উপর কর্তৃত্ব করা শুরু করে, তাহলে এটা শুধুমাত্র মুসলিমদের
পাপের কারণেই হয়ে থাকে। এই পাপ মুসলিমদের
ফরয-ওয়াজিব ইবাদতের ব্যপারে উদাসীনতার মাধ্যমে হয়ে থাকে, হোক সেটা বাহ্যিক ইবাদতের ব্যপারে (যেমন সালাত,
সাওম) কিংবা আভ্যন্তরীণ ইবাদতের ব্যপারে
(যেমন ঈমান, তাক্বওয়া, তাওয়াক্কুলের
ব্যাপারে) ঘাটতি থাকার কারণে হতে পারে।” মাজমু ফাতওয়াঃ ১১/৬৪৫।
(৪) সুতরাং, শুধুমাত্র রাজা-বাদশাহদের
ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে বর্তমান যুগের মুসলমানদের অবস্থার দিকে লক্ষ্য করুন এবং তাদের সংশোধনের
চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, একটা দেশের জনগণ যেমন,
তাদের শাসক সেইরকম-ই হয়ে থাকে। দেশের জনগণ যদি ভালো না হয়, দেশের শাসকেরাও ভালো হবে
না। সাহাবীদের থেকে বর্ণিত একটা শিক্ষণীয় ঘটনা
শুনুনঃ
একবার এক লোক আলী রাদিয়াহুল্লাহ আ’নহুর নিকট এসে অভিযোগ করে বললো, “আবু বকর ও উমরের সময় কত ভালো ছিলো! কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ফেতনা-ফাসাদ ছিলো না। কিন্তু আপনার সময় লোকেরা আপনার বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করার জন্য একত্রিত হয়েছে কেনো?”
আলী রাদিয়াহুল্লাহ আ’নহু উত্তরে বললেন, “আবু বকর ও উমরের সময় দেশে শান্তি ছিলো কারণ, তারা যখন দেশ পরিচালনা করতো
তখন লোকেরা ছিলো আমাদের মতো (অর্থাৎ সাহাবীরা)। আর এখন যুদ্ধ হচ্ছে কারণ, আমি দেশ পরিচালনা করছি যখন
মানুষ হচ্ছে তোমাদের মতো (ভালো ও মন্দ মিশ্রিত করে ফেলা)
লোকেরা।”
(৫) ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “(মুসলমানদের উপর চেপে বসা) অত্যাচারী জালেম শাসক আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব, আর আল্লাহর
আযাব অস্ত্র (কিংবা শক্তি প্রয়োগ) দ্বারা
সরানো যায় না। বরং আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে
মুসলমানদের নিজেদের অবস্থার সংশোধন করা এবং সকলে মিলে ইস্তিগফার করা।
তাবেয়ী বিদ্বান হাসান আল-বসরী রহি’মাহুল্লাহ প্রায় দেড় লক্ষ মুসলমান হত্যাকারী, যাদের মধ্যে অনেক সাহাবী
এবং নেককার তাবেয়ী বিদ্বান ছিলেন, সেই অত্যাচারী খুনী হাজ্জাজ
বিন ইউসুফ সম্পর্কে বলেছিলেন, “নিশ্চয়ই হাজ্জাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। সুতরাং তোমরা আল্লাহর আযাবকে শক্তি দ্বারা
সরানোর (নিষ্ফল) চেষ্টা করোনা। বরং (আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তির জন্য) তোমাদের (আল্লাহর সামনে) বিনীত
ও অনুগত হওয়া উচিত।” মিনহাজ আস-সুন্নাহঃ ৪/৫২৯।
(৬) শায়খ মুজাম্মেল হক্ক বলেন, “আমরা যদি নিজেরা আমাদের অবস্থার পরিবর্তন
না করি, তাহলে আল্লাহ-ও আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করে দেবেন না।”
=> মহান আল্লাহ বলেন,
“আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন
না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” সুরা রা’দঃ ১১।
___________________________________
আবুল আলা মওদুদীর রহমতের জন্য দুয়া করা যাবে?
আমি মুরাদ
বিন আমজাদ লিখিত “সহীহ আক্বীদার
মানদন্ডে তাবলিগী নিসাব” - এই বইটি
পড়তে সাজেস্ট করি। প্রচলিত তাবলীগ জামাতের গোমরাহী জানার জন্য এটা খুব সুন্দর একটা
বই। এই বইয়ের লেখক একটি আয়াতের তাফসীর প্রসংগে সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদীর নাম লিখার পর
রহমাতুল্লাহি আ’লাইহি অর্থাৎ, আল্লাহ তার উপর রহমত
বর্ষণ করুন, এই দুয়া করেছেন। এটা ঠিক কিনা এক ভাই আমাদের কাছে প্রশ্ন করেছেন।
আমাদের
জবাবঃ
আবুল আলা
মওদুদী (রহমাতুল্লাহি আ’লাইহি)
একজন মুসলমান ছিলেন, যিনি আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন না শিখে নিজে নিজে গবেষণা করতে গিয়ে
ইসলামের আক্বীদাগত কিছু বিষয়ে বিভ্রান্ত হয়েছিলেন। তারপরেও, আমার জানামতে তার সময়ের
কিংবা তার পরের কোন একজন আলেম তাকে কাফের বলে ফতোয়া দেন নাই। সুতরাং, তার জন্য আল্লাহর
কাছে রহমতের দুয়া করতে কোন সমস্যা নেই। বরং, একজন মুসলমান ব্যক্তি সে নেককার হোক আর
পাপী হোক, যে-ই হোক না কেনো, আমাদের উচিত তার মৃত্যুর পর তাকে অভিশাপ না দিয়ে তার জন্য
দুয়া করা। কেননা, জীবিত ব্যক্তির দুয়া দ্বারা মৃত ব্যক্তি উপকৃত হয়। এছাড়া যিনি অন্য
মুসলমানের জন্য দুয়া করে ফেরেশতারা অনুরূপ দুয়া ঐ দুয়াকারীর জন্যও করে থাকে। সুতরাং,
এই ব্যাপারে আমাদের অন্তরকে সংকীর্ণ করা ঠিক না। আমরা একজন ব্যক্তির সমালোচনা করি তার
বিভ্রান্তির ব্যাপারে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার জন্য। কিন্তু সেই ব্যক্তি মুসলমান হয়ে
থাকলে তার প্রতি বিদ্বেষ রাখা ঠিক নয়। সুতরাং উক্ত লেখক যা করেছেন তা সঠিক এবং উত্তম।
মহান আল্লাহ
আমাদেরকে সঠিক পথ দেখান, আমিন।
___________________________________
সালাউদ্দিন মাক্কির মানহাজ
সম্পর্কে জানতে চাই?
কথিত আরব বসন্তের সময় সৌদি আরবের কিছু শায়খ, যাদেরকে আমাদের
দেশে অনেকে “সালাফী আলেম” বলে মনে করেন, তারা নিজেরা ঘরে বসে
থেকে মিশর, সিরিয়া, লিবিয়ার মতো দেশসমূহের মুসলমানদেরকে তাদের দেশের জালেম সরকারের
বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করার জন্য উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছিলেন।
এমন ব্যক্তিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে,
(১) সফর আল-হাওয়ালি,
(২) সালমান আল-আওদাহ,
(৩) আব্দুর রহমান আল-আরিফি প্রমুখ।
আরব বসন্ত নামক সরকার বিরোধী আন্দোলনে আজ পর্যন্ত কত লক্ষ
মুসলমানের জীবন গেছে, একমাত্র আল্লাহ তাআ'লা ভালো জানেন। লক্ষ লক্ষ মুসলমানের
জীবনের বিনিময়ে সেই দেশগুলোতে মুসলমানদের কোন উপকার হয়নি। বরং আরব বসন্তের
ধারাবাহিতায় সৃষ্ট গৃহযুদ্ধে লিবিয়া, সিরিয়া, মিশর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আগের
শাসকদের চেয়ে আরো খারাপ শাসক ক্ষমতায় এসেছে, বা আগের শাসকদের জুলুম অত্যাচার
বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আল্লাহু মুস্তাআ'ন।
সম্প্রতি আমাদের দেশে এমনই একজন আন্দোলমুখী(!) শায়খের
সন্ধান পাওয়া গেছে, যিনি নিজে আন্দোলনে না নেমে আমাদেরকে আন্দোলনে নেমে জীবন
দেওয়ার জন্য দাওয়াত দিচ্ছেন। তার নাম হচ্ছে সালাউদ্দিন মাক্কি (আল্লাহ তাকে
হেদায়েত দান করুন)। যদিও তিনি সৌদি আরব সরকারের সম্মানজনক বৃত্তি নিয়ে মক্কাতে
উচ্চতর পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু মক্কার সুপথপ্রাপ্ত আলেম ও ইমামদের
অনুসরণ না করে ধ্বংসাত্মক মানহাজ বেছে নিয়েছেন।
মামুনুল হক্ক, হারুন ইযহার, রফিকুল ইসলাম নন-মাদানীদের মতো
হেফাযতে ইসলামের উগ্রপন্থী বক্তাদের উস্কানিতে মাদ্রাসা পড়ুয়া আবেগী ছাত্ররা বিগত
২৬-শে মার্চ যখন সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে জীবন দিচ্ছিলো, শায়খ সালাউদ্দিন
মাক্কি তখন দেশে গা ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে ছিলেন। তিনি দেশে থাকা অবস্থায় পুলিশের গুলি
খাওয়ার জন্য রাস্তায় নেমেছিলেন বলে এমন কোন খবর পাওয়া যায়নি। কিন্তু দেশ থেকে
পালিয়ে গিয়ে সৌদি আরবের মাটিতে পা রাখা মাত্রই তিনি তার ভ্রান্ত ফতোয়া পেশ করেন,
“জালেম
শাসকের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা ঈমানী দায়িত্ব।”
এটা খুবই দুঃখজনক যে, মক্কাতুল মুকাররমার পবিত্র ভূমিতে
পড়াশোনা করা একজন শায়খ দ্বীন প্রচারের নামে সরলমনা মুসলমানদেরকে এইভাবে বিভ্রান্ত
করছেন। আল্লাহ আমদেরকে হেফাযত করুন।
বিঃদ্রঃ আমরা শায়খ সালাউদ্দিন মাক্কীকে জামাতী, খারেজী বা
বিদআ’তী বলে ফতোয়া দিচ্ছি না। কারণ যারা এমন তালিবুল ইলম হয়েও
বিভ্রান্তিকর কথা-বার্তা বলে বেড়ায়, তাদের বিষয়টা আমাদের দেশের আলেমদের উপর সোপর্দ
করছি। তবে শায়খ সালাউদ্দিন মাক্কী বা তার মতো যারাই এমন বিভ্রান্তিপূর্ণ কথা বলে
জনগণকে রাস্তায় নামার ধ্বংসাত্মক মানহাজের দিকে দাওয়াত দেয়, আপনারা এমন বক্তা এবং
লিখকদের থেকে সাবধান থাকবেন!
___________________________________
সাহাবাদের
সমালোচনা করা বা তাঁদের সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করা হারাম এবং কবীরাহ গুনাহ
জামাতে ইসলামী এবং শীয়ারা আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর যামানা বা পরবর্তীতে সাহাবাদের মধ্যে সংঘটিত
মতবিরোধের কারণে সাহাবাদের সমালোচনা করে। অথচ তাঁদের সমালোচনা করতে আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। কারণ আল্লাহ তাআ’লা তাঁদের ঈমান কবুল করেছেন, তাঁদের ভুল-ত্রুটি মাফ করে দিয়েছেন এবং
তাঁদের উপর
সন্তুষ্ট হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
(১) মহান আল্লাহ বলেন,
وَ السّٰبِقُوۡنَ الۡاَوَّلُوۡنَ مِنَ
الۡمُہٰجِرِیۡنَ وَ الۡاَنۡصَارِ وَ
الَّذِیۡنَ اتَّبَعُوۡہُمۡ بِاِحۡسَانٍ ۙ
رَّضِیَ اللّٰہُ عَنۡہُمۡ وَ
رَضُوۡا عَنۡہُ وَ
اَعَدَّ لَہُمۡ جَنّٰتٍ تَجۡرِیۡ تَحۡتَہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَاۤ اَبَدًا ؕ
ذٰلِکَ الۡفَوۡزُ الۡعَظِیۡمُ
“আর মুহাজির ও আনসারদের
মধ্যে যারা প্রথম অগ্রগামী এবং যারা ইহসানের সাথে তাদের অনুসরণ করে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন।
আর তিনি তাদের জন্য তৈরী করেছেন জান্নাত, যার নীচ দিয়ে
নদী প্রবাহিত, সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য।” সুরা আত-তাওবাহঃ ১০০।
(২) ইমাম আইয়ুব সাখতিয়ানি রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ
১৩০ হিজরী) বলেন,
“যে ব্যক্তি আবু বকর রাদিয়ল্লাহু আ’নহুকে ভালোবাসে, সে
তার দ্বীনকে উর্ধে তুলে ধরে। যে ব্যক্তি উমর রাদিয়ল্লাহু আ’নহুকে ভালোবাসে, সে তার আদর্শকে স্পষ্ট করে নিলো। যে ব্যক্তি উসমান রাদিয়ল্লাহু
আ’নহুকে ভালোবাসে, সে আল্লাহর পক্ষ থেকে (ঈমানের) নূরে আলোকিত হবে। যে ব্যক্তি
আলী রাদিয়ল্লাহু আ’নহুকে ভালোবাসে, সে শক্ত ও মজবুত
একটি হাতল আঁকড়ে ধরলো। যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবাদের সম্পর্কে ভালো কথা বলে, সে নিফাক্ব থেকে
নিজেকে মুক্ত করলো। আর যে ব্যক্তি তাঁদের মধ্যে কোন একজনকে হেয় প্রতিপন্ন করে, অথবা
একজন সাহাবার কোন কাজের জন্য তাঁকে ঘৃণা করে, তাহলে সেই ব্যক্তি একজন বিদআ’তী, সুন্নতের বিরোধীতাকারী এবং সালাফে সালেহীনদের (আদর্শের) বিরোধী। যতক্ষণ
পর্যন্ত না সে সমস্ত সাহাবাদেরকে ভালোবাসবে এবং তাঁদের ব্যাপারে তার অন্তরকে (হিংসা
বিদ্বেষ থেকে) পরিষ্কার করবে, তাহলে আশংকা আছে যে, তার কোন একটি নেক আমল আকাশে তোলা
হবে না (অর্থাৎ আল্লাহর কাছে কবুল হবে না।” ইবনে আবি যামানিন
রহি’মাহুল্লাহ, উসূল আস-সুন্নাহঃ ১৮৯-নং পয়েন্ট।
(৩) হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী
(মৃত্যু ৮৫২ হিজরী) রহি’মাহুল্লাহ বলেন,
وَاتَّفَقَ أَهْلُ السُّنَّةِ عَلَى
وُجُوبِ مَنْعِ الطَّعْنِ عَلَى
أَحَدٍ مِنَ الصَّحَابَةِ بِسَبَبِ مَا
وَقَعَ لَهُمْ مِنْ
ذَلِكَ وَلَوْ عَرَفَ الْمُحِقَّ مِنْهُمْ لِأَنَّهُمْ لَمْ
يُقَاتِلُوا فِي تِلْكَ الْحُرُوبِ إِلَّا عَنِ
اجْتِهَادٍ وَقَدْ عَفَا
اللَّهُ تَعَالَى عَنِ
الْمُخْطِئِ فِي الِاجْتِهَادِ بَلْ
ثَبَتَ أَنَّهُ يُؤْجَرُ أَجْرًا وَاحِدًا وَأَنَّ الْمُصِيبَ يُؤْجَرُ أَجْرَيْنِ
“আহলে সুন্নাহর সবাই
ঐক্যমত পোষণ করেছেন, সাহাবীদের মধ্যে বিরোধের
কারণে সংঘটিত ঘটনার কারণে কোন একজন সাহাবীর সমালোচনা না করা কিংবা গালি না দেওয়া
ওয়াজিব, যদিও কোন ব্যক্তি জানতে পারে যে দুই দলের মধ্যে
কোন একপক্ষ সঠিক ছিলো। কেননা সাহাবীরা যুদ্ধ করেছিলেন কোন এক পক্ষের (ইজতিজাদকে)
সঠিক মনে করে। আর আল্লাহ সুবহা'নাল্লাহু তাআ'লা ইজতিহাদগত ভুল ক্ষমা করেছেন। বরং ইজতিহাদে (কোন আলেম) ভুল করলেও
আল্লাহ তাকে একটি সওয়াব দান করেন, পক্ষান্তরে যিনি সঠিক
সিদ্ধান্তে পৌছাতে পারেন তিনি দুইটি সওয়াব পান।” ফাতহুল বারীঃ ১৩/৩৪।
___________________________________
কোন ব্যক্তি যদি মাজলুম অবস্থায় নিহত হয়
তাহলে তার বংশ কিংবা তা দলের লোকেরা কি ক্ষমতায় আসবে?
(এক)
আল্লাহ সুবহা’নাল্লাহ তাআ’লা বলেন,
وَ لَا
تَقۡتُلُوا
النَّفۡسَ
الَّتِیۡ
حَرَّمَ
اللّٰہُ
اِلَّا
بِالۡحَقِّ
ؕ
وَ
مَنۡ
قُتِلَ
مَظۡلُوۡمًا
فَقَدۡ
جَعَلۡنَا
لِوَلِیِّہٖ
سُلۡطٰنًا
فَلَا
یُسۡرِفۡ
فِّی
الۡقَتۡلِ
ؕ
اِنَّہٗ
کَانَ
مَنۡصُوۡرًا
“যথাযথ কারণ ছাড়া আল্লাহ যাকে হত্যা করা
নিষিদ্ধ করেছেন তোমরা তাকে হত্যা করো না। কাউকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হলে আমি তার
উত্তরাধিকারীকে ‘সুলতান’ (অধিকার) দিয়েছি (কিসাস দাবী করার বা
ক্ষমা করে দেওয়ার), কাজেই সে যেন হত্যার ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন না করে, কারণ তাকে তো সাহায্য করা হয়েছে (আইন-বিধান দিয়ে)। সূরা বনী ইসরাঈলঃ ৩৩।
আয়াতের তাফসীরঃ
(১) আহলে সুন্নাহর নিকট সবচাইতে প্রাচীন
এবং অত্যন্ত আস্থাভাজন একটি তাফসীর হচ্ছে হচ্ছে ইমাম ইবনে জারীর আত-তাবারী রহি’মাহুল্লাহর (মৃত্যুঃ ৩১০ হিজরী) লিখিত
তাফসীর। সূরা বনী ইসরাঈলের ৩৩-নং আয়াতের তাফসীরে তিনি লিখেছেনঃ
يقول: فقد
جعلنا
لوليّ
المقتول
ظلما
سلطانا
على
قاتل
وليه،
فإن
شاء
استقاد
منه
فقتله
بوليه،
وإن
شاء
عفا
عنه،
وإن
شاء
أخذ
الدية.
“আয়াতের অর্থ হচ্ছে, হত্যার শিকার ব্যক্তির অভিভাবককে আল্লাহ তাআ’লা তিনভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা দিয়েছেনঃ
(ক) তাকে হত্যা করার মাধ্যমে। (তবে নিজ বিচারে নিজের হাতে নয়। এতে ফেতনা বাড়বে,
ফেতনা নিরসন হবে না)।
(খ) ‘দিয়াত’ বা আর্থিক ক্ষতিপূরণ নেবে। অথবা,
(গ) হত্যাকারীকে মাফ করে দেবে।
এভাবেই নিহত ব্যক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত
নেওয়ার ইখতিয়ার বা সুলতান আল্লাহ দান করেছেন তার অভিভাবকদেরকে।” জামি আল-বায়ান আত-তাওয়ীল আল-ক্বুরআন।
(২) ইসলামী ইতিহাসের মধ্যযুগে লিখিত আহলে
সুন্নাহর নিকট গ্রহণযোগ্য এবং প্রসিদ্ধ অপর একটি তাফসীর হচ্ছে ইমাম ইসমাঈল ইবনে
কাসীর রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ ৭৭৪ হিজরী) লিখিত
তাফসীর। তিনি তাঁর গ্রন্থে সূরা বনী ইসরাঈলের ৩৩-নং আয়াতের তাফসীর লিখেছেনঃ
“যদি কোন লোক কারো হাতে অন্যায়ভাবে নিহত
হয় তাহলে আল্লাহ তাআ’লা তার উত্তরাধিকারীদেরকে হত্যাকারীর
উপর ‘সুলতান’ বা অধিকার দান করেছেন। নিহতের উত্তরাধিকারীদের জন্যঃ
(ক) ক্বিসাস (হত্যার বিনিময়ে হত্যা) নেওয়া,
(খ) রক্তপণ গ্রহণ করা অথবা,
(গ) সম্পূর্ণরূপে ক্ষমা করে দেয়া তাদের
ইখতিয়ার রয়েছে।” তাফসীর আল-ক্বুরআন আল-আ’যীম।
(দুই)
ইমাম ইসমাঈল ইবনে কাসীর রহি’মাহুল্লাহ উক্ত কথার পরে লিখেছেনঃ
“একটি বিস্ময়কর ব্যাপার এই যে, আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা এই আয়াতের হুকুমকে সাধারণ হিসেবে
ধরে নিয়ে মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর রাজত্বের জন্য এই আয়াতকে দলীল
হিসেবে গ্রহণ করেছেন যে, তিনি বাদশাহ হয়ে যাবেন। কেননা, তিনি উছমান রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর ওয়ালী ছিলেন। আর উছমান রাদিয়াল্লাহু
আ’নহু সবচেয়ে বড় জুলুমের শিকার হয়ে শহীদ হয়েছিলেন। মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু আ’নহু আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর নিকট আবেদন জানিয়েছিলেন যে, উছমান রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর হত্যাকারীদের উপর যেন ক্বিসাস নেওয়া
হয়। কেননা, মুআবিয়াও রাদিয়াল্লাহু আ’নহু উমাইয়া বংশীয় ছিলেন।” তাফসীর আল-ক্বুরআন আল-আ’যীম।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমার এই কথাকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করে
বাংলাদেশের বিভ্রান্ত বক্তা কাযী মুহাম্মদ ইব্রাহীম দাবী করেছেন, বর্তমান
বাংলাদেশে যেই দলের লোকদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা হচ্ছে, নির্ঘাত আগামী দিনে
তারাই ক্ষমতায় যাবে!
কাযী মুহাম্মদ ইব্রাহীমের এই বক্তব্য
কতটুকু সত্যি চলুন আমরা একটু ইতিহাসের দিকে চোখ মেলে দেখি।
(১) মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় একজন মাজলুম
ব্যক্তি হচ্ছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় দৌহিত্র
হুসাইন বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা, যিনি কারবালার ময়দানে নিজ
পরিবারের লোকজনসহ অত্যন্ত নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেছিলেন। কিন্তু হুসাইন রাদিয়াল্লাহু
আ’নহুর পুত্র আলী বিন হুসাইন রহি’মাহুল্লাহ বা তাঁর বংশধরেরা ক্ষমতায়
আসতে পারেনি।
(২) ১৭৫৭ সালে সিরাজ-উদ-দৌলার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে মীর জাফর
ক্ষমতায় এসেছিলো। সিরাজ-উদ-দৌলা বা তার বংশধরেরা আজ পর্যন্ত ক্ষমতায় আসতে পারলো না।
(৩) ২০০২ সালে গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাংগা সৃষ্টি করে বিজেপি,
বজরং ইত্যাদি উগ্রপন্থী হিন্দুরা কয়েক হাজার মুসলমানকে হত্যা করে, মুসলমানদের
বাড়ি-ঘর পুড়িয়ে দিয়ে বাস্তুচ্যুত করে, মুসলমান নারীদেরকে গণধর্ষণ করে। সেই দাঙ্গার
মাস্টারমাইন্ড নরেন্দ্র সিং মোদী বর্তমানে সমগ্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কিন্তু
গুজরাটের মুসলমানেরা আজ পর্যন্ত নির্যাতিত।
(৪) ২০১১ সালে সিরিয়াতে শুরু হওয়া গৃহযুদ্ধে বাশার আল-আসাদ আজ
পর্যন্ত কয়েক লক্ষ সুন্নী মুসলমানদেরকে হত্যা করেছে। ইরান, রাশিয়ার আশীর্বাদপুষ্ট বাশার
আল-আসাদ আজ পর্যন্ত ক্ষমতায় টিকে আছে, কিন্তু সেখানকার সুন্নীরা আজ পর্যন্ত নিষ্ঠুর
নির্যাতনের শিকার।
এখন কথা হচ্ছে, সূরা বনী ইসরাঈলের ৩৩-নং আয়াতের অর্থ যদি এই হয় যে, “কোন ব্যক্তি যদি মাজলুম অবস্থায় নিহত হয়
তাহলে তার বংশ বা তার দলের লোকেরা ক্ষমতায় আসবে।”
উপরোক্ত চারটি উদাহরণ বা এমন হাজারো উদাহরণ খুঁজে পাওয়া যাবে,
তাহলে তারা কেনো ক্ষমতায় আসতে পারেননি?
এই প্রশ্নের উত্তর হচ্ছে, সূরা বনী ইসরাঈলের ৩৩-নং আয়াতে ‘সুলতান’ দ্বারা রাজত্ব বা ক্ষমতা উদ্দেশ্য নয়।
বরং এখানে অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ তাআ’লা নিহতের উত্তরাধিকারীদেরকে ‘অধিকার’ বা ইখতিয়ার দিয়েছেন, তিন প্রকারের
যেকোন একভাবে হত্যার প্রতিশোধ গ্রহণ করতে পারে।
(তিন)
কাযী মুহাম্মদ ইব্রাহীম গ্রেফতার হওয়াতে
জামাত-শিবিরের বক্তা এবং লেখকেরা কেনো হায়-হুতাশ করা আরম্ভ করেছে জানেন?
কারণ কাযী মুহাম্মদ ইব্রাহীমের আজগুবী
স্বপ্ন, ক্বুরআন ও হাদিসের মনগড়া অপব্যাখ্যা এবং কাল্পনিক থিওরী - এ সবকিছুর মূল বেনিফিশিয়ারী
হচ্ছে জামাত-শিবির গং। ইসলামী বক্তার লেবাস নিয়ে আজগুবী স্বপ্ন আর কাল্পনিক থিওরী
দিয়ে কৌশলে মূর্খ লোকদেরকে আকৃষ্ট করে মওদুদী মতাবাদে ভিড়ানোর কাজ বন্ধ হয়ে
যাওয়াতে জামাত-শিবির গং এতোটা ক্ষিপ্ত হয়েছে।
বুয়েটের আবরার ফাহাদ রহি’মাহুল্লাহ কোন ইসলামিক/গণতান্ত্রিক দল
করতো না। সে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগ বিরোধী কোন
ব্যক্তি ছিলো না। শুধুমাত্র বাংলাদেশ সরকারের ভারতের নগ্ন দালালীর বিরুদ্ধে
ফেইসবুকে দুই-একটা পোস্ট দেওয়ার কারণে লীগের সন্ত্রাসীরা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে
হত্যা করেছিলো। এমন বহু উদাহরণ আমাদের সামনে থাকার পরেও একজন বক্তা মসজিদের
মিম্বারে দাঁড়িয়ে ক্বুরআন হাদীসের নামে জামাত-শিবির গং-এর প্রোপাগান্ডা গেয়ে যাবে
আর আওয়ামী লীগ তাকে এমনি এমনি ছেড়ে দিবে এমনটা যে মনে করে সে আসলে বোকার স্বর্গে
বাস করছে।
(চার)
আওয়ামী লীগ মানুষ গুম করে বা খুন করে,
মহিলাদের ধর্ষণ বা প্রলোভন বা দিয়ে জিনা করে, চুরি, ডাকাতি যা-ই করে, দুনিয়ার লোভে
করে। আজকে বাংলার প্রতিটা মুসলমান যার অন্তরে সামান্য ঈমানের নূর আছে, তারা সবাই
জানে এবং বুঝে আওয়ামী লীগ কতটা খারাপ।
পক্ষান্তরে, জামাত-শিবির যত ভন্ডামী আর
বিদআ’ত করে, সবকিছু ক্বুরআন হাদীসের অপব্যাখ্যা দিয়ে করে। এ কারণে আমাদের দেশের
জনগণ, যাদের ইলম নাই কিন্তু ইসলামের প্রতি আবেগ আছে, জামাত-শিবিরের কুচক্রে ধোঁকা
বেশি খায়।
একবার চিন্তা করুন, আজকে জামাত-শিবিরের
মুখপাত্র “Face the People”-এ দাঁড়ি টুপি পড়া হুজুরেরা ক্বুরআন আর
হাদীসের কথা বলে মুসলমানদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করছে, কথিত মামুন মারুফের স্বপ্নের
উপর ভিত্তি করে কাজী ইব্রাহীমের আজগুবী থিওরী ইসলাম সম্মত, তাহলে কয়জন মুসলমান
এদের ধোঁকাবাজি থেকে বাঁচতে পারবে?
এ কারণে আমাদের আগের যুগের আলেমরা
বলেছেন, “বিদআ’ত শয়তানের নিকট পাপের চাইতে প্রিয়।
কেননা মানুষ পাপ করে এক সময় অনুতপ্ত হয়, তাওবা করে। কিন্তু বিদআ’ত যারা করে তারা তাওবা করে না, কারণ যে
বিদআ’ত করে সে বিদআ’তকে ইবাদত বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের মাধ্যম বলে মনে করে।”
___________________________________