অধ্যায়ঃ
তাকফিরী, কুতুবী ও খারেজী
____________________________________
(১) জিহাদ কাকে বলে? জিহাদ কত প্রকার ও কি কি? জিহাদের জন্য শর্ত সমূহ কি?................
(২) খারেজী
কারা? বর্তমান যুগে কি কোন
খারেজী আছে?....................................................
(৩) সাইয়েদ কুতুব (মিসর, ১৯০৬-১৯৬৬).........................................................................
(৪) সাইয়েদ কুতুবের ভ্রান্ত
আকীদাহ..................................................................................
(৫) তারা মুজাহিদ, তবে শয়তানের রাস্তায়..........................................................................
(৬) জিহাদের
নামে নিরপরাধ নারী ও
শিশুদেরকে হত্যা করা যাবে?........................................
(৭) উসামা বিন লাদেন এবং আল-কায়েদাহর ‘ধ্বংসাত্মক মানহাজের’ ব্যপারে আলেমদের ফতোয়া........................................................................................................................
(৮) সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেম আল্লামাহ, ড. সালেহ আস-শুহাইমী হা’ফিযাহুল্লাহ ISIS সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ
ফতোয়া................................................................................................
(৯)
খারেজীদের সংখ্যা এতো বেশি কেনো?........................................................................
(১০) মানব রচিত বিধান দিয়ে
বিচার করার কি হুকুম?.........................................................
(১১) মুসলিম আমীর বা শাসকদের অধিকার.......................................................................
(১২)
ফেইসবুক জিহাদী কারা?.........................................................................................
(১৩)
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কি কাফির?
...............................................................
(১৪)
মাদখালী কি?........................................................................................................
(১৫)
আনোয়ার আল-আওলাকির লেকচার শোনা যাবে?........................................................
(১৬)
যুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য নেওয়া জায়েজ নাকি নাজায়েজ?.............................................
(১৭)
“তাকফিরী” কারা? তাকফিরী বক্তা ও লিখকদের ব্যপারে সাবধান!...............................
(১৮)
যেই তিনজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকে জায়েজ সাব্যস্ত করে যুবকদের ব্রেইন ওয়াশ করেছে।
(১৯) কালো পতাকা নিয়ে কোন সহীহ হাদীস নেই!
(২০) আনোয়ার আওলাকির কথিত “জিহাদ” নিয়ে ড. আব্দুল্লাহ
জাহাঙ্গীর রহি’মাহুল্লাহরর অভিমত।
(২১) মুসলিম
উম্মাহর সমস্যা সমাধান করার জন্য মিছিল-লংমার্চ করা কি দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে?
(২২) তালেবান সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর।
(২৩)
তাগুত, জিহাদ, ক্বিতাল,
আব্দুল্লাহ আযযম, আনোয়ার আল-আওলাকি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর
- ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহি’মাহুল্লাহ।
(২৪)
“মুরজিয়া” কারা?
(২৫)
মুসলিম শাসকের আনুগত্য করা সুন্নাহ, “মাদখালি মতবাদ” নয় (পর্ব-১)।
(২৫)
মুসলিম শাসকের আনুগত্য করা সুন্নাহ, “মাদখালি মতবাদ” নয় (পর্ব-২)।
(২৬) জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন।
(২৭) পথভ্রষ্ট জিহাদীদের থেকে সাবধান (পর্ব-১)।
(২৮) ইসলাম কি পুরুষদের ঘরে বসে থাকার কথা বলছে?
(২৯) সৌদি
সালাফী আলেমদের নামে মিথ্যা অপবাদের জবাব (পর্ব-১)।
(৩০) সৌদি
সালাফী আলেমদের নামে মিথ্যা অপবাদের জবাব (পর্ব-২)।
(৩১)
আহলে
সুন্নাহ এবং খারেজীদের মাঝে পার্থক্য।
(৩২) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান (পর্ব-১)।
(৩২) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান (পর্ব-২)।
(৩৩) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান (পর্ব-৩)।
(৩৪) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান (পর্ব-৪)।
(৩৫) আমি যদি শাসকের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ করি, তাহলে আমি কি
খারেজী হয়ে যাবো?
(৩৬) খারেজী (পর্ব-১)।
(৩৭) খারেজী (পর্ব-২)।
(৩৮) তালেবান (পর্ব-১)।
(৩৯) তালেবান (পর্ব-১)।
____________________________________
জিহাদ কাকে বলে? জিহাদ কত প্রকার ও কি কি? জিহাদের
জন্য শর্ত সমূহ কি?
ইমাম তাহাভী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “মুসলমানদের ইমাম (খলিফাহ, আমীর বা শাসকের) নেতৃত্বে
কিয়ামত পর্যন্ত জিহাদের বিধান চালু থাকবে। কোন কিছুই জিহাদকে বাতিল বা রহিত করতে পারবে
না।” শরহে আকীদাতুত-তাহাভীঃ ৩৮১ পৃষ্ঠা।
তবে জিহাদ ফরয হওয়ার নির্দিষ্ট কিছু
শর্ত ও উদ্দেশ্য রয়েছে। বর্তমান সময়ে জিহাদ সম্পর্কে নানা ধরণের ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। কতিপয় মূর্খ লোক জিহাদের নামে জঙ্গি তৎপরতা ও এখানে সেখানে বোমাবাজিতে
লিপ্ত রয়েছে। এ ধরণের অপকর্ম ইসলাম কখনই সমর্থন করে না। জিহাদ ফরজ হওয়ার উদ্দেশ্য হল,
পৃথিবীতে ‘তাওহীদ’ তথা আল্লাহর একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা এবং কুফর ও শিরকের অবসান
ঘটানো।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক, যতক্ষণ
পর্যন্ত না ফিতনা (কুফর, শির্ক) শেষ হয়ে যায় এবং আল্লাহর দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর
জন্যেই হয়ে যায়।” আনফালঃ
৩৯।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমাকে মানুষের সাথে জিহাদ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে যতক্ষণ
পর্যন্ত না তারা এই সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল
এবং তারা সালাত প্রতিষ্ঠা না করবে ও যাকাত না দিবে। যখন তারা উপরের কাজগুলো সম্পাদন
করবে তখন তারা আমার হাত থেকে নিজেদের জান ও মাল নিরাপদ করে নিল।”
জিহাদ ফরজ হওয়ার শর্ত সম্পর্কে আলোচনা
করার পূর্বে জিহাদের প্রকারভেদ সম্পর্কে অবগত হওয়া অত্যন্ত জরুরী। কারণ অনেক মানুষই
জিহাদের প্রকারভেদ সম্পর্কে অজ্ঞ। ক্বুরআন ও হাদীস গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি
যে, জিহাদ মোট পাঁচ প্রকার।
(১) নফসের সাথে জিহাদ করাঃ
নফসের সাথে জিহাদের অর্থ হল নফসকে
আল্লাহর আনুগত্যের কাজে বাধ্য করা, ভাল কাজের প্রতি সর্বদা তাকে আদেশ করা এবং অসৎ কাজ
হতে বারণ করা। নফসের সাথে জেহাদ ব্যতীত কেউ শত্রুর বিরুদ্ধে জেহাদ করতে সক্ষম হবেনা।
(২) শয়তানের বিরুদ্ধে জেহাদ করাঃ
শয়তান মানুষের আদি শত্রু। সে মানুষকে
নানা অপকর্মের আদেশ করে থাকে। তাই শয়তানের সাথে সদা সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হবে। শয়তানের
আদেশ অমান্য করতে হবে এবং সে যা হতে নিষেধ করে তাই করতে হবে।
(৩) পাপী মুসলমানদের সাথে জেহাদঃ
অভ্যন্তরীণ শত্রু তথা শয়তান ও নফসের
বিরুদ্ধে জিহাদ করে যে ব্যক্তি জয়লাভ করতে পারবে, তার উপর অন্যান্য শত্রুদের সাথে জিহাদ
করা ওয়াজিব। প্রথমেই আসে গুনাহগার ও পাপী মুসলমানদের কথা। তাদের সাথেও জিহাদ করতে হবে।
তবে তাদের বিরুদ্ধে তলোয়ার বা অস্ত্রের জিহাদ নেই। তাদেরকে সাধ্য অনুযায়ী সৎ কাজের
আদেশ এবং অসৎকাজের নিষেধ করতে হবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অন্যায়
কাজ হতে দেখে সে যেন হাত দিয়ে বাঁধা দেয়। হাত দিয়ে বাধা দিতে না পারলে জবান দিয়ে বাঁধা
দিবে। সেটা করতে না পারলে অন্তর দিয়ে হলেও বাঁধা দিবে, এটা হচ্ছে সবচাইতে দুর্বল ঈমানের
পরিচয়।” সহীহ মুসলিম।
বর্তমান সময়ে বিভিন্ন অঞ্চলে এক
শ্রেণীর মুসলমান জিহাদের নামে মুসলমানদেরকে হত্যা করার মত জঘন্য কাজে লিপ্ত রয়েছে।
তারা জিহাদের সঠিক অর্থ বুঝতে সক্ষম হয়নি।
(৪) মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদঃ
মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জিহাদের অর্থ
এই যে, তাদের সন্দেহগুলো খণ্ডন করা এবং তাদের থেকে সরলমনা মুসলমানদেরকে সাবধান করা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “তারাই হচ্ছে শত্রু। অতএব তাদের সম্পর্কে সতর্ক হন।” সুরা মুনাফিকুনঃ ৪।
মুনাফেকদের বিরুদ্ধে জেহাদ জবানের
মাধ্যমেই হবে। তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করা যাবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে নবী! কাফের ও মুনাফেকদের বিরুদ্ধে
জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোর হন।” সুরা আত-তাহরীমঃ ৯।
সুতরাং মুনাফেকদের বিরুদ্ধেও যুক্তি-তর্কের
মাধ্যমে জেহাদ করতে হবে এবং কঠোর ভাষায় তাদের কর্ম-কাণ্ডের প্রতিবাদ করতে হবে। যেহেতু
তারা মুসলিম সমাজেই বসবাস করে থাকে তাই তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা যাবেনা। এতে
মুসলমানদের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়বে। এজন্য নবী (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) মুনাফেকদেরকে শাস্তি দেন নি এবং তাদেরকে দল
থেকে বেরও করে দেন নি। তবে মুনাফেকদের চক্রান্তের বিরুদ্ধে সর্বদা সজাগ থাকতেন।
(৫) কাফেরদের বিরুদ্ধে জিহাদঃ
পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার
জন্য এবং শিরকের পতন ঘটানোর জন্য আল্লাহ তাআ’লা কাফেরদের বিরুদ্ধে অস্ত্রের মাধ্যমে জেহাদ করা
এই উম্মতের উপর ফরয করেছেন। তবে প্রথমেই এই জিহাদ ফরয করেন নি। মক্কাতে থাকা অবস্থায়
মুসলমানদের উপর জিহাদ করা নিষেধ ছিল। তাদেরকে হাত গুটিয়ে বসে থাকার আদেশ দেয়া হয়েছিল।
এমনিভাবে নবুওয়তের পর তেরোটি বছর চলে গেল। আপন গোত্রের লোকদের হাতে নির্যাতিত হয়েও
আল্লাহর দ্বীনের প্রতি মানুষকে আহবান করতে থাকলেন।
সে সময় জিহাদ থেকে বিরত থাকার আদেশ
দেয়ার কারণ এই যে, তখন মুসলমানগণ ছিল দুর্বল। এ অবস্থায় তাদেরকে সশস্ত্র জিহাদের আদেশ
দেওয়া হলে কাফেরেরা সহজেই তাদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতো এবং তাদেরকে নির্মূল করে ফেলত।
ফলে অঙ্কুরেই দ্বীনের দাওয়াত মিটে যেত।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় হিজরত করলেন এবং সেখানে গিয়ে শক্তি,
সামর্থ্য এবং সহযোগী সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেন তখন আল্লাহ তাআ’লা মুসলমানদেরকে জিহাদের অনুমতি
দিলেন। তবে বাধ্যতামূলক আদেশ দেন নি।
আল্লাহ তা’লা বলেন, “যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হল তাদেরকে,
যাদের সাথে কাফেরেরা যুদ্ধ করে; কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদেরকে
সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম।” সুরা হজ্জঃ ৩৯।
এই আয়াতে শুধুমাত্র জিহাদের অনুমতি
দেওয়া হয়েছে। অথচ ইতিপূর্বে জিহাদ করা নিষিদ্ধ ছিল। অতঃপর ঐ সমস্ত কাফেরদের বিরুদ্ধে
জিহাদের আদেশ দেওয়া হয়েছে যারা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করতে নিষেধ করা হয়েছে যারা যুদ্ধ করেনা।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর তোমরা লড়াই কর আল্লাহর রাস্তায়,
তাদের সাথে যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করোনা। নিশ্চয়ই
আল্লাহ সীমা লঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না।” সুরা বাক্বারাঃ ১৯০।
এখানে শুধুমাত্র আক্রমণকারী শত্রুদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। অতঃপর পরবর্তীতে মুসলমানদের যখন শক্তি অর্জিত
হল এবং স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হল তখন পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার জন্য
সমস্ত কাফেরদের বিরুদ্ধে জেহাদ করার জন্য সাধারণ আদেশ দেওয়া হল।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “অতঃপর মুশরিকদের হত্যা কর। যেখানেই
তাদের পাও, তাদের বন্দী এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁত পেতে
বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে এবং যাকাত প্রদান করে তবে তাদের
রাস্তা ছেড়ে দাও নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” সুরা তাওবাঃ ৪।
মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত কাফেরদের
বিরুদ্ধে জিহাদ করার আদেশ দেয়া হয়েছে। কারণ এ জন্যই তথা আল্লাহর ইবাদতের জন্য আল্লাহ
তা’আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং রিজিকের
ব্যবস্থা করেছেন। সুতরাং আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত উচ্ছেদ করে পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদত
প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যেই আল্লাহ জিহাদ ফরজ করেছেন। এজন্যই যারা তওবা করবে, ঈমান আনয়ন
করবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে না। কাফেরদেরকে যদি বিনা যুদ্ধে ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে
মুসলমানদের উপর তাদের অত্যাচার বেড়ে যাবে। কেননা তারা চায়না যে, পৃথিবীতে কোন মুসলমান
অবশিষ্ট থাকুক। তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করা হলে তারা মুসলমানদেরকে হত্যা করবে, বাড়ি-ঘর
থেকে বের করে দিবে এবং বিভিন্ন প্রকার কষ্ট দিবে। মুসলমানগণ যখন থেকে জিহাদ ছেড়ে দিয়েছে
তখন থেকে তাদের উপর বিপদ-মুসীবত নেমে এসেছে এবং মুসলিম দেশ সমূহে বিভিন্ন মিশনারি ‘সেবার’ নামে খৃষ্টান
ধর্ম প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
সর্বোপরি কথা হল, জিহাদ করতে হবে
আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ বা উঁচু করার জন্যে। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করা হল, এক ব্যক্তি জিহাদ করে নিজের
গোত্রকে সাহায্য করার জন্যে, অন্য একজন জিহাদ করে বীরত্ব প্রদর্শন করার জন্যে আবার
কেউ বা করে গনিমতের সম্পদ হাসিল করার জন্যে। এদের মধ্যে হতে কে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ
করে থাকে? নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বললেন, “যে ব্যক্তি জিহাদ করবে আল্লাহর বাণীকে উঁচু করার জন্যে তার জিহাদ হবে
আল্লাহর পথে।”
এছাড়া অন্য উদ্দেশ্যে (যেমন - দেশের
জন্য, ভাষার জন্য, জাতির জন্য, বিশ্ব শান্তির জন্য) যে ব্যক্তি জিহাদ করবে, তার জিহাদ
কখনই আল্লাহর পথে জিহাদ হিসাবে গণ্য হবে না। যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে জিহাদ করতে গিয়ে
নিহত হবে তাকে ‘শহীদ’ হিসেবে গণ্য করা হবে। যদি নিহত না হয় তবে সে সাওয়াব ও গণিমত থেকে
বঞ্চিত হবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “আর যারা আল্লাহর
রাস্তায় নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।”
সূরা বাকারাঃ ১৫৪।
নিহত না হলেও তারা সাওয়াব, গনিমতের
মাল, দুনিয়া ও আখিরাতের সম্মান নিয়ে ফেরত আসবে।”
আলেমগণ আল্লাহর রাস্তায় কাফেরদের
বিরুদ্ধে জিহাদকে দুইভাগে ভাগ করেছেন,
(১) ফরজে আইনঃ
জিহাদ করতে সক্ষম এমন প্রতিটি মুসলিমের
উপর তিন অবস্থায় জিহাদে অংশ গ্রহণ করা ফরজে আঈন।
(ক) আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধঃ
কোন মুসলিম দেশের উপর যদি শত্রুরা
আক্রমণ করে তবে তারা যুদ্ধে লিপ্ত হবে। মুসলমানদের সম্মান রক্ষার্থে তখন সকল মুসলমানের
উপর সাধ্যানুযায়ী জিহাদে অংশ গ্রহণ করা ফরজ।
(খ) মুসলমানদের ইমামের আদেশে যুদ্ধঃ
মুসলমানদের ইমাম যখন যুদ্ধের ডাক
দিবে তখন তার কথা মেনে জিহাদে বের হওয়া সকলের উপর ওয়াজিব। আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে
ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল, যখন আল্লাহর পথে বের হওয়ার জন্যে তোমাদের বলা হয়, তখন মাটি
জড়িয়ে ধর, তোমরা কি আখিরাতের পরিবর্তে দুনিয়ার জীবনে পরিতুষ্ট হয়ে গেলে? অথচ আখিরাতের
তুলনায় দুনিয়ার জীবনের উপকরণ অতি অল্প।” সুরা তাওবাঃ ৩৮।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মক্কা বিজয়ের পর আর কোন হিজরত নেই। কিন্তু
প্রয়োজন অনুসারে জিহাদ অবশিষ্ট রয়েছে। সুতরাং তোমাদেরকে যখন জিহাদের জন্য আহবান করা
হবে তখন তোমরা আহবানে সাড়া দাও।”
(গ) যুদ্ধের ময়দানে উপস্থিত হওয়ার
পর যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়াঃ
তা থেকে পলায়ন করা না জায়েজ; বরং
তার উপর জিহাদ করা ওয়াজিব।
আল্লাহ তা’আলা বলেন, “হে ঈমানদারগণ!
তোমরা যখন কাফেরদের মুখোমুখি হবে তখন পশ্চাদপসরণ করবে না। আর যে লোক সেদিন তাদের থেকে
পশ্চাদপসরণ করবে সে আল্লাহর ক্রোধ নিয়ে প্রত্যাবর্তন করবে। আর তার ঠিকানা হল জাহান্নাম।”
সুরা আনফালঃ ১৫-১৬।
উপরোক্ত তিন অবস্থায় প্রত্যেক সামর্থ্যবান
মুসলমানের উপর জিহাদ করা ফরজ।
(২) ফরজে কেফায়াঃ
অমুসলিম দেশের নিষ্ক্রিয় কাফেরদের
বিরুদ্ধে জেহাদ পরিচালনা করা ফরজে কেফায়া। মুসলমানদের কিছু লোক এই প্রকারের জিহাদে
আঞ্জাম দিলে অন্যরা দায়িত্ব হতে রেহাই পেয়ে যাবে। তবে অন্যদের ক্ষেত্রে জিহাদ সুন্নাত
হিসেবে থেকে যাবে।
জিহাদ ফরজ হওয়ার শর্ত কি?
মুসলমানদের নিকট শক্তি থাকলে শিরক
ও মূর্তি পূজার অবসান ঘটিয়ে পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্যে আল্লাহ তা’আলা
মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরজ করেছেন।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা (কুফর-শিরক)
শেষ হয়ে যায়। এবং আল্লাহর দ্বীন সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর জন্যেই হয়ে যায়।” সুরা আনফালঃ ৩৯।
সুতরাং পৃথিবী হতে কুফর ও শিরকের
অবসান ঘটিয়ে তাতে আল্লাহর ইবাদত প্রতিষ্ঠা করার জন্যে মুসলমানদের উপর জিহাদ করা ফরজ
করা হয়েছে। কিন্তু জিহাদ পরিচালনা করার পূর্বে কাফেরদেরকে ইসলামে প্রবেশের দাওয়াত দেয়া
জরুরী। তারা যদি ইসলামে প্রবেশ করতে অস্বীকার করে তবে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে।
আমরা কাফের-মুশরেকদের দেশ ও সম্পদ
দখল করার জন্যে এবং তাদেরকে হত্যা করার জন্যে জিহাদ করবো না; বরং আমরা তাদের কল্যাণের
জন্যে এবং তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আলোর পথের দিকে আনার জন্যে জিহাদ করবো।
____________________________________
খারেজী
কারা? বর্তমান যুগে
কি কোন খারেজী আছে?
খারেজী হচ্ছে ৭২-টি বিদআ’তী জাহান্নামী তরীকার একটা তরীকা। এরা অত্যন্ত চরমপন্থী একটি দল, যারা সাহাবা এবং পরবর্তীতে মুসলিম
শাসকদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে অনেক মুসলমানদেরকে হত্যা করেছে। কিন্তু ব্যক্তিগত আমলের দিক থেকে
তারা হচ্ছে এই উম্মতের মাঝে সবচাইতে বেশী ইবাদতকারী লোক।
খারেজীরা সবচাইতে
বেশী নামায পড়তো, সবচাইতে বেশি রোযা রাখতো, সারা রাত তাহাজ্জুদ পড়তো, কুরআন পড়তো,
খারেজীদের এই গুণাবলীর কথা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
খারেজীদের আবির্ভাবের পূর্বেই
আমাদের জন্য বর্ণনা করে গেছেন।
কিন্তু খারেজীদের
ভ্রান্ত আকীদা (ধর্মীয় বিশ্বাস) ও চরমপন্থা অবলম্বনের কারণে তারা এতো
নামায রোযা করেও তারা এতোটাই নিকৃষ্ট যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে “কিলাবু
আহলিন-নার” বা জাহান্নামের
কুকুর বলেছেন। সেইজন্য, কোন দলের লোক অনেক আমল করলেই তারা হক্ক হয়ে
যায়না, বরং দেখতে হবে
তাদের আকীদা কি, তাদের চলার পথ বা পদ্ধতি, উসূল বা
মূলনীতি কি? তারা যদি আহলে সুন্নতের অনুসারী হয় তাহলেই সে নাজাত পাবে, আর আহলে সুন্নতের
বিপরীত চললে যতই আমল করুক, জাহান্নামে যাবে।
বর্তমান যুগেও এমন কিছু খারেজী লক্ষ্য
করা যায়, বা এমন অনেক ব্যক্তি বা দল আছে যাদের মাঝে খারেজীদের গুণ দেখা যায়। যেমন, ১৯৭৯ সালে সৌদি আরবের তৎকালীন সরকারের
বিরুদ্ধে “জুহাইমান আল-ওতাইবি” নামে এক লোক বিদ্রোহ করে ক্ষমতা দখল করার চেষ্টা করে। আনুমানিক ৩০০-৪০০ লোক নিয়ে সে প্রথমে কাবা দখল
করে ফেলে এবং সেখানে
তাদের মধ্য থেকে একজনকে “ইমাম মাহদী” দাবী করে তার হাতে বাইয়া’ত করে তাকে শাসক হিসেবে মেনে নিতে
আহবান করে। এরা “মসজিদুল হারাম” যেখানে
কেয়ামত পর্যন্ত রক্তপাত কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, সেখানে অনেক মানুষদেরকে হত্যা করে। অবস্থা এতো সংকটময় দেখে ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বাজ
রহি’মাহুলাহসহ তখনকার
বড় আলেমগণ ফতোয়া দেন,
জুহায়মান একজন খারেজী, তার ক্ষতি
থেকে মুসলিমদের বাঁচানোর জন্য
কাবাঘরে এদের উপর আক্রমন করতে কোন সমস্যা নেই, যদিও মসজিদুল হারামে যুদ্ধ, হত্যা বা
রক্তপাত চিরদিনের জন্য নিষিদ্ধ।
কিন্তু সংকটপূর্ণ অবস্থায় মাসয়ালা পরিবর্তন হয়ে যায়, আর জুহায়মানের মতো লোককে
না সরালে সে আরো ফেতনা ছড়াবে, তাই এমন পরিস্থিতিতে মসজিদুল হারামে
তাদের উপর আক্রমন করলে কোন গুনাহ হবেনা।
যাইহোক,
তাদের উপর আক্রমন করা হলে তারা একটা টানেলে আশ্রয় নেয় যেখান থেকে তাদেরকে
ধরা যাচ্ছিলোনা, তাদেরকে ধরতে কোন সৈন্য গেলে তাদেরকে গুলি করে হত্যা করতো। পরে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করে ও
টানেলে পানি ঢেলে তাতে কারেন্ট দিয়ে তাদেরকে আহত করে জুহাইমানসহ তার প্রায় ৭৭জন সাথীকে
গ্রেফতার করা হয়। আক্রমনের
সময় কথিত ইমাম মাহদী গ্রেফতার হওয়ার
পূর্বেই নিহত হয়।
গ্যাসে জুহাইমানের চেহারা কালো হয়ে যায়, পরে শরিয়াহ মোতাবেক জুহাইমানসহ
অনেককে প্রকাশ্যে হত্যা করা হয়।
জুহাইমান আল-উতাইবীর কলংকিত চেহারা এই ভিডিওতে দেখতে পারবেন –
https://www.youtube.com/watch?v=5Aot1WeZVqw
এছাড়াও বিগত শতাব্দীতে সাইয়েদ কুতুব
নামক মিশরীয় একজন লোক, যে ইসলাম নিয়ে লেখালিখি করতো, তার মাঝেও খারেজীদের কিছু লক্ষণ
দেখা গেছে। তার লেখা
‘মাইলস্টোন’ সহ আরো
অনেক জায়গায় সে সমগ্র উম্মতকে কাফের ঘোষণা করেছে, তার লেখালিখি দ্বারা তার অনুসারী
ছাড়া বাকি সবাই কাফের, এমন ধ্যান-ধারণা প্রচার করেছে। চরমপন্থা অবলম্বন ও আহলে সুন্নত
ওয়াল জামআ’ত
বিরোধী আকীদা প্রচার করার
কারণে তৎকালীন বড় আলেম যেমন শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী, শায়খ ইবনে উষায়মিন,
শায়খ মুহাম্মাদ আমান আল-জামি আর বর্তমানে জীবিত আছেন তাদের মাঝে শায়খ সালেহ আল-ফাওজান,
শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালীসহ বহু আলেম-উলামা সাইয়েদ কুতুবের লেখালিখির বিরুদ্ধে
মানুষকে সতর্ক করেছেন।
যাইহোক, কুতুবের অনেক অন্ধভক্ত তার চরমপন্থী লেখালিখির পরেও আজ পর্যন্ত
ঐগুলোই নিয়ে পড়ে আছে, আর জমীনের বুকে ফাসাদ সৃষ্টি করে বেড়াচ্ছে। তাই এরকম আহলে সুন্নত বিরোধী লেখক
ও বক্তাদের থেকে আপনারা সাবধান থাকবেন, যদিও সে যতই ভালো লেখালিখি করুক বা সুন্দর সুন্দর
লেকচার দিয়ে বেড়াক না কেনো।
কারণ এদের কারণে ইতিমধ্যেই অনেকেই হক্ক ছেড়ে বাতিলের দিকে ঝুঁকে পড়েছে।
____________________________________
খারেজী
আরবীতে খারেজী মানে, যে বের হয়ে
গেছে। এক হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “পরবর্তী যামানায় এমন ধরণের লোক বের হবে, যারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে, যেমনিভাবে
তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়।’’ তিরমিজি, হাসান সহীহ, আবু দাউদ, সহীহ।
তাদের আরেকটি বিশেষ স্বভাব হচ্ছে,
তারা সকল খলিফা রাশেদীনের বিরুদ্ধে
অস্ত্র হাতে বের হয়েছে।
অস্ত্রের মাথায় ক্বুরআন বেঁধে যুদ্ধ করেছে। এই দুইটি বিশেষ কারণেই তাদেরকে খারেজী
বলা হয়। তাদের উল্লেখযোগ্য
অন্যান্য স্বভাবগুলির
মধ্যে অন্যতম হল, আল্লাহ ছাড়া কেউ শাসন করতে পারেনা, বলে সর্বদা স্লোগান দিয়েছে। উষমান রাদিয়াল্লাহু আ’নহুকে কতল করার সময় বলেছে, “যদি আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন উদ্দেশ্য না হতো,
তাহলে তোমাকে হত্যা করতাম নাহ।’’
তাদের সকল কাজকে তারা আল্লাহ ভক্তির
চরম নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরেছে।
খারেজী কোন দলের নাম নয়, এটা একটি গুণবাচক নাম। যে খারেজী, সে শুধু শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করে তা নয়। বরং, তার আরো অনেক আকীদা বিশ্বাস ও আমলের দিক থেকে
গোমরাহী রয়েছে, যা ইসলাম অনুমোদন করেনা।
যদিও সে নিজেকে একনিষ্ঠ আল্লাহর গোলাম বলে মনে করে।
খারেজীরা হল চরমপন্থী। সে নিজে যা বুঝে, তা সকলের উর্ধে বলে বিশ্বাস
করে। সে মনে
করে, তার মত
সৎ ও আল্লাহভীরু আর কেউ নয়।
সে ছোট গুনাহ করাকে কুফুরী কাজ বলে মনে করে। সামান্য গোনাহ কারীকেও কাফের বলে
মনে করে। এবং তার
জান-মাল লুণ্ঠন করা জায়েজ বলে মনে করে।
খারেজীরা রাসুলের কাজে ভুল ধরেছে। যেমন করেছিল আবুল খোয়াইসারা। সাহাবাদের কাজে ভুল ধরেছে, যেমন
করেছে আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা নামের খারেজী যে পরে “শীয়া” মতবাদ প্রচার করেছিলো।
খুলাফায়ে রাশেদীনের কাজে ভুল ধরেছে, যেমন করেছে ওরওয়াহ ইবনে আজনাবাহ। তাদের মতানুযায়ী যারা শুদ্ধ হয়নি, তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছে। জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে খুন করেছে। তারাই খোলাফায়ে রাশেদীনের মত খলিফাদেরকে
হত্যা করেছে। হাজার হাজার
সাহাবীকে কারবালা, নাহরাওয়ান্দ, জামাল ও সীফফিনের ময়দানে হত্যা করে উল্লাস করেছে। আর রাত্রিতে তাবুতে গিয়ে রাতভর ক্বুরআন
তেলাওয়াত করে চোখের জলে বুক ভাসিয়েছে।
তাহাজ্জুদ নামাযে দাঁড়িয়ে থেকে পা ফুলিয়েছে।
শুধু মতবিরোধের কারণেই তাদেরকে খারেজী
বলা হয় নাই। বরং “হিবরুল উম্মাহ” ইবনু আব্বাস
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু, “গোলামুন মোয়াল্লাম” ইবনু মাসউদ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর
মত ফকীহগনের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজেরা যা বুঝেছে সে মতে সকল
সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের প্রসঙ্গে
বলেছেন, “তারা ক্বুরআন পড়বে, কিন্তু ক্বুরআন তাদের গ্রীবার নীচে
প্রবেশ করবেনা (অর্থ বুঝবেনা)।
তাদের নামাজ দেখলে কেউ নিজের নামাজকে তুচ্ছ মনে করবে। তাদের ক্বুরআন পড়া দেখলে নিজের ক্বুরআন তিলাওয়াতকে তুচ্ছ মনে করবে, মনে হবে যেন ক্বুরআন তাদের উপরেই নাযিল হয়েছে বুঝি।” আবু দাউদঃ ৪৭৬৫, সহীহ।
এমন চরিত্রের হয়েও তাদেরকে রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম “কিলাবু
আহলিন-নার’’ জাহান্নামের কুকুর বলেছেন। ইবনু মাজাহঃ ১৭৩, সহীহ।
এবং বলেছেন, “আমি যদি
খারেজীদের সময় বেঁচে থাকতাম,
তাহলে তাদেরকে আ’দ জাতির
মত করে হত্যা করতাম।”
উপরের সবগুলো স্বভাব ও চরিত্র কারো
মধ্যে না পাওয়া গেলে তাঁকে সরাসরি খারেজী বলা ঠিক হবেনা বরং, তার কোন এক স্বভাব বা
চরিত্রকে খারেজী চরিত্র বলা যেতে পারে।
শুধু কেউ কারো সমালোচনা করলেই খারেজী হয়ে যায়, এমনটি মনে করা ঠিক নয়। তবে খারেজীদের মত নরম ও গরম স্বভাবের
আল্লাহওয়ালা বর্তমানে অসংখ্য,
তাতে সন্দেহ নেই।
কিন্তু তাই বলে কাউকে সরাসরি খারেজী বলা উচিৎ নয়।
লিখছেন - Shaikh Muzammel Al-hoque
সহীহ
বুখারী, সহীহ
মুসলিম এবং অন্যান্য হাদীসের
কিতাবে খারেজীদের আরো কিছু গুণ বর্ণনা করা হয়েছে।
খারেজীদের
প্রধান কয়েকটি বৈশিষ্ট্যঃ
(১) তাদের
বয়স কম হবে।
(২)
জ্ঞানের দিক থেকে মিসকীন হবে।
(৩)
সুন্দর সুন্দর কথা বলবে।
(৪)
আলেমদের সাথে সবচাইতে বেশি শত্রুতা পোষণকারী হবে।
(৫)
মুসলিমদেরকে পাইকারি হারে কাফির বলে ঘোষণা করবে।
(৬)
শরিয়াহ কায়েম করার নামে অন্যায় যুদ্ধ ও রক্তপাত করবে।
(৭) দাঁড়ি শেইভ করবে।
____________________________________
আধুনিক যুগের কতিপয় চরমপন্থী নেতৃবৃন্দের ভ্রান্ত আকীদাহঃ
সাইয়েদ কুতুব (মিসর, ১৯০৬-১৯৬৬)
জামাতে ইসলামী, ইখোয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড),
আল-কায়েদাহ, আইসিস, বোকো হারাম হিযবুত তাওহীদ, আনোয়ার আওলাকি, জসীম উদ্দিন রাহমানী বা এমন
অন্যান্য চরমপন্থী দল ও ব্যক্তিদের অনুসৃত
আদর্শগুরুদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যক্তিত্ব হচ্ছে সাইয়েদ কুতুব। দ্বীন কায়েম, খিলাফত প্রতিষ্ঠা,
ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের অভিনব
ব্যখ্যা দিয়ে কথিত ‘ইসলামিক
আন্দোলন’ এর মতাদর্শ প্রচারকারী সাইয়েদ কুতুব সম্পর্কে আরব বিশ্বের ৮-জন
বড় আলেমের ফতোয়ার ভাবানুবাদ তুলে ধরা হলো।
(১) শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ
আজ থেকে ৩৫ বছর পূর্বে বলেছিলেন, “সাইয়েদ কুতুবের লিখিত
সমস্ত কিতাব ধ্বংস
করা জরুরী।”
(২) শায়খ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন
আলবানী রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “সাইয়েদ কুতুবের দ্বারা অনেকে ইসলামের দিকে উৎসাহিত হয়েছে, কিন্তু
সে কোন আলেম ছিলোনা।
সে মানুষকে ইসলামের দিকে দাওয়াত
দিতো; কিন্তু ক্বুরআন, সুন্নাহ ও সালফে সালেহীনদের আদর্শ
সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিলোনা।
তাকে রদ্দ (প্রত্যাখ্যান)
করা ওয়াজিব, তবে সেটা নম্রভাবে করতে হবে।”
(৩) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উষায়মিন রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যদি আল্লাহর ভয় না থাকতো, তাহলে আমরা সাইয়েদ কুতুবকে কাফের বলে ফতোয়া দিতাম।”
(৪) সাইয়েদ কুতুব লিখেছিলো, “মুয়াবিয়া এবং তাঁর দুষ্কর্মের সাথী আ’মর ইবনে আস মিথ্যা, প্রতারণা, মুনাফেকী, ঘুষের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। কিন্তু আলী তাদের মতো এতো নীচে নামতে
পারেন নি বলে তিনি তাদের সাথে জয়ী হতে পারেন নি।”
মুয়াবিয়া এবং আ’মর ইবনে আস
রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমার মতো সম্মানিত
দুইজন সাহাবীর প্রতি সাইয়েদ
কুতুব কর্তৃক এরকম জঘন্য অপবাদের ব্যপারে
শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন
আব্দুল্লাহ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহকে
প্রশ্ন করা হলে
তিনি বলেন, “(সাইয়েদ
কুতুব মুয়াবিয়া এবং আ’মর ইবনে
আস সম্পর্কে যা বলেছে), এটা কোন
নিকৃষ্ট বাতিনি (শীয়া) অথবা কোন অভিশপ্ত ইয়াহুদীর কথা, এমন কথা কোন মুসলিম বলতে পারেনা।”
(৫) শায়খ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “সাইয়েদ কুতুব একজন জাহেল, তার জ্ঞান নেই, সে যা বলে তার কোন দলীল
নেই। অতীত থেকে এখন
পর্যন্ত আলেমরা সাইয়েদ কুতুবকে রদ্দ করে আসছেন।” (ক)
শায়খ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ আরো বলেছেন, “সাইয়েদ
কুতুব একজন জাহেল, এ কারণে
(তার এমন কিছু যা কুফুরী, সেইগুলোর কারণে) তাকে কাফের বলে ফতোয়া দেওয়া হবেনা।” (খ)
সাইয়েদ কুতুবকে রদ্দ করে লেখা শায়খ
রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী হা’ফিজাহুল্লাহর লিখিত “আদওয়া ইসলামিয়া আলা আক্বিদাত-সাইয়েদ কুতুব ওয়াল ফিকরিহ” বইটির
ব্যপারে শায়খ ফাউজানকে
প্রশ্ন করা হলে
তিনি বলেন, “এই বইটা লেখা (দাওয়াতের জন্যে) খুব
ভালো একটা কাজ এবং এর লেখক (শায়খ
রাবী) একজন মুহসিন ব্যক্তি।” (গ)
(৬) শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী
হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “আমরা আল্লাহকে
ভয় করি এবং একারণে
সাইয়েদ কুতুবকে কাফের বলে
ফতোয়া দেই না, যদিও তার বইয়ে কিছু চরম
কুফুরী পর্যায়ের
কথা-বার্তা রয়েছে।
যে ব্যক্তি সাইয়েদ কুতুবের বই প্রকাশ করে, সেগুলোকে সমর্থন ও প্রচার করে, আমরা তার সমালোচনা করি। এমন
ব্যক্তিরা অনেক বড় পথভ্রষ্টতাকে আশ্রয় দিচ্ছে।”
(৭) শায়খ উবায়েদ আল-জাবেরী হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “সাইয়েদ
কুতুব হচ্ছে কুতুবীদের ইমাম, আর কুতুবীরা হচ্ছে ইখোয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুডের) একটা শাখা। সাইয়েদ কুতুবের লেখা কিতাব ‘ফী যিলালিল কুরআন’ আসলে হচ্ছে
‘ফী যিলালিশ-শায়তান’, ক্বুরআনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। বর্তমান যুগে (মুসলমান) সমাজ যেই সমস্ত আত্মঘাতী
বোমা হামলা, গুপ্ত হত্যা ও তাকফীরের মতো বিপর্যয়ের মোকাবেলা করছে, এর উৎস হচ্ছে সাইয়েদ
কুতুব।”
(৮) শায়খ সালেহ লুহাইধান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন,
“আমি সাইয়েদ কুতুবের কিতাব ছোটকাল থেকেই পড়েছি। আমি
তার লেখা তাফসীর ফি যিলালিল ক্বুরআন পড়েছি। আমার কাছে নিশ্চিত মনে হয়েছে যে, তার তাফসীর
কোন তাফসীরের কিতাব নয়, বরং কোন উপন্যাসের বই। তার কিতাবগুলোকে ইসলামী কিতাব বলার সুযোগ নেই। কারণ,
সেইগুলো কোন ইলমের কিতাব নয়। বরং, তার সকল কথার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতা পাওয়ার
পথ আবিস্কার করা, এবং সেইজন্য কি করনীয়, তা বর্ণনা করা। ইখওয়ানুল মুসলিমিন (Muslim Brotherhood) তাওহীদ ও আক্বীদাকে
গুরুত্ব দেয় না। তারা শিয়া, সুফী এমন সকল দলের সাথে একাকার হয়ে যেতে চায়। উদ্দেশ্য
দল ভারী করা, শক্তি বৃদ্ধি করা।”
(৯) শায়খ রমাযান আল-হাজিরী হা’ফিজাহুল্লাহ
বলেছেন, “খারেজীদের কথা বললে মানুষ মনে করে যেন অতীর যুগের ইতিহাস শুনছে। আসলে এখন তা ইতিহাস নয়, বরং খারেজী
ফেতনাহ বাস্তব। এই খারেজী
আক্বীদাকে জিন্দা করেছে এ যুগের ইখোয়ানুল
মুসলিমীন (মুসলিম ব্রাদারহুড),
যাদের শিরোমনি ছিল হাসান আল-বান্না ও সাইয়েদ কুতুব। আর বর্তমানে তাদের মূল হোতা
হচ্ছে ইউসুফ আল-কারজাবী।” (ক)
শায়খ রামাযান আল-হাজিরী হা’ফিজাহুল্লাহ
আরো বলেছেন, “সাইয়েদ কুতুব বলেছিলো, “বর্তমান যুগে কোন ইসলাম নেই, ইসলামের
পতাকাবাহী কোন দল বা ব্যানার নেই এবং কোন ইসলামী ব্যবস্থা নেই।”
সাইয়েদ কুতুব হচ্ছে বর্তমান যুগের
তাকফিদের ‘শায়খ’ (ধর্মগুরু বা আদর্শ নেতা)। বরং, সাইয়েদ
কুতুব হচ্ছে তাকফিরীদের জন্য মূল দলীল বা
উৎস। আপনি কি জানেন, সাইয়েদ কুতুব উষমান রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর খিলাফত সম্পর্কে কি মন্তব্য করেছে?
সাইয়েদ
কুতুব বলেছে,
“উষমান রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর খিলাফত ইসলামী ইতিহাসে একটা শূণ্যস্থান (অর্থাৎ তা মোটেও
ইসলামিক নয়)।”
আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, রাফেজীরা সাইয়েদ কুতুবের প্রশংসা করে এবং তার
নামে ইরানে একটি রাস্তা
নির্মান করেছে। এমনকি তাকে
ইসলামী ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ
ব্যক্তির মর্যাদা দিয়ে তার ছবিসহ পোস্টাল স্ট্যাম্প প্রকাশ
করেছে। আমি শুনেছি
খোমাইনীর পুত্র সাইয়েদ কুতুবের প্রশংসা করে।
এমনকি আমি এটাও শুনেছি যে, ওমানের খারেজীদের বড় একজন নেতা ও মুফতি, যার নাম হচ্ছে আল-খালিলি, সেও সাইয়েদ কুতুবের প্রশংসা করে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, রাফেজী এবং
খারেজীরা সাইয়েদ কুতুবকে ভালোবাসে।
কিন্তু আমরা আল্লাহর জন্যে সাইয়েদ কুতুবকে ঘৃণা করি। সাইয়েদ কুতুব নবী ও রাসুলদের সম্পর্কে কটু মন্তব্য করেছে (নাউযুবিল্লাহ)!
আর এই ব্যক্তি হচ্ছে ইখোয়ানুল মুসলিমিনের আদর্শ নেতা।” (খ)
(১০)
আঈয়েদ সাম্মেরী হা’ফিযাহুল্লাহ বলেছেন, “তাদের মিথ্যার ফাঁদে পড়ে
সবচাইতে বেশী
ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি আমরা সৌদিরা। মানবিক কারণে তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে আমরা মারাত্মক ভুল করেছিলাম। বলা হয় “সাইয়েদ কুতুবকে ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’
কালিমার কারণে ফাঁসি
দেওয়া হয়েছে। এমন দাবী তাজা মিথ্যা কথা। সাইয়েদ কুতুবের ফাঁসি হয়েছে তার
পরিকল্পনায় ও নির্দেশনায় মিশোরের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করার কারণে। তার ফাঁসি হয়েছে গোপনে কিলিং
মিশন পরিচালনা করার অপরাধে।”
আলেমদের ফতোয়া সমূহের উৎস
(১) শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ
ক - https://www.youtube.com/watch?v=JNKG9AiDnFU
খ - https://www.youtube.com/watch?v=JZHD4XqxtRo
(২) শায়খ মুহাম্মাদ নাসির উদ্দিন
আলবানী রহি’মাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=aRHt4hE7zDY
(৩) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন
রহি’মাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=1TyYqRPLrC8
(৪) শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন আব্দুল্লাহ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=JZHD4XqxtRo
(৫) শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ
ক - https://www.youtube.com/watch?v=GwZpQVhzhYM
খ - https://www.youtube.com/watch?v=JGD0rOeWY7I
গ - https://www.youtube.com/watch?v=qIQvcnAoAH4
(৬) শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী
হা’ফিজাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=lle7wwCJ1LE
(৭) শায়খ উবায়েদ আল-জাবেরী হা’ফিজাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=1TyYqRPLrC8
(৯) শায়খ রামযান আল-হাজিরী হা’ফিজাহুল্লাহ
ক - https://www.youtube.com/watch?v=Tt12fN92G5c
খ - https://www.youtube.com/watch?v=ym0v20Yeot8&feature=youtu.be
(১০)
আঈয়েদ সাম্মেরী হা’ফিযাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=GEcpWYLFu7M
____________________________________
সাইয়েদ কুতুবের ভ্রান্ত আকীদাহ
মাওলানা মওদুদীর লেখনীর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সাইয়েদ কুতুব একই
ভাবধারায় তার লেখনী পরিচালনা করেছেন।
সাথে সাথে তার অনুসারী দল ইখওয়ানুল মুসলেমীনকেও সেইভাবেই পরিচালিত করেছেন। সাইয়েদ কুতুব খারেজীদের ন্যায় মুসলিম উম্মাহকে হয় কাফের না হয় মুমিন,
এইভাবে দুই ভাগ করে বলেছেন, “লোকেরা
আসলে মুসলমান নয়, যেমনটা তারা দাবী করে থাকে। তারা জাহেলিয়াতের জীবন যাপন করছে। তারা ধারণা করে যে, ইসলাম এই জাহেলিয়াতকে
নিয়ে চলতে পারে। কিন্তু
তাদের এই ধোঁকা খাওয়া ও অন্যকে ধোঁকা দেওয়ায় প্রকৃত অবস্থার কোনই পরিবর্তন হবেনা। না এটি ইসলাম, এবং না তারা মুসলমান।” মাআ’লিম ফিত-তারীক্ব পৃঃ ১৫৮।
সাইয়েদ কুতুব আরো বলেছে, “কালচক্রে
দ্বীন এখন শুধুমাত্র
লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহতে
এসে দাঁড়িয়েছে। পূর্বে
ও পশ্চিমের মানুষ সর্বত্র মসজিদের মিনার সমূহে লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহর ধ্বনি বারবার
উচ্চারণ করে, কোনরূপ
বুঝ ও বাস্তবতা ছাড়াই।
এরাই হচ্ছে
সবচাইতে বড় পাপী
ও কিয়ামতের দিন সবচাইতে কঠিন শাস্তির
অধিকারী। কেননা তাদের
কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হওয়ার পরেও এবং তারা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে থাকার পরেও তারা মানুষ
পুঁজার দিকে ফিরে গেছে।” সাইয়িদ কুতুবের লেখা তাফসীর ফী যিলালিল কুরআ’ন, সুরা আনআ’মঃ আয়াত
১৯-এর ব্যাখ্যা, ২/১০৫৭ পৃষ্ঠা।
সাইয়েদ কুতুব আরো বলেন, “বর্তমান বিশ্বে কোন মুসলিম রাষ্ট্র নেই বা কোন মুসলিম সমাজ নেই।” ফী যিলালিল
কুরআ’ন, সুরা হিজরের ভূমিকা, ৪/২১২২ পৃষ্ঠা।
বর্তমান যুগে মুসলমানদের দ্বারা
পরিচালিত মসজিদগুলিকে কুতুব “জাহেলিয়াতের ইবাদতখানা” বলে আখ্যায়িত
করেছেন (নাউযুবিল্লাহি মিন
যালিক!)।
ফী যিলালিল কুরআ’ন, সুরা ইউনুস,
৮৭ আয়াতের ব্যাখ্যা ৩/১৮১৬।
সাইয়েদ কুতুব মাওলানা মওদুদীর ন্যায় ‘আল্লাহর ইবাদত’ ও ‘সরকারের
আনুগত্যকে’ সমান মনে করেছেন এবং অনৈসলামিক
সরকারের আনুগত্য করাকে ‘ঈমানহীনতা’ বলে গণ্য করেছেন। ফী যিলালিল কুরআ’ন, সুরা নিসা ৬০ আয়াতের ব্যাখ্যা, ২/ ৬৯৩ পৃষ্ঠা।
সাইয়েদ কুতুব একটি মাত্র বিষয়েও
অন্যের অনুসরণ করলে সেই
ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন থেকে বেরিয়ে (কাফের হয়ে) যাবে বলে ধারণা করেছেন। ফী যিলালিল কুরআ’ন, ২/৯৭২ পৃষ্ঠা।
সাইয়েদ কুতুব বলেন, “ইসলামে জিহাদের উদ্দেশ্য হলো, ইসলাম
বিরোধী শাসনের বুনিয়াদ ধ্বংস করে দেওয়া এবং
তার স্থলে ইসলামের
ভিত্তিতে রাষ্ট্র কায়েম করা।” ফী যিলালিল
কুরআ’ন, ৩/১৪৫১ পৃষ্ঠা।
এমনিভাবে আলেমগণ সাইয়েদ কুতুবের অন্যান্য বই ছাড়াও শুধুমাত্র তাফসীর ‘ফী যিলালিল কুরআন’ এ আক্বীদাগত
ও অন্যান্য বিষয়ে ১৮১-টি
ভুল চিহ্নিত করেছেন।
মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হুসাইন, ফিতনাতুত-তাকফীর ওয়াল হাকিমিয়াহ,
পৃষ্ঠা ৯৮।
মাওলানা মওদুদী ও সাইয়িদ কুতুবের চিন্তাধারার মাঝে কোন পার্থক্য
নেই। কবীরা গোনাহগার
মুসলমানদের তারা মুসলমান হিসেবে
মেনে নিতে চাননি।
বরং তাদেরকে মুসলিম উম্মাহ থেকে খারিজ বলে ধারণা করেছেন। এর ফলে তারা সম্মানিত সাহাবী ও সালাফে
সালেহীনের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন। সাথে সাথে পদচ্যুত করেছেন তাদের
অনুসারী অসংখ্য মুসলিমদেরকে।
অথচ এমন পথভ্রষ্ট
চিন্তা-ফিকিরের কোন বাস্তবতা এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের
যুগেও ছিল না।
তখনও মুসলমানদের মধ্যে ভাল-মন্দ, ফাসিক-মুনাফিক, সব-ই ছিল।
কিন্তু কবীরাহ গুনাহর কারণে
কাউকে তারা কাফির এবং মুসলিম উম্মাহ থেকে খারিজ বলতেন না। সেকারণ আধুনিক যুগের আলেমগণ এসব
দল ও তাদের অনুসারী
দলসমূহকে এক কথায় “জামাতুত তাকফীর” অর্থাৎ
“অন্যকে কাফের ধারণাকারী চরমপন্থী দল” বলে অভিহিত করে থাকেন।
অথচ এইসব চরমপন্থী আক্বীদার ফলে যিনি মারছেন ও যিনি মরছেন, উভয়ে মুসলমান। আর এটাই তো শয়তানের পাতানো ফাঁদ,
যেখানে তারা পা দিয়েছেন।
অতএব, সকলের কর্তব্য হবে সর্বাবস্থায় আমর বিল মা’রুফ ও নাহি আ’নিল মুনকার
(সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজে বাধা দেওয়ার) মৌলিক দায়িত্ব পালন করা এবং মুসলিম-অমুসলিম
সকলের নিকট ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা।
উৎসঃ ‘জিহাদ ও ক্বিতাল’ ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠা। সংকলনঃ
ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব।
____________________________________
“তারা মুজাহিদ, তবে শয়তানের রাস্তায়...”
আইসিস, আল-কায়েদাহ,
জেএমবি, বোকো হারামের মতো চরমপন্থী, জংগী সংগঠনগুলোর ব্যপারে মদীনার আলেমদের ফতোয়াঃ
মসজিদে নববী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের ইমামদের মাঝে শায়খ সালাহ আল-বুদাইর হা’ফিজাহুল্লাহ আমার খুব প্রিয়
একজন ক্বারী। আজ থেকে প্রায় নয় বছর পূর্বে
এই শায়খের অনেক তেলাওয়াত শুনতাম, অত্যন্ত মিষ্টি তাঁর কন্ঠ, শুনলেই অন্তরটা নরম হয়ে
আসে এমনই মধুর। তাঁর ব্যক্তিগত আমল-আখলাক অত্যন্ত সুন্দর, মাশাআল্লাহ। তাঁর ব্যপারে
আইসিসের অনুসারী অস্ট্রেলিয়ান রিভার্ট মুসা সেরান্টানিও পর্যন্ত
বলতে বাধ্য হয়েছিলো, তিনি অত্যন্ত ভালো একজন মানুষ।
যাই হোক, কথিত
খিলাফতের দাবীদার আইসিস বা দাইয়ি’শের উপরে মদীনার সম্মানিত এই খতিব ২০১৫
সালের ১৪-ই আগস্ট মসজিদে নববীতে গুরুত্বপূর্ণ একটি খুতবাহ দেন। তাঁর খুতবার মূল শিরোনাম ছিলঃ “দাইয়িশ ইসমুন জামিউন লিল খুবুছি ওয়াল খাবাইছ।”
শায়খ সালাহ আল-বুদাইর হা’ফিজাহুল্লাহ সেই খুতবার মাঝে
বলেন, “পেশাব-পায়খানায় যাওয়ার পূর্বে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যেই দুয়াটি পড়তে বলেছেন সেটি হচ্ছে – اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبائِث
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী
আ’উযুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবা-ইস।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার
নিকট খবিস (অপবিত্র) পুরুষ জিন ও নারী জিন থেকে আশ্রয় চাই।
দাইয়িশ (ইংরেজীতে আইসিস বা আইএস) এর ব্যাপারেও আমাদের এমন অবস্থান হওয়া উচিত।”
শায়খের কথার ব্যাখ্যাঃ
বাথরুমে খবিস জিনেরা থাকে। একারণে বাথরুমে যাওয়ার পূর্বে তাদের ক্ষতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়। দাইয়িশ বা আইসিস হচ্ছে, খারেজীদের একটা দল, যাদের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে খুন ও
মুসলিম সমাজে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা, যদিওবা তারা নিজেদেরকে মুজাহিদ বলে দাবী করে। এমন নিকৃষ্ট খারেজীদের ব্যপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শেষ যামানায় একদল তরুণ বয়সী, নির্বোধ লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সবচাইতে উত্তম
কথা বলবে। তারা ইসলাম থেকে এত দ্রুত
গতিতে বের হয়ে যাবে, যেইভাবে তীর ধনুক থেকে বের
হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী
অতিক্রম করবে না। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে
সেখানেই হত্যা করবে। কারণ যে তাদেরকে হত্যা করবে
তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নেকী রয়েছে।” সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবু দাউদঃ ৪৭৬৭, নাসাঈ।
শায়খ সালাহ আল-বুদাইর হা’ফিজাহুল্লাহর অভিমত হচ্ছে,
খবিস জিনের ক্ষতি থেকে যেমন আমাদের আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হয়, ঠিক তেমনি আইসিসের
ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্যে আমাদের আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া উচিত। এ কথা কতটা সত্যি, তাদের কৃত কিছু কাজের নমুনা দিলে আপনারা খুব সহজেই বুঝতে পারবেন। এমনই কয়েকটি
উদাহণ এবং তার উপরে মূল্যায়নঃ
(১) বিগত ৬-ই আগস্ট ২০১৫ইং তারিখ, রোজ বৃহস্পতিবার সউদী আরবের ‘আসির’ নামক এলাকায় একটি মসজিদে
জোহর সালাতের জামাত চলাকালে আইসিস খারেজীদের
একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী বোমা বিষ্ফোরণ ঘটায়। এতে হামলাকারী ছাড়া অন্তত ১৫-জন মুসল্লি নিহত হন। এদের মধ্যে চারজন বাংলাদেশী নাগরিকও রয়েছেন, যারা ঐ মসজিদের রক্ষণা-বেক্ষণকারী ছিলেন। নিহত ১১-জন সউদী নাগরিকের মধ্যে পাঁচজন সউদী আরবের নিরাপত্তা বাহিনীর
স্পেশাল ফোর্সের সদস্য ছিলেন। তাদের কাজ ছিলো, হজ্জের সময়
নিরাপত্তা বাহিনীর দায়িত্ব পালন করা। আইসিস বা আইএস-এর খারেজীরা জঘন্য এই কাজটি করেছিলো। ইতিপূর্বে ২০১৫ সালে রমযান মাসের প্রথম জুমুআ’হর দিন সীমান্ত বাহিনীর লোকেরা যখন জুমুআ’হর সালাত পড়তে যান, সেই সুযোগে তাদের
উপর আইসিস বাহিনী আক্রমন চালিয়েছিলো।
(২) এই আইসিস খারেজীদের
অনুসারীরা ২০১৬ সালের ১-লা জুলাই আমাদের দেশে গুলশানের একটি হোটেলে রমযান মাসে
তারাবীর সালাত না
পড়ে নিরীহ কতগুলো বিদেশী
জিম্মি করে অন্যায়ভাবে তাদেরকে হত্যা করে। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ‘মুআহিদ’ তথা
চুক্তিবদ্ধভাবে মুসলিম দেশে বসবাসকারী কোন অমুসলিমকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের
সুঘ্রাণও পাবে না (জান্নাতে যাওয়া তো দূরে থাক), অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ চল্লিশ
বছরের রাস্তার দূরত্ব থেকে পাওয়া যাবে।” সহীহ বুখারীঃ
৩১৬৬।
জানিনা এরা গুলশানে কিছু নিরীহ
কাফির, যাদের বেশিরভাগ ছিলো আমাদের বন্ধুপ্রতিম জাপান বা অন্যান্য দেশের নাগরিক,
তাদেরকে হত্যা করে এই
উম্মতের কি উপকার করেছে।
জানিনা এদের গুলশান আক্রমন দ্বারা ফিলিস্থিন, সিরিয়া, কাশ্মীর, ইরাক বা
আফগানিস্থান, বার্মার
নির্যাতিত মুসলিমদের দুঃখ কতটুকু লাঘব হয়েছে? কিন্তু, এদের আক্রমনের ফলে বাংলাদেশ
সরকার, পুলিশ ও গোয়েন্দা বাহিনীর কাছে ধার্মিক মুসলমানেরা টার্গেট হচ্ছে। সরকার বা পুলিশ চিনেনা কে জংগী
আর কে মুসলমান। তাই
আজকে ইউনিভার্সিটির হলগুলোতে দাঁড়ি টুপি, হিজাব-পর্দা দেখলে, ইসলামী বই-পুস্তক
দেখলেই তাকে সন্দেহ করা হচ্ছে, জংগী বলে হেনস্থা করা হচ্ছে। জংগী সন্দেহে বা আতংকে, চরমপন্থা প্রচারের মিথ্যা অপবাদ
দিয়ে ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগ, মজলিস ও মাহফিল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। অনেক সময় আইন-শৃংখলা বাহিনী
কর্তৃক গ্রেফতার ও নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু তখন এই খারেজীরা
মুসলমানদেরকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসছে না। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে কাপুরুষের
মতো শুধুমাত্র দুই-চারটা নিরস্ত্র কাফির হত্যা করা আর নিজেরা আত্মহত্যা করা আর
নয়তো পাখির মতো গুলি খেয়ে পুলিশের
হাতে মরা। কিন্তু তাদের এই অন্যায়, ইসলাম
বিরোধী আক্রমনের ফলে সাধারণ মুসলমানেরা যে কত বড় বিপদে পড়ছে, এটা চিন্তা করার মতো
মানবীয় হৃদয় বা এটা বুঝার
মতো বিবেক-বুদ্ধি
তাদের নেই।
(৩) ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সৌদী আরবে আইসিসের সমর্থক একজন
ফিলিস্থিনী লোক ধরা পড়েছিলো, যে
কিনা সৌদী আরবে
জনসাধারণের উপরে আক্রমন করার জন্যে পরিকল্পনা করছিলো। চিন্তা করে দেখুন, ‘মুজাহিদ’
দাবীদার এই খারেজীরা কত বড়
নির্বোধ! ১৯৪৮
সাল থেকে অভিশপ্ত ইয়াহুদীরা তার জন্মভূমি ফিলিস্থিন দখল করে রেখেছে, সেখানে কত যে
মুসলমানদেরকে তারা হত্যা করেছে এবং এখনও করছে. . .সেই ইয়াহুদীদেরকে বাদ দিয়ে সে
সৌদী আরবের
মতো নিরাপদ ভূমিতে মুসলিমদেরকে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্র করছিলো।
এরপরেও নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লামের সহীহ
হাদীস অনুযায়ী এই সমস্ত “জাহান্নামের
কুকুর”
খারেজীদেরকে যেই সমস্ত নারী ও পুরুষেরা ‘হক্কপন্থী’, ‘মুজাহিদ’, ‘উম্মতের
জন্যে কল্যাণকামী’ বলে
মনে করবে, এদেরকে ‘প্রবৃত্তি
পূজারী’ ছাড়া
আর কি বলা যেতে পারে? এদের মতো বিবেক বর্জিত লোকদের ব্যপারে ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ১১০ হিজরী) বলেছিলেন, “আমার মনে
হয় আজকে যদি দাজ্জাল বের হয় তাহলে মনপূজারী, বিদআ’তীরা তাকেই
অনুসরণ করবে।” শরাহ উসুল আল-ইতিক্বাদ আহলে সুন্নাহঃ
১/১৩১।
এইভাবে আইসিস, আল-কায়েদাহ, জেএমবি,
বোকো হারামের মতো চরমপন্থী, জংগী সংগঠনগুলো বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মসজিদে সালাতরত অবস্থায় অনেক মুসলমানদেরকে
হত্যা করেছে, যদিও তারা মুখে দাবী করছে তারা ইসলামের পবিত্র বিধান ‘জিহাদ’ করছে, এবং এইভাবে তারা ‘দ্বীন কায়েম’ করবে। নামধারী এই সংগঠনের লোকেরা কুরআন-হাদীস না জেনেই নিজস্ব মনগড়া পদ্ধতিতে ইসলাম নাম দিয়ে সন্ত্রাসবাদ প্রচার করে
ইসলামের দাওয়াতী কাজে বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসছে। ইসলামের বন্ধু নাম নিয়ে শত্রুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া এই খারজীরা এটা জানেনা
যে, সালাতরত অবস্থায় কোন মুসলমান মারাতো
দূরের কথা, গির্জার ভেতর উপাসনারত কোন নিরীহ খ্রীস্টানকেও হত্যা করতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নিষেধ
করেছেন। তিনি বলেছেন, “তোমরা উপাসনালয়ে উপাসনারত
ব্যক্তিদেরকে হত্যা করোনা।” মুসনাদে আহমাদ।
জিহাদ নাম দিয়ে ফেতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করা ও মুসলমানদেরকে
নির্দয়ভাবে হত্যার করার কারণে মদীনার সবচাইতে বড় আলেম, আল্লামাহ আব্দুল মুহ’সিন আল-আব্বাদ হা’ফিজাহুল্লাহ আইসিসের মূল সংগঠন ‘আল-কায়েদাহ’ এর ব্যপারে বলছিলেন, “তারা (আল-কায়েদাহ) মুজাহিদ, তবে শয়তানের রাস্তায়। নাআ’ম।”
____________________________________
জিহাদের নামে নিরপরাধ নারী ও
শিশুদেরকে হত্যা করা যাবে?
২০১৪ সালের ১৬-ই ডিসেম্বর পাকিস্তানের
পেশোয়ারে আর্মিদের দ্বারা পরিচালিত একটি স্কুলের ক্লাসরুমে ঢুকে কয়েকজন রক্তপিপাসু
ভয়ংকর খুনি “ইয়াহুদী” স্টাইলে ঠান্ডা মাথায়, পরিকল্পিতভাবে গুলি করে একে একে ১৩০ জনের বেশি ছাত্রকে হত্যা করে। “তেহেরিকে তালেবান” নামে চরমপন্থী, জংগী একটি সংগঠন, যারা এই সন্ত্রাসীদেরকে ব্রেইন ওয়াশ করে মানবতাবিরোধী এই কাজ করতে
পাঠিয়েছে, তারা দাবী করছে, “এইভাবে স্কুলের নিরস্ত্র, নিরীহ ছাত্রদেরকে নির্দয়ভাবে হত্যা করে তারা ইসলামের পবিত্র জিহাদ(!)
করছে!”
শুধু
তাই নয়, নিজেদের এই বর্বর কাজকে “জায়েজ” প্রমান করার জন্য চরমপন্থী, জংগীরা ক্বুরআন-হাদীসের মনগড়া অপব্যখ্যা
করে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার অপচেষ্টা করে। হক্ক কথা হচ্ছে, এরা আসলে ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের দ্বারা মগজ ধোলাই খাওয়া মুসলমান
ছদ্মবেশী গোপন এজেন্ট, যাদের মিশন হচ্ছে ইসলামের
গুরুত্বপূর্ণ একটি বিধান জিহাদকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে বিশ্ববাসীর সামনে
তুলে ধরা, যাতে করে মুসলমানদেরকে “জংগী” লেবেল দিয়ে যখন ইচ্ছা তখন আক্রমন করে মুসলমান দেশগুলো দখল করা যায়।
আল-কায়েদাহ, আইসিস, জেএমবির মতো কথিত মুজাহিদদের দাবী
হচ্ছেঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মুশরিকদের
নিরস্ত্র পুরুষ, নিরীহ নারী ও শিশু, যারা মুসলমানদের সাথে যুদ্ধ বা বিশ্বাসঘাতকতার মতো অপরাধের সাথে জড়িত
নয়, তাদেরকেও যখন ইচ্ছা টার্গেট করে নির্বিচারে হত্যা
করার অনুমতি দিয়েছেন! মানবতাবিরোধী তাদের এই সন্ত্রাসী নীতির পক্ষে নীচের এই হাদীসের অপব্যাখ্যা পেশ করে থাকে।
সা’ব ইবনু জাসসামা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা
হয়েছিল, “মুসলমানদের রাত্রিকালের অভিযানের ফলে শত্রুপক্ষের মুশরিকদের কিছু
মহিলা ও শিশুরা নিহত হয়, তাহলে কি হবে?” আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম জবাবে বলেছিলেন, “তারা মুশরিকদের সাথে বলেই গণ্য হবে।” সহীহ বুখারীঃ ৩০১২, সহীহ মুসলিমঃ ৭৫৪৫,
আবু দাউদঃ ২৬৭২, তিরমিযীঃ ১৫১৭, ইবনু মাজাহঃ ২৮৩৯, আহমাদঃ ২৭৯০২, মালেকঃ ৯৮১, দারেমীঃ ২৬৪২।
হাদীসের
ব্যখ্যাঃ
সহীহ
বুখারীর ব্যখ্যাগ্রন্থ ‘ফাতহুল
বারী’ তে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীস
সম্পর্কে বলেছেন, “এই হাদীসের অর্থ এই না যে, নারী ও
শিশুদেরকে টার্গেট করে হত্যা করা যাবে। বরং, এই হাদীসের অর্থ হচ্ছে এই যে, মুশরেকদের সাথে
যুদ্ধের সময় যদি নারী ও শিশুরা অস্ত্রবহনকারী শত্রুদের মাঝে অবস্থান করে এবং এ কারণে তারা নিহত হয়, তাহলে মুসলমানদের কোন গুনাহ হবেনা।” ফাতহুল বারীঃ সহীহ বুখারীর ৩০১২, ২৩৭০-নং হাদীসের ব্যখ্যা।
সুবহা’নাল্লাহ! চিন্তা করে দেখুন, হাদীসের কি পরিমাণ অপব্যখ্যা তারা করেছে?
হাদীসের
অর্থ হচ্ছেঃ যুদ্ধের সময় অস্ত্রবহনকারী মুশরেকদের মাঝে যদি নারী ও শিশুরা অবস্থান
করে, আর সেই অবস্থায় তাদের কেউ নিহত হয়, তাহলে কোন দোষ নেই। আর এই হাদীসকে তারা ব্যবহার করছে যুদ্ধের সাথে যাদের বিন্দুমাত্র
সম্পর্ক নেই এমন নিরস্ত্র, নিরীহ ছাত্রদেরকে আক্রমন করে
তাদেরকে গণহত্যা করার জন্য।
সবচাইতে
আশ্চর্যজনক ব্যপার হচ্ছে, জিহাদ সম্পর্কে চরম অজ্ঞ,
মনগড়া ফতোয়াবাজ এই লোকগুলো এটাও জানেনা যে, উপরের এই
হাদীসটি আসলে পরবর্তীতে ‘মানসুখ’ বা রহিত করে দেওয়া হয়েছে। নীচের এই হাদীস দ্বারা প্রথমে
বর্ণিত উপরোক্ত হাদীস রহিত করা হয়েছে।
উমর রাদিয়াল্লাহু
আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক গাযওয়া
(যুদ্ধের অভিযানে) এক মহিলাকে নিহত অবস্থায় দেখতে পেলেন। তখন রাসুলুল্লাহ অসন্তুষ্টি
প্রকাশ করেন এবং নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করে দেন।” সুনানে তিরমিযী। হাদীসটিকে ইমাম তিরমিযী রহঃ ‘হাসান সহীহ’ এবং শায়খ আলবানী রহঃ ‘সহীহ’ সাব্যস্ত করেছেন।
বুখারী
ও মুসলিমের অপর বর্ণনায় রয়েছে, “তিনি (রাসুলুল্লাহ) সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মহিলা ও শিশুদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন।” সহীহ বুখারীঃ ৩০১৪, সহীহ মুসলিমঃ ১৭৪৪,
আবু দাউদঃ ২৬৬৮, তিরমিযীঃ ১৫৬৯, ইবনু মাজাহঃ ২৮৪১, আহমাদঃ ৪৭২৫, মালেকঃ ৯৮১, দারেমী; ২৬৪২।
এ কারণে উপরে প্রথমে
বর্ণিত বুখারীর হাদীস, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম “যুদ্ধের ময়দানে অস্ত্রধারী মুশরেকদের মাঝে
অবস্থানকারী নারী ও শিশুরা নিহত হলে সেটাকে খারাপ বলেন নি”, সেই হাদীসের একজন গুরুত্বপূর্ণ রাবী,
যিনি সাহাবীর কাছ থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, বিশিষ্ট তাবেয়ী, ইমাম ইবনে শিহাব আয-যুহরী রহি’মাহুল্লাহ, সহীহ বুখারীর প্রথম হাদীসটি যতবারই বর্ণনা করতেন, ততবারই সাথে সাথে এই কথা উল্লেখ করে দিতেন যে, “পরবর্তীতে এই হাদীসটিকে রহিত করে দেওয়া হয়েছে”।
ইমাম
ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ ফাতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন, “ইমাম আয-যুহরী কখনোই সহীহ বুখারীর এই হাদীসটি
বর্ণনা করতেন না, যার সাথে সাথে এই হাদীসটিও
উল্লেখ করে দিতেন যে,
(১) “আমাকে কাব ইবনু মালিক বলেছেন, যিনি তার চাচার কাছ থেকে শুনেছেন, রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁর সৈন্যদেরকে পাঠালেন ইবনে আবিল হাকিক্বের
সাথে যুদ্ধ করার জন্য, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যেকোন
অবস্থাতেই নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা নিষিদ্ধ করেছেন, এমনকি যদিওবা শত্রুরা নারী ও শিশুদেরকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে।”
(২) সুফিয়ান
বর্ণনা করেছেন, ইমাম যুহরী আরো বর্ণনা করেছেন, “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
হুনাইনের যুদ্ধে সর্ব অবস্থাতেই নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছেন। আর এটাই ছিলো রাসুলুল্লাহর
জীবনে মুশরিকদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ যুদ্ধ।”
(৩) রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম খালিদ বিন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর কাছে
একজন দূতকে পাঠান এবং বলেন, “শিশু ও আসিফদেরকে হত্যা করোনা।” (আসিফ হচ্ছে কৃষক, সাধারণ কর্মী, দাস, বৃদ্ধ, অর্থাৎ শত্রুপক্ষের এমন লোক যারা যুদ্ধ করছেনা)।
উৎসঃ
ফাতহুল বারীঃ সহীহ বুখারীর ৩০১২, ২৩৭০ নং হাদীসের ব্যখ্যা।
আমাদের
দেশের কিছু অল্প বয়ষ্ক, জাহেল আল-মুরাক্কাব, ফেইসবুক (ফেইক) মুজাহিদরা এ ধরনের মারাত্বক অপব্যখ্যা করে “তেহেরিকে তালেবানের” এবং অন্যান্যদের সন্ত্রাসী ও বর্বর
কর্মকান্ডকে “জায়েজ” এবং এটাকে পবিত্র জিহাদ(!) সাব্যস্ত সরলমনা
মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার
অপচেষ্টা করেছিলো।
উল্লেখ করা যেতে পারে, কথিত এই অনলাইন মুজাহিদরা
আসলে আনোয়ার আওলাকি নামল একজন এমেরিকান ইংলিশ স্পিকিং বক্তার ২০১০ সালে আরবীতে দেওয়া একটা
ইন্টারভিউয়ের উপর ভিত্তি করে এই ধরণের অপব্যখ্যামূলক ফতোয়ার কপি-পেস্ট করে থাকে।
আনোয়ার
আল-আওলাকি, যাকে তারা বড় আলেম বলে মনে করে (কজন বক্তা,
যে জংগী
মতবাদ প্রচার করেছে) সেই ভিডিওতে বলেছিলো, “যুদ্ধের মাঠের বাইরে (৯/১১ এর মতো মুসলিম বা
কাফের যেকোনো দেশে) আত্মঘাতী বোমা হামলা করে নিরস্ত্র কাফেরদেরকে হত্যা করা ইসলামে
জায়েজ, এমনকি যদিও তাতে অনেক নিরীহ নারী ও শিশু নিহত হয়।”
আনোয়ার
আওলাকি তার সেই ভ্রান্ত ফতোয়ার পক্ষে সহীহ বুখারী থেকে উক্ত হাদীসকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছিলো। আর সেই থেকে আজ পর্যন্ত, যত ধরণের সন্ত্রাসী আক্রমন করছে নামধারী এই মুসলমানেরা (আসলে কাফেরদের
সাজানো নাটকের অভিনেতা), আওলাকি ভক্তরা বিভিন্ন যুক্তি ও
হাদীসের অপব্যখ্যা দেখিয়ে তাদের ইমামের মতোই সেইগুলোকে অন্ধভাবে সমর্থন করে যাচ্ছে। আল্লাহু মুস্তায়ান!
সর্বশেষ, যারা কষ্ট করে এই দীর্ঘ এই লেখাটি পড়েছেন, তাদেরকে অনুরোধ করবো, বিগত শতাব্দীর একজন ফকীহ
ও আলেমে দ্বীন, আল্লামাহ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রহি’মাহুল্লাহর এই কথাগুলি গভীরভাবে চিন্তা করার জন্য।
মুহাম্মদ
বিন সালেহ আল-উসায়মিন রহি’মাহুল্লাহ
বলেন, “অনেক মানুষকে জ্ঞান দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অর্জিত সেই জ্ঞান অনুধাবন করার মতো ক্ষমতা তাদেরকে দেওয়া হয়নি। না বুঝে শুধু ক্বুরআন মাজীদ ও হাদীস মুখস্থ করাই
যথেষ্ট নয়। বরং, অবশ্যই আল্লাহ ও তাঁর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের মর্মার্থ আপনাকে বুঝতে হবে। ঐ লোকদের দ্বারা কতইনা
ত্রুটি-বিচ্যুতি সংঘটিত হয়েছে, যারা আল্লাহ ও তাঁর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের বাণীর মর্ম না বুঝেই
দলীল পেশ করছে, যার ফলে তাদের অনুসারীদের মাঝে অনেকেই
পথভ্রষ্ট হয়েছে।” ফতোয়া আরকানুল ইসলাম।
আল্লাহ
আমাদের সকলকে হক্ক জানার, বুঝার এবং মানার তোওফিক দান
করুন, আমিন। বারাকাল্লাহ ফীকুম।
____________________________________
উসামা বিন লাদেন, আল-কায়েদাহ এবং আইএসের ব্যপারে আলেমদের ফতোয়া
(১) সৌদি আরব তথা বর্তমান বিশ্বের একজন শীর্ষস্থানীয় আলেমে দ্বীন ও মুফতি, আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন,
“উসামা বিন লাদেন মুসলিমদের মাঝে অনেক বড় ফিতনা
সৃষ্টিকারী একজন ব্যক্তি, তার বিরুদ্ধে মুসলিমদেরকে সতর্ক করা ওয়াজিব।”
(২) সৌদি আরবের বিগত প্রধান মুফতি, ইমাম আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন,
“উসামা বিন লাদেন এবং তার মতো যারা এমন (মুসলিম দেশে
বোমা হামলা করার) দাওয়াত দিচ্ছে (বক্তব্য, লেখনী কিংবা বই-পুস্তক এর মাধ্যমে), তাদের চিন্তা-ভাবনা নষ্ট ও বাতিল। এ ধরণের লেখা ও বক্তব্যের রেকর্ডিংগুলো ধ্বংস করে
ফেলতে হবে। (উসামা বিন লাদেন এবং তার সাথে যারা ছিলো), তাদেরকে উপদেশ দেওয়া ওয়াজিব, তাদেরকে সাহায্য করা জায়েজ নয়।
আমি তাদেরকে উপদেশ দিচ্ছি, তারা যেন এমন ধ্বংসাত্মক
রাস্তা থেকে ফিরে আসে এবং যেই অপকর্ম তারা করেছে, সে
ব্যপারে আল্লাহকে ভয় করে।”
(৩) উসামা বিন লাদেনের ভক্ত কিছু ইসলামিক বক্তা
ও লিখক সাহেবরা দাবী করে, শায়খ আব্দুল আ’জিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ উসামা বিন লাদেনের সমালোচনা করে ফতোয়া দেন নি।
তাদের এই মিথ্যা প্রচারণার জবাব দিয়ে শায়খ সালিহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“উসামা বিন লাদেন এবং তার মতো
ব্যক্তিদেরকে তাদের কাজের দ্বারা বিচার করা হবে, তাদের ব্যপারে কোন মিথ্যা বলার
প্রয়োজন নেই। শায়খ (আব্দুল
আ’জিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ) উসামা বিন লাদেনের ব্যপারে ফতোয়া দেন নি, এই
কথা মিথ্যা। আমরা শায়খের কাছ থেকে (উসামা বিন লাদেনকে প্রত্যাখ্যান করে) তাঁর
ফতোয়া শুনেছি। শায়খের ফতোয়া তাঁর ফতোয়ার ভলিউম আকারে সংগ্রহ করা হয়েছে। শায়খ জীবিত
থাকা অবস্থায় সেই লিখিত ফতোয়া শায়খকে পড়ে শোনানো হয়েছে। এমনকি শায়খের মৃত্যুর পর
শায়খের লিখিত ফতোয়া আলেমদেরকে পড়ে শোনানো হয়েছে, এবং তাঁরা সেটাকে গ্রহণ করেছে।
সুতরাং, যে ব্যক্তি বলে যে, শায়খ (বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ উসামা বিন লাদেনকে
প্রত্যাখ্যান করে) ফতোয়া দেন নি, সে মিথ্যা বলে এবং সে ব্যক্তি একজন মিথ্যুক।”
(৪) সৌদি আরবের বর্তমান প্রধান মুফতি, শায়খ আব্দুল আ’জিজ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “উসামা বিন লাদেন এবং তার মতো লোকেরা (আল-কায়েদাহ) পথভ্রষ্ট।”
(৫) মদীনার প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন, শায়খ আহমাদ বিন ইয়াহইয়া আন-নাজমী রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “উসামা বিন লাদেন একজন শয়তান, খবিস; উসামা বিন লাদেন একজন শয়তান, খবিস ও খারেজী। ওসামা বিন
লাদেনকে প্রশংসা করা জায়েজ নয়, যে ব্যক্তি তার প্রশংসা
করে সেও তার মতোই। তাদেরকে গ্রেফতার করে শাস্তি দেওয়া উচিত।”
(৬) আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “শাসকদের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা, মুসলমানদেরকে কাফের ফতোয়া দেওয়া, মুসলমানদের
রক্ত হালাল ঘোষণা করা, মুসলমান দেশগুলোতে বোমা মেরে মানুষ
হত্যা করা. . .এমন চিন্তা-ভাবনা যে রাখে (উসামা বিন লাদেন ও অন্যান্যরা), নিঃসন্দেহে সেই ব্যক্তি একজন খারেজী।”
(৭) সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় আলেমে-দ্বীন, শায়খ সালিহ আল-লুহাইধান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “উসামা বিন লাদেন জমীনে ফিতনা ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী।
সে মানুষকে যেই দিকে দাওয়াত দেয়, তার প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে সে একজন জাহেল (মূর্খ), কিন্তু সে নিজেকে আলেম (জ্ঞানী ব্যক্তি) বলে মনে
করে। আমি জানিনা পূর্ব নাকি পশ্চিম; তার পেছনে আসলে কারা কাজ করছে, তবে উসামার পেছনে যারা কলকাঠি নাড়ে, তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে এই দেশ (সৌদি আরব) ও
অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোকে ধ্বংস করা। উসামা বিন লাদেনকে একজন ‘দ্বাইয়ী’ বলা মারাত্মক ভুল। বরং, সে হচ্ছে একজন ‘মুফসিদুন’ (জমীনে ফাসাদ সৃষ্টিকারী)।”
(৮) ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদী র’হিমাহুল্লাহ বলেছেন, “উসামা বিন লাদেন বিশৃখলা সৃষ্টি করতে চায়, আমরা সবার প্রথম তাকে রদ্দ
(প্রত্যাখ্যান) করে ফতোয়া দিয়েছি। ওহ আল্লাহ! তুমি উসামার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করো।”
(৯)
শায়খ রমাযান আল-হাজিরি হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “আমরা
আল্লাহর জন্য উসামা বিন লাদেনকে ঘৃণা করি। উসামা বিন লাদেন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের তরীকার অনুসরণ করেনি। সে একজন সন্ত্রাসী, যে মানুষের জীবন নষ্ট করেছে।”
(১০) মদীনাতুল মুনাওয়ারার অত্যন্ত প্রবীণ আলেমে-দ্বীন এবং স্বনামধন্য
মুহাদ্দিস, আল্লামাহ আব্দুল মুহসিন আল-আ’ব্বাদ হা’ফিজাহুল্লাহকে “আল-কায়েদাহর” ব্যপারে প্রশ্ন করা
হয়েছিলো, “আল-কায়েদাহ কি খারেজী নাকি তারা মুজাহিদ?”
উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “তারা
(আল-কায়েদাহ) মুজাহিদ, তবে শয়তানের রাস্তায়। নায়া’ম।”
(১১)
আল-কায়েদাহ দল থেকে সর্বশেষ বের হওয়া খারেজীদের দল দাইয়ি’শ বা আইএস
বা আইসিস সম্পর্কে আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “দাইয়ি’শ (আইসিস বা আইএস) এবং তাদের
মতো দলগুলো যারা সিরাতাল মুসতাক্বীম থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তারা শয়তানের দল।”
ফতোয়া
সমূহের অডিও/ভিডিও লিংকঃ
(১)
https://www.youtube.com/watch?v=j7mJbyUcTpQ&list=PL0C6AD46517A85694&index=4
(২)
https://www.youtube.com/watch?v=_laLwEEHsDg&t=8s
(৩)
এই ভিডিওর ১:৩৩ মিনিট
থেকেঃ
https://www.youtube.com/watch?v=_laLwEEHsDg&t=8s
(৪)
https://www.youtube.com/watch?v=yMwloOzoOjg&index=9&list=PL0C6AD46517A85694
(৫)
https://www.youtube.com/watch?v=jCXSDoegBk4
(৬)
https://www.youtube.com/watch?v=sQImH8uXaeo&list=PL0C6AD46517A85694&index=3
(৭)
https://www.youtube.com/watch?v=XHuVcL3IRhY&index=11&list=PL0C6AD46517A85694
(৮)
https://www.youtube.com/watch?v=BO7BcXTc4zw&t=5s
(৯)
https://www.youtube.com/watch?v=-YzKPJwIMQ8&index=14&list=PL0C6AD46517A85694
(১০)
https://www.youtube.com/watch?v=eWLHW6Ywbmw
(১১) https://www.youtube.com/watch?v=5331IXpoVwE
____________________________________
মুসলিম
উম্মাহর আলেম ও বিজ্ঞ ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে ‘আইসিস’ বা ‘আইএস’ এর আসল
চেহারাঃ (পর্ব-৪)
লিখেছেনঃ
শায়খ আব্দুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী।
সৌদি
আরবের প্রখ্যাত
আলেম আল্লামাহ, ড. সালেহ
আস-শুহাইমী হা’ফিযাহুল্লাহ ISIS
সম্পর্কে বলেনঃ
“এটি হচ্ছে একটি খারেজী জামআ’ত।
তারা কয়েকদিন পূর্বে আমার খালাতো ভাইয়ের ছেলেকে হত্যা করেছে। কারণ সে তাদের দলের বিরোধী
অন্য একটি দল তথা ‘জাবহাতুন নুসরার’ সদস্য ছিল। তবে এই দুইটি দল (জাবহাতুন
নুসরা ও আইসিস) ভুল
পথে অগ্রসর হচ্ছে। তাদের নাম ‘জাবহা’ হোক অথবা ‘দায়েশ’ (ISIS) হোক। কিন্তু দায়েশ জাবহার চাইতে অধিক ভয়াবহ ও ক্ষতিকর। কারণ
তারা মুমিনদের উপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করতে পরলে আত্মীয়তার সম্পর্ক এবং কোন প্রকার
অঙ্গীকার বা চুক্তির পরোয়া করে না। তারা যে বাতিলপন্থী, তা প্রমাণিত হওয়ার জন্য এতটুকই যথেষ্ট যে, কয়েকদিন
পূর্বে (২০১৪ সালে) তারা তাদের খলীফার হাতে বাইআ’ত করার জন্য মুসলিমদের কাছে জোর
দাবী জানিয়েছে। তাদের সাথে যারা যোগ দিয়েছে, তাদেরকে
তারা সর্বপ্রথম যে কাজটি করার আদেশ দিয়েছে তা হচ্ছে নিজ দেশের আমীর বা বাদশাহর
হাতে কৃত বাইআ’তকে বর্জন করা। আপনারা বাইআ’ত প্রত্যাখ্যান ও ভঙ্গ করার
হুকুম অবশ্যই অবগত আছেন। (সৌদি আরবে বসবাসরত) আমাদের প্রত্যেকের কাঁধে এই দেশের উলিউল আমরের (শাসকের) বাইআ’ত
রয়েছে। আপনাদের প্রত্যেকের কাঁধে রয়েছে এই দেশের শাসকের বাইআ’ত। বাইআ’ত ভঙ্গ করা খেয়ানত ও
গাদ্দারী। প্রত্যেক গাদ্দারের (বাইআ’ত ও অঙ্গীকার ভঙ্গকারীর) জন্য কিয়ামতের দিন একটি করে পতাকা স্থাপন
করা হবে। তাতে লেখা থাকবেঃ এটি উমুকের বাইআ’ত ভঙ্গকারীর পতাকা। যে ব্যক্তি
বাইআত ভঙ্গ করবে, সে কিয়ামতের দিন ভয়াবহ বিপদের
সম্মুখীন হবে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেন, “যে
ব্যক্তি আমীরের আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেল এবং মুসলিমদের জামআ’ত থেকে
এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে মৃত্যু বরণ করল, সে যেন জাহেলিয়াতের (কুফরীর) উপর মৃত্যু বরণ
করল।” সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪৮৯২।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম আরো বলেছেন, “যে
ব্যক্তি মুসলিমদের জামআ’ত থেকে এক বিঘত পরিমাণ বিচ্ছিন্ন হলো, সে
তার গর্দান থেকে ইসলামের রশি খুলে ফেলল।” তিরমিযী।
দাইয়ি’শ বা
আইসিস বাইআ’ত ভঙ্গ করেছে। হক থেকে তারা অনেক দূরে। তারা আলেমদেরকে কাফের
বলে এবং আমাদের শাসকদেরকেও কাফের বলে। তাদের অবস্থা দেখে মনে হয়, মানুষকে কাফের বলা ছাড়া তাদের আর কোন কাজ নেই। তারা শুধু শিখেছে মুমিনদেরকে কাফের বলে ফতোয়া দেওয়া এবং তারা এই কাজটিকে তাদের ‘দ্বীন’ মনে করে থাকে।
পর্দার
অন্তরাল থেকে কতিপয় মূর্খ লোক তাদেরকে ফতোয়া দিচ্ছে। এই ফতোয়াগুলোই তাদেরকে
ধোঁকায় ফেলেছে। এই মুফতিরা দুই প্রকার। এক প্রকার মুফতী তাদের সাথেই রয়েছে। তারা
এই মুফতীদেরকে মাশায়েখ হিসাবে গ্রহণ করেছে, তারা তাদের
কাছ থেকেই ফতোয়া নেয়। তারা আল্লাহর কিতাবের দিকে ফিরে আসেনা এবং উলামায়ে
রাব্বানীদের থেকে ফতোয়া নেয়না। এই আলেমরা ঐ দলের সদস্যদের মতই।
আরেক
শ্রেণীর আলেম আমাদের দেশে (সৌদি
আরবে) বসে তাদেরকে সমর্থন করে ফতোয়া দিচ্ছে, তাদেরকে
সমর্থন করছে এবং যুবকদেরকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে। এরা বিনা উদ্দেশ্যে এসব
ফতোয়ার মাধ্যমে মুসলিম যুবকদেরকে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করছে। তারা অন্ধকারচ্ছন্ন ও
অস্পষ্ট উদ্দেশ্য নিয়ে যুদ্ধ করে, স্বীয় গোত্র ও দলের
আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করে এবং অন্ধকারচ্ছন্ন ঝান্ডার অধীনে যুদ্ধ করে।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি অস্পষ্ট ও অপরিচিত দলের পতাকাতলে যোগদান করে যুদ্ধ করে, স্বীয় গোত্রকে সাহায্য করার জন্য যুদ্ধ করে এবং গোত্রের সাহায্য ও
স্বীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করতে মানুষকে আহবান করে, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভূক্ত নয়।” সহীহ মুসলিম, হাদীস নং- ৪৮৯২।
আইসিসের
অনুসারীয়া মূর্খ, জাহেল এবং
এদের বয়স অল্প ও জ্ঞান খুবই সামান্য। এদের থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন,
“আমি যদি তাদের যুগ পেতাম, তাহলে আমি তাদেরকে আদ জাতির ন্যায় (সমূলে) হত্যা করতাম। তারা যাকে হত্যা
করবে, সে হবে সর্বোত্তম শহীদ। তাদের মধ্যে যারা নিহত
হবে, তারা হবে আকাশের নীচে সর্বাধিক নিকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি।” তিনি আরো বলেছেন, “তারা হবে জাহান্নামের কুকুর।”
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই
লোকদের ব্যাপারে বলেছেন, “আখেরী
যামানায় এমন একদল লোক আসবে, যাদের বয়স হবে অল্প এবং জ্ঞান
হবে খুবই সামান্য। তারা মানুষের
মাঝে সবচাইতে উত্তম কথা
বলবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ইসলাম থেকে এমন
দ্রুতগতিতে বের হয়ে যাবে, যেমনিভাবে তীর ধনুক থেকে বের হয়ে
যায়। তাদের ঈমান তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম করবেনা। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে, সেখানেই হত্যা করবে। যে
ব্যক্তি তাদেরকে হত্যা করবে, সে কিয়ামতের দিন এই হত্যাকান্ডের জন্য পুরস্কার
লাভ করবে।”
তিনি
আরো বলেছেন, “পূর্ব দিক থেকে একদল লোক বের হবে। তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নীচে প্রবেশ করবেনা। তীর যেমন ধনুক থেকে
বের হয়ে যায়, তারা তেমনি দ্বীন থেকে বের হয়ে যাবে। অতঃপর
ধনুকের রশির নিকট নিক্ষিপ্ত তীর ফেরত না আসা পর্যন্ত তারা দ্বীনের মধ্যে ফিরে
আসবেনা। অর্থাৎ তারা দ্বীন থেকে সম্পূর্ণরূপে বের হয়ে যাবে, তাতে আর ফেরত আসবেনা।”
নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে জাহান্নামের কুকুর বলেছেন। তারা প্রত্যেক
যুগেই বের হবে। তারা প্রত্যেক যুগেই বের হতে থাকবে। এমনকি তাদের দল থেকেই দাজ্জাল
বের হবে। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো সংবাদ দিয়েছেন যে, “তোমরা
তাদের নামাযের তুলনায় তোমাদের নামাযকে নগণ্য মনে করবে, তাদের ইবাদতের তুলনায় তোমাদের ইবাদতকে খুব সামান্য মনে করবে এবং তারা কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নীচে যাবেনা।”
নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের আরো অনেক স্বভাব ও বৈশিষ্ট উল্লেখ করেছেন।
তারাই ইসলামের দ্বিতীয় খলীফা উষমান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আন’হুমাকে কাফের ফতোয়া দিয়ে হত্যা করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো
সংবাদ দিয়েছেন যে, “তারা অমুসলিমদেরকে বাদ দিয়ে মুসলিমদেরকেই হত্যা করবে।” তাদের পূর্ব পুরুষরা উষমান বিন আফফান ও আলী রাদিয়াল্লাহু আন’হুমাকে হত্যা করেছে। তারা যখন উসমান রাদিয়াল্লাহু
আন’হুর দেহ থেকে তাঁর মাথা বিচ্ছিন্ন করল, তখন তাদের মধ্য হতে একজন
অভিশপ্ত নিকৃষ্টি লোক উছমান রাদিয়াল্লাহু
আন’হুর পবিত্র মাথার খুলির উপর পা
রেখে বলেছিলো,
“আল্লাহর কসম! আল্লাহ তাআ’লার সম্মানিত দিনসমূহের
মধ্য হতে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের দিনসমূহের মধ্য হতে আমার নিকট আজকের দিনের
চেয়ে অধিক ফযীলতময় অন্য কোন দিন আছে বলে আমার জানা নেই।” নাউযুবিল্লাহি মিং
যালিক।
আলী রাদিয়াল্লাহু আন’হুর হত্যাকারী আব্দুর রাহমান বিন মুলজিম বলেছিল, “আলীকে হত্যা করার জন্য আমি এই
বর্শাটিতে নয়টি মাথা স্থাপন করেছি। তার মধ্য হতে তিনটি মাথা স্থাপন করেছি আল্লাহ ও
তাঁর রাসুলের
জন্য। আলীকে ঘৃণার সংকেত হিসাবে আমি এই নয়টি মাথা স্থাপন করেছি।”
এজন্য
তার সাথী ইমরান বিন হাত্তান আলী
রাদিয়াল্লাহু আন’হুকে হত্যা করার কারণে তার
প্রশংসা করে বলেছিল, “সে এমন
একটি আঘাত, যা করা হয়েছে আল্লাহর একজন মুত্তাক্বী বান্দার পক্ষ হতে। এর মাধ্যমে
আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি ছাড়া সে অন্য কিছু কামনা করেনি। আমি এই দিনটিকে একটি
ফযীলতময় দিন হিসাবে স্মরণ করি, যাতে আল্লাহর সাথে কৃত
অঙ্গীকার পূর্ণকারী বান্দাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি এই আঘাতটি করেছে।”
এই
অভিশপ্তের জবাবে পূর্ব যুগের একজন নেককার লোক বলেছেন, “এই আঘাতটি ছিল একজন হত্যভাগ্য
লোকের পক্ষ হতে। সে এর মাধ্যমে আরশের মালিকের নিকট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া ব্যতীত অন্য
কিছু কামনা করেনি। আমি মনে করি, এর মাধ্যমে সে কিয়ামতের
দিন আল্লাহর নিকট সর্বাধিক হতভাগ্য ও নিকৃষ্ট বলে বিবেচিত হবে।”
এই
পথভ্রষ্ট ও গোমরাহ লোকদের অন্যতম আলামত হচ্ছে লুকিয়ে থাকা এবং জনমানবের সামনে এসে
তারা তাদের কথা প্রচার করেনা। আমি আপনাদের কাছে প্রশ্ন রাখছি যে, আমাদের দ্বীন কি সুস্পষ্ট? নাকি অস্পষ্ট?
আমাদের
দ্বীন সুস্পষ্ট। এখানে গোপনীয় কিছু নেই। আমাদের কাছে এমন কিছু নেই, যা গোপন রাখতে হবে। এই সুফিয়ান রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “যখন তুমি দেখবে যে, একটি দল তাদের দ্বীনি বিষয়ে সাধারণ লোকদেরকে বাদ দিয়ে গোপনে
শলা-পরামর্শ করছে, তখন তুমি মনে করবে যে, তারা কোন একটি গোমরাহীর পথ উন্মুক্ত করছে।”
এই কথা
সুফিয়ান ব্যতীত আরো অন্যান্য আলেমদের থেকেও বর্ণিত হয়েছে। আমি কয়েকদিন পূর্বে মসজিদে নববী থেকে তাদের খলীফার
দাবীদারের এবং তার হাতে মিথ্যুক দাজ্জালদের বাইআ’ত করার প্রতিবাদ করেছি।
এখানে
বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ইসলামের ইতিহাসে এমন কোন
খলীফা কিংবা শাসকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবেনা, যিনি
লুকিয়ে থেকে এবং জনসাধারণের আড়ালে থেকে রাজ্য পরিচালনা করেছেন।
লেকচারটির
অনুবাদ করেছেনঃ শায়খ Abdullah
Shahed Al-madani
ইন্টারনেটে
আল্লামাহ সালেহ আস-শুহাইমী হা’ফিযাহুল্লাহর বক্তৃতার লিংকঃ
https://www.youtube.com/watch?v=kyH4ArJZZaw
____________________________________
খারেজীদের
সংখ্যা এতো বেশি কেনো?
প্রশ্নঃ
আস-সালামু আলাইকুম। আচ্ছা
বাংলাদেশে খারেজীদের সংখ্যা এতো বেশি কেনো? যেখানেই যাই
সেখানেই কাউকে না কাউকে এই আকিদাহ পোষণ করতে দেখি। খারেজী মতবাদ কিভাবে এতো
প্রচার লাভ করলো।?
উত্তরঃ
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
শায়খুল
ইসলাম, ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “দ্বীনের জ্ঞানের অভাবে
শয়তান মানুষকে পথভ্রষ্ট বানায়।”
(১) বর্তমান
যুগে বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বেই খারেজী মতবাদ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করার প্রধান
কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের মাঝে দ্বীন সম্পর্কে, বিশেষ
করে ক্বুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীদের আদর্শ সম্পর্কে অজ্ঞতা।
(২)
প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত খারেজীরা ক্বুরআনের আয়াত দ্বারা তাদের ধ্বংসাত্মক
কাজের পক্ষে দলিল দিত। সাধারণ মুসলমানেরা খারেজীদের মুখে ক্বুরআনের আয়াত শুনে বিভ্রান্ত হয়। কারণ সঠিক জ্ঞানের অভাবে তারা
সত্য-মিথ্যা পার্থক্য করতে পারেনা।
(৩) আল্লাহ
তাআ’লা কোন
আয়াত কাদের জন্য, কি উদ্দেশ্যে, কোন ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল করেছেন, এ
সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য সাহাবীদের যুগের খারেজীরা সাহাবীদের উপর নির্ভর করতো না। দ্বীনের ব্যাপারে খারেজীরা
সাহাবীদের বুঝ বাদ দিয়ে নিজে নিজে ক্বুরআনের আয়াতের অপব্যখ্যা করে গোমরাহীর শিকার
হয়েছিলো।
কাফেরদের জন্য প্রযোজ্য এমন ক্বুরআনের আয়াত কিংবা নবী সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসগুলোকে খারেজীরা পাপী কিংবা ভুলের শিকার হয়েছে
এমন মুসলমানদের উপর প্রয়োগ করে মুসলমানদেরকে “কাফের” ফতোয়া দিত এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে তাদেরকে হত্যা
করতো। অথচ
তারা মনে করতো তারা “জিহাদ” বা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করছে।
(৪) ঠিক
একইভাবে আজকের যুগের “খারেজী আলেমরা” দ্বীন শিখার জন্য রব্বানী আলেমদের শরণাপন্ন না হয়ে নিজে নিজে
ক্বুরআনের তাফসীর রচনা করতে গিয়ে নিজেদের অজান্তেই তারা খারেজী ও শীয়া মতবাদ
প্রচার করে গেছে।
উদাহরণস্বরূপ সাইয়েদ কুতুব এবং আবুল আলা মওদুদীর তাফসীর নামক ক্বুরআনের
অপব্যখ্যাপূর্ণ কিতাব “ফি যিলালিল ক্বুরআন” ও “তাফহীমুল ক্বুরআন”। অনেক মুসলমান নারী ও পুরুষেরা
দ্বীন শিখতে গিয়ে সাইয়েদ কুতুব, মওদুদীর লিখিত বই-পুস্তক
পড়ে। অথবা,
তাদের প্রচারিত চরমপন্থী মতবাদে বিশ্বাসী এমন বক্তা ও লিখকদের যেমন আবু মুহাম্মদ
আল-মাকদিসি, আনোয়ার আল-আওলাকি, জসীম উদ্দিন রাহমানী, আহমাদ মুসা জিব্রীল, তামিম
আল-আদনানী, আবু কাতাদাহ, আবু বারার ওয়াজ-লেকচার শুনে। এইভাবে ইলম থেকে বঞ্চিত, সরলমনা মুসলমানেরা পথভ্রষ্ট লোকদের কাছ থেকে দ্বীন শিখতে গিয়ে আস্তে
আস্তে খারেজী ও জংগী মতবাদে দীক্ষিত হচ্ছে। আল্লাহু মুস্তাআ’ন।
বিঃদ্রঃ
সাইয়েদ
কুতুবের চরমপন্থী, ভ্রান্ত আকিদাহর প্রমান এবং
তার ব্যপারে আমাদের আলেমদের ফতোয়ার বিস্তারিত বর্ণনা আমি আমাদের পেইজে অনেকবার
প্রকাশ করেছি। অনুরূপভাবে, আধুনিক যুগে জিহাদ নাম দিয়ে
জংগী মতবাদ প্রচারকারী এবং মুসলিম বিশ্বে বোমাবাজি করে বিশৃংখলা সৃষ্টি করার জন্য
উস্কানিদাতা আনোয়ার আল-আওলাকির পথভ্রষ্টতা নিয়ে পোস্ট দিয়েছি। ইন শা আল্লাহ আগামীতে জামাতে
ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আল-মওদুদী সম্পর্কে বিস্তারিত পোস্ট করা হবে। ওয়ামা তোওফিক্বি ইল্লা বিল্লাহ।
____________________________________
মানব রচিত বিধান দিয়ে বিচার করার কি হুকুম?
প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি শরীয়াহ বা আল্লাহর
আইন বাদ দিয়ে মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা করে, তার ব্যপারে কি হুকুম?
উত্তরঃ সে ব্যক্তি তার আক্বীদাহ
বা বিশ্বাস অনুযায়ী কখনো কাফের (অবিশ্বাসী),
কখনোবা মুর্তাদ (ধর্ম ত্যাগী), আবার কখনো ফাসেক
(পাপীষ্ঠ) ও জালেম (অত্যাচারী) মুসলিম হতে পারে।
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার বা শাসন করেনা, তারা
কাফের।” সুরা আল-মায়ি’দাহঃ ৪৪।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আ’নহুমা এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানকে অস্বীকার করল, সে কুফুরী করল। কিন্তু
যে ব্যক্তি তা (আল্লাহর
নাযিলকৃত বিধান) স্বীকার করল, কিন্তু সে অনুযায়ী
বিচার-ফয়সালা করল না, সে ব্যক্তি
যালিম ও ফাসিক।”
উৎসঃ তাফসীর ইবনু জারীর, তাফসীর কুরতুবী, তাফসীর ইবনে
কাসীর, সুরা মায়িদাহর ৪৪-নং আয়াতের তাফসীর দ্রষ্টব্য। তাহকীক দ্রষ্টব্যঃ খালেদ আল-আম্বারী,
উসুলুত-তাকফীর, ৬৪ পৃষ্ঠা; ৭৫-৭৬ টীকাসমূহ।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা আরো
বলেছেন, “তোমরা এই কুফরী দ্বারা যে অর্থ বুঝাতে চাচ্ছ, সেটা নয়। কেননা এটা সেই কুফরী নয়, যা কোন
মুসলমানকে ইসলামের সীমানা থেকে বের করে দেয়।
বরং, এর দ্বারা বড় কুফরের চাইতে ছোট কুফুরীকে বুঝাচ্ছে, বড় যুলুমের চাইতে
ছোট যুলুম রয়েছে এবং বড় ফিসকের (অবাধ্যতার) চাইতে ছোট ফিসক বুঝানো রয়েছে।” হাকিমঃ ৩২১৯, ২/৩১৩, সনদ সহীহ; সুনানে আত-তিরমিযীঃ
২৬৩।
প্র্যখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু
মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু ও তাবেয়ী
বিদ্বান হাসান বসরী রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “এটা মুসলিম, ইয়াহুদী, কাফের সকল প্রকার লোকের জন্য সাধারণ হুকুম,
যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে না। অর্থাৎ যারা বিশ্বাসগতভাবে (আল্লাহর
বিধানকে) প্রত্যাখ্যান করে, এবং অন্য বিধান দ্বারা বিচার ও শাসন করাকে হালাল বা বৈধ
মনে করে (তারা কাফের বলে গণ্য হবে)।
পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি উক্ত কাজ (মানব রচিত
বা মনগড়া আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা) করে, কিন্তু
সে বিশ্বাস করে যে সে হারাম কাজ করছে, তাহলে সেই ব্যক্তি
মুসলিম, কিন্তু সে ফাসেকদের
অন্তর্ভুক্ত হবে। তার বিষয়টি
আল্লাহর উপর ন্যস্ত।
তিনি চাইলে তাকে শাস্তি দিবেন, চাইলে তাকে ক্ষমা করবেন।” তাফসীরে
কুরতুবী, সুরা মায়েদাহর ৪৪-নং আয়াতের
তাফসীর।
তাবেয়ী বিদ্বান ইকরিমা, মুজাহিদ,
আতা ও তাউসসহ বিগত
ও পরবর্তী যুগের আহলে সুন্নাত আলেমগণের সকলেই
কাছাকাছি একই ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন।
সালাফ ও খালাফের ৩৯ জন বিদ্বানের ফৎওয়া দ্রষ্টব্য; উসুলুত-তাকফীর
৬৪-৭৪ পৃষ্ঠা।
এটাই হল সাহাবী ও তাবেয়ীগণের ব্যাখ্যা। যারা হলেন আল্লাহর কিতাব এবং ইসলাম
ও কুফর সম্পর্কে উম্মতের সেরা বিদ্বান ও সেরা বিজ্ঞ ব্যক্তি।
সৌদী আরবের
সাবেক প্রধান মুফতী, শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন
বায রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধান অনুযায়ী শাসন বা বিচার করেনা, সে ব্যক্তি
চারটি বিষয় থেকে মুক্ত নয়ঃ
(১) তার বিশ্বাস মতে মানুষের মনগড়া
আইন আল্লাহর আইনের চাইতে উত্তম।
অথবা
(২) সেটি শারঈ বিধানের সমান।
অথবা
(৩) শারঈ বিধান উত্তম, তবে মানব রচিত বিধান জায়েয। এরূপ বিশ্বাস থাকলে সেই ব্যক্তি কাফির এবং সে মুসলিম
জাতি থেকে খারিজ
হয়ে যাবে। কিন্তু,
(৪) সে যদি বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য কোন বিধান বৈধ নয়। তবে সে অলসতা বা উদাসীনতার কারণে বা পরিস্থিতির চাপে পড়ে মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা করে, তাহলে
সেটা ছোট কুফুরী হবে ও সে কবীরা গোনাহগার হবে। কিন্তু মুসলিম মিল্লাত থেকে খারিজ
হবে না।”
খালেদ আল-আম্বারী, উসুলুত-তাকফীর, রিয়াদঃ তৃতীয় সংস্করণ,
১৪১৭ হিজরী, ৭১-৭২
পৃষ্ঠা।
যেমন হাবশার (ইথিওপিয়া) বাদশাহ নাজ্জাশী ইসলাম কবুল করেছিলেন এবং সে মর্মে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রেরিত
দূতের নিকট তিনি বাইআ’ত নিয়েছিলেন ও পত্র প্রেরণ করেছিলেন। কিন্তু দেশের নাগরিকগণ খ্রিষ্টান
হওয়ায় তিনি নিজ দেশে ইসলামী বিধান চালু করতে পারেননি। এজন্য তিনি দায়ী ছিলেন না। বরং, পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছিল। সেকারণে নবম হিজরীতে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীগণকে
নিয়ে তাঁর গায়েবানা
জানাযা পড়েছিলেন। কারণ, অমুসলিম দেশে তাঁর জানাযা হয়নি। আবু দাউদঃ ৩২০৪, ‘জানায়েয’ অধ্যায়, ৬২-নং অনুচ্ছেদ।
____________________________________
মুসলিম
শাসকের আনুগত্য করা সুন্নাহ
(১)
ইমাম আবু জাফর
আত-তাহাবী রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ ৩২১ হিজরী), তাঁর বিখ্যাত “আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
“আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা
যুলুম-অত্যাচার করে।
আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিব না, এবং
তাদের আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর
আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর
অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দুয়া করব।” আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।
(২)
মুসলিম আমীর বা শাসক অত্যাচারী জালেম হলে তাদের ব্যপারে ধৈর্য
ধরতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধঃ
হুযায়ফা
ইবনে ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম! এক সময় আমরা অকল্যাণ ও মন্দের
মধ্যে (কুফরীর মধ্যে) ডুবে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে কল্যাণের (ঈমানের) মধ্যে নিয়ে এসেছেন। এখন আমরা সেই কল্যাণের মধ্যে
বহাল আছি। তবে
এই কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ
হ্যাঁ। আমি
আবার বললাম, সেই অকল্যানের যুগের পর কি পুনরায়
কল্যানের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ হাঁ, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, সেই কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ আসবে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ
“আমার
পরে এমন কিছু ইমামের (শাসক) আগমন ঘটবে, তারা আমার
প্রদর্শিত পথে চলবে না এবং আমার সুন্নাত (আদর্শ) গ্রহন করবে না। (অর্থাৎ তারা নিজেদের
খোয়াল-খুশী মত চলার পথ আবিষ্কার করে নেবে)। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক সমাজের নেতৃত্ব নিয়ে দাঁড়াবে যাদের
মানব দেহে থাকবে শয়তানের অন্তর।”
আমি
(হুজাইফা) জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! যদি আমি সেই যুগে উপনীত হই
তাহলে আমি কি করব?
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি
আমীরের নির্দেশ শোন এবং তার আনুগত্য কর। যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত (নির্যাতন) করে এবং তোমার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে
নেয় তবুও তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর”।
সহীহ
মুসলিমঃ কিতাবুল ইমারাহ (প্রশাসন ও নেতৃত্ব) অধ্যায়, হাদীস
নং- ৪৫৫৪।
এই হাদীসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেনঃ
(ক) মুসলিমদের উপর ভবিষতে এমন কিছু শাসক আসবে, যারা ক্বুরআন ও সুন্নাহ
অনুযায়ী চলবেনা।
উল্লেখ্য বর্তমানে প্রায় সমস্ত মুসলিম দেশেই এ ইরকম জালেম শাসক দেখা যাচ্ছে।
(খ) এমন শাসকদের কাজকর্ম এতোটাই জঘন্য হবে যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে “মানুষের
ভেতরে শয়তানের অন্তর” বলে আখ্যায়িত করেছে। আমার মনে হয়না কোন মানুষকে এর
চাইতে খারাপ অন্য কোন ভাষায় বলে বর্ণনা করা যেতে পারে।
(গ) সেই সময়ে আমরা কেউ যদি পৌঁছে
যাই তাহলে, সেই ক্ষেত্রে আমাদের
জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ হচ্ছে, আমরা যেন সেই শাসকদের
আনুগত্য করি, এমনকি সে যদি আমাদেরকে মারধর করে এবং
আমাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়। উল্লেখ্য, শাসক, আমীর বা নেতার আনুগত্য শুধুমাত্র বৈধ
কাজে। ইসলাম বিরোধী, হারাম কোন কাজে আদেশ করলে সেটা মানা যাবেনা। বরং, কারো চাপে
পড়ে হারাম কাজে লিপ্ত হলে গুনাহগার হতে হবে।
=>
আপনি প্রশ্ন করতে পারেন, বিদ্রোহ না করে কেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কেনো আমাদেরকে শাসক জালেম হলেও তবুও
তাদের আনুগত্য করতে নির্দেশ দিয়েছেন?
এর
কারণ হচ্ছে, ক্ষমতাহীন অবস্থায় জনগণ
বিদ্রোহ করলে যেই ক্ষতি হয়, সে তুলনায় যুলুম সহ্য করা অনেক কম ক্ষতিকর, যা যুগে যুগে খারেজীদের কার্যকলাপ দ্বারা বারবার প্রমানিত হয়েছে। আপনারা ২০১১ সালের পর থেকে কথিত আরব বসন্তের নামে আজ পর্যন্ত লিবিয়া, তিউনিয়সিয়া, মিশর, সিরিয়া ইত্যাদি দেশগুলোতে বিদ্রোহের পরিণতির দিকে লক্ষ্য করে দেখুন, বিদ্রোহের
পূর্বের শাসকদের জুলুম অত্যাচার এবং
বিদ্রোহের পরে দেশে বিশৃংখলা ও ফেতনা-ফাসাদের ভয়াবহতা তুলনা করলে বুঝতে পারবেন, কেনো
বিদ্রোহের ব্যপারে ইসলাম এতোটা সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
(৩)
উপযুক্ত কারণ ও প্রয়োজনীয়তা ব্যতীত মুসলিম আমীর বা শাসকদের প্রকাশ্যে
সমালোচনা করা জায়েজ নয়। মুসলিম শাসক অন্যায় কিছু করলে তাকে ব্যক্তিগতভাবে উপদেশ
দিতে হবে।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, “যে ব্যক্তি সুলতানকে (শাসক/নেতাকে) উপদেশ দিতে চায়, সে যেন প্রকাশ্যে সেটা না করে। বরং তার জন্যে করণীয় হচ্ছে, সে তার সুলতানের হাত ধরে নিয়ে তাকে লোকচক্ষুর আড়ালে ব্যক্তিগতভাবে
উপদেশ দেবে। যদি
সেই সুলতান তার উপদেশ গ্রহণ করে, তাহলে সেটা তার
(সুলতানের) জন্যে ভালো এবং এটাই তার করা উচিত। কিন্তু সুলতান যদি উপদেশ গ্রহণ না করে, তাহলে উপদেশদাতা তার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেলো।” হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে আবি আ’সিম
তার “আস-সুন্নাহ” নামক গ্রন্থে। শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহু
হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন, যিলাল আল-জান্নাহ।
(৪)
আহলে সুন্নাহর লোকেরা মুসলিম শাসকদেরকে গালি-গালাজ করে না, বরং তাদের কল্যাণের জন্যে দুয়া করে। কারণ শাসকের হেদায়েত হলে তার দ্বারা পুরো দেশবাসী উপকৃত হবে। পক্ষান্তরে মুসলমান শাসকদেরকে
গালিগালাজ করা ও মিম্বারে বসে তাদের সমালোচনা করে জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে উস্কানি
দেওয়া পথভ্রষ্ট, মনপূজারী, বিদআ’তী ও খারজীদের একটা
লক্ষণ।
ইমাম
আল-বারবাহারি রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২৯ হিজরী) বলেন, “যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে দেখো সে শাসকদের বদ দুয়া করছে, তাহলে জেনে রাখো সে একজন মনপূজারী, বিদআ’তী। আর তুমি যদি কোন ব্যক্তিকে
দেখো সে শাসকদের কল্যাণের জন্য দুয়া করছে, তাহলে সে
একজন আহলে সুন্নাহ, ইন শা’ আল্লাহ্।” শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪।
(৫) মুসলিম শাসকদেরকে অন্যায়ভাবে
অপমান করার পরিণামঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, “যে ব্যক্তি যমীনে আল্লাহর নিযুক্ত সুলতানকে অপমান করবে, আল্লাহ তাআ’লা তাকে লাঞ্চিত করবেন।” সহীহ আত-তিরমিজিঃ ২২২৪, হাদীসটি হাসান সহীহ।
(৬) কারো বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ
দেওয়ার শাস্তিঃ
অনেকে
মুসলিম দেশের শাসকদের প্রতি বিদ্বেষ বা ঘৃণার কারণে তাদের নামে মিথ্যা অপপ্রচার
চালায়। এইভাবে শাসকদের পাপের বিরোধীতা করতে গিয়ে তারা নিজেরাই পাপী হিসেবে আল্লাহর
দরবারে উপস্থিত হবে।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে
ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কটূক্তি করবে, যা তার মাঝে প্রকৃতপক্ষে নেই, আল্লাহ তাকে ‘রাদগাতুল
খাবাল’ তথা
জাহান্নামীদের গলিত রক্ত-পূজের স্তুপে বসবাস করাবেন।” আবু দাউদ, বিচার অধ্যায়, ৩১২৩ নং হাদীস।
(৭)
মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীদের ব্যপারে কি বলা হবে?
ইমাম
আল-বারবাহারি রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২৯ হিজরী) বলেন,
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সে মূলতঃ
(ক) খারেজীদের
মধ্যে একজন,
(খ) সে
মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো,
(গ) সে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের বিরোধীতা করলো এবং
(ঘ) তার
মৃত্যু যেন ‘জাহেলী’ যুগের মৃত্যুর মতো।”
শরাহুস
সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।
(৮)
উপরের দীর্ঘ এই আলোচনার মাধ্যমে আহলে সুন্নাহর আকীদাহ অনুযায়ী
মুসলিম আমীর বা শাসকদের অধিকার কেমন, সে সম্পর্কে
কিছু হাদীস এবং পূর্ববর্তী বড় ওলামাদের কিছু কথা তুলে ধরা হলো। যারা আহলে সুন্নাহর নীতির বিরোধীতা করে, তাদের ব্যপারে আমাদের দৃষ্টিভংগি কেমন হওয়া উচিত?
ইমাম
আবু জাফর আহমাদ ইবনে মুহাম্মদ রাহিমাহুল্লাহর আকীদাহর উপরে লেখা তাঁর অনন্য বইয়ে
প্রায় ১০২-টি
পয়েন্টে “আহলে
সুন্নাত ওয়াল জামআ’তের” আকীদাহ বর্ণনা করার পর ১০৩ নাম্বার পয়েন্টে উল্লেখ করেছেন, “এই
হচ্ছে আমাদের দ্বীন এবং আমাদের আক্বীদাহ বা মৌলিক ধর্ম বিশ্বাস, যা আমরা প্রকাশ্যে এবং অন্তরে ধারণ করি। যারা উল্লিখিত বিষয় বস্তুর
বিরোধীতা করে, তাদের সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।” আল-আক্বীদাহ আত-তাহাবীয়া।
____________________________________
ফেইসবুক জিহাদী কারা?
(১)
যারা নিজেরা জিহাদ করেনা কিন্তু অন্যেরা কেনো জিহাদ করছেনা এ নিয়ে দোষারোপ করে, দালাল
বলে গালি দেয়।
(২)
ফেইসবুক জিহাদীরা নিজেদেরকে ভ্রান্ত আলেমদের কাল্পনিক জিহাদের সৈনিক বলে মনে করে। যেমন জসীম উদ্দিন
রাহমানীর বার্মার বিরুদ্ধে ডাকা জিহাদ। তারতুসীর ডাকা সৌদি আরবের বিরুদ্ধে জিহাদ।
(৩)
ফেইসবুক জিহাদীরা আলেমদেরকে জিহাদ বিদ্বেষী বলে মনে করে। কারণ আলেমরা তাদের জংগী
কর্মকান্ডকে ফাসাদ বলে ফতাওয়া দেন। যেমন, গুলশানের হোটেল আর্টিসানে হামলাকে আমাদের
দেশের আলেমরা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড বলে ঘোষণা করলে ফেবু জিহাদীরা আলেমদেরকে গালি
দেওয়া আরম্ভ করে।
এছাড়া
তাদের আরও অনেক খারাপ বৈশিষ্ট্য আছে।
____________________________________
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান কি কাফির?
জাহিল
লোকেরা যখন আলিমদের কথা না শুনে নিজেদের প্রবৃত্তি বা খেয়াল-খুশি মতো দ্বীনের
ব্যপারে মন্তব্য করা আরম্ভ করে তখন তারা জনগণের মাঝে ফিতনাহ সৃষ্টি করে। বর্তমান
যুগে ফেইসবুক ইন্টারনেটের মতো মাধ্যমগুলো জাহিল লোকদেরকে দ্বীনের ব্যপারে
নিয়ন্ত্রনহীন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে। আর এইভাবে একশ্রেণীর মূর্খরা
মিডিয়াতে ইসলামী লেখক বা বক্তা সেজে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করছে। এমনই
একটা গোমরাহী হচ্ছে, একশ্রেণীর লোকেরা তুরস্কের
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তৈয়প এরদোয়ানকে কাফির বলে ফতোয়া দিচ্ছে। আবার অনেকে এরদোয়ানকে কাফেরদের দালাল বলে
গালি-গালাজ করে। ২০১৬ সালে তুরস্কের সেনাবাহিনীর ক্যু সম্পর্কে দুইজন আলেমের
বক্তব্য সহকারে আমি দুইটি পোস্ট করেছিলাম। যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
(১) ইমাম
তাহাবী রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২১ হিজরী), তাঁর বিখ্যাত “আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম’আতের আকীদা” নামক
কিতাবে উল্লেখ করেছেন, “আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা যুলুম-অত্যাচার করে। আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিব না, এবং তাদের আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর
আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচারণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের
মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দুয়া করব।” আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।
(২) মুসলিম
আমীর বা শাসকদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করা জায়েজ নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন, “যে ব্যক্তি সুলতানকে (শাসক/নেতাকে) উপদেশ দিতে
চায়, সে যেন প্রকাশ্যে সেটা না করে। বরং তার জন্যে
করণীয় হচ্ছে, সে তার সুলতানের হাত ধরে নিয়ে তাকে
লোকচক্ষুর আড়ালে ব্যক্তিগতভাবে উপদেশ দেবে। যদি সেই সুলতান তার উপদেশ গ্রহণ করে,
তাহলে সেটা তার (সুলতানের) জন্যে ভালো এবং এটাই তার করা উচিৎ।
কিন্তু সুলতান যদি উপদেশ গ্রহণ না করে, তাহলে উপদেশদাতা
তার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেলো।”
হাদীসটি
বর্ণনা করেছেন ইবনে আবি আ’সিম তার “আস-সুন্নাহ” নামক
গ্রন্থে। শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহু হাদীসটিকে ‘সহীহ’ বলেছেন, যিলাল আল-জান্নাহ।
(৩) শায়খ
মুহাম্মদ আল-আনজারী হা’ফিজাহুল্লাহ তুরস্কের ক্যু সম্পর্কে বলেছেন,
“আল্লাহ এরদোয়ানকে হেফাজত করুন, তিনি একজন মুসলিম শাসক। আল্লাহর অবাধ্যতা ছাড়া (জায়েজ ও কল্যাণকর
বিষয়ে) তাঁর কথা শুনতে ও মানতে হবে। এরদোয়ান তুরস্কের ‘ওয়ালীউল আমর’, যা আমি আমার
কয়েকটি লেকচারে উল্লেখ করেছি এবং রেকর্ডকৃতও হয়েছে। ক্যু (সরকারে বিরুদ্ধে সামরিক
অভ্যুত্থান) হচ্ছে খুরুজ, এটা খারেজীদের আদর্শ।”
লিংক – https://youtu.be/r3lduxyAZ28
(৪) শায়খ
আহমাদ আস-সুবাই’য়ী হা’ফিজাহুল্লাহ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান সম্পর্কে
বলেছেন,
“আহলে সুন্নাহর অনুসারীগণ
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানকে শরীয়ত সম্মত একজন বৈধ শাসক বলে মনে করে। (কল্যাণকর ও জায়েজ কাজে) তার
আনুগত্য করা মুসলিম শাসক হিসেবে তার অধিকার। তার অবাধ্য হওয়া এবং তার বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়। জনসমক্ষে তার সমালোচনা করা নিষিদ্ধ, যদিও তিনি ‘ইখোয়ানুল মুসলিমিন’ এর মতো
একটি দলের সাথে সংযুক্ত, যেই দলটি বিদআ’তের কারণে আলেমদের নিকট পরিচিত। সুতরাং, ইখোয়ানুল মুসলিমিন দলটি তাদের বিদআ’তের কারণে সমালোচিত হবে, কিন্তু প্রকাশ্যে
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সমালোচনা করার অনুমতি নেই।”
যে
ব্যক্তি আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার করেনা বা দেশ পরিচালানা করেনা, সে কি কাফির নাকি মুসলিম?
আল্লাহর
আইন দিয়ে যারা বিচার করেনা, আল্লাহ তাআ’লা তাদেরকে কাফের বলেছেন, আবার তাকে ফাসেক (পাপাচারী) ও জালেম (অন্যায়কারী/অত্যাচারী) বলেছেন।
সুতরাং, অবস্থার উপর নির্ভর করে আল্লাহর আইন দিয়ে যে
বিচার করেনা সে বড় কাফের হতে পারে আবার, কখনো সে বড়
গুনাহগার (ফাসেক), জালেম বা পাপী মুসলমানও হতে পারে।
ব্যখ্যাঃ
কেউ যদি শরীয়াহ বা আল্লাহর আইনকে অস্বীকার করে, অথবা কেউ
যদি মনে করে, আল্লাহর আইন অচল, আল্লাহর
আইন থেকে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র বা তার বা অন্য কারো মত,
মোট কথা মানুষের বানানো আইন-কানুন বেশি উত্তম, বর্তমান যুগের জন্য বেশি উপযোগী, অথবা আল্লাহর
আইন আর মানুষের আইনকে যদি সমানও মনে করে, তাহলে সে ব্যক্তি কাফের, মুর্তাদ হয়ে চিরজাহান্নামী হবে।
কিন্তু
কেউ যদি আল্লাহর আইনকে স্বীকার করে ও মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে, কিন্তু ঘুষ খেয়ে, স্বজনপ্রীতির কারণে, দুনিয়াবী কোন স্বার্থে - আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচার করে না, কিন্তু মানুষের বানানো আইনকে ভুল মনে করে এবং আল্লাহর আইনই শ্রেষ্ঠ এবং তা মানা সবার জন্য ফরয বলে
বিশ্বাস রাখে, তাহলে সে ছোট কুফুরী ও বড় অন্যায় কাজ করলো, এই কারণে সে ফাসেক ও জালেম হবে, কিন্তু সে
মুসলমান থাকবে। তোওবা না করে মারা গেলে জাহান্নামে শাস্তি হওয়ার পরে সে জান্নাতে
যেতে পারবে।
এই
কথার দলীল হচ্ছে ক্বুরানুল কারীমের সুরা আল-মায়িদাহঃ ৪২-৪৭।
আপনারা
ইমাম ইবনে কাসীরের তাফসীর গ্রন্থের পাবেন, এনিয়ে
সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু
আ’নহুর বক্তব্য, এই আয়াতের তাফসীরে।
এই
কারণে সালফে সালেহীন (আগের যুগের নেককার লোকেরা, অর্থাৎ
সাহাবারা) ও পরবর্তী যুগের অন্যান্য ওলামারা আল্লাহর আইন অনুযায়ী কেউ বিচার না
করলে, প্রথমেই তাকে কাফের বলে ফতোয়া দেন না। আগে নিশ্চিত
হতে হবে তার পাপ কি ছোট কুফুরী, নাকি বড় কুফুরী?
ছোট
কুফুরী হলে সে ব্যক্তি জালেম কিন্তু মুসলমান। আর বড় কুফুরী হলে সে কাফের।
উল্লেখ্য, খারেজীরা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের এই নীতি মানেনা, শাসকের কবীরা গুনাহর কারণে সে যদি মুসলিমও হয়, তবুও খারেজীরা তাকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।
খারেজীদের ধর্মই হচ্ছে এটা। বর্তমান যুগেও দেশ-বিদেশে এমন কিছু লোক আছে যারা
খারেজীদের এই গোমরাহীর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়। হিজবুত তাওহীদ এমনই একটা খারেজী দল, যাদের ইমাম হচ্ছে বায়েজীদ খান পন্নী এবং তাদের দাওয়াতী পত্রিকার নাম
হচ্ছে দেশের পত্র।
আধুনিক
যুগের দুইজন শাসক বড় কুফুরী করেছিলো এমন শাসক হচ্ছে, ইরাকের
প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এবং লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট গাদ্দাফি। সাদ্দাম হোসেন ছিলো
বাথিস্ট, যে ক্ষমতায় আসার পরে তার দলের লোকেরা আল্লাহর
কুশপুত্তলিকা বানিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং আজ থেকে আল্লাহ মৃত বলে ঘোষণা করে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। এছাড়া আরো অনেক শিরকি কাজের
জন্য শায়খ বিন বাজসহ অন্য আলেমরা সাদ্দামকে মুরতাদ ফতোয়া দিয়েছিলেন। অবশ্য তার ফাঁসির পূর্বে সে তোওবা করেছে বলে
দাবী করে, দাঁড়ি রাখে, কোর্টে ক্বুরআন নিয়ে আসে এবং ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে
বলতেই সে ফাঁসিতে ঝুলে। তাই হতে পারে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তাই আমরা এখন আর তাকে কাফের বলবোনা – তার ব্যপারে চুপ থাকবো।
আর লিবিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মার আল-গাদ্দাফি সুন্নাহকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করেছিলো এবং সুন্নাহকে সে শয়তানী বেদাত বলে আখ্যা দিয়েছিলো, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। এছাড়া সে ক্বুল দিয়ে শুরু সুরাগুলো (ইখলাস, ফালাক, নাসেট) পূর্বে ‘ক্বুল’
শব্দটিকে ক্বুরআনের অংশ মেনে নিতে অস্বীকার করে। ক্বুরআনের
একটা আয়াতও দূরের কথা, কেউ যদি শুধু সন্দেহ করে,
আলিফ লাম মীমের ‘আলিফ’ অক্ষরটা
ক্বুরআনে আছে কিনা, তবুও সেই ব্যক্তি কাফের হয়ে যাবে। গাদ্দাফির
সাথে কথা বলে, তার কুফুরী বিস্তারিত জেনে-শুনে আরব দেশের
অনেক আলেম বহু পূর্বেই তাকে কাফের ফতোয়া দিয়েছিলেন। কিন্তু লিবিয়ার আহলে সুন্নত দুর্বল
ছিলো বলে আলেমরা লিবিয়ার জনগণকে গাদ্দাফির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে বলেন নি। যদিও বছর দুয়েক আগে তার
বিরুদ্ধে কিছু মানুষ বিদ্রোহ করে এবং এর ফলে বিদ্রোহীরা মুসলমানদের অনেক বড় ক্ষতি
ডেকে নিয়ে আসে। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীরা মুসলমানদের সবচাইতে বড় শত্রু আমেরিকার
সাহায্য নেয় গাদ্দাফিকে সরানোর জন্য। আর যুদ্ধের পরে বর্তমান লিবিয়ার অবস্থা খুব
খারাপ ও বিপদজনক। আলেমরা হচ্ছেন ক্বুরআন ও হাদীস সম্পর্কে সবচাইতে জ্ঞানী, নবী রাসুলদের ওয়ারিশ। তাদের কথা না শুনে আবেগে গা ভাসালে সেটা মুসলমানদের
বিপর্যয় ডেকে নিয়ে আসে, যা ইতিহাসে অসংখ্যবার
প্রমানিত হয়েছে, বারবার একই ঘটনা পুনরাবৃত্তি হওয়ার মাধ্যমে। কিন্তু দুঃখের
বিষয় হচ্ছে কিছু মূর্খ বক্তা ও পথভ্রষ্ট আলেম থাকে, যারা
ক্বুরআন ও হাদীসের ভুল ব্যখ্যা করে আবেগপ্রবণ তরুণদের ব্রেইন ওয়াশ করে ধ্বংস ও ফাসাদের দিকে নিয়ে যায়।
বর্তমানে
জীবিতদের মাঝে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তাঁর ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় ক্বুরআন ও সুন্নাহ
অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করেন না, কিন্তু নিজেকে মুসলিম
দাবী করেন এবং মুসলিম দেশগুলোর প্রতি ভালোবাসা দেখান। সম্প্রতি ফিলিস্তিনের গাজাতে
তিনি সাহায্যও পাঠিয়েছেন এবং আরব বিশ্বকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে আহবান
জানিয়েছেন, আল্লাহ তাকে এর জন্য উত্তম প্রতিদান দিন। আমরা তার ভুলের কারণে তাকে
গালি দেওয়া জায়েজ মনে করিনা বা তাকে কাফের ফতোয়া দেইনা, বরং তাকে মুসলিম শাসক বলেই মনে করি এবং আল্লাহ যেন তাকে হেদায়েত দান করেন সঠিক দ্বীনের উপরে, সেই দুয়া করি।
____________________________________
মাদখালী কি?
সৌদি
আরবের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রদেশের নাম হচ্ছে ‘জিযান’। এই জিযান অঞ্চলে
বিখ্যাত একটি বংশের নাম হচ্ছে আল-মাদাখিলা। এই বংশের লোকেরা নিজেদের নামের সাথে “আল-মাদখালী” কথাটি যুক্ত করে, যেমন ক্বুরাইশ বংশের লোকেরা নিজেদের পরিচয় দেওয়ার জন্য তাদের নামের
সাথে “আল-ক্বুরাইশী” কথাটি যুক্ত করে।
তথ্যসূত্রঃ
sahab.net
মাদখালী
myth
একশ্রেণীর
জাহেল আল-মুরাক্কাব সরলমনা মানুষদেরকে সালাফী দাওয়াহ নিয়ে এইভাবে ধোঁকা দেওয়ার
অপচেষ্টা করে যে, সালাফীদের মাঝে কিছু মানুষ হচ্ছে “নিও-সালাফী” বা “মাদখালী” - যারা
হচ্ছে চরমপন্থী। তারা শায়খ বিন বাজ, শায়খ আলবানী রহি’মাহুমুল্লাহর
মতো এমন কিছু বড় আলেমদেরকে শ্রদ্ধা করে বলে অভিনয় করে এবং শায়খ রাবীকে জিহাদ
বিদ্বেষী, চরমপন্থী সমালোচনাকারী বলে মিথ্যা প্রচারণা চালায়।
এমন
পথভ্রষ্ট লোকদেরকে প্রত্যাখ্যান করে শায়খ উয়াসী উল্লাহ হা’ফিজাহুল্লাহ
বলেছেন,
“যেই সমস্ত যুবকেরা (সালাফী/আহলে
হাদীসদেরকে) “মাদখালী” বলে গালি দেয় তারা আক্বল (বুদ্ধির) দিক
থেকে দুর্বল এবং তাদের ঈলম (পড়াশোনা বা জ্ঞান) নেই। তাদের চিন্তা-ভাবনা ইখোয়ানীদের
মতো, তারা প্রকৃত ‘আহলে হাদীস’ কিংবা ‘সালাফী’ নয়। শায়খ
রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী একজন বড় আলেম, তিনি ‘জামাতে ইসলামী’ ও ‘ইখোয়ানুল মুসলিমিন’ এর মতো দলগুলোর
ভিত্তিকে ধ্বংস করেছেন, এ কারণে অনেকে তাকে পছন্দ করেনা।”
শায়খের
বক্তব্যের লিংক –
https://www.youtube.com/watch?v=Mbo11uugr-Y
____________________________________
আনোয়ার
আল-আওলাকির লেকচার শোনা যাবে?
উত্তরঃ
আলহা’মদুলিল্লাহ। ওয়াস-স্বলাতু ওয়াস-সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ। সম্পূর্ণ লেখা না পড়ে কেউ কোন মন্তব্য করবেন না।
ইসলাম
সম্পর্কে জানার জন্য, কারো কাছ থেকে ইলম নেওয়ার পূর্বে অর্থাৎ, কারো বক্তব্য শোনা
বা বই পড়ার পূর্বে যাচাই করে নিতে হবেঃ
- সে
কোন আলেমের কাছে পড়াশোনা করেছে?
- তার
আকীদা কি আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদাহ, নাকি সে কোন মাযহাবের অন্ধ অনুসারী?
- নাকি
কোন ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী? কিংবা,
- সে
কি বিদাতী কোন দল যেমন সূফীবাদী, তাকফিরী খারেজী, মুঅ'তাজিলা আকীদার লোক কিনা?
-
অন্যকে ইসলাম শেখানোর পূর্বে সেই ব্যক্তি নিজে ইসলাম শিক্ষা করেছে, নাকি তোতা
পাখির মতো মুখস্থ বুলি আওড়িয়ে, অন্যের কথা কপি-পেস্ট করে নিজে নিজে ফতোয়াবাজি
করছে?
-
সমসাময়িক আলেমরা কি তার প্রশংসা করেছেন, নাকি তার কাছ থেকে ইলম নেওয়ার ব্যপারে
উম্মতকে সতর্ক করেছেন?
আপনারা
তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী ও মুহাদ্দিসিনে একরামদের লেখা বই ও হাদীসের কিতাবগুলো পড়লে
দেখতে পারবেন, তারা এমন যাচাই-বাছাই না করে কারো কাছ থেকে ইলম নেওয়ার ব্যপারে কতটা
সতর্ক ছিলেন। এর কারণ হচ্ছে, আপনি যার কাছ থেকে ইসলাম শিখছেন, আপনার দ্বীন ঠিক তার
মতই হবে, সে যেইভাবে ইসলামকে আপনার সামনে তুলে ধরবে, ইলমের অভাবে আপনি সেটাকেই
হক্ক বলে মনে করবেন।
যাইহোক,
আধুনিক যুগে চরমপন্থী তাকফিরি মতবাদের প্রচারকারী সাইয়েদ কুতুবের ভক্ত আনোয়ার
আল-আওলাকি তার ধর্মগুরুর মতোই তাকফিরী ছিলেন, যে মুসলিম শাসকদেরকে কাফের /মুনাফেক
ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য উস্কানি দিয়েছিলো।
অল্প ইলম সম্পন্ন লোকেরা আওলাকিকে "ইমাম" বলে মনে করে, অথচ মুসলিম
শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা খারেজীদের প্রধান একটা বৈশিষ্ট্য।
আওলাকি
একজন ইমাম, তবে তাকফিরি, খারেজীদের।
আনোয়ার
আওলাকি সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের মুসলিম শাসকদেরকে ঢালাওভাবে কাফের, মুনাফেক ফতোয়া
দিয়ে মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তার ভক্তদেরকে আহবান জানিয়েছিলো।
মুসলিম
শাসকদের দোষ-ত্রুটি কিংবা তাদের জুলুম অত্যাচার/অন্যায়ের কারণে তাদেরকে কাফের,
মুর্তাদ ফতোয়া দেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা খারেজীদের ধর্ম। এই বিষয়টি
এতো মারাত্মক যে, আপনি প্রতিটা আকিদার কিতাব খুললে দেখতে পারবেন, মুসলিম শাসকদের
অন্যায় বা জুলুম-অত্যাচার সত্ত্বেও সৎ কাজে তাদের প্রতি অনুগত থাকা এবং কোন মতেই
বিদ্রোহ না করার জন্য বলা হয়েছে।
মুসলিম
আমীর বা শাসকদের ব্যপারে আমাদের দৃষ্টিভংগি কেমন হওয়া উচিত?
(১)
ইমাম আবু জাফর আত-তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২১ হিজরী), তার বিখ্যাত আহলে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদা” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ
“আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা
জায়েয মনে করি না, যদিও তারা যুলুম-অত্যাচার করে। আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিব না, এবং
তাদের আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে
ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের
জন্য দুয়া করব।”
আকীদাহ
আত-ত্বাহাবীয়া।
(২) মুসলমান শাসকদেরকে গালিগালাজ করা, মিম্বারে বসে
তাদের সমালোচনা করে, জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে উস্কে দেওয়া মনপূজারী,
বেদাতী ও খারজীদের একটা লক্ষণ। ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২৯
হিজরী) বলেছেন,
“যদি তুমি কোন ব্যক্তিকে দেখো সে শাসকদের জন্য
বদদুয়া করছে, তাহলে জেনে রাখো সে একজন মনপূজারী, বিদআ'তী। আর তুমি যদি কোন
ব্যক্তিকে দেখো যে, সে শাসকদের জন্য কল্যাণের দুয়া করছে, তাহলে সে একজন আহলে
সুন্নাহ, ইন শা’
আল্লাহ।”
শরাহুস
সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ১১৩-১১৪।
(৩)
ইমাম আল-বারবাহারি রহি’মাহুল্লাহ আরো বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করে সে
ক.
খারেজীদের মধ্যে একজন,
খ. সে
মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো,
গ. সে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের বিরোধীতা করলো এবং,
ঘ. তার
মৃত্যু যেন ‘জাহেলী’ যুগের মৃত্যুর মতো।
শরাহুস
সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।
যাই
হোক, আনোয়ার আল-আওলাকি (USA), জসীম উদ্দিন রাহমানি (BD), আঞ্জেম
চৌধুরী (UK), মুসা সেরান্টানিও (Australia), আবু কাতাদাহ, আবু বারা (UK), আবু ওয়ালিদ (UK) এইরকম বোকা
শ্রেনীর কিছু তরুণ ফতোয়াবাজ লোকেরা ক্বুরআনের আয়াত বা হাদীসের মনগড়া ব্যখ্যা দিয়ে
উঠতি বয়সী কিছু কিশোর ও যুবকদের অন্তরকে তাকফিরী পয়জন দিয়ে বিষাক্ত করে রেখে গেছে।
এরা বিভিন্ন অপব্যখ্যা দিয়ে তাদের অন্ধ ভক্তদের ব্রেইন ওয়াশ করেছে।
তাকফিরিদের
মাঝে একটা ভ্রান্ত মতবাদ হচ্ছেঃ
বর্তমানে
মুসলিম বিশ্বে যেই সমস্ত শাসকরা শরিয়াহ আইন বাস্তবায়ন করছেনা, তারা সবাই মুর্তাদ,
তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা আমামাদের জন্য ফরযে আইন!
এটা
সম্পূর্ণ ভ্রান্ত, খারেজীদের আকীদা, যা রাসুল (সাঃ) এর হাদীসের সরাসরি বিরোধীতা
করে। এনিয়ে হুযাইফা বিন ইয়ামান রাঃ এর বিখ্যাত হাদীস দেখুন, এবং সুন্নাহর সাথে
খারেজীদের কথাকে মিলিয়ে দেখুন –
হুযায়ফা
ইবনে ইয়ামান (রাঃ) বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এক সময় আমরা অকল্যাণ ও
মন্দের মধ্যে (কুফরীর মধ্যে) ডুবে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে কল্যাণের (ঈমানের)
মধ্যে নিয়ে এসেছেন। এখন আমরা সেই কল্যাণের মধ্যে বহাল আছি। তবে এই কল্যাণের পরে কি
আবার অকল্যাণের যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, সেই অকল্যানের যুগের
পর কি পুনরায় কল্যানের যুগ আসবে?
তিনি
বললেনঃ হাঁ, আসবে।
আমি
পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, সেই কল্যানের পর কি আবার অকল্যানের যুগ আসবে?
তিনি
বললেনঃ আসবে।
আমি
(হুজাইফা) জিজ্ঞেস করলামঃ তা কিভাবে?
তিনি
বললেনঃ “আমার
পরে এমন কিছু ইমামের (শাসক) আগমন ঘটবে, তারা আমার প্রদর্শিত পথে চলবে না এবং আমার
সুন্নাত (জীবন বিধান) গ্রহন করবে না। (অর্থাৎ তারা নিজেদের খোয়াল-খুশী মত চলার পথ
আবিষ্কার করে নেবে)। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন কিছু লোক সমাজের নেতৃত্ব নিয়ে দাঁড়াবে
যাদের মানব দেহে থাকবে শয়তানের অন্তর”।
আমি
(হুজাইফা রাঃ) জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি সেই যুগে উপনীত হই তাহলে
আমি কি করব?
তিনি
(সাঃ) বললেনঃ “তুমি
আমীরের নির্দেশ শোন এবং তার আনুগত্য কর। যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত (নির্যাতন) করে
এবং তোমার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয় তবুও তার কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর”।
সহীহ
মুসলিমঃ কিতাবুল ইমারাহ (প্রশাসন ও নেতৃত্ব) অধ্যায়, হাদীস নং- ৪৫৫৪।
এই
হাদীসে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেনঃ
(১)
মুসলিমদের উপর ভবিষ্যতে এমন কিছু শাসক আসবে, যারা ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী
চলবেনা। উল্লেখ্য বর্তমানে বিভিন্ন মুসলিম দেশে এইরকম জালেম শাসক দেখা যাচ্ছে।
(২)
তাদের কাজকর্ম এতো জঘন্য হবে যে, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তাদেরকে “মানুষের ভেতরে শয়তানের অন্তর” বলেছেন। আমার মনে হয়না অন্য কোন ভাষায় মানুষকে এর চাইতে খারাপ বলে বর্ণনা করা যেতে
পারে।
(৩)
সেই সময়ে আমরা কেউ যদি পৌঁছে যাই, তাহলে আমরা সেই শাসক জালেম হলেও, সে যদি মুসলিম
হয়, আমরা যেন তার আনুগত্য করি, এমনকি যদিও সে আমাদেরকে মারধর করে এবং আমাদের সম্পদ
ছিনিয়ে নেয়।
(৪)
উল্লেখ্য, শাসক বা অন্য যে কারো আনুগত্য শুধুমাত্র জায়েজ কাজে। অন্যায় বা হারাম
কাজের আদেশ দিলে, সেটা যে-ই হোক না কেনো, তার আদেশ মানা যাবেনা।
আপনি
প্রশ্ন করতে পারেনঃ
বিদ্রোহ
না করে কেন রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে শাসক জালেম হলেও তবুও তাদের আনুগত্য করতে নির্দেশ
দিয়েছেন?
এর
কারণ হচ্ছে, বিদ্রোহ করলে যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়, তার তুলনায় যুলুম অত্যাচার সহ্য করা
অনেক কম ক্ষতিকর, যা যুগে যুগে খারেজীদের কার্যকলাপ দ্বারা বারবার প্রমানিত হয়েছে।
আপনারা
বিগত কয়েক বছরে লিবিয়া, তিউনিয়সিয়া, মিশরসহ অন্যান্য মুসলিম দেশগুলোতে সংঘটিত
বিদ্রোহগুলোর দিকে লক্ষ্য করে দেখুনঃ
অপরিণামদর্শী,
আবেগী লোকদের বিদ্রোহের পূর্বে শাসকদের জুলুম অত্যাচার এবং বিদ্রোহের পরে সৃষ্ট
বিশৃংখলা ও ফেতনা-ফাসাদ, হত্যা ও নৈরাজ্য তুলনা করলে খুব সহজেই বুঝতে পারবেন, কেনো
বিদ্রোহের ব্যপারে ইসলাম এতোটা সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
যাইহোক,
অজ্ঞ মুফতিরা ক্বুরআন ও সুন্নাহ আয়ত্ত্ব না করেই বড় বড় লেকচার দিতে গিয়ে আবেগের
বশে জালেম শাসক বা মুসলিম শাসকদের দোষ-ত্রুটি দেখে তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয় এবং
খারেজীদের মতো তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে মানুষকে উস্কানি দেয়। আমাদের আলেমরা
এমন তাকফিরি দ্বাইয়ীদেরকে ‘ক্বাদিয়্যা’ বা sitting
khawaarij বলে চিহ্নিত করেছেন। এমন ব্যক্তিরা তারা
নিজেরা কোনদিন জিহাদে অংশগ্রহণ করেনা, কিন্তু শাসকদের বিরুদ্ধে অজ্ঞ লোকদেরকে
জিহাদ করার জন্য উত্তেজিত করে। যেমন করেছিলে কথিত ‘ইমাম’(!) আনোয়ার আওলাকি এবং অন্যান্যরা।
আপনারা
লক্ষ্য করে দেখুন, কিছু দোষ-ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও সৌদি আরবে আজ পর্যন্ত
রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামি শরিয়াহ আইন চালু আছে, আদালত পরিচালিত হচ্ছে ক্বুরআন সুন্নাহ
দিয়ে, রাষ্ট্রীয়ভাবে সালাত কায়েম আছে, মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও নিষেধ আজ পর্যন্ত
চালু আছে। এমন একটা ইসলামী দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাতো দুরের কথা, যেই শাসক নিজে
মুসলিম কিন্তু দেশ পরিচালিত হয় মানব রচিত আইন দিয়ে, এমন শাসকের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ
করা আলেমরা হারাম বলে মনে করেন।
-
ইখোয়ানুল মুসলিমিনের নেতা ডা. মুহাম্মদ মুরসি ক্ষমতায় থাকার সময় ক্বুরআন-সুন্নাহ
দিয়ে দেশ পরিচালনা করেন নি, বরং শরিয়াহ নিয়ে বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলেছেন যা
কুফরের পর্যায়ে পড়ে। তবুও আহলে সুন্নাহর কোন আলেম তাকে কাফের বলেন নি, বরং মুসলিম
শাসক হিসেবে তাঁর জন্য দুয়া করেছেন।
-
অনুরূপভাবে বর্তমান তুরস্কের শাসক এরদোগানকেও কোন আলেম কাফের বলে ফতোয়া দেন নাই,
যদিও তিনি গণতন্ত্র দিয়ে দেশ পরিচালনা করছেন।
অল্প
বয়ষ্ক কিছু যুবক যাদের না আছে বিদ্যা, না বুদ্ধি, জসীম উদ্দিন, আওলাকি এমন লোকদের
কথা শুনে সমস্ত শাসকদেরকে ঢালাওভাবে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ(!)
করার জন্য ফতোয়া দিচ্ছে। যদিও তারা নিজেরাই এই জিহাদ করছেনা, অবশ্য হুটহাট ২-৪টা
বোমা ফাটিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা করা ছাড়া। কিন্তু অন্যরা কেনো এই ভার্চুয়ায়ল
জিহাদকে সমর্থন করছেনা, এটা নিয়ে তাদের বিরোধীদেরকে গালি-গালাজ করছে।
আপনারা
এমন চরমপন্থি বক্তাদের থেকে সাবধান থাকবেন। আনোয়ার আওলাকি, জসীম উদ্দিনের ভক্তদের
দিকে লক্ষ্য করুন – সৎ আলেমদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাদেরকে দালাল, তাগুতসহ অন্যান্য
নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করা হচ্ছে তাদের ধর্ম। অথচ, আলেমদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা
মুনাফেকীর লক্ষণ। আর যারা তাদেরকে চেনেন তারা সকলেই জানেন, ভাষার দিক থেকে এরা
সবচাইতে জঘন্য। এইরকম স্বঘোষিত মুফতি মুহাদ্দিসদের বিভ্রান্তিকর ওয়াজ-লেকচার বাদ
দিয়ে আহলে সুন্নাহর আলেমদের থেকে ইসলাম নেবেন, যাতে করে ফেতনা থেকে নিজেকে বাচাতে
পারেন।
আনোয়ার
আওলাকি হাদীসের অপব্যাখ্যা করে আল-কায়েদাহ, আইসিস, বোকো হারামের মতো পথভ্রষ্ট দলের
অনুসারীদেরকে আত্মঘাতী বোমা হামলা করে নিরীহ মানুষ হত্যা করার জন্য উস্কানি
দিয়েছিলো।সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করার জন্য আনোয়ার আওলাকির ভ্রান্ত ফতোয়ার
জবাব দেওয়া হয়েছিলো এই পোস্টে -
https://facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1402571126442297
____________________________________
যুদ্ধে
কাফেরদের সাহায্য নেওয়া জায়েজ
নাকি নাজায়েজ?
১৯৯০
সালে ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন কোনরকম যুদ্ধের পরিস্থিতি ছাড়াই আকস্মিক আক্রমন করে তেলসমৃদ্ধ
দেশ কুয়েত দখল করে নেয়। এতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সুন্নী দেশগুলোর নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। সে
সময়ের সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ রহি’মাহুল্লাহ
সাদ্দাম হোসেনকে প্রতিহত করার জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকার
সাহায্য গ্রহণ করেন।
এই
ঘটনাকে কেন্দ্র করে সালমান আল-আওদাহ, সফর আল-হাওয়ালি, মুহাম্মাদ আল-সুরুরের মতো কিছু চরমপন্থী ইসলামী বক্তা এবং তাদের অন্ধভক্ত লোকেরা ইউটিউব, ফেইসবুক, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন
প্রচার মাধ্যমগুলোতে শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে বাজ, শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন, শায়খ মুহাম্মদ আমান
আল-জামী, শায়খ আব্দুল্লাহ আল-গুনায়মানসহ অন্যান্য সৌদী আলেমদের নামে আজেবাজে কথা
প্রচার করে বেড়ায়। এমনকি তাদের ছড়ানো তাকফিরী বিষে আক্রান্ত কিছু বাংলা ও ইংরেজী
ভাষাভাষী বক্তা ও লেখক আহলে সুন্নাহর সাম্প্রতিক কালের এই ইমামদেরকে সৌদি বাদশাহর
দালাল, তাগুতের পা চাটা গোলামের মতো জঘন্য ভাষায় গালি দিতে দ্বিধা করছে না। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক,
আল্লাহ তাদেরকে তাই দিন, যা তাদের জন্য উপযুক্ত।
তাদের
অভিযোগ সৌদি আরবের সালাফী আলেমরা আলে-সৌদের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য, তাদেরকে খুশি করার জন্য ইসলামের বিপরীত ফতোয়া দিয়েছেন। অনেকে সরাসরি সৌদি আলেমদেরকে মুনাফেক, দরবারী
আলেম বলে গালি দেওয়াকে তাদের জন্য ফরজ করে নিয়েছেন।
যাই
হোক চলুন আজ আমরা দেখি, আলেমরা কি আসলে দালালি করেছিলেন, নাকি ইসলামের কথাই বলেছিলেন, যা ইখোয়ানুল মুসলিমিন,
হিযবুত তাহরীর, আল-কায়েদাহ, কথিত মুজাহিদসহ বিভিন্ন বিভ্রান্ত দলগুলোর হাওয়া
(প্রবৃত্তির) সাথে মনোঃপুত না হওয়ায় ঠিক সেইরকম গালি-গালাজ করছে, যেইভাবে খারেজীরা সাহাবীদেরকে গালি দিতো।
অনেকে
মনে করেন, মুসলমানদের জন্যে কোন যুদ্ধে কাফেরদের কাছ থেকে থেকে সাহায্য নেওয়া সব
সময়ই হারাম। কোন মুসলমানের বিরুদ্ধে কাফেরদেরকে সাহায্য করলে সে কাফের হয়ে যাবে।
সুতরাং সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে সৌদী আরব আমেরিকার সাহায্য নিয়ে সৌদী বাদশাহ কাফের হয়ে গেছে। আর
শায়খ বিন বাজসহ অন্য সৌদি আলেমরা এটাকে সমর্থন করায় ও জায়েজ ফতোয়া দেওয়ার কারণে
তারা তাগুতের গোলামী করে তাঁরাও কাফের হয়ে গেছেন, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। চলুন
দেখি তাদের এই যুক্তির বিপরীতে আমাদের পূর্ববর্তী আলেমরা এই ব্যপারে কি ফতোয়া দিয়েছেন।
(১)
ইমাম শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “কাফেরদের সাহায্য নেওয়া (ক্বুরআন
নাযিলের) প্রথমদিকে নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু
পরবর্তীকালে এই হুকুম রহিত হয়ে যায়।” নায়লুল আওতারঃ ৮/৪৪।
ইমাম
শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহ আরো বলেছেন, “কাফেরদের কাছ থেকে যুদ্ধের জন্য সাহায্য নেওয়া জায়েজ, যারা
মুসলমানদের কাছে বিশ্বস্ত এবং যখন সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকবে। এই শর্তগুলো
পূরণ না হলে কাফেরদের সাহায্য নেওয়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়)।” শরাহ সহীহ মুসলিম, ইমাম নববী
রহি’মাহুল্লাহ।
(২) এই
বিষয়ে চার মাজহাবের ফুকাহাদের অবস্থান প্রায় কাছাকাছি যা ইমাম শাফেয়ী ব্যক্ত
করেছেন। রেফারেন্স দেখুন –
(ক) হানাফী মাযহাবের ফতোয়া দেখুনঃ শারাহা কিতাব আস শির
ফাকারাঃ ২০১।
(খ) মালেকী মাযহাবের ফতোয়া দেখুনঃ আল-মুদান্নাঃ ২/৪০, আল কুরতুবীঃ ৮/১০০।
(গ) শাফেয়ী মাজহাবে স্পষ্ট ভাবে
বলা হয়েছে, “হারবি কাফেরদেরও সাহায্য নেয়া জায়েজ।” নিহায়াত আল মাহতাজঃ ৮/৫৮, তাকমিলা আল মাজমুয়াঃ ১৯/২৮।
(ঘ) হাম্বলী মাযহাবের মত দেখুন, ইমাম ইবনে
কুদামাহর প্রসিদ্ধ ফতোয়ার কিতাব, আল-মুগনীঃ
৮/৪১৪।
এতো
গেলো পূর্ববর্তী আলেমদের মতামত। চলুন এবার আমরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ হাদীসে দেখি, কাফেরদের
সাথে সন্ধি চুক্তি করে মুসলমানদের অন্য শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করা জায়েজ; তা সরাসরি
হাদীস দিয়েই প্রমাণিত।
যু-মিখবার
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে
বলতে শুনেছি, “অদূর
ভবিষ্যতে তোমরা রোমানদের (খ্রিস্টানদের) সাথে শান্তি চুক্তি করবে। পরে তোমরা ও
তারা (খ্রিস্টানরা) মিলে তোমাদের পিছন দিককার (শত্রুদের) সাথে যুদ্ধ করবে। সেই
যুদ্ধে তোমরা জয়ী হবে, অনেক গণীমতের সম্পদ অর্জন করবে এবং নিরাপত্তা লাভ করবে। তখন এক খৃষ্টান
ব্যক্তি ক্রুশ উঁচু করে ধরে বলবে, ক্রুশ (ক্রস অর্থাৎ খ্রীস্টান ধর্ম) জয়ী হয়ে
গেছে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যক্তি তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে ক্রুশটিকে ভেঙ্গে ফেলবে।
এই ঘটনার সুত্র ধরে রোমানরা (খ্রিস্টানরা) বিশ্বাসঘাতকতা (সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ)
করবে।”
মিশকাত
শরীফ, মহাযুদ্ধ অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, আবু দাউদঃ ১৫৮৮, হাদীসটি সহীহ, শায়খ
আলবানী রহি’মাহুল্লাহ।
সুতরাং
সহীহ হাদীস দিয়ে স্পষ্ট প্রমানিত হয় যে, যুদ্ধে এক কাফেরের বিরুদ্ধে অন্য কাফেরের
সাহায্য নেওয়া জায়েজ।
এবার
আসি সাদ্দাম হোসেন প্রসংগে...
সাদ্দাম
হোসেন ছিলো বাথিস্ট (Bathist). বাথিস্ট একটা রাজনৈতিক মতবাদ, যাদের মূল মন্ত্র ছিলো জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতবাদ
ও সমাজতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত, যেইগুলো ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। সাদ্দাম হোসেন
ক্ষমতায় আসার পরে তার দলের লোকেরা আল্লাহর কুশপুত্তলিকা বানিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং “আজ থেকে আল্লাহ মৃত” বলে ঘোষণা করে, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। এছাড়া
আরো অনেক শিরকি কুফুরী কাজের জন্য শায়খ বিন বাজসহ অন্য আলেমরা সাদ্দামকে মুর্তাদ
বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। অবশ্য সাদ্দাম হোসেনের গ্রেফতার হওয়ার পর ফাঁসির পূর্বে সে তোওবা করেছে বলে
দাবী করে এবং দাঁড়ি রাখে, কোর্টে ক্বুরআন নিয়ে আসে এবং “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলতে বলতেই সে ফাঁসিতে
ঝুলে। তাই হতে পারে, তোওবাহ করার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং, আমরা সাদ্দাম হোসেনকে কাফের বা জাহান্নামী বলবোনা,
সতর্কতা হিসেবে তার ব্যপারে চুপ থাকবো। তবে সে অনেক যুলুম অত্যাচার ও অন্যায় করে
মৃত্যুবরণ করেছে।
১৯৯০
সালে সাদ্দাম হোসেন (কাফের থাকা অবস্থায়) আকস্মিকভাবে কুয়েত দখল করে মধ্যপ্রচ্যের
অন্য দেশগুলোকে হুমকির মুখে ফেলে। উল্লেখ্য সে এবং তার ইরাকী সরকার তখন কুফুরীর
উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলো যা আমাদের আলেমরা অনেক পূর্বেই ফতোয়া দিয়েছিলেন। এইরকম অত্যাচারী,
মুসলিম দেশ সমূহের সাথে শত্রুভাবাপন্ন কোন অন্যায়কারীকে প্রতিহত করার জন্য সৌদী আরব তখন শায়খ বিন বাজ, শায়খ
মুহাম্মাদ আমান আল-জামি সহ বড় আলেমদের পরামর্শক্রমে জাতিসংঘের মাধ্যমে আমেরিকান খ্রীস্টানদের সাহায্য নেওয়ার
সিদ্ধান্ত নেন এবং এর মাধ্যমে তারা সাদ্দামের আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে হেফাজত করেন।
শায়খ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহর নেতৃত্বে সৌদী
আলেমদের এই ফতোয়া ও বাদশাহর
সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিলো তা উপরের আলোচনাতেই স্পষ্ট।
শায়খ
আলবানী রহি’মাহুল্লাহর ফতোয়াঃ
উল্লেখ্য,
আল্লামাহ শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ
সৌদী আলেমদের এই ফতোয়াকে ভুল বলেন এবং
তিনি এই ফতোয়ার বিরোধীতা করেছিলেন। কিছু প্রতারক লোক যারা আসলে মনপূজারী, তারা শায়খ আলবানীর এই
ফতোয়াটা প্রচার করে, যদিও তারা জিহাদ, তাকফীর, রাজনীতিসহ অন্য বিষয়গুলোতে শায়খ
আলবানীর কোন বক্তব্যকে গ্রহণ করেনা। কিন্তু শায়খ আলবানীর এই ফতোয়া তাদের
প্রোপাগান্ডার পক্ষে, সেইজন্য শায়খ আলবানীর এই ফতোয়াটা তারা প্রচার করে সালাফী আলেমদের সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায়।
কাফেরদের
সাহায্য নেওয়া প্রসঙ্গে শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহর ফতোয়ার ব্যপারে আমরা ইমাম মালেক রহি’মাহুল্লাহর সেই কথাই বলবো, “সবার কথা নিতে হবে, ছাড়তেও হবে, শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ছাড়া।”
আমরা পূর্ববর্তী আলেমদের (ইমাম আবু হানীফা,
ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ) থেকে নিয়ে সর্বশেষ (ইমাম ইবনে বাজ, ইমাম ইবনে উসায়মিন, ইমাম আলবানী) সবার কথাই যেটা সঠিক
সেটা গ্রহণ করি, যেটা ভুল সেটা বর্জন করি। এটা বলিনা যে, এতোবড় আলেম তার ভুল হতেই
পারেনা। কিংবা
কারো কথা ১০০% ঠিক, তার সব কথা অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে আমরা এটাও বলিনা।
অনেক
ব্যপারে আলেমরা মত পার্থক্য করেন, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম
আহমাদ তাদের মাঝে মতপার্থক্য হয়েছে, আমরা কোন ব্যপারে সেটাই মানি যা ক্বুরআন ও
সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমাণিত। তেমনি কোন যুদ্ধে মুসলমানদের যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তখন
কাফেরদের সাহায্য নেওয়া যাবে কিনা, এটা একটা ইজতেহাদী বিষয়, যেই ব্যপারে শায়খ বিন
বাজ ও শায়খ আলবানীর মাঝে মত পার্থক্য হয়েছে। কিন্তু আমরা এই ব্যপারে ইমাম শাফেয়ী,
ইমাম নববী, শায়খ বিন বাজ, শায়খ মুহাম্মাদ আমান আল-জামি, শায়খ আব্দুল্ললাহ
আল-গুনায়মানের
ফতোয়ার পক্ষেই শক্তিশালী দলিল দেখতে পাচ্ছি, যা সংক্ষেপে উপরে উল্লেখ করা হয়েছে,
সেই জন্য এই ব্যপারে তাঁদের ফতোয়াকেই গ্রহণ করি।
এই
বিষয়ে বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা শায়খ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহর মূল
ফতোয়ার অনুবাদ দেখতে পারেন –
http://www.alifta.net/Fatawa/FatawaChapters.aspx?languagename=en&View=Page&PageID=693&PageNo=1&BookID=14
____________________________________
তাকফিরী কারা? তাকফিরী বক্তা ও লিখকদের
ব্যপারে সাবধান!
আরবী ‘কাফির’ থেকে ‘তাকফির’ শব্দটি এসেছে। আর কাফের শব্দটি এসেছে ‘কুফর’ থেকে।
“কুফর” - কুফর শব্দের অর্থ হচ্ছে অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা অথবা গোপন করা।
“কাফের” - বাংলাতে কাফের শব্দের অর্থ করা হয় অবিশ্বাসী বা বেঈমান, যে ব্যক্তির কোন ঈমান
নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত ‘দ্বীন ইসলাম’ বা ইসলাম ধর্মের কোন অংশকে, ক্বুরানুল কারীম বা এর কোন আয়াতকে, মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা কোন একজন নবী অথবা
রাসুলকে অস্বীকার করে, ইসলামি আকিদাহ বা এর মৌলিক কোন ধর্মীয়
বিশ্বাস বা অকাট্য দলিল দিয়ে প্রমানিত ইসলামের কোন বিধি-বিধানকে অস্বীকার করে, অবিশ্বাস
করে বা প্রত্যাখ্যান করে, অথবা এইগুলো নিয়ে হাসি-ঠাট্টা বা অবজ্ঞা করে, নিঃসন্দেহে
সে ব্যক্তি একজন ‘কাফের’। কাফের ব্যক্তি চির জাহান্নামী, সে
কোনদিন জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবেনা। অনন্তকাল সে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি পেতে
থাকবে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
উদাহরণঃ ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘রাসুল’ বা আল্লাহর দূত হিসেবে বিশ্বাস করেনা, ক্বুরানুল কারীম ‘আল্লাহর কালাম’ এই কথা মেনে নেয়না, একারণে তারা কাফের, তারাও চির জাহান্নামী যদিওবা তারা
সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। অনুরূপভাবে, নাস্তিক যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস
করেনা তারাও কাফের। হিন্দুরাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করেনা, সুতরাং
একদিক থেকে যেমন তারা যেমন মূর্তি পূজা করে মুশরেক, অন্যদিক থেকে তারা কাফেরও বটে।
“তাকফির” - কোন মুসলিম ব্যক্তিকে ‘কাফের’ বলে ঘোষণা করাকে ‘তাকফির’ বলা হয়। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম
দাবী করে, তাকে স্পষ্ট কোন শিরক বা কুফুরী করার কারণে তাকে
কাফের বলে ঘোষণা করাকে তাকফির বলা হয়।
কোন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলিম দাবী করে, কিন্তু সে দুর্গা পূজাতে
শরীক হয়ে মূর্তিকে ফুল দেয়, কার্তিক, গণেশের
কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করা, অথবা কোন নবী-রাসূল বা
অলি-আওলিয়ার কাছে দুয়া করে, এই সবগুলো কাজ শিরক, যে কারণে ঐ ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবী করলেও তার ঈমান নষ্ট হয়ে সে কাফের
হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে, কেউ যদি ক্বুরানের কোন আয়াতকে
অস্বীকার করে, বা আল্লাহর কোন বিধানকে অস্বীকার করে তাহলেও
সে কাফের হয়ে যাবে। এমন অনেক কাজ আছে, যেইগুলো সুস্পষ্ট বড়
শিরক বা কুফর, যেইগুলোতে লিপ্ত হলে একজন মুসলিমের ঈমান নষ্ট
হয়ে সে কাফের হয়ে যাবে।
“তাকফিরী” - কোন মুসলিম যদি শিরক অথবা কুফুরী করে, তাকে তোওবা করে দ্বীনে ফিরে আসতে বলার পরেও সে তোওবা না করে
কুফুরীতে স্থির থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তি কাফের, এবং কোন আলেম
তাকে কাফের বলতে পারেন। তবে সাধারণ মানুষ যারা এই ব্যপারে যথেষ্ঠ জ্ঞানের অধিকারী
নন, তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফের বলা থেকে বিরত থাকবেন,
কারণ হতে পারে তিনি ভুল বুঝে কোন মুসলিম ব্যক্তিকেই কাফের বলে
ফেলেছেন।
কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি কোন বড় রকমের অন্যায়, ‘হারাম’ কিংবা ‘কবীরাহ গুনাহ’তে লিপ্ত হয়, কিন্তু তা যদি এমন কোন বড়
শিরক বা কুফুরী না হয় যে, যার কারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে
সে কাফের হয়না, তাহলে এমন পাপী মুসলিমদেরকে কাফের বলা
মারাত্মক অপরাধ।
কোন মুসলিম ব্যক্তিকে
অন্যায়ভাবে ‘কাফির’ আখ্যাদান সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সতর্কবাণীঃ
(১) উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যখন কেউ তার মুসলিম ভাইকে ‘কাফির’ বলে, তখন তাদের দুইজনের মধ্যে
একজনের উপর তা (কুফুরী) বর্তায়। যা বলেছে, তা যদি সঠিক হয়, তাহলে তো ভালো। নচেৎ (যে
কাফের বলেছে), তার উপর ঐ কথা ফিরে যায় (অর্থাৎ সে ব্যক্তি নিজেই কাফির হয়ে যায়)।’’ সহীহ বুখারীঃ ৬১০৪; সহীহ মুসলিমঃ ৬১।
(২) আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে কোন ব্যক্তিকে ‘হে কাফির’ বলে অথবা ‘হে আল্লাহর দুশমন’ বলে ডাকে, অথচ বাস্তবিক ক্ষেত্রে
যদি সে তা না হয়, তাহলে তার (বক্তার) উপর তা বর্তায়।’’ রিয়াদুস সালিহীনঃ ১৭৪২।
(৩) সাবিত ইবন যাহহাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “ঈমানদারকে লা’নাত (অভিশাপ দেওয়া) করা তাকে
হত্যা করার সমান। আর কেউ কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে কুফুরির অপবাদ দিলে, সেটাও তাকে হত্যা
করার সমান হবে।’’ সহীহ বুখারীঃ ৬১০৫।
যারা কোন মুসলিম ব্যক্তিকে তার কৃত পাপের কারণে কাফের বলে
ফতোয়া দেয়, তারাই
হচ্ছে তাকফিরী।
উদাহরণঃ ধরুন কোন রাজা মুসলিম, কিন্তু সে তার অধীনস্থদের
উপর অনেক জুলুম অত্যাচার করে। সেই রাজা কোন কারণে কিছু মুসলিমকে হত্যা করলো। ধরুন
সে ১০০ জন মুসলিমকে হত্যা করলো। সে যদি অন্যায়ভাবে মুসলিমদেরকে হত্যা করে, তাহলে সে অনেক বড় অন্যায় করলো। যেখানে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা
গোটা মানবজাতিকে হত্যা করে ফেলার সমান অপরাধ!
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “যে কেউ কিসাস (প্রাণের বিনিময়ে প্রাণের আইনের জন্য) অথবা জমীনে ফাসাদ
(অনর্থ সৃষ্টি করা) ছাড়া কাউকে হত্যা করে, সে যেন সমস্ত মানব জাতিকেই হত্যা করে ফেলে
এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সমস্ত মানবজাতির জীবন রক্ষা করে।” সুরা আল-মায়িদাহঃ ৩২।
নিরপরাধ মানুষ হত্যা করার কারণে সেই রাজা অনেক বড় ফাসেক এবং
জালেম হবে,
কিন্তু মানুষ হত্যা করার কারণে কেউ কাফের হয়না। কেউ যদি নিরপরাধ মানুষ হত্যা করাকে
হালাল, জায়েজ বা বৈধ মনে করে, তাহলে
সবচাইতে বড় হারাম বা কবীরাহ গুনাহকে হালাল মনে করার কারণে সে কাফের হবে। কিন্তু,
সে যদি মানুষ হত্যা করা হারাম বলে স্বীকার করে কিন্তু, ব্যক্তিগত শত্রুতা, ক্রোধ বা হিংসার কারণে মানুষ
হত্যা করে তাহলে সে অনেক বড় জালেম বা পাপী, কিন্তু একারণে
তাকে কাফের বলা যাবেনা। এখন কেউ যদি আবেগের বশবর্তী হয়ে সেই জালেম রাজাকে ‘কাফের’ বলে, তাহলে সে নিজেও একটা মহা অন্যায় করে বসলো, একজন মুসলিমকে কাফের বলার কারণে।
আর এমন যারা, জুলুম-অত্যাচার বা পাপের কারণে পাপী মুসলিমদেরকে কাফের বলে
ফতোয়া দেওয়ার বদ-অভ্যাস রয়েছে, তাদের ব্যপারে মানুষদেরকে
সতর্ক করার জন্যে তাদেরকে ‘তাকফিরী’ বলা হয়।
____________________________________
যে তিনজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকে জায়েজ সাব্যস্ত করে যুবকদের
ব্রেইন ওয়াশ করেছে
আল্লামাহ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যেই ব্যক্তি আত্মহত্যা করে সে জাহান্নামে যাবে। তাহলে কি করে
একজন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী জান্নাতে যাবে?”
আধুনিক যুগে জিহাদের নামে খারেজী, জংগীরা আত্মঘাতী বোমা হামলা করে
নিরীহ কাফির হত্যা করে পাশ্চাত্যের অমুসলিমদের মাঝে ইসলাম সম্পর্কে মারাত্মক ভুল
ধারণা সৃষ্টি করেছে। একারণে এই খারেজী, জংগীরা ইসলামের বন্ধু নয় বরং, মূলত এরা
ইসলামের শত্রু।
ক্বুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে যেই সমস্ত লোকেরা চরমপন্থী
জংগীদেরকে আত্মঘাতী বোমা হামলা বা সুইসাইড বোম্বিং করার জন্য ব্রেইন ওয়াশ করেছে
তাদের মাঝে রয়েছেঃ
(১) ইউসুফ আল-কারযাভী (মিশর, ইখোয়ানুল মুসলিমিনের ধর্ম গুরু)।
(২) সালমান আল-আওদাহ (সৌদি আরবে মুখোশধারী সালাফী নামে পথভ্রষ্ট
মুফতি। এর ফতোয়া শুনে ডা. জাকির নায়েক বিভ্রান্ত হয়ে বলেছিলেন, “শর্ত সাপেক্ষে
আত্মঘাতী বোমা হামলা করা জায়েজ।”)
(৩) আনোয়ার আল-আওলাকি (ইউএসএ, ইংরেজী ভাষায় জংগী মতবাদ প্রচারে
উল্লেখযোগ্য একজন ব্যক্তিত্ব)।
এই তিনজন ব্যক্তির কাছ থেকে যারা ইলম অর্জন করে, তাদের কথা মানুষের
মাঝে প্রচার করে তাদের থেকে সাবধান!
____________________________________
কালো পতাকা নিয়ে কোন সহীহ হাদীস নেই!
কালো পতাকা একটা myth, এনিয়ে সবগুলো
আসার জাল নয়তো জয়ীফ। মুসলিমদের ইতিহাসে আব্বাসীয়রা সর্বপ্রথম কালো পতাকাকে
রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিলো। এরই ধারাবাহিকতায় শীয়া,
খারেজী, অত্যাচারী বাদশাহর মতো অনেকেই কালো পতাকা সংক্রান্ত জাল ও জয়ীফ
বর্ণনাগুলোকে তাদের অন্যায় শাসনের পক্ষে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করার অপচেষ্টা করেছে।
আধুনিক যুগে কালো পতাকা নিয়ে আবির্ভূত দল আইসিস বর্তমানে কয়েকভাগে বিভক্ত, যার
মাঝে প্রধান দুইটি দল একটি আরেকটির সবচাইতে বড় শত্রু হয়ে নিজেদের গলায় আঘাত করছে।
মহান আল্লাহ কালো পতাকাবাহীদের অনিষ্ট থেকে মুসলিমদেরকে হেফাজত রাখুন, আমিন।
কালো পতাকা হাদীসগুলোর সনদের মান নীচে তুলে ধরা
হলো।
(১) আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “খুরাসান থেকে (মাহদীর
সমর্থনে) কালো বর্ণের পতাকাবাহী সৈন্যদল বের হবে। অবশেষে তা বায়তুল মুকাদ্দাসে
স্থাপিত করা হবে। কোন কিছুই তাকে প্রতিহত করতে পারবে না।” আত-তিরমিজিঃ ২২৬৯, মুসনাদে
আহমাদঃ ৮৭৬০।
স্বয়ং ইমাম তিরমিযী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটি
সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন “হাদীসটি গারীব” অর্থাৎ, জয়ীফ।
এই হাদীসটিকে আরো যেই সমস্ত আলেমগণ “জয়ীফ” বলেছেনঃ
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ - আল-ক্বাওল আল
মুসাদ্দিদঃ ১/৫৩।
শায়খ আহমাদ শাকির রহি’মাহুল্লাহ - তাঁর মুসনাদে
আহমাদের তাহকীকেঃ ১৬/৩১৬।
শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ - সিলসিলাহ
জয়ীফাহঃ ৪৮২৫।
(২) আবদুল্লাহ ইবনে মাসুদ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
একদা আমরা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট
বসা ছিলাম। তখন হাশিম বংশীয় কতক যুবক তাঁর নিকট উপস্থিত হলো। তাদের দেখতে পেয়ে নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের চক্ষুদ্বয় অশ্রুসিক্ত হলো
এবং তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেলো। রাবী বলেন, আমি বললাম, আমরা সব সময় আপনার
চেহারায় দুশ্চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করি। তিনি বলেন, আমাদের আহলে বাইতের জন্য আল্লাহ
তাআ’লা পার্থিব জীবনের পরিবর্তে আখেরাতের জীবনকে পছন্দ করেছেন।
আমার আহলে বাইত আমার পরে অচিরেই কঠিন বিপদে লিপ্ত হবে, কষ্ট-কাঠিন্যের শিকার হবে
এবং দেশান্তরিত হবে। প্রাচ্যদেশ থেকে কালো পতাকাধারী কতক লোক তাদের সাহায্যার্থে
এগিয়ে আসবে। তারা কল্যাণ (গুপ্তধন) প্রার্থনা করবে, কিন্তু তা তাদের দেয়া হবে না।
তারা লড়াই করবে এবং বিজয়ী হবে। শেষে তাদেরকে তা দেয়া হবে, যা তারা চেয়েছিল। কিন্তু
তারা তা গ্রহণ করবে না। অবশেষে আমার আহলে বাইতের একজন লোকের নিকট তা সোপর্দ করা
হবে। সে পৃথিবীকে ইনসাফে পরিপূর্ণ করবে, যেমনিভাবে লোকেরা একে যুলুমে পূর্ণ
করেছিলো। তোমাদের মধ্যে যারা সেযুগ পাবে, তারা যেন বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও
তাদের নিকট চলে যায়।” সুনানু ইবনে মাজাহ, ফিতনা অধ্যায়ঃ হাদিস নং-
৪০৮২।
ইমাম ইবনে কাইয়্যিম রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে “জয়ীফ” বলেছেন, কারণ হাদীসের একজন
রাবী ইয়াজিদ ইবনে আলি জিয়াদ এর স্মৃতিশক্তি দুর্বল ছিলো। আল-মানার আল-মুনিফঃ ১১৬।
ইমাম আয-যাহাবী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে “জয়ীফ” বলেছেন। মিযান আল-ইতি’দাল ৪/৪২৩।
শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে “মুনকার” বলেছেন, সিলসিলাহ জয়ীফাহঃ
৫২০৩।
(৩) সাওবান রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের একটি খনিজ সম্পদের
নিকট পরপর তিনজন খলীফার পুত্র নিহত হবে। তাদের কেউ সেই খনিজ সম্পদ দখল করতে পারবে
না। অতঃপর প্রাচ্যদেশ থেকে কালো পতাকা উড্ডীন করা হবে। তারা তোমাদেরকে এত
ব্যাপকভাবে হত্যা করবে যে, ইতোপূর্বে কোন জাতি তদ্রূপ করেনি।” অতঃপর রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরও কিছু বলেছেন, যা আমার
মনে নাই। তিনি আরো বলেছেন, “তাকে আত্মপ্রকাশ করতে দেখলে
তোমরা বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তার সাথে যোগদান করো। কারণ সে আল্লাহর খলীফা
মাহদী।” সুনানু ইবনে মাজাহঃ ৪০৮৪, মুসনাদে আহমাদ, খণ্ড ৫, পৃষ্ঠা
২৭৭, কানজুল উম্মাল, খণ্ড ১৪, পৃষ্ঠা ২৪৬, মিশকাত শরীফ, কেয়ামতের আলামত অধ্যায়।
ইমাম আয-যাহাবী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে “মুনকার” (প্রত্যাখ্যাত) বলেছেন,
মিযান আল-ইতি’দালঃ ৩/১২৮।
শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ এই হাদীসটিকে “মুনকার” বলেছেন, সিলসিলাহ জয়ীফাহঃ
৮৫।
ইমাম ইবনে কাইয়্যিম রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “হাদীসের একজন রাবী আলি ইবনে
জায়েদ “জয়ীফ” এবং তার রেওয়ায়েতগুলোকে
প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।” আল-মানার আল-মুনিফঃ ১১৫।
(৪) আবদুল্লাহ ইবনুল হারিস ইবনে জায়ই আয-যাবীদী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “প্রাচ্য দেশ থেকে কতক লোকের
উত্থান হবে এবং তারা মাহদীর রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত করবে।” সুনানু ইবনে মাজাহঃ ৪০৮৮।
>>> হাদীসটি “জয়ীফ”, শায়খ আলবানী।
____________________________________
আনোয়ার আওলাকির কথিত “জিহাদ” নিয়ে ড. আব্দুল্লাহ
জাহাঙ্গীর রহি’মাহুল্লাহরর অভিমত
প্রশ্নঃ জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের খতীব
শাইখ আনোয়ার আওলাকি রচিত ‘‘আল্লাহ আমাদের বিজয়ের জন্য
প্রস্তুত করেছেন’’ নামক বইতে জিহাদের পুনর্জাগরণকে মুসলিমদের
বিজয়ের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেছেন। যার পক্ষে অনেক যুক্তি উপস্থিত করেছেন।
প্রশ্ন হল, তাহলে কেন আমরা জিহাদের এই পুনর্জাগরণকে খারাপ চোখে দেখি?
উত্তরঃ শাইখ আনোয়ার আওলাকি আলেম ছিলেন না।
যতটুকু জানি, উনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। আমেরিকার ভালো খতীব ছিলেন।
আমেরিকান সরকার অন্যায়ভাবে তাকে জেলে দেয় । জেলে থেকে তিনি আল কাইদাহ হয়ে যান।
এরপরে উনি ইয়ামানে চলে আসেন। সেখানেই তিনি নিহত হন। আল্লাহ তার শাহাদাত নসিব
করেন। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু জেলের আগের আওলাকি আর পরের আওলাকির মাঝে
আকাশ-পাতাল তফাত। আগে বলতেন অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যাবে না। যেমন
ফিলিস্তিনের ইহুদিদের কারণে আমেরিকার ইহুদিদের মারা যাবে না । কিন্তু তিনি জেল
থেকে বেরিয়ে বলছেন, আমেরিকান যেখানে আছে ধরো, মারো।
জিহাদের পুনর্জাগরণকে তো কেউ খারাপ চোখে দেখছে
না। জিহাদ আল্লাহর একটা ফরয ইবাদত। কথা হল, জিহাদ বলতে তুমি কী বোঝাচ্ছা? জিহাদটা
কী জিনিস? আমি তো জিহাদ বুঝলাম না। জিহাদ অবশ্যই করতে হবে কিন্তু আনোয়ার আওলাকি
যে জিহাদ করেছেন বা যে জিহাদ করতে চাচ্ছেন, এ তো জিহাদ না। জিহাদের জন্য একটা
রাষ্ট্র লাগবে। সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে জিহাদের ঘোষণা হবে।
অন্যান্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ চলবে। এটা হল জিহাদ। রাষ্ট্র ছাড়া জিহাদ হয়
না। আফগানিস্তানের জিহাদকে আমরা শরীআহ সম্মত জিহাদ মেনেছি। কিন্তু ফলাফল আমরা পাই
নি।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভি রহি’মাহুল্লাহর চিন্তা ও চেতনায়
উদ্বুদ্ধ হয়ে সাইয়িদ আহমাদ বেরেলভি রহি’মাহুল্লাহ জিহাদ করেছেন।
শরীআতসম্মত জিহাদ। তিনি একটা রাষ্ট্র থেকে বেরিয়ে গেছেন, যেটাকে বলে দারুল হারব।
তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার রাষ্ট্রের আয়তন এক বিঘাত হোক। তারপর তিনি
জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন। জিহাদ করেছেন। কিন্তু সেই জিহাদের বড় রকমের সুফল আমরা
পাই নি। তােমরা মনে কর জিহাদ হলে সব হয়ে যাবে, জিহাদ হলেই সব মিটে যায় না। তুমি
কী জিহাদ করছ, কার বিরুদ্ধে করছ, কার নেতৃত্বে করছ, এটা ঠিক করতে হবে। আমরা মনে
করি, সব অন্যায় মিটিয়ে আমরা পৃথিবী ভালো করে ফেলব। আরে দুনিয়া আল্লাহ বানিয়েছেন
ন্যায় আর অন্যায় দিয়ে। এ জন্য শরীআতসম্মত জিহাদ অবশ্যই থাকবে। সেই জিহাদে
শাহাদাতের তামান্না মুমিনের থাকবে। কিন্তু সমস্যা হল, জিহাদের সাথে বান্দার হক
জড়িত। একটা মানুষের রক্তপাত করা দুনিয়ার সবচাইতে নিকৃষ্ট হারাম।
ষোলো আনা বৈধ হলেই তুমি জিহাদ করতে পার।
আন্দাজে কারো ক্ষতি করা, সম্পদ নষ্ট করা ভয়ঙ্করতম হারাম। লক্ষ্য রাখতে হবে, একটা
ইবাদতের নামে আমি যেন হারামে নিপতিত না হই। আমার জানা মতে বর্তমানে শরীআতসম্মত
জিহাদ হচ্ছে ফিলিস্তিনে। অধিকাংশ ফকীহ আলেম সিরিয়ার জিহাদকে শরীআতসম্মত জিহাদ
বলছেন। যেহেতু তারা সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সরকারের নেতৃত্বে জিহাদ করছেন। সেখানে
আরব দেশের অনেক মুজাহিদ যাচ্ছেন। তোমার শখ হলে তুমি চলে যেতে পার। এটা ইসলামের কোনো
সমাধান না। প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব নিজ নিজ এলাকায় কাজ করা। তােমার দায়িত্ব
হল, নিজে দ্বীন শেখো। মানুষকে দাওয়াত দিয়ে আল্লাহর পথে নিয়ে এসো। আমাদের সবসময়
একই আক্ষেপ, সমাজ ভালো না হলে কিছু ভালো হবে না।
কদিন আগে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামে
গিয়েছিলাম। আমার অনেক সিনিয়র এক স্যার বলছেন, এই রোযায় তাকওয়া হবে না। যতক্ষণ
না ইসলামি রাষ্ট্র-সমাজ হবে, ততক্ষণ রোযার মাধ্যমে তাকওয়া হবে না। অবশ্যই আমরা
ইসলামি রাষ্ট্র সমাজ চাই। যে চায় না সে তো মুমিনই না। তাহলে বক্তব্য এই দাঁড়াল
যে, ইসলামি রাষ্ট্র-সমাজ না হওয়া পর্যন্ত নামায, রোযার দরকার নেই। আমাদের সমাজের
শতকরা পাঁচজন মানুষ ব্যক্তি জীবনে পুরো মুসলিম। নামায পড়ি আমরা শতকরা পনেরো
বিশজন। এই পনেরো বিশজনের ভেতর অনেকেই সুদ খায়, ঘুষ খায়, পর্দা করে না। তাহলে
ব্যক্তি জীবনে আমরা ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এমন মুসলিম পাঁচজন। এখন এই
পাঁচজনও নামায রোযা বাদ দিই। যেহেতু ইসলামি সমাজ-রাষ্ট্র নেই, তাহলে নামায, রোযা
করার দরকার কী? ইসলাম কায়েম তো করা লাগবে। দাওয়াতও দেব না, এখন মারধোর করে, অথবা
অন্য কোনোভাবে কিংবা নিজেরাও শেষ হয়ে যাই। ফলে এই পাঁচজনও শেষ হয়ে যাই। তাহলে
লাভটা হল কী! সবসময় মনে রাখতে হবে সমাজ একটা নৌকার মতো। আমি কয়দিন আছি, এক সময়
চলে যাব, কিন্তু সমাজ চলতে থাকবে। আমার ফরয হল ব্যক্তি জীবনে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা।
অন্যদেরকে দাওয়াত দেওয়া। আল্লাহ যদি দাওয়াতে সফলতা দেন, জিহাদের পরিবেশ আসে,
তাহলে ইনশাআল্লাহ জিহাদ হবে । কত নবী চলে গেছেন, জিহাদ তো দূরের কথা, উম্মতই পান
নি। এজন্য জিহাদ আল্লাহর দ্বীনের বড় ইবাদত এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু জিহাদের
শর্ত পূরণ হতে হবে।”
উৎস গ্রন্থঃ জিজ্ঞাসা ও জবাব, প্রথম খন্ড,
পৃষ্ঠাঃ ১৪৮-১৪৯। ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহি'মাহুল্লাহ।
____________________________________
মুসলিম উম্মাহর সমস্যা সমাধান করার জন্য মিছিল-লংমার্চ করা
কি দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে?
“আল আজিবাতুল মুফীদাহ” নামক
গ্রন্থ থেকে ৯৮-নং প্রশ্নের উত্তরঃ
মুসলিম
উম্মাহর সমস্যা সমাধান করার জন্য মিছিল-লংমার্চ করা কি দাওয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে?
শায়খ
সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “আমাদের দীন কোন
বিশৃঙখলার দীন নয়। বরং আমাদের দীন হলো শৃঙখলা, ন্যায়-নীতি, ও শান্তি-নিরাপত্তার দীন। মিছিল-লংমার্চ
করা মুসলিমদের কাজ নয়। মুসলিমগণ কোনদিন এ কাজকে চিনতো না। ইসলাম ধর্ম ভালোবাসা ও
সম্প্রীতির ধর্ম। এতে বিশৃঙখলা, গোলযোগ ও ফিতনা-ফাসাদের কোন
স্থান নাই।
এসকল
ভ্রান্ত পদ্ধতি ছাড়াই শারঈ পন্থায় আবেদন করার মাধ্যমে অধিকার আদায় করা সম্ভব।
মিছিল-লংমার্চ
করার দ্বারা বিভিন্ন ফিতনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে, হতে থাকে খুনা-খুনি ও জান-মালের ক্ষতি। সুতরাং এ কাজগুলো জায়েয নয়।
=>
জাযায়েরে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে দেওয়ার পৃষ্ঠপোষকতার ক্ষেত্রে কিছু প্রসিদ্ধ অতি উৎসাহীর
প্রভাব রয়েছে।
‘শারহুত
ত্বহাবী’ সিরীজের
লেখক ২/১৮৫ তে জাযায়েরের জাবহাতুল ইনফাযের (মূলতঃ তা হলো জাবহাতুল দিমার বা ইসলাম
ধ্বংসের ফ্রন্ট) প্রশংসায় বলেন, ‘যখন উলামা মাশায়খগণ বললেন, আমরা লংমার্চ করব। তখন ত্রিশ লক্ষ লোক তাদের সাথে একমত হয়ে রাস্তায় বের
হলো। তারা বলল আল্লাহর হুকুমত চাই। সাত লক্ষ মহিলাও বের হলো যাদের দাবি ছিল ‘তোমরা কুরআনী আইন দ্বারা শাসন করো। আমরা হিজাবের প্রবর্তন
চাই এবং নারী পুরুষের অবাধ মেলমেশার প্রথা নিপাত যাক।’’ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
বলো
তোমরা সত্যবাদী হলে প্রমাণ পেশ করো। সূরা আল-বাক্বারাহঃ ১১১।
যে
সকল দাঈ ও নামধারী মাশায়খরা নারীদের মিছিল-লংমার্চ করার অনুমোদন দিয়েছে তাদের নাম
আমাদের নিকট সংরক্ষিত রয়েছে, আমরা তাদেরকে
সতর্ক করছি এবং তাদের থেকে সতর্ক করছি। তারা তো ফিতনা ও মুছিবাতেরই দাঈ।
তার
অপর একটি কথা শুনুন তিনি এক জুম‘আর
খুত্ববায় বলছেন, (যার হাতে আমার জীবন
তার শপথ করে বলছি, জাযাইরে এক দিনে হিযাব পরিহিতা সাত লক্ষ মুসলিম মহিলা রাস্তায় বের হয়েছিল তাদের দাবি ছিল যেন
আল্লাহর শারী‘আত
অনুযায়ী বিচার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।’’
দেখুন
‘মাদারিকুন নাযার পৃ. ৪৭৬। নিঃসন্দেহে
তার এই কথাগুলো বিশৃঙ্খলার প্রতি সমর্থন ও সাহায্যই বুঝায়। নতুবা কোথায় তার পক্ষ
থেকে এসবের বিরোধিতা।
আমি
বলছিঃ কীভাবে এত লক্ষ লক্ষ মানুষের পরিসংখ্যান করা হলো? আল্লাহর পথ বাদ দিয়ে এভাবে
বাড়াবাড়ি-কঠোরতার মাধ্যমে কোথায় যাচ্ছ?
তোমারা
মহিলাদেরকে বের হওয়ার অনুমতি দাও কীভাবে?
কীভাবে
মুসলিমদের মাঝে ফিতনা ও বিশৃঙ্খলার অনুমোদন প্রদান করো?
অথচ
তোমাদের দাবিতে তোমরাই সে সকল দাঈ, মুরুববী এবং পথনির্দেশক যারা বাস্তবতা সম্পর্কে ভালো জ্ঞান রাখো!
তোমরা
কি আল্লাহ তা‘আলার এই
কওল বা কথা পড়ো না? আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الأُولَى
তোমরা
(মহিলারা) ঘরে অবস্থান করবে এবং জাহিলিয়্যাতের (যুগের) মত বের হয়ো না।
শায়খ
মুহাম্মাদ ইবনে সলিহ আল উছায়মিন (রহ.) এর ‘জারীদাতুল
মুসলিমীন’ নামক
ম্যাগাজীনের ৫৪০ সংখ্যা প্রকাশ ১১ মুহাররাম হিজরী ১৪১৬ সাল। তিনি বলেন ‘জাযায়িরে বিশৃঙ্খলা-বিদ্রোহে অনেক সংখ্যক মুসলিম নিহত হলো
এবং এ ঘটনায় বহু সংখ্যক মুসলিম ক্ষতিগ্রস্থ হলো।
আমাদের
দায়িত্ব হলো সাধ্যমত উপদেশ প্রদান করা। আপনারা এখন এটাও খুব ভালো করে জানেন যে, এসকল বিশৃংখলা বিদ্রোহের সাথে ইসলামী শারী‘আত এবং সংশোধন বা কল্যাণের কোন দূরতম সম্পর্কও নাই। এসকল
বিদ্রোহ বিশৃঙ্খলাতে আমরা মোটেও কোন সাহায্য সহযোগিতা করব না। এ পথ ছাড়াও সংশোধনের
অনেক পথ রয়েছে। তবে হ্যা, এসকল
বিশৃঙ্খলাতে নেপথ্যে অনেক বিদেশী (মুসলিমদের শত্রুরা) কলকাঠি নাড়ছে।
বিঃদ্রঃ
শায়খ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উছাইমিন রহি’মাহুল্লাহ এর ফাতওয়া
উল্লেখিত বিশৃঙ্খলায় তাদের সাহায্য প্রদান করার পরে। জাযায়িরে বিদ্রোহে তারা
সাহায্য করেছিল হিজরী ১৪১১ সনে। আমার জানা মতে তারা এরপর এই মত থেকে আর
প্রত্যাবর্তন করেনি।
সুতরাং
কোন দুই ফিরকার মাঝে কোন ফিরকহ উত্তম? তারা যে দাবি করে সেই ফিকহুল ওয়াকি‘র বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীরা নাকি বিদগ্ধ আলিমগণ।
কেমন
হবে তাদের এবং তাদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ লোকদের অবস্থা কি ভয়াবহ হবে! আল্লাহ তা‘আলা তাদের গল্পকারদেরকে জিজ্ঞাসা করবেন। তারা তাদের সকল
অনুসারীদের পাপরাশি পিঠে বহন করে নিয়ে যাবে।
রসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি কোন ভ্রষ্ট পথে আহবান করবে তাহলে তার উপরও উক্ত
ভ্রষ্ট কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ পাপ তারও হবে। পূর্বোক্ত ব্যক্তিদের থেকে কোন পাপ
কমানো হবে না।” সহীহ মুসলিমঃ ২৬৭৪।
___________________________________
তালেবান সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর
(১) শায়খ আহমাদ আন-নাজমী
(মৃত্যুঃ ২০০৮) রহি’মাহুল্লাহকে
প্রশ্ন করা হয়েছিলো,
“সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন বিদআ’তীকে সমর্থন
করে বা আশ্রয় দেয় তার উপরে আল্লাহর অভিশম্পাত।” সহীহ মুসলিমঃ ১৯৭৮।
এই
হাদীসে বর্ণিত অভিশম্পাত কি তালেবান সরকারের জন্য প্রযোজ্য হবে? কেননা তারা “আল-ফারুক্ব” নামক একটি ক্যাম্পে খারেজীদেরকে আশ্রয় দেয়, যেই ক্যাম্পে
ইতিঃপূর্বে উসামা বিন লাদেন ছিল। বিশেষ করে এই ক্যাম্পে চারজন
ব্যক্তির পরিবার অবস্থান করছেঃ আল-মুত্বীম, আল-শাহরান, আল-হাজুরী এবং আল-সাঈদের পরিবার। এই
চারজন ব্যক্তি সৌদি আরবের রিয়াদ শহরের উলায়াতে বোমা হামলা করেছিলো। তারা সৌদী আরবের শাসক, সরকার এবং আলেমদেরকে কাফের বলে
ঘোষণা করে।”
শায়খ
আহমাদ আন-নাজমী রহি’মাহুল্লাহ
বলেন,
“এতে কোন সন্দেন নাই তারা বিদআ’তী। নিঃসন্দেহে যারা বিদআ’তী ব্যক্তিদেরকে
সমর্থন করে এবং তাদেরকে আশ্রয় দিবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের এই হাদীসে বর্ণিত আল্লাহর
লানত তাদের জন্য প্রযোজ্য হবে। যদি তুমি
কোন দলকে আশ্রয় দাও এবং তাদের মধ্যে কোন একজন ব্যক্তি মানুষ হত্যা করে অতঃপর তুমি নিহতের
পরিবারকে বলো, “হত্যাকারীকে গ্রেফতার করার কোন অধিকার তোমার নেই” এবং তুমি
সেই খুনীকে রক্ষা করো, তাহলে তুমি
কি বিদআ’তীকে সমর্থনকারী হিসেবে গণ্য হবেনা? নাআম।” (অর্থাৎ,
এমন কাজ করলে তুমি অবশ্যই বিদআ’তীকে সমর্থনকারী
হিসেবে গণ্য হবে।)
শায়খের
বক্তব্যের লিংক –
https://youtu.be/VMx9xIJkpeo
(২) শায়খ উবায়েদ আল-জাবিরী
হা’ফিজাহুল্লাহ তালেবান সম্পর্কে বলেন,
“তালেবানদের তৎপরতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আমার
মূল্যায়ন হচ্ছেঃ তালেবানরা খিচুড়ির মতো (বিভিন্ন ধরণের আক্বীদার অনুসারী লোকদের মিশ্রণ)। তালেবানদের
মধ্যে কেউ হচ্ছে তাকফিরী, কেউবা চরমপন্থী সূফী, আবার কেউবা কবর পূজারী।” লা তাকুনু আ'তবা কুল্লি নাঈ’ক।
___________________________________
তাগুত, জিহাদ, ক্বিতাল, আব্দুল্লাহ আযযম,
আনোয়ার আল-আওলাকি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তর
- ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহি’মাহুল্লাহ
প্রশ্ন
নং-৪৩১
ঈমান
আনার পূর্বশর্ত হল তাগুতকে বর্জন করা। ইমাম কুরতুবি, ইবনে কাসীর, ইবনে তাইমিয়ার
মতে তাগুত হল ওই সকল মাবূদ, লীডার, মুরুব্বি
যারা নিজেদের মনগড়া আইন দিয়ে বিচার করে, আইন রচনা করে। আমরা এইসব তাগুতের আনুগত্যের মাধ্যমে ইসলাম বিরোধী আইনের আনুগত্য
করে কুফরীতে লিপ্ত হচ্ছি। আর আপনিও তাদের আনুগত্যের
কথা বলেন।
উত্তরঃ
কুরতুবি, ইবনে কাসীর, ইবনে তাইমিয়ার নামে তোমরা যা বলছ সব মিথ্যা। লীডার, মুরুব্বি
এই শব্দগুলো তারা জানতেন না। তোমাদের নিয়ে বড় বিপদ। তোমরা একবার বলবে কুরআন হাদীসের বাইরে কারো কথা শুনব না। আর যেই কুরতুবিদের কথা নিজের পছন্দ হবে, অমনি তাদের গ্রহণ করবে, কেন রে বাবা! আল্লাহ কুরআনেই তো তাগুতের পরিচয় দিয়েছেন। তাগুত বর্জন করার মানে কী?
আল্লাহ
তাআ’লা বলেছেনঃ
وَٱلَّذِينَ ٱجْتَنَبُوا۟ ٱلطَّٰغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوٓا۟ إِلَى ٱللَّهِ لَهُمُ ٱلْبُشْرَىٰۚ فَبَشِّرْ عِبَادِ
যারা
তাগুতের দাসত্ব থেকে দূরে থাকে, আর আল্লাহর
অভিমুখী হয়, সুসংবাদ তাদেরই জন্য। কাজেই সুসংবাদ দাও আমার বান্দাদেরকে। সুরা যুমারঃ ১৭।
আল্লাহ
তাগুতের ইবাদত বর্জন করতে বলেছেন। আর তাগুত কী? আল্লাহ তাআ’লা বলেছেনঃ
ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ يُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ يُقَٰتِلُونَ فِى سَبِيلِ ٱلطَّٰغُوتِ فَقَٰتِلُوٓا۟ أَوْلِيَآءَ ٱلشَّيْطَٰنِۖ إِنَّ كَيْدَ ٱلشَّيْطَٰنِ كَانَ ضَعِيفًا
অর্থঃ ঈমানদারগণ আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে আর যারা কাফির তারা তাগুতের পথে
যুদ্ধ করে। কাজেই তোমরা শায়ত্বনের
বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর, শায়ত্বনের
ফন্দি অবশ্যই দুর্বল। সুরা নিসাঃ ৭৬।
তাগুত হল মূলত শয়তান। আর তাগুত বর্জন করা মানে, তাগুতের ইবাদত বর্জন করতে হবে। একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। কাজেই তোমরা যাদের কথা বলেছ, তারা এগুলো বলেন নি। তুমি বলেছ, তাগুতের আনুগত্য করতে গিয়ে আমরা কুফরি করছি। ধর, তুমি শয়তানের
আনুগত্য করতে গিয়ে দাড়ি চেঁছেছ, সুদ খেয়েছ, ঘুষ খেয়েছ, বেপর্দা চলেছ, ব্যভিচার
করেছ....তার মানে তুমি কাফের হয়ে গেছ?
একটা
ছেলে বাপের হুকুমে বা বউয়ের কথায় দাড়ি চেঁছে ফেলল, সে কাফের হয়ে যাবে? তার এই দাড়ি চাঁছাটা কুফরি?
একজনের আনুগত্য করে আল্লাহর হুকুম অমান্য করলে কাফের হয় এইসব বুদ্ধি
কে দিয়েছে তোমাদের?
আল্লাহ
কুরআনে খুব স্পষ্ট বলেছেন, তাগুতের ইবাদত
বর্জন করো, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করো। আল্লাহর আইনের বাইরে অন্যের আনুগত্য করা পাপ। তবে সেটাকে বৈধ বললে কুফরি হবে। মনগড়া আইন বানানোর কথা বলেছ। মানুষ তো আইন বানাবেই। আল্লাহ আইন বানানোর সুযোগ মানুষকে দিয়েছেন। আইন যদি কুরআন হাদীসের বিপরীত হয়, সেই আইন বানানো দ্বীনের সাথে কুফরি । যদি কেউ মনে করে আল্লাহর দ্বীন অচল, আল্লাহর আইন চলবে না, নতুন আইন লাগবে, তাহলে সে কাফের। আর কেউ যদি মনে করে আল্লাহর আইন ঠিক, কিন্তু মানুষের ভয়ে, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আল্লাহর আইনের বিপরীতে বিচার করে তাহলে সে মহাপাপী,
ফাসেক।
কিন্তু আমাদের সমাজে যে আইন বানানো হচ্ছে, তোমরা
কি জাননা, ব্রিটিশ এবং আইয়ুব খানের পরে আমাদের দেশে একটা আইনও
সরাসরি আল্লাহর দ্বীনের সাথে কুফরি করে করা হয় না। জনগণের ভোটের কারণে করা হয়। ব্রিটিশদের সময়ে কুরআন বিরোধী কিছু আইন বানানো হয়েছিল, সেটা এখনো মেনে চলা হয়। কেউ কুফরির কারণে, কেউ মুনাফেক হওয়ার কারণে, কেউ না জেনে, কেউ ঈমানের দুর্বলতার কারণে মেনে চলে। এদের ভেতর কেউ কাফের, কেউ মুনাফেক, কেউ জাহেল, কেউ পাপী
আর কেউ পাপী দুর্বল ঈমানদার। সাহাবীরা ইয়াযিদের আনুগত্য
করতে বলেছেন। উমাইয়া যুগে সাহাবিরা
মদখোর ইমামের পিছনে নামায পড়েছেন।
আব্দুল্লাহ
ইবন মাসউদ নামায পড়ছেন উকবা ইবন আবি মুইতের পেছনে। উকবা মাতাল অবস্থায় ফজরের নামায চার রাকআত পড়িয়েছে। সালাম ফিরিয়ে বলছে, নামায কি কম হল নাকি! আরো বেশি লাগবে? আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ বললেন, বেশি দেয়া হয়ে গেছে,
আর লাগবে না। দুই রাকআতের জায়গায় চার
রাকআত দিয়েছ। আর দরকার নেই।
তো
আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ কাফের হয়ে গেছে?
একজন
পাপীর আনুগত্য কখনো বৈধ, কখনো হারাম,
কিন্তু কুফরি না। আর পাপীর ইবাদত- আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদত, এটা কুফরি।
উৎস
গ্রন্থঃ জিজ্ঞাসা ও জবাব, ১ম খন্ড। পৃষ্টা ১৫৭-১৫৯।
.
প্রশ্ন নং- ৪২২
বেশ
কিছু সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, খুরাসানের
ভেতর থেকে কালো পতাকাধারী দল বের হবে। তাদের সাথে শামিল হতে আমাদের তাগিদ দেয়া হয়েছে। যা আফগান মুজাহিদদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তাহলে হাদীস অনুযায়ী তাদের সাথে আমাদের শরিক হওয়া উচিত কি
না?
উত্তরঃ
এটাই তো জ্বালা। কালো পতাকা তো লাখ লাখ
দলের আছে। কালো পতাকার সাথে আরো ভালো
কথা আছে। কালো পাকা হতে হবে, মাহদির হাতে বাইআত হবে, ওই দল মাহদির কাছে যাবে। এখন কালো পতাকার হাদীস
দেখে বাংলাদেশে একদল কালো পতাকা বেরিয়ে গেল আর তুমি তাদের পিছনে দৌড় শুরু করলে, তাহলে তো মুশকিল। এরপরেও তোমার শখ হলে আফগান চলে যাও।
উৎস
বইঃ জিজ্ঞাসা ও জবাব (১ম খন্ড)।
=>
কালো পতাকা সম্পর্কিত হাদিস গুলোর পর্যালোচনা
ড. মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ মাদানীর ভিডিওটি দেখতে
পারেন
https://youtu.be/fRNISRcij1U
.
প্রশ্ন-৪২০
ড. আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ. বলেছেন, ঈমান আনার পর প্রথম শর্ত হল মুসলিম ভূমির প্রতিক্ষা। আমরা এই দায়িত্ব কতটুকু পালন করছি?
উত্তরঃ ড. আব্দুল্লাহ
আযযাম রাহ. আমার জানা মতে পয়গাম্বর ছিলেন না। তোমরা যদি তাকে কেউ পয়গাম্বর মান, সেটা ভিন্ন কথা। আমি মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পরে কাউকে পয়গাম্বর মানি না।
রাসূলুল্লাহ (সা) এবং তাঁর সাহাবিরা
কখনোই বলেন নি, ঈমান আনার পর প্রথম শর্ত মুসলিম ভূমির নিরাপত্তা
রক্ষা করা কক্ষনো বলেন নি। কুরআনেও নেই, হাদীসেও নেই। সাহাবিরাও বলেন নি।
ড. আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ. এমন একটা দেশে জন্মেছিলেন, সে দেশে লাশের ভেতর থাকতে
হয়। অস্ত্রের ভেতর তার জন্ম। সে জন্য তার অমন মানসিকতা গড়ে উঠেছে। তিনি তার মতো চিন্তা করেছেন। আল্লাহ তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন। আমরা তার জন্য দুআ করি। তবে তিনি পয়গাম্বর ছিলেন না।
বইঃ
জিজ্ঞাসা ও জবাব (১ম খন্ড)।
.
প্রশ্ন-৩৭১:
পবিত্র
কুরআনে জিহাদ ও কিতালের নির্দেশ সম্বলিত অনেক আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে আয়াতগুলোর প্রাসঙ্গিকতা আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে
যাচ্ছে নাকি?
মুসলিমদের
উপর সারা বিশ্বে আগ্রাসন চালানো হচ্ছে। এই অবস্থায় কাফেরদের বিরুদ্ধে
মুমিনের ভূমিকা কী হওয়া উচিত?
উত্তরঃ
আল্লাহ তাআলা কুরআনে নামাযের অনেক আয়াত নাযিল করেছেন। কিন্তু নামাযের কিছু শর্ত আছে। সময় আছে। আল্লাহ যেহেতু কুরআনে নামাযের
আয়াত নাজিল করেছেন, তাই ইচ্ছামতো
পূর্ব-পশ্চিম, উত্তর-দক্ষিণ নামায পড়লাম, ওযু গোসল করলাম না, অথবা উলঙ্গ হয়ে পড়লাম, অথবা সূর্যাস্তের সময় পড়লাম-
নামায হবে নাকি? হবে না।
ঠিক
তেমনি আল্লাহ জিহাদেরও আয়াত নাজিল করেছেন। তিনি কুরআনে এর বিধিবিধান
দিয়েছেন। জিহাদ অবশ্যই রাষ্ট্র দ্বারা
নিয়ন্ত্রিত হতে হবে।
আল্লাহ
কুরআনে এটা বলেছেন। হাদীসেও বলেছেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে জিহাদ করতে হবে। তাই যদি না হয় তাহলে তো আমি আমার গ্রুপ নিয়ে আর আপনি আপনার
গ্রুপ নিয়ে মারামারি করে মরে যাব।
দ্বিতীয়ত, কার বিরুদ্ধে জিহাদ করতে হবে এটাও আল্লাহ নির্ধারণ
করে দিয়েছেন। জিহাদ মুমিনের জীবন থেকে
হারায় না। জিহাদ কিয়ামত পর্যন্ত
থাকবে।
রাষ্ট্র, প্রশাসনের দায়িত্ব জিহাদকে উজ্জীবিত রাখা। কেউ না করলে সে গোনাহগার হবে। মুমিনের দায়িত্ব জিহাদের দাওয়াত দেয়া, রাষ্ট্রকে বলা। তবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে জিহাদ হয় না।
খুনোখুনি
হয়, মারামারি হয়।
পৃথিবীতে
ইসলামের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ছিল না কবে! আর থাকবে না কবে! কিন্তু কোনো কিছুতে ইসলাম শেষ হয়ে
যায় নি। আর অস্ত্র তুলে নিলেই ইসলাম কায়েম হয় নি। আফগানিস্তানে অনেক বছর জিহাদ হয়েছে। কিন্তু সেখানে ইসলাম কিছুই আগায় নি। আবার জিহাদ ছাড়াই তুরস্কে ইসলাম অনেক এগিয়ে গেছে। জিহাদের
পরিবেশ আসলে জিহাদ হবে। কাফেরদের মেরে ফেললেই সব
মরে যাবে, এমন না। আবার তারা বেঁচে থাকলেই জিতে যাবে, এমন না। আমার উপর যা দায়িত্ব, তা আমি পালন করব। জিহাদের যদি সুযোগ থাকে
জিহাদ করব। জিহাদের সুযোগ নেই আমি দাওয়াত দেব।
আপনি
যে অস্থিরতায় ভুগছেন, সব শেষ করে
দেব- আপনি শেষ করলেই সব শেষ হবে না। এই অস্থিরতার জন্যই আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেছেনঃ
عليكم أنفسكم لا يضرم من ضل إذا اهتديتم
তোমার দায়িত্ব তোমার । তুমি সুপথে ডাকার পরেও কেউ না আসলে তাদের এই পথভ্রষ্টতা তোমাদের
কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
উৎসঃ
জিজ্ঞাসা ও জবাব ১ম খন্ড। (পৃষ্টা ১৩৫
-১৩৬)
(یَـٰۤأَیُّهَا ٱلَّذِینَ ءَامَنُوا۟ عَلَیۡكُمۡ أَنفُسَكُمۡۖ لَا یَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا ٱهۡتَدَیۡتُمۡۚ إِلَى ٱللَّهِ مَرۡجِعُكُمۡ جَمِیعࣰا فَیُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمۡ تَعۡمَلُونَ)
[Surah Al-Ma'idah 105]
.
প্রশ্ন-৩৬৬: পাঠ্যবই থেকে
দিনে দিনে ইসলাম মুছে যাচ্ছে। ইসলামকে কোণঠাসা করা হচ্ছে। একদিন মসজিদও মুসল্লি শূন্য হয়ে যাবে। সেদিন হয়ত আমরা দায়মুক্ত হব। প্রশ্ন হল, আল্লাহর
কাছে গিয়ে কি দায় এড়াতে পারব? দায়মুক্ত হতে পারব?
উত্তরঃ
আমরা আপনাদের মসজিদে আসতে বলি, ডাকি। এভাবে যদি দায়মুক্ত না হওয়া যায় তবে কীভাবে পাওয়া যাবে! আপনারা বলেন, বুদ্ধি দেন। আমরা সেইভাবে দায়মুক্ত হওয়ার চেষ্টা করব। আমরা যেটা বুঝি, দায়মুক্ত হওয়ার পথ প্রতিটি বান্দা তার সাধ্যের ভেতরে রাসূলুল্লাহ সা.এর সুন্নাত মতো নিজের জীবনে দ্বীন কায়েম করবে, অন্যদেরকে
দ্বীনের কথা বলবে। তাহলেই দায় শেষ।
يا أيها الذين آمنوا عليكم أنفسگم لا يضركم من ضل إذا اهتديتم
হে ঈমানদারেরা, তোমাদের দায়িত্ব তোমাদের জীবন। তোমার বাইরে অন্য কেউ গোমরাহ হলে তোমার কোনো দায়ভার নেই। সূরা
মায়িদা, আয়াত-১০৫।
আমি
আমার সাধ্যের ভেতরে নিজের জীবনে, নিজের
পরিবারের ভেতর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করব। অন্যদেরকে দীনের পথে দাওয়াত
দেব, ডাকব। এরপরেও যদি মানুষ না শোনে এর জন্য আমার আর দায়ভার থাকে না।
উৎসঃ
জিজ্ঞাসা ও জবাব (১ম খন্ড ১৩২
পৃষ্টা)।
.
প্রশ্ন-৪১১:
জর্জ
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের খতীব শাইখ আনোয়ার আওলাকি রচিত ‘আল্লাহ আমাদের বিজয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন’ নামক বইতে তিনি জিহাদের পুনর্জাগরণকে মুসলিমদের
বিজয়ের পূর্বাভাস বলে উল্লেখ করেছেন। যার পক্ষে অনেক যুক্তি উপস্থিত করেছেন। প্রশ্ন হল, তাহলে
কেন আমরা জিহাদের এই পুনর্জাগরণকে খারাপ চোখে দেখি?
উত্তরঃ
শাইখ আনোয়ার আওলাকি উনি আলেম ছিলেন না। যতটুকু জানি, উনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। আমেরিকার ভালো খতীব ছিলেন। আমেরিকান সরকার অন্যায়ভাবে তাকে জেলে দেয়। জেলে থেকে তিনি
আল কায়দা হয়ে যান। এরপরে উনি ইয়ামানে চলে
আসেন। সেখানেই তিনি নিহত হন। আল্লাহ তার শাহাদাত নসিব করেন। তিনি ভালো মানুষ ছিলেন। কিন্তু জেলের আগের আওলাকি আর পরের আওলাকির ভেতর আকাশ পাতাল তফাত। আগে বলতেন অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা যাবে না। যেমন ফিলিস্তিনের ইহুদিদের কারণে আমেরিকার ইহুদিদের মারা যাবে
না। কিন্তু তিনি জেল থেকে বেরিয়ে বলছেন, আমেরিকান যেখানে আছে- ধরো, মারো।
তো জিহাদের পুনর্জাগরণকে তো কেউ খারাপ চোখে দেখছে। জিহাদ আল্লাহর একটা ফরয ইবাদত। কথা হল, জিহাদ
বলতে তুমি কী বোঝাচ্ছা? জিহাদটা কী জিনিস? আমি তো জিহাদ বুঝলাম না। জিহাদ অবশ্যই করতে হবে
কিন্তু আনোয়ার আওলাকি যে জিহাদ করেছেন বা যে জিহাদ করতে চাচ্ছেন, এ তো জিহাদ না। জিহাদের জন্য একটা রাষ্ট্র লাগবে। সেই রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপ্রধানের নেতৃত্বে জিহাদের ঘোষণা হবে। অন্যান্য রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ চলবে। এটা হল জিহাদ। রাষ্ট্র ছাড়া জিহাদ হয়
না। আফগানিস্তানের জিহাদকে
আমরা শরীআহ সম্মত জিহাদ মেনেছি। কিন্তু ফলাফল আমরা পাই
নি। শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে
দেহলভি রাহ.এর চিন্তা ও চেতনায় উদ্বুদ্ধ
হয়ে সাইয়িদ আহমাদ বেরেলভি রহ. জিহাদ করেছেন। শরীআতসম্মত জিহাদ। তিনি একটা রাষ্ট্র থেকে
বেরিয়ে গেছেন। যেটাকে বলে দারুল হারব। তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার রাষ্ট্রের আয়তন এক বিঘাত হোক। তারপর তিনি জিহাদের ঘোষণা দিয়েছেন। জিহাদ করেছেন। কিন্তু সেই জিহাদের বড়
রকমের সুফল আমরা পাই নি। তোমরা মনে কর জিহাদ হলে
সব হয়ে যাবে, জিহাদ হলেই সব মিটে যায়
না। তুমি কী জিহাদ করছ, কার বিরুদ্ধে করছ, কার
নেতৃত্বে করছ, এটা ঠিক করতে হবে। আমরা মনে করি, সব অন্যায় মিটিয়ে আমরা পৃথিবী ভালো করে ফেলব। আরে দুনিয়া আল্লাহ বানিয়েছেন
ন্যায় আর অন্যায় দিয়ে। এ জন্য শরীআতসম্মত জিহাদ
অবশ্যই থাকবে। সেই জিহাদে শাহাদাতের তামান্না
মুমিনের থাকবে। কিন্তু সমস্যা হল, জিহাদের সাথে বান্দার হক জড়িত। একটা মানুষের রক্তপাত করা দুনিয়ার সবচে’ নিকৃষ্ট হারাম। ষোলো আনা বৈধ হলেই তুমি জিহাদ করতে পার। আন্দাজে কারো ক্ষতি করা, সম্পদ নষ্ট করা ভয়ঙ্করতম হারাম। লক্ষ রাখতে হবে, একটা ইবাদতের নামে আমি যেন হারামে নিপতিত না হই। আমার জানা মতে বর্তমানে শরীআতসম্মত জিহাদ হচ্ছে ফিলিস্তিনে। অধিকাংশ ফকীহ আলেম সিরিয়ার জিহাদকে শরীআতসম্মত জিহাদ বলছেন। যেহেতু তারা সরকার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সরকারের নেতৃত্বে জিহাদ করছেন। সেখানে আরব দেশের অনেক মুজাহিদ যাচ্ছেন। তোমার শখ হলে তুমি চলে যেতে পার। এটা ইসলামের কোনো সমাধান না। প্রত্যেক মুসলিমের দায়িত্ব নিজ নিজ এলাকায় কাজ করা । তোমার দায়িত্ব হল, নিজে দ্বীন শেখো। মানুষকে দাওয়াত দিয়ে
আল্লাহর পথে নিয়ে এসো। আমাদের সবসময় একই আক্ষেপ- সমাজ ভালো না হলে কিছু ভালো হবে না। কদিন আগে এক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম। আমার অনেক সিনিয়র এক স্যার বলছেন, এই রোযায় তাকওয়া হবে না। যতক্ষণ না ইসলামি রাষ্ট্র-সমাজ হবে, ততক্ষণ রোযার মাধ্যমে তাকওয়া হবে না। অবশ্যই আমরা ইসলামি রাষ্ট্র সমাজ চাই। যে চায় না সে তো মুমিনই না। তাহলে বক্তব্য এই দাঁড়াল যে, ইসলামি রাষ্ট্র-সমাজ না হওয়া পর্যন্ত নামায রোযার দরকার
নেই। আমাদের সমাজের শতকরা পাঁচজন
মানুষ ব্যক্তি জীবনে পুরো মুসলিম। নামায পড়ি আমরা শতকরা
পনেরো বিশজন । এই পনেরো বিশজনের ভেতর
অনেকেই সুদ খায়, ঘুষ খায়,
পর্দা করে না। তাহলে ব্যক্তি জীবনে আমরা
ইসলাম প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এমন মুসলিম পাঁচজন। এখন এই পাঁচজনও নামায রোযা বাদ দিই। যেহেতু ইসলামি সমাজ-রাষ্ট্র নেই, তাহলে নামায রোযা করার দরকার কী! তো ইসলাম
কায়েম তো করা লাগবে, দাওয়াত তো দেব না, এখন মারধোর করে, অথবা অন্য কোনোভাবে কিংবা নিজেরাও শেষ
হয়ে যাই। ফলে এই পাঁচজনও শেষ হয়ে
যাই। তাহলে লাভটা হল কী! সবসময় মনে রাখতে হবে সমাজ একটা নৌকার মতো। আমি কয়দিন আছি, এক সময় চলে যাব, কিন্তু সমাজ চলতে থাকবে। আমার উপর ফরয হল আমার ব্যক্তি জীবনে দ্বীন প্রতিষ্ঠা করা। অন্যদেরকে দাওয়াত দেয়া। আল্লাহ যদি দাওয়াতে সফলতা দেন, জিহাদের পরিবেশ আসে, তাহলে
ইনশাআল্লাহ জিহাদ হবে। কত নবী চলে গেছেন, জিহাদ তো দূরের কথা, উম্মতই
পান নি। এ জন্য জিহাদ আল্লাহর দ্বীনের
বড় ইবাদত এতে কোনো সন্দেহ নেই । কিন্তু জিহাদের শর্ত পূরণ
হতে হবে।
বইঃ
জিজ্ঞাসা ও জবাব ( পৃষ্টা ১৪৮
ও ১৪৯)।
___________________________________
“মুরজিয়া” কারা?
আজকাল
ফেইসবুক ইন্টারনেটে “মাদখালী মুরজিয়া” বলে কাউকে গালি দেওয়া
একটা ফ্যাশানে পরিণত হয়েছে। কারো কথা পছন্দ না হলেই তাকে মাদখালী মুরজিয়া লেবেল
লাগানো হচ্ছে।
মাদখালী
মুরজিয়া - দুইটি
শব্দের সমন্বয়ে গঠিত। মাদখালী এবং মুরজিয়া। মাদখালী শব্দের অর্থ ইতিপূর্বে লিখেছি।
আজকে মুরজিয়া শব্দ দ্বারা আসলে কি বুঝায় সেটা জেনে নিই।
“মুরজিয়া” শব্দের অপব্যখ্যা
লিখেছেনঃ
শায়খ মুজাম্মেল হক্ক
আরবী
না জানা মুসলমানের যে কত সমস্যা, তা বলে
শেষ করা যাবেনা। ফেইসবুকে মুরজিয়া মুরজিয়া
করে তুফান উঠতে দেখি। কিন্তু ঐ শব্দের অর্থ কেউ
বুঝেন এমন কাউকে দেখিনা।
মুরজিয়া
আকীদার মূল বাক্য হলঃ
"
لا تضر مع الإيمان معصية ولا تنفع مع
الكفر طاعة
অর্থঃ
ঈমান থাকলে গুনাহর কাজ কোন ক্ষতি করেনা, যেমন কাফের হলে তার নেক আমলে লাভ হয়না।
এমন বিশ্বাস মানুষকে অবশ্যই পথ ভ্রষ্ট করবে। কেননা এতে শ্রোতার মন থেকে গুনাহর ভয় দূর হয়ে যাবে। কেননা সে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে ঈমানদার
হয়ে গেছে বলে বিশ্বাস করে। তাই তার গুনাহ নিয়ে আর
চিন্তা কি?
নাউজুবিল্লাহ!
অবশ্য মুরজিয়া মতবাদের অপর অংশ সত্য। মানে কাফের যতই ভাল কাজ করুক, সে আখেরাতে তার বিনিময়ে কিছুই পাবেনা। কারণ সাওয়াব বা আমলের প্রতিদান পেতে হলে ঈমান শর্ত। কিন্তু মুরজিয়ারা দুইটি বিপরীত বাক্যকে একসাথে যুক্তির মাধ্যমে
মিলিয়ে একাকার করে ফেলেছে। এজন্যেই তারা সরল পথ থেকে
বিভ্রান্ত হয়ে গেছে।
আজকাল
কোন কোন খতীবের জুমার খুতবায় এমন বয়ান শুনা যায়। মানুষকে দলে ভেরাতে তারা কি না করছে তা স্পষ্টই বুঝা যায়!
যেমন
এক খতীব বলেন, “ভাই! ভয় কিসের? ঈমান যখন এনেছেন,
আমল একদিন আসবেই। চারা যখন লাগিয়েছেন ফল
একদিন আসবেই!”
শুনে
ত মাথা ধরে গেল। মসজিদ থেকে বের হওয়ার ইচ্ছা
থাকলেও আর বের হওয়া হলনা। এটি কত বড় বিভ্রান্তিমূলক
কথা তা ব্যখ্যা করার অপেক্ষা রাখেনা। এ জাতীয় বক্তা ও খতীবগণ
মুরজিয়া। আজকাল অনেক সূফী মতালম্বী
দ্বাইয়ী ও কথিত ইসলামিক রাজনৈতিক দলের কর্মীরা এমন বয়ান প্রসব করে থাকেন।
___________________________________
মুসলিম শাসকের আনুগত্য করা
সুন্নাহ, “মাদখালি মতবাদ” নয় (পর্ব-১)
আব্দুল্লাহ
ইবনু ‘উমার রাদিয়াল্লাহু
আ’নহুমা হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“প্রত্যেক মুসলিমের (তার শাসনকর্তার নির্দেশ) শোনা এবং আনুগত্য করা অপরিহার্য; তার মনঃপূত হোক বা না
হোক, যতক্ষণ না তাকে গুনাহের দিকে নির্দেশ করে। কিন্তু যদি তাকে গুনাহের কাজের নির্দেশ দেয়া হয়, তখন
তা শোনা ও আনুগত্য করা কর্তব্য নয়।”
উৎসঃ
সহীহ বুখারীঃ ৭১৪৪, সহীহ মুসলিমঃ
১৮৩৯, আবু দাঊদঃ ২৬২৬, তিরমিযীঃ ১৭০৭,
আহমাদঃ ৬২৭৮।
সহীহ
মুসলিমের ব্যাখ্যাকারক ইমাম নববী রহি'মাহুল্লাহ বলেছেনঃ
"জুমহূর, আহলুস-সুন্নাহ,
ফক্বীহগণ, মুহাদ্দিসগণের মধ্য থেকে বলেছেনঃ
- পাপ,
- অত্যাচার,
- অধিকার আদায় না করা,
- বখাটে শাসক হওয়ার কারণে
কোন
নেতাকে বরখাস্ত বা পদস্খলন করবে না। এগুলোর কারণে তার আনুগত্য থেকে বের হওয়া জায়িয নেই বরং ওয়াজিব হচ্ছে শাসককে
উপদেশ দেওয়া এবং তাকে ভয় দেখানো।”
উৎসঃ
তুহফাতুল আহওয়াযীঃ ৫ম খন্ড, ১৭০৭।
___________________________________
মুসলিম শাসকের আনুগত্য করা
সুন্নাহ, “মাদখালি মতবাদ” নয় (পর্ব-২)
আধুনিক যুগে ইখোয়ানী, আল-কায়েদা বা খারেজী মানহাজের অনুসারী লোকেরা একটা হাদীস মানতে চায় না, কারণ এই হাদীসে জালেম কিন্তু মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা সরাসরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
=> তাকফিরিদের
প্রিয় আলেম আব্দুল আজিজ আত-তারিফী এই হাদীসটাকে জয়ীফ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
=> ইখোয়ানীদের
চোখের মনি আব্দুর রহমান আল-আরিফি হাদীসটির অর্থ বিকৃত করে হাদীসের অপব্যাখ্যা করেছেন।
নিম্নে
দীর্ঘ হাদীসটির সংক্ষিপ্ত অংশ তুলে ধরা হলো। এই একটা মাত্র হাদীস বুঝতে পারলে খারেজী
ফিতনাহ থেকে অনেকটাই বাচা যাবে ইন শা আল্লাহ।
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “.....আমার
পরে এমন সব নেতার আবির্ভাব হবে, যারা আমার হেদায়াতে হেদায়েতপ্রাপ্ত হবে না এবং আমার
সুন্নতও তারা অবলম্বন করবে না। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন সব ব্যক্তির আবির্ভাভ হবে, যাদের
আত্মা হবে মানব দেহে শয়তানের আত্মা।”
এই হাদীসের
বর্ণনাকারী সাহাবা হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন,
“আমি বললাম,
“তখন আমরা
কী করবো হে আল্লাহর রসূল! যদি আমরা সেই পরিস্থিতির সম্মুখীন হই?”
আল্লাহর
রসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তুমি আমীরের
কথা শুনবে এবং মানবে, যদিও তোমার পিঠে বেত্রাঘাত করা হয় বা তোমার ধন-সম্পদ কেড়ে নেওয়া
হয়, তবুও তুমি শুনবে এবং মানবে।”
উৎসঃ সহীহ
মুসলিমঃ ৪৬৭৯।
এই হাদীসের
উপর ভিত্তি করে, সৌদি আরবের বড় বড় সালাফী আলেমরা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, তুরস্কের মতো
দেশসমূহে যেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে শরীয়া কায়েম করা হয় না, কিন্তু সরকার প্রধান নিজেদেরকে
মুসলিম বলে দাবী করে, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে নিষেধ করেন। বরং সরকারকে সাধ্য অনুযায়ী
উপদেশ দিতে এবং নিজ দেশের সরকার ও জনগণের সংশোধনের জন্য চেষ্টা করতে উপদেশ দেয়। আল্লাহ
তাআ’লা আমাদেরকে
বুঝার তাওফিক্ব দান করুন, আমিন।
___________________________________
মুসলিম শাসকের আনুগত্য করা
সুন্নাহ, “মাদখালি মতবাদ” নয় (পর্ব-৩)
জালেম
শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না করার ব্যাপারে কি ইজমা রয়েছে?
(১)
ইমাম বুখারী রহি’মাহুল্লাহ তাঁর “আত-তারীখুল কাবীর” গ্রন্থে
তাবেয়ী আব্দুল কারীম বাক্কা রহি’মাহুল্লাহ থেকে উদ্ধৃত করেছেন, তিনি বলেছেন, “আমি দশজন সাহাবীর সঙ্গ পেয়েছি, যারা ফাসেক-জালেম
শাসক-প্রশাসকদের পিছনে সালাত আদায় করতেন।” আত-তারীখুল
কাবীরঃ ৬/৯০।
(২)
উমাইয়া শাসকদের মাঝে সবচেয়ে কুখ্যাত ছিলেন হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ। আব্দুল্লাহ ইবন উমার
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু ও অন্যান্য সাহাবী হাজ্জাজের ইমামতিতে আরাফার মাঠে
সালাত আদায় করতেন। সহীহ
বুখারীঃ ২/৫৯৭, কিতাবুল হাজ্জ, বাবুত
তাহজীরি বির-রাওয়াহ ইয়াওমা আরাফা।
(৩)
ইমাম তাহাবী রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ ৩২১ হিজরী) তাঁর বিখ্যাত “আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম’আতের আকীদা” নামক
কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
“আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি
না, যদিও তারা যুলুম-অত্যাচার
করে। আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিব না, এবং
তাদের আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যতার কোন আদেশ দেয়। আমরা তাদের
মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দুআ করব।” আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।
(৪)
ইমাম আল-বারবাহারি রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ ৩২৯ হিজরী) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সে
(ক)
খারেজীদের মধ্যে একজন
(খ)
সে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো
(গ)
সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের বিরোধীতা করলো
এবং
(ঘ)
তার মৃত্যু যেন ‘জাহেলী’ যুগের মৃত্যুর মতো।
শরাহুস
সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।
(৫)
সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যাকারক ইমাম নববী রহি’মাহুল্লাহ
(মৃত্যুঃ ৬৭৬ হিজরী) বলেছেন,
“তাদের (শাসকদের বিরুদ্ধে) ‘খুরুজ’ বা বিদ্রোহ করা, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করা...মুসলিমদের ইজমা (ঐকমত্য) অনুযায়ী তা হারাম, যদিও তারা পাপী কিংবা জালিম হোক না
কেনো। এই মর্মে যেই সমস্ত হাদীস আমি বর্ণনা করেছি তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং আহলে
সুন্নাহর লোকেরা এই হাদীসসমূহের আদেশ মেনে নিয়েছে। যেই সমস্ত ফিক্বহের কিতাবাদিতে
লিখে আছে যে, (যদি শাসক জালিম বা পাপী হয় তাহলে) তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে,
এই কথা ইজমার বিরোধীতা করে।”
ইমাম নববী রহি’মাহুল্লাহ
আরও বলেছেন,
“জুমহূর আহলুস সুন্নাহ, ফক্বীহ, মুহাদ্দিস
এবং কালাম শাস্ত্রবিদগণ বলেছেন, “পাপ, জুলুম, জনগণের অধিকার আদায় না করা অর্থাৎ বখাটে শাসক হওয়ার কারণে নেতাকে বরখাস্ত বা পদস্খলন করা যাবে না।
এগুলোর কারণে তার আনুগত্য থেকে বের হওয়া বা তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়।
বরং ওয়াজিব হচ্ছে শাসককে উপদেশ দেওয়া এবং তাকে (আল্লাহর) ভয় দেখানো।” শারহ সহীহ মুসলিমঃ ১২/২২৯।
“As for rebellion (khurooj) against them and fighting them,
then that is harām (prohibited) by ijmā’ (consensus) of the Muslims, even if the rulers are sinners
and oppressors. The ahādeeth I have already mentioned that carry that
meaning are apparent and manifest — and Ahlus-Sunnah have agreed (ijmā’) that a ruler is not to be removed due to his sin. As for
the position stated in the books of fiqh that some of our colleagues hold, that
he is to be removed; and what is cited from Mu’tazilah then the one who says it
is wrong and he is an opposer of the ijmā’. And the Scholars have stated: ‘The reason
why it is forbidden to remove the ruler and it is prohibited to rebel against
him is because of the fact that it leads to fitan (tribulations), the spilling
of blood, discord and corruption between the people. And the corruption that
arrises in removing him is greater than him remaining in place.” (See
Sharhun-Nawawi ‘ala Sahīh Muslim, 12/317)
lsewhere, An-Nawawi (may Allah’s mercy be upon him)
stated: “Rather it is obligatory
to admonish him and to instil in him the fear of Allah due to the ahādeeth that are reported regarding that. Al-Qādi stated: Abu Bakr Ibn Mujāhid claimed
ijmā’ in this matter. So some people tried to refute him using [as
a proof] the actions of Al-Husayn, Ibn Az-Zubayr (may
Allah be pleased with them both), and the
people of Madinah who opposed Banu Umayyah, and the large body among the Tābi’een who stood against Al-Hajjāj with Ibn Al-Ash’ath. Those who use these
actions as a proof state that the narration which states: ‘We do not contend with
those in authority’ refers to the just rulers
[only]. However [we say]: the evidence of the majority of those who rebelled
against Al-Hajjāj was not on the basis of his
sins but due to him altering the religion and making manifest unbelief. Al-Qādi said: ‘It is said: This differing was only in the beginning. Then the consensus (ijmā’) was established that forbade rebellion against the rulers.‘ And Allah knows best.” (Sharh An-Nawawi ‘alā Muslim, 12/318)
একটি
সন্দেহের জবাব?
তাকফিরী
খারেজী আক্বীদার অনুসারী লোকেরা জালেম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার নিষেধাজ্ঞা
সম্বলিত হাদীসসমূহ এবং আলেমদের ইজমা অস্বীকার করার জন্য হুসাইন বিন আলী,
আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমার উদাহরণ নিয়ে
আসে এবং দাবী করে, তাঁরা জালেম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন!
সুবহা’নাল্লাহ!
প্রথম কথা হচ্ছে, হুসাইন বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, তিনি তাঁকে জান্নাতের ফুল এবং জান্নাতের যুবকদের সর্দার বলেছেন। এছাড়া আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আ’নহু একজন
মর্যাদাপূর্ণ সাহাবা এবং মুসলিমদের মনোনীত খলিফা ছিলেন। তাঁদেরকে বিদ্রোহের জন্য
দোষারোপ করা মারাত্মক গুনাহ এবং সীমা লংঘন ছাড়া আর কিছুই না।
দ্বিতীয়তঃ
হুসাইন বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর প্রসংগে কথা হচ্ছে,
মুয়াবিয়া
রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর মৃত্যুর পর ইয়াজীদ খলিফা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
কুফার লোকেরা ইয়াজীদকে খলিফা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া থেকে বিরত থাকে। কুফার লোকেরা
চিঠি লিখে হুসাইন বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুকে আহবান জানায়,
আমাদের দেখার মতো কোন নেতা নেই। আপনি আমাদের কাছে কুফাতে আসুন, আমরা আপনাকে খলিফা
হিসেবে বাইয়াত দিবো।
হুসাইন
বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বিদ্রোহ করেননি, কেননা ইয়াজীদকে কখনোই খলিফা হিসেবে
বাইয়াত দেননি। বরং তিনি নিজে বাইয়াত গ্রহণের জন্য কুফার দিকে গমন করেছিলেন।
সে
সময় জীবিত এবং জ্ঞানী সাহাবা যারা হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আ’নহুকে
ভালোবাসতেন, যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার, আবু সাঈদ
আল-খুদরী, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ, আল-মিসওয়ার ইবনে মাখরামাহ এবং আব্দুল্লাহ ইবনে
জুবায়ের (আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন) হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আ’নহুকে কুফাতে
যেতে নিষেধ করেন।
কিন্তু
হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আ’নহু নিজ ইজতিহাদের উপর নির্ভর করে তাঁর পরিবারের অল্প
সংখ্যক লোক নিয়ে কুফার দিকে রওয়ানা করে। তিনি কারবালাতের পৌঁছানোর পর জানতে পারেন
কুফার লোকেরা উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের সেনাদের অস্ত্রের ভয়ে তাঁর বিরুদ্ধে চলে
গেছে। উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদের সেনাদের বাঁধার সম্মুখীন হলে তিনি তাদেরকে তিনটির
যে কোন একটি প্রস্তাব মেনে নিতে তাদেরকে আহবান জানানঃ
(১)
তিনি সম্মানের সহিত মক্কায় ফিরে যাবেন,
(২)
তিনি নিজে ইয়াজীদের কাছে গিয়ে তাঁর কাছে বাইয়াত দিবেন অথবা,
(৩)
তিনি খিলাফতের দাবী ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য কোন যুদ্ধের ময়দানে
চলে যাবেন।
উৎসঃ
আল-বিদায়াহ ওয়ান-নিহায়াহঃ ১১/৪৭৩-৫২০।
হুসাইন
বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু উবায়দুল্লাহর বাহিনীকে যে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন
একটু লক্ষ্য করলেই স্পষ্ট, তিনি যুদ্ধ নয় বরং ইয়াজীদের সাথে বিরোধ মীমাংসা করতে
রাজী ছিলেন। কিন্তু উবায়দুল্লাহর সৈন্যরা তাঁর প্রস্তাব মেনে না নিয়ে তাঁকে
আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করে। হুসাইন বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু তা
অস্বীকার করলে উবায়দুল্লাহর সৈন্যরা তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ইন্না লিল্লাহি
ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
সুতরাং
এই ঘটনা থেকে স্পষ্ট, হুসাইন বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
বিদ্রোহী নয়, বরং তিনি জুলুমের শিকার, তাঁকে উবায়দুল্লাহর সৈন্যরা অন্যায়ভাবে
হত্যা করেছিলো।
তৃতীয়তঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর প্রসংগে কথা
হচ্ছে,
আব্দুল্লাহ
ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আ’নহু নিজে খলিফা ছিলেন এবং মক্কার লোকেরা
তাঁকে বাইয়াত দিয়ে তাঁর আনুগত্য করেন।
ইমাম
ইবন হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ৮৫২ হিজরী) বলেছেন,
وقولهم كان يرى السيف يعني كان يرى الخروج
بالسيف على أئمة الجور وهذا مذهب للسلف قديم لكن استقر الامر على ترك ذلك
“অস্ত্রে বিশ্বাস করতেন, অর্থাৎ ফাসেক-জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে ‘খুরুজ’ (অস্ত্রধারণ)
বৈধ বলে বিশ্বাস করতেন। প্রাচীন সালাফে সালিহীনের মধ্যে এই মতটি বিদ্যমান ছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে এটি (অর্থাৎ অস্ত্রধারণ করা) বর্জন করার বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত
হয়েছে।” তাহযীবুত তাহযীবঃ ২/২৫০, ইবন হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ।
___________________________________
জাতির বিবেকের কাছে প্রশ্ন,
গুজরাটের
কসাই খ্যাত নরেন্দ্র সিং মোদীর বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে ঢাকা, চট্রগ্রাম এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়
আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে ইতিমধ্যে অন্তত ৫ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ইন্না লিল্লাহি
ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউ'ন।
এই ৫ জন
মুসলমানের জীবনের বিনিময়ে তারা কি মোদীর সফর বন্ধ করতে পেরেছে?
না, পারে
নাই।
এই ৫ জনের
জীবনের বিনিময়ে তারা কি ভারতের মজলুম মুসলমানদের কোন উপকার করতে পেরেছে?
না, পারে
নাই।
এই ৫ জনের
জীবনের বিনিময়ে তারা কি আওয়ামী লীগ জালেম সরকারের সিংহাসন পতন করে দেশে ইসলামী হুকুমত
আনতে পেরেছে?
না, পারে
নাই।
তাহলে এই
৫ জনের জীবনের বিনিময়ে মুসলমানেরা আসলে কি পেলো?
শুধু ছেলে
হারানো মায়ের কান্না, স্বামী হারানো বিধবা নারীর আর্তনাদ, এতিম শিশুদের অনিশ্চিত ভবিষ্যত।
এই ইস্যুকে
কেন্দ্র করে ৫ জনের রক্তকে পূজি করে কথিত ইসলামিক বক্তারা মাহফিলে স্টেইজ গরম করবে,
কিন্তু তারা মুসলমানদের কোন উপকার করতে পারেনি, পারবেও না।
আমি ২০১১
সাল থেকে দেশে এবং বিদেশের কথিত ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক কার্যক্রম দেখে আসছি। প্রতি
বছর এদের ইস্যু পরিবর্তন হয়, আর এদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী চেহারাগুলো পরিবর্তন
হয়। কিন্তু আন্দোলনের ফলাফল এবং পরিণতি একই থাকে। নিরীহ, নিরস্ত্র মুসলমানদের নিজ দেশের
পুলিশের হাতে পাখির মতো গুলি খেয়ে মৃত্যুর করুণ দৃশ্য। আর এদের রক্তকে পূজি করে একশ্রেণীর
বক্তারা বড় বড় হুংকার দিয়ে নিজেদের ওয়াজ ব্যবসার মার্কেট বৃদ্ধি করে। প্রতি বছর একই
চিত্র, এতো মার খেয়ে তবুও নিরীহ মুসলমানেরা আত্মঘাতী আন্দোলন ছাড়বে না। কারণ এর পেছনে
রয়েছে ধর্মের নামে একশ্রেণীর হুজুর-মাওলানাদের রাজনৈতিক ব্যবসা।
যাই হোক,
এক ভাই মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে আমাদের কি করণীয় জানতে চেয়েছেন?
বর্তমান
যুগে মুসলমানদের দুর্দশা ও লাঞ্চনা থেকে মুক্তির জন্য আমাদের করণীয় হচ্ছে, আল্লাহর
রাস্তায় জিহাদ করা। বর্তমানে আমাদের মুসলমানদের অস্ত্র দিয়ে জিহাদ করার সামর্থ নেই,
সেইজন্য আমাদের জন্য ফরয হচ্ছে ইলম এবং জবান দিয়ে নিজের নাফস, শয়তান এবং মুসলমানদের
শত্রুদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক জিহাদ করা। আর তা হচ্ছে,
(১) নিজে
ক্বুরআন, হাদীস এবং সালফে সালেহীনদের মানহাজ অনুযায়ী সঠিক দ্বীন শিক্ষা করা,
(২) নিজের
কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদ করা এবং অর্জিত ইলম অনুযায়ী আমল করতে নিজেকে বাধ্য করা,
(৩) মানুষকে
দ্বীন শিক্ষা দেওয়া, অর্থাৎ দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করা,
(৪) যাবতীয়
অশ্লীলতা, হারাম এবং পাপাচারের বিরুদ্ধে লোকদেরকে সতর্ক করা,
(৫) ফিতনাহ
থেকে বেচে থাকা এবং লোকদেরকে সাবধান করা,
(৬) ঘরে
অবস্থান করা এবং নিজের জবানকে সংযত রাখা।
(৭) আলেমের
লেবাসধারী অজ্ঞ, মূর্খ, বিদআ’তী এবং পথভ্রষ্ট লোকদের মুখোশ উন্মোচন করা এবং তাদের বিরুদ্ধে
মুসলমানদেরকে সতর্ক করা।
এই কাজগুলো
না করে কথিত আল্লামাহ মামুনুল হক্ক সাহেবের মতো ভক্ত-শ্রোতাদের সামনে "রক্তের
গংগা বইয়ে দেওয়ার" হুংকার দিয়ে, কিংবা কথিত মাদানী রফিকুল ইসলাম নেত্রকোনা সাহেবের
মতো "রাস্তায় নেমে জীবন দিয়ে দিবো" বলে স্লোগান দিলে শুধু পুলিশের মাইর খেতে
হবে, আর মুসলমানদের রক্ত যাবে। এতে মুসলমানদের লাঞ্চনাই শুধু বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু কাফিরদের
কোন ক্ষতি করতে পারবে না। দুর্বল মুসলমানদেরকে এই ধরণের ধ্বংসাত্মক পথে নামিয়ে যারা
ফিতনাহকে উস্কে দেয়, এরা আলেম নয়, এরা জাহিল। এমন লোকদের বিরুদ্ধে লোকদেরকে সাবধান
করা ওয়াজিব।
২০১৯ সালে
ভোলাতে নাস্তিকের বিরুদ্ধে আন্দোলন এবং তার ফলাফল নিয়ে আমাদের পর্যালোচনাঃ
“ইসলাম নয়, ইসলামের নামে রাজনীতি” লিংক -
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=3218463574853034&id=125167817515974
___________________________________
পথভ্রষ্ট জিহাদীদের থেকে সাবধান (পর্ব-১)
উচ্চমূল্যের
“হাদীয়া”র বিনিময়ে
ওয়াজ মাহফিলে কিংবা রাস্তা-ঘাটে রক্তের গংগা বইয়ে দিবো, জীবন দিয়ে দিবো বলে চিল্লাফাল্লা
করে শুধু পাখির মতো পুলিশের গুলি খেয়ে মরতে হবে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মুসলমানদের কোন
উপকার করা যাবে না।
(১) জুনায়েদ
বাবুনগরী
(২) মামুনুল
হক্ক
(৩) চরমোনাই
পীর রেজাউল করিম
(৪) হারুন
ইযহার
(৫) রফিকুল
ইসলাম নন-মাদানী
(৬) মাহমুদুল
হাসান গুনবী
এমন ভ্রান্ত
মানহাজের বক্তাদের ঘরের বড় বড় হুজুর মাওলানারাঃ
(১) প্রকাশ্যে
শিরকি কুফুরী কথা-বার্তা বলে জনগণকে গোমরা বানায়,
(২) ক্বুরআন,
হাদীস নিয়ে মনগড়া কথা বলে,
(৩) ৫০
হাজার, এক লাখের বিনিময়ে কনট্রাক্ট করে ওয়াজ করে আজগুবী এবং বানোয়াট কিচ্ছা কাহিনী
দিয়ে,
(৪) আরেকজনের
বউ নিয়ে পালিয়ে যায়,
(৫) মাদ্রাসার
ছাত্রদেরকে রাস্তায় নামিয়ে ভিক্ষা করায়। আর নিজেরা দুনিয়ার ভোগ-বিলাস এনজয় করে।
আর দেশের
জনগণের কথা কি বলবো?
(১) ৯০%
মানুষ নামায-ই পড়ে না,
(২) ৯৫%
মানুষ শিরিক করে,
(৩) অধিকাংশ
মানুষ হালাল-হারাম বাছ-বিছার করে না,
(৪) সুদ,
ঘুষ, অশ্লীলতা, ব্যভিচার বৃষ্টির পানির মতো লোকদের মাঝে প্রবেশ করেছে,
(৫) অধিকাংশ
মানুষ ক্বুরআন পড়ে না
এমন একটা
দেশের ক্ষমতায় আওয়ামী লীগ আসবে, নাকি আবু বকর উমর রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমার
মতো খুলাফায়ে রাশেদীন ক্ষমতায় আসবে?
সুতরাং,
এই সমস্ত কথিত জিহাদী বক্তাদের লাফালাফি করে কোন ফায়দা নাই।
=> এক
আওয়ামী লীগ সরকার গেলে আরেক আওয়ামী লীগ আসবে, যতদিন না দেশের লোকেরা নিজেরা সংশোধন
হয়ে আল্লাহর রাস্তায় ফিরে আসবে।
দেশের জনগণ
খারাপ হয়ে গেলে তাদের উপর আযাব হিসেবে সবচেয়ে খারাপ লোকদেরকে তাদের শাসক হিসেবে চাপিয়ে
দেওয়া হয়।
মহান আল্লাহর
বাণীঃ
وَكَذَٰلِكَ نُوَلِّي بَعۡضَ ٱلظَّٰلِمِينَ بَعۡضَۢا بِمَا
كَانُواْ يَكۡسِبُونَ ١٢٩
“আর এভাবেই আমি যালিমদের কতককে কতকের বন্ধু বানিয়ে
দেই, তারা যা অর্জন করত তার কারণে।” সুরা আনআ’মঃ ১২৯।
আয়াতের
তাফসীরঃ
(১) সুলায়মান
ইবনে মিহরান আল-আ’মাশ রহি’মাহুল্লাহ একজন প্রখ্যাত তাবেয়ী বিদ্বান ছিলেন,
যিনি হাদীসের রাবী এবং আলেম হিসেবে প্রসিদ্ধ। তাঁর জন্ম হয়েছিলো কুফাতে ৬১ হিজরী সনে,
আর মৃত্যু হয়েছিলো ১৪৭ হিজরী সনে। সাহাবারা সুরা আনআ’মের ১২৯-নং
হাদীসের অর্থ বা ‘তাফসীর’ কি বুঝেছিলেন, তা সাহাবাদের থেকে আল-আ’মাশ রহি’মাহুল্লাহ
বর্ণনা করেছেন।
মানসুর
ইবনে আবি আল-আসওয়াদ রহি’মাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন। আমি আল-আ’মাশ রহি’মাহুল্লাহকে
আল্লাহ তাআ’লা এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
“আর এভাবেই আমি যালিমদের কতককে কতকের বন্ধু বানিয়ে
দেই, তারা যা অর্জন করত তার কারণে।” সুরা আনআ’মঃ ১২৯।
আপনি এই
আয়াত সম্পর্কে (সাহাবাদের) কাছ থেকে কি শুনেছেন?”
উত্তরে
আল-আ’মাশ রহি’মাহুল্লাহ
বললেন, “আমি তাঁদেরকে
(অর্থাৎ সাহাবাদেরকে) বলতে শুনেছি, “যদি জনগণ খারাপ হয়ে যায়, তাহলে তাদের মধ্যে সবচাইতে
খারাপ লোকদেরকে তাদের উপর শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হবে।” হিলইয়াতুল
আওলিয়াঃ ৫/৫০।
(২) ইমাম
ইবনে কাসীর রহি’মাহুল্লাহ (জন্ম ৭০২ হিজরী, মৃত্যু ৭৭৪ হিজরী), তিনি বলেছেন,
“এই আয়াতে
কারীমার অর্থ হচ্ছে, যেইভাবে আমি ঐ ক্ষতিগ্রস্ত মানবদের বন্ধু তাদেরকে পথভ্রষ্টকারী
জ্বিন ও শয়তানদেরকে বানিয়েছি, তেমনিভাবে যালিমদের মধ্য হতে এককে অপরের বন্ধু বানিয়ে
দেই এবং একে অপরের দ্বারা ধ্বংস হয়ে যায়। আর আমি তাদের অত্যাচার, দুষ্টামি এবং বিদ্রোহের
প্রতিফল একে অপরের দ্বারা প্রদান করিয়ে থাকি।”
(৩) শায়খ
সালাহউদ্দিন ইউসুফ রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৪৪২ হিজরী), তিনি এই আয়াতের তাফসীরে লিখেছেন,
“(আয়াতে
উল্লেখিত) বন্ধু শব্দের একাধিক অর্থ বর্ণিত হয়েছে। একটি অর্থ হচ্ছে, যেইভাবে আমি মানুষ
ও জ্বিনদেরকে একে অপরের সঙ্গী ও সাহায্যকারী বানিয়েছি, (যেমন, পূর্বের আয়াতে উল্লিখিত
হয়েছে), অনুরূপ আচরণ আমি অত্যাচারীদের সাথেও করি। একজন যালেমকে অপর যালেমের উপর (প্রবল
বা শক্তিশালী করে) চাপিয়ে দিই। আর এইভাবে একজন অত্যাচারী অপর অত্যাচারীকে ধ্বংস করে
এবং এক যালিমের প্রতিশোধ অপর যালিম দ্বারা নিয়ে নিই। এই আয়াতের আরেকটি অর্থ হচ্ছে,
জাহান্নামে তাদেরকে একে অপরের কাছাকাছি রাখবো।” তাফসীর আহসানুল বায়ান।
(৪) শায়খ
আবু বকর জাকারিয়া হা’ফিজাহুল্লাহ এই আয়াত ব্যাখ্যা করে লিখেছেন,
“শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া, বন্ধু বানিয়ে দেওয়া।
যারা তাদেরকে তাদের কর্মের কারণে পথভ্রষ্টতার দিকে চালিত করবে। আব্দুল্লাহ ইবন যুবায়ের
রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা, ইবন যায়েদ, মালেক ইবনে দীনার রহিমাহুমুল্লাহ প্রমূখ
মুফাসসিরীন থেকে এই অর্থের দিক দিয়ে আয়াতের তাফসীর এরূপ বর্ণিত আছে যে, “আল্লাহ
তাআ’লা একজন
যালিমকে অপর যালিম জনগোষ্ঠীর উপর শাসক হিসেবে চাপিয়ে দেন, এবং এইভাবে একদল লোককে অপর
লোকের হাতে শাস্তি দেন। তাদের অপরাধের কারণে আল্লাহ তাআ’লা তাদের
উপর এমন কাউকে বসাবেন, এমন কাউকে সাথে জুড়ে দেবেন যারা তাদেরকে হক পথে চলা থেকে দূরে
রাখবে, হক পথের প্রতি ঘৃণা ছড়াবে। খারাপ কাজের প্রতি উৎসাহ দেবে। এভাবেই মানুষের মধ্যে
যখন ফাসাদ ও যুলুমের আধিক্য হয়, আর আল্লাহর ফরয আদায়ে মানুষের মধ্যে গাফিলতি সৃষ্টি
হয়, তখনই আল্লাহ্ তাআ’লা মানুষের উপর তাদের পাপ এবং সীমা লংঘনের শাস্তিস্বরূপ এমন
কাউকে বসিয়ে দেন, যারা তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করবে।”
বিস্তারিত
দেখুন তাফসীর ইমাম বাগাভী রহি’মাহুল্লাহ, তাফসীর ইবনে কাসীর রহি’মাহুল্লাহ,
তাফসীর সা’দী, শায়খ আব্দুর রহ’মান ইবনে নাসির আস-সা’দী রহি’মাহুল্লাহ।
সব দোষ
শুধু রাজা-বাদশাহদের...গালি দেওয়া ছাড়া আমাদের কি করার আছে?
(১) বর্তমান
যুগের অনেক আবেগী মুসলমানেরা মনে করে, অমুক বাদশাহ সমস্ত নষ্টের মূল। অমুক বাদশাহ ঠিক
নেই বলে আজকে ফিলিস্থিনে মুসলমানেরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, অমুক বাদশাহর কারণেই ইরাক,
আফগানিস্থান ধ্বংস হলো, অমুকের কারণে মায়ানমারের মুসলমানেরা দুঃখে আছে।
এইভাবে
ইলম থেকে বঞ্চিত একশ্রেণীর মুসলমানেরা বাস্তবতা ভুলে, মুসলমানদের পাপের সমুদ্রের ব্যপারে
গাফিল থেকে উম্মতের সমস্ত সমস্যার জন্য রাজা-বাদশাহদেরকে দোষারোপ করে। এটা ঠিক যে,
বর্তমান যুগের মুসলিম রাজা-বাদশাহদের দোষের অভাব নেই, তবে তার মানে এই না যে, সব দোষ
শুধুমাত্র রাজা-বাদশাহদের।
বরং সামগ্রিকভাবেই
বর্তমান যুগের মুসলমানদের মাঝে দ্বীনের অনুসরণ এবং আল্লাহর হুকুম বাস্তবায়নে মারাত্মক
ত্রুটি করছে। দ্বীনের ব্যপারে উদাসীনতার কারণেই মুসলমানেরা আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত।
একারণেই কাফেররা মুসলমানদের উপরে চড়াও হওয়ার সুযোগ পাচ্ছে।
(২) ইমাম
ইবনে আবি আল-ইয (মৃত্যু ৭৯২ হিজরী) রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “আমাদের
অপকর্ম ব্যতীত অন্য কোন কারণে আল্লাহ তাআ'লা আমাদের উপর খারাপ শাসক চাপিয়ে দেন না।
জেনে রাখো! প্রত্যেক কাজের (ভালো কিংবা মন্দ) প্রতিদান রয়েছে।” শারহে
আক্বীদাহ আত-ত্বহাভীয়াঃ ২/৩৪৫।
(৩) শায়খুল
ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহি’মাহুল্লাহ বলেন, “যদি কোন সময়ে মুসলিমরা দুর্বল হয়ে পড়ে এবং তাদের
শত্রুরা যদি তাদের উপর কর্তৃত্ব করা শুরু করে, তাহলে এটা শুধুমাত্র মুসলিমদের পাপের
কারণেই হয়ে থাকে। এই পাপ মুসলিমদের ফরয-ওয়াজিব ইবাদতের ব্যপারে উদাসীনতার মাধ্যমে হয়ে
থাকে, হোক সেটা বাহ্যিক ইবাদতের ব্যপারে (যেমন সালাত, সাওম) কিংবা আভ্যন্তরীণ ইবাদতের
ব্যপারে (যেমন ঈমান, তাক্বওয়া, তাওয়াক্কুলের ব্যাপারে) ঘাটতি থাকার কারণে হতে পারে।” মাজমু
ফাতওয়াঃ ১১/৬৪৫।
(৪) সুতরাং,
শুধুমাত্র রাজা-বাদশাহদের ঘাড়ে দোষ না চাপিয়ে বর্তমান যুগের মুসলমানদের অবস্থার দিকে
লক্ষ্য করুন এবং তাদের সংশোধনের চেষ্টা করুন। মনে রাখবেন, একটা দেশের জনগণ যেমন, তাদের
শাসক সেইরকম-ই হয়ে থাকে। দেশের জনগণ যদি ভালো না হয়, দেশের শাসকেরাও ভালো হবে না। সাহাবীদের
থেকে বর্ণিত একটা শিক্ষণীয় ঘটনা শুনুনঃ
একবার এক
লোক আলী রাদিয়াহুল্লাহ আ’নহুর নিকট এসে অভিযোগ করে বললো, “আবু বকর
ও উমরের সময় কত ভালো ছিলো! কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ ও ফেতনা-ফাসাদ ছিলো না। কিন্তু আপনার সময়
লোকেরা আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একত্রিত হয়েছে কেনো?”
আলী রাদিয়াহুল্লাহ
আ’নহু উত্তরে
বললেন, “আবু বকর
ও উমরের সময় দেশে শান্তি ছিলো কারণ, তারা যখন দেশ পরিচালনা করতো তখন লোকেরা ছিলো আমাদের
মতো (অর্থাৎ সাহাবীরা)। আর এখন যুদ্ধ হচ্ছে কারণ, আমি দেশ পরিচালনা করছি যখন মানুষ
হচ্ছে তোমাদের মতো (ভালো ও মন্দ মিশ্রিত করে ফেলা) লোকেরা।”
(৫) ইমাম
ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “(মুসলমানদের উপর চেপে বসা) অত্যাচারী জালেম শাসক
আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব, আর আল্লাহর আযাব অস্ত্র (কিংবা শক্তি প্রয়োগ) দ্বারা সরানো
যায় না। বরং আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে মুসলমানদের নিজেদের অবস্থার সংশোধন
করা এবং সকলে মিলে ইস্তিগফার করা।
তাবেয়ী
বিদ্বান হাসান আল-বসরী রহি’মাহুল্লাহ প্রায় দেড় লক্ষ মুসলমান হত্যাকারী, যাদের মধ্যে
অনেক সাহাবী এবং নেককার তাবেয়ী বিদ্বান ছিলেন, সেই অত্যাচারী খুনী হাজ্জাজ বিন ইউসুফ
সম্পর্কে বলেছিলেন, “নিশ্চয়ই হাজ্জাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে আযাব। সুতরাং তোমরা আল্লাহর
আযাবকে শক্তি দ্বারা সরানোর (নিষ্ফল) চেষ্টা করোনা। বরং (আল্লাহর আযাব থেকে মুক্তির
জন্য) তোমাদের (আল্লাহর সামনে) বিনীত ও অনুগত হওয়া উচিত।” মিনহাজ
আস-সুন্নাহঃ ৪/৫২৯।
(৬) শায়খ
মুজাম্মেল হক্ক বলেন, “আমরা যদি নিজেরা আমাদের অবস্থার পরিবর্তন না করি, তাহলে আল্লাহ-ও
আমাদের অবস্থার পরিবর্তন করে দেবেন না।”
=> মহান
আল্লাহ বলেন, “আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত
না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” সুরা রা’দঃ ১১।
রাষ্ট্রে
দ্বীন কায়েমের জন্য আমাদের কি করণীয়?
উত্তর দিয়েছেন
প্রয়াত শায়খ ড. আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রহি’মাহুল্লাহ -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/videos/719007905584476/
___________________________________
ইসলাম কি পুরুষদের ঘরে
বসে থাকার কথা বলছে?
যখন মুসলিমদের জিহাদ করার ক্ষমতা থাকবে না, যখন মুসলিমদের ইমাম বা
নেতা থাকবে না, মুসলিমরা খন্ড-বিখন্ড হয়ে সমাজে ফিতনা এবং বিশৃংখলা বৃদ্ধি পাবে
তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
অস্পষ্ট এবং উদ্দেশ্য বিহীন যুদ্ধ থেকে বিরত থেকে বিরত থাকার এবং নিজ ঘরে অবস্থান
করার আদেশ দিয়েছেন।
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আ’নহু সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের চারপাশে বসা ছিলাম। তখন তিনি ফিতনা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, “তোমরা যখন দেখবে,
(১) মানুষের ওয়াদা নষ্ট হয়ে গেছে,
(২) তাদের আমানতদারী কমে গেছে এবং
(৩) তারা এরূপ হয়ে গেছে- এ বলে তিনি তাঁর হাতের আঙ্গুলসমূহ পরস্পরের
মধ্যে মিলালেন।”
বর্ণনাকারী সাহাবী বলেন, একথা শুনে আমি দাঁড়িয়ে তাঁকে বললাম, আল্লাহ
আমাকে আপনার জন্যে উৎসর্গিত করুন! আমি তখন কি করবো? তিনি বললেন,
(১) তুমি অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তোমার ঘরে অবস্থান করো,
(২) তোমার জিহবা সংযত রাখো;
(৩) যা জানা-শোনা আছে তাই গ্রহণ করো, এবং অজানাকে পরিত্যাগ করো।
(৪) আর তোমার নিজের ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক হও এবং,
(৫) সাধারণের বিষয়াদি সম্পর্কে বিরত থাকো।”
উৎসঃ নাসায়ী, আহমাদ, আবু দাউদঃ ৪৩৪৩। শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটিকে “হাসান সহীহ” বলেছেন।
___________________________________
সৌদি সালাফী আলেমদের নামে
মিথ্যা অপবাদের জবাব (পর্ব-১)
بـسـم الله والحـمـد لله
والـصلاة والـسـلام عــلى رسـول الله، وبـعـد
(এক)
আল-কায়েদাহ,
আইসিস, বোকো হারামের মতো তাকফিরী, খারেজী মানহাজের অনুসারী লোকেরা সৌদি আরবের
সালাফী আলেমদের বিরুদ্ধে প্রায়শই যে মিথ্যা অপবাদ দেয় তা হচ্ছেঃ
(১)
সৌদি আরবের শায়খরা “দরবারী আলেম”, তারা সরকারকে খুশি করার জন্য ইসলাম
বিরোধী ফতোয়া দেয়।
(২)
শায়খ বিন বাজ, শায়খ ইবনে উসায়মিনের মতো সৌদি আলেমরা হচ্ছে “মহিলাদের
হায়েজ-নিফাসের আলেম”। জিহাদ, রাজনীতি বা সমসাময়িক কোন বিষয়ে তারা একেবারে জাহেল
কিংবা পথভ্রষ্ট।
সৌদি
আরবের সালাফী আলেমদের বিরুদ্ধে বাংলদেশের এমনই একজন জংগী লেখকের মিথ্যা অপবাদের
বিবরণ এবং তার জবাব দেওয়া হলো ইন শা আল্লাহুল আ’যীয।
(দুই)
সম্প্রতি
আসিফ আদনান নামক একজন পুরনো জংগীর একটা লেখা আমার হাতে এসে পৌঁছেছে, যেখানে সৌদি
আরবের সালাফী আলেমদের সম্পর্কে সে লিখেছেঃ
(১) “(শায়খ ইবনে বাজ এবং শায়খ ইবনে উসায়মিন -
এই দুইজন) সময়ে সময়ে হয়তো শাসকের মনমতো ফাতাওয়া দিয়েছেন।”
(২)
“এক অর্থে
শায়খ বিন বায এবং শায়খ ইবনু উসাইমিনদেরকে দরবারী বলা যেতে পারে।”
আসিফ
আদনান তার লেখাতে “দরবারী আলেম” বলতে যেই সংজ্ঞা দিয়েছে তা হচ্ছেঃ
(ক)
যারা শাসকগোষ্ঠীর কুফর, ফিসক এবং যুলুমের সাফাই গায়।
(খ)
শরীয়ার অপব্যখ্যা করে শাসকগোষ্ঠীর এসব কাজকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করে।
(গ)
শাসকের যেকোন ধরণের বিরোধিতাকে অবৈধ ও অন্যায় সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে।”
(৩)
এছাড়া আসিফ আদনান তার লেখাতে মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু শিক্ষককে “গোয়েন্দা
সংস্থার এজেন্ট” হিসেবে আখ্যা দিয়েছে।
আসিফ
আদনান সৌদি আরবে “দরবারী” আলেমদের উত্থান বা শুরু হিসেবে
নব্বইয়ের দশকে উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটকে চিহ্নিত করেছে। উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়
সৌদি আরব সরকার সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে আমেরিকার সাহায্য নেয়। সৌদি সরকারের এই
সিদ্ধান্তে যেইসব আলেম সমর্থন জানিয়েছিলেন, আসিফ আদনানের মতে তারা দরবারী আলেমের
ভূমিকা পালন করেছেন। আর যেই সমস্ত শায়খরা সৌদি সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধীতা
করেছেন, তারাই হচ্ছে প্রকৃত সালাফী আলেম।
আসিফ
আদনান “দরবারী” আলেমদের নেতা হিসেবে শায়খ মুহাম্মাদ
আমান আল-জামী রহি’মাহুল্লাহ এবং শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী হা’ফিজাহুল্লাহকে
চিহ্নিত করেছে। এমনকি যেই সমস্ত মুসলমানেরা সৌদি আরবের আমেরিকার সাহায্য নেওয়ার
সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়েছে তাদেরকে সে “জামী” এবং “মাদখালী” উপাধিতে
ভূষিত করেছে।
(তিন)
কে
এই আসিফ আদনান?
আসিফ
আদনান ২০১৪ সালের ২৪-শে সেপ্টেম্বর ডিবি পুলিশের হাতে ঢাকায় গ্রেফতার হয়েছিলো। তার
বিরুদ্ধে কুখ্যাত জংগী সংগঠন আল-কায়েদা এবং নুসরার সাথে সম্পৃক্ততা, তার
অনুসারীদেরকে সিরিয়াতে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করা এবং নিজেও মায়ানমার কিংবা
সিরিয়াতে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হয়েছিলো।
যদিও
জংগী সংগঠনের সাথে প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার মতো গুরুতর এবং স্পর্শকাতর মামলায় আসিফ
আদনানকে গ্রেফতার করা হয়েছিলো, কিন্তু তার বাবা হচ্ছে হাইকোর্টের প্রাক্তন
বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন। প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে জনাব আব্দুস সালাম মামুন
প্রচুর অর্থ খরচ করে আসিফ আদনানকে হাইকোর্ট থেকে ২০১৪ সালের ২৩-শে ডিসেম্বর জামিনে
বের করে নিয়ে আসেন।
জনাব
আব্দুস সালাম মামুন আসিফ আদনানের কোন ধরণের জংগী সম্পৃক্ততার কথা অস্বীকার করে
দাবী করেন, “তার ছেলে সম্পূর্ণ নির্দোষ। তার ছেলে শুধুমাত্র পড়াশোনা এবং
গান গাওয়ার সাথে জড়িত।”
এইভাবে
মিথ্যা হলফনামা দিয়ে হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আব্দুস সালাম মামুন ক্ষমতার জোর
এবং প্রচুর পরিমাণ অর্থ খরচ করে আসিফ আদনানের মতো প্রকাশ্য জংগীকে জেলখানা থেকে
মুক্ত করে নিয়ে আসেন। জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে আসিফ আদনান ফেইসবুকে কৌশলে তার
লেখালিখি দ্বারা তার ফলোয়ারদেরকে জংগী মতবাদে দীক্ষা দিচ্ছে। অনেক অজ্ঞ এবং সরলমনা
মুসলমানেরা আসিফ আদনানের লেখার ধোঁকায় পড়ে তাকফিরী, খারেজী মনমানসিকতা গ্রহণ করছে।
আল্লাহু আমাদেরকে হেফাযত করুন।
(চার)
১৯৯০
সালে উপসাগরীয় যুদ্ধের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
১৭-ই
জুলাইঃ ইরাকের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন
কোনরকম যুদ্ধের পরিস্থিতি ছাড়াই আকস্মিক তেলসমৃদ্ধ মুসলিম দেশ কুয়েত দখল করার হুমকি
দেয়।
৩০-শে জুলাইঃ সাদ্দাম হোসেন সৌদি
আরব, মিশর, কুয়েতের প্রতিনিধিদের কাছে কুয়েত দখল না করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
২-রা আগস্টঃ সাদ্দাম হোসেন তার পূর্ব
প্রতিশ্রুতি ভংগ করে কুয়েত দখল করে নেয়।
সাদ্দাম
হোসেনের দখলদারিত্ব ও আগ্রাসী মনোভাব সৌদি আরবসহ
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য সুন্নী দেশগুলোর নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। সে
সময়ের সৌদি বাদশাহ ফাহাদ বিন আব্দুল আজিজ রহি’মাহুল্লাহ সাদ্দাম হোসেনকে প্রতিহত করা এবং
কুয়েতের স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে
একটি
চুক্তির মাধ্যমে আমেরিকার সাহায্য গ্রহণ
করার সিদ্ধান্ত নেয়। সে মোতাবেক বিপুল সংখ্যক আমেরিকান সৈন্য সৌদি আরবে প্রবেশ করে
ঘাঁটি নির্মাণ করে এবং সাদ্দাম হোসেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে।
২৮-শে
ফেব্রুয়ারী, ১৯৯১ - দীর্ঘ প্রায় সাত মাস আকাশপথ, সমুদ্র এবং স্থল যুদ্ধে অবতীর্ণ
হয়ে অনেক ক্ষয়-ক্ষতি এবং রক্তপাতের পর অবশেষে সাদ্দাম হোসেন পরাজয় স্বীকার করে
সন্ধি চুক্তিতে করতে রাজী হয়।
উপসাগরীয়
যুদ্ধের সম্পূর্ণ ক্রনোলজি জানার জন্য আপনারা এই লিংক দেখতে পারেন -
https://www.airforcemag.com/article/0101chrono/
(পাঁচ)
উপসাগরীয় যুদ্ধে সৌদি আরবের আমেরিকার
সাহায্য নেওয়া জায়েজ নাকি নাজায়েজ - এ সম্পর্কে মুসলিম আলেমদের মাঝে ইখতিলাফ বা মতবিরোধ
হয়।
তৎকালীন সময়ে সৌদি আরবের সবচেয়ে
বড় আলেমদের মধ্যে শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ,
শায়খ মুহাম্মদ আমান আল-জামী রহি’মাহুল্লাহ,
শায়খ আব্দুল্লাহ আল-গুনায়মান প্রমুখ শায়খ “প্রয়োজনে
কাফেরদের সাহায্য নেওয়া জায়েজ” বলে ফতোয়া
দেন। পক্ষান্তরে প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামাহ নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ “কাফেরদের
সাহায্য নেওয়া মুসলিমদের জন্য নাজায়েজ এবং ক্ষতিকর” বলে ফতোয়া
দেন।
এ
ব্যাপারে শায়খ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহর দুইটি ফতোয়ার অনুবাদ
https://alsalafiyyah.github.io/seeking-help-from-non-muslims
শায়খ
আলবানী রহি’মাহুল্লাহর ফতোয়ার লিংক -
https://www.youtube.com/watch?v=DA8P94sFXyE
(ছয়)
এই
ঘটনাকে কেন্দ্র করে উগ্রপন্থী কিছু
বক্তা ও লেখক এবং তাদের
অন্ধভক্তরা
বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমগুলোতে সৌদি
সরকার এবং শায়খ আব্দুল আজিজ ইবনে বাজ, শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন, শায়খ মুহাম্মদ আমান আল-জামী, শায়খ আব্দুল্লাহ আল-গুনায়মানসহ অন্যান্য সালাফী আলেমদেরকে
গালিগালাজ এবং মিথ্যা অপবাদ প্রচার করা আরম্ভ করে। এমনকি তাদের ছড়ানো তাকফিরী বিষে আক্রান্ত হয়ে বাংলা ও ইংরেজী ভাষাভাষী বক্তা
ও লেখকেরা আহলে
সুন্নাহর সাম্প্রতিক কালের এই ইমামদেরকে “সৌদি বাদশাহর দালাল”, “তাগুতের পা চাটা গোলামের” মতো জঘন্য ভাষায় গালি দিতে দ্বিধা করছে না।
তাদের
অভিযোগ হচ্ছে, সৌদি আরবের সালাফী আলেমরা আলে-সৌদের রাজত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য,
তাদেরকে খুশি রাখার জন্য ইসলামের বিপরীত ফতোয়া দেন। অনেকে সরাসরি সৌদি আলেমদেরকে মুনাফেক বা দরবারী আলেম বলে গালি দেওয়াকে তাদের জন্য ফরজ করে নিয়েছেন।
যাই
হোক চলুন আজ আমরা দেখি, আলেমরা কি আসলে দালালি করেছেন, নাকি ইসলামের কথাই বলেছিলেন। ইখোয়ানুল মুসলিমিন, হিযবুত
তাহরীর, আল-কায়েদাহ, কথিত মুজাহিদসহ বিভিন্ন বিভ্রান্ত দলগুলোর হাওয়া (প্রবৃত্তির)
সাথে মনোঃপূত না
হওয়ায় তারা সালাফী আলেমদেরকে গালি-গালাজ করছে, যেইভাবে খারেজীরা সাহাবীদেরকে গালি দিতো।
(সাত)
সালাফী
আলেমদের বিরুদ্ধে খারেজী, জংগীদের মিথ্যা অপবাদের জবাবঃ
শুত্রুদের
বিরুদ্ধে কোন যুদ্ধে মুসলমানেরা কি কাফেরদের সাহায্য নিতে পারবে নাকি পারবে না,
এটা একটা ইজতিহাদী মাসআ’লা; যেই ব্যাপারে আলেমদের দুইটি ভিন্ন মত রয়েছে।
একদল
আলেমের মত হচ্ছে, কাফিরদের সাহায্য নেওয়া জায়েজ নয়। আরেকদল আলেমের মত হচ্ছে,
প্রয়োজন থাকলে এমন কাজ জায়েজ।
কাফেরদের
সাহয্য গ্রহণ করা সম্পর্কে প্রাচীন যুগের বড় আলেমদের ফতোয়াঃ
(১)
ইমাম শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহর ফতোয়াঃ (মৃত্যু ২০৪ হিজরী)
ইমাম
আল-বায়হাক্বী রহি’মাহুল্লাহ বর্ণনা করেছেন। ইমাম আশ-শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম সম্ভবত বদরের যুদ্ধে মুশরিকদেরকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেননি এই আশায় যে, তাদেরকে
যুদ্ধ করতে ফিরিয়ে দিলে তারা হয়তো ইসলাম কবুল করবে। মুসলিম শাসকের জন্য এটা জায়েজ রয়েছে,
মুসলিমদের সাথে মুশরিকদেরকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া কিংবা না দেওয়ার।”
উৎসঃ
আল-যায়লাঈ’ রহি’মাহুল্লাহর “নাসবুর-রায়াহ”, খন্ড-৩,
পৃষ্ঠা-৪২৩-৪২৪, প্রথম সংস্করণ, দারুল আল-মা’মুন
প্রকাশনী।
ইমাম
শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহ বলেন, “কাফেরদের সাহায্য নেওয়া (ক্বুরআন
নাযিলের) প্রথমদিকে নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে এই
হুকুম রহিত হয়ে যায়।” নায়লুল আওতারঃ ৮/৪৪।
ইমাম
শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহ আরও বলেছেন, “কাফেরদের কাছ থেকে যুদ্ধের জন্য সাহায্য নেওয়া জায়েজ, যারা
মুসলমানদের কাছে বিশ্বস্ত এবং যখন সাহায্য নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা থাকবে। এই শর্তগুলো
পূরণ না হলে কাফেরদের সাহায্য নেওয়া মাকরুহ (অপছন্দনীয়)।” শরাহ সহীহ মুসলিম, ইমাম নববী
রহি’মাহুল্লাহ।
(২)
আল-হাযিমি রহি’মাহুল্লাহ তাঁর “নাসিক ওয়াল মানসুখ” গ্রন্থে
বলেছেন,
“(কাফেরদের সাহায্য
নেওয়ার ব্যাপারে) আলেমদের বিভিন্ন মত রয়েছে। একপ্রকার আলেম “কাফেরদের
কাছ থেকে সাহায্য নেওয়া জায়েজ নয়” - এই মতের সাথে একমত হয়েছেন, যার মধ্যে
ইমাম আহমাদ রয়েছেন...। অপর আলেমদের মতে, মুসলিম শাসকের জন্য মুশরিকদের সাহায্য
গ্রহণ করা জায়েজ দুইটি শর্তেঃ
প্রথমতঃ
মুসলিমদের সংখ্যা কম হবে এবং মুশরিকদের থেকে সাহায্য গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা
বিদ্যমান থাকবে।
দ্বিতীয়তঃ
যে মুশরিকদের সাহায্য নেওয়া হবে তারা মুসলিমদের নিকট বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে।
অতঃপর
আল-হাযিমি রহি’মাহুল্লাহ ইমাম আশ-শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহর
উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, “মালিক বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বদরের যুদ্ধে মুশরিকদের সাহায্য গ্রহণ করতে
অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন কিন্তু বদর যুদ্ধে কয়েক বছর পরে খায়বারের যুদ্ধে তিনি বনু কুরায়যা
নামক (একটি ইহুদী গোত্রের) সাহায্য নিয়েছিলেন। পুনরায় তিনি হুনাইনের যুদ্ধে সাফওয়ান
ইবনে উমাইয়ার সাহয্য নিয়েছিলেন, যিনি সেই সময়ে মুশরিক ছিলেন। মালিকের হাদীস প্রমাণ
করে যে, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম কখনো মুশরিকদের সাহায্য গ্রহণ করেছেন আবার কখনও মুশরিকদের সাহায্য গ্রহণ করতে
অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ, বিষয়টি তাঁর ইচ্ছার অধীন ছিলো। এইভাবে উভয় প্রকার হাদীসের
মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব।”
আল-হাযিমি
রহি’মাহুল্লাহ আরও বলেন, “...মুশরিকরা
যদি মুসলিমদেরকে সাহায্য করতে চায়, তাহলে তাদের সাহায্য নেওয়া জায়েজ রয়েছে।”
উৎসঃ
নাসিক ওয়াল মানসুখ।
(৩)
আল-ওয়াযির ইবনে হুবায়রা রহি’মাহুল্লাহর ফতোয়াঃ (মৃত্যু ৫৬০ হিজরী)
আল-ওয়াযির
ইবনে হুবায়রা রহি’মাহুল্লাহ বলেছেন, “মুসলিমদের শত্রুর
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য মুশরিকদের সাহয্য গ্রহণ করার হুকুম সম্পর্কে আলেমদের
মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। ইমাম মালিক এবং ইমাম আহমাদের মত হচ্ছে, এটা জায়েজ নয়। অবশ্য
ইমাম মালিক যোগ করেছেন, যদি মুশরিকরা মুসলিমদের সেবার জন্য নিয়োজিত থাকে তাহলে
সেক্ষেত্রে জায়েজ। পক্ষান্তরে, ইমাম আবু হানিফা রহি’মাহুল্লাহর
মত হচ্ছে, যেই সমস্ত কাফির মুসলিমদের অধীনে রয়েছে, তাদের সাহায্য নেওয়া
সম্পূর্ণরূপে জায়েজ। মুসলিমদের অধীনে না হলে মাকরুহ। ইমাম শাফেয়ী বলেছেন, “কাফেরদের
সাহায্য গ্রহণ করা জায়েজ তবে দুইটি শর্তে...। ”
উৎসঃ
আল-ইফসাহ আ’ন মা’আনি আল-সিহাহঃ খন্ড-২, পৃষ্ঠা-২৮১।
(৪)
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহর দাদা তাঁর যুগের একজন বিখ্যাত আলেম ছিলেন। ইবনে
তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহর দাদা আল-মাজদ ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ
বলেন, “প্রয়োজন ছাড়া মুশরিকদের সাহায্য গ্রহণ করা জায়েজ নয়। যদি
মুসলিমদের সাথে মুশরিকদের যোগদানের দ্বারা শত্রুদের বিরুদ্ধে শক্তি বৃদ্ধি পায় এবং
মুসলিমদের সম্পর্কে মুশরিকদের ভালো ধারণা থাকে তাহলে তাদের সাহায্য গ্রহণ করা
জায়েজ, অন্যথায় জায়েজ নয়।”
উৎসঃ
ইবনে তাইমিয়্যা রহি’মাহুল্লাহ তাঁর “আল-মুহাররার ফি
আল-ফিক্বহ” গ্রন্থে তাঁর দাদার এই মত বর্ণনা করেছেন। মাকতাবাত আল-মা’রিফ
রিয়াদ, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৪০৪ হিজরী।
(৫)
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহর ফতোয়াঃ (মৃত্যু ৮৫২ হিজরী)
তাঁর
“আল-তালখীস” গ্রন্থে
কাফেরদের সাহায্য গ্রহণ করা জায়েজ নাকি নাজায়েজ - এ সংক্রান্ত উভয় প্রকার হাদীস
উপস্থাপন করার বলেছেনঃ
“হতে পারে, (ইসলামের)
শুরুর দিকে কাফেরদের সাহায্য গ্রহণ করা নিষিদ্ধ ছিলো, কিন্তু পরে তা জায়েজ করা হয়।
এই মতটা সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়, ইমাম শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহ
এই মত গ্রহণ করেছেন।”
ইমাম
ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ আরও বলেছেন, “কাফেরদের
সাহায্য গ্রহণ করা মাকরুহ, যদি না সাহায্য গ্রহণ করা মুসলিমদের জন্য অত্যাবশ্যক
হয়ে পড়ে। একদল আলেম বলেছেন, প্রয়োজনীয়তা থাকলে মুসলিমরা কাফেরদের সাহায্য গ্রহণ
করতে পারে।”
ইমাম
ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহ কাফেরদের সাহায্য গ্রহণ করা জায়েজ মনে করেন, যদি
সাহায্যকারী কাফেররা মুসলিমদের সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখে।
বিস্তারিত
দেখুনঃ ইবনে মুফলিহ রহি’মাহুল্লাহর “আল-ফুরূ”, খন্ড-৬,
পৃষ্ঠা-২০৫, দ্বিতীয় সংস্করণ, ১৯৬৭ সালে দার মাসর প্রকাশনী থেকে ছাপানো
(আট)
“সালাফি কিন্তু দরবারী
নন” - এমন আলেমের ফতোয়াঃ
আসিফ আদনান তার
একই লেখাতে সৌদি সরকারের বিরোধীতা করে জেলে গেছেন এমন কিছু শায়খের নাম উল্লেখ করে লিখেছে,
“আজ সাউদি আরবের জেলে শত শত
সালাফি আলিম বন্দী, এটাও বাস্তবতা। তাঁদের মধ্যে শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ এবং আব্দুল
আযীয আত-তারিফীর মতো নিরেট ইলমী মানুষ আছেন।”
সে আরও লিখেছে,
“(সালিহ আল-মুনাজ্জিদ এবং অন্যান্য)
এই আলিমরা সবাই সালাফি। তারা নিঃসন্দেহে দরবারী না। কারণ শাসকগোষ্ঠীই তাঁদেরকে বন্দী
করে রেখেছে। তাঁরা পেট্রোডলার পান না, বরং পেট্রোডলার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
এবং তাঁরা যদি শবে বরাত বা অন্য কোন কিছুর বিরোধিতা করেন সেটা এসি রুমে বসে করেন না,
জেলের মাটিতে বসে করেন। আরাম কিংবা সুবিধার কারণে করেন না, শরীয়াহর দলীলের ভিত্তিতে
করেন। যারা তাঁদের অনুসরণ করেন তারাও টাকা কিংবা এসির বাতাসের জন্য সেটা করেন না।”
অর্থাৎ, আসিফ আদনানের
দৃষ্টিতে শাইখ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ একজনঃ
- সালাফি আলেম,
- নিরেট ইলমী মানুষ,
- নিঃসন্দেহে দরবারী
না,
- তিনি পেট্রোডলার
পান না, বরং পেট্রোডলার তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়,
- তিনি যদি কোন
কিছুর বিরোধিতা করেন সেটা এসি রুমে বসে করেন না, জেলের মাটিতে বসে করেন। আরাম কিংবা
সুবিধার কারণে করেন না, শরীয়াহর দলীলের ভিত্তিতে করেন।
চলুন এবার আমরা
কাফেরদের সাহায্য গ্রহণ করা সম্পর্কে আসিফ আদনানের দৃষ্টিতে সালাফী, নিরেট ইলমী মানুষ
কিন্তু নন-দরবারী; এমন একজন শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের ফতোয়া লক্ষ্য করি।
কাফেরদের সাহায্য
নেওয়া যাবে কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ লিখেছেন,
“যেই মুসলিম (দেশ বা দল) কাফিরদের সাহায্য চায় বা কাফেরদের
সাহায্য গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, এতে যদি তাদের দ্বীনের উপর কোন ক্ষতিকর প্রভাব না পড়ে,
তাহলে কাফেরদের সাহায্য গ্রহণ করতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু এতে যদি (মুসলিমদের) দ্বীনের
উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে, তাহলে শরীয়তের দলীল অনুযায়ী কাফেরদের কাছে সাহায্য চাওয়া বা
কাফেরদের সাহায্য গ্রহণ করা জায়েজ নয়…সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কোন কোন
মুশরিকদের কাছ থেকে হাদীয়া (উপহার) গ্রহণ করেছেন, আবার কোন কোন মুশরিকদের থেকে হাদীয়া
গ্রহণ করেননি।” islamqa, প্রশ্ন নং-৯৯১৮।
শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ
এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ২৮/১১/২০০০ তারিখে, অর্থাৎ উপসাগরীয় যুদ্ধের প্রায় ১০ বছর পর। অর্থাৎ
তিনি উপসাগরীয় যুদ্ধের ঘটনা জানার পরেও উক্ত ফতোয়া দিয়েছেন।
ফতোয়ার লিংক -
https://islamqa.info/en/answers/9918/ruling-on-seeking-and-accepting-help-from-the-kuffaar
(নয়)
আপনি
যদি সন্দেহ বাতিকগ্রস্ত রোগী হয়ে থাকেন যে, আপনি আসিফ আদনানের শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদের প্রশংসা বিশ্বাস করলেন না। আপনি মনে করলেন
যে, শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ সৌদি নাগরিক হওয়ার কারণে তিনিও একজন দরবারী আলেম। তাহলে
আপনাকে আমি এমন বিদেশী একজন শায়খদের ফতোয়া দিচ্ছি, যারা সৌদি নাগরিক নন, সৌদিতে থেকে
পেট্রো ডলারও পান না।
(১) বাংলাদেশের
স্বনামধন্য দ্বাইয়ী ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহি’মাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো,
“আরব আলেমরা দালালী করেন কেনো?” এই প্রশ্নের উত্তরে শায়খ কি
উত্তর দিয়েছিলেন ভালো করে শুনুনঃ
(২)
কাতার ভিত্তিক প্রশ্নোত্তরের জন্য সুপরিচিত ওয়েব সাইট islamweb, যারা সৌদি আরব থেকে পেট্রো ডলারও পায় না, যারা শায়খ মুহাম্মদ আমান আল-জামি, শায়খ রাবী
বিন হাদী আল-মাদখালী আলেমদের অনুসরণ করে না, তাঁদের ফতোয়া দেখুনঃ
ফিক্বহ
এনসাইক্লোপিডিয়াতে বলা হয়েছে, “বৈধ কাজ যেমন ব্রীজ বা রাস্তা-ঘাট,
মসজিদ নির্মাণ কাজে আহলে কিতাব বা অন্য কাফেরদের থেকে সাহায্য গ্রহণ করা জায়েজ।”
https://www.islamweb.net/en/fatwa/373042/a-muslim-seeking-the-help-of-a-kaafir
(দশ)
উপসাগরীয় যুদ্ধের ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রয়োজনীয় কিছু
তথ্যঃ
সৌদি সরকার এবং সৌদি আলেম বিদ্বেষী কিছু লোকেরা দাবী করে,
সৌদি আরব সরকার ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের মুসলিম সরকারের বিরুদ্ধে আমেরিকান
খ্রীস্টানের সাহায্য নিয়েছে। একারণে তাদের ঈমান ভংগ হয়ে গেছে। কেননা, মুসলিমদের বিরুদ্ধে
কাফেরদেরকে সাহায্য করা ঈমান ভংগকারী একটা বিষয়।
উত্তরঃ এটা ভুল এবং মিথ্যা প্রোপাগান্ডা। কেননা সাদ্দাম
হোসেন সেই সময়ে মুসলিম ছিলো না। সাদ্দাম হোসেন ছিলো বাথিস্ট (Bathist)।
বাথিস্ট একটা রাজনৈতিক মতবাদ, যাদের মূল মন্ত্র জাতীয়তাবাদ,
ধর্ম নিরপেক্ষতবাদ
ও সমাজতন্ত্রের উপর
প্রতিষ্ঠিত, যেইগুলো ইসলামের সাথে সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক। সাদ্দাম হোসেন ক্ষমতায় আসার পরে তার দলের লোকেরা আল্লাহর
কুশপুত্তলিকা বানিয়ে পুড়িয়ে ফেলে এবং “আজ থেকে আল্লাহ মৃত” বলে ঘোষণা করে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। এছাড়া আরো অনেক শিরকি কুফুরী কাজের জন্য শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ, শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী রহি’মাহুল্লাহ অন্য আলেমরা সাদ্দামকে মুর্তাদ বলে ফতোয়া দিয়েছিলেন। এমনকি বিন বাজ রহি’মাহুল্লাহ কুয়েত
আক্রমনকারী বাথিস্ট সাদ্দামকে খ্রীস্টানদের চেয়ে বিপদজনক বলে মত দেন। সুতরাং, সৌদি
আরব মুসলিমদের বিরুদ্ধে খ্রীস্টানদের সাহায্য করেছে বিষয়টা মোটেও এমন নয়। বরং সৌদি
আরব সোস্যালিস্ট মুর্তাদদের ক্ষতি থেকে বাঁচার জন্য খ্রীস্টানদের সাহায্য গ্রহণ
করেছিলো। এমনকি কুয়েত মুক্ত করার পর সৌদি আরব সাদ্দাম হোসেনকে ইরাকের ক্ষমতা থেকে
সরানোর জন্য চেষ্টা করেনি। এথেকে প্রমাণিত হয়, সৌদি আরবের উদ্দেশ্য ছিলো কুয়েতকে
সাদ্দামের অপশাসন থেকে রক্ষা করা এবং মধ্যপ্রাচ্যে সাদ্দামের ক্ষমতা বর্ধিত করা
থেকে বিরত রাখা।
উল্লেখ্য, সাদ্দাম হোসেন ২০০৩ সালে আমেরিকান ক্রুসেডারদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর সে
তোওবা করেছে বলে দাবী করে এবং দাঁড়ি রাখা আরম্ভ করে। ইরাকের
আদালাতে বিচারের সময় সে ক্বুরআনুল কারীম নিয়ে আসতো। সর্বশেষ
ফাঁসির মঞ্চে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলতে বলতেই সে ফাঁসিতে
ঝুলে মৃত্যুবরণ করে। সে যদি সত্যিই ইসলামে ফিরে আসে, তাহলে হতে পারে তোওবাহ করার কারণে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। সুতরাং বর্তমানে আমরা সাদ্দাম হোসেনকে কাফের বা
জাহান্নামী বলবো না, সতর্কতা হিসেবে তার ব্যপারে আমরা
চুপ থাকবো। তবে সে
এক সময় প্রকাশ্য কুফুরী মতবাদের উপরে ছিলো এবং অনেক
যুলুম-অত্যাচার ও অন্যায় করে মৃত্যুবরণ করেছে।
(এগার)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সহীহ হাদীসে দ্বারা কাফেরদের সাথে সন্ধি চুক্তি
করে মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা জায়েজ; তা সরাসরি হাদীস দ্বারা প্রমাণ করা সম্ভব।
যু-মিখবার
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে
বলতে শুনেছি, “অদূর
ভবিষ্যতে তোমরা রোমানদের (খ্রিস্টানদের) সাথে শান্তি চুক্তি করবে। পরে তোমরা ও
তারা (খ্রিস্টানরা) মিলে তোমাদের পিছন দিককার (শত্রুদের) সাথে যুদ্ধ করবে। সেই
যুদ্ধে তোমরা জয়ী হবে, অনেক গণীমতের সম্পদ অর্জন করবে এবং নিরাপত্তা লাভ করবে। তখন এক খৃষ্টান
ব্যক্তি ক্রুশ উঁচু করে ধরে বলবে, ক্রুশ (ক্রস অর্থাৎ খ্রীস্টান ধর্ম) জয়ী হয়ে
গেছে। ফলে মুসলমানদের মধ্যে এক ব্যক্তি তাতে ক্রুদ্ধ হয়ে ক্রুশটিকে ভেঙ্গে ফেলবে।
এই ঘটনার সুত্র ধরে রোমানরা (খ্রিস্টানরা) বিশ্বাসঘাতকতা (সন্ধি চুক্তি ভঙ্গ)
করবে।”
মিশকাত
শরীফ, মহাযুদ্ধ অধ্যায়, দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ, আবু দাউদঃ ১৫৮৮। শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যতে
মুসলিমরা খ্রীস্টানদের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে অন্য শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে তা বলে
গেছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে কোন আপত্তি বা সেই মুসলিমদের ব্যাপারে কোনপ্রকার
অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেননি। একদল আলেম বলেছেন, এই হাদীসে আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
প্রয়োজনের সময় কাফেরদের সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে মৌন সম্মতি দিয়েছেন। আল্লাহু আ’লাম।
(বার)
সৌদি
সরকারের আমেরিকার সাহায্য নেওয়ার ব্যাপারে সমর্থন জানিয়ে সৌদি সালাফী আলেমরা সঠিক
কিংবা ভুল হতে পারেন, কিন্তু তার মানে এই না যে, তাঁরা সৌদি সরকারকে খুশি করার জন্য
মনগড়া ফতোয়া দিয়েছেন।
সৌদি
সালাফী আলেমরা যেই ফতোয়া দিয়েছেন; একই ফতোয়া আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর পূর্বে ইমাম
আবু হানীফা রহি’মাহুল্লাহ, ইমাম শাফেয়ী রহি’মাহুল্লাহ,
আজ থেকে প্রায় ৭০০-৮০০ বছর আগে আল-মাজদ ইবনে তাইমিয়া রহি’মাহুল্লাহ,
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহসহ অনেক আলেমই দিয়েছেন।
“প্রয়োজনের সময় কাফেরদের
সাহায্য নেওয়া জায়েজ” - এই ফতোয়া দিয়ে যদি শায়খ বিন বাজ, ইবনে উসায়মিন, জামী,
রাবীর মতো আলেমরা দরবারী হয়, তাহলে উপরোক্ত আলেমদেরকেও দরবারী বলতে হবে।
এমন
ইখতিলাফী মাসআ’লাতে শায়খ বিন বাজ, ইবনে উসায়মিন, জামী, রাবীরা যদি আপনার
প্রবৃত্তির বিরোধী ফতোয়া দেওয়ার কারণে আপনি তাঁদেরকে দরবারী বলে গালি দেন, তাহলে
আমি আপনাকে নিতান্ত জাহেল এবং ফাসেক্ব বলবো। আপনার উচিত ফিক্বহের মৌলিক জ্ঞান
অর্জন করা, যাতে করে ইসলাম সম্পর্কে আপনার অজ্ঞতা দূর হয় এবং আলেদের কি মর্যাদা
রয়েছে তা জানতে পারেন।
(তের)
=>
আসিফ আদনানের মতো অল্প বয়ষ্ক জাহেল ছেলে-পিলে যারা উম্মতের সর্বজন শ্রদ্ধেয়
আলেমদেরকে গালি-গালাজ করে এবং তাদের নামে মিথ্যা অপবাদ প্রচার করে বেড়ায় তাদের জন্য
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবাণীঃ
(১)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “সে ব্যক্তি আমার দলের অন্তর্ভুক্ত
নয় (অর্থাৎ মুসলমান
নয়), যে বড়দের সম্মান ও শ্রদ্ধা করেনা,
ছোটদের দয়া-মায়া স্নেহ-মমতা করেনা, ভালো কাজ করতে আদেশ করেনা এবং মন্দ কাজ করতে নিষেধ
করেনা।” সুনানে
আত-তিরমিযী।
(২)
ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৮১ হিজরী) বলেন, “যে
ব্যক্তি আলেমদেরকে তুচ্ছ করবে, সে তার আখেরাতকে নষ্ট করলো। যে ব্যক্তি (মুসলিম)
শাসকদেরকে তুচ্ছ করবে, সে তার দুনিয়াকে নষ্ট করলো। আর যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম
ভাইকে তুচ্ছ করে, সে তার সম্মানকে নষ্ট করলো।” ইমাম
আয-যাহাবী রহি’মাহুল্লাহর প্রণীত সিয়ার আ’লাম
আন-নুবালাঃ ৮/৪০৮।
(৩) ইমাম ইবনে আসাকির রহি’মাহুল্লাহ
(মৃত্যু ৫৭১ হিজরী) বলেন, “ভাইয়েরা আমার! তোমরা জেনে রাখো, আলেমদের
গোশত (অর্থাৎ তাদের নামে গীবত করা) বিষাক্ত (অর্থাৎ অত্যন্ত ভয়াবহ একটা বিষয়)।
আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে, যে ব্যক্তি আলেমদের ইজ্জতের উপর হাত দিবে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস
করে ছাড়বেন।”
(৪)
শায়খ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“আমি বলি, তিন প্রকার
লোক ছাড়া আর কেউই আলেমদের সম্মানের উপর আক্রমন করে নাঃ
(ক)
এমন মুনাফিক্ব, যার মুনাফেকী সকলের কাছে স্পষ্ট।
(খ)
ফাসেক্ব মুসলমান, যে আলেমদেরকে ঘৃণা করে; কারণ আলেমরা তার পাপাচার ও কুপ্রবৃত্তির
অনুসরণে বাঁধা দেয়।
(গ)
(ভ্রান্ত মতবাদে বিশ্বাসী) পথভ্রষ্ট হিজবী, যে আলেমদেরকে ঘৃণা করে; কারণ আলেমরা
তার হিজবিয়্যা এবং ভ্রান্ত মতবাদের সাথে একমত হন না।”
আল-আযওয়িবাতুল
মুফীদাহঃ ৪৯-৫১।
«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ
وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ
إِلَيْكَ»
(চলবে
ইন শা আল্লাহ)
___________________________________
সৌদি সালাফী আলেমদের
নামে মিথ্যা অপবাদের জবাব (পর্ব-২)
بـسـم الله والحـمـد لله
والـصلاة والـسـلام عــلى رسـول الله، وبـعـد
(এক)
শায়খ
আলবানী রহি’মাহুল্লাহর ফতোয়া প্রসংগে আমাদের বক্তব্যঃ
আল্লামাহ
নাসির উদ্দিন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ
কাফেরদের সাহায্য নেওয়া প্রসংগে সৌদী আলেমদের ফতোয়াকে ভুল বলেছিলেন এবং তাঁদের ফতোয়ার বিরোধীতা করেছিলেন। কিছু প্রতারক লোক যারা আসলে প্রবৃত্তির অনুসারী, তারা
শায়খ আলবানীর এই ফতোয়া খুব প্রচার করে। কিন্তু তারা জিহাদ, তাকফীর, রাজনীতিসহ বা এমন অন্যান্য বিষয়গুলোতে শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহর কোন
বক্তব্য গ্রহণ করে না। শায়খ আলবানীর এই ফতোয়া তাদের প্রবৃত্তির অনুকূলে, শুধুমাত্র এ কারণেই তারা শায়খ
আলবানীর এই
ফতোয়া প্রচার করে সৌদী সালাফী আলেমদের
সম্পর্কে মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চায় যে, তারা শাসকের মনমতো ফতোয়া দেয়।
কাফেরদের
সাহায্য নেওয়ার হুকুম কি, এ ব্যাপারে
প্রাচীনকাল থেকেই আহলে সুন্নাহর আলেমদের মাঝে মতবিরোধ হয়েছে। বিষয়টা এমন না যে,
শুধুমাত্র আধুনিক যুগে শায়খ বিন বাজ ও শায়খ আলবানীর মাঝে এই ব্যাপারে মতপার্থক্য
হয়েছে।
আলেমদের
মতপার্থক্যের ব্যাপারে আমরা ইমাম মালেক রহি’মাহুল্লাহর এই কথাই বলবো,
“সবার কথা গ্রহণ
করতে হবে আবার ছাড়তেও হবে, শুধুমাত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কথা ছাড়া।”
অর্থাৎ
যেকোন আলেমের কথা যদি হক্ক হয়; তাহলে আমাদের সেটা মেনে নিতে হবে। আবার কোন আলেমের
ভুল হলে, সেটা বর্জন করতে হবে। কিন্তু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সমস্ত আদেশ যথাসাধ্য মান্য করতে হবে এবং তাঁর নিষেধ থেকে
বেঁচে থাকতে হবে। এক্ষেত্রে কম বা বেশি করার সুযোগ নেই।
আমরা পূর্ববর্তী আলেমদের যেমন ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক,
ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ থেকে নিয়ে সর্বশেষ ইমাম ইবনে বাজ, ইমাম ইবনে উসায়মিন, ইমাম আলবানী
সবার কথা মাঝে যেটা সঠিক সেটা গ্রহণ করি, যেটা ভুল সেটা বর্জন করি। আমরা এমন বলিনা যে, এতোবড় আলেম তার কোন ভুল হতেই পারে না। কিংবা কোন আলেমের কথা ১০০% ঠিক, তার সব কথা
অক্ষরে অক্ষরে মানতে হবে আমরা এটাও বলি না।
ফিক্বহী
অনেক ব্যপারে আলেমরা মত পার্থক্য করেছেন। ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক,
ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদের মতো বড়
বড় আলেমদের মাঝে মতপার্থক্য হয়েছে। একারণে যে কোন ব্যপারে সেটা গ্রহণ করি, যা ক্বুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
তেমনি
কোন যুদ্ধে মুসলমানদের যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয় তখন কাফেরদের সাহায্য নেওয়া যাবে
কিনা, এটা একটা ইজতেহাদী বিষয়, যেই ব্যপারে শায়খ বিন বাজ ও শায়খ আলবানীর মাঝে মত পার্থক্য
হয়েছে। এ ব্যপারে ইমাম শাফেয়ী, ইমাম নববী,
ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, শায়খ বিন বাজ, শায়খ মুহাম্মাদ
আমান আল-জামি, শায়খ আব্দুল্ললাহ আল-গুনায়মানের ফতোয়ার পক্ষে যদি শক্তিশালী দলিল পাওয়া যায়, (যা প্রথম পর্বে সংক্ষেপে উল্লেখ করা
হয়েছিলো) তাহলে সেটা আমাদের গ্রহণ করা
উচিত। এক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি যদি দলীল প্রমাণের তোয়াক্কা না করে শায়খ বিন বাজের
ফতোয়ার বিরুদ্ধে শায়খ আলবানীর ফতোয়া দাঁড় করায়, তাহলে একইভাবে শায়খ আলবানীর ফতোয়া
বিরুদ্ধে তাঁর চেয়ে বড় আলেম যেমন ইমাম শাফেয়ী, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রহি’মাহুল্লাহর
ফতোয়া দেখানো যাবে। এখানে মূল বিষয় হচ্ছে, আপনি আলেমদের ফতোয়ার জন্য উপস্থাপিত
দলীল বুঝে কোনটা সঠিক কোনটা ভুল সেটা বুঝার মতো যোগ্যতা আপনার আছে কি নাই?
(দুই)
উপসাগরীয়
যুদ্ধের সময় সৌদি আরবে
অবস্থানরত খ্রীস্টান সৈন্যদের ক্যাম্পে আরব
সংস্কৃতি প্রদর্শনীর নামে তাদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়ার সৌদি
সরকারের পক্ষ থেকে ড. বিলাল ফিলিপস এবং শায়খ আব্দুর রহমান
দিমাশকিয়াকে
দ্বাইয়ী হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো। এই দুইজন শায়খ ইসলাম এবং দাওয়াহর ব্যাপারে উচ্চ শিক্ষিত এবং ইংরেজী ভাষায় এক্সপার্ট।
শায়খ
আব্দুর রহমান দিমাশকিয়া হা’ফিজাহুল্লাহ উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় আমেরিকান খ্রীস্টান সৈন্যদেরকে তাঁর
দাওয়াত দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করে বলেন,
“ঐ দিনগুলো ছিলো আমার জীবনে দাওয়াতের জন্য
সবচেয়ে উত্তম দিন। সেইসময় প্রতিদিন ২০-৩০ জন খ্রীস্টান সৈন্য আমাদের হাতে ইসলাম কবুল করতো। একদিন এক মহিলা সৈন্য তার একেবারে পুরনো একটা বাইবেল নিয়ে এসে বলে, তুমি
কি বলতে চাও আমার এই বাইবেল আল্লাহর
কালাম নয়? সে তার বাইবেলটা পড়তে পড়তে একেবারে জীর্ণ ও পুরনো করে ফেলেছিলো। শায়খদের সাথে ইসলাম এবং খ্রীস্টান ধর্ম নিয়ে কথা বলার পর সেই মহিলা একদিন বিকালবেলা এসে ইসলাম কবুল করে। ইসলাম
গ্রহণ করার পর সেই মহিলা আবেগে কান্নায় ভেংগে পড়ে।”
দলে
দলে আমেরিকান সৈন্যদের
ইসলাম গ্রহণ করার ভয়াবহতা বুঝতে পেরে এমেরিকান সরকার কিছুদিন পর প্রেশার দিয়ে সৈন্যদের মাঝে ইসলামের দাওয়াত
দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলো।
(তিন)
গুনাহর
কারণে মানুষ হক্ক থেকে বঞ্চিত থাকে
খারেজী
জংগী মানহাজের অনুসারী ২৫-৩০ বছরের যুবক ভাই ব্রাদাররা প্রাণপণ চেষ্টা করে তাদের ভক্ত-শ্রোতাদের
সামনে নিজেকে সবচেয়ে বুদ্ধিমান, আপডেটেড, শিক্ষিত, স্মার্ট এবং আল্লাহ ওয়ালা হিসেবে
উপস্থাপন করার জন্য। এমন লোকদের অলংকারপূর্ণ, আবেগী কথা-বার্তা শুনে সরলমনা মুসলমানেরা ধোঁকায় পড়ে উম্মতের সর্বজন শ্রদ্ধেয়
রব্বানী আলেমদেরকে গালি-গালাজ ও দোষারোপ করা আরম্ভ করে।
তবে ভ্রান্ত
মানহাজের অনুসারী এমন লোক যারা ভুল পথে গেছে, তারা লোকদের
সামনে নিজেকে যতই আল্লাহওয়ালা হিসেবে উপস্থাপন করুক না কেনো, আল্লাহর কসম! এরা অন্তর এবং আমলের দিক থেকে পাপী। এদের গুনাহর কারণেই তারা হক্ক বুঝতে ব্যর্থ হয়ে নিজেদেরকে বিপথে
পরিচালিত করে।
(১) আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
وَ مَا یُضِلُّ بِہٖۤ اِلَّا الۡفٰسِقِیۡنَ
“বস্তুতঃ তিনি ফাসিক্ব (পাপী
লোক) ছাড়া আর কাউকে বিভ্রান্ত করেন না।” সুরা আল-বাক্বারাহঃ আয়াত নং-২৬।
(২) আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“মানুষের হৃদয়ে চাটাইয়ের পাতা
(বা ছিলকার) মত একটির পর একটি করে ক্রমান্বয়ে ফিতনা প্রাদুর্ভূত হবে। সুতরাং যে
হৃদয়ে সে ফিতনা সঞ্চারিত হবে, সে হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়বে।
আর যে হৃদয় তার নিন্দা ও প্রতিবাদ করবে, সে হৃদয়ে একটি সাদা দাগ অঙ্কিত
হবে। পরিশেষে (সকল মানুষের) হৃদয়গুলি দুই শ্রেণীর হৃদয়ে পরিণত হবে। প্রথম শ্রেণীর
হৃদয় হবে মসৃণ পাথরের ন্যায় সাদা; এমন হৃদয় আকাশ-পৃথিবী
অবশিষ্ট থাকা অবধি-কাল পর্যন্ত কোন ফিতনা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। আর দ্বিতীয়
শ্রেণীর হৃদয় হবে উপুড় করা কলসীর মতো ছাই রঙের; এমন হৃদয় তার সঞ্চারিত ধারণা
ছাড়া কোন ভালোকে ভালো বলে জানবে না এবং মন্দকে মন্দ মনে করবে না (তার প্রতিবাদও
করবে না)।” সহীহ মুসলিমঃ ৩৮৬।
(৩) শায়খ
মুহাম্মদ বিন সালিহ আল-উসায়মিন রহি’মাহুল্লাহ বলেন,
“তোমার গুনাহ তোমাকে হক্ক বুঝা
থেকে বিরত রাখে।” শারহ আল-মুমতি।
(চার)
আসিফ
আদনানের মতো অল্পবয়ষ্ক, জাহেল ছেলেরা কিয়ামতের লক্ষণঃ
শেষ
যামানায় আসিফ আদনানের মতো অল্প বয়ষ্ক লোকেরা মানুষকে কথার জালে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট
করবে। মানুষেরা এমন জাহেল লোকদেরকে নিজেদের উস্তাদ হিসেবে গ্রহণ করবে এবং এইভাবে
তারা গোমরাহ হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই ব্যাপারে আমাদেরকে অনেক আগেই সতর্ক করে
গেছেন।
(১)
সত্যিই তাই হচ্ছে। শায়খ বিন বাজ,
শায়খ ইবনে উসায়মিনদের মতো বড় আলেম মারা গেছেন। আর আসিফ আদনানের মতো অল্প বয়ষ্ক জাহেল
লোকেরা লোকদেরকে বুঝাচ্ছে, সালাফী আলেমরা দরবারী!
(২)
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বেই বলেছিলেন, “কেয়ামতের
একটা লক্ষণ হচ্ছে যে, মানুষ জাহেল (মূর্খ) লোকদের কাছ থেকে ইলম (দ্বীনের জ্ঞান) অর্জন
করবে।” তাবারানী, জামি আস-সাগীরঃ ২২০৩।
(৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “শেষ যামানায় এমন কিছু গোষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে বয়সে নবীন,
কল্পনা বিলাসী নির্বোধ, তারা কথা বলবে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মানুষের মত, অথচ তাদের ঈমান
তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না, (অর্থাৎ মুখেই উচ্চারিত হবে কিন্তু ঈমান তাদের অন্তরে
স্থান পাবে না)।” সহীহ বুখারীঃ
৬৯৩০, সহীহ মুসলিমঃ ১০৬৬, মুসনাদে আহমাদঃ ৯১২।
«سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ
وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوبُ
إِلَيْكَ»
___________________________________
সৌদি সালাফী আলেমদের
নামে মিথ্যা অপবাদের জবাব (পর্ব-৩)
একজন উগ্রপন্থী ড. আব্দুল্লাহ
জাহাংগীর রহি’মাহুল্লাহকে প্রশ্ন করেছিলো, “আরবের আলেমরা কেনো ইহুদী
খ্রীস্টানদের দালালী করে? কেনো তারা সরকারের শিরকি ও কুফুরী কাজকে সমর্থন করে?”
শায়খ রহি’মাহুল্লাহ সেই প্রশ্নের
উত্তর একটা কথা বলেছিলেন, “আমি জানি না, আপনারা আরব
দেশের সরকার আর আরব আলেমদের মাঝে পার্থক্য করেন কিনা?”
শায়খের এই কথার প্রেক্ষিতে আমি বলি, মুসলমানদের
মাঝে সত্যিই এমন কিছু লোক আছে, যারা এতোটাই বোকা যে তারা “আরব সরকার” এবং “আরব আলেমদের” মাঝে কি পার্থক্য, সেটা ধরতে
পারে না। আরব সরকারের যে কোন খারাপ কাজের জন্য তারা আরব আলেমদেরকে দোষারোপ করে।
আরব আলেমদের সম্পর্কে তারা মিথ্যা অপবাদ দেয় যে, “আরব সরকারের সমস্ত খারাপ
কাজকে আরব আলেমরা সমর্থন করে, তাদের পক্ষে ফতোয়া দেয়।”
এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং আলেমদের নামে জঘন্য অপবাদ।
সৌদি আরবে দেশ পরিচালনার গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে
“আলে-সউদ” অর্থাৎ ইমাম মুহাম্মদ বিন
সউদ রহি’মাহুল্লাহর বংশধরেরা অধিষ্ঠিত হন। এই শাসক
ব্যক্তিদের মাঝে অনেকে খুব ভালো মুসলমান, আবার অনেকে তেমন ভালো মুসলমান না।
পক্ষান্তরে, সৌদি আরবে যে কোন ব্যক্তির জন্য পড়াশোনা করে বড় আলেম হওয়ার সুযোগ
রয়েছে। আর যিনি আলেম মানুষের মাঝে তিনি সম্মানিত এবং শ্রেষ্ঠ। আপনি জেনে অবাক হবেন
যে, ভারতের একজন হিন্দু ব্রাহ্মণ ২৬ বছর বয়সে ইসলাম কবুল করে পরবর্তীতে মদীনা
ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করে বড় আলেম হয়েছিলেন, নিজে সেখানকার শিক্ষক হিসবে
দীর্ঘদিন সারা বিশ্বের ছাত্রদেরকে পড়িয়েছেন। সেই শায়খ যিয়াউর রহমান আযমী রহি’মাহুল্লাহ এই কিছুদিন আগে
ইন্তেকাল করেছেন। সৌদি আরবের যারা আলেম, তাঁরা সমাজে একজন আলেমের যেই ভূমিকা থাকা
উচিত, আলহা’মদুলিল্লাহ তা তাঁরা পালন করছেন। সৌদি সরকারের
মধ্যে কোন ব্যক্তির খারাপ কাজের জন্য কেউ যদি আলেমদের দোষারোপ করে, তাহলে সেই
ব্যক্তি আলেমদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিলো। কেননা সৌদি সরকার যদি কোন অন্যায় কাজ করে,
তাহলে সেখানকার আলেমরা সে বিষয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদেরকে বুঝানোর এবং তাদেরকে
খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটা নিয়ে সৌদি আলেমরা মসজিদের
মিম্বারে বা মিডিয়াতে এসে শাসকদের গালি-গালাজ বা দোষারোপ করেন না। তবে জনগণকে
খারাপ কাজ থেকে সতর্ক করেন। এর কারণ হচ্ছে, শাসকেরাও মানুষ, তাদেরওপ ভুল-ত্রুটি
হতে পারে। আপনি যদি শাসকদেরকে সংশোধন করতে চান তাহলে করণীয় হচ্ছে, তাকে
ব্যক্তিগতভাবে বুঝানোর চেষ্টা করা। কিন্তু আপনি যদি শাসকদেরকে সংশোধন করার চেষ্টা
না করে লোকদেরকে শাসকদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলার চেষ্টা করেন, এতে সমাজে
বিশৃংখলা, নৈরাজ্য এবং অনৈক্য বৃদ্ধি পাবে। আলহা’মদুলিল্লাহ, সৌদি আলেমরা
শাসকদেরকে উপদেশ দিয়েছেন এবং এতে খারাপ কাজ বন্ধ হয়েছে এমন অনেক উদাহরণ আছে।
তবে সৌদি আরব সরকার যে সব সময় আলেমদের উপদেশ
মেনে নেন, তা নয়। কিন্তু শাসকদেরকে যদি আলেমরা ১০টা উপদেশ দেয় আর তার মাঝে ৫টা
উপদেশ তারা মেনে নেয়, এতেও কিন্তু সমাজ সংস্কার হলো। পক্ষান্তরে শাসকদেরকে উপদেশ
না দিয়ে জনগণকে উত্তেজিত করে তুললে শাসকেরা সংশোধন হবে না। উল্টা জনগণ বিদ্রোহ করে
বসলে শাসকের মুসলিমদেরকে হত্যা করবে। যেমন সম্প্রতি বাংলাদেশে হেফাযতের রাস্তায়
নেমে মোদী বিরোধী আন্দোলনে নেমে ২০ জনের মতো মুসলমান মারা গেলো, কিন্তু শাসকদের
কোন হেদায়েত হলো না। সৌদি আলেমরা এই ব্যাপারগুলো খুব ভালো করেই জানেন এবং বুঝেন
বলেই তারা সবসময় চেষ্টা করেন যতদূর সম্ভব শাসকদেরকে বুঝানোর জন্য। যদি শাসকেরা
বুঝতে না চায়, তাহলে সৌদি আলেমরা ধৈর্য ধারণ করেন এবং উপদেশ দেওয়া চালিয়ে যান।
পর্দার আড়ালে সৌদি আলেমদের এই খেদমত বুঝতে না
পেরে অল্পবয়সী যুবকেরা সৌদি আলেমদেরকে গালি দেয় আর বলে, “সৌদি আলেমরা সরকারের
অন্যায়ের কোন প্রতিবাদ করে না।” অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, সৌদি
আলেমরা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেন; কিন্তু সেটা ইসলামী উপায়ে। ইখোয়ানী বা খারেজীদের
মতো মসজিদের মিম্বারে উঠে শাসকদেরকে গালি-গালাজ করে সমাজে বিশৃংখলা এবং ফেতনা
সৃষ্টি করে নয়।
___________________________________
সৌদি আরব নিয়ে প্রশ্নের উত্তর (পর্ব-১)
অনেক
ভাই বিভিন্ন সময় আমাকে সৌদি আরব সম্পর্কে প্রশ্ন করেন। একসময় সৌদি আরবকে নিয়ে
লিখালিখি করলেও বর্তমানে সৌদি আরব, তুরস্ক বা অন্য কোন দেশ সম্পর্কে লিখার খুব
একটা আগ্রহ বা প্রয়োজন অনুভব করি না। কারণ,
(১)
আল্লাহর রহমতে দ্বীন সম্পর্কে অর্জিত আমার জ্ঞানের আলোকে এই পেইজে গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে মানুষের জন্য উপদেশমূলক কিছু কথা লিখার চেষ্টা করি। সৌদি আরব, তুরস্ক বা
অন্য কোন দেশ সম্পর্কে কোন ব্যক্তিকে কবরে বা হাশরে প্রশ্ন করা হবে না। তাহলে এই
বিষয়টাকে এতো গুরুত্ব দেওয়ার কোন কারণ আছে?
(২)
মানুষের ঈমান আক্বীদাহর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে লেখার মতো সময় বা সুযোগ হয় না,
কোটি কোটি মানুষ শিরকে লিপ্ত, কাফের বা নাস্তিক হয়ে হচ্ছে, সেকুলার মতবাদ গ্রহণ
করছে, সে সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করার মতো যথেষ্ঠ সময় হয় না। দ্বীনের এমন বহু
মৌলিক এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি বাদ দিয়ে যেই ব্যাপারে মানুষকে কবরে বা হাশরে কোন
প্রশ্ন করা হবে না, সেই ব্যাপার নিয়ে মানুষের এতো উদগ্রীব হওয়ার কোন যুক্তি অন্তত
আমি দেখতে পাই না।
তারপরেও
রমাদ্বান মাসে একভাইকে সৌদি আরব নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিবো বলে কথা দেওয়ার কারণে আজ
এ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি ইন শা আল্লাহুল আ’যীয।
আল্লাহ হচ্ছেন তাওফীক্বদাতা।
(এক)
সৌদি
আরব রাষ্ট্রের নামকরণ এবং সূচনাঃ
পূর্বে
মক্কা ও মদীনা এবং তৎসংলগ্ন এলাকাকে হজ্জের সাথে সম্পৃক্ত করে ‘হিজাজ’ বলে ডাকা
হতো। ‘আলে-সাউদ’ বা সাউদ-এর বংশধর এই অঞ্চলে ক্ষমতায়
আসার পর তারা তাঁদের পিতামহের নামের সাথে মিলিয়ে এই দেশের নাম রাখে ‘সাউদী
আরাবিয়া’ বা সৌদি আরব।
সৌদি
আরব রাষ্ট্রের সূচনার ইতিহাসের সাথে শায়খুল ইসলাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাব রহি’মাহুল্লাহর
দাওয়াতের ঔতপ্রোত ভূমিকা রয়েছে। তৎকালীন সময়ে মুহাম্মদ বিন সাউদ (সাউদের পুত্র
মুহাম্মদ) ‘দিরইয়া’ অঞ্চলের একজন আমির বা শাসক ছিলেন। তিনি
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাব রহি’মাহুল্লাহর আরব ভূখন্ডে কবর মাযার পূজার
শিরকের বিরুদ্ধে তাওহীদের দাওয়াতকে সাহায্য করতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং তাঁকে তাঁর
অধীনস্থ প্রদেশে থাকার জন্য আশ্রয় দেন। সেই সময় মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাব এবং
মুহাম্মদ বিন সাউদ এই দুইজন একটি ঐতিহাসিক চুক্তিতে আবদ্ধ হন। চুক্তি অনুযায়ী
তাঁদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রে দেশ শাসন পরিচালনার কাজে মুহাম্মদ বিন সাউদের বংশের
লোকেরা নেতৃত্ব দিবে। পক্ষান্তরে দ্বীন, দ্বীনের দাওয়াত, হজ্জ ও উমরার বিষয়াদিতে
নেতৃত্ব দিবে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাবের বংশধর। তবে ক্ষমতায় যেই থাকুক, রাষ্ট্র
পরিচালিত হবে ক্বুরআন ও হাদীস অনুযায়ী, তাওহীদ ও সুন্নাহর অনুসরণে। সেই চুক্তি আজ
পর্যন্ত বলবৎ আছে এবং সে মোতাবেক আধুনিক সৌদি আরব রাষ্ট্রে এই দুইটি বংশ ইসলামের
ব্যাপারে একে অন্যকে সাহায্য এবং আনুগত্য করে যাচ্ছে।
সৌদি
আরবের সরকার প্রধান বা ‘বাদশাহ’ নির্বাচিত হন আলে-সাউদ থেকে। আর প্রধান
মুফতি, ধর্ম মন্ত্রী, দ্বীনের দাওয়াত, হজ্জ উমরার মতো বিষয়াদিতে নেতৃত্ব দেন
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাবের বংশধর। আপনারা সৌদি আরবের যেই সমস্ত শায়খদের নামের
শেষে ‘আলে-শায়খ’ কথাটা যুক্ত দেখবেন, তারা হচ্ছেন
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাবের বংশধর। যেমন বর্তমান প্রধান মুফতি শায়খ আব্দুল আজিজ
বিন আব্দুল্লাহ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ।
যাই
হোক, সেই সময় থেকে সৌদি রাষ্ট্রে আলে-সাউদের ক্ষমতার বেশ কয়েকবার উত্থান পতন
হয়েছিলো। সর্বশেষ ১৯৩২ সালে আব্দুল আজিজ রহি’মাহুল্লাহ
আলে-সাউদের ক্ষমতাকে সুসংহত করেন এবং আজ পর্যন্ত তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছেন।
শায়খুল
ইসলাম মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাব রহি’মাহুল্লাহর দাওয়াত সম্পর্কে জানার জন্য
এই পোস্ট দেখুন -
“ওহাবী কারা?”
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=4769655939733782&id=125167817515974
সৌদি
আরব রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় জানার জন্য এই পোস্ট দেখুন -
“এক নজরে সৌদি আরব রাষ্ট্র”
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10213199030950447&id=1235881333
(দুই)
সৌদি
আরব একটি ইসলামী রাষ্ট্রঃ
আল্লাহর
রহমতে বর্তমানে যুগে মুসলিম দেশসমূহের মাঝে
সবচেয়ে উত্তম ‘ইসলামী রাষ্ট্র’ হচ্ছে সৌদি আরব। ইসলামী রাষ্ট্র বলতে
বুঝায়, যেই দেশের আইন, শাসন এবং বিচার বিভাগ ক্বুরআন ও হাদীস দ্বারা পরিচালিত হয়,
যেই দেশের সরকার মুসলিম শাসক দ্বারা পরিচালিত হয়।
বাদশাহ
আব্দুল আজিজ রহি’মাহুল্লাহকে যখন জাতিসংঘে সৌদি আরব রাষ্ট্রের সংবিধান জমা
দেওয়ার আহবান জানানো হয়েছিলো, তখন তিনি জাতিসংঘের অধিবেশনে একটি ক্বুরআন শরীফ
দেখিয়ে বলেন, “এই ক্বুরআন হচ্ছে আমাদের সংবিধান।” এই
কিছুদিন পূর্বেও বাদশাহ আব্দুল আজিজের নাতী এবং সৌদি আরবের বর্তমান ক্রাউন প্রিন্স
(অর্থাৎ সৌদি আরবের পরবর্তী বাদশাহ) মুহাম্মদ বিন সালমান এক ইন্টারভিউয়ে সেই একই
কথা দৃঢ়ভাবে পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, “আল-ক্বুরআন আমাদের সংবিধান ছিলো, আছে
এবং থাকবে (ইন শা আল্লাহ)।”
সৌদি
আরব একটি ইসলামী রাষ্ট্র কারণ,
(১)
সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কুফুরী, শিরক, যাদু, মূর্তিপূজা এবং নাস্তিকতা দমন করা হয়
এবং জনগণকে ইসলাম, ঈমান এবং ক্বুরআন শিক্ষা দেওয়া হয়।
(২)
সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয়ভাবে নামায প্রতিষ্ঠা করা হয়। আযানের পরে সেখানে দোকান বা অফিস
খোলা রাখা নিষিদ্ধ। কোন ব্যক্তি যদি নামাযের সময় ছুটি না দিয়ে তার অধীনস্থ
কর্মীদেরকে কাজ করতে বাধ্য করে তাহলে তাকে জরিমানা গুনতে হয় অথবা প্রয়োজনে তার
দোকান/অফিস স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
(৩)
সৌদি আরবে কাজী, বিচারক বা মুফতি হন বিভিন্ন নামকরা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
ক্বুরআন ও হাদীসের উপরে উচ্চ শিক্ষিত শায়খগণ, যারা ইসলামী শরীয়ত অনুযায়ী ‘রায়’ বা ‘ফতোয়া’ দেন।
সেখানে নিজের মনমতো, মানব রচিত আইন বা মাযহাবের অন্ধ অনুসরণ করে ফয়সালা দেওয়া হয়
না।
(৪)
সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ করার জন্য আলেম,
দ্বাইয়ী এবং ধর্মীয় পুলিশ নিযুক্ত রয়েছেন, যারা জন-সাধারণকে দ্বীন মানতে উৎসাহিত
করেন এবং খারাপ কাজে বাঁধা দেন।
(৫)
সৌদি আরব সরকার শুধুমাত্র তাদের নিজের দেশেই নয়, বরং সারা বিশ্বে ইসলামের জ্ঞান
পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ ক্বুরআনের কপি এবং সুন্নী আক্বীদাহ সম্বলিত
বই পুস্তক সম্পূর্ণ ফ্রী হাদীয়া হিসেবে বিতরণ করে। মদীনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি,
কিং সউদ ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সারা বিশ্ব থেকে মেধাবী
ছাত্রদেরকে আকর্ষণীয় স্কলারশিপ দিয়ে নিয়ে এসে ক্বুরআন ও হাদীস ভিত্তিক দ্বীনের
বিশুদ্ধ জ্ঞান দেওয়া হয়। প্রতি বছর অসংখ্য শায়খ এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে
নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন, দেশের জনগণকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য। উদাহরণ
হিসেবে আমাদের দেশে ড. আব্দুল্লাহ
জাহাংগীর রহি’মাহুল্লাহ, ড. আবু বকর জাকারিয়া হা’ফিজাহুল্লাহ বা এমন ব্যক্তিদেরকে চেনে
না এবং তাঁদের দ্বারা উপকৃত হয়নি এমন কে আছে?
সৌদি
আরব রাষ্ট্রের এমন আরো অসংখ্য কল্যাণমূলক কাজ রয়েছে, যা লিপিবদ্ধ করে শেষ করা
কঠিন। এ সম্পর্কে শায়খ আব্দুর রাক্বীব বুখারী হা’ফিজাহুল্লাহর
এই পোস্ট দেখুন -
“এমন একটি দেশ আর কোথাও আছে কি?”
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259/1448261358539940/?type=3
দ্বীন
সম্পর্কে কোন জ্ঞান নেই এমন লোক যারা দাবী করে সৌদি আরব কোন ইসলামী রাষ্ট্র নয়
তাদের সন্দেহের জবাব -
“সৌদি আরব কি ইসলামী রাষ্ট্র নয়?”
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=10210595315379185&id=1235881333
(তিন)
সৌদি
আরব কি ‘পারফেক্ট’ বা আমাদের জন্য আদর্শ?
যখন
আমরা বলি “সৌদি আরব একটি মুসলিম রাষ্ট্র” - তখন এই
কথার উদ্দেশ্য এটা নয় যে, সৌদি আরবের সরকার বা বাদশাহ একেবারে ‘ফেরেশতা’ বা খুলাফায়ে
রাশেদীনের মতো তারা আমাদের জন্য আদর্শ।
সৌদি
আরব একটি মুসলিম রাষ্ট্র; কিন্তু তারা খুলাফায়ে রাশেদীনের মতো আমাদের জন্য আদর্শ
নয়। তাদের অনেক ভালো এবং কল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি তাঁদের মাঝে ভুল এবং যুলুম বা
অন্যায় কাজ রয়েছে। তবে তাদের ভুল এবং অন্যায়ের পরেও একটি দেশ ‘ইসলামী
রাষ্ট্র’ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার জন্য যে গুণাবলী বিদ্যমান থাকা
দরকার, সেটা তাদের মাঝে আছে বিধায় আমরা তাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি
দেই। ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলিম শাসক হিসেবে তাদের যেই মর্যাদা রয়েছে, আমরা সেটা
স্বীকার করি।
আমাদের
উপর মুসলিম শাসকের কি অধিকার রয়েছে, তা জানার জন্য এই পোস্ট দেখুন -
“মুসলিম আমীর বা শাসকদের অধিকার”
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2426353657397367&id=125167817515974
সৌদি
আরব সরকার বা বাদশাহ যদি কোন ভুল বা অন্যায় করে, সে ব্যাপারে আমরা কখনোই তাদেরকে
সমর্থন করি না। উদাহরণ স্বরূপঃ
(১)
বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবের বাসা-বাড়িতে ‘খাদেম’ হিসেবে
কাজ করার জন্য মহিলা কর্মী নেওয়া হয়েছে। যদিও সৌদি আরব নিয়ম করেছে, কোন মহিলা
কর্মী নেওয়া হলে তার সাথে অবশ্যই সেই মহিলার ‘মাহরাম
পুরুষ আত্মীয়’ থাকতে হবে। কিন্তু দালালদের দৌরাত্ম বা কর্তৃপক্ষের
শিথিলতার কারণে বাস্তবে অনেক মহিলা একা একা সৌদি আরবের বাসা বাড়িতে কাজ করে অনেক
নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। অনেকের সাথে যৌন দাসীর মতো আচরণ করা হয়েছে, এমনকি খুন
হওয়ার মতো নৃশংসা ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে সৌদি আরব এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের সরকারের
গাফিলতি এবং উদাসীনতার সুযোগে অনেক জালেমরা বাংলাদেশি নারীদের সাথে যুলুম এবং
অপকর্ম সংঘটিত করতে পেরেছে।
(২)
সৌদি আরবে এমনকি খোদ মক্কা ও মদীনার হারামের সিগারেট কেনা-বেচা হচ্ছে। সাধারণ
লোকেরা তো সিগারেট খাচ্ছে, এমনকি অনেক হাজী সাহেবরাও সিগারেট কিনে খাচ্ছে। একটা
আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রে এটা কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
(৩)
সম্প্রতি সৌদি আরবে কাফের গায়ক/গায়িকা এনে গানের কনসার্ট করা হচ্ছে। এমনকি সৌদি
আরবের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এইগুলো বন্ধ করার উদ্যোগ না নিয়ে উল্টা গান-বাজনা দিয়ে
তারা হারাম উপার্জন করে খাচ্ছে।
নিঃসন্দেহে
এইগুলো ‘যুলুম’ এবং জনগণের দ্বীনের জন্য ক্ষতিকর। সৌদি
আরবের ভালো কাজের জন্য যেমন আমরা তাকে ভালোবাসি, পাশাপাশি তাদের এমন খারাপ
কাজগুলোকে আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। তবে ইখোয়ানুল মুসলিমিনি, জামাতে ইসলামী,
আল-কায়েদাহ, আইসিসের অনুসারী পথভ্রষ্ট লোকদের মতো আমরা সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে
অপপ্রচার করে বেড়াই না। আলহা’মদুলিল্লাহ, সৌদি আরবের সরকারের সংশোধন
এবং হেদায়েতের জন্য সেই দেশের আলেম এবং জনগণ কাজ করছে। আর সরকার যদি আলেমদের উপদেশ
না মেনে খারাপ কাজ অব্যহত রাখে, তবুও আমরা সেই ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করি। কারণ
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলিম শাসক অন্যায়
করলে তাকে উপদেশ দেওয়া এবং তার ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করার জন্য আমাদেরকে উপদেশ
দিয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
(চার)
সৌদি
আরব বিদ্বেষী মিডিয়ার অপপ্রচার থেকে সাবধান
ইতিমধ্যে
আমরা উল্লেখ করেছি, সৌদি আরব একটি মুসলিম রাষ্ট্র কিন্তু তারা পারফেক্ট নয়। অর্থাৎ
তাদের মাঝে ছোট এবং বড় ভুল-ত্রুটি রয়েছে। এর পাশাপাশি ইসলামের বিশুদ্ধ জ্ঞান
প্রচার করার কারণে ইসলামের শত্রু যেমন ইহুদী-খ্রীস্টান, সেকুলার কিংবা
নাস্তিক-মুর্তাদ লোকেরা আর এমন লোকদের পাশাপাশি পথভ্রষ্ট মুসলমান যেমন শীয়া,
খারেজী, জংগী, ইখোয়ানুল মুসলিমিন, জামাতে ইসলামীর লোকেরা প্রায়শই এই সুন্নী
রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ ও অপপ্রচার করে তাদের সম্পর্কে মুসলমানদেরকে
বিদ্বেষী বানানোর ষড়যন্ত্র করে। এমন কিছু উদাহরণ দেখুন -
(১)
“সৌদি আরব কি আলেম-উলামাদেরকে
গ্রেফতার করে?”
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=2540811599284905&id=125167817515974
(২)
“সৌদি
আরবের বিরুদ্ধে কাতার ভিত্তিক ইখোয়ানুল মুসলিমিনের প্রোপাগান্ডা মিডিয়া আল-জাজিরার মিথ্যাচার”
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1991647714201299&id=125167817515974
(৩)
“সৌদি
আরবের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জামাতে ইসলামী মুখপাত্র নয়া
দিগন্তের মিথ্যাচার”
https://m.facebook.com/.../a.1309283.../2089168351115901/...
(৪)
“সৌদি আরব ইয়েমেনের ‘হুসি’ শিয়াদের বিরুদ্ধে ‘জিহাদ’ ঘোষণা করছে, তাহলে তারা ইতিঃপূর্বে মিশরের
মুরসিকে সাহায্য করেনি কেনো? কেনো তারা এতোদিনেও
ফিলিস্থিনিদের উপর এতো নির্যাতনকারী ‘জল্লাদ’ ইসরায়েলকে আক্রমন করেনি?”
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=1158374840861928&id=125167817515974
(চলবে
ইন শা আল্লাহ)
___________________________________
আহলে সুন্নাহ এবং খারেজীদের
মাঝে পার্থক্য
(১) যারা মানব রচিত বিধানকে
আল্লাহর আইনের সমান মনে করে
অথবা,
আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে নিজে নিজে আইন রচনা করে
তারা কাফির।
এ ব্যাপারে সবাই একমত।
(২) যেই সমস্ত মুসলমান আল্লাহর
আইন বিশ্বাস করে এবং শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকার করে, কিন্তু
দুনিয়াবি কোন স্বার্থে, স্বজনপ্রীতির কারণে আল্লাহর আইন
দ্বারা বিচার করে না তারা ফাসেক্ব এবং জালেম। এটা কুফুরী কিন্তু ছোট কুফুরী,
ঈমান ভংগকারী বড় কুফুরী নয়। সুতরাং তারা পাপী মুসলমান, কাফের নয়।
এই ব্যাপারে খারেজীদের সাথে আহলে সুন্নাহর আকাশ-পাতাল
পার্থক্য।
খারেজীরা এমন জালেম শাসক বা বিচারকদেরকে কাফের
ঘোষণা করে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে হত্যা এবং রক্তপাত করে।
পক্ষান্তরে আহলে সুন্নাহ এমন ফাসেক এবং জালেম
শাসক যতদিন নামায কায়েম রাখবে ততদিন তাদের ব্যাপারে ধৈর্য ধারণ করে, তাদেরকে
সংশোধনের জন্য চেষ্টা করে, তাদেরকে উপদেশ দেয়, তাদের হেদায়েতের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করে। কল্যাণের কাজে তাদের আনুগত্য
প্রদর্শন করে, কিন্তু তাদের খারাপ কাজ থেকে দূরে থাকে।
বিঃদ্রঃ
দুই নাম্বার পয়েন্টে আহলে সুন্নাহর যে নীতিমালা
তার বিস্তারিত দলীল জানার জন্য “সহীহ মুসলিম” গ্রন্থের “কিতাবুল ইমারাহ” (প্রশাসন এবং নেতৃত্ব)
অধ্যায়ের হাদীসগুলো পড়ুন।
___________________________________
আবু ত্বোয়া হা
মুহাম্মদ আদনান (পর্ব-১)
(এক)
ভূমিকাঃ
কোন ইসলামিক বক্তার লেকচার শোনা বা কোন ইসলামিক
লেখকের লেখা পড়া নিছক কোন বিনোদনের উৎস নয়। বরং সঠিক নিয়তে এই কাজে অনেক বড় সওয়াব
রয়েছে এবং এটা একটা ‘ইবাদত’। কিন্তু বর্তমান যুগে অনেক
মুসলিম ইউটিউবে ভাইরাল বক্তাদের ভিডিও দেখা বা ফেইসবুকে সেলেব্রিটি লেখকদের পোস্ট
পড়াকে ‘টাইম পাস’ বা বিনোদনের একটা মাধ্যম
হিসেবে গ্রহণ করেছে। একারণে ইলম অর্জনের যে আদবসমূহ রয়েছে, সেই ব্যাপারে তারা
মোটেও ভ্রুক্ষেপ করে না।
ইলম অর্জনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা আদব বা
নীতিমালা হচ্ছে, আপনি কার কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করছেন, সেই ব্যক্তি কেমন (ভালো নাকি
মন্দ?) সেই ব্যাপারে যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হওয়া। এ ব্যাপারে তাবেয়ী বিদ্বান
ইমাম মুহাম্মদ ইবনে সিরীন রহি’মাহুল্লাহ বলেন,
إِنَّ هَذَا الْعِلْمَ دِينٌ فَانْظُرُوا عَمَّنْ تَأْخُذُونَ دِينَكُمْ
“নিশ্চয়ই এই ইলম; এটাই হচ্ছে তোমার দ্বীন। সুতরাং তুমি কার
কাছ থেকে তোমরা দ্বীন গ্রহণ করছো তা যাচাই করে নিও।” সহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দামা।
অর্থাৎ
সত্যবাদী, দ্বীনদার এবং নির্ভরযোগ্য জ্ঞানী ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে
দ্বীন শিক্ষা করা জায়েজ নয়।
(দুই)
বর্তমান
যুগের বাস্তবতাঃ
বর্তমান
যুগে অধিকাংশ মানুষ দ্বীন শিখে টেলিভিশন দেখে, ফেইসবুকে লেখা পড়ে, ইউটিউবে
বক্তাদের ওয়াজ শুনে। কিন্তু সরাসরি আহলে সুন্নাহর আলেম কিংবা দ্বাইয়ীদের কথা শুনে
অথবা তাদের লেখা বই-পুস্তক পড়ে দ্বীন শেখার মতো নিষ্ঠাবান মানুষ খুবই কম। এই
সুযোগে অজ্ঞ-মূর্খ, পথভ্রষ্ট বা বিদআ’তী লোকেরা মুসলিমদেরকে ইসলাম শিখানোর নামে মনভুলানো,
আবেগময়ী বা অলংকারপূর্ণ কথা-বার্তা বলে বিভিন্ন মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমগুলোতে নিজেদেরকে ‘আলেম’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছে। ইলম থেকে বঞ্চিত সরলমনা অনেক মুসলিম
হক্ক আর বাতিলের মাঝে পার্থক্য বুঝতে না পেরে এমন ব্যাক্তিদের কথা শুনে বিভ্রান্ত
হচ্ছে। সম্প্রতি (জুন, ২০২১) বাংলাদেশে গুম হওয়ার কারণে আলোচিত কথিত ‘ইসলামি বক্তা’ আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান হচ্ছে এমনই একটা জ্বলন্ত
উদাহরণ।
(তিন)
কে এই আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান?
আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান প্রথম জীবনে “আহলে হাদীস আন্দোলন” নামক একটি দাওয়াতী সংগঠনের
সাথে যুক্ত ছিলো। পরবর্তীতে সে সেই সংগঠন থেকে বেরিয়ে আসে। ২০১৮ সালে “আলোকিত জ্ঞানী” নামক একটি টিভি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ
করে মিডিয়াতে স্থান করে নেয়। এর মাঝে ইমরান নজর হোসেন, আসেম উমর, কাজী মুহাম্মদ
ইব্রাহীম বা কিয়ামতের লক্ষণ নিয়ে পথভ্রষ্ট এমন অন্যান্য বক্তা ও লেখকদের মতাদর্শে
দীক্ষা নেয়। নতুন মতবাদে দীক্ষা নিয়ে আদনান দাজ্জাল, ইমাম মাহদী, কিয়ামতের লক্ষণ,
ইসরায়েল, ইয়াহুদী খ্রীস্টান সভ্যতা, আখেরী যামানার মতো বিষয় নিয়ে মনগড়া ওয়াজ
লেকচার দিয়ে বর্তমানে ফেইবুক আর ইউটিউবে মুসলিমদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন
করেছে।
আমাদের পর্যালোচনাঃ
আহলে হাদীস আন্দোলন একটি দাওয়াতী প্লাটফর্ম বা
সংগঠন। কোন ব্যক্তি আহলে হাদীস মাদ্রাসায় ভর্তি হলে কিংবা আহলে হাদীসদের কোন
সংগঠনে যুক্ত হওয়ার মানেই সে প্রকৃত আহলে সুন্নাহর অনুসারী, এমন কোন গ্যারান্টি
নেই। বরং নিজেকে ‘আহলে হাদীস’ বা ‘সালাফী’ পরিচয় দানকারী অনেক লোক
আসলে নিতান্ত অজ্ঞ-মূর্খ কিংবা অল্প শিক্ষিত লোকদেরকে “শায়খ” বানিয়ে তাদেরকে অন্ধভাবে
অনুসরণ করে, ক্বুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে, দ্বীন সম্পর্কে মনগড়া ফতোয়া দেয়,
আহলে সুন্নাহর সম্মানিত আলেম ও দ্বাইয়ীদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে, সাধারণ
মুসলিমদেরকে অন্যায়ভাবে বিদআ’তী তকমা দেয়, সৌদি আরবের
পক্ষ নিয়ে বাড়াবড়ি করে। আলহা’মদুলিল্লাহ, আমাদের আলেমরা
অনেক আগে থেকেই এ ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক করে আসছেন। কোন ব্যক্তি নিজেকে সালাফী
পরিচয় দিলেই সে জান্নাতে চলে, বিষয়টা মোটেও এমন নয়। বরং একজন ব্যক্তির সফলতা
নির্ভর করে, সে কতটুকু দ্বীনের অনুসরণ করে তার উপরে।
যাই হোক, আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান যদিও একসময়
আহলে হাদীসদের একটি সংগঠনের সাথে যুক্ত ছিলো, কিন্তু সে এই সংগঠন থেকে ‘সালাফে সালেহীনদের মানহাজ’ শিখতে পারেনি। বরং সে এই
সংগঠন থেকে বের হয়ে চরমপন্থী এবং জংগীদের ‘জাহেলী মতবাদ’ গ্রহণ করেছে।
(চার)
আমি সাধারণত মানুষ যেই বিষয়ে বেশি হৈচৈ করে,
এমন হট টপিক নিয়ে লিখতে পছন্দ করি না। কারণ মানুষ যেই বিষয় নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকে,
অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেই বিষয়ে জানা সবার জন্য জরুরী কোন কিছু না। বরং মানুষ
অপ্রয়োজনীয় বা বাজে বিষয় নিয়ে সময় নষ্ট করতে বেশি ভালোবাসে। কিন্তু ইনবক্সে আমাদের
কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন, কেনো আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনানের লেকচার শোনা যাবে
না? তাকে কেনো পথভ্রষ্ট বলা হচ্ছে?
এই প্রশ্নের উত্তরে সংক্ষেপে কিছু কথা আমি
আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফিক্ব দান করুন (আমিন)।
(১) তাওহীদ এবং সুন্নাহকে গুরুত্ব না দেওয়াঃ
যে কোন আলেম, দ্বাইয়ী, ইসলামিক বক্তা বা লেখকের
মূল লক্ষ্য হবে, লোকদেরকে দ্বীনের দিকে দাওয়াত দেওয়া। দ্বীন হচ্ছে মানুষকে ‘তাওহীদ’ শিক্ষা দেওয়া, শির্ক থেকে
সতর্ক করা, সুন্নাহর আলোকে নেক আমলের রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া, শির্ক, বিদআ’ত ও পাপাচার থেকে লোকদেরকে সতর্ক
করা। এই কাজ করতে গেলে আপনি না চাইলেও যেই বিষয়টি আপনার সামনে চলে আসবে সেটা হচ্ছে,
বিদআ’তী দল এবং ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী লোকদের ব্যাপারে উম্মতকে
সতর্ক করা। কেননা, অধিকাংশ মানুষ শির্ক এবং বিদআ’তে লিপ্ত হয় পথভ্রষ্ট, বিদআ’তী বা ভন্ড আলেমদের কথা দ্বারা।
আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান দেওবন্দীদের চরমোনাই,
হাটহাজারির মতো বিভিন্ন পীরদের শির্ক ও বিদাতের ব্যাপারে লোকদেরকে সতর্ক করে না।
এমনকি আটরশি, মাইজভান্ডারীর মতো কবর পূজারী, পীর পূজারী বেরেলুবীদের ব্যাপারেও সে
চুপ।
বরং এই সমস্ত বিদআ’তী দলের ব্যাপারে আবু ত্বোয়া
হা মুহাম্মদ আদনানের বক্তব্য হচ্ছে, “আপনি পার্সোনাল লাইফে যে কোন
দলকে (চরমোনাই, আটরশি, হানাফী বা আহলে হাদিসকে) ভালোবাসতে পারেন, এটা আপনার
প্রাইভেট ব্যাপার, এটা নিয়ে আমার কোন দ্বিমত নাই।”
আমাদের মন্তব্যঃ
মানুষ কত বড় অজ্ঞ এবং পথভ্রষ্ট হলে এমন কথা বলতে
পারে?
এই উম্মতের লাঞ্চনা, বালা-মুসীবতের প্রধান কারণ
হচ্ছে, এই উম্মতের লোকদের মাঝে পীর পূজা, কবর মাজার পূজার শির্ক এবং বিদআ’ত সমাজের প্রতিটা রন্ধ্রে
রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। মুসলিমরা যদি তাদের হারানো শক্তি ও সম্মান ফিরে পেতে চায়,
তাহলে সবার প্রথম করণীয় হচ্ছে, নিজেদেরকে শির্ক মুক্ত করে তাওহীদ ও সুন্নাহর
আলোকের জীবন গড়ে তোলা। অথচ কথিত ‘ইসলামী বক্তা’ আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ
আদনানের বক্তব্য হচ্ছে, আপনাদের যার ইচ্ছা দল করেন, শিরক বিদআ’ত করেন, এমনকি কেউ কবর মাজার
পূজার তরীকাতে ভর্তি হলেও এটা নাকি তার নিজস্ব ব্যাপার! এতে বুঝা যায়, এই লোক আসলে
উম্মতের সংশোধন চায় না। বরং তার উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভ্রান্ত মতবাদ দিয়ে লোকদের ব্রেইন
ওয়াশ করে তার দল ভারী করা।
(২) মুসলিম শাসকদেরকে কাফের বলে ঘোষণা করাঃ
আবু তোয়া হা আদনান মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত মুসলিম
দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদেরকে তাকফির করে বলেছে, “আমরা বলি, আহলে সাউদসহ যত
গলফ কান্ট্রি আছে, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, আবু ধাবি, লেবানন - এরা আমার উম্মতের কেউ
না।”
এমনকি বর্তমান বিশ্বে যেই দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে
ইসলাম অনুসরণ এবং বাস্তবায়নের ব্যাপারে সবচেয়ে উত্তম, সেই সৌদি আরবের
রাষ্ট্রপ্রধানকে সে ‘ইহুদীদের এজেন্ট’ বলে ঘোষণা করেছে।
আমাদের মন্তব্যঃ
লা হা’উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা
বিল্লাহ, এই চরমপন্থী জংগী এক নিঃশ্বাসে মধ্যপ্রাচ্যের ছয়টি মুসলিম দেশের সরকারকে
কাফের বলে ঘোষণা করেছে! অথচ ঢালাউভাবে মুসলিম দেশের শাসকদেরকে ‘কাফের’ বলে ঘোষণা করে বর্তমান যুগে
নিকৃষ্ট খারেজীদের মানহাজ।
(ক) খারেজীদের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “খারিজীরা হচ্ছে জাহান্নামের কুকুর।” ইবনু মাজাহ্ঃ ১৭২। সহীহ, শায়খ আলবানী
রহি'মাহুল্লাহ।
(খ) যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসককে কাফের বলে ঘোষণা
করে এমন ব্যক্তির ব্যাপারে ইমাম আল-বারবাহারি রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২৯
হিজরী) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সে মূলতঃ
(ক) খারেজীদের
মধ্যে একজন,
(খ) সে
মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো,
(গ) সে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের
বিরোধীতা করলো এবং
(ঘ) তার
মৃত্যু যেন ‘জাহেলী’ যুগের মৃত্যুর মতো।”
উৎসঃ
শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।
(গ) যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করার জন্য আহবান জানায়, এমন ব্যক্তির ব্যাপারে সৌদি আরবের বর্তমান ‘প্রধান মুফতি’ এবং জীবিত আলেমদের মাঝে
সবচেয়ে প্রবীণ এবং জ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম ফযীলাতুশ-শায়খ আব্দুল আজিজ বিন
আব্দুল্লাহ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন,
“যে ব্যক্তি (কোন মুসলিম)
ইমাম (অর্থাৎ শাসকের) কথা শুনতে ও মানতে নিষেধ করে, তার ব্যাপারে এই সন্দেহ করো
যে, সেই ব্যক্তি একজন ‘মুনাফেক’। তার ব্যাপারে এই ধারণা
রাখো যে, সেই ব্যক্তি একজন ‘ফাযের’ (নিকৃষ্ট পাপাচারী
ব্যক্তি)। সেই ব্যক্তির ব্যাপারে এই ধারণা রাখো যে, সে কোন চুক্তি রক্ষা করে না,
তার দ্বীন বলতে কিছু নাই, সে কোন আমানত রক্ষা করে না। এর কারণ হচ্ছে, (মুসলিম
শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ) দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য, রক্তপাত ও খুন-খারাপি,
মানুষের সম্পদ ও সম্মান লুন্ঠনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে নিয়ে আসে, আমরা আল্লাহর
কাছে এমন বিষয় হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
আপনারা যারা ২০১১ সালে কথিত আরব বসন্তের নামে মিশর
এবং অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহে ইখোয়ানুল মুসলিমিন এবং আল-কায়েদার অনুসারীদের
বিদ্রোহের ফলে সেখানকার মুসলিমদের উপর অমানুষিক নির্যাতন, খুন, ধর্ষন, লুটপাট এবং
এর চূড়ান্ত পরিণতি কি হয়েছিলো তা জানেন, তারা সৌদি আরবের প্রধান মুফতির কথা খুব
ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারবেন।
যারা আবু তোয়া হার পক্ষ নিয়ে এতোদিন উকালতি
করেছেন, আপনারা ঠিক করে নিন, আপনারা এতোদিন না বুঝে আবু তোয়া হাকে সাপোর্ট করার
কারণে তোওবা করবেন? নাকি তার মতোই চরমপন্থী জংগীদের খাতায় নাম লেখাবেন?
(৩) হাদীসের অপব্যাখ্যাঃ
মুসলমানদের দ্বীন বলতে বুঝায় ক্বুরআন ও হাদীস
এবং সাহাবারা এই ক্বুরআন ও হাদীস কিভাবে বুঝেছেন সেই ফিক্বহ বা জ্ঞান। একজন ইসলামী
বক্তা বা আলেমের ন্যূনতম শর্ত হচ্ছে, সে ক্বুরআন জানবে এবং হাদীস দিয়ে ক্বুরআনের
ব্যাখ্যা জানবে। আর তার জন্য সে যে ওয়াজ করবে, অন্তত সে ব্যাপারে হাদীস সঠিকভাবে
তার জানা থাকতে হবে। হাদীস বর্ণনা করার বিষয়টি এমন নয় যে, নিজের ইচ্ছামতো যা ইচ্ছা
তা-ই বলে দিবে।
আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনানের প্রত্যেকটা
ওয়াজে সে হাদীসের মারাত্মক অপব্যাখ্যা করেছে। এমনকি নিজের মনগড়া কথা-বার্তা বলে
সেটাকে “রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন” বা “হাদীসে
আছে” বলে মিথ্যাচার করেছে। আবু তোয়া হার হাদীসের নামে জালিয়াতির
কিছু উদাহরণ তুলে ধরা হলো।
(ক) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান বলেছে, “আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে
ক্বিয়ামত শুরু হয়ে গেছে।”
আমাদের মন্তব্যঃ
ইসলামের ১৪০০ বছরের ইতিহাসে এমন কথা কোন একজন পাগলেও
বলেনি। আমি ইউটিউবে সার্চ করে দেখলাম, আজ থেকে প্রায় দুই বছর আগে আরেকজন পথভ্রষ্ট
বক্তা কাযী মুহাম্মদ ইবরাহীম প্রথম এই কথা বলেছিলো। তার মানে হচ্ছে, আবু তোয়া হা
কাযী মুহাম্মদ ইবরাহীমকে ফলো করে এখন পাগলের মতো প্রলাপ বকা আরম্ভ করেছে।
(খ) আমেরিকা প্রসংগে আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ
আদনান বলেছে, “হাদীসে এসেছে, এই দেশটা (আমেরিকা) এমনভাবে
ধ্বংস হয়ে যাবে যে, মানুষ এর নামও মনে রাখবে না যে, এই নামে কোন দেশ ছিলো।”
আমাদের মন্তব্যঃ
সম্পূর্ণ মনগড়া কথাকে হাদীস নামে চালিয়ে
দিয়েছে। এমন কোন হাদীস কিয়ামত পর্যন্ত দেখাতে পারবে না।
(গ) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান বলেছে, “হাদীসে এসেছে, দাজ্জালের
সাথে উলংগ মহিলারা থাকবে।”
আমাদের মন্তব্যঃ
আবু ত্বোয়া হা এখানে ‘উলংগ’ বলে নিজের কথাকে হাদীসের
মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছে।
(ঘ) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান বলেছে, “নবীজি বলেছিলেন, শেষ যামানায়
মেয়েদেরকে ধরা হবে, তাদের পেট কেটে ফেলা হবে।”
এই কথা বলে তারপরে সে বলে, “আপনারা আমার হাদীসের
ব্যাখ্যা করার অধিকার হরণ করেন কেনো? আমি একটু ব্যাখ্যা দিলাম, সেটা ভুল হলে
কিয়ামতের দিন আমার উপরে ব্লেইম আসবে, কিন্তু আপনারা আমাকে হাদীসের ব্যাখ্যা দিতে
না করেন কেনো? এটা হচ্ছে বর্তমানে মহিলাদের সিজার (অপারেশানে বাচ্চা জন্ম দেওয়া)।”
আমাদের মন্তব্যঃ
এমন অদ্ভুত কথা কোন কিতাবে খুঁজে পাওয়া যায় না।
আবু ত্বোয়া হা নিজের মনগড়া কথা বলে সেটাকে হাদীস নামে চালিয়ে দেয়। আবার সেই জাল
হাদীসের মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। প্রথমে জাল হাদীস বানায়, পড়ে নিজের মনমতো
অপব্যাখ্যা দাঁড় করায়। আবু তোয়া হাকে মনগড়া কথা বলে হাদীসের নামে চালিয়ে দিতে
অনেকেই তাঁকে সতর্ক করেছে। কিন্তু সে নিজে নিজে হাদিসের অপব্যখ্যা করার বন্ধ
করেনি। বরং উদ্ধত্য প্রকাশ করে বলেছে, আমি
ভুল করেলে কিয়ামতের দিন আমার ঘাড়ে দোষ আসবে। আপনি আমাকে নিষেধ করেন কেনো?
যে ব্যক্তি উপদেশ শুনে না, তাকে কেউ বুঝতে
পারে?
(ঙ) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ
আদনান বলেছে, “রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে খেজুর ছিলো কারেন্সি, খেজুর
ছিলো টাকা। তিনি বলেছেন, “ছয়টা জিনিস হচ্ছে মুদ্রা। সোনার কয়েন,
রূপার কয়েন, খেজুর, বার্লি, যব গম।”
আমাদের মন্তব্যঃ জাল হাদীস।
(চ) “দাজ্জাল হবে ইয়াহুদী যুবক।
সে ইসরায়েলের জেরুজালেম থেকে বের হবে।”
আমাদের মন্তব্যঃ
দাজ্জাল ইয়াহুদী যুবক হবে, এটা সম্পূর্ণ মনগড়া
কথা। আর সহীহ হাদীসে এসেছে, “দাজ্জাল খোরাসান থেকে বের
হবে।” শাম অর্থাৎ জেরুজালেম আর খোরাসান সম্পূর্ণ পৃথক জায়গা।
শেষ যামানায় জাল হাদীস প্রচারকারী বের হবে, এটা
কেয়ামাতের একটা লক্ষণঃ
জাল হাদীস প্রচারকারীর শাস্তিঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “তোমরা আমার প্রতি মিথ্যারোপ
করো না, কেননা যে ব্যক্তি আমার প্রতি মিথ্যারোপ করবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” সহীহ মুসলিম।
(৪) মনগড়া ফতোয়াঃ
আবু তোয়া হা ইসলাম সম্পর্কে কোন মাদ্রসা বা
ইউনিভার্সিটি থেকে পড়াশোনা করেনি, কোন আলেমের কাছ থেকে ইলম অর্জন করেনি। যারা
ইসলাম সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান রাখেন, তারা আবু তোয়া হার কথা শুনলেই বুঝতে পারবেন,
তার প্রত্যেকটা ভিডিওতে দ্বীনের নামে উলটাপালটা কথা বলে লোকদেরকে বিভ্রান্ত করেছে।
যেমন,
(ক) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান বলেছে, “আজকে যে মোজা পড়ি, কাপড়ের
মোজা কিন্তু পড়া যায় না। কারণ নবীজি চামড়ার মোজায় মাসাহ করেছেন। তাই না?”
আমাদের মন্তব্যঃ
দুনিয়াবি বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
কিছু না করলে সেই কাজটা যে করা যাবে না, এটা তো সম্পূর্ণ জাহিল লোকের কথা। রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কোনদিন বিমানে চড়েননি, তাই বলে বর্তমানে আমরা কি বিমানে
চড়ে হজ্জ করতে যেতে পারবো না? কাপড়ের তৈরী মোজাহর উপরে অসংখ্য সাহাবী মাসাহ করে
সালাত আদায় করেছেন, এনিয়ে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে।
(খ) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান সুরা বনী
ইসরায়েলের ৫৮ নাম্বার আয়েতের অপব্যাখ্যা করে বলেছে, “কিয়ামতের আগে সব শহর ধ্বংস
হবে, কিন্তু গ্রাম টিকে থাকবে। সুতরাং আপনারা গ্রামে চলে যান।”
আমাদের মন্তব্যঃ
এটা ক্বুরআনের অপব্যাখ্যা, এই আয়াতে কিয়ামতের
পূর্বে সমস্ত কিছু ধ্বংস হওয়ার কথা বলে হয়েছে, শুধু শহর ধ্বংস হবে, কিন্তু গ্রাম
থাকবে - এটা একটা বিদআ’তী ব্যাখ্যা।
(গ) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনান বলেছে, “যাদের দ্বিতীয় বিয়ে করার
সামর্থ্য আছে কিন্তু দ্বিতীয় বিয়ে করবে না, তারা গুনাহগার।”
আমাদের মন্তব্যঃ
পুরুষদের একাধিক বিয়ে নিয়ে আলেমদের বিভিন্ন মত
রয়েছে। যেমন,
কোন কোন আলেমের মতে, “সামর্থ্য থাকলে দ্বিতীয়
বিবাহ করা জায়েজ, কিন্তু উত্তম হচ্ছে একটি বিবাহ করা।”
অন্য আলেমদের মতে, “সামর্থ্যবান পুরুষদের জন্য
দ্বিতীয় বিবাহ করা উত্তম বা মুস্তাহাব।”
আবার তৃতীয় একদল আলেমের মতে, “এক বিবাহ উত্তম নাকি দ্বিতীয়
বিবাহ উত্তম, সেটা নির্ভর করে একজন ব্যক্তির সার্বিক অবস্থার উপরে। অবস্থার
অনুপাতে এবং লাভ ও ক্ষতি বিবেচনা করে কারো জন্য একটি বিবাহ করা উত্তম, কারো জন্য
দ্বিতীয় বিয়ে করা উত্তম হবে।”
কিন্তু কোন একজন আলেম এই কথা বলেননি, “সামর্থ্য থাকলে দ্বিতীয় বিয়ে
করতেই হবে, কেউ না করলে সে গুনাহগার হবে।”
যেই কাজ না করলে মানুষ গুনাহগার হয় সেটা হচ্ছে ‘ফরয’। এইভাবে আবু ত্বোয়া হা
মুহাম্মদ আদনান পুরুষদের জন্য দ্বিতীয় বিবাহ করাকে ফরয বানিয়ে দিয়েছে। ভাবতে অবাক
লাগে, ইলমের অভাবে কত মহিলারা এই ছেলের পক্ষে উকালতি করেছে!
(৫) গায়েবের ব্যাপারে মনগড়া বক্তব্য দেওয়াঃ
আবু তোয়া হা তার ওয়াজে আখেরী যামাআর লক্ষণের
নামে প্রায়শই গণক ঠাকুরের মতো ভবিষ্যত বাণী করেছে। যেমন
(ক) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনানের ভাষ্য অনুযায়ী,
বর্তমান যুগে ইয়াহুদী খ্রীস্টানদের সভ্যতার মুসলিমদের উপর আক্রমন এবং বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার যুদ্ধের পেছনে মাস্টার মাইন্ড (মূল কারিগর)
হচ্ছে দাজ্জাল।
আমাদের মন্তব্যঃ
সহীহ হাদীসে তামিম দারী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুর হাদীস থেকে স্পষ্ট
বর্ণিত হয়েছে, দাজ্জাল বর্তমানে একটি দ্বীপে শিকল দ্বারা বন্দী রয়েছে। কিয়াতের
একেবারে নিকটে চলে আসলে তাকে মুক্ত করা হবে। দাজ্জাল যদি বন্দী থাকে, তাহলে সে
সারা বিশ্ব নিয়ন্ত্রণের জন্য মাস্টার মাইন্ড হিসেবে কিভাবে কাজ করে?
আজকের যুগের অনেক মুসলিমরা ক্বুরআন ও হাদীস না
পড়ে যে যা বলে, অন্ধের মতোই সেটাকেই বিশ্বাস করে, সেটা যতই অযৌক্তিক কথা হোক না
কেনো!
(খ) আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ ওয়াজ করেছে, “কিছুদিন পরে কোন টাকা-পয়সা
বা ডলার থাকবে না।”
আমাদের মন্তব্যঃ
এমন কথা না ক্বুরআনে আছে, না হাদীসে আছে, না
বিজ্ঞানে আছে, না অর্থনীতিতে আছে। মুসলিমদের মাঝে এমন কথা বলে বিভ্রান্ত করছে,
ইউকের একজন পথভ্রষ্ট বক্তা ইমরান নজর হোসেন। আবু তোয়া হা ইমরান নজর হোসেনের মতো
বিদআ’তী সূফীদের মনগড়া ফতোয়াবাজি শুনে তোতাপাখির মতো তাদের কথাগুলো
আওড়ানো আরম্ভ করেছে, “টাকা পয়সা হারাম! আপনারা ব্যাংক থেকে টাকা পয়সা
তুলে গ্রামে-গঞ্জে চলে যান।”
(৬) আলেমদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করাঃ
পথভ্রষ্ট বিদআ’তীরা সবচেয়ে ভয়ংকর একটা
কাজটা করে, তা হচ্ছে আলেম উলামাদের উপর সাধারণ মুসলিমদের যেই বিশ্বাস ও আস্থা,
সেটাকে ধ্বংস করে দেওয়া। কারণ বিদআ’তীরা ভালো করেই জানে, ইসলাম
বিরোধী যেই সমস্ত কথা-বার্তা তারা বলে, আলেমরা তা ধরতে পারবে এবং সেই ব্যাপারে
লোকদেরকে সতর্ক করে দিবে। তাহলে কোন মুসলিম তাদের কথা আর শুনবে না। সেইজন্য সমস্ত
বিদআ’তী এবং পথভ্রষ্ট লোকদের মাঝে কমন একটা কৌশল হচ্ছে, আহলে
সুন্নাহর আলেমদের ব্যাপারে খারাপ কথা বলে লোকদেরকে তাদের কাছ থেকে দ্বীন শিখা থেকে
বিমুখ করে দেওয়া। যেমন,
আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ ‘মালহামা’ বা কিয়ামতের পূর্বে সংঘটিত
একটি মহাযুদ্ধ নিয়ে সম্পূর্ণ মনগড়া অপব্যাখ্যা করার পর সে বলছে, “আর অফ কোর্স, আমাদের
স্কলার্স অব ইসলাম যারা, তাদের বেশিরভাগই হালুয়া-রুটি আর বিরিয়ানি খাচ্ছেন আর
ঘুমাচ্ছেন! এইগুলো নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই! তাদের বিন্দুমাত্র মাথা ব্যাথা
নাই এইগুলো নিয়ে!”
আমাদের মন্তব্যঃ
চিন্তা করুন, কত বড় স্পর্ধা এই জাহেল ছেলেটার!
আমাদের বেশিরভাগ আলেমই নাকি হালুয়া-রুটি আর বিরিয়ানি খাচ্ছেন আর ঘুমাচ্ছেন। উম্মতের
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তাদের বিন্দুমাত্র চিন্তা নাই।
আদনান যদি বিদআ’তী কিংবা ভন্ড আলেমদের
সম্পর্কে এই কথা বলতো, আলেমের বেশধারী পথভ্রষ্ট জাহেল লোকদের ব্যাপারে এমন কথা
বলতো, তাহলে আমরা হয়তো ধরে নিতাম যে, সে আহলে সুন্নাহর প্রকৃত আলেমদের ব্যাপারে এই
কথা বলছে না। কিন্তু যখন কেউ বলবে, “আমাদের স্কলার্স অব ইসলামের
বেশিরভাগই হালুয়া-রুটি আর বিরিয়ানি খাচ্ছেন আর ঘুমাচ্ছেন”, তখন এই কথার দ্বারা সমস্ত
আলেমদের সম্পর্কে শ্রোতাদের মনে অত্যন্ত খারাপ একটা ধারণা দেওয়া হয়।
আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ বলেছে, আলেমরা
হালুয়া-রুটি আর বিরিয়ানি খাচ্ছে আর ঘুমাচ্ছে। অথচ এই আলেমদের সম্মানের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আলেমরা হচ্ছেন নবী-রাসূলদের
ওয়ারিশ (উত্তরাধিকারী)।” সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীসের সনদ নির্ভরযোগ্য।
সুতরাং যে ব্যক্তি ঢালাউভাবে আলেমদেরকে দোষারোপ
করে, তাদের ব্যাপারে মন্দ কথা বলে, সে মূলত ইসলামের উপরেই আক্রমন করে। কেননা
নবী-রাসূলদের অবর্তমানে প্রকৃত ইসলামের ধারক ও বাহক হচ্ছেন উম্মতের সম্মানিত
আলেমগণ।
প্রাচীনকাল থেকেই মুসলিম নাম দিয়ে একদল লোক
আলেমদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করে আসছে। একারণে আমাদের প্রাচীন যুগের আলেমরা এমন
লোকদের ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক করেছেন। যেমন,
(ক) আমিরুল মুমিনিন উমর ইবনে খাত্তাব
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন,
“যখন অল্প বয়ষ্ক তরুণেরা বয়ষ্ক আলেমদের
বিরুদ্ধে কথা বলে, তখন লোকদের দ্বীনের মাঝে বিকৃত এবং পচন ধরে।” ফাতহঃ ১/৩০১।
(খ)
ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৮১ হিজরী) বলেন, “যে
ব্যক্তি আলেমদেরকে তুচ্ছ করবে, সে তার আখেরাতকে নষ্ট করলো।” ইমাম
আয-যাহাবী রহি’মাহুল্লাহর প্রণীত সিয়ার আ’লাম
আন-নুবালাঃ ৮/৪০৮।
(গ) ইমাম ইবনে আসাকির রহি’মাহুল্লাহ
(মৃত্যু ৫৭১ হিজরী) বলেন, “ভাইয়েরা আমার! তোমরা জেনে রাখো, আলেমদের
গোশত (অর্থাৎ তাদের নামে গীবত করা) বিষাক্ত (অর্থাৎ অত্যন্ত ভয়াবহ একটা বিষয়)।
আল্লাহর নিয়ম হচ্ছে, যে ব্যক্তি আলেমদের ইজ্জতের উপর হাত দিবে, আল্লাহ তাকে ধ্বংস
করে ছাড়বেন।”
___________________________________
আবু ত্বোয়া হা
মুহাম্মদ আদনান (পর্ব-২)
(এক)
আবু তোয়া হা মুহাম্মাদ আদনান দিন-রাত আখেরী
যামানার লক্ষণ নিয়ে মনগড়া ওয়াজ করে। কিন্তু সে কি এটা জানে যে, তার মতো জাহেল
লোকেরা লোকদেরকে বিভ্রান্ত করবে, এটাও ক্বিয়ামতের একটা লক্ষণ!
(১) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের অন্যতম আলামত হচ্ছে
ইলম উঠিয়ে নেয়া হবে এবং মানুষের মাঝে অজ্ঞতা বিস্তার লাভ করবে।” সহীহ বুখারী।
(২)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “শেষ যামানায় কিছু সংখ্যক দাজ্জাল ও মিথ্যুক আসবে, যারা এমন হাদীস প্রচার করবে, যা তোমরা পূর্বে কোনোদিন শোননি, এমনকি তোমাদের বাপ-দাদারাও
কোনদিন শুনেনি। সুতরাং, তোমরা তাদের থেকে সাবধান
থাকবে, যাতে
করে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে।” সহীহ মুসলিম, মুকাদ্দিমা।
(৩) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মানুষের
মাঝে অচিরেই এমন একটা সময় আসবে যখন ধোঁকাবাজি বাড়বে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী
মনে করা হবে, আর
সত্যবাদীকেই মিথ্যাবাদী মনে করা হবে। আমানতদারকে খিয়ানতকারী মনে করা হবে, আর খিয়ানতকারীকেই আমানতদার মনে করা হবে। আর
তখন রুয়াইবিদারা কথা বলবে।”
আল্লাহর রাসুলকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ “রুয়াইবিদা কারা?” তিনি
বললেন, “সাধারণ
মানুষের কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করে এমন ব্যক্তি।” ত্বাবারানি, কিতাবুল ফিতান, বাব সিদ্দাতুয যামানঃ ২/৩২৬১।
হাদীসের অন্য বর্ণনায় রয়েছে, জিজ্ঞাসা করা হল, “রুয়াইবিদা
কে?” রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “অপদার্থ
ব্যক্তি।”
(৪)
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই লোকদের ব্যাপারে বলেছেন, “আখেরী যামানায় এমন একদল লোক আসবে, যাদের বয়স
হবে অল্প এবং জ্ঞান হবে খুবই সামান্য। তারা মানুষের মাঝে সবচাইতে উত্তম কথা বলবে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা ইসলাম থেকে এমন দ্রুতগতিতে বের হয়ে যাবে, যেমনিভাবে তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কন্ঠনালী অতিক্রম
করবেনা। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে, সেখানেই হত্যা করবে। যে ব্যক্তি তাদেরকে হত্যা করবে, সে কিয়ামতের দিন এই হত্যাকান্ডের জন্য পুরস্কার লাভ করবে।”
(দুই)
আবু তোয়া হা মুহাম্মাদ আদনান সম্পর্কে আমাদের
আলেমদের মূল্যায়নঃ
(১) ড.
আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া হা’ফিজাহুল্লাহর
বক্তব্যঃ
(২) শায়খ
মতিউর রহমান মাদানী হা’ফিজাহুল্লাহর
তিন মাস আগে দেওয়া প্রথম বক্তব্যঃ
দ্বিতীয়
বক্তব্যঃ
(৩) শায়খ
আব্দুল হামীদ ফাইজি হা’ফিজাহুল্লাহর
বক্তব্যঃ
(৪) ড.
মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ হা’ফিজাহুল্লাহর
বক্তব্যঃ
(তিন)
আবু তোয়াহার কি শাস্তি হওয়া উচিত?
আবু তোয়া হা ওয়াজের নামে বিভিন্ন ধরণের গুরুতর
অপরাধে লিপ্ত রয়েছে। তার মাঝে একটি হচ্ছে, নিজের মনগড়া কথা রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের
হাদীস
বলে চালিয়ে দেওয়া।
ইবনু হাজার
হায়সামী (মৃত্যুঃ ৯৭৪ হিজরী) রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন, “যে খতীব খুতবায় হাদীস উল্লেখ করে; কিন্তু সেইসব হাদীস সহীহ নাকি
জইয়ীফ তা উল্লেখ করে না, তাকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। শাসকের দায়িত্ব হচ্ছে, এমন খতীবকে
খুতবা দেওয়ার দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করা।” আল-ফাতাওয়া
আল-মাদীনিয়্যাহঃ পৃষ্ঠা-৩২।
চিন্তা
করে দেখুন, ইবনু হাজার হায়সামী রহি’মাহুল্লাহর
মত হচ্ছে, যেই খতিব আবু দাউদ, তিরমিযীর মতো হাদীসের কিতাব থেকে হাদীস বলে, কিন্তু সেই
হাদীস সহীহ নাকি জইয়ীফ তা শ্রোতাদেরকে জানিয়ে দেয় না, তাকে কঠিন শাস্তি দিতে হবে। এমনকি
তিনি শাসকদেরকে উপদেশ দিয়েছেন, এমন বক্তাকে দায়িত্ব থেকে বহিষ্কার করে দেওয়ার জন্য।
তাহলে চিন্তা
করুন, আবু তোয়ার মতো বক্তার কি শাস্তি হতে পারে, যে কিনা কথায় কথায় নিজের মনগড়া
কথাকে হাদীস বলে লোকদেরকে ধোঁকা দেয়? আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার তাওফিক দান করুন।
একটা কথা উল্লেখ করে দেই, ইবনু হাজার হায়সামী ‘বাংলাদশের আহলে হাদিস’ তরীকার
কোন আলেম নন। হাদীসের বিদগ্ধ এই পন্ডিত আজ থেকে প্রায় ৪৭০ বছর পূর্বেই পবিত্র মক্কা নগরীতে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সুতরাং,
আহলে হাদীস বিদ্বেষীরা এই কথা মনে করবেন না যে, আহলে হাদিস আলেমরা আবু তোয়াহার
শাস্তি চেয়ে ভুল করেছেন।
আমি সেই সমস্ত মসজিদ কমিটির লোকদেরকে ধিক্কার জানাই, সেই
সমস্ত ওয়াজ মাহফিলের আয়োজকদেরকে ধিক্কার জানাই, যারা বেতন দিয়ে এমন “জাল হাদীস
বানানোর মেশিনকে” খুতবাহ দেওয়ার বা ওয়াজ করার সুযোগ করে দেয়। এমন লোকদের
কারণেই আজ বাংলাদেশে শিরক এবং বিদআ’ত এতো বেশি জমজমাট।
উল্লেখ্য, আমরা আবু তোয়া হার বিচার দাবী করি, সেটা ইসলামিক
আদালতে কোন বিজ্ঞ মুসলিম বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে। বাংলাদেশের প্রচলিত কোর্টে
ইসলামী আইন দিয়ে ন্যায় বিচার করা হয় না। এছাড়া পুলিশ গুম করে ধরে নিয়ে নির্যাতন
করে। এগুলো সম্পূর্ণ অনৈসলামিক, আমরা এইগুলোকে মোটেও সমর্থন করি না।
আমরা যেকোন অপরাধীর বিচার দাবী করি, সেটা ক্বুরআন ও সুন্নাহ
অনুযায়ী যেই শাস্তি হওয়া উচিত সেটা। মানব রচিত বিধান দিয়ে বিচার করা হলে সেটা কোন
ন্যায় বিচার নয়, বরং সেটা হচ্ছে যুলুম।
(চার)
আবু তোয়া হা মুহাম্মাদ আদনানের ফলোয়ারদের
প্রসংগে আমাদের বক্তব্যঃ
আবু
তোয়াহা গুম হওয়ার পরে ফেইসবুক ইন্টারনেটে একদল লোক তাকে ‘আলেম’ বা ‘ইসলামী
বক্তা’ নামে লোকদের মাঝে প্রচার করা আরম্ভ করে। সেই থেকে দেশবাসী
জানতে পারে যে, এমন একজন জাহিল বক্তার হাজার হাজার ভক্ত।
এমন
লোকদের উদাহরণ দেখে আমি মোটেও আশ্চর্য হই না। কারণ আমি জানি, কিয়ামতের পূর্বে
লোকেরা আলেম-উলামাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে, আর জাহেল লোকদের কাছ থেকে দ্বীন
শিখবে।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বেই বলেছেন, “কেয়ামতের একটা লক্ষণ হচ্ছে যে, মানুষ জাহেল (মূর্খ) লোকদের কাছ
থেকে ইলম (দ্বীনের জ্ঞান) অর্জন করবে।” তাবারানী,
জামি আস-সাগীরঃ ২২০৩।
আজকাল
মানুষ কে আলেম আর কে জাহেল এটা বুঝতে না পেরে জাহেল লোকদেরকেই আলেম বলে মনে করে।
আজ থেকে প্রায় ২২ বছর আগেই আল্লামাহ মুহাম্মাদ নাসির
উদ্দীন আলবানী রহি’মাহুল্লাহ আমাদেরকে বলে গেছেন, “বর্তমান
যুগের লোকেরা ভালো এবং মন্দের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারে না। কোন ব্যক্তি যদি (দ্বীনের
ব্যাপারে কিছু) কথা বলতে পারে, তাহলে লোকেরা তাকে ‘আলেম’ বলে মনে
করে।” সিলসিলাতুল হুদ ওয়ান-নূরঃ ৮৫২।
যাই হোক, যেই সমস্ত লোক ক্বুরআন ও হাদীস না শিখে,
আবু তোয়াহা বা এমন অন্যান্য ভ্রষ্ট লোকদের কথা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে, তারা কেমন
মানুষ সে সম্পর্কে আমিরুল মুমিনিন আলী
রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আ’নহু বলেছেন, “মানুষ
হচ্ছে তিন প্রকারঃ
(১)
আ’লিম (শিক্ষিত বা দ্বীনের ব্যপারে জ্ঞানী ব্যক্তি)
(২)
মুতাআ’ল্লিম (দ্বীনের শিক্ষার্থী) এবং এ দুই প্রকারের লোকজনই
হচ্ছে মুক্তির পথে রয়েছে।
(৩)
নিম্নমানের এমন লোকজন, যারা যে কোন লোকের কথা অনুসরণ করে এবং তার আহবানে সাড়া দেয়।” উসুলুস
সুন্নাহ (বাংলা), পৃষ্ঠা-১০৭।
আল্লাহ
আমাদেরকে হেফাযত করুন (আমিন)।
(পাঁচ)
কিছু
মানুষ আবু তোয়াহা গুম হওয়ার পর দাবী করে, আহলে হাদীসদের আলেমরা তার ব্যাপারে
সমালোচনা করার কারণে সরকার তাকে গুম করেছে।
এমন কথা যে কত বড় মূর্খতা, এটা আশা করি বাস্তবতা
সম্পর্কে যারা ওয়াকিফহাল, তারা খুব ভালো করেই জানেন। তার কারণ আমি ব্যাখ্যা করছিঃ
(১) ইসলামিক ফাউন্ডেশানের সরকারপন্থী(!) অনেকে
বিদআ’তী আলেম গত কয়েক বছর ধরেই সুযোগ পেলে প্রকাশ্যে আহলে হাদীস
আলেমদের নাম ধরে “আহলে হাদীসরা জংগী, সরকার এদেরকে গ্রেফতার করুক” বলে দাবী করে আসছে। কিন্তু
আহলে হাদীসদের বড় বড় আলেমরা গুম হয়ে যাচ্ছে না, আলহা’মদুলিল্লাহ। এ থেকে প্রমাণিত
হয় যে, কোন বক্তা বা আলেম কারো নামে সমালোচনা করলেই সরকার তাকে গুম করে এমন কথা
মোটেও সত্য নয়।
(২) মাস দুয়েক আগেই আহলে হাদীসদের একজন বক্তা,
মুয়াজ্জেম হোসেন সাইফী একইভাবে গুম হয়েছিলো। পরে ডিবি পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে তাকে
ছেড়ে দেয়। এই উদাহরণ থেকে বুঝা যায় যে, আহলে হাদীস আলেমদের কথা শুনে পুলিশ কাউকে
গ্রেফতার বা গুম করে না। যদি তাই হতো, তাহলে খোদ আহলে হাদীসদের কোন বক্তা একইভাবে
গুম হতো না।
এবার আসি, আহলে হাদীসদের আলেমরা কেনো আদনানের
সমালোচনা করেছেন, সেই প্রসংগে।
আবু তোয়া হা মানুষকে খারেজী মতবাদে ব্রেইন ওয়াশ
করছে, চরমপন্থী জংগী বানাচ্ছে, হাদীসের নামে দিন-রাত জাল হাদীস বলে যাচ্ছে,
ক্বুরআন ও হাদীসের অপব্যখ্যা করে মনগড়া ফতোয়াবাজি করছে। এমন লোকের বিরুদ্ধে
উম্মতকে সতর্ক করা শুধু ভালো কাজ নয়, বরং এর বিরুদ্ধে লোকদেরকে সতর্ক করা আলেমদের
জন্য ফরয কাজ। যারা নিতান্ত অজ্ঞ, ব্যক্তি পূজায় অন্ধ, যারা ইচ্ছাকৃতভাবে পথভ্রষ্ট
হতে চায়, এমন ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ আবু তোয়া হার পক্ষে উকালতি করবে না।
___________________________________
আবু ত্বোয়া হা
মুহাম্মদ আদনান (পর্ব-৩)
(এক)
প্রথম পর্বে আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ
আদনানকে আমি ‘চরমপন্থী’ এবং ‘জংগী’ বলেছি, এতে অনেকে আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়েছেন। আজকে
আমি তাদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি, কেনো আমি আবু ত্বোয়া হা মুহাম্মদ আদনানকে চরমপন্থী
বা জংগী বলেছি।
যারা ঘরে বসে, মসজিদের মিম্বারে,
ওয়াজ মাহফিলে কিংবা ফেইসবুকে লেখালিখি করে মুসলিম শাসকদেরকে ঢালাউভাবে কাফের বলে বেড়ায়,
এতে কোন সন্দেহ নাই এরা চরমপন্থী এবং জংগী। কারণ কোন মুসলিম শাসককে অন্যায়ভাবে কাফের
বলার মানে হচ্ছে, তাকে হত্যার চেষ্টা করা, তার দেশ বা সেনাবাহিনী উপর আক্রমন করা, তাদেরকে
ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যা প্রয়োজন তার সবকিছু করা বৈধ। বরং সত্যিকার অর্থে যে সমস্ত
মুসলিমদের সামর্থ্য আছে, তাদের জন্য কাফের বাদশাহকে ক্ষমতাচ্যুত করা ওয়াজিব। এইভাবে
মুসলিম শাসককে কাফের বলে ফতোয়া দেওয়ার মানে হচ্ছে সেই মুসলিম দেশে গৃহযুদ্ধ, হত্যা,
রক্তপাত, লুটপাটসহ যাবতীয় নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘোষণা দেওয়া। এহেন কাজগুলো মুসলিমদের জন্য
কি পরিমাণ ক্ষতিকর তা আরব বসন্ত নামে তথাকথিত বিপ্লবের ফলে মিশরসহ বেশকিছু দেশের লোকজন
খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে। মুসলিম শাসকদেরকে কাফের বলে যারা বিদ্রোহের উস্কানি দেয়
এরা মূলত আত্মগোপনকারী খারেজীদের একটা গ্রুপ। এরা নিজের বোমা মারে না, মানুষ হত্যা
করে না, কিন্তু এরা ‘খারেজী
মতবাদ’ প্রচার করে পরোক্ষভাবে এ ধরণের কাজে জনগণকে উদ্ধুব্ধ
করে।
আবু ত্বোয়া হা মসজিদে মিম্বারের
মতো সম্মানিত স্থানে দাঁড়িয়ে খুতবার মাঝে এক নিঃশ্বাসে মুসলিম বিশ্বের প্রাণকেন্দ্র
সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত দেশের সরকারকে কাফের বলে ঘোষণা করেছে।
আবু তোয়া হা আদনান বলেছে, “আমরা বলি, আলে সাউদসহ যত গলফ
কান্ট্রি আছে, কাতার, কুয়েত, জর্ডান, আবু ধাবি, লেবানন - এরা আমার উম্মতের কেউ না।...
(সৌদি আরব সরকার) আলে সৌদকে আমার ‘ইহুদীদের এজেন্ট’ বলে মনে হয়।”
আবু তোয়া হার বক্তব্যের লিংক -
(দুই)
সৌদি আরব রাষ্ট্র এবং সরকারের মাঝে ছোট-বড় অনেক
দোষ-ত্রুটি থাকতে পারে, কিন্তু এটা শুধু একটি ইসলামী দেশ নয়, বরং বর্তমান বিশ্বে
সর্বোত্তম। আলহা’মদুলিল্লাহ, এই দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্বুরআনের
আইন বাস্তবায়ন করা হয়। আমরা সৌদি আরব সরকারকে খুলাফায়ে রাশেদীন বা তাদের সরকার
প্রধানকে মাসূম বা নিষ্পাপ বলে মনে করি না। তবে এতে কোন সন্দেহ নাই যে, এটা একটা
ইসলামী রাষ্ট্র।
- সৌদি আরবে যদি ১০ ভাগ ইসলামী আইন বাস্তবায়ন
করা হয়, তাহলে জামাতে ইসলামীর খলিফাতুল মুসলিমিনের দেশ তুরস্কে একভাগ ইসলাম কায়েম
করা হয় না।
- সৌদি আরবে এখন পর্যন্ত যতটুকু ইসলাম কায়েম
করা হয়, তার ১০ ভাগের ১ ভাগ ইসলাম তথাকথিত মুহাজিহ বাহিনীর দেশ আফগানিস্তানে
তালেবানরা কায়েম করেনি। তালেবানরা যখন ক্ষমতায় এসেছিলো তখন বুদ্ধের মূর্তি ভাঙ্গা
হয়েছিলো। যদিও এটাই ইসলামের বিধান, কিন্তু সেই বুদ্ধের মূর্তিকে সেই দেশ কেউ পূজা
করতো না। কিন্তু যেই মূর্তিকে পূজা করা হতো, মুসলমান নাম নিয়ে লক্ষ লক্ষ সূফীরা যে
মাযারগুলো বানিয়ে কবর পূজা করতো, শির্কের সেই আড্ডাকে তালেবানরা ভাঙ্গেনি। তাহলে
তথাকথিত মুজাহিদ বাহিনী তালেবান ক্ষমতায় এসে আফগানিস্তানে কোন ইসলাম কায়েম করেছিলো
চিন্তা করে দেখুন!
যাই হোক, একমাত্র খারেজী মনোভাবের কোন লোক ছাড়া
সৌদি আরব একটি ইসলামী রাষ্ট্র এই সত্যকে কেউই অস্বীকার করতে পারে না।
সৌদি আরবকে কেনো একটি ইসলামী রাষ্ট্র?
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/4799598620072847
সৌদি আরবে আদালতে ইসলামী আইন বাস্তবায়নের
বর্ণনাঃ
(তিন)
খারেজী মতালম্বীরা দুই প্রকারঃ
(১) Militant বা জংগী খারেজীঃ
যারা মুসলিম শাসকদের আনুগত্য ত্যাগ
করে, তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে সরাসরি যুদ্ধ
ও রক্তপাত করে।
(২) বসে থাকা খারেজী বা কাপুরুষ
খারেজীঃ
আরেক শ্রেণীর খারেজী হচ্ছে আক্বীদাহগত
খারেজী। এরা মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে নিজেরা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করে না, তবে জনগণকে
খারেজী মতবাদে ব্রেইন ওয়াশ করে তাদেরকে শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের জন্য উস্কানি দেয়।
ইসলামী বিদ্বানগণ এমন লোকদেরকে ‘আল-ক্বাদীয়্যাহ’ মতবাদের অনুসারী বলেছেন।
ইমাম ইবনু হাজার আল-আসক্বালানী
রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ ৮৫২ হিজরী) ভ্রষ্ট ফিরক্বা সমূহের
পরিচয় প্রদানের ক্ষেত্রে এই ফিরক্বা প্রসঙ্গে বলেছেন, “আল-ক্বাদীয়্যাহ ফিরক্বা হচ্ছে ঐ সকল লোক, যারা সরাসরি
(মুসলিম) শাসকদের আনুগত্য পরিহার করে না, কিন্তু অন্যদের নিকট ইমামদের আনুগত্য পরিহার
করাকে শোভনীয় ভাবে উপস্থাপন করে।” হাদইউস
সারি মুক্বাদ্দামা ফাতহুল বারীঃ পৃষ্ঠা-৪৫৯।
আল-ক্বা’দীয়্যাহ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, “ক্বাদীয়্যাহ খারেজী হচ্ছে ঐ সকল লোক, যারা শাসকের
বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাকে বৈধ বলে মনে করে না। তবে তাদের সাধ্যানুযায়ী তারা শাসকদের বিরোধিতা
করে, লোকজনকে তাদের মতের দিকে আহবান করে এবং জনগনকে শাসকের আনুগত্য পরিত্যাগ করার প্রতি
প্ররোচিত করে।” তাহযিবুত তাহযীবঃ ৮/১১৪।
ফযীলাতুশ-শায়খ সালিহ আল-ফাওজান
হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “আল-ক্বাদীয়্যাহ হচ্ছে একটি খারিজী ফিরকা। সুতরাং
আপনারা মনে করবেন না যে, শাসকের বিরুদ্ধে যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করে, শুধুমাত্র তারাই
খারেজী।” (বরং যারা নিজেরা ঘরে বসে থেকে মুসলিম শাসকদেরকে
কাফের বা মুনাফেক্ব ফতোয়া দিয়ে জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে উস্কানি দেয়, এমন লোকেরাও খারেজীদের
অন্তর্ভুক্ত।)
ইবনু হাজার রহি’মাহুল্লাহ ‘‘হাদইউস
সারী’’ নামক গ্রন্থের ৪৬০ নং পৃষ্ঠায় আক্বীদাগত দিক থেকে
নিন্দিত ও সমালোচিত কিছু ব্যক্তি প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি উক্ত আলোচনায় ইমরান
ইবনে হাওয়ানে সম্পর্কে বলেন যে, “তিনি
একজন ক্বাদীয়্যাহ খারিজী ব্যক্তি ছিলেন।”
(চার)
ফযীলাতুশ-শায়খ সালিহ আল-ফাওজান
হা’ফিজাহুল্লাহ বলেছেন, “ক্বাদীয়্যাহ বা বসে থাকা খারেজীরা জংগী বা অস্ত্র
হাতে যুদ্ধ করা খারেজীদের তুলনায় বেশী মারাত্মক। কেননা শাসকদের বিরুদ্ধে সমালোচনা জনসাধারণের
মাঝে তাদের ব্যাপারে হিংসা বিদ্বেষ ছড়ানো সমাজের জন্য বেশি ক্ষতিকর। বিশেষত যদি কোন
ব্যক্তি আহলুস সুন্নাহর মুখোশ পরে ক্বুরআন ও হাদীসের অপব্যাখ্যা করে জনগণকে মানুষকে
ধোঁকা দেয়, তাহলে তা আরও বেশি মারাত্মক হয়।
ইমাম আবু দাউদ রহি’মাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ ২৭৫ হিজরী) বর্ণনা করেছেন, তিনি
বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ আয যঈফ রহি’মাহুল্লাহ
বলেন, “ক্বাদিয়্যাহ খারেজীরা অন্যান্য খারেজীদের চেয়ে বেশি
নিকৃষ্ট।” মাসাইলুল ইমাম আহমাদ রহি’মাহুল্লাহ, পৃষ্ঠা-২৭১।
(পাঁচ)
ফযীলাতুশ-শায়খ সালিহ আল-ফাওজান
হা’ফিজাহুল্লাহ যেই সমস্ত লোকেরা মুসলিম শাসকদেরকে
গালি-গালাজ ও খারাপ মন্তব্য করে জনগণকে বিদ্রোহের জন্য উস্কানি দেয়, এমন বক্তাদের ব্যাপারে
বলেছেন,
“সাধারণ
জনগণের অন্তরে শাসকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ সৃষ্টি করে ফিতনা ফাসাদ সৃষ্টি করা চোগলখোর
লোকদের কাজ, যারা বিশৃংখলা সৃষ্টি করে মুসলিম সমাজে ভাঙন সৃষ্টি করতে চায়।
নাবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের যুগের মুনাফিকেরাও নাবী সাল্লাবল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এবং মুসলিম সমাজ তথা সাহাবী রাদিয়াল্লাহু
আ’নহুম আজমাঈনদের মাঝে বিচ্ছেদ সৃষ্টি করার জন্য এরকম
অপচেষ্টা চালাতো। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
لا تُنْفِقُوا عَلَى مَنْ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّى يَنْفَضُّوا
“যারা
আল্লাহর রাসূলের কাছে আছে, তোমরা তাদের জন্য খরচ করো না, যতক্ষণ না তারা সরে যায়।” সূরা আল-মুনাফিক্বুনঃ ৭।
সুতরাং শাসক ও প্রজার মাঝে বিচ্ছেদ
সৃষ্টির অপতৎপরতা বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী মুনাফিক্বদের কাজ। আল্লাহ তাআ’লা আরও বলেন,
وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ لا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ قَالُوا إِنَّمَا نَحْنُ مُصْلِحُونَ
“আর যখন
তাদেরকে বলা হয়, তোমরা যমীনে ফাসাদ সৃষ্টি করো না, তারা বলে, আমরা তো কেবল সংশোধনকারী।” সূরা আল-বাক্বারাহঃ ১১।
মুসলিম শাসক এবং জনগনের জন্য
(আহলে সুন্নাহর) কল্যাণকামী লোকের এমন লোকদের তুলনায় বিপরীত। তারা প্রচেষ্টা করেন শাসক
এবং প্রজার পরস্পরের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে, ঐক্য সংহতি প্রতিষ্ঠা করতে এবং সকল
প্রকার মতানৈক্য বা মতপার্থক্য থেকে নিরাপদ থাকতে।” আল-আজবিবাতুল মুফীদাহ।
(ছয়)
বিদ্রোহ বলতে কি বুঝায়?
আজকাল আনোয়ার আল-আওলাকি, জসীম উদ্দিন রাহমানী,
তামিম আল-আদনানী বা সদ্য গজিয়ে উঠা ইসলামী লেখক আসিফ আদনান বা বক্তা(!) আবু
তোয়াহার মতো চরমপন্থী লোকেরা নিজেরা বোমা মারে না দেখে অনেক মুসলমানেরা এদের কথা-বার্তা
শুনে ধোঁকা খায়। অথচ যখন তাদের আসল চেহারা জনগণের সামনে তুলে ধরা হয়, তখন তাদের
ভক্তরা এটা মেনে নিতে পারে না যে, এরা চরমপন্থী বা জংগী। তারা মনে করে, এমন লোকেরা
তো আমাদেরকে ইসলাম শিক্ষা দেয়...এরা তো হলি আর্টিসানের জংগীদের মতো মানুষ হত্যা
করছে না।
এমন মুসলিমরা আসলে এটা বুঝতে পারে না যে, এরা
প্রকৃত খারেজীদের মতো অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করার মতো যথেষ্ঠ সাহসী না হলেও, আরব
বিশ্বের মুসলিম শাসকদেরকে কাফের বলার দ্বারা এরা সমস্ত মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে
জবান দ্বারা ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা করেছে।
কারণ, যুদ্ধ তিন প্রকারঃ (১) জবান দিয়ে, (২)
অর্থ-সম্পদ দিয়ে এবং (৩) জীবন দিয়ে।
উপরোক্ত বক্তারা চরমপন্থী বা জংগী হিসেবে গণ্য
হবে, কারণ এরা প্রকাশ্যে বাংলাদশের প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতিকে কাফের বলে না,
কারণ এদের নামে কিছু বললেই পুলিশ এসে পিটাবে। একারণে এরা মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে উত্তম
শাসকদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করে। এমন লোকদের
ব্যাপারে প্রাচীনকালের আহলে সুন্নাহর একজন ইমাম এবং বর্তমান যুগের একজন
আলেমে-দ্বীনের মতামত দিয়ে আমার লেখা আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
وَمَا عَلَيۡنَآ إِلَّا ٱلۡبَلَـٰغُ ٱلۡمُبِينُ
(১) ৩২৯ হিজরী সনে মৃত্যুরবরণ করেছেন আহলে সুন্নাহর এমন একজন ইমাম আল-বারবাহারি রহি’মাহুল্লাহ
বলেছেন,
“যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের
বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সে মূলতঃ
(ক) খারেজীদের
মধ্যে একজন,
(খ) সে
মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো,
(গ) সে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসের
বিরোধীতা করলো এবং
(ঘ) তার
মৃত্যু যেন ‘জাহেলী’ যুগের মৃত্যুর মতো।”
উৎসঃ
শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।
(২) যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে
বিদ্রোহ করার জন্য আহবান জানায়, এমন ব্যক্তির ব্যাপারে সৌদি আরবের বর্তমান ‘প্রধান মুফতি’ এবং জীবিত আলেমদের মাঝে
সবচেয়ে প্রবীণ এবং জ্ঞানীদের মধ্যে অন্যতম ফযীলাতুশ-শায়খ আব্দুল আজিজ বিন
আব্দুল্লাহ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ বলেনছে,
“যে ব্যক্তি (কোন মুসলিম)
ইমাম (অর্থাৎ শাসকের) কথা শুনতে ও মানতে নিষেধ করে, তার ব্যাপারে এই সন্দেহ করো
যে, সেই ব্যক্তি একজন ‘মুনাফেক’। তার ব্যাপারে এই ধারণা
রাখো যে, সেই ব্যক্তি একজন ‘ফাযের’ (নিকৃষ্ট পাপাচারী
ব্যক্তি)। সেই ব্যক্তির ব্যাপারে এই ধারণা রাখো যে, সে কোন চুক্তি রক্ষা করে না,
তার দ্বীন বলতে কিছু নাই, সে কোন আমানত রক্ষা করে না। এর কারণ হচ্ছে, (মুসলিম
শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ) দেশে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য, রক্তপাত ও খুন-খারাপি,
মানুষের সম্পদ ও সম্মান লুন্ঠনের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতি ডেকে নিয়ে আসে, আমরা আল্লাহর
কাছে এমন বিষয় হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।”
___________________________________
আবু ত্বোয়া হা
মুহাম্মদ আদনান (পর্ব-৪)
সেলেব্রিটি লেখকদের প্রতিক্রিয়া
হক্ক কথা বললে অধিকাংশ সময় লোকেরা রাগ করে,
গালি দেয়, দূরে সরে যায়, ইমামের চাকরী চলে যায়, আলেমের উপর নির্যাতন আরম্ভ হয়।
উদাহরণস্বরূপ, গত মাসে (জুন, ২০২১) ঢাকার একটি মসজিদ থেকে মদীনা ইসলামিক
ইউনিভার্সিটি থেকে লিসান্স ডিগ্রীধারী একজন খতীবকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। তার
অপরাধ, তিনি মাস্ক পড়া নিয়ে শিথিলতা করেন। আসল কথা হচ্ছে, মসজিদ কমিটির একজন তার
উপর ক্ষিপ্ত ছিলো, তাই সুযোগ বুঝে একটা অযুহাত তুলে তার চাকুরী নট করে দিয়েছে।
সুবহা’নাল্লাহ! মক্কা মদীনা থেকে সর্বোচ্চ মানের পড়াশোনা করে আসা একজন
শায়খের যদি চাকুরী না থাকে, স্রেফ লোকদের খেয়াল-খুশি মতো কথা না বলার কারণে, তাহলে
চিন্তা করুন এই দেশে ইসলামের কথা বলে আপনি কতটা নিরাপদ থাকবেন? ইতিপূর্বে, আমি
একটা নিউজ শেয়ার করেছিলাম, শুধুমাত্র মামুনুল হক্ককে সাপোর্ট করে ফেইসবুকে একতা
পোস্ট লিখার কারণে একজন ইমামের চাকুরী চলে গেছে। এই হচ্ছে আমাদের দেশের বাস্তবতা।
এর বিপরীতে ফেইসবুক, ইন্টারনেটের মতো মিডিয়াতে
এমন কিছু ইসলামী বক্তা ও লেখক বের হয়েছে, যাদের ফলোয়ার দিন দিন বাড়তেই থাকে। এমন
বক্তা ও লেখকদের জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণ হচ্ছে, মোটিভেশনার স্পিকারদের মতো এরা কখনো
পাবলিক সেন্টিমেন্টের বিরুদ্ধে কথা বলে না। বিশেষ করে, বিদআ’তী দলসমূহের ব্যাপারে এরা
কখনোই মুসলিমদেরকে সতর্ক করে না।
দ্বীনের দাওয়াত দিয়ে যেই সমস্ত ব্যক্তিরা
জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, নিশ্চিতভাবে জেনে রাখুন, এরা ধোঁকাবাজ আর নয়তো বর্ণচোরা।
এরা ফিতনার ব্যাপারে কখনো হক্ক কথা বলতে পারবে না। কারণ হক্ক কথা বললেই তাদের
জনপ্রিয়তা নষ্ট হয়ে যাবে, ভক্ত-শ্রোতারা দূরে সরে যাবে। এইগুলো আমার কথা না, আজ
থেকে হাজার হাজার বছর পূর্বেই আমাদের সালাফে সালেহীনরা এই ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক
করেছেন।
ইমাম সুফিয়ান সাউরী (মৃত্যুঃ ১৬১ হিজরী) স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “যেই আলেমের বন্ধু বেশি, সে একজন মুখাল্লেত (মানে
যেই ব্যক্তি হক্ক ও বাতিল মিক্স করে)।” ইয়াহইয়া উলুম আদ-দ্বীন, ইমাম গাজ্জালী রহি’মাহুল্লাহ।
আর এ কারণে, আমাদের আগের যুগের ইমামেরা আমাদেরকে খুব নসীহত করেছেন,
মানুষ বিরোধীতা বা সমালোচনা করলেও আমরা যেনো হক্ক কথা বলা বন্ধ না করি।
আবু তোয়া হা আদনানের গোমরাহীর বিরুদ্ধে হক্ক
কথা বলার কারণে ড. আবু বকর জাকারিয়া, শায়খ মতিউর রহমান
মাদানীর মতো শায়খরা কতো গালি-গালাজ, হুমকি-ধামকি আর মিথ্যা অপবাদের শিকার হয়েছেন। পক্ষান্তরে
ফেইসবুকে তথাকথিত ইসলামী বক্তারা বিপরীতে আবু তোয়া হা আদনানের প্রশংসা করে নিজেদের
জনপ্রিয়তাকে নিরাপদ রাখায় ব্যস্ত রয়েছে।
(১) জামাতে ইসলামী জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পীর নামে
পরিচালিত Mizanur
Rahman Azhari Fan'S Family নামক ফেইসবুক পেইজে লিখা হয়েছে, “দুনিয়াতে আদর্শ দম্পতি দেখতে চাইলে
আবু ত্বহা আদনান-সাবিকুন নাহার দম্পতিকে দেখো। এরাই আমাদের জন্য জান্নাতি দম্পতির আদর্শ।”
(২) উম্মতের তথাকথতি ঐক্যপন্থী কিন্তু সালাফী
বিদ্বেষী বক্তার নামে পরিচালিত Abdul Hi Muhammad
Sifullah Fans নামক ফেইসবুক থেকে
পেইজে লিখা হয়েছে, “দুনিয়াতে আদর্শ দম্পতি দেখতে চাইলে আবু ত্বহা আদনান-সাবিকুন নাহার
দম্পতিকে দেখো। এরাই আমাদের জন্য জান্নাতি দম্পতির আদর্শ।
(৩) সেকুলার সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নাম ও ছবি দিয়ে পরিচালিত হুমায়ূন আহমেদ নামক ফেইসবুক পেইজে লিখা হয়েছে, “দুনিয়াতে আদর্শ দম্পতি দেখতে চাইলে আবু ত্বহা আদনান-সাবিকুন নাহার দম্পতিকে দেখো। এরাই আমাদের জন্য জান্নাতি দম্পতির আদর্শ।”
* আল্লাহ ভালো জানেন, এই কথা প্রথম কে লিখেছে
আর অজ্ঞ লোকেরা অন্ধের মতো তা নকল করে যাচ্ছে। মানুষের আক্বীদাহ কতো খারাপ হয়ে
গেছে চিন্তা করুন, মারাত্মক বিভ্রান্ত একজন লোককে “জান্নাতি দম্পতির আদর্শ।” বলে সবাই সার্টিফিকেট
দিচ্ছে! নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
(৪) গল্পকার আরিফ আজাদ লিখেছে, “আবু ত্ব-হা আদনান ভাই একজন সম্ভাবনাময় দ্বায়ী ইলাল্লাহ। তিনি মানুষকে
আল্লাহর পথে ডাকেন। শেষ যামানার সবচেয়ে বড় ফিতনা দাজ্জাল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করেন।”
(৫) ডাক্তার শামসুল আরেফীন শক্তি লিখেছে, “ওনার (আবু তোয়া হা আদনানের) কয়েকটা ক্লিপ শুনলাম। ঘুমের সুন্নাত
থেকে নিয়ে শেষ যমানার হাদিস, নারীবাদ থেকে নিয়ে বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা। কোনো ফেরকাবাজি
না, কোনো বিষোদ্গার না। আমার ভালো লেগেছে। শেষ যমানার হাদিসের উপর ভিত্তি করে বলা সম্ভাবনাগুলোর
সাথে আমি অনেকাংশে একমত। বিপদ পূর্বানুমান করে সতর্ক করা বা সতর্ক হওয়া খারাপ কিছু
না। যদি এটাকেই মানার জন্য জোর করা না হয় অন্যকে।”
বিদআ’তীদের ব্যাপারে “ধরি মাছ, না ছুঁই পানি” নীতি অবলম্বন করে, কিংবা
সরাসরি বিদআ’তীদের প্রশংসা করে জনপ্রিয়তা পাওয়া সেলেব্রিটি
দ্বাইয়ীদের বিভ্রান্তির জবাব নিয়ে লেখা আমাদের এই পোস্ট দেখুন -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/4624699014229476
___________________________________
আমি যদি শাসকের অন্যায় কাজের প্রতিবাদ
করি, তাহলে আমি কি খারেজী হয়ে যাবো?
আজ পর্যন্ত কোন সুস্থ মস্তিষ্কের লোক কি এই কথা
বলেছে, শাসকেরা সবাই ফেরেশতা কিংবা আল্লাহর ওলী, তাদের সমালোচনা
করা কুফুরী?
কোন মুসলিম শাসকের সামনে তার সংশোধনের নিয়তে নম্র
ভাষায় সমালোচনা করা বা তাঁকে উপদেশ দেওয়া হাদীসে সর্বোত্তম জিহাদ বলা হয়েছে। শাসকের কোন অন্যায়
কাজ বা গোমরাহী থেকে জনগণকে সতর্ক করার জন্য হেকমতের সহিত ক্বুরআন ও সুন্নাহর দিক নির্দেশনা
তুলে ধরা ইসলামের দাওয়াত এবং সমাজ সংস্কারের অংশ। আবার মিম্বরে
বসে বসে উগ্র ভাষায় লোকদেরকে বিদ্রোহের জন্য উস্কানি দেওয়া বা লোকদেরকে শাসকদের বিরুদ্ধে
ক্ষেপিয়ে তোলা খারেজীদের কাজ। আপনি কোথায়, কি উদ্দেশ্যে, কি ধরণের সমালোচনা করছেন - সে অনুযায়ী ভালো বা মন্দ প্রতিদান পাবেন।
___________________________________
খারেজী (পর্ব-১)
(এক)
=> কোন খারেজী নিজেকে খারেজী
বলে পরিচয় দেয় না, অথবা সে এই কথা বলে না যে, আমি একজন খারেজী।
=> কোন ব্যক্তি আসলে একজন খারেজী;
সে তা নিজেও বুঝতে পারে না। কিংবা কেউ তাকে খারেজী বললে, সে তা কস্মিনকালেও স্বীকার
করবে না যে, সে আসলে খারেজী।
মূলত এর কারণ হচ্ছে, খারেজীদের ব্যাপারে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ'লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আগে থেকেই সতর্ক করে গেছেন,
তারা যতই নেক আমল করুক না কেনো, প্রকৃতপক্ষে তারা হচ্ছে নিকৃষ্ট জাহান্নামী।
দলীলঃ
(১) আবূ যার রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার পরে
আমার উম্মতের মধ্যে অচিরেই একটি দলের উদ্ভব হবে, যারা ক্বুরআন পড়বে, কিন্তু তা তাদের
কন্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা এত দ্রুতবেগে ধর্মচ্যুত হবে, যেমন তীর ধনুক থেকে শিকারের
দিকে দ্রুত ছুটে যায়, অতঃপর তারা দ্বীনের পথে ফিরে আসবে না। এরা হচ্ছে সৃষ্টিকুলের
মধ্যে সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট।” সহীহ মুসলিমঃ
১০৬৭, আহমাদঃ ২১০২১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১৭০।
(২) ইবনু আবূ আওফা রাদিয়াল্লাহু
আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “খারিজীরা
হচ্ছে জাহান্নামের কুকুর।” সুনানে
ইবনে মাজাহঃ ১৭৩, মিশকাতঃ ৩৫৫৪। শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
সুতরাং যারা খারেজী হয়, তারা কেউই
জেনে বুঝে খারেজী হয় না। বরং ক্বুরআন ও হাদীস ভুল বুঝে সেটাকে প্রকৃত ইসলাম মনে করে
তারা খারেজী মতবাদ গ্রহণ করে।
(দুই)
বাহ্যিক আমলের দিক থেকে খারেজীরা
মুসলমান। বরং এই উম্মতের মাঝে সবচেয়ে বেশি নামায, রোযা, ইলম অর্জন, দাওয়াত দেওয়া, নিজে
ক্বুরআন পড়া, অন্যকে ক্বুরআন শিক্ষা দেওয়া, দান-সদক্বাহ করা, জিহাদের মতো বাহ্যিক নেক
আমল সবচেয়ে বেশি করবে খারেজীরা। এমনকি আপাত দৃষ্টিতে খারেজীদের বাহ্যিক নেক আমল সাহাবাদের
চেয়ে বেশি বলে মনে হবে!
দলীলঃ
আবূ সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু
আ’নহুকে বললাম, “আপনি কি
(খারিজী) হারূরিয়াদের সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে কিছু বলতে শুনেছেন?”
আবূ সাঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু
আ’নহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে একটি সম্প্রদায়ের কথা আলোচনা করতে শুনেছি,
“যারা হবে অত্যধিক ইবাদতকারী এবং তাদের নামায-রোযার তুলনায় তোমাদের
নিকট তোমাদের নামায-রোযা খুবই নগণ্য বলে মনে হবে। কিন্তু তারা দ্বীন থেকে দ্রুত গতিতে
বের হয়ে যাবে, যেমন ধনুক থেকে তীর শিকারের দিকে দ্রুত গতিতে চলে যায়।” সহীহ বুখারীঃ ৩৬১০, সহীহ মুসলিমঃ ১০৬৪, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ১৬৯।
(তিন)
খারেজীদের বয়স এবং জ্ঞান কম হবে।
কিন্তু খারেজীরা বেশি ক্বুরআন পড়বে, ক্বুরআনের কথা বেশি বলবে এ কারণে খারেজীদের কথা
আপাতদৃষ্টিতে খুব সুন্দর বলে মনে হবে।
দলীলঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “শেষ যামানায়
একদল তরুণ বয়সী, নির্বোধ লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সবচেয়ে উত্তম কথা বলবে।” সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবূ দাউদঃ ৪৭৬৭, নাসাঈ।
জনসাধারণের মাঝে যারা প্রকৃত আলেমদের
সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকবে, ক্বুরআন ও হাদীস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান না থাকার কারণে তারা
খারেজীদের মুখে ক্বুরআন শুনে তাদেরকেই আলেম বা হক্কপন্থী জামআ’ত বলে মনে করবে। এইভাবে খারেজী বক্তার কথা শুনতে শুনতে এক সময়
তারাও খারেজী মতবাদ গ্রহণ করবে।
(চার)
বর্তমান যুগে খারেজী মতবাদ দ্বারা
প্রভাবিত এক শ্রেণীর তরুণেরা দিন-রাত ইমাম মাহদী আর দাজ্জাল নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত থাকে।
অথচ তারা কি এটা জানে যে, তাদের মতো খারেজীদের মধ্য থেকেই দাজ্জাল বের হবে!
দলীলঃ
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু
আ’নহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এমন কিছু
মানুষ আসবে, যারা ক্বুরআন তিলাওয়াত করবে কিন্তু ক্বুরআন তাদের গলার নিচে যাবে না। যখনই
তাদের কোন দল বের হবে তাদেরকে কেটে ফেলা হবে।”
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু
আ'নহু বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম “যখনই তাদের কোন দল বের হবে তাদেরকে কেটে ফেলা হবে” - এই কথাটা প্রায় ২০ বারের বেশি সময় বলার পরে তিনি বললেন,
“যতক্ষণ
পর্যন্ত না তাদের (অর্থাৎ, খারেজীদের) মধ্য থেকেই দাজ্জাল বের হবে।”
সহীহ ইবনে মাজাহঃ ১/৭৫-৭৬, নং-১৪৪।
শায়খ আলবানী রহি’মাহুল্লাহ
হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
খারেজীদের মধ্য থেকেই দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ
করবে, কিন্ত জ্ঞানের অভাবে খারেজীরা দাজ্জালকে ঈসা আ’লাইহিস সালামের মতো একজন “মাসীহ” বলে বিশ্বাস করে ধোঁকা খাবে।
___________________________________
খারেজী (পর্ব-২)
খারেজীদের নিয়ে প্রথম পর্বে আপনাদের প্রশ্ন ছিলো,
“আমরা কিভাবে খারেজীদের চিনবো?”
আরবীতে খারেজী মানে হচ্ছে, যে বের
হয়ে গেছে। খারেজীদের এই নামকরণের উৎস হচ্ছে রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের একটি হাদীস।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামে বলেছেন, “পরবর্তী যামানায় এমন ধরণের লোক বের হবে, যারা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে, যেমনিভাবে
তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়।’’ তিরমিজি, হাসান সহীহ, আবু দাউদ, সহীহ।
খারেজীরা আপাতদৃষ্টিতে অনেক নামায রোযা, যুদ্ধ-জিহাদ করা ধার্মিক মুসলমান
কিন্তু প্রকৃত বাস্তবতা হচ্ছে তারা,
(১) ক্বুরআন ও সুন্নাহর আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেছে,
(২) তারা সাহাবাদের জামআ’ত এবং তাঁদের আদর্শ থেকে বের হয়ে গেছে,
(৩) তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআ’ত থেকে এবং
(৪) মুসলিমদের বৈধ আমীর বা শাসকের আনুগত্য থেকে বের হয়ে গেছে।
এ কারণে পথভ্রষ্ট এই দলকে সাধারণভাবে খারেজী বলা হয়।
কে খারেজী আর কে খারেজী নয়, আপনি বুঝতে পারবেন তার আক্বীদা বা বিশ্বাস কি তা
জানার মাধ্যমে। খারেজীদের অনেক ভ্রান্ত আক্বীদা এবং দ্বীন অনুসরণের ব্যাপারে
চরমপস্থা রয়েছে। খারেজীদের তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য যদি কারো মাঝে থাকে তাহলে আপনি
জেনে রাখুন, সেই ব্যক্তি খারেজীদের নীতি অনুসরণ করছে।
খারেজীদের তিনটি সবচেয়ে বড় গোমরাহী হচ্ছেঃ
(১) কবীরাহ গুনাহর কারণে কোন মুসলিমকে কাফির এবং চির জাহান্নামী বলে বিশ্বাস
করা।
(২) মুসলিম শাসকের অন্যায়, পাপ বা জুলুমের কারণে বৈধ কাজে তাদের আনুগত্য করতে
অস্বীকার করা। মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে অস্ত্র বা জবানের দ্বারা বিদ্রোহ ঘোষণা করা।
(৩) মুসলিম শাসক, আলেম বা সাধারণ জনগণকে কাফির ফতোয়া দিয়ে তাদের উপর আক্রমন,
হত্যা বা নির্যাতন করা।
বর্তমান সময়ে মুসলিমদের মাঝে আহলে সুন্নাহর আক্বীদা শিখানো হয় না, অধিকাংশ
মানুষ আলেমদের শরণাপন্ন হয় না। এই সুযোগে পথভ্রষ্ট জংগীরা তরুণদের মাঝে ব্যাপকভাবে
খারেজী মতবাদ প্রচার করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করছে। অনেকে খারেজী মতবাদে দীক্ষা
নিচ্ছে, কিন্তু তারা তা নিজেরাও বুঝতে পারছে না। এ কারণে আপনারা কোন ব্যক্তির মাঝে
খারেজীদের কোন আক্বিদা বা আমল দেখলেই তাকে ‘খারেজী’ বলে ঘোষণা করবেন না।
যাই হোক, প্রাচীনকালে ও বর্তমানে খারেজীদের অনেক দল ও উপদল মুসলিমদের মাঝে
প্রকাশ পেয়েছে। কখনো তারা মুসলিমদের মাঝে বসবাসকারী বিচ্ছিন্নতাবাদী জংগী দল
হিসেবে আবার কখনও তারা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। যেমন বর্তমান
ওমানের ক্ষমতাসীন শাসক এবং আলেম খারেজী মতবাদের অনুসারী।
আল্লামাহ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ ওমানের আলেমদের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন,
“ওমানের অধিকাংশ আলেম ইবাদী ফেরক্কার অনুসারী, আর ইবাদীরা খারেজীদের
একটি উপদল। (ওমানের বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি) আহমাদ ইবন হামাদ আল-খলিলি তাদের
নেতা। খলিলির লেখালিখির মাঝে খারেজী এবং জাহমী আক্বীদার প্রভাব রয়েছে। খলিলির রচনা
খুবই নিকৃষ্ট, তোমরা তার কাছ থেকে দ্বীনের ইলম গ্রহণ করো না। বরং তোমরা আহলে
সুন্নত ওয়াল জামআ’তের অনুসারীদের
কাছ থেকে ইলম গ্রহণ করো।”
শায়খ ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহকে
প্রশ্ন করা হয়েছিলো,
প্রশ্ন নং-১
ফযীলাতুশ-শায়খ, ইবাদী কারা? তাদের ব্যাপারে লোকদেরকে সতর্ক করা কি
জরুরী?
উত্তরে শায়খ বলেছেন, “ইবাদীরা খারেজীদের একটি উপদল, তাদের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে আব্দুল্লাহ
ইবনে ইবাদ নামক এক ব্যক্তি। ইবাদীরা খারেজীদের চরমপন্থী মাযহাবের অনুসারী। তারা
কবীরাহ গুনাহর কারণে কোন ব্যক্তিকে কাফির বলে ঘোষণা করে এবং তারা বিশ্বাস করে যে,
পাপী মুসলিম বান্দা চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। এটা খারেজীদের আক্বীদাহ। ইবাদীরা আরও
বিশ্বাস করে যে, ক্বুরআন মাখলুক্ব বা সৃষ্ট বস্তু (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)।
সুতরাং ইবাদীদের মাঝে খারেজী এবং জাহমী আক্বীদার মিশ্রণ ঘটেছে।”
প্রশ্ন নং-২
ফযীলাতুশ-শায়খ, ইবাদীদের এই আক্বীদাহ কি কুফুরীর পর্যায়ে পড়ে? তাদের
কারো পেছনে সালাত আদায় করলে, সেই সালাত কি পুনরায় আদায় করতে হবে?
উত্তরে শায়খ বলেছেন, এটা সর্বজনবিদিত যে, ইবাদীরা বলে ক্বুরআন মাখলুক্ব।
তারা মূলত জাহমীদের কথা নকল করে। যে ব্যক্তি বলে ক্বুরআন মাখলুক্ব, এমন ব্যক্তির
পেছনে সালাত আদায় করা জায়েজ নয়। নাআ’ম।”
শায়খ সালিহ আল-ফাউজান
হা’ফিজাহুল্লাহর বক্তব্যের লিংক -
https://www.youtube.com/watch?v=-zSwWXPvAF4
___________________________________
তালেবান (পর্ব-১)
(এক)
তালেবানরা আফগানিস্তানের ক্ষমতায় ফিরে আসায় দেওবন্দীদের মাঝে ঈদ লেগে
গেছে। কারণ তালিবানরা মূলত দেওবন্দী সূফীবাদের অনুসারী সশস্ত্র একটি গ্রুপ। কিছু
কিছু দেওবন্দী তালিবানদের জারি করা পুরনো একটি ফরমান শেয়ার করে উল্লাস প্রকাশ
করছে, যেখানে তালেবানরা আহলে হাদীসদের দাওয়াতী কাজ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলো। অবশ্য
আফগানিস্তানের প্রখ্যাত সালাফী আলেম এবং মুজাহিদ জামিলুর রহমান আফগানী
রহি'মাহুল্লাহর এক পুত্র আফগানিস্তান থেকে টুইট করে জানিয়েছেন, সেটা পুরনো একটা
ফরমান। বর্তমানে কুনার, নারিস্তান, জালালাবাদের মতো প্রদেশে এখন পর্যন্ত আহলে
হাদীসদের দাওয়াতী কাজে কোন বাধা দেওয়া হচ্ছে না।
(দুই)
দেওবন্দীদের সম্পর্কে আহলে হাদীসদের দৃষ্টিভিংগি কেমন?
উপমহাদেশের আহলে হাদীসরা সাধারণভাবে দেওবন্দীদেরকে মুসলিম বলে মনে
করে। তবে সূফীবাদ, আশআরী-মাতুরিদি আক্বীদার অনুসারী হওয়ার কারণে তারা আহলে সুন্নাত
নয় বলে মনে করে।
আহলে হাদীসরা সূফীবাদ বা এমন কিছু বিদআ’তে লিপ্ত থাকার কারণে দেওবন্দীদের কড়া সমালোচনা
করলেও, সাধারণভাবে তাদেরকে মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই কথার সবচেয়ে বড় প্রমাণ
হচ্ছে, অধিকাংশ আহলে হাদীসরা নিজ নিজ এলাকাতে দেওবন্দী মাদ্রাসা থেকে পড়াশোনা করা
ইমামের সহিত নিয়মিত জামআ'তে সালাত আদায় করে। এ কথা সর্বজন স্বীকৃত যে, কোন কাফিরের
ইমামতিতে সালাত আদায় করা জায়েজ নয়। কাফিরের ইমামতিতে সালাত আদায় করলে তা বাতিল এবং
সেই সালাত পুনরায় আদায় করতে হয়। আহলে হাদীসরা দেওবন্দীদেরকে মুসলিম মনে করে বলেই,
তাদের ইমামতিতে সালাত আদায় করা জায়েজ বলে মনে করে। তবে নির্দিষ্ট কোন দেওবন্দী
আলেম প্রকাশ্য বড় কুফুরী অথবা শির্ক করে, তাহলে তার কথা ভিন্ন। যেমন তাদের কেউ কেউ
মনে করে, আল্লাহ সর্বত্র, সবকিছুর মাঝে বিরাজমান। কেউ কেউ হুসাইন বিন মানসুর
হাল্লাজের "আনাল হক্ক" মতবাদে বিশ্বাসী। আবার কেউ কেউ মনে করে, পীরের
স্টেইজে আল্লাহ বসে থাকেন। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক।
(তিন)
বাংলাদেশী নিরীহ দেওবন্দীদের কারগুজার
পাকিস্তান, ভারত কিংবা আফগানিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের দেওবন্দীরা
অনেক নিরীহ, কারণ এদের হাতে কোন অস্ত্র বা বোমা কিছুই নেই। তারপরেও তুলনামূলক
নিরীহ এই দেওবন্দীরা
(১) ২০১৮ সালে ভোলাতে আহলে হাদীসদের মসজিদ ভেংগেছিলো। আল্লাহর
ইবাদতের জন্য ওয়াফকৃত মসজিদকে ‘মুরগীর খোঁয়াড়’ বলে অনলাইনে প্রচারণা চালিয়েছিলো (নাউযুবিল্লাহি
মিন যালিক)। অনেক দেওবন্দীরা আহলে হাদীসদের মসজির ভাংগার খবর শুনে পৈশাচিক আনন্দ
উল্লাসে মেতে উঠেছিলো।
(২) ২০২০ সালে ফরিদপুরে মসজিদের মাইকে উগ্রপন্থী দেওবন্দীদেরকে ডেকে
জড়ো করে সংঘবদ্ধ হয়ে একটি আহলে হাদীস মসজিদ ও মাদ্রাসা ভাংচুর এবং লুটপাট করেছিলো।
আহলে হাদীসদের মসজিদকে ‘মাসজিদে দ্বিরার’ বা বিভেদ সৃষ্টিকারী মুনাফিকদের আখড়া বলেছিলো।
মসজিদ ভাংগার পরে কথিত আল্লামাহ মামুনুল হক্ক সেখানে কোন মসজিদ ছিলো না বলে
অনলাইনে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিলো। দেওবন্দী প্রেমী আহমাদুল্লাহ তথাকথিত
মধ্যমপন্থীর মুখোশ থেকে বেড়িয়ে এসে “বিভেদ সৃষ্টিকারী চরম অপরাধী” এবং “সেখানে কোন মসজিদ
ছিলো কি না, নিশ্চিত জানি না” বলে এই ঘটনার
জন্য পরোক্ষভাবে আহলে হাদীসদেরকে দোষারোপ করেছিলো।
(৩) দুই দিন পরপরই খবর বের হচ্ছে, শুধুমাত্র আমীন জোরে বলা এবং
রাফাউল ইয়াদাইন করার কারণে মুসল্লিদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেওয়া হচ্ছে, আহলে
হাদীসদেরকে মসজিদে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে, কখনো মারধর বা অপমান করা হচ্ছে।
(চার)
এইগুলো কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, আমাদের দেশে এমন ঘটনা কম হলেও, ভারত
পাকিস্তানে এমন বহু ঘটনা ঘটছে। উগ্রপন্থী দেওবন্দীরা আহলে হাদীসদের মসজিদ ভাঙার
মতো কুফুরী কাজে লিপ্ত হয়েছে, বিনা অপরাধে মসজিদ থেকে মুসল্লিদেরকে বের করে
দিচ্ছে, কিন্তু দেওবন্দী আলেম বা নেতারা এমন কাজের প্রতিবাদ করেছে, এমন কখনো হয়নি।
বরং ঘুরিয়ে ফিরিয়ে এগুলোর পক্ষে সাফাই গেয়েছে বা উস্কানি দিয়েছে, এমন অনেক উদাহরণ
রয়েছে।
চিন্তা করে দেখুন, অস্ত্রের জোর ছাড়াই যাদের হাত থেকে মসজিদের মতো
পবিত্র ভূমি নিরাপদ না, মসজিদের ভেতরে নিরাপরাধ মুসল্লিরা নিরাপদ না, অস্ত্র হাতে
পেলে আহলে হাদীসদের প্রতি এরা কতোটা কঠোর হতে পারে? আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন।
___________________________________
তালেবান (পর্ব-২)
১৯৯৬ সালে তালেবান “ইসলামী আমিরাত অফ আফগানিস্তান” নামে একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে।
তালেবানদের নবগঠিত এই রাষ্ট্রকে চারটি মুসলিম দেশ স্বাগত জানিয়ে তাদেরকে
আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি প্রদান করে। দেশসমূহ হচ্ছেঃ
(১) পাকিস্তান,
(২) তুর্কেমেনিস্তান,
(৩) সৌদি আরব এবং
(৪) সংযুক্ত আরব আমিরাত।
২০০১ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং দুষ্টের শিরোমনি
আমেরিকা আফগানিস্তান আক্রমন করে দেশটার শান্তি ও নিরাপত্তাকে নষ্ট করে, ক্ষমতাসীন
তালেবানদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করে। আমেরিকা আফগানিস্তানে তাদের সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থ
রক্ষার জন্য একটি গণতান্ত্রিক পুতুল সরকারকে ক্ষমতায় বসায়। দীর্ঘ বিশ বছর ধরে
তালেবানদের সাথে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর অবশেষে আমেরিকা তালেবানদের সাথে শান্তি
চুক্তি করে আফগানিস্তান থেকে বিদায় নেয়। আচমকা মাঠ খালি করে আমেরিকার পলায়ন
স্বাভাবিকভাবেই আফগানিস্তানের ক্ষমতা লাভের জন্য পূর্বের ক্ষমতাসীন তালেবানদের
সাথে আমেরিকার মদদপুষ্ট সরকারের মাঝে যুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় কাতারের
রাজধানী দোহাতে তালেবান এবং আফগান সরকারের প্রতিনিধি দলের মাঝে দর কষাকষি চলে,
শান্তিপূর্ণভাবে দুই পক্ষ কোন সমাধানে আসতে পারে কিনা। আফগান সরকার ক্ষমতা ছাড়তে
অনিচ্ছুক থাকায় তালেবানরা অস্ত্র দ্বারাই একের পর এক রাজ্য দখল করে। আফগান সরকারের
পতন যখন নিশ্চিত তখন আফগান প্রেসিডেন্ট দেশ থেকে পালিয়ে জীবন রক্ষা করে।
(১) তালেবানকে উতখাত করে আফগানিস্তানের গণতান্ত্রিক সরকার মূলত
আমেরিকার স্বার্থে প্রতিষ্ঠিত, এই সরকার ইসলাম বা মুসলিমদের কল্যাণের জন্য
প্রতিষ্ঠা করা হয়নি।
(২) বিগত ২০ বছর ধরে আমেরিকা আফগানিস্তান সরকারকে ট্রেইনিং দেওয়ার
জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছেঃ
৮৮ বিলিয়ন ইউএস ডলার
= ৮৮০০ কোটি ইউএস ডলার
= ৭,৪২,২৮০ কোটি টাকা!
অথচ আমেরিকা আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের মাত্র এক মাসের
ব্যবধানে আফগান সরকার তালিবানের নিকট পরাজিত হয়েছে। এ থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট,
আমেরিকা বিগত বিশ বছর ধরে আফগানিস্তানে তাদের দখলদারিত্ব বজায় রাখার জন্য
আফগানিস্তানে তাদের কিছু অনুগত লোকদেরকে দিয়ে একটা পুতুল সরকার লালন-পালন করে
আসছে।
___________________________________
খারেজীরা জাহান্নামের কুকুরঃ
"বোকো হারাম" নামক নিকৃষ্ট খারেজীদের
একটি দল গত শনিবার নাইজেরিয়াতে অন্তত ১১০ জন কৃষক এবং পথচারীকে হত্যা করেছে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি
রাজিউন।
___________________________________
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় খারিজীদেরকে জাহান্নামের
কুকুর এবং আকাশের নিচের সর্বনিকৃষ্ট নিহত বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ইবনু আবী আওফা (রাঃ) থেকে
বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ
করেন:
الْـخَوَارِجُ كِلَابُ النَّارِ.
‘‘খারিজীরা হচ্ছে জাহান্নামের
কুকুর’’। ইবনু মাজাহ্ঃ ১৭২। সহীহ, শায়খ আলবানী
রহি'মাহুল্লাহ।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন:
شَرُّ قَتْلَى قُتِلُوْا تَحْتَ أَدِيْمِ السَّمَاءِ، وَخَيْرُ قَتِيْلٍ مَنْ قَتَلُوْا، كِلَابُ أَهْلِ النَّارِ، قَدْ كَانُوْا هَؤُلَاءِ مُسْلِمِيْنَ فَصَارُوْا كُفَّارًا.
‘‘(খারিজীরাই হচ্ছে)
আকাশের নিচের সর্বনিকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি এবং তারা যাদেরকে হত্যা করবে
তারাই হবে সর্বোৎকৃষ্ট নিহত ব্যক্তি। তারা হচ্ছে জাহান্নামীদের কুকুর। তারা ছিলো একদা মুসলিম অতঃপর
হলো কাফির।’’ তিরমিযীঃ ৩০০০; ইবনুঃ মাজাহ্ ১৭৫। হাসান, ইমাম তিরমিযী রহি'মাহুল্লাহ।
এমনকি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ জাতীয় খারিজীদেরকে হত্যা
করার ব্যাপারে সাওয়াবও ঘোষণা দিয়েছেন।
‘আলী ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ্ (রাযিয়াল্লাহু
আন্হুমা) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
يَأْتِيْ فِيْ آخِرِ الزَّمَانِ قَوْمٌ حُدَثَاءُ الْأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الْأَحْلَامِ، يَقُوْلُوْنَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ، يَمْرُقُوْنَ مِنَ الْإِسْلَامِ كَمَا يَمْـرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يَقْرَؤُوْنَ الْقُرْآنَ، لَا يُجَاوِزُ حَنَاجِرَهُمْ، فَأَيْنَمَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاقْتُلُوْهُمْ، فَإِنَّ قَتْلَهُمْ أَجْرٌ لِمَنْ قَتَلَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
‘‘শেষ যুগে এমন এক জাতি আসবে যাদের
বয়স হবে কম এবং তারা হবে বোকা। কথা বলবে সর্বশ্রেষ্ঠ কথা। তবে তারা ইসলাম থেকে তেমনিভাবে
বের হয়ে যাবে যেমনিভাবে বের হয়ে যায় তীর শিকারের শরীর থেকে। তারা কুর‘আন পড়বে ঠিকই। তবে তাদের কুর‘আন গলা অতিক্রম করবে না তথা কবুল
করা হবে না। তোমরা যেখানেই তাদেরকে পাবে হত্যা করবে। কারণ, তাদেরকে হত্যা
করলে কিয়ামতের দিন সাওয়াব পাওয়া যাবে।’’ বুখারীঃ ৩৬১১,
৫০৫৭, ৬৯৩০; মুসলিম ১০৬৬;
ইবনু মাজাহ্ ১৬৭।
উতসঃ হারাম ও কবীরা গুনাহ, শায়খ মুস্তাফিজুর
রহমান।