মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৪

সুন্নত মানা কি শুধুই “সুন্নত” নাকি, কখনো কখনো সুন্নত মানা ফরয হয়??

সুন্নত মানা কি শুধুই সুন্নত নাকি, কখনো কখনো সুন্নত মানা ফরয হয়??
আমরা সকলেই জানি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে দাঁড়ি রাখার জন্য আদেশ দিয়েছেন, অর্থাৎ তিনি আমাদের জন্য এটাকে ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক বলে আদেশ দিয়েছেন।
এইভাই প্রশ্ন করেছেন দাঁড়ির ব্যপারে কুরআনে কি বলা হয়েছে...
এর উত্তর দেওয়ার পূর্বে আগে একটা জিনিস জানতে হবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে যে আদেশ দিয়েছেন সেটা মানা স্বয়ং আল্লাহও আদেশ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন,
হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসুলের আনুগত্য কর। [সুরা নিসাঃ ৫৯]
রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা। [সুরা হাশরঃ ৭]
এই আয়াতগুলোতে দেখা যাচ্ছে - আল্লাহ আমাদেরকে স্পষ্ট ভাষায় সরাসরি আদেশ করেছেন, রাসুল আমাদেরকে যা আদেশ করেন তা মান্য করার জন্য এবং তিনি যা থেকে নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকার জন্য। শুধু এইনা - রাসুলের আনুগত্যের ব্যপারে আমাদেরকে তিনি সতর্কও করে দিয়েছেন, আমরা যেন তাঁকে ভয় করি কারণ তিনি কঠোর শাস্তিদাতা। আর, এই জন্য আল্লাহ তাআলা রাসুলের আদেশকে তাঁর নিজের আদেশের সমান বলে আখ্যায়িত করেছেন,
যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। [সুরা নিসাঃ ৮০]

সুতরাং, রাসুল যা আদেশ করেছেন স্বয়ং আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য সেটা মান্য করা ফরয করে দিয়েছেন। এখানে দুইটা ব্যপার উল্লেখ করা জরুরী।
১. রাসুল কোনো কিছু এমনি নিজে থেকে আমাদেরকে করতে আদেশ বা নিষেধ করতেন না। বরং তাঁর কাছে আল্লাহ ওয়াহী করতেন, সেই অনুযায়ী তিনি আমাদেরকে আদেশ বা নিষেধ করতেন। এ কথার দলীল হচ্ছে
আর তিনি (রাসুল) নিজের মনগড়া কোন কথা বলেন না, বরং যা তাঁকে ওয়াহী করা হয় তাই বলেন। [সুরা ক্বামারঃ ৩-৪]

রাসুলের কাছে যেই ওয়াহী করা হতো যেইগুলো কুরআনে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যেইগুলোকে আমরা কুরআনের আয়াত বলি। এছাড়াও এমন আরেক প্রকার ওয়াহী আছে, যেইগুলো কুরআনে লিপিবদ্ধ নয় কারণ সেইগুলো আদেশ আল্লাহর কিন্তু সেই ওয়াহীর ভাষা হচ্ছে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর। মানে আল্লাহ রাসুল (সাঃ) কে জিব্রাইল (আঃ) মারফত আদেশ করেছেন, আপনার উম্মতদেরকে এই কাজ করতে আদেশ করেন বা এই কাজ থেকে নিষেধ করেন। সেই আদেশ বা নিষেধ তিনি নিজের ভাষায় আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন, এইগুলোকে আমরা হাদীস বলি। পক্ষান্তরে, ক্বুরানুল কারীম হচ্ছে আল্লাহর আদেশ+এর কথাগুলো স্বয়ং আল্লাহর।
২. দ্বিতীয় ব্যপার হচ্ছে, রাসুলের সব আদেশই আমাদের জন্য আদর্শ, আমরা নিজেদের দুনিয়াবি ও আখেরাতের কল্যনাএর জন্য সাধ্য অনুযায়ী সেইগুলো মানার চেষ্টা করবো, কিন্তু সুন্নতের সবগুলো ফরয পর্যায়ের নয়। কিছু আদেশ আছে তিনি আমাদেরকে করতে উতসাহিত করেছেন, কিন্তু করা বাধ্যতামূলক করে দেন নি। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
আমার উম্মাতের উপর যদি কষ্টকর মনে না করতাম, তাহলে তাদেরকে প্রত্যেক সালাতের সময় দাঁতন (মেসওয়াক) করার আদেশ করতাম।
বুখারীঃ ৮৮৭, মুসলিমঃ ৫৮৯।
এই হাদীস থেকে বুঝা যাচ্ছে, তিনি মিসওয়াক করতে আমাদেরকে আদেশ করেছেন কিন্তু এই আদেশ ফরয বা ওয়াজিব নয়। এইগুলোকেই আমরা সুন্নাহ বলি, যা পালন করলে অনেক সওয়াব, কিন্তু মান্য না করলে গুনাহ নেই।
আর কিছু আদেশ আছে যেইগুলো তিনি আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক করেছেন। এদের মধ্যে এমন হচ্ছে পুরুষদের জন্য টাখনুর উপরে কাপড় পড়া, দাড়ি রাখা ইত্যাদি।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআ'লা ৩ শ্রেণীর মানুষের সাথে কথা বলবেন না, তাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত করবেন না, এমনকি তাদের প্রতি তাকাবেন না।
১. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী
২. উপকার করে খোটাদানকারী
৩. মিথ্যা কসম করে দ্রব্য বিক্রয়কারী।
সহীহ মুসলিম।
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে (পুরুষেরা) টাখনুর নিচে কাপড় পড়লে জাহান্নামে যাবে, সুতরাং এটা হারাম এবং কবীরা গুনাহ। এথেকে বোঝা যায় পুরুষদের জন্য কাপড় টাখনুর উপরে রাখা ফরয।
অনুরূপভাবে অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা এটাও প্রমানিত যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁড়ি রাখা আমাদের জন্য ফরয/ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) করে দিয়েছেন। এসম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই লেখাটা পড়ুন...
দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব, শেইভ করা ফাসেকীঃ

https://www.facebook.com/photo.php?fbid=715066485192768&set=pb.125167817515974.-2207520000.1393750369.&type=3&src=https%3A%2F%2Ffbcdn-sphotos-g-a.akamaihd.net%2Fhphotos-ak-ash3%2Ft1%2F1932335_715066485192768_1017292339_n.jpg&size=720%2C287

রবিবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৪

একজন জিহাদীর বক্তব্যের জবাব

"শাইখ আলবানীর রাহ. সাথে যাদের বাহাস হয় তারা এবং বর্তমানে যারা জিহাদের দাওয়াহ করে এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন। ঐ সময় আরবে কিছু তাকফিরী গ্রুপ ছিল, যারা কথায় কথায় তাকফির করত যেমন শাকরী মুস্তফার দল। বস্তুত শাইখ আলবানীর ঐ আলোচনার কথাগুলো ভিন্ন স্থানে প্রয়োগ করে প্রমাণ করতে চেষ্টা করে এরাও ওদের মত। হাস্যকর কথা! এই অজ্ঞরা এটাও জানে না যে বর্তমানে যারা জিহাদের ঝান্ডা তুলেছেন তাদের সাথে ওদের কত দূরত্ব। শাইখুল মুজাহিদীন আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ. যাকে শাইখ উসামার উস্তাদ বলা হয়, তিনি তো শাইখ আলবানীর বন্ধু ছিলেন, জর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সাথে দর্স দিয়েছেন, কই শাইখ আলবানী তো উনার বিরুদ্ধে কিছু বলেন নি কখনও। বরং শাইখ বিন বায জীবিত থাকাবস্থায় শাইখ আব্দুল্লাহ আযযামের কিতাবাদী সৌদি তে নিষিদ্ধ হয় নি, হয়েছিল শাইখ বিন বাযের মৃত্যুর পর। শাইখ হামুদ বিন আল উক্বলা রাহঃ কে চেনেন? উনাকে উসতাযুল আসাতিযা বলা হয়। শাইখ মুহাম্মাদ বিন স্বালিহ আল ফাওজান আল ফাওজানের উস্তাদ তিনি। উনি তো মোল্লা ওমারকে বাইয়াত দিয়েছিলেন চিঠি পাঠিয়ে। "আদ-দুরার আস-সানিয়া" এই কিতাবের নাম শুনেছেন?? ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রাহঃ) ও তাঁর বংশ ধরদের ফতোয়া সংকলন। এটা একটা masterpiece. অথচ এদেশের কথিত সালাফীরা এই কিতাবের ৫ পৃষ্ঠাও অনুবাদ করে না, কারণ ঠিক শুরুতেই আক্বীদার আলোচনায় তাওহীদে হাকিমিয়া নিয়ে কথা আছে। শাইখ নাসির বিন হামাদ আল ফাহাদ(আল্লাহ তাঁর মুক্তি ত্বারান্বিত করুন) তিনি ইমাম সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী'আহ অনুষদের ডিন ছিলেন। হাদিসের ৯ কিতাবের সনদ সহ হাফিয। হক্ব বলায় উনি আজ কারাগারে। উনাকে নিশ্চয়ই এমনি এমনি ডিন বানানো হয় নি। বাকীদের কথা বাদ দেন শাইখ মুহাইসিন তো হারাম শরীফের খতিব ছিলেন এই কয়েক বছর আগেও। উনাকে কেন গ্রেফতার করা হয়? এরা যা করে তা হলো অপপ্রচার। আপনি ডা গালিব সাহেবদের ফতোয়া পড়েন, দেখবেন তারা বলেছেন ফিদায়ি হামলা আত্নহত্যা তাই না জায়িজ। অথচ শাইখ আলবানী ও বিন বাযের স্পষ্ট ফতোয়া হল এটা জায়েজ এই বিষয়ে উভয় শাইখের টেপ আছে"।

এই কমেন্টের পুরোটাই ভুল তথ্য দিয়ে পূর্ণ। সম্ভবত কোন জিহাদী বক্তা বা লেখক আপনার এবং আপনার মতো বহু তরুণ বয়সী ছেলেদের অজ্ঞতার সুযোগ নিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে।
বর্তমানে যারা জিহাদের দাওয়াহ করে এরা সম্পূর্ণ ভিন্ন...
এই কথা আপনাকে কে বললো? যেই সমস্ত তাকফিরিদের সাথে শায়খ আলবানীর বিরোধ সবচেয়ে বেশী ছিলো তাদের মধ্যে রয়েছে সফর আল-হাওয়ালি, সালমান আল-আওদাহ, মুহাম্মদ আল-সুরুর, যারা কোন এক সময় নিজেদেরকে সালাফী(!) বলে দাবী করতো। এমনকি এরা এতো চরমপন্থা অবলম্বন করে যে, শায়খ আলবানীকে তারা #মুর্জিয়া বলে ঘোষণা করেছিলো। বর্তমান যুগের তাকফিরিরা যেমন সমকালীন আলেমদেরকে মুর্জিয়া বলছে, এরা আসলে তাদের পূর্ববর্তী তাকফিরি আলেমদের কাছ থেকে শুধু কপি করছে। বর্তমান যুগের চরমপন্থী তাকফিরীদের ব্যপারে শায়খ আলবানীর বক্তব্য ছিলো
 এরা কিছু ব্যপার ছাড়া অন্য ব্যপারগুলোতে খারেজীদের মতোই।
https://www.youtube.com/watch?v=On1T7P3AB_s

আব্দুল্লাহ আযযাম রাহ. যাকে শাইখ উসামার উস্তাদ বলা হয়, তিনি তো শাইখ আলবানীর বন্ধু ছিলেন...
এটা ভুল ও বাজে কথা। আব্দুল্লাহ আযযম শায়খ আলবানীর বন্ধু ছিলোনা, ছাত্র ছিলো। তবে কেমন ছাত্র ছিলো?
এই আব্দুল্লাহ আযযম এবং তার দল ইখোয়ানুল মুসলিমিন(!) শায়খ আলবানীকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে তাকে ব্যান(!) করে তাকে বয়কট করে এবং তার বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক(!) করা শুরু করে। আব্দুল্লাহ আযযম কোন যাচাই-বাছাই ছাড়াই এই ব্যপারে ইখোয়ানুল মুসলিমিনের #তাকলিদ করে। আশা করি এতেই স্পষ্ট, শায়খ আলবানীর ছাত্র থাকলেও তার ধরণ কেমন ছিলো। পুরো ঘটনা শায়খ নিজেই বর্ণনা করেছেন
https://www.youtube.com/watch?v=6LYAdAmUqlA    

আব্দুল্লাহ আযযম ছিলেন একজন ইখোয়ানি, যিনি ইখোয়ানি মানহাজের উপরেই ছিলেন। আর ইখোয়ানি এবং তাদের মানহাজের সাথে শায়খ আলবানীর সম্পর্ক সেইরকমই ছিলো যা বর্তমানে শায়খ রাবীর সাথে জিহাদীদের।

মোল্লা ওমারকে বাইয়াত দিয়েছিলেন চিঠি পাঠিয়ে...
খিলাফত আর বায়াততো এখন হাতের মোয়া হয়ে গেছে, যে যেইদিকে পারছে খিলাফত ঘোষনা করছে আর পতঙ্গের পালের মতো আকলহীন কিছু মানুষ সেইদিকেই ঝাপিয়ে পড়ছে। সর্বশেষ আফ্রিকাতেও একটা খিলাফত ঘোষণা করেছে। জানিনা, মক্কা-মদীনা থেকে কয়জন আলেম(!) সেই খলিফার কাছে বায়াত দিয়েছে? মোল্লা ওমর আফগানিস্থানের আমির হিসেবে সেখানকার মানুষের বায়াত নিতে পারেন। কিন্তু মুসলিম আমির ও ওলামাদের শুরা ছাড়াই নিজে নিজেকে আমীর ঘোষণা করে সারা দুনিয়ার মুসলমানদের বায়াত দাবী করা, চরম মূর্খতা ছাড়া আর কিছুইনা। আর এইরকম স্বঘোষিত মিথ্যা খিলাফতের কাছে যারা বায়াত দেয়, আমরা আল্লামাহ আব্দুল্লাহ মুহসিনের মতোই আমরা বলবো, তারা শয়তানের কাছে বায়াত করেছে।

তিনি ইমাম সৌদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী'আহ অনুষদের ডিন ছিলেন। হাদিসের ৯ কিতাবের সনদ সহ হাফিয...
এইগুলো আবেগের বশবর্তীহ হয়ে হাস্যকর যুক্তি...জুহাইমান আল-খাওয়ারিজের সাথে মদীনাহ ইউনির এমন ছাত্র ছিলো যাদের ৬টা হাদীস গ্রন্থ মুখস্থ ছিলো। আর পজিশান বা ডিগ্রী কারো ইলমের গ্যারান্টি নয়, একথা বহু ওলামাই বারবার করে উল্লেখ করেছেন। বরং সে কার কাছে পড়াশোনা করেছে, সে কোন মানহাজ অনুসরণ করে, তার ব্যপারে অন্য আলেমদের কি বক্তব্য এই বিষয়গুলো যাচাই না করেই সাধারণ মানুষের কাউকে আলেম মনে করা বর্তমান যুগের বড় একটা ফেতনা।

তাওহীদে হাকিমিয়া নিয়ে কথা আছে...
তাওহীদে হাকিমিয়া নিয়ে কথা থাকবেনা কেনো? যেকোন আকীদার বইয়ে তাওহীদে হাকিমিয়ার কনসেপ্ট অবশ্যই থাকবে। তবে ওলামারা একে ৪র্থ ভাগে ভাগ করার বিরোধীতা করেছেন এবং মূলত একে ৪র্থ ভাগে ভাগ করার দাবী তুলেছিলো কিছু তাকফিরী মনোভাবের লোকেরা। আর এটা চরমপন্থী খারেজীদের একটা লক্ষণ, এক কথায় বলতে গেলে, খারেজীরা ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহ বলেই আলী রাঃ কে হত্যা করেছিলো। তারা হাকিমিয়াহ নিয়ে চরমপন্থী ধ্যান-ধারণা পোষণ করেই খারেজী হয়েছিলো।

শাইখ মুহাইসিন তো হারাম শরীফের খতিব ছিলেন এই কয়েক বছর আগেও...
শাইখ মুহাইসিন তো অনেক ইয়াং, তাকফিরী মনোভাবের কারণ সালমান আল-আওদাহকে গ্রেফতার ব্যন ও গ্রেফতার করার জন্য সুপারিশ করছিলেন স্বয়ং ইমাম ইবনে বাজ রহঃ!

সুতরাং, সেই আওদাহর পথ ধরে যারাই এইরকম তাকফিরী মনোভাব পোষণ করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবে, আমিরদের উচিত সেই ব্যপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া। এতোই যদি শায়খ বিন বাজের নাম মুখে নেন, তাহলে খোঁজ নিয়ে দেখুন, আওদাহর জেলে যাওয়া এবং পরবর্তীতে ঘটনাগুলো নিয়ে শায়খ ইবনে বাজ রহঃ এর ভূমিকা কি ছিলো। উল্লেখ্য, এই সালমান আল-আওদাহ ই হচ্ছেন, আল-কায়েদার মুফতি ও ইমাম(!), আনোয়ার আল-আওলাকির আদর্শ আলেম, যার সাথে অল্প সময় দেখা করেই আওলাকি নিজেকে ধন্য মনে করতেন। অবশ্য, আওলাকির চরমপন্থার কারণে আওদাহ ই তাকে তোওবা করতে আহবান জানান।  

সর্বশেষ, বর্তমানে কিছু আহলুল হাওয়ার বক্তা/লেখক বিভিন্ন কৌশলে দেখানোর চেষ্টা করে, বিগত সালাফী ওলামাদের সাথে বর্তমানে জীবিতি সালাফি ওলামাদের অনেক পার্থক্য, জীবিতরা পূর্ববর্তী সালাফি আলেমদের মানাহজ থেকে সরে গিয়ে দরবারী দালাল হয়ে গেছে!? তাদের জন্য উপহার হিসেবে নিচের এই ৩টা ঘটনার বয়ান করা হলো আশা করি এরা উলামাদের সংস্পর্শে ফিরে আসবে, নয়তো শায়খ বিন বাজ শায়খ ইবনে উসায়মিনকে ভালোবাসার মিথ্যে অভিনয় করে মানুষের সাথে প্রতারণার অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকবেন।
. উসামা বিন লাদেন যখন বিদ্রোহ করে সোউদি আরবে ফেতনা সৃষ্টি করলো তখন শায়খ বিন বাজ রহঃ এর ফতোয়া
শায়খ ইবনে বাজ এর ফতোয়াঃ
https://www.youtube.com/watch?v=_laLwEEHsDg

শায়খ ইবনে বাজ এর ফতোয়া অন্য ওলামায়ে কিবাররা গ্রহণ করেন তার স্বাক্ষীঃ
https://www.youtube.com/watch?v=1-a65Og2uow
আর সর্বশেষ, জীবিত ও মৃত সালাফি ওলামায়ে কিবারদের ফতোয়া সবগুলো একসাথেঃ
https://www.youtube.com/watch?v=mImIQ05gJoA

. রিয়াদে যখন আত্মঘাতী বোম্বিং করলো কিছু মুজাহিদ(!) তখন শায়খ ইবনে বাজ ও শায়খ ইবনে উসায়মিন রহঃ এই ২ জনেই তাদেরকে কতল করা উচিত বলে ফতোয়া দেন। পরবর্তীতে আলেমদের ফতোয়ার ভিত্তিতেই তাদেরকে হত্যা করা হয়। কিছু অল্প বয়ষ্ক ছেলে-পুলো মনে করে, আমেরিকার সাথে জিহাদ করা না করা নিয়ে কি-বোর্ড মুজাহিদিনদের সাথে ওলামাদের মূল দ্বন্দ্ব। অথচ তার অনেক আগেই কি-বোর্ড মুজাহিদদের ইমামদেরকে যখন সালাফী ওলামারা খারেজীদের রাস্তা বলে ফতোয়া দেন তখন থেকেই ওলামাদের সাথে কি-বোর্ড মুজাহিদিনদের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়।
. ফিদায়ি হামলা আত্নহত্যা তাই না জায়িজ...
তথাকথিত ফিদায়ী হামলা (সাধারণ যাত্রীবাহী বিমান হাইজ্যাক করে হামলা করা বা হত্যা করার হুমকি দেওয়া, ৯/১১, বাংলাদেশে জেএম বি) এইগুলো হারাম ফতোয়া শুধু আব্দুল্লাহ গালিব দেন নি, দিয়েছেন ইবনে বাজ, ইবনে উসায়মিন, ইবনে জিব্রীন। আর রিয়াদে যেটা করেছিলো, সেটার বিরুদ্ধে যেই সমস্ত ওলামায়ে কিবার ফতোয়া দিয়েছিলেন তাদের নাম লিখলে পাতা শেষ হয়ে যাবে।

বর্তমানে কিছু তরুণ শ্রেণীর মানুষ আলেমদেরকে ত্যাগ করে অল্পবয়সী চরমপন্থী বক্তদেরকে তাদের রাহবার বা পথপ্রদর্শক হিসেবে বেছে নিয়েছে। ইলমের অভাবে এই ছেলেগুলো হাওয়া বা প্রবৃত্তির অনুসারী বক্তাদের মন ভোলানো ওয়াজ/লেকচার শুনে তাদেরক ইমাম, মুফতি, মুজাহিদ মনে করছে। যাই হোক, যুগে যুগে কালে কালে নির্ভরযোগ্য আলেমদের সংস্পর্শ ত্যাগ করে যারা ইসলামের ঝাণ্ডাকে উড্ডিন করতে চেয়েছে, তাদের নিজেদেরই পতন হয়েছে। যেমন হয়েছিল আলী (রাঃ) এর বিরোধীতাকারী খারেজীদের। ঐ খারেজীরা কিন্তু কোন কুফরী আকীদা পোষণ করত না, শিরক করত না, এমনকি তারা কোন খারাপ চরিত্রের অধিকারীও ছিল না। কিন্তু তারা ইসলাম বুঝতে বাড়াবাড়ির আশ্রয় নিয়েছিল। নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা অনুযায়ী চলতে চেয়েছি। তাই তারা নিক্ষিপ্ত হয়েছে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে।

[Collected & Edited from Shaykh Abdullah Al Kafi]

শনিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৪

মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব - ২)

মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব - ২)
      
মূল পোস্টের আগে কিছু কথা,
=> কিছু মানুষ বলছে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাকে কে কি লিখেছে বা ভুল করেছে এটা জিজ্ঞাস করবেন না, যারা অন্যদের ভুল ধরে তারা ফেতনাবাজ!
আমাদের জবাবঃ আমরা শিরক অথবা বেদাতের বিরুদ্ধে বলার কারণে ফেতনাবাজ নই, বরং আপনি অল্প বিদ্যা নিয়ে শিরক বেদাতের বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করাকে ফেতনা আখ্যায়িত করে #দাওয়াতের বিরোধীতা করছেন।

মাওলানা মওদুদী ও সাইয়েদ কুতুবের বইগুলো বা সূফীবাদীর শিরকি-বেদাতী বইগুলো তাদের অন্ধভক্তরা ইসলাম মনে করে অনুবাদ করে মানুষের মাঝে প্রচার করে তাদেরকে বিভ্রান্ত করছে। এইগুলোর বিরুদ্ধে লেখালিখি না করলে সরলমনা মুসলমানেরা ইলমের অভাবে এই সমস্ত ভ্রান্ত মতবাদের গর্তে পড়বে। এইজন্য, শিরক ও বেদাতের বিরুদ্ধে মানুষকে সতর্ক করে দেওয়া কারো নফল নামায রোযা থেকে উত্তম। দয়া করে যদি না জানেন, জানার চেষ্টা করুন। আর কিছু না পারেন, অজ্ঞতাবশত আন্দাজে কথা বলে হক্কের বিরোধীতা করবেন না। বিস্তারিত দেখুন এই পোস্টে
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/925619510804130/?type=1&relevant_count=1

=> আরো কিছু মানুষ বলছে, আমিতো মাওলানা মওদুদীর তাফসীরে কোন ভুল পাইনি!
আমাদের জবাবঃ ১ম কথা, মাওলানা মওদুদীর তাফসীর পড়ার জন্য আপনাকে কে বলেছে? কোন আলেম কি আপনাকে এই বই পড়তে উপদেশ দিয়েছেন? মার্কেটে বই পাওয়া যায় আর কোন অন্ধভক্ত ইসলামী বই বলে আপনাকে চাপিয়ে দিলো, আর আপনি চোখ বন্ধ করে সেই বই কিনে পড়া শুরু করলেন? রাস্তায় ফুটপারে কোন কবিরাজ যদি হার্টের চিকিৎসা করে, আপনি কি যাবেন সেখানে আপনার বাবার চিকিৎসা করাতে? যদি না যান, তাহলে যাচাই-বাছাই ছাড়াই আপনি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস নিয়ে সব বই পড়তে যাচ্ছেন?

ভালো করে লক্ষ্য করুন, এক বালতি দুধে সামান্য একটু পেশাব পড়লে পুরো বালতির দুধই নষ্ট হয়ে যাবে। মানুষের আকীদার বিষয়টা এমন, ১০০০-২০০০ পাতা সঠিক কথা বললো, আর ২-৪টা পাতায় শিরকি-কুফুরী কিংবা ভ্রান্ত মতবাদ ঢুকানো থাকলো, একজনের আকীদা নষ্ট করার জন্য এতোটুকুই যথেষ্ঠ।
বিগত শতাব্দীর ২ জন বড় আলেম শায়খ আল-আলবানী ও শায়খ উসায়মিন উভয়েই সাধারণ মানুষকে তাফসীর ইবনে কাসীর পড়তে উপদেশ দিয়েছেন। আর আমিতো ভুল পাইনি বা রাস্তা-ঘাটে যে কেউ কোন বইকে ভালো বললেই সেটা পড়া শুরু করবেন না। কারণ প্রথম কথা হচ্ছে, আপনি কি সঠিক আর বাতিল বুঝতে সক্ষম? আপনার কি সেই যোগ্যতা আছে ভালো ও মন্দ পার্থক্য করার মতো?

গতকালকে আমি স্ক্রিনশটসহ দিয়েছি, মওদুদী সুরা হিজরের আয়াতের তাফসীরে শিরকি আকীদা ওহদাতুল ওজুদ এর বয়ান করেছেন। আপনি কি জানেন ওহদাতুল ওজুদ আকীদা কি? এটা কত জঘন্য আকীদা? বিগত ১৪০০ বছরের ইতিহাসে কারা এই আকীদা প্রচার করেছে, এবং মুসলমান শাসকেরা তাদের কয়জনকে হত্যা করেছে?
এইগুলো যদি না জানেন আর না জেনে সেই তাফসীর পড়তে থাকেন, তাহলে আপনি ঐ আকীদা না জেনেই সঠিক মনে করবেন এবং এইরকম শিরকি চিন্তা-ভাবনা অন্তরে রাখবেন কিন্তু আপনি কোনদিন টেরও পাবেন না। আর এটাইতো হয়েছে, আপনি জানেন না এই ভ্রান্ত আকীদা, কিন্তু এটা তাফহীমে আছে, আর তারপরেও আপনি বলেছেন, আমিতো তাফহীমে কোণ ভুল পাইনি। ভাই/বোন, আল্লাহর ওয়াস্তে বিষয়টা নিজেই বিচার করুন।      

=> অনেকে বলছেন তিনি দেওবন্দী আলেমদের কাছ থেকে আলেম হয়েছেন!
আমাদের জবাবঃ তাই নাকি? দেওবন্দীরাই তার সবচাইতে বড় সমালোচনাকারী। আর দেওবন্দীদের ভ্রান্ত আকীদা তার মাঝেও ছিলো। যেমন দেওবন্দীরা-বেরেলুবীরা আঃকীদার দিক থেকে আশারি-মাতুরিদী, মাওলানা মওদুদী সেই আকীদার অনুসারী। নিচে স্ক্রিনশটসহ তার প্রমান দেখুন।
_______________________________

মাওলানা মওদুদী তার অপ-তাফসীরের কিতাব তাফহীমুল কুরান এর সুরা ফাজর এর ২২ নম্বর আয়াত,
وَجَاءَ رَبُّكَ وَالْمَلَكُ صَفًّا صَفًّا
এর অর্থ করেছেন, এবং তোমার রব এমন অবস্থায় দেখা দেবেন।
১ম কথা - তিনি আয়াতের অর্থ করেছেন ভুল। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ আসবেন, কিন্তু অর্থ করেছেন দেখা দেবেন! সূক্ষ্মভাবে অর্থের বিকৃতি করা হয়েছে এবং পরে তার ব্যখ্যাও করেছেন অপব্যখ্যা। মওদুদীর ভ্রান্ত ব্যখ্যাঃ
মূলে বলা হয়েছে ( جَاءَرَبُّكَ ) এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, তোমার রব আসবেন, তবে আল্লাহর জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই একে রূপক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে। এর উদ্দেশ্য এমনি ধরনের একটি ধারণা দেয়া যে, সে সময় আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, শাসন ও প্রতাপের নিদর্শনসমূহ পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে। দুনিয়ায় কোন বাদশাহর সমগ্র সেনাদল এবং তার মন্ত্রীপরিষদ ও সভাসদদের আগমনে ঠিক ততটা প্রভাব ও প্রতাপ সৃষ্টি হয় না যতটা বাদশাহর নিজের দরবারে আগমনে সৃষ্টি হয়। এই বিষয়টিই এখানে বুঝানো হয়েছে

কোথায় ভুল?
মওদুদীর এই কথা ঠিক আছে, মূলে বলা হয়েছে ( جَاءَرَبُّكَ ) এর শাব্দিক অনুবাদ হচ্ছে, তোমার রব আসবেন
এটা সঠিক কথা লিখে পরে তিনি বলছেন, তবে আল্লাহর জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই একে রূপক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে

- এটা হচ্ছে আশারি-মাতুরিদিদের ভ্রান্ত আকীদা, যা তারা ক্বুরানের আয়াতের অর্থের অপব্যখ্যা করে থাকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদা হচ্ছে, কেয়ামতের দিনে আল্লাহ আসবেন এবং মীযান স্থাপন করে মানুষের হিসাব নিবেন। কিন্তু আল্লাহ কিভাবে আসবেন এটা আমরা জানিনা, আমাদেরকে জানানো হয় নাই। আমাদেরকে জানানো হয়েছে আল্লাহ আসবেন ব্যস, আমরা এর প্রতি ঈমান আনি। কিন্তু এই কথাটাকে আমরা জাহমিয়াদের মতো অস্বীকার করিনা, কিংবা আশারি-মাতুরিদিদের মতো ভ্রান্ত অপব্যখ্যাও করিনা, যেইভাবে আছে ঠিক সেইভাবেই বিশ্বাস করি। এটাই সমস্ত সাহাবী, ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল সহ সমস্ত তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীদের আকীদাহ। কিন্তু তাদের যুগের অনেক পরে আশারি-মাতুরিদী মতবাদে বিশ্বাসী লোকেরা ক্বুরানের আয়াতের ভুল ব্যখ্যা করে তার অর্থ পরিবর্তন করে, একে আশারি-মাতুরিদী আকীদা বলা হয়।

আর আশারি-মাতুরিদী ভ্রান্ত মতবাদের লোকদের ক্বুরানের আয়াতের এইরকম অপব্যখ্যার একটা অপবখ্যা হচ্ছে কেয়ামতের দিন আল্লাহ আসবেন ক্বুরানের আয়াতের অপব্যখ্যা করেছে আল্লাহর জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কোন প্রশ্নই ওঠে না। তাই একে রূপক অর্থেই গ্রহণ করতে হবে। এর উদ্দেশ্য এমনি ধরনের একটি ধারণা দেয়া যে, সে সময় আল্লাহর সার্বভৌম কর্তৃত্ব, শাসন ও প্রতাপের নিদর্শনসমূহ পূর্ণরূপে প্রকাশিত হবে


আল্লাহ আমাদেরকে ভ্রান্ত আকীদা ও আমল থেকে বেঁচে থাকার তোওফিক দান করুন, আমিন।

মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব - ১)


মওদুদীর ভ্রান্ত আকীদাহ (পর্ব - ১)

মওদুদীদেরকে নিয়ে আমাদের পোস্টে রেফারেন্স দেওয়া ছিলো, যারা আমাদের বিরোধীতা করছেন তাদের উচিত ছিলো তাদের নিজেদেরই যাচাই করে দেখা। অনেকেই স্ক্রীনশটে প্রমান চেয়েছেন, যাই হোক আজকে আমি ২টি শিরকী আকীদার স্ক্রিনশট দিলাম

১/ শিরকি আকীদাহঃ মানুষের মাঝে আল্লাহর সিফাতের প্রতিচ্ছবি!
মাওলানা মওদুদী সাহেব সুরা আল-হিজর এর ২৯ নাম্বার আয়াত যখন আমি তাকে পূর্ণ অবয়ব দান করবো এবং তার মধ্যে আমার রূহ থেকে কিছু ফুঁকে দেবো এর তাফসীরে লিখেছেন, এ থেকে জানা যায়, মানুষের মধ্যে যে রূহ ফুঁকে দেয়া হয় অর্থাৎ প্রাণ সঞ্চার করা হয় তা মূলত আল্লাহর গুণাবলীর একটি প্রতিচ্ছায়া। জীবন, জ্ঞান, শক্তি, সামর্থ্য, সংকল্প এবং অন্যান্য যতগুলো গুণ মানুষের মধ্যে পাওয়া যায়, যেগুলোর সমষ্টির নাম প্রাণ----সেসবই আসলে আল্লাহরই গুণাবলীর একটি প্রতিচ্ছায়া। মানুষের মাটির দেহ-কাঠামোটির ওপর এ প্রতিচ্ছায়া ফেলা হয়। আর এ প্রতিচ্ছায়ার কারণেই মানুষ এ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে গণ্য হয়েছে এবং ফেরেশতাগণসহ পৃথিবীর যাবতীয় সৃষ্টি তাকে সিজদা করেছে

এটা বড় শিরক, কারণ আল্লাহর সিফাত শুধুমাত্র তাঁর জন্য প্রযোজ্য। মানুষ বা সৃষ্টী জগত আল্লাহর গুণাবলীর একটি প্রতিচ্ছায়া এটা সূফীদের ওহদাতুল ওজুদের শিরকী আকীদাহ, যাকে ওলামারা ফিরাউনের শিরকের চাইতে জঘন্য বলেছেন। মওদুদী আরো লিখেছেন, আল্লাহর সিফাতের প্রতিচ্ছায়ার কারণেই নাকি ফেরেশতারা আদম আঃ এর সিজদা করেছিলো - মনগড়া শিরকি অপব্যখ্যা, এই শিরকি ব্যখ্যা দিয়ে হিন্দুরা মূর্তিপূজা করে।

২/ রাসুল সাঃ আন্দাজে মনগড়া কথা বলেছেন (নাউযুবিল্লাহ)
তর্জমানুল ক্বুরান, রবিউল আউয়াল ১৩৬৫ (উর্দুতের মূল বইয়ের স্ক্রিনশট)
রাসুল সাঃ এর ধারণা ছিলো, তাঁর জামানাতে বা তাঁর জামানার কাছাকাছি সময়েই দাজ্জাল বের হবে, কিন্তু ১৩৫০ বছরের মধ্যেও দাজ্জাল বের হয়নি। এটাই প্রমান করে যে, এই হাদীসগুলো ঠিক নয়, এইগুলো প্রচার করা ইসলামী আকীদাহও নয়। মওদুদি আরো বলেন, দাজ্জালের কাহিনীর কোন ভিত্তি নেই, দাজ্জালের হাদীসগুলো ইসলামী আকীদা নয়, আর রাসুল সাঃ দাজ্জালের কথাগুলো আন্দাজে, চিন্তা-ভাবনা করে বলেছেন (অর্থাৎ ওয়াহী নয়, নাউযুবিল্লাহ), তিনি আন্দাজ করে (দাজ্জালের) যেই কথাগুলো  বলেছেন সেইগুলো ভুল এতে কোন সন্দেহ নেই, আর রাসুল সাঃ আন্দাজে যেই ভুলগুলো করেছেন, সেইগুলো তাঁর নবুওতির জন্য অসম্মানজনক নয়।

৩/ মহানবী (সঃ) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।
[তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]

কেউ যদি বলে - মহানবী (সাঃ) নিজের মনগড়া কথা বলেছেন, এটা মারাত্মক কুফুরী ও শিরকি একটা কথা। কারণ, আল্লাহ তাআলা কুরানুল কারীম ঘোষণা করেছেন
তিনি তাই বলেন যা তাকে ওয়াহী করা হয়।

সুরা নাজম।

বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০১৪

মাযহাব মানা যাবে? কিছু মিথ্যাচারের জবাব...

মাযহাব মানা যাবে? কিছু মিথ্যাচারের জবাব...

মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লানত। সুরা মুরসালাতঃ ১৫।

কিছু মানুষ জেনেই হোক, না জেনেই হোক আমাদের নামে মিথ্যা অপবাদ দিচ্ছেন। নিচে তার জবাব দেওয়া হলো।

১. আমরা নাকি #বুখারী ও #মুসলিম ছাড়া অন্য কোন হাদীসের কিতাব থেকে হাদীস মানিনা?
>>> এটা একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা ও জঘন্য অপবাদ। কোন হাদীস যদি সহীহ বলে প্রমানিত হয় তাহলে সেটা যেই হাদীস গ্রন্থেই থাকুক না কেনো - আবু দাউদ, তিরমিযি, নাসায়ী...সমস্ত মুসলিম সেই হাদীস মেনে নিতে বাধ্য। হাদীস শাস্ত্রের মাঝে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের মর্যাদা অনেক বেশি, তার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে, তবে তার মানে এইনা যে, এইগুলোর বাইরে আর কোন সহীহ হাদীস নেই! বরং, বুখারী ও মুসলিমের বাইরে অন্যান্য হাদীসের কিতাবে আরো অনেক হাদীস রয়েছে যেইগুলোর মাঝে অনেক সহীহ এবং হাসান সহীহ হাদীস রয়েছে এবং সেই সমস্ত হাদীসের উপরেও আমল করতে হবে, কারণ সেইগুলোও নবী সাঃ এর কথা। এছাড়া আপনি আমাদের যেকোন পোস্ট বা লেখা বই দেখুন, সেখানে বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অন্যান্য অনেক হাদীস গ্রন্থ থেকে হাদীস নাম্বারসহ সহীহ না জয়ীফ উল্লেখ করে দেওয়া আছে। হাদীসের ব্যপারে আমাদের নীতি সেটাই যা ইমাম আবু হানীফা রহঃ সহ সমস্ত ইমামগণেরাই বলেছিলেন,
ইযা সাহ্হাল হাদীস, ফাহুয়া মাযহাবী অর্থাৎ হাদীস সহীহ হলে সেটিই আমার মাযহাব।
অতএব, সেই সমস্ত ভাই যারা বলে আমরা বুখারী ও মুসলিম ছাড়া অন্য কোন গ্রন্থের হাদীস মানিনা, তাদেরকে বলবো - আল্লাহকে ভয় করুন ও মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকুন।
.
২. আমরা নাকি ইমাম আবু হানীফা (রহঃ) কে গালি দেই??
>>> নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, আমাদের ইমাম ও আলেমরা হচ্ছেন উম্মতের মাথার মুকুটের মতো সম্মানিত ব্যক্তি। ইমাম আবু হানীফা রহঃ অত্যন্ত ধার্মিক, দানশীল ও ফিকহের ব্যপারে পারদর্শী ছিলেন।
শায়খ মুহাম্মদ বিন যামিল জাইনু রহঃ তাঁর সম্পর্কে লিখেছেন,  ফিকহের ব্যপারে সবাই ইমাম আবু হানীফা রহঃ এর কাছে ঋনী।
আহলে সুন্নাহর এমন একজন সম্মানিত ইমামকে গালি দেওয়াতো দূরের কথা, তাকে অসম্মান করাই আমরা পাপ বলে মনে করি। রাসুল সাঃ বলেছেন আলেমরা হচ্ছেন নবী-রাসূলদের উত্তরাধিকারী। [তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, হাদীসটী সহীহ]
সুতরাং, আলেমদেরকে গালি দেওয়া মানে ইসলামের উপর আক্রমন করা। তবে হ্যা, যে যত বড়ই আলেম হোক না কেনো, নবী সাঃ ছাড়া কোন মানুষউই ভুল-ত্রুটির উর্ধে নন। তাদের কারো কোন ফতোয়া ভুল হলে আমরা সেটা গ্রহণ করিনা, সেক্ষেত্রে ক্বুরান ও সহীহ হাদীস অনুযায়ী সঠিক ফতোয়া নেই। কোন একজন আলেমের অমুক ফতোয়াটা ভুল এটা বলাতে তাকে অপমান করা হয়না, বরং ইমাম আবু হানীফা রহঃ স্বয়ং বলে গেছেন, তোমরা আমার অন্ধ অনুকরণ করবেনা, আমার কোন কথা ভুল হলে দেওয়ালের বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দেবে।
,
৩. আমরা নাকি মাযহাব মানা শিরক এবং মাযহাবের অনুসরণকারীদেরকে মুশরিক বলেছি???
>>> নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক, বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সরল বিশ্বাস নিয়ে মাযহাব অনুসরণ করে যাচ্ছেন, তাহলে তারা সবাই শিরক করছেন নাকি? ঢালাউভাবে মাযহাব মানাকে যিনি শিরক বলেন, সে আসলে মাযহাব কি সেটাই জানে কিনা সন্দেহ! আর মাযহাবিদেরকে যে মুশরিক বলে এটা খারেজীদের একটা লক্ষণ, যারা ইচ্ছেমতো মানুষকে কাফের ফতোয়া দিতো।
.
<<<মাযহাব মানা কখনও ফরয, কখনো জায়েজ, কখনো সেটা হারাম এমনকি কখনো সেটা শিরকও হতে পারে>>>
.
একতরফাভাবে মাযহাব মানা ফরয কিংবা মাযহাব মানা হারাম/শিরক বলা এই দুইটিই হচ্ছে চরম্পন্থা। উদাহরণঃ-
১. চার মাযহাব (হানাফী, মালেকি, শাফেয়ী, হাম্বালি) মতে ওযু ছাড়া ক্বুরান স্পর্শ করা যাবেনা। মাযহাবের এই ফতোয়াটা সঠিক কারণ রাসুল সাঃ বলেছেন, পবিত্রতা ছাড়া কেউ কুরআন স্পর্শ করবেনা।
সুনানে দারেমীঃ ২১৬৬, শায়খ বিন বাজ, শায়খ উসাইমিনের মতে হাদীসটির সনদ জাইয়্যিদ (অর্থাৎ, সহীহ)।
সুতরাং, মাযহাবের এই ফতোয়াটা মানা আমাদের জন্য ফরয-ওয়াজিব।

২. মালেকি মাযহাব মতে ফরয নামাযে বুক হাত বাঁধা যাবেনা, অথচ সমস্ত হাদিসে কিতাবে এসেছে নামাযে হাত বেঁধে সুন্নত, রাসুল সাঃ জীবনে কোনদিন হাত ছেড়ে দিয়ে নামায পড়েন নি। সেই হিসেবে বাকি ৩ মাযহাব মতেই নামাযে হাত বাঁধা সুন্নত, তবে কেউ যদি হাত না বাঁধে তবুও তাঁর নামায হবে। এক্ষেত্রে মালেকী মাযহাবের এই ফতোয়াটা মানা হারাম।

৩. মাযহাব মানা কখন #শিরক হবে?
কেউ যদি নিশ্চিত জানেন তার মাযহাবের অমুক মাসায়ালাটা আসলে ভুল, এবং তার কাছে প্রমান আছে যে সেটা ক্বুরান ও সুন্নাহর বিপরীত ফয়সালা। এইরকম জেনে শুনে কেউ যদি মনে করে যে, আমার ইমাম/পীর যাই বলে সেটাই সঠিক, এমনকি ক্বুরান হাদিসে বিপরীত ফতোয়া দিলেও সেটাই মানতে হবে, সেটা ঠিক তাহল সে ব্যক্তি আনুগত্যের ক্ষেত্রে শিরক করলো। কারণ চূড়ান্ত আনুগত্য করতে হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাঃ কে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিপরীতে অন্য কারো আনুত্য করা হারাম ও কুফর। কারণ সে আদেশ দানের ব্যপারে কোন আলেম বা পীর-বুজুর্গকে আল্লাহর সাথে সমান শরীক বানিয়ে ফেললো। এমন লোকদের ব্যপারে আল্লাহ ক্বুরানে এই আয়াত নাযিল করেছেন, তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের আলেম ও দরবেশদেরকে রব্ব হিসেবে গ্রহন করেছে। সুরা তওবাহঃ ৩১।

উদাহরণ, আমাদের দেশের কথিত হাক্কানি পীর চরমোনাই পীর সাহেব তার লেখা একটি বইয়ে লিখেছেন, কামেল পীরের আদেশ পাইলে নাপাক শারাব (মদ) দ্বারাও জায়নামাজ রঙ্গিন করিয়া তাহাতে নামাজ পড়। অর্থাৎ শরীয়তের কামেল পীর সাহেব যদি এমন কোন হুকুম দেন, যাহা প্রকাশ্যে শরীয়তের খেলাফ হয়, তবুও তুমি তাহা বিনা আঃপত্তিতে সেটা আদায় করবে।
মাওলানা সৈয়দ মোহাম্মদ ইছহাক, চরমোনাই পীর সাহেব বরিশাল কর্তৃক রচিত আশেক মাশুক এর ৩৫ নং পৃষ্ঠা।

এইরকম কেউ যদি (ইচ্ছাকৃত কিংবা ভুলে) ক্বুরান হাদিসের বিপরীত কোন ফতোয়া বা আদেশ দেয় আর তাঁর অনুসারী ভুল জেনেও সেটাকে মানা জায়েজ বা হালাল মনে করে, তাহলে হারামকে হালাল মনে করার কারণে সে কুফুরী বা শিরক করল।

এছাড়া ক্বুরান ও সুন্নাহর আলোকে মাযহাব অনুসরণ করা সম্পর্কে এই লেখাটি পড়ুন

https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1156612527704826:0