ক্বুরানের আয়াতগুলো বারাবার পড়া এবং
সেইগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা একজন মানুষের ঈমান বৃদ্ধি করে, তাকে হেদায়েতের
দিকে পরিচালিত করেঃ
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বুরান নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করতেন, রাতে বেশি বেশি
ক্বুরান তেলাওয়াত করতেন। এমন কি এক রাতে তিনি তাহাজ্জুদ নামাযের প্রত্যেক রাকাতে সারা
রাত ধরে ক্বুরানের একটি মাত্র আয়াতে কারীমা ফযর হওয়া পর্যন্ত তেলাওয়াত করেছেন। আর সেই
আয়াতটি হচ্ছে, “(হে আল্লাহ!) আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন,
তাহলে তারা তো আপনারই বান্দা। আর আপনি যদি তাদেরকে ক্ষমা করেন, তাহলে আপনিই পরাক্রমশালী,
মহাবিজ্ঞ।” সুরা মায়িদাহঃ ১১৮।
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ক্বুরান নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতেন, আর তিনি এর সর্বোচ্চ মর্তবায়
পৌঁছেছিলেন। ইবনে হিব্বান আতা হতে সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, আমি (তাবেয়ী
বিদ্বান আতা রাহিমাহুল্লাহ) এবং উবায়দুল্লাহ ইবনে উমার হযরত আয়িশাহ (রাঃ) এর কাছে গেলাম।
উবায়দুল্লাহ ইবনে উমার হযরত আয়িশাহ (রাঃ) কে বললেন, আপনি আমাদেরকে একটা আশ্চর্যজনক
হাদীস বলুন, যা আপনি আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে করতে দেখেছেন। তখন মা আয়িশাহ (রাঃ) কেঁদে
দিলেন আর বললেন, “একরাতে রাসুল (সাঃ) নামাযে দাঁড়িয়ে বললেন,
“হে আয়িশাহ! আজ রাতে তুমি আমাকে ছেড়ে দাও, আমি
আমার রব্বের ইবাদত করি। আয়িশাহ (রাঃ) তখন বললেন, আল্লাহর কসম! আমি আপনার সংগ পছন্দ
করি, আর আপনি যা পছন্দ করেন আমি তা পছন্দ করি। অতঃপর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) ওযু করলেন
এবং নামাযে দাঁড়ালেন। নামাযে দাঁড়িয়ে তিনি কাঁদতে লাগলেন। কাঁদতে কাঁদতে তাঁর কাপড়
ভিজে গেলো। এমনকি কাঁদতে কাঁদতে রাসুল (সাঃ) এর সামনের মাটি ভিজে গেলো। এমন সময় হযরত
বেলাল (রাঃ) এসে ফযরের আযান দেওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। তিনি রাসুল (সাঃ)
কে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি কাঁদছেন! অথচ আল্লাহ আপনার পূর্বের
ও পরের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। তখন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বললেন, আমি কি আল্লাহর
কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারী বান্দা হওয়া পছন্দ করবোনা? আজ এই রাতে আমার উপর এক আয়াত নাযিল
করা হয়েছে, তার জন্যে ধ্বংস যে সেই আয়াত পাঠ করবে কিন্তু তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করবেনা।
আয়াতটি হচ্ছেঃ
“নিশ্চয় আসমান ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্রি ও দিনের আবর্তনে নিদর্শন রয়েছে বোধ
সম্পন্ন লোকদের জন্যে। (বোধ সম্পন্ন লোক হচ্ছে তো তারাই), যারা দাঁড়িয়ে, বসে, ও
শায়িত অবস্থায় (অর্থাৎ সব সময়েই) আল্লাহকে স্মরণ করে, আর আসমান ও জমিনের সৃষ্টির বিষয়ে
চিন্তা গবেষণা করে।” সুরা আলে-ইমরানঃ ১৯০-১৯১।
উৎসঃ ঈমানী দুর্বলতা, শায়খ সালেহ
আল-মুনাজ্জিদ।