শুক্রবার, ৬ মে, ২০১৬

ফেতনার সময় দুই প্রকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়

ফেতনার সময় দুই প্রকার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ঃ
১. যিনি নিজেকে পণ্ডিত ভাবেন ও ফিতনার ব্যপারে উঁকি দেন ও সে ব্যপারে বিভিন্ন মন্তব্য করেন।
২. সাধারণ মানুষ, যারা জানেনা, যাদেরকে শিকার করেন এক শ্রেণীর জানা মানুষেরা।
- শায়খ সাইফুদ্দিন বেলাল এর ওয়াল থেকে সংগৃহীত।
_________________________
আজকে আমি প্রথম শ্রেণীর মানুষের দুইটি সত্যিকারের উদাহরণ বলবো।
(১) আইসিসের ফেতনাহ যখন প্রথম প্রকাশ পায়, তখন আইসিস ও তাদের খলিফাহর ব্যপারে আমাদের দেশের একেক জন একেক রকম মতামত পেশ করা শুরু করলো।
(ক) আল কায়েদাহর ভক্ত যারা ভেতরের কাহিনী তখনো জানতে পারেনি, আইসিসকে আল-কায়েদাহর অংশ মনে করে কোমর বেঁধে আবু বকর আল-বাগদাদীর খিলাফতের পক্ষে ব্যপক প্রচারণা শুরু করলো। অনেকে অনলাইনে আবু বকর খারেজীকে ভার্চুয়াল বাইয়াত দেওয়া ফরজ এবং তার পক্ষে আমাদের সবার প্রোপিক কালো পতাকা দেওয়া উচিৎ বলে ফতোয়া দিলো। অথচ দুদিন পর তারা জানতে পারলো, আইসিস আল-কায়েদাহকে #মুর্তাদ ফতোয়া দিয়ে পাখির মতো জবাই করছে। অবশ্য এরপরে তাদের কেউ কেউ পুনরায় আল-কায়েদাহর দিকে ফিরে আসলো, আবার তাদের অনেকে আজ পর্যন্ত আইসিসকে আল-কায়দাহর অংশ মনে করে সেটাকেই আঁকড়ে ধরে আছে।
(খ) আইসিস শিয়াদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে, আইসিস কবর মাযার ভাংছে...এমন প্রচারণার জের ধরে কিছু আহলে হাদীস ভাইয়েরা অজ্ঞতা ও আবেগের বশে আইসিসকে সহীহ আকিদাহর অনুসারী বলে মনে করা শুরু করলো এবং, তারা কিছুটা প্রভাব বিস্তার করার কারণে তাদের ব্যপারে বিভ্রান্ত হলো, তাদের খিলাফতের ব্যপারে আকাশ-কুসুম স্বপ্ন দেখা শুরু করলো। একজন শায়খতো আজ পর্যন্ত তাদেরকে ইমাম মাহদীর সৈনিক বলে ভুল করছেন। আরেকজন আহলে হাদীস শায়খের ছেলে আইসিসের সমালোচনা করা ঠিক নয় এবং তাদের ব্যপারে আমাদের চুপ করে থাকা উচিৎ বলে মতামত পেশ করলো। আইসিসের ব্যপারে আমাদের আলেমদের বক্তব্য যখন তাকে দেওয়া হলো, সেগুলোকে সে অস্বীকার করলো এবং বর্তমান যুগের জীবিত আলেমরা অতটা নির্ভরযোগ্য নন, তারা হয়তোবা টিভি দেখে ফতোয়া দেন...এমন সংশয় প্রকাশ করলো। আরেকজন সহীহ আকিদাহর প্রচারকারী শায়খ দাবী করলেন, আইসিসের পক্ষে বিপক্ষে সবাই যে যাই বলছে, সবই নাকি অনুমান নির্ভর। তাদের ব্যপারে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে।
(২) সৌদি আরব ইয়েমেনে জিহাদ শুরু করার পর থেকে হঠাৎ Salauddin Ayube নামক একজন মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষক(!) এর আবির্ভাব হলো। সৌদি বাদশাহ এবং বিশেষ করে তাঁর ছেলের কিছুর ছবি ও অতিভক্তি প্রচার করে আহলে হাদীস ভাইদের মনোযোগ কেড়ে নিলো। অনেকে যাচাই বাছাই না করেই এমন বহু বক্তার লেখা লাইক ও শেয়ার করেন, আস্তে আস্তে যখন তারা খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে আসে তখন তাদের আসল চেহারা প্রকাশিত হয়। Salauddin Ayube নামের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এই ব্যক্তি দাবী করেছে, তার গবেষণা(!) অনুযায়ী ৯/১১ এর কথা নাকি ক্বুরানে আছে, নাউযুবিল্লািহি মিন যালিক। বর্তমানের সিরিয়ার যুদ্ধই হচ্ছে হাদীসে বর্ণিত বড় যুদ্ধ, আগামী কয়েক বছরের মাঝেই ঈসা আলাইহিস সালাম নেমে আসবেন...এছাড়া সে আরো অনেক ব্যপারেই বাড়াবাড়ী ও মনগড়া কথাবার্তা বলে। এবং তার ভুল ধরিয়ে দিলে কমেন্ট মুছে গেলে।
_________________________
যাই হোক, যখন ফিতনাহ প্রকাশ পাবে, সাধারণ মুসলমানদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে, সে ব্যপারে নিজের অল্প বুদ্ধির উপরে নির্ভর করে কোন ফতওয়া বা মতামত দেবে না। অথবা অল্প ইলম সম্পন্ন বক্তা ও লিখকদের কথার দিকে লক্ষ্য করবেনা। বরং, জীবিত বড় আলেমদের কাছ থেকে সে ব্যপারে জ্ঞান অর্জন করবে এবং সে অনুয়ায়ী কথা বলবে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, পথভ্রষ্ট, মনপূজারী, জাহিল বক্তা ও লেখকদের পাশাপাশি একশ্রেণীর অল্প বয়ষ্ক আহলে হাদীস, সালাফী, সহীহ আকিদাহর প্রচারকারীর সংখ্যা বর্তমানে বেড়ে গেছে, যারা আলেমদের কাছে থেকে উপকৃত হতে চায়না, অথবা আলেমদের কথাকে কাটছাঁট করে গ্রহণ করে। এমন ইসলাম প্রচারকারী ফেইসবুক ইন্টারনেটে খুব বেশী হওয়া এবং আলেমদের সাথে যোগাযোগ কম থাকার কারণে অনেক সৎ ও নিষ্ঠাবান ভাইয়েরাও তাদের দ্বারা বিভ্রান্ত হচ্ছেন।
_________________________

১ এর খ-এ সহীহ আকিদাহর প্রচারকারী ব্যক্তিদের প্রসংগ একারণে উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ আইসিস ধ্বংসযজ্ঞ চালানো, মিথ্যা খিলাফতের দাবী করা - এসবই হয়েছে ইরাক ও সিরিয়াতে, আমাদের দেশে নয়। সুতরাং আমাদের দেশের যেই সমস্ত দ্বাইয়ীদের আরব দেশের খবর পাওয়ার নির্ভরযোগ্য কোন উৎস নেই, এটা খুব স্বাভাবিক। তাই তাদের কাছ থেকে এটা আশা করা বাঞ্চনীয় যে, তারা সেই ব্যপারে চুপ থাকবেন। অনুমান নির্ভর কোন কথা না বলা, অথবা আমার কাছে জ্ঞান নেই, কিন্তু যে ব্যপারে অন্যের জ্ঞান আছে, বিশেষ করে আলেমদের কথাকে অস্বীকার না করা। যারাই এর বিপরীত করেছেন, তারাই ভুল করেছেন। এব্যপারে আমাদের দেশীয় বক্তা ও আলেম সমাজের আরো সতর্ক হওয়া উচিৎ, কারণ তাদের ভুল কথার দ্বারা যে শুধুমাত্র তারাই ভুল করলেন তা না। বরং তাদের ভুলের দ্বারা অনেকেই ভুল তথ্যের শিকার হন।