শুধুমাত্র
আকিদাহ সহীহ নয়, মানহাজও শুদ্ধ হওয়া চাইঃ
ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহর
একজন ছাত্র লিখেছে, “এদেশের অধিকাংশ
আলীমরা যেখানে একে-অপরের বিরুদ্ধে ব্যস্ত সেখানে তিনি (ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর) খ্রিষ্টান
মিশনারীদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন পরিশ্রম করেছেন। এবং উম্মতের ঐক্যের জন্যও চেষ্টা
করেছেন।”
লেখক আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেমদের
এই বলে সমালোচনা করছে যে, “তারা শুধু
একে-অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোঁড়াছুড়িতে ব্যস্ত।”
এমন কিছু লোক বর্তমানে রয়েছে, যারা ‘জারহ ও তাদীলের’ ইলমকে পছন্দ করেনা,
শিরক ও বিদাতের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং গোমরাহীতে লিপ্ত
ব্যক্তদের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার মানহাজে বিশ্বাসী নয়। অবশ্য তাদের এই অবস্থানের
পক্ষে তারা বিভিন্ন যুক্তি বা কারণ দেখায়, তবে মূলত এর কারণ
হচ্ছে অজ্ঞতা। ফেইসবুক, ইন্টারনেটে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে,
যারা সালাফী মানহাজ সম্পর্কে জানেনা, বা
জানলেও তার বিরোধীতা করে। অনেক সালাফী / আহলে হাদিস ভাইয়েরা তাদের লেখা নিয়মিত পড়ে,
লাইক-শেয়ার করে অথচ তারা তা ধরতে পারেনা যে, তারা যাদের লেখা পড়ছে মূলত তারা সালাফী মানহাজের বিরোধীতাকারী। এভাবে এক
সময় আস্তে আস্তে তারাও সালাফী মানহাজের সাথে শত্রুতা পোষণকারী হয়ে যায়, যা তারা নিজেরাও বুঝতে পারেনা।
যাই হোক, আমি উপরে যেই বক্তব্য তুলে ধরলাম, চলুন দেখি এই
বক্তব্য কতটুকু সঠিক আর কতটুকু ভুল।
ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহকে
এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলো, “আমি তাবলীগ
জামাতের সাথে তিন দিনের চিল্লায় যাওয়ার জন্য মানত করেছিলাম। এখন আমাকে এই মানত পূরণ
করতে হবে কিনা।”
উত্তরে তিনি বলেন, “জায়েজ কোন কাজ মানত
করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়. . .সুতরাং আপনি তিন দিনের চিল্লার মানত পূরণ করুন।”
সূত্রঃ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত
এক অনুষ্ঠানে, ইউটিউবে এর লিংকও রয়েছে।
ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহর
বক্তব্যের প্রথম অংশ সঠিক “জায়েজ কোন
কাজ মানত করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়”, কিন্তু পরের অংশ “আপনি তিন দিনের চিল্লার
মানত পূরণ করুন” - এটা ভুল। কারণ হারাম কোন কাজের মানত করলে সেই মানত পূরণ করা যাবেনা।
চিল্লা দেওয়া যাবে কিনা, এনিয়ে আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওজান হা'ফিজাহুল্লাহর
ফতোয়া হচ্ছেঃ “এটা জায়েজ
নয়, কারণ এটা একটা বিদআ’ত। এভাবে বেড়িয়ে যাওয়া ৪০ দিন, ৪ দিন, ৪ মাস এটা হচ্ছে বিদআ’ত। এটা প্রমানিত যে, তাবলিগ জামাত হচ্ছে ভারতীয় দেওবন্দীদের মধ্য থেকে একটা “সূফী” জামাত। তারা একদেশ থেকে অন্য
দেশে যায় তাদের “সূফীবাদ” প্রচার করার জন্য। আহলে সুন্নত
ওয়াল জামাতের অনুসারী কোন ব্যক্তি, তাওহীদের অনুসারী ব্যক্তির
জন্য এটা জায়েজ নয় যে, তাদের সাথে তাবলীগে বেড়িয়ে পড়া। কারণ
সে যদি এদের সাথে যায় তাহলে সে তাদেরকে বেদাত প্রচার করতে সাহায্য করলো।”
দেখা যাচ্ছে উপরের প্রশ্নের উত্তরে
ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর আমাদের আলেমদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে স্পষ্ট ভাষায় তাবলীগ
জামাতকে পথভ্রষ্ট একটি দল এবং তাদের সাথে চিল্লাতে যাওয়া যাবেনা বলেন নি। বরং, তিনি তাদের কিছুটা সমর্থন করেছেন এবং তাদের সাথে চিল্লাতে যাওয়ার অনুমতি
দিয়েছেন। তাঁর এমন কিছু লিবারেল অবস্থানই হচ্ছে মূল কারণঃ “আমাদের দেশের অধিকাংশ
আলীমরা যেখানে একে-অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোঁড়া-ছুড়ি করে, সেখানে ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহ এমন করেন নি” অনেকের এই বলে তাঁকে প্রশংসা
করার। বিদাতী দল এবং ব্যক্তিদের ব্যপারেএমন নরমপন্থার নীতিকে অনেকেই তাদের আদর্শ হিসেবে
গ্রহণ করছে এবং এর বিপরীতে সালাফী মানহাজের সমালোচনায় লিপ্ত হচ্ছে।
বিঃদ্রঃ
(১) “আলেমরা একজন আরেকজনের
বিরুদ্ধ কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করে”
এই কথা যারা বলে এদের ব্যপারে সাবধান হন। একজন আলেম আরেকজন আলেমের
ভুল ধরেন, এটা খুব স্বাভাবিক এবং এর অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে।
কিন্তু এই বিষয়টিকে “কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করার” মতো নীচু মানের ভাষা দ্বারা বর্ণনা করা আপত্তিকর,
এবং তা একজন ব্যক্তির ইলমহীনতার পরিচায়ক। এভাবে এরা মূলত আলেমদেরকেই
তুচ্ছ করে।
(২) ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহর
ভুল ধরা, তার ব্যপারে মানুষকে সতর্ক করা - আমার এই লেখার উদ্দেশ্য
মোটেও তা নয়। ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহর কিছু গুণ ছিলো যা সত্যিই প্রশংসনীয়
এবং আমাদের সবার জন্য অনুকরণীয়। আমি দুয়া করি আল্লাহ তাঁর সমস্ত দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে
তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। তবে তিনি কিছু ভুল করেছেন, যার একটা উদাহরণ উপরে দেওয়া হলো। সেটাও সমস্যা নয়, ভুল-ত্রুটি সবারই হতে পারে। তবে আমাদের চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তাঁর ভুল-ত্রুটিগুলোকে কিছু মানুষ আদর্শ বলে মনে করে, সেইগুলোকে তাদের মানহাজ হিসেবে গ্রহণ করছে। আমরা এমন অজ্ঞতা এবং অন্ধভাবে
কোন ব্যক্তির অনুসরণের বিরোধী।