ইচ্ছেমতো উটনীর
উত্তরাধিকারী হন
উকবা ইবনে আমের রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বের হলেন। আমরা তখন সুফফায় (মসজিদে নববীর আঙ্গিনায়) অবস্থান করছিলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বললেন, “তোমাদের মধ্যে এমন কে আছে, যে প্রতিদিন সকালবেলা ‘বুতহান’ বা ‘আকীক’ উপত্যকায় গিয়ে সেখান থেকে কোনো প্রকার পাপ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে
উঁচু কুঁজওয়ালা দুইটি উটনী নিয়ে আসতে পছন্দ করে?” আমরা (সাহাবারা) বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমরা অবশ্যই তা পছন্দ করি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন “তোমাদের কেউ কি এরূপ করতে পার না
যে, সকালবেলা মসজিদে গিয়ে মহান আল্লাহর কিতাব থেকে দুইটি আয়াত শিক্ষা করবে অথবা তেলাওয়াত করবে; তার এই আমল তার জন্য দুইটি উটনীর তুলনায় উত্তম। আর তিনটি আয়াত তিনটি উটনীর তুলনায় উত্তম, চারটি আয়াত চারটি উটনীর তুলনায় উত্তম। এমনিভাবে যত আয়াত
তেলাওয়াত করবে, তত উটনীর চাইতে উত্তম হবে।” সহীহ মুসলিমঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশানের অনুবাদে ১৭৬৪-নং হাদীস।
হাদীসটির উপরে সংক্ষিপ্ত আলোচনাঃ
(১) সাহাবীদের মাঝে কিছু তরুণ, দরিদ্র
ও অবিবাহিত সাহাবী ছিলেন, যাদের থাকার মতো কোন জায়গা ছিলোনা। কোন ধরণের সহায় সম্বল
না থাকার কারণে তাঁরা মুসলমানদের দান-সাদাকার উপরে নির্ভরশীল ছিলেন, আর তাঁরা
কুরআন ও হাদীস শিখতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদের বসবাসের
জন্যে মসজিদে নববীর আঙ্গিনায় একটা স্থান করে দিয়েছিলেন। তাদেরই বসবাসের সেই জায়গাটাকে
‘সুফফা’ বলা হতো।
যেই সাহাবীরা সুফফাতে থাকতেন, তাঁদেরকে ‘আসহাবে
সুফফাহ’ বা, সুফফাহ বাসী বলা হতো।
(২) “কোনো প্রকার পাপ বা আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে” – এই কথার
অর্থ হচ্ছেঃ সাধারণত মানুষ নিজ পরিশ্রম ব্যতীত দুইভাবে মূল্যবান সম্পদের মালিক হতে
পারে। একটি পদ্ধতি হচ্ছে চুরি করে, সুদ, ঘুষ বা এমন হারাম উপায়ে অন্যের সম্পদ
অবৈধভাবে অর্জন করা, আর এটা হচ্ছে পাপ। আর একটি বৈধ উপায় হচ্ছে, কোন নিকটাত্মীয়ের
মৃত্যুর ফলে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ অর্জন করা, এটাকে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা বলা হয়েছে।
(৩) সাধারণত উন্নত জাতের উটনী বড় ও
প্রাপ্তবয়ষ্ক হলে তাদের কুঁজ উঁচু হয়। উঁচু কুঁজওয়ালা উটনীর অর্থ হচ্ছেঃ সুন্দর,
বড় ও অনেক দামী উটনী। সাধারণত নর পশুর চাইতে মাদী পশুর দাম বেশি হয়। কারণ, সেইগুলো
লালন-পালন করলে দুধ দেয়, বাচ্চা দেয়। একারণে, হাদীসে উট না বলে, উটনীর চাইতে বেশি
মূল্যবান বলা হয়েছে।
(৪) কোন রকম পাপ না করে, কিংবা কোন নিকট
আত্মীয়ের মৃত্যুর কারণ ছাড়াই সুন্দর, বড় ও অনেক দামী উটনীর মতো মূল্যবান সম্পদ
অর্জন করার চাইতে উত্তম একটা আমল হচ্ছেঃ কোন ব্যক্তি সকাল বেলা মসজিদে যাবে,
মসজিদে গিয়ে কুরআনুল কারীম থেকে কোন একটি আয়াত শিক্ষা করবে অথবা, শুধুমাত্র
তেলাওয়াত করবে। আয়াত শিক্ষা করার অর্থঃ কুরআনের একটি আয়াত কিভাবে তেলাওয়াত করতে হয়
তা জানা, আয়াতটি মুখস্থ করা ও তার তর্জমা ও তাফসীর জানা। অথবা, শুধুমাত্র আয়াতটি
তেলাওয়াত করলেও একই সওয়াব পাওয়া যাবে ইংশায়াল্লাহ। এইভাবে সে যত আয়াত পড়বে, ততগুলো
উটনীর চাইতে সেটা উত্তম হবে। সুবহা’নাল্লাহ!
(৫) হাদীসটি নিয়ে একটু চিন্তা করে
দেখুন, প্রতিদিন সম্ভব না হলেও, অন্তত ছুটির দিনগুলোতে কোন ব্যক্তি যদি সকালবেলা
মসজিদে যায়, আর আমপারা থেকে সুরা আন-নাবা (৪০ আয়াত) ও সুরা-নাযিয়া’ত (৪৬ আয়াত),
এই দুইটি সুরা তেলাওয়াত করে, তাহলে সেটা তার জন্যে ৮৬টা মূল্যবান উটনীর চাইতে
উত্তম হবে। আল্লাহু আকবার! অথচ এই দুইটি সুরা তেলাওয়াত করতে সর্বোচ্চ ১০-১২
মিনিটের বেশি সময় লাগবেনা। অল্প সময়ে, অল্প পরিশ্রমে কত বড় সওয়াব!
(৫) এই আমল করা জন্যে যারা ফযর বেলা
জামাতে নামায পড়তে মসজিদে যাবেন, তারা জামাত পড়ে আর বাসায় ফিরবেন না। মসজিদে বসে
থেকে কুরআন তেলাওয়াত করবেন, আপনার পক্ষে যতটুকু সম্ভব হয়। অন্তত ১০টা বা ২০টা
আয়াত। আর যদি অধিক পরিমান তেলাওয়াত ও সকাল-সন্ধ্যার যিকির করে সূর্য উঠা পর্যন্ত
অপেক্ষা করেন, তাহলে একবারে ইশরাকের নামায পড়ে বাসায় ফিরবেন। এইভাবে আপনি অনেকগুলো
উটের মালিক হওয়ার চাইতে উত্তম আমল করতে পারবেন, সাথে সাথে ইশরাকের নামায পড়ে একটি
হজ্জ ও একটি উমরা করার সমান সওয়াব অর্জন করতে পারবেন।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আমল করার
তোওফিক দান করুন, আমিন।