মঙ্গলবার, ২৬ জুলাই, ২০১৬

ইন্টারনেট মুসলিম, ভার্চুয়াল ইসলামঃ (পর্ব-১), (পর্ব-২)

ইন্টারনেট মুসলিম, ভার্চুয়াল ইসলামঃ
(পর্ব-১)
(১) সবাই কুরান হাদীস ফলো করে, তবে নিজ নিজ বুঝ অনুযায়ী।
(২) সবাই চায় আপনি তার মতের সাথে মিল রেখেই পোস্ট করবেন।
(৩) বন্ধুত্ব ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত সে যা বলবে, তাই সঠিক বলে মেনে নিবেন।
(৪) যাদের জন্য আল্লাহর যিকির করা কষ্টকর, তাদের জন্যে ফালতু তর্কে লিপ্ত হওয়া সহজ।
(৫) আমার পছন্দের দল/ব্যক্তির পক্ষ হয়ে গালি-গালাজ করলেও সেটা সহীহ(!), যদিওবা সেটা অশ্লীল বা আপত্তিকর হয়।
(৬) মাথায় কিছু থাক বা না থাক, নারী লেখিকাদের কদর পুরুষদের মাঝে সব সময়েই বেশি।
(৭) জনপ্রিয়তা বা বন্ধুত্ব রক্ষা করার জন্যে শিরক ও বিদাতের ব্যপারে চুপ থাকতে হয়, অনেক সময় ফতোয়া চেঞ্জ করতে হয়।
(৮) আলেমরা অপরিচিত, জাহিল বক্তা ও লেখকেরা ইসলামিক সেলেব্রিটি
(৯) অন্ধ ভক্তি ও আবেগ যেখানে সচল, যুক্তি সেখানে অচল।
.
(পর্ব-২)
একজন আলেম ৩০ বছর, ৪০ বছর পড়াশোনা করে, আরাম-আয়েশ বিসর্জন দিয়ে দ্বীন শিখেন, কিন্তু তাঁকে কেউ চিনেনা, এমনকি মানুষ তাঁর নামও জানে না। আলেম ঈমান-আকিদাহর উপরে, ফিকহের উপরে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বই লিখেন, দারস দেন, ইসলাম প্রচার করেন কিন্তু মানুষ তাঁর কাছ থেকে দ্বীন শিখতে আগ্রহী হয় না। অন্যদিকে, একজন মানুষ সারা জীবন ডাক্তারী/ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে জীবনটা ব্যয় করলো, অথবা কোন ফাসেক মুসলমান যে কিনা সারাজীবন গান-বাজনা নিয়ে পড়ে ছিলো, অথবা একজন জিনাকারী মহিলা যে সারাজীবন পর পুরুষদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত ছিলো, আল্লাহর রহমতে তাদের হেদায়েত হলো, আর সামান্য কিছু ইসলামী কথা শিখে আর সেই অল্প ইলমের উপর ভিত্তি করে আধা-ইসলামিক বয়ান দেওয়া শুরু করলো। মানুষ তাদেরকে আল্লামাহ মনে করা শুরু করলো। তার কাছ থেকে দ্বীন শেখার(!) জন্যে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বিশেষ করে, সে যদি হয় কোন অল্প বয়ষ্ক ইসলামিক লেখিকা, যে কিনা ইসলাম শিখানোর সাথে নরম ও মিষ্টি ভাষায় কিছু লুলামি মার্কা কথা লিখবে, পুরুষদেরকে লাভ, রিলেশান, ইসলামিক রোমান্স শিখাবে, তাহলেতো পুরুষদের মাঝে তার বিশাল কদর। ইসলাম শিখা হলো পাশাপাশি, ভার্চুয়াল নারী সংগ লাভ হলো।
বিষয়টা আশ্চর্য জনক, কিন্তু আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বেই আমাদেরকে সতর্ক করে বলেছেন, কেয়ামতের একটা লক্ষণ হচ্ছে যে, মানুষ জাহেল (মূর্খ) লোকদের কাছ থেকে ইলম (দ্বীনের জ্ঞান) অর্জন করবে। তাবারানি, জামি আস-সাগীরঃ ২২০৩।

.

সোমবার, ২৫ জুলাই, ২০১৬

কবরে ৩টি প্রশ্ন ও হাশরের ময়দানে ৫টি প্রশ্ন

(ক) কবরে ৩টি প্রশ্ন করা হবেঃ
১. তোমার রব্ব কে?
২. তোমার দ্বীন কি?
৩. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর ব্যপারে প্রশ্ন করা হবে, তিনি কে বা তুমি কি তাঁকে নবী হিসেবে বিশ্বাস করেছিলা?
সুনানে আবু দাউদঃ ৪৭৫৩, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ।
(খ) হাশরের ময়দানে ৫টি প্রশ্ন করা হবেঃ
আবু বারযা নাদলা ইবনে উবায়েদ আসলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
কিয়ামতের দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দা তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে,
যে পর্যন্ত না তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ
১. তার জীবনকাল কিভাবে কাটিয়েছে,
২. তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে,
৩. তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে,
৪. তার সম্পদ কোথায় খরচ করেছে এবং
৫. তার শরীর কিভাবে পুরানো করেছে?

সুনানে আত-তিরমিযীঃ ২৪১৭, হাদীসটি হাসান ও সহীহ, শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহ। 

শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৬

এক নজরে জিনা-ব্যভিচারের শাস্তি

আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি যা জানি, তোমরা যদি তা জানতে তাহলে অবশ্যই তোমরা অল্প হাসতে, আর অনেক বেশি কাঁদতে
সহিহ আত তিরমিজি, সংসারের প্রতি অনাসক্তি অধ্যায়, হাদিস নং-২৩১৩।
আমাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, আল্লাহর রাসুসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসলে কি দেখেছিলেন? রাসুসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি দেখেছিলেন, যার সম্পর্কে এই একটিমাত্র হাদীস থেকে সামান্য হলেও ধারণা পাওয়া যাবে।
আবু উমামা বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলছেন, আমার নিকট দুজন ব্যক্তি আসল। তারা দুজন আমার দুবাহুর মাঝামাঝি ধরে আমাকে এক ভয়াবহ কঠিন পাহাড়ের নিকট নিয়ে আসল। তারা দুজন আমাকে বলল, আপনি এ পাহাড়ে উঠুন। আমি বললাম, আমি এ পাহাড়ে উঠতে সক্ষম নই। তারা দুজন বলল, আমরা আপনাকে পাহাড়ে উঠার কাজটি সহজ করে দিব। আমি উঠলাম, এমনকি পাহাড়ের উপরে চলে আসলাম। হঠাৎ আমি একটি বিকট আওয়াজ শুনলাম। আমি বললাম, এটা কিসের শব্দ? তারা বলল, এটা হচ্ছে জাহান্নামীদের বিলাপ-আর্তনাদ ও কান্না। তারপর তারা আমাকে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ আমি দেখলাম, একদল লোককে পায়ের সাথে বেঁধে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখা হয়েছে। তাদের চোয়াল ফেটে দীর্ণ-বিদীর্ণ হয়ে আছে এবং চোয়াল হতে রক্ত ঝরছে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা ঐসমস্ত লোক, যারা সময়ের পূর্বেই ইফতার করত। অর্থাৎ, সিয়াম পালন করত না। তখন তিনি বললেন, ইহুদী-নাছারারা ধ্বংস হোক. . .তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখি, কিছু লোক খুব ফুলে উঠে মোটা হয়ে আছে। আর খুব দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। তাদের দৃশ্য খুব বিশ্রী! আমি বললাম, এরা কারা? তারা বলল, এরা ঐ সব লোক যারা কাফের অবস্থায় নিহত হয়েছে। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখলাম, কিছু লোক ফুলে মোটা হয়ে আছে। অতি দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ দুর্গন্ধ যেন শৌচাগারের ন্যায়। আমি বললাম, এরা কারা? তারা দুজন বলল, এরা হচ্ছে ব্যভিচারী পুরুষ এবং ব্যভিচারিণী নারী। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল, দেখলাম, কিছু মহিলা, প্রচুর সাপ তাদের স্তনগুলিতে বার বার ছোবল মারছে। আমি বললাম, এদের কি হয়েছে? এদের এ অবস্থা কেন? তারা বলল, এরা ঐসব মহিলা, যারা বাচ্চাদের দুধ পান করাতো না। তারপর তারা আমাকে নিয়ে চলল। হঠাৎ দেখলাম, বেশকিছু ছেলে তারা দুনদীর মাঝখানে খেলা করছে। আমি বললাম, এ সমস্ত ছেলে কারা? তারা বলল, এগুলি মুমিনদের শিশু সন্তান। তারপর তারা আমাকে আরো উঁচু একটি পাহাড়ে নিয়ে গেল। হঠাৎ দেখলাম, তিনজন মানুষ শরাব পান করছে। আমি বললাম, এ লোকগুলি কারা? তারা বলল, এ লোকগুলি হচ্ছে জাফর, যায়েদ ও ইবনে রাওয়াহা (এ তিনজন লোক মুতার যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন)। তারপর তারা আমাকে অন্য একটি উঁচু পাহাড়ে নিয়ে গেল। দেখলাম, তিনজন লোক। আমি বললাম, এ লোকগুলি কারা? তারা বলল, তাঁরা হচ্ছেন ইবরাহীম, মুসা ও ঈসা (আল্লাহ তাঁদের প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন), তাঁরা আপনার (আগমনের) অপেক্ষায় রয়েছেন

সিলসিলাতু হীহাহ হাদীস নং-১৪৩০।

কয়েকটি সংক্ষিপ্ত শব্দের আসল রূপ ও অর্থ, কখন বলতে হয়

কয়েকটি সংক্ষিপ্ত শব্দের আসল রূপ ও অর্থ, কখন বলতে হয়ঃ
(সাঃ) = সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অর্থঃ আল্লাহ তাঁর প্রতি শান্তি ও দয়া বর্ষণ করুন। এটা নবী মুহাম্মাদ-এর জন্যে দুয়া হিসেবে বলা হয়। এটা ছোট একটা সহীহ দুরুদ।
(আঃ) = আলাইহিস সালাম। অর্থঃ আল্লাহ তাঁর প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন। এটা অন্যান্য নবী-রাসুলদের জন্য দুয়া হিসেবে বলা হয়। 
(রাঃ) = পুরুষ সাহাবী হলে রাদিয়াল্লাহু আনহু, আর মহিলা সাহাবী হলে রাদিয়াল্লাহু আনহা, একাধিক সাহাবীদের একসাথে বলতে হলে রাদিয়াল্লাহু আনহুমা। অর্থঃ আল্লাহ তাঁর/তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। এটা সাহাবীদের জন্যে দুয়া হিসেবে বলা হয়।
(রঃ), (রহঃ), (রাহঃ) = রহমাতুল্লাহি আলাইহি, বা রাহিমাহুল্লাহ। অর্থঃ আল্লাহ তাঁর প্রতি দয়া করুন। এটা মৃত কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্যে দুয়া হিসেবে বলা হয়।

(হাফিঃ) = হাফিজাহুল্লাহ। অর্থঃ আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন। এটা জীবিত মুসলমানদের জন্যে দুয়া হিসেবে বলা হয়।

মঙ্গলবার, ১৯ জুলাই, ২০১৬

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান হাফিজাহুল্লাহ

(১) ইমাম তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২১ হিজরী), তার বিখ্যাত আহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদা নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা যুলুম-অত্যাচার করে। আমরা তাদেরকে অভিশাপ দিব না, এবং তাদের আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দুয়া করব। [আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া]
(২) মুসলিম আমীর বা শাসকদের প্রকাশ্যে সমালোচনা করা জায়েজ নয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলছেন, যে ব্যক্তি সুলতানকে (শাসক/নেতাকে) উপদেশ দিতে চায়, সে যেন প্রকাশ্যে সেটা না করে। বরং তার জন্যে করণীয় হচ্ছে, সে তার সুলতানের হাত ধরে নিয়ে তাকে লোকচক্ষুর আড়ালে ব্যক্তিগতভাবে উপদেশ দেবে। যদি সেই সুলতান তার উপদেশ গ্রহণ করে, তাহলে সেটা তার (সুলতানের) জন্যে ভালো এবং এটাই তার করা উচিৎ। কিন্তু সুলতান যদি উপদেশ গ্রহণ না করে, তাহলে উপদেশদাতা তার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পেলো।
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে আবি আসিম তার আস-সুন্নাহ নামক গ্রন্থে। শায়খ আলবানী রাহিমাহুল্লাহু হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, যিলাল আল-জান্নাহ।
___________________
(৩) শায়খ মুহাম্মদ আল-আনজারী হাফিজাহুল্লাহ তুরস্কের ক্যু সম্পর্কে বলেছেন,
এরদোগান আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন, তিনি একজন মুসলিম শাসক। আল্লাহর অবাধ্যতা ছাড়া (জায়েজ ও কল্যাণকর বিষয়ে) তাঁর কথা শুনতে ও মানতে হবে। এরদোগান তুরস্কের ওয়ালীউল আমর, যা আমি আমার কয়েকটি লেকচারে উল্লেখ করেছি এবং রেকর্ডকৃতও হয়েছে। ক্যু (সরকারে বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান) হচ্ছে খুরুজ, এটা খারেজীদের আদর্শ।
(৪) শায়খ আহমাদ আস-সুবাইয়ী হাফিজাহুল্লাহ তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান সম্পর্কে বলেছেন,

আহলে সুন্নাহর অনুসারীগণ প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে শরিয়ত সম্মত একজন বৈধ শাসক বলে মনে করে। (কল্যাণকর ও জায়েজ কাজে) তার আনুগত্য করা মুসলিম শাসক হিসেবে তার অধিকার। তার অবাধ্য হওয়া এবং তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়। জনসমুক্ষে তার সমালোচনা করা নিষিদ্ধ, যদিও তিনি ইখোয়ানুল মুসলিমিন এর মতো একটি দলের সাথে সংযুক্ত, যেই দলটি বিদাতের কারণে আলেমদের পরিচিত। সুতরাং, ইখোয়ানুল মুসলিমিন দলটি তাদের বিদাতের কারণে সমালোচিত, কিন্তু প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট এরদোগানের সমালোচনা করার অনুমতি নেই।

রবিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৬

শুধুমাত্র আকিদাহ সহীহ নয়, মানহাজও শুদ্ধ হওয়া চাই

শুধুমাত্র আকিদাহ সহীহ নয়, মানহাজও শুদ্ধ হওয়া চাইঃ
ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহর একজন ছাত্র লিখেছে, এদেশের অধিকাংশ আলীমরা যেখানে একে-অপরের বিরুদ্ধে ব্যস্ত সেখানে তিনি (ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর) খ্রিষ্টান মিশনারীদের বিরুদ্ধে দিনের পর দিন পরিশ্রম করেছেন। এবং উম্মতের ঐক্যের জন্যও চেষ্টা করেছেন।
লেখক আমাদের দেশের অধিকাংশ আলেমদের এই বলে সমালোচনা করছে যে, তারা শুধু একে-অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোঁড়াছুড়িতে ব্যস্ত।
এমন কিছু লোক বর্তমানে রয়েছে, যারা জারহ ও তাদীলের ইলমকে পছন্দ করেনা, শিরক ও বিদাতের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়া এবং গোমরাহীতে লিপ্ত ব্যক্তদের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে সতর্ক করার মানহাজে বিশ্বাসী নয়। অবশ্য তাদের এই অবস্থানের পক্ষে তারা বিভিন্ন যুক্তি বা কারণ দেখায়, তবে মূলত এর কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা। ফেইসবুক, ইন্টারনেটে এমন কিছু ব্যক্তি রয়েছে, যারা সালাফী মানহাজ সম্পর্কে জানেনা, বা জানলেও তার বিরোধীতা করে। অনেক সালাফী / আহলে হাদিস ভাইয়েরা তাদের লেখা নিয়মিত পড়ে, লাইক-শেয়ার করে অথচ তারা তা ধরতে পারেনা যে, তারা যাদের লেখা পড়ছে মূলত তারা সালাফী মানহাজের বিরোধীতাকারী। এভাবে এক সময় আস্তে আস্তে তারাও সালাফী মানহাজের সাথে শত্রুতা পোষণকারী হয়ে যায়, যা তারা নিজেরাও বুঝতে পারেনা।
যাই হোক, আমি উপরে যেই বক্তব্য তুলে ধরলাম, চলুন দেখি এই বক্তব্য কতটুকু সঠিক আর কতটুকু ভুল।
ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহকে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলো, আমি তাবলীগ জামাতের সাথে তিন দিনের চিল্লায় যাওয়ার জন্য মানত করেছিলাম। এখন আমাকে এই মানত পূরণ করতে হবে কিনা।
উত্তরে তিনি বলেন, জায়েজ কোন কাজ মানত করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়. . .সুতরাং আপনি তিন দিনের চিল্লার মানত পূরণ করুন।
সূত্রঃ টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে, ইউটিউবে এর লিংকও রয়েছে।
ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহর বক্তব্যের প্রথম অংশ সঠিক জায়েজ কোন কাজ মানত করলে তা পূরণ করা ওয়াজিব হয়ে যায়, কিন্তু পরের অংশ আপনি তিন দিনের চিল্লার মানত পূরণ করুন - এটা ভুল। কারণ হারাম কোন কাজের মানত করলে সেই মানত পূরণ করা যাবেনা।
চিল্লা দেওয়া যাবে কিনা, এনিয়ে আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওজান হা'ফিজাহুল্লাহর ফতোয়া হচ্ছেঃ এটা জায়েজ নয়, কারণ এটা একটা বিদআত। এভাবে বেড়িয়ে যাওয়া ৪০ দিন, ৪ দিন, ৪ মাস এটা হচ্ছে বিদআত। এটা প্রমানিত যে, তাবলিগ জামাত হচ্ছে ভারতীয় দেওবন্দীদের মধ্য থেকে একটা সূফী জামাত। তারা একদেশ থেকে অন্য দেশে যায় তাদের সূফীবাদ প্রচার করার জন্য। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অনুসারী কোন ব্যক্তি, তাওহীদের অনুসারী ব্যক্তির জন্য এটা জায়েজ নয় যে, তাদের সাথে তাবলীগে বেড়িয়ে পড়া। কারণ সে যদি এদের সাথে যায় তাহলে সে তাদেরকে বেদাত প্রচার করতে সাহায্য করলো।
দেখা যাচ্ছে উপরের প্রশ্নের উত্তরে ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর আমাদের আলেমদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করে স্পষ্ট ভাষায় তাবলীগ জামাতকে পথভ্রষ্ট একটি দল এবং তাদের সাথে চিল্লাতে যাওয়া যাবেনা বলেন নি। বরং, তিনি তাদের কিছুটা সমর্থন করেছেন এবং তাদের সাথে চিল্লাতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তাঁর এমন কিছু লিবারেল অবস্থানই হচ্ছে মূল কারণঃ আমাদের দেশের অধিকাংশ আলীমরা যেখানে একে-অপরের বিরুদ্ধে কাঁদা ছোঁড়া-ছুড়ি করে, সেখানে ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহ এমন করেন নি অনেকের এই বলে তাঁকে প্রশংসা করার। বিদাতী দল এবং ব্যক্তিদের ব্যপারেএমন নরমপন্থার নীতিকে অনেকেই তাদের আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করছে এবং এর বিপরীতে সালাফী মানহাজের সমালোচনায় লিপ্ত হচ্ছে।
বিঃদ্রঃ
(১) আলেমরা একজন আরেকজনের বিরুদ্ধ কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করে এই কথা যারা বলে এদের ব্যপারে সাবধান হন। একজন আলেম আরেকজন আলেমের ভুল ধরেন, এটা খুব স্বাভাবিক এবং এর অবশ্যই প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু এই বিষয়টিকে কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি করার মতো নীচু মানের ভাষা দ্বারা বর্ণনা করা আপত্তিকর, এবং তা একজন ব্যক্তির ইলমহীনতার পরিচায়ক। এভাবে এরা মূলত আলেমদেরকেই তুচ্ছ করে।

(২) ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহর ভুল ধরা, তার ব্যপারে মানুষকে সতর্ক করা - আমার এই লেখার উদ্দেশ্য মোটেও তা নয়। ড আব্দুল্লাহ জাহাংগীর রাহিমাহুল্লাহর কিছু গুণ ছিলো যা সত্যিই প্রশংসনীয় এবং আমাদের সবার জন্য অনুকরণীয়। আমি দুয়া করি আল্লাহ তাঁর সমস্ত দোষ-ত্রুটি ক্ষমা করে তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুন। তবে তিনি কিছু ভুল করেছেন, যার একটা উদাহরণ উপরে দেওয়া হলো। সেটাও সমস্যা নয়, ভুল-ত্রুটি সবারই হতে পারে। তবে আমাদের চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তাঁর ভুল-ত্রুটিগুলোকে কিছু মানুষ আদর্শ বলে মনে করে, সেইগুলোকে তাদের মানহাজ হিসেবে গ্রহণ করছে। আমরা এমন অজ্ঞতা এবং অন্ধভাবে কোন ব্যক্তির অনুসরণের বিরোধী। 

বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৬

মারেফুল কুরআন নামক তাফসীর

মারেফুল কুরআন নামক তাফসীর
প্রশ্ন (২১/১৪১) : তাফসীর মাআরেফুল কুরআন নামক তাফসীরটি কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে প্রণীত কি?
-আব্দুল্লাহিল কাফী, ছোটবনগ্রাম, রাজশাহী।
উত্তরঃ এ তাফসীরে কিছু ভ্রান্ত আক্বীদা ও আমল এবং বহু স্থানে ভুল তাফসীরের সমাবেশ ঘটেছে। ফলে একে বিশুদ্ধ তাফসীর বলা যায় না। এর মধ্যে উল্লেখিত ভুলগুলোর কিছু দৃষ্টান্ত পেশ করা হলঃ
(১)
নবী বা ওলীর বরাত দিয়েও আল্লাহ তাআলার সাহায্য প্রার্থনা করা কুরআনের নির্দেশ ও হাদীছের বর্ণনায় বৈধ প্রমাণিত হয়েছে (পৃঃ ৯, ৩২৭)। অথচ মৃত নবী বা অন্য কারুর অসীলা দিয়ে প্রার্থনা করা স্পষ্ট শিরক (মুসলিম হা/২০৪; মিশকাত হা/৫৩৭৩)
(২)
সৃষ্ট জগতের মাঝে সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নূর সৃষ্টি করা হয়েছে... এক হাদীছে বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন (পৃঃ ৪২৮)। অথচ এটি সম্পূর্ণ ভুল আক্বীদা এবং হাদীছটি জাল (ছহীহাহ হা/৪৫৮-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
(৩)
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর পবিত্র রওজা শরীফে জীবিত আছেন।... এ কারণই তাঁর পরিত্যক্ত সম্পত্তি বণ্টন করা হয়নি এবং এর ভিত্তিতেই তাঁর পত্নীগণের অবস্থা অপরাপর বিধবা নারীদের মত হয়নি (পৃঃ ১০৯৩)। অথচ হায়াতুন্নবী-র এই আক্বীদা পরিষ্কার শিরকী আক্বীদা (যুমার ৩০)
(৪)
কোন না কোন একজন মুজতাহিদ ইমামের তাক্বলীদ করা অপরিহার্য। সকল মুজতাহিদ ইমামই সত্য (পৃঃ ৭৪৩)। অথচ কুরআন ও সুন্নাহর অনুসরণই কেবল অপরিহার্য এবং মুজতাহিদ ইমামগণ ভুলের ঊর্ধ্বে নন
(৫)
আল্লাহ তাআলার কোন আকার নেই (পৃঃ ১৪৬৫)। অথচ কুরতুবী স্বীয় তাফসীরে অন্যের মন্তব্য উদ্ধৃত করেছেন এভাবে যে, আমরা মানুষকে সর্বোত্তম অবয়বে সৃষ্টি করেছি। এর অর্থ অনেকে করেছেন علي صورة الرحمن আল্লাহর আকৃতিতে। অথচ আল্লাহর বাস্তব আকার (صورة مةشخصة) কোথায় আছে ভাবার্থ ব্যতীত? (, ২০/১১৪)। এ বিষয়ে সঠিক আক্বীদা হল এই যে, আললাহর আকার আছে। কিন্তু তার তুলনীয় কিছুই নেই (শূরা ১১)।
(৬)
এলমে তাছাউফও ফরযে আইনের অন্তর্ভুক্ত (পৃঃ ৫৯৬)। অথচ দ্বীনী ইলম হাছিল করা ফরয। ইসলামের সকল ইবাদতের মূল উদ্দেশ্য হল তাযকিয়ায়ে নাফ্স বা আত্মশুদ্ধি। পৃথকভাবে ইলমে তাছাউওফের কোন অস্তিত্ব শরীআতে নেই। বরং কথিত ছুফীবাদের চোরাগলি দিয়েই মুলমানদের মধ্যে অধিকাংশ শিরক প্রবেশ করেছে
(৭) অনুরূপভাবে সূরায়ে
মুহাম্মাদ ৩৮ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সৈয়ূতীর বরাতে বলা হয়েছে যে, আলোচ্য আয়াতে ইমাম আবু হানীফা ও তাঁর সহচরদেরকে বুঝানো হয়েছে। কেননা তাঁরা পারস্য সন্তান। কোন দলই জ্ঞানের সেই স্তরে পৌঁছেনি, যেখানে আবু হানীফা ও তাঁর সহচরগণ পৌঁছেছেন (পৃঃ ১২৬৩)।
এমনিভাবে অসংখ্য শিরকী আক্বীদা ও বিদ
আতী আমলের প্রচারণা চালানো হয়েছে অত্র তাফসীর গ্রন্থে। অতএব কেউ পড়তে চাইলে জ্ঞান-বিবেক জাগ্রত রেখেই এ তাফসীর পড়তে হবে। কেননা তার মধ্যে অনেক শিক্ষণীয় বিষয় ও রয়েছে।


জিহাদ, কিতাল ও খিলাফাহ - শায়খ মুজাম্মেল

জিহাদ, কিতাল খিলাফাহ - শায়খ মুজাম্মেল
ছয়টি পর্বে আর্টিকেল, সবগুলোর লিংকঃ
_____________________________
প্রথম পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409140925./888197884546293/?type=1
_____________________________
দ্বিতীয় পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/889014301131318/?type=1
_____________________________
তৃতীয় পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409575631./889078881124860/?type=3&src=https%3A%2F%2Ffbcdn-sphotos-d-a.akamaihd.net%2Fhphotos-ak-xap1%2Ft31.0-8%2F10548242_889078881124860_8237928261446029498_o.jpg&smallsrc=https%3A%2F%2Ffbcdn-sphotos-d-a.akamaihd.net%2Fhphotos-ak-xap1%2Fv%2Ft1.0-9%2F10649941_889078881124860_8237928261446029498_n.jpg%3Foh%3D549eaf0992d612730d322f011625f95f%26oe%3D547F3185%26__gda__%3D1416759897_e261f985ea6aff4f20460b9b7ec87f05&size=1000%2C800&fbid=889078881124860
_____________________________
চতুর্থ পর্বের লিংক -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/pb.125167817515974.-2207520000.1409819769./892278970804851/?type=1&source=42
_____________________________
পঞ্চম পর্বের লিংক -
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/906765352689546/?type=1&relevant_count=1
.
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/09/blog-post_41.html
_____________________________
ষষ্ঠ পর্বের লিংক - শেষ পর্ব!
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/09/blog-post_41.html
_____________________________