প্রশ্নঃ
আত্মহত্যাকারী বা অপঘাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা ‘ভূত’ হয়ে দুনিয়াতে
ঘুরে বেড়ায়, কথাটা কি সত্যি?
উত্তরঃ আমাদের
মুসলমানদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কাফের মুশরেকদের বানানো
নাটক-সিনেমা আর গল্পের বই নিয়ে পড়ে থাকি, ইন্টারনেট, ফেইসবুকে ফাসেক বোকা লোকদের
কথার অনুসরণ করি, কিন্তু দিনের অন্তত কিছুটা সময় বের করে কুরান হাদীস পড়ার মতো
সময় আমাদের হয়না! আমরা এতো ব্যস্ত যে, জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য কি করতে হবে,
সেটা জানার ও বোঝার মতো সময় আমাদের হয়না! কিন্তু কাফের মুশরেকদের দেশ ঘুরে
বেড়ানো, বিনোদনের নামে অশ্লীল ও নোংরা অপসংস্কৃতি, হারাম গান-বাজনা, নাটক সিনেমা,
গল্পের বই উপন্যাস, কার্টুন আর ফুটবল-ক্রিকেটের মতো খেলা দেখার মতো ফালতু কাজের
জন্য সময় বের করতে আমরা বড়ই উস্তাদ! যার ফলে বর্তমানের আমাদের অবস্থা কি হয়েছে?
অধিকাংশ মানুষ
ইসলাম সম্পর্কে অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞান রাখেনা। কাফের মুশরকদের ও বেদ্বীন লোকদের
বানানো নাটক-সিনেমাতে প্রচারিত শিরকি ও কুফুরী আকীদাহ মুসলমানদের মাঝে ঢুকে গেছে।
দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের অনেকে জানেইনা যে এইগুলো শিরকি কুফুরী ভ্রান্ত বিশ্বাস।
দ্বীন সম্পর্কে গভীর দূরের কথা (যা ছাড়া ইবাদত করা খুব কঠিন), সাধারণ ঈমান
ইসলামের অর্থ কি, সংজ্ঞা কি, অনেক মানুষই এইগুলো সম্পর্কে জানেনা। ক্বুরানের অন্তত
দশটা-বিশটা ছোট সুরার অর্থ, এমনকি সুরা ফাতেহার অর্থ ও তাফসীর অনেকে জানেনা। নামায
পড়ে ঠিকই, কিন্তু নামায কেনো পড়া হচ্ছে, নামাযে কি পড়া হচ্ছে, সেটা অনেক
নামাযীই জানেনা। সঠিকভাবে নামাযের অর্থ ও নিয়ম না জানা থাকার কারণে অনেকেই নামাযের
লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারছেনা। শুধু মন্ত্র পড়ার মতো আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত
হয়েছে আমাদের অধিকাংশ মুসলমানদের নামাযগুলো।
যাই হোক, যে
প্রসংগে এই কথাগুলো বলা। মৃত ব্যক্তির আত্মার ভাগ্যে কি হয় সেটা আল্লাহ তাআ’লা ক্বুরানুল কারীমে সুন্দরভাবে বর্ণনা
করেছেন। মানুষ দুইটি জিনিসের সমন্বয়ে গঠিতঃ রুহ বা আত্মা এবং শরীর বা দেহ। মৃত
ব্যক্তির দেহকে তো আমরা কবর মাটি চাপা দেই, যা সময়ের ব্যবধানে পচে গলে মাটির সাথে
মিশে যায়। উল্লেখ্য, সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে নবী রাসূলদের দেহ মাটি খেতে পারেনা।
তাই আমাদের বিশ্বাস সমস্ত নবী রাসুলদের দেহ তাঁদের কবরে অক্ষত অবস্থায় আছে।
কিন্তু অন্যদের দেহ মাটির সাথে মিশে যায়।
আর মৃত ব্যক্তির
আত্মাগুলো কোথায় যায়? এটা নির্ভর করে, আত্মাটা কি ধরণের মানুষের, তার উপরে। মৃত
ব্যক্তি যদি ঈমানদার, ধার্মিক ও পবিত্র জীবন যাপনকারী কেউ হয়, তাহলে তার
আত্মাটাকে আসমানের উপরে ইল্লিয়্যিনে সম্মানের সহিত রাখা হয়। যেখানে সে আল্লাহর
নেয়ামত ও সন্তুষ্টির সাথে বসবাস করতে থাকে। আর আত্মাটা যদি হয় কাফের, মুশরেক,
পাপাচারী ও খবিস জীবন যাপনকারী কোন ব্যক্তির, তাহলে আসমানের দরজা তার জন্য
উন্মুক্ত করা হয়না এবং আকাশ থেকে জমীনের নীচে, সিজ্জিনে ছুঁড়ে ফেলা দেয়া হয়।
সেইখানে তার আত্মাটা গ্রেফতার করা অবস্থায়, আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত এমন
অবস্থায় বন্দী হয়ে থাকে।
এই সম্পর্কে কুরআনের
সুরা মুতাফফিফীনে বলা হয়েছেঃ
আ’উযু
বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
(৭) নিশ্চয়
পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে আছে।
(৮) (হে নবী!) আপনি
কি জানেন, সিজ্জীন কি?
(৯) এটা লিপিবদ্ধ
খাতা।
(১০) সেদিন দুর্ভোগ
মিথ্যারোপকারীদের,
(১১) যারা বিচারের
দিনকে মিথ্যারোপ করে।
(১২) প্রত্যেক
সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠই কেবল এই (বিচারের দিনকে) মিথ্যা বলে।
(১৩) তার কাছে আমার
আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে সে বলে, এতো প্রাচীনকালের উপকথা।
(১৪) কখনও না, বরং
তারা যা করে তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।
(১৫) কখনও না, তারা
সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে।
(১৬) অতঃপর তারা
জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
(১৭) এরপর তাদেরকে
বলা হবে, এই (বিচার দিন, জাহান্নামের শাস্তিকে) তো তোমরা মিথ্যারোপ করতে।
(১৮) কখনও না,
নিশ্চয় সৎলোকদের আমলনামা আছে ইল্লিয়্যীনে।
(১৯) (হে নবী!)
আপনি কি জানেন, ইল্লিয়্যীন কি?
(২০) এটা লিপিবদ্ধ
খাতা।
(২১) আল্লাহর
নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ একে প্রত্যক্ষ করে।
সুরা মুতাফফিফিনঃ
৭-২১।
এখন যার আত্মা
ইল্যিয়িনে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নেয়ামত ভোগ করছে, তার আত্মাতো কোনোদিন
দুঃখ-দুর্দশার দুনিয়াতে আসতে চাইবেনা, আর আসতে চাইলেও তাকে আসতে দেওয়া হবেনা! আর
যার আত্মা সিজ্জিনে বন্দী অবস্থায় থাকবে, শাস্তির ভয়ে সেতো সেখান থেকে পালাতেই
চাইবে, কিন্তু তাকেও সিজ্জিন থেকে বের হতে দেওয়া হবেনা। মৃত ব্যক্তির আত্মা
দুনিয়াতে ঘোরাফেরা করে, মৃত্যুর ৭দিন বা ৪০দিন পর্যন্ত আত্মীয় স্বজনদের কাছে
থাকে, মৃতের খুনি বা নির্যাতনকারীকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, পীর
ফকিরেরা মৃত্যুর পর তাদের মুরীদদেরকে বা মানুষদেরকে সাহায্য করে, এই ধরণের কথা
বার্তা সম্পূর্ণ কুফুরী, যার উৎস হলো হিন্দু বা অন্য বাতিল ধর্ম। জিন সত্যি, কুরআন
ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত আল্লাহ তাআ’লার বিশেষ সৃষ্ট এক ধরণের প্রাণী হলো জিন। জিন জাতির অস্তিত্ব
যে অস্বীকার করে সে পরিষ্কার কাফের। কিন্তু, মৃত ব্যক্তির আত্মা দুনিয়াতে ভূত-প্রেত
হিসেবে অবস্থান করে, এধরণের আকীদা বা বিশ্বাস ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। অথচ, কত
লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি মানুষ আছে, যারা নিজেদেরকে মুসলমান মনে করে, নামায-রোযা করে
কিন্তু ইয়াহুদী-খ্রীস্টান, কাফের-মুশরেকদের বানানো হ্যারি পটার,
কিরণ মালা, লর্ড অব দ্যা রিংস, বিভিন্ন হিন্দী-ইংরেজী নাটক, সিনেমা, ডিটেকটিভ,
ভৌতিক গল্প উপন্যাস পড়ছে বা দেখছে যেখান যাদু, কুফুরী কালাম, জ্যোতিষি ও গণকের
তাগুত, শয়তান, মুশরেকদের ধর্ম, মূর্তি পূজার দিকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। সামান্য
বিনোদন ও আমোদ ফূর্তির জন্যে এই মুসলমানেরা নাটক সিনেমা বা গল্প উপন্যাসের লোভ
ছাড়তে পারেনা যেখানে শিরক দেখানো হচ্ছে, দাজ্জাল যখন বের হবে এরা দাজ্জালের ধোঁকা
থেকে নিজেদের ঈমানকে কিভাবে রক্ষা করবে?
চিন্তা করে দেখুন,
আজ থেকে ১২৫০ বছর পূর্বেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের প্রসিদ্ধ একজন ইমাম, মুহাম্মাদ
ইবনে
সিরীন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭৬১ খ্রীস্টাব্দ) বলেছিলেন, “আমার মনে হয় আজকে যদি দাজ্জাল বের হয় তাহলে মনপূজারী,
বিদআ’তীরা তাকেই অনুসরণ
করবে।” শরাহ উসুল
আল-ইতিক্বাদ আহলে সুন্নাহঃ ১/১৩১।