ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদের
নামায এবং ঈদের কিছু মাসয়ালা
আলহা’মদুলিল্লাহ।
বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশে আজ ১০-ই জিলহজ্জ, খুশির ঈদুল
আযহা। ঈদ উপলক্ষ্যে দ্বীনি ভাই ও বোনদেরকে জানাই প্রাণঢালা ঈদের শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক
মোবারকবাদ।
تَقَبَّلَ اللّهُ مِنَّ وَ مِنْكُمْ
উচ্চারণঃ তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিংকুম।
অর্থঃ আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের নেক আমলগুলো কবুল করুন।
(আমিন)
.
ঈদ উপলক্ষ্যে কতিপয় মাসয়ালা
=> ঈদ উপলক্ষ্যে নারীরা হাতে-পায়ে মেহেদী দিয়ে সাজতে
পারে, কোন সমস্যা নাই। পায়েও দিতে পারে, এতে বেয়াদবী হবেনা বা মোটেও খারাপ কোন কিছু
নয়। তবে গায়ের মাহরাম পুরুষদেরকে শরীরের যেকোন অংগ দেখানো সম্পূর্ণ হারাম। রোযার পরেই
বেহায়া শ্রেণীর কিছু নারী লম্পট লোকদের সাথে নষ্টামি করার জন্যে বেড়িয়ে পড়ে। আর দাইয়ুস
শ্রেণীর গার্জিয়ানেরা ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা, আধুনিকতার নামে নারীদেরকে
ফ্রী ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আশা করি জাহান্নামী নারী ও পুরুষদের
কাজ থেকে সতর্ক থাকবেন।
=> পুরুষের জন্য মেহেদী দেওয়া জায়েজ নয়, শুধুমাত্র সাদা
হয়ে গেলে দাঁড়ি ও চুলে দিতে পারবে।
=> ঈদের আগের রাতের বিশেষ কোন ফযীলত সহীহ হাদীসে নেই,
এই রাতে দুয়া কবুল হয় বা এতো এতো ফযীলত – এ সম্পর্কিত হাদীসগুলো জাল নয়তো জয়ীফ। সুতরাং, সেইগুলো বিশ্বাস
করা যাবেনা।
=> ঈদ উপলক্ষ্যে যারা শেইভ করে তাদের উচিৎ তোওবা করা,
কারণ তারা দ্বীন শিক্ষা না করে ফাসেকী কাজে লিপ্ত।
=> ঈদ উপলক্ষ্যে যেই সমস্ত টিভি চ্যানেল নাটক-সিনেমা,
হারাম অনুষ্ঠান দেখায়, এরা শয়তানের গোলাম। ঈদ হচ্ছে আনন্দের দিন, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের
দিন। এই দিনে যারা গান-বাজনা, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও, বেপর্দা, বেহায়া নারীদেরকে মুসলমানদেরকে
হারাম ও আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহবান করে, এরা মানুষ শয়তান। আদম সন্তানেরা যদি এই
মানুষ শয়তানদেরকে না চিনে এবং এদের ধোঁকায় পড়ে হারাম কাজে লিপ্ত হয়, সে নিজের জন্য
জাহান্নামের শাস্তিকে অবধারিত করে নিবে।
.
ঈদের সালাত পড়ার নিয়মঃ
ঈদের সালাত পড়া ফরয/ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, এই
দুই রকম মত পাওয়া যায়। তবে সত্য সন্ধানী যেই সমস্ত আলেম মনে করেন যে, ঈদের সালাত পড়া
প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর উপর ‘ফরয’ তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
(১) ইমাম আবু হানীফা
(২) ইমাম আহমাদ থেকে একটি ফতোয়া
(৩) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা
(৪) ইমাম শাওকানী
(৫) সাবেক সউদী প্রধান মুফতী, শায়খ বিন বাজ
(৬) বিগত শতাব্দীর অন্যতম আলেম এ দ্বীন, শায়খ উসাইমিন
(৭) বিংশ শতাব্দীর অবিস্মরণীয় মুহাদ্দিস শায়খ নাসির উদ্দীন
আলবানী।
উপরোক্ত আলেমদের ফতোয়া হচ্ছে, ঈদের নামায পড়া নারী পুরুষ
সবার জন্যেই ফরয।
তাদের ফতোয়ার পক্ষে দলীল হচ্ছেঃ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে
বর্ণিত একটি হাদীস। যেখানে রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে ঈদের সালাত পড়তে
আদেশ করেছেন। আর আল্লাহর রাসুল যদি তাঁর উম্মতকে কোনো আদেশ করেন, সেটা পালন করা আমাদের
জন্য ফরয।
উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আ’নহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে
(অর্থাৎ নারীদেরকে) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের জন্য ঘর থেকে বের হতে বলেছেন।
এমনকি ঋতুবতী নারীদেরকেও। ঋতুবতী নারীগণ সালাতে অংশগ্রহণ করবেনা। ঈদগাহের একপাশে থাকবে
এবং (খুতবার মাঝে) দুয়ায় শরীক হবে। উম্মে আতিয়্যা বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর
রাসুল! আমাদের প্রত্যেকের পর্দা করার মতো চাদর নাই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, সে তার বোনের
চাদর নিয়ে হলেও ঈদের সালাতে শরীক হবে। সহীহ বুখারীঃ ৩২৪, সহীহ মুসলিমঃ ৮৯০।
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক
করেছেন যে, তারা অবশ্যই ঈদের সালাতে উপস্থিত হবে। নারীদের জন্যই যদি এই সালাতে উপস্থিত
থাকা বাধ্যতামূলক হয়, তাহলে পুরুষের জন্য ফরয না হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা।
আমাদের দেশে বিভিন্ন অযুহাতে নারীদের ঈদগাহ থেকে দূরে রাখা
হয়। অথচ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার জন্য কতো জোর
দিয়েছেন, এমনকি ঋতুবতী নারীরা সালাত না পড়লেও তাদেরকে ঈদগাহের দোয়ায় শরীক হতে আদেশ
করেছেন।
আজকে মুসলমানদের ঘরের নারীরা ঈদের নামায পড়তে বাইরে যায়না,
কিন্তু বেহায়াপনা করতে মার্কেট, পার্কে ঠিকই যায়। ঈদে, জুমুয়া'তে, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাতে
নারীদের জন্য ইসলাম শেখার কোন জায়গা নাই, কুররান হাদীস শেখার সুযোগ নেই, বেশিরভাগ নারীই
ইসলাম সম্পর্ক অজ্ঞ হয়ে বড় হয়ে উঠে। পরবর্তীতে ঈমান ও ইলমের ব্যপারে দুর্বল এই নারীগুলো
বড় হয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। নিজে বিপথগামী হয়, তার আশেপাশের পুরুষদের জন্যও ফেতনা
সৃষ্টি করে বেড়ায়, যার ফলে আজকে সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারী জাতির ফেতনা লক্ষ্য
করা যাচ্ছে। আমার মনে হয়, দ্বীনদার বোনদের এই ব্যপারে সচেতন হওয়া উচিত, প্রতিকূল অবস্থার
মাঝে থেকেও, ফেতনা এড়িয়ে সঠিক ইসলাম শিক্ষা করার জন্য আত্মনিয়োগ করা উচিত। একটা মেয়ে
ইসলামের আলোয় আলোকিত হওয়া মানে একটা পরিবার ইসলামের ছায়ায় প্রবেশ করা।
সচেতন মুসলিম বোনদের মধ্যে যাদের ঈদগাহে যাওয়ার সুযোগ নেই
বা ভাইদের মধ্যে অনিবার্য কারণবশত যাদের জামাত মিস হবে, তাদের উচিত বাসায় জামাতে বা
একা একা ঈদের সালাত আদায় করে নেয়া। এরকম ঘটনা সাহাবাদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসের
রেফারেন্স দেখুন সহীহ বুখারীঃ ১৯৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহঃ ৫৮০২।
.
সর্বশেষ, ঈদের সালাত দুই রাকাত ১২টি অতিরিক্ত তাকবীরের সহিত
পড়তে হয়। তাকবীর = সালাতের শুরুতে ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবীরে তাহরিমার মতো দুই হাত উপরে তুলে ইশারা করা।
প্রথম রাকাতে আল্লাহু আকবর বলার পরে বুকে হাত বাঁধবেন (নারী
ও পুরুষ উভয়ে), এর পরে সানা পড়বেন এরপরে অতিরিক্ত ৭টি তাকবীর (আল্লাহু আকবর বলে দুই
হাত তুলে ইশারা করবেন এবং হাত ছেড়ে রাখবেন, এইভাবে মোট ৭বার) করবেন। এরপরে আ'উযুবিল্লাহ,
বিসমিল্লাহ, সুরা ফাতেহা, ক্বিরাত পড়ে বাকী রাকাত পূর্ণ করবেন। দ্বিতীয় রাকাতের জন্য
স্বাভাবিক সালাতের মতো দাঁড়ানোর সুরা-ক্বেরাত পড়ার পূর্বে মোট ৫টি অতিরিক্ত তাকবীর
দিবেন। এর পরে বিসমিল্লাহ, সুরা ফাতেহা, ক্বিরাত পড়ে দ্বিতীয় রাকাত পূর্ণ করবেন। শেষ
বৈঠক, সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবেন।
সহীহ হাদীসের দলীল দেখুনঃ তিরমিযীঃ ৪৪২, আবু দাউদঃ ১০১৯,
দারা কুতনীঃ ১৭১০, বায়হাকীঃ ৩/২৮৬, এবং অন্যান্যরা।
কেউ যদি প্রচলিত ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিয়ে সালাত
পড়েন, তাহলে ইমাম যেইভাবে পড়বেন সেইভাবেই পড়বেন। তাকবীরের ব্যপারে ইমামের বিরোধীতা
করা যাবেনা। অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলা সুন্নত। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে প্রচলিত ৬টি তাকবীরের
বর্ণনা কোনো সহীহ হাদীসতো দূরের কথা, এমনকি কোনো যয়ীফ বা দুর্বল হাদীসেও নাই।
মূল উৎসঃ
(১) শায়খ আব্দুল হামীদ মাদানি ফাইযী
(২) Islamqa.com