#কুরবানী
(১) কুরবানী অনেক বড় ও মর্যাদাপূর্ণ একটা ইবাদত, তাওহীদবাদীদের
নেতা, নবী ইব্রাহীম আ’লাইহিস সালাম-এর সুন্নত।
কুরবানী নিয়ে কুরআনে দুইটি আয়াত রয়েছেঃ
আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা
বলেন, “(হে নবী) সুতরাং আপনি
আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন।” সুরা আল-কাউসারঃ ২।
আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা
আরো বলেছেন, “(হে নবী) আপনি বলুনঃ
নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও আমারা মৃত্যু, শুধুমাত্র বিশ্ব
জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্যে।” সুরা আল-আনআ’মঃ ১৬২।
(২) অধিকাংশ আলেম কুরবানী করা ‘সুন্নতে মুয়াক্কাদা’ বলে মনে করেন। যদিও কিছু সংখ্যক আলেম একে ‘ওয়াজিব’ বলে মনে করেন। তবে কুরবানী করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা হোক আর ওয়াজিব
হোক, যারা সামর্থ্যবান তাদের এই ইবাদত পালনে চেষ্টা করা উচিৎ। যাদের সামর্থ্য নেই,
“আল্লাহ কারো উপর তার
চাইতে বেশি বোঝা চাপিয়ে দেন না।”
(৩) কুরবানী করা দান করার চাইতে বেশি সওয়াব। লোক দেখানোর
জন্যে বা গোশত খাওয়া নয়, ‘ইখলাস’ অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে
কুরবানী করলে আপনার সম্পূর্ণ টাকা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় হলো, যা পরকালের সম্পদ হিসেবে
জমা থাকবে। অধিকন্তু, কুরবানী থেকে আপনার ও আপনার পরিবারের গোশত খাওয়া আল্লাহ তাআ’লা বৈধ করেছেন। এটা আল্লাহর অনেক বড় একটা অনুগ্রহ।
সুবহা’নাল্লাহ!
(৪) কোন ব্যক্তির কুরবানী দেওয়া উচিৎ, যাকাতের মতো এমন কোন
‘নিসাব’ বা নির্দিষ্ট পরিমান সম্পদের কথা উল্লেখ করা
নেই। ঈদুল আযহা বা ১০-ই জিলহজ্জের পূর্বে আপনার কাছে যদি এমন পরিমান সম্পদ হাতে থাকে
যে, আপনি ধার-কর্জ না করে বা নিজেকে কষ্ট না দিয়ে সহজেই কুরবানীর জন্যে পশু কিনতে পারবেন,
আপনি তাহলে কুরবানী কিনবেন।
(৫) একটা পশু, সেটা গরু হোক কিংবা ছাগল, ছোট কিংবা বড় – কুরবানী হিসেবে আপনার পুরো পরিবারের জন্যে যথেষ্ঠ,
যদিও আপনার পরিবারে সদস্য সংখ্যা অনেক।
(৬) একটা গরুতে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দিতে পারবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, যারা শরীক হবে তাদের সবাইকে নামাযী, মুসলিম হতে হবে। বেনামাযী,
কবর-মাযার পূজারী, ধর্ম নিরপেক্ষতা মতবাদে বিশ্বাসী কাউকে কুরবানীতে শরীক বানোনা যাবেনা,
কারণ তাদের নিজেদের কুরবানী আল্লাহ কবুল করবেন না। শরীক ব্যক্তিদের নিয়ত বা উদ্দেশ্য
যেনো সঠিক হয়, কারো উদ্দেশ্য যেনো লোক দেখানো বা গোশত খাওয়া না হয়। সবার কুরবানীর টাকা
যেনো হালাল উপার্জনের হয়ে থাকে। ব্যংকের উপার্জন, হারাম চাকরী বা ব্যবসা, সুদ-ঘুষের
হারাম টাকা থেকে কুরবানী করলে আল্লাহ কবুল করেন না। “আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু কবুল
করেন না।”
(৭) বেনামাযী অর্থাৎ, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েনা,
মসজিদে পড়েনা, বাসাতেও পড়েনা, তার ঈমান নেই। আর ঈমান ছাড়া কোন ব্যক্তির ইবাদতঃ নামায,
রোজা, হজ্জ, যাকাত বা কুরবানী, কোনকিছুই আল্লাহ কবুল করেন না। সুতরাং, বেনামাযী ব্যক্তি
কুরবানী করতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রথমে লজ্জিত হয়ে, আন্তরিক তোওবা করে, নামায কায়েম
করার দৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে হবে।
(৮) গরুতে ভাগে আকিকা দিলে সেই আকিকাহ হবেনা। আকিকা দিতে
হয় জন্মের সপ্তম দিনে, ঈদের দিনে নয়। আর আকিকাহ দিতে হয় মেয়ে হলে একটা ছাগল, আর ছেলে
হলে দুইটা। অবশ্য, কারো সামর্থ্য না থাকলে সে ছেলের জন্যে একটা ছাগল দিয়ে আকিকাহ করতে
পারে। কিন্তু গরু বা উট দিয়ে আকিকাহ করা যাবেনা, গরু বা উট দিয়ে আকিকাহ করার কোন দলিল
নেই। আর কুরবানীর সময় ভাগে আকিকাহ করার তো প্রশ্নই আসেনা। কারণ, আকিকাহ করতে হয় পশুর
প্রাণ দিয়ে, এক পশুকে ভাগে আকিকাহ করার কোন দলিল নেই।
(৯) কুরবানী হয় কোন ব্যক্তির ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে,
নামে নয়, নাম হবে আল্লাহর নামে। আমরা যেকোন কাজের পূর্বে বলিঃ ‘বিসমিল্লাহ’ অর্থ হচ্ছে – আমি এই কাজটা আল্লাহর নামে শুরু করছি। অনুরূপভাবে, আমরা দান করি,
কুরবানী করি আল্লাহর নামে বা আল্লাহর জন্যে। আর বলতে হবে বা নিয়ত করতে হবে, “হে আল্লাহ এই কুরবানী আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ
থেকে।” যেই সমস্ত ভাইয়েরা
কুরবানী করবেন, আপনারা নিজেদের সাথে আপনাদের অধীনে বা পরিবারের সবার পক্ষ থেকে এই কুরবানী,
এইভাবে নিয়ত করবেন, এতে সবাই সওয়াব পেয়ে যাবে ইংশাল্লাহ।
(১০) কোন ব্যক্তি একা গরু কুরবানী করছে, তার জন্যে গরু জবাই
করার পূর্বে সাত জনের নামের লিস্ট বানানোর কোন দরকার নেই, বরং এটা অজ্ঞতা। একজন ব্যক্তির
কুরবানী, সেটা গরু বা ছাগল যা হোক, তার পরিবারের সবার জন্যে, এমনকি যদিওবা তার পরিবারের
লোক ৫০ জন হোক।
(১১) কুরবানীর গোশত নিজের জন্যে, আত্মীয়ের জন্যে এবং ফকির-মিসকীনদের
জন্যে – এই তিন ভাগে ভাগ করা
উত্তম বা ভালো, তবে এটা করা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। যার পরিবারের লোক সংখ্যা বেশি, তিনি
তার প্রয়োজন অনুযায়ী গোশত রেখে বাকিটা দান করবেন। দরিদ্রদেরকে যেটা দেওয়া হবে, সেটা
সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে।
(১২) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কিংবা রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর
পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয়নি।
(১৩) কুরবানীর গোশত ফ্রীজে রেখে বা শুকিয়ে সাত দিনের বেশি
খাওয়া যাবে, এতে কোন দোষ নেই।
(১৪) কুরবানী জবাই ও গোশত প্রস্তুত করার কাজে নিয়োজিত লোকদেরকে
কুরবানীর গোশত দিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবেনা। তাদেরকে আলাদা মূল্য দিয়ে পারিশ্রমিক
দিতে হবে। তবে কেউ যদি চায়, তাদেরকে গোশত থেকে দান করতে বা হাদিয়া দিতে, সেটা তার ব্যক্তিগত
ব্যপার।
(১৫) কুরবানীর পশুর ভূড়ি, মগজ, খাওয়ার যোগ্য এমন যেকোন অংশ
খাওয়া যাবে। কুরবানীর পশুর গোশতের মতোই চামড়া কেউ যদি নিজে প্রসেস করে ব্যবহার করতে
পারে, তাহলে সে তা করতে পারবে। আর নিজে প্রসেস করতে না পারলে তাহলে যদি বিক্রি করে,
তাহলে সেই টাকা দান করে দিতে হবে।