সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর জন্যে, যিনি অত্যন্ত দয়াপরবশ হয়ে আমরা চাওয়ার পূর্বেই আমাদেরকে
মুসলমান বানিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর দেওয়া এই অতুলনীয় নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়
করে আসুন আমরা সকলেই অন্তর থেকে বলি “আলহা’মদুলিল্লাহ”! অতঃপর, আল্লাহ
আমাদের নবীর প্রতি তাঁর সমস্ত স্ত্রী ও বংশধরদের প্রতি অসংখ্য ও অগণিত দুরুদ ও
শান্তি বর্ষণ করুন, আমিন।
(১)
এই পৃথিবীতে সবচাইতে কষ্টে আছেন তারাই, যারা এই পৃথিবীতে
বেঁচে থাকার কোন অর্থ খুঁজে পান না। এই দুনিয়ার আলো বাতাসে যারা আর বেঁচে থাকতে
চান না। আমাদের পেইজের কোন ভাই বা বোন যদি এই যন্ত্রনার স্বীকার হয়ে থাকেন আর এ
ব্যপারে কোন উপদেশ বা পরামর্শ পেতে চান, তাহলে আমাদেরকে
ইনবক্স করতে পারেন। অনেক সময় এমন হয় একজন মানুষ অনেক জ্ঞানী বা পরহেযগার, কিন্তু
খারাপ বা অপছন্দনীয় একটা অবস্থায় পড়ে অথবা শয়তানের ধোঁকায় পড়ে, তার যেই কাজটা করা উচিৎ, যে কাজটা করলে তিনি কষ্ট
থেকে মুক্তি পাবেন, সেটা করতে পারেন না, বা করতে সাহস পান না। তখন কোন ভালো বন্ধু যদি আন্তরিক উপদেশ দেয় সেই কঠিন
কাজটাও সহজ বলে মনে হয়, আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা ফিরে
আসে। সুতরাং আমাদের উচিৎ, এক ভাই আরেক ভাইকে উপদেশ দেওয়া,
তার ভুল সংশোধন করে দেওয়া।
(২)
ফেইসবুকে যেমন হাতে গোনা ২-৪ জন ভালো মানুষ আছেন, তেমন নিম্ন
মানের অনেক ফালতু নারী ও পুরুষও আছে। খারাপ লোকদের কথা শোনা, তাদের লেখা পড়া,
তাদের সংশ্রব থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে, কারণ তারা হচ্ছে বিষের মতো। বিশেষ করে
অনেক অল্প বয়ষ্ক জাহিল নারী ও পুরুষ আছে যারা ‘ইলম’ ছাড়াই দ্বীনি বিষয়ে কথা বলে সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত
করে, তাদের ব্যপারে সাবধান। বিভ্রান্তিকর বক্তা ও লিখকদের চমকপ্রদ উপস্থাপনা দেখে
তাদের ভক্ত শ্রোতারা তাদেরকে আলেম/আলিমাহ মনে করে ধোঁকার মাঝে পড়েন। এমন ব্যক্তিদের
দুই-একটা সুন্দর সুন্দর কথার আড়ালে আসলে পথভ্রষ্টতা ও গোমরাহী লুকানো থাকে। “আচ্ছা একটু পড়ে দেখি কি লেখা আছে. . .”, এমন আগ্রহ নিয়ে তাদের কথা পড়তে গেলে হতে পারে শয়তান তাদের
গোমরাহীগুলো আপনার অন্তরে ঢুকিয়ে দেবে। আপনি মিথ্যাকেই সত্য আর সত্যকে মিথ্যা বলে
পা পিছলে জাহান্নামে চলে যাবেন। আল্লাহ যাকে নিরাপত্তা দেন একমত্র সে ব্যক্তিই
নিরাপদ থাকতে পারে। আমাদের নিজেদের কারো সাধ্য নাই নিজেদেকে বাঁচানোর।
(৩)
আল্লাহ সবাইকে সব নিয়ামত বা সুযোগ-সুবিধা দেন না। পুরুষদেরকে আল্লাহ যেই
নিয়ামতগুলো দিয়েছেন তার মাঝে একটা হচ্ছে মসজিদে সালাত আদায় করার বিধান দেওয়া। আপনি
চিন্তা করে দেখুন, পুরুষদের জন্য মসজিদ কত বড় একটা নিয়ামত, সুবহা’নাল্লাহ! কেউ যদি বাসা থেকে ওযু করে ফরয সালাত আদায়ের জন্যে
মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে তাহলে প্রত্যেকটা কদমের জন্য একটা করে সওয়াব লেখা হয়, তার একটা করে গুনাহ মাফ করা হয় আর একটা করে
মর্যাদা বাড়ানো হয়। অতঃপর কেউ যদি জামাত শুরু হওয়ার আগে গিয়ে মসজিদের আদব রক্ষা
করে সালাতের জন্যে বসে থেকে অপেক্ষা করে তাহলে, সে যতক্ষণ
ওযুসহ বসা থাকবে তার পুরো সময়টাই সালাতের মধ্যেই বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ, ঐ সময়টাতে
সালাত না পড়লেও, সালাতের জন্যে অপেক্ষা করার জন্যে সালাতের
সওয়াব তার আমল নামায় লিখা হতে থাকবে, সুবহা’নাল্লাহ। আর আপনি যত আগে যাবেন আর ওয়াক্তের সুন্নত সালাত বা
তাহিয়াতুল মসজিদের সালাত পড়ার পরে চুপ করে বসে থেকে আল্লাহকে স্বরণ করবেন, যিকির আযকার বা ক্বুরান তেলাওয়াত করবেন,
দেখবেন আল্লাহর যিকির আপনার অন্তরে ‘সুকুন’ বা প্রশান্তি এনে দেবে। আপনার অন্তরে শান্তি ফিরে আসবে, আপনার অন্তরকে পবিত্র ও কোমল করবে। আর এইভাবে
বসে থেকে ফরয সালাতের জন্যে অপেক্ষা করতে থাকলে দেখবেন সালাতে আপনার মনোযোগ অনেকগুণ
বেড়ে যাবে। সালাত পড়লে ঠিক সেইরকম মনে হবে, যেমনটা হাদীসে এসেছেঃ ‘ক্বুররাতা আইনুন’, অর্থাৎ এমন
সালাত যা আদায় করলে চক্ষু জুড়িয়ে যায়। এছাড়া এইভাবে জামাতের আগে আগে মসজিদে গেলে
আরেকটা লাভ হচ্ছে, ইকামতের পূর্বের সময়টাতে দুয়া করার সময় পাওয়া যায়, কারণ আযান ও
ইকামতের মাঝখানের সময়ের দুয়া আল্লাহ তাআ’আলা
প্রত্যাখ্যান করেন না। আল্লাহ আমাদেরকে আমল করার তোওফিক দান করুন, আমিন।
(৪)
শারীরিক শক্তির দিকে থেকে নারীরা পুরুষের দিক থেকে দুর্বল হলেও ‘মানব সন্তান জন্ম দেওয়া ও লালন-পালন করার’ মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটা আল্লাহ নারীদেরকেই দিয়েছেন।
সন্তান প্রসব করার জন্যে যে কষ্ট আমাদের মায়েরা সহ্য করেছেন, একবার চিন্তা করে
দেখুনঃ যতই শক্তিশালী পুরুষ হোক না কেনো,
এই দায়িত্ব দেওয়া হলে কয়জন রাজী হবেন? আল্লাহ হচ্ছেন ‘সর্বউত্তম সৃষ্টিকারী’, তাই
তিনি ভালো জানেন কে কোন কাজের জন্যে যোগ্য, কে কোন কাজ ভালো
পারবে। আর সেজন্যেইতো শক্তির দিক থেকে দুর্বল হলেও কষ্ট সহ্য করার ক্ষমতা, আদর ভালোবাসা, মায়া মমতা দিয়ে সন্তান লালন করার
ব্যপারে একটা পুরুষের চাইতে আল্লাহ একটা নারীকে অনেক বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন করে সৃষ্টি
করেছেন। শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্যে নারীদের কষ্টের কারণে তাদের অনেক
গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।” এছাড়া
সওয়াবের নিয়তে সন্তানকে দুধ খাওয়ালে, লালন-পালন করলে আল্লাহর কাছে থেকে এর জন্যে
অনেক বড় প্রতিদান পাওয়া যাবে ইন শা আল্লাহ।
(৫)
মুসলমানদের মাঝে ৭২টা বিদআ’তী দলের মাঝে
সবচাইতে নিকৃষ্ট দুইটি দল হচ্ছে ‘শীয়া’ ও ‘খারেজী’।
শীয়াঃ
বর্তমান যুগের ইরান হচ্ছে শিয়াদের মূল ভূমি। ইরানীরা পূর্বে ছিলো ‘মাজুসী’ বা
অগ্নিপূজক। উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহু ইরান দখল করে সেখানে
ইসলামের প্রচার-প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেন। ইরানের মাজুসীরা সাময়িকভাবে
ইসলাম কবুল করলেও ইসলামের লেবেল নিয়ে তারা আবার সাবেকী মানুষ পূজা, কবর পূজা,
মূর্তি পূজার ধর্মে ফিরে যায়। একারণে শীয়ারা আজ পর্যন্ত উমারের প্রতি সবচাইতে বেশি
শত্রুতা রাখে, কারণ তিনি মাজুসীদের সাম্রাজ্যের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। যাই হোক
ইরান থেকে শীয়ারা
সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, ইয়েমেন এমন কয়েকটি দেশে ক্ষমতা বিস্তার করে সেখানে আহলে
সুন্নাহর মুসলমানদেরকে নির্বিচারে হত্যা করছে। আলহা’মদুলিল্লাহ, সৌদি আরবের নেতৃত্বে মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং
আফ্রিকার কয়েকটি মুসলিম দেশ শীয়াদের আগ্রাসন ঠেকানোর জন্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার
জন্যে একমত হয়েছে। আল্লাহ মুসলমান যে যেখানেই থাকুক, তাদের সকলকেই হেফাজত করুন। আর
আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের পথে সেইভাবে জিহাদ করার তোওফিক দান করুন, যেইভাবে জিহাদ করা
উচিৎ।
খারেজীঃ
বিদআ’তী দলগুলোর মাঝে সবচাইতে ধ্বংসাত্বক ফেরকা খারেজীরা উসমান এবং
আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা, এই দুইজন খলিফাহকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিলো। তারা
নিজেদেরকে এতো বেশি জ্ঞানী ও আল্লাহওয়ালা মনে করতো যে, তারা সাহাবাদেরকে ‘কাফের’ ফতোয়া দিয়ে
তাদেরকে যেখানে পেত সেখানেই হত্যা করতো। তারা এতো হিংস্র ছিলো যে, উসমান রাদিয়াল্লাহুকে
ক্বুরআন তেলাওয়াতরত অবস্থায় এবং আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহুকে
সালাতরত অবস্থায় আক্রমন করে হত্যা করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিস
অনুযায়ী নিকৃষ্ট এই
বিদআ’তীদের বংশধরেরা যুগে যুগেই বিদ্যমান ছিলো এবং মুসলমানদের অনেক
ক্ষয়-ক্ষতি করেছে। কিয়ামতের পূর্ব বর্তমান যুগে সাধারণ মুসলমানদের মাঝে দ্বীনি
জ্ঞান না থাকায় খারেজীরা অনেক মুসলমানদেরকে গোমরাহ বানিয়েছে। তাদের ক্বুরান হাদীস
থেকে বিভ্রান্তিকর দলিল দেওয়া, অতি ধার্মিকতার লেবাস দেখে অনেকে খারেজীদেরকেই
আলেম/মুজাহিদ বলে মনে করে ধোঁকা খায়। আমি দ্বীনি ভাই ও বোনদেরকে সতর্ক করছি,
ইন্টারনেট সহ বিভিন্ন মিডিয়াতে খারেজীদের প্রচার ও প্রোপাগান্ডা দেখে ধোঁকা খাবেন
না। ‘খারেজী’ বা
খারেজীদের মতোই ব্যক্তি ও দলগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য আমি আপনাদের সামনে উল্লেখ করছি, যাতে
করে তাদের ফিতনাহ বুঝতে পারেন।
(ক)
খারেজীদের বয়স হবে কম, আর তাদের বুদ্ধি হবে মোটা।
(খ)
তারা ক্বুরান ও হাদিসের দলিল দেয়, কিন্তু তার ভুল ব্যখ্যা করে।
(গ)
সাধারণ মানুষ দ্বীনি জ্ঞানের অভাবে তাদেরকেই হক্ক বলে মনে করে, তাদের বিভ্রান্তির
শিকার হয়।
(ঘ)
খারেজীরা সাধারণ মুসলমানদেরকে এবং মুসলমান শাসকদেরকে কাফের বলে ফতোয়া দেয়। বর্তমান
যুগে যারাই বলবে, সমস্ত বিশ্বের মুসলমান বাদশাহ, রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রী
কাফের, বুঝবেন তারা খারেজীদের বিষে ধ্বংস হয়েছে।
(ঙ)
খারেজীরা আলেমদের সাথে সবচাইতে বেশী শত্রুতা পোষণ করে, তাদেরকে অপমান করে, তাদের
নামে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে আলেমদের কাছ থেকে মানুষদেরকে দূরে রাখতে চায়। কারণ
আলেমরা সব সময়েই খারেজীদের ব্যপারে মুসলমানদেরকে সতর্ক করে থাকেন। আমি একটা উদাহরণ
দিচ্ছি, ইরাক ও সিরিয়া থেকে উদ্ভূত খারেজীদের দল ‘দাইয়িশ’ বা ‘আইসিস’ এর লোকেরা
গোটা বিশ্বে সম্মানিত আলেমে-দ্বীন, শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ-কে হত্যা করার হুমকি দিয়েছে। আল্লাহ হেফাজত করুন,
ইন শা আল্লাহ নিকৃষ্ট এই খারেজীরা আহলে সুন্নাহ ও তাদের আলেমদের কোন ক্ষতি করতে
পারবেনা, একমাত্র দুনিয়াবী কষ্ট দেওয়া ছাড়া। বরং শীঘ্রই তারাও পূর্ববর্তী
খারেজীদের মতোই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবে।
(চ)
খারেজীরা কাফেরদের চাইতে মুসলমান দেশেই বেশি আক্রমন করে।
(ছ)
খারেজীরা অন্যায়ভাবে মুসলমানদেরকে কাফের ফতয়া দেয়, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং
মুসলমানদেরকে হত্যা করে।
আপনারা
খারেজীদের নিয়ে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসগুলো পড়লে ইন শা আল্লাহ আরো অনেক
বেশি জানতে ও বুঝতে পারবেন।