আজকাল ফেইসবুক ইউটিউবের মতো মিডিয়ার যুগে আমরা সবাই আলেম। কিছু লাইক শেয়ার
পেলেই আমরা নিজেদেরকে মুফতি মুহাদ্দিস বলে মনে করছি, আর নিজের অল্প বুদ্ধি নিয়ে
যত্রতত্র ফতোয়া ও মতামত দিয়ে বেড়াচ্ছি। এভাবে আমরা দাওয়াতী কাজ করতে গিয়ে উল্টা
সত্যিকারে দাওয়াহ-কে নষ্ট করছি এবং সাধারণ মানুষদের মাঝে অনেকে বিভ্রান্ত সৃষ্টি
করছে। যাই হোক, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ইসলাম প্রচার করে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে
যাদের ব্যপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তাদের কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করছিঃ
(১) যাদের বয়স ৪০ বা ৪৫-এর কম। কারণ যার বয়স যত কম হবে, তার জ্ঞান ও হিকমাহ
তত কম হবে।
(২) ঘন ঘন নিজের ছবি বা সেলফি পোস্ট করা। এটা একটা মানসিক ব্যাধি।
(৩) বিভ্রান্ত হয়েছে এমন বক্তা ও লিখকদের কাছ থেকে দ্বীন নেওয়া, তাদের
প্রশংসা করা ও তাদেরকে প্রমোট করা। এটা একপ্রকার জাহালত বা অজ্ঞতা এবং নিজের
দ্বীনের দৈন্যতার পরিচয়।
(৪) হিজবীয়াঃ ইউটিউব ও ফেইসবুকে সেলেব্রিটি বক্তা ও লিখকের প্রভাব বলয়ে
থাকা এবং জ্ঞান ছাড়াই তাদের গোমরাহীকে অন্ধভাবে সমর্থন করা।
(৫) চরমপন্থা অবলম্বন করা। যেমনঃ পান থেকে চুল খসলেই একজন সাধারণ মানুষকে
বিদাতী, হিজবী, মনপূজারী বা এমন অপমানজনক লেবেল দেওয়া।
(৬) ক্বুরআন ও সুন্নাহর দিকে আহবানকারী এমন নিষ্ঠাবান দ্বাইয়ীদের ভুলকে
অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা ও উদ্দেশ্যহীহভাবে মানুষের মাঝে সেইগুলো প্রচার করা,
তাদেরকে অপমান ও তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা।
(৭) প্রশংসা এবং সমালোচনার ব্যপারে বাড়াবাড়ি ও সীমা লংঘন করা।
(৮) দ্বীনের দাওয়াত নাম দিয়ে ব্যক্তিগত কথা-বার্তা, অভিজ্ঞতা ও মতামত,
সার্টিফিকেট প্রচার করা।
(৯) হাতে-গোনা কয়েকটা বিষয়ের মাঝেই দাওয়াতকে সীমাবদ্ধ করে ফেলা। এর কারণ
হচ্ছে সিলেক্টেড কয়েকটা বিষয় ছাড়া দ্বীনের অন্যান্য ব্যপারে তাদের কোন জ্ঞান নেই
যে সেইগুলো প্রচার করবে।
(১০) সৌদি আরব এবং তার সরকারকে কাফের বা তাগুত বলে ফতোয়া দেওয়া অথবা,
আমিরুল মুমিনিন, বর্তমান যুগের সালাউদ্দিন আইউবী বলে প্রশংসার ব্যপারে সীমা লংঘন করা।
(১১) ফতোয়া শপিংঃ জ্ঞান ছাড়াই প্রবৃত্তি অনুযায়ী আলেমদের ফতোয়া গ্রহণ এবং
বর্জন করা।
(১২) নিজের দলের প্রতি অন্ধভক্ত হওয়া।
(১৩) আলেমদের কথা প্রচার করার চাইতে নিজস্ব ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ ও মতামত
প্রচার করতে ব্যস্ত হওয়া।
(১৪) আলেমরা বর্তমান দুনিয়ার খবর জানেন না, বা পূর্ব যুগের আলেমদের মতো
বর্তমান যুগের আলেমরা অতটা নির্ভরযোগ্য নন বলে শয়তানী ওয়াসওয়াসায়র শিকার হওয়া।
(১৫) আলেমরা টিভি দেখে ফতোয়া দেন, তাঁদের সম্পর্কে এমন খারাপ ধারণা রাখা।
(১৬) নিজের প্রিয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোন আলেম সতর্ক করলে তাঁকে চরমপন্থী
বলে তুচ্ছ করা।
(১৭) বিদআতী বা পথভ্রষ্ট দল বা আলেমদের অনুসারী ব্যক্তিদের সাথে সু সম্পর্ক
রাখা এবং জনপ্রিয়তা বা বন্ধুত্বের স্বার্থে শিরক ও বিদআতের ব্যপারে নীরব থাকা।
(১৮) আলেমদের সাহচর্য দূরে থাকা এবং তাঁদের জ্ঞান থেকে উপকৃত না হওয়া।
(১৯) নিজের ব্যক্তিগত জীবন, স্ত্রী সন্তান বা ছেলে মেয়েদের কথা প্রচার করার
মোহ ত্যাগ না করা।
(২০) উঠতি বয়সী ছাত্রদেরকে নিজের শায়খ/রাহবার হিসেবে গ্রহণ করা।
(২১) (পুরুষদের জন্যে) ফেইসবুকে নারী লেখিকাদের ফলো করা, তাদের পোস্টে
নিয়মিত লাইক ও শেয়ার করা।
(২২) অপ্রয়োজনীয় বা কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকা এবং আক্বীদাহ ও
অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞানকে অবহেলা করা বা বঞ্চিত থাকা।
(২৩) অন্যের লেখা নিজের নামে বা পেইজে পোস্ট করা। এটা একপ্রকার মিথ্যা এবং
প্রতারণা। যেই জ্ঞান নিজের নয়, তা নিজের বলে দাবী করা। অনেকে আবার
"কালেক্টেড" লিখে দিয়ে মূল লেখকদের নাম গোপন রাখতে চায়।
(২৪) দাওয়াতের স্বার্থে(!) নারীদের ছবি পোস্ট করা, হোক সেটা বেপর্দা,
হিজাবী বা আধা হিজাবী। এইভাবে কিছু বোকা লোকেরা ইসলাম প্রচার নাম দিয়ে নারীলোভী
পুরুষদেরকে আকর্ষণ করে।
(২৫) ভক্ত শ্রোতাদেরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করার জন্যে ফেইক আইডি ব্যবহার
করা। মুসলমান হয়ে হিন্দু বা কাফেরদের নাম গ্রহণ করা, পুরুষ হয়ে নারী নাম নিয়ে
দ্বীন প্রচা করা। কোন সন্দেহ না এরা প্রতারক, এরা দাওয়াতী কাজ করেনা, এরা নিজেদের
অজ্ঞতা দিয়ে দাওয়াতকে ধ্বংস করা।
(২৬) দ্বীন প্রচারের নামে ফানি শায়খের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া। দ্বীনি বিষয়
নিয়ে কৌতুক বা জোকারি করা এবং সাধারণ মানুষের কাছে বিষয়টিকে হালকা করে উপস্থাপন
করা। উদ্ভট কথা বলে বা ম্যাজিক দেখিয়ে মানুষকে হাসানোর চেষ্টা করা, হাহা/হিহি,
লুলামি মার্কা কথা বা ছবি পোস্ট করা। এরা দ্বাইয়ী নয়, এরা জোকার। এরা আলেম বা
ইসলাম প্রচারকারী নয়, এরা নিকৃষ্ট চিড়িয়া।