<3 <3 #মুজিজাহ <3 <3
মহানবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত দূত এবং একজন সত্য নবী, এরপক্ষে অনেক ‘মুজিজাহ’ (অলৌকিক ঘটনা)
রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনে সবচাইতে বড় মুজিজাহ হচ্ছে ‘ক্বুরানুল কারীম’। আফসোসের বিষয়
হচ্ছে, আমরা অধিকাংশ মুসলমানেরাই জানিনা বা বুঝিনা, ক্বুরানের
মাঝে আশ্চর্যের বিষয় এমন কি আছে? কাফেরদেরকে বুঝাবো
তো পরের কথা! এমনকি আমরা ক্বুরান খুলে দেখতেও চাইনা,
এর মাঝে কি লিখা আছে। যাই হোক, ক্বুরান ছাড়াও নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
জীবনে আরো অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা তিনি তাঁর সংগী সাথী এবং কাফের মুশরেকদের
দেখিয়েছিলেন, যা নিঃসন্দেহেভাবে তাঁর নবুওতের প্রমান করে। আমি তাঁর মধ্যে থেকে কয়েকটা
উল্লেখ করছি।
(১) নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর
আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিলোঃ
আনাস ইবন মালিক
(রাঃ) হতে বর্ণিত যে, “একবার মক্কাবাসী
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম-কে তার নবুওয়াতের নিদর্শন দেখানোর দাবী জানাল। তিনি তাদেরকে চাঁদ দুই
খণ্ড করে দেখালেন। এমনকি তারা সকলেই চাঁদের দুইখণ্ডের মাঝখানে হেরা পাহাড়কে দেখতে
পেল।”
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, “যখন চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়, তখন আমরা নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। তখন আমরা দেখলাম চাঁদের
একটি খণ্ড হেরা পাহাড়ের দিকে চলে গেল।” [সহীহ বুখারীঃ ৩৮৬৮-৭১]
এটা কেয়ামতের একটা লক্ষনের অন্তর্ভুক্ত, এনিয়ে
ক্বুরানুল কারীমেও বলা হয়েছে।
বিসমিল্লাহ-হির রাহমানির রাহীম। “কেয়ামত খুব কাছে চলে এসেছে এবং চাঁদ দুই ভাগ
হয়েছে।” [সুরা আল-ক্বামারঃ
১]
(২) মুসলমানদের প্রথম জিহাদ, ‘বদরের’ যুদ্ধে একজন
সাহাবীর চোখে তীর লেগে তাঁর একটা চোখ খুলে মাটিতে পড়ে যায়। তিনি
তাঁর সেই চোখ হাতে করে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে নিয়ে
আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এরজন্যে
তাঁকে পরকালে পুরষ্কারের সুসংবাদ দিলেন। কিন্তু সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে তাঁর চোখ ফিরে যাওয়া
কিনা, একথা জানতে চাইলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম খুলে যাওয়া সেই চোখটিকে সাহাবীর চোখে ধরে
লাগিয়ে দিলেন, আর সেই সাহাবী অমনি সেই চোখে আবার দেখতে শুরু করলেন। সুবহা’নাল্লাহ! শুধু তাইনা, তিনি তাঁর বাকি জীবনে সেই চোখ দিয়ে অন্য চোখের চাইতে বেশি দেখতেন! [আর রাহীখুল মাক্বতুম]
(৩) একবার এক জিহাদের লম্বা সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবাদের কাফেলাতে কোন পানি ছিলোনা। এদিকে তাঁরা তখন মরুভূমির মাঝখানে, কোন
জায়গা থেকে যে পানি সংগ্রহ করবেন, সেই সুযোগ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে একটা পানির
পাত্র আনতে বললেন। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সেই পানির পাত্রে তাঁর মুবারক হাত রাখলেন, আর তাঁর আংগুলগুলো থেকে অঝোর ধারায় ঝরণা
বা পানির ট্যাপের মতো পানি বের হতে লাগলো। এইভাবে পানি সমস্ত কাফেলার লোকদের জন্যে
যথেষ্ঠ হয়ে গেলো।
(৪) নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনাতে আসলেন তখন মসজিদে প্রথমে গাছের একটা কান্ড রাখা ছিলো, যার বিপরীতে
হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি জুমুয়াহর খুতবা দিতেন।
পরে যখন তাঁর জন্যে একটা মিম্বার বানিয়ে দেওয়া হলো, তিনি তাঁর উপরে দাঁড়িয়ে খুতবাহ
দিতেন, যার ফলে সেই গাছের কান্ডটাকে একপাশে সরিয়ে দেওয়া হলো। তিনি যখন প্রথমদিন
এইভাবে জুমুয়াহর খুতবাহ দিতে শুরু করলেন, হঠাৎ করে সমস্ত সাহাবারা শুনতে পেলেন,
সেই গাছের কান্ডটা নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহচর্য
থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখে ছোট বাচ্চার মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টা বুঝতে পেরে মিম্বার থেকে নেমে এসে গাছটাকে আদর করে জড়িয়ে ধরলেন, এরপরে
সেই গাছটা কান্না থামালো। সুবহা’নাল্লাহি ওয়া বিহা’মদিহি! কি আশ্চর্যের বিষয়!! নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহচর্য
থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখে বিবেক বুদ্ধিহীন সামান্য একটা গাছও কান্না শুরু করে দিলো!
আর সেই নবীকে হারানোর বেদনায়, কাছ থেকে না দেখতে পাওয়ার বেদনায়, আমাদের কতটুকু দুঃখবোধ
করা উচিৎ?
আসুন আমরা সকলেই পড়িঃ
“আল্লাহুম্মা সাল্লি
আ’লা মুহা’ম্মাদিও ওয়া-আ’লা আলি মুহা’ম্মাদ, কামা
সাল্লাইতা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া-আ’লা আলি ইব্রাহীম,
ইন্নাকা হা’মীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আ’লা মুহাম্মাদিওঁ
ওয়া-আ’লা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারা-কতা আ’লা ইব্রাহীমা ওয়া-আ’লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।