প্রিয় ব্যক্তিত্ব (পর্ব-৪)
আলহা’মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ। আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া
বারাকাতুহু। আম্মা বাআ’দ।
আজ আমার এই লেখার শুরুতেই আমি আপনাদের কাছে
দুঃখ প্রকাশ করছি। কারণ, গতকাল বাংলাদেশী শায়খদের নামের লিস্টে আমি মাত্র ৮জনের
নাম উল্লেখ করেছিলাম এবং এ ব্যপারে আর কোন কথা বলিনি। কেউ হয়তোবা মনে করতে পারেন
যে, আমি ৮জনের নাম উল্লেখ করেছি তার মানে এই ৮জন ছাড়া অন্যদেরকে নির্ভরযোগ্য মনে
করছিনা। এটা ঠিক নয়, বরং হক্ক কথা হচ্ছেঃ গতকালকে উল্লেখিত ৮জন ছাড়াও আরো বেশ কিছু
শায়খ রয়েছেন বাংলাদেশ, ভারত ও সৌদি আরবে; যারা বাংলা ভাষায় মানুষদেরকে ক্বুরআন ও
সুন্নাহর দিকে, সঠিক দ্বীন অনুসরণের জন্যে আহবান করে থাকেন। আপনারা দ্বীন শিক্ষার
জন্যে তাঁদের উপর নির্ভর করতে পারেন। এছাড়া আরো কিছু বাংলা ভাষাভাষী বক্তা আছেন,
যারা ভালো কথা বলেন, এর পাশাপাশি কিছু ভুল কথাও বলে থাকেন। তাঁদের কথার দ্বারা
যারা উপকৃত হন, আমি তাঁদের ভুল কথাগুলোর ব্যপারে আপনাদেরকে কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন
করতে আহবান জানচ্ছি।
যাই হোক, আজ আমি এমন একজন শায়খের
নাম বলবো যার দ্বারা বিগত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে অনেক উপকৃত হয়েছি এবং দ্বীনের
ব্যপারে উৎসাহ পেয়েছি। তিনি হচ্ছে আমাদের সকলের অতি পরিচিত এবং প্রিয় ব্যক্তিত্ব শায়খ
আব্দুল হা’মীদ ফাইযী, আল্লাহ তাঁকে
হেফাজত করুন এবং তাঁকে জান্নাতে উঁচু মর্যাদা দান করুন, আমিন। আমি আমার দ্বীনি ভাই
ও বোনদেরকে আহবান জানাবো, আপনারা যারা বাংলা ভাষায় দলিল-প্রমানসহ সঠিক দ্বীন শিখতে
চান, তারা শায়খের লেখা বইগুলো সংগ্রহ করুন। ঈমান-আক্বীদাহ, সালাত, সাওম, চরিত্র গঠন,
হিজাব-পর্দা, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের দিক-নির্দেশনাসহ মানব জীবনের বিভিন্ন দিক
নিয়ে শায়খের লেখা বইগুলো অত্যন্ত উপকারী এবং তথ্যবহুল। যারা দুনিয়া এবং আখেরাতের জীবনে
সুখী হতে চান অথবা, যারা দুনিয়ার জীবনের পরীক্ষায় পড়ে সুখের সন্ধান করছেন, আমি তাদেরকে
বিনীতভাবে আহবান জানাবোঃ আপনারা শায়খ আব্দুল হা’মীদ
ফাইযীর লেখা “সুখের সন্ধানে” বইটা কিনে একবার পড়ে দেখতে পারেন। আশা করি বইটা
আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। শায়খের লেখা এই বইটা বছর দুয়েক আগে আমি প্রথম পড়েছিলাম।
মাত্র দুই-তিন পাতা পড়ার সাথে সাথেই সেই থেকে আজ পর্যন্ত “সুখের সন্ধানে” বইটা আমার অন্তরের অন্তঃস্থলে স্থান করে নিয়েছে।
এই
পেইজ চালাতে গিয়ে অথবা আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে যেই প্রশ্নগুলো আসে, সেইগুলোর উত্তর
দিতে শায়খ আমাকে অনেক সাহায্য করেন। সাধারণত আমি যেই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানিনা, কোন
আলেমের বই থেকে বা লেকচার থেকেও খুঁজে বের করতে পারিনা, অথবা উত্তর জানি কিন্তু পুনরায়
নিশ্চিত হতে চাই, সেইগুলোর উত্তর দেওয়ার পূর্বে আমি শায়খের কাছে জিজ্ঞেস করে নিশ্চিত
হয়ে এর পরে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করি। শায়খের কাছ থেকে পাওয়া সর্বশেষ তিনটি প্রশ্নের
উত্তর আমি আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
(১) এক ভাইয়ের সাথে অনিবার্য কারণ বশত ইন্টার পড়ুয়া এক ছাত্রীর পরিচয় হয়েছিলো।
সেই মেয়ে তার দ্বীনদারিতা দেখে বিশেষভাবে অনুরোধ করেছিলো, সে
যেন তাকে এবং তার বান্ধবীকে প্রাইভেট পড়ায়। সেই ভাইয়ের প্রশ্ন ছিলো, “দুইজন সাবালিকা মেয়েকে একত্রে প্রাইভেট পড়ানো জায়েজ হবে
কিনা?”
শায়খের উত্তরঃ (পুরুষদের জন্যে) সাবালিকা মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানো জায়েজ নয়।
(তবে পড়ানোর সময় যদি ঐ মেয়ের) মাহরাম উপস্থিত থাকে, তাহলে জায়েজ হতে পারে।
(২) একজন নারী হাই-স্কুলে শিক্ষকতা করার অফার পেয়েছিলো। সেই বোনের প্রশ্ন ছিলো, “ছেলে-মেয়ে মিক্সড এবং পুরুষ সহকর্মী আছে, এমন হাই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীদেরকে
পড়ানো জায়েজ আছে কিনা? [উল্লেখ্য হাই-স্কুলে অনেক ছেলে থাকে
যারা সাবালক।]
শায়খের উত্তরঃ না, জায়েজ হবেনা।
(৩) এই প্রশ্নটা শায়খকে আমি নিজেই করেছিলাম জানা জিনিস আবার নিশ্চিত হওয়ার জন্যে, “আমাদের দেশে প্রচলিত মসজিদের মাইক দিয়ে উচ্চস্বরে
মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করা
হয়, এটা জায়েজ আছে কিনা? মৃত্যুর সংবাদ অন্যদেরকে কিভাবে জানাতে হবে?”
শায়খের উত্তরঃ মসজিদের মাইক দিয়ে মৃত্যুর সংবাদ
প্রচার করা জায়েজ নয়, মাইক হওয়ার পূর্বে যেইভাবে জানানো হতো।
[এনিয়ে সহীহ হাদীসে স্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা আছে আমি ইন শাআল্লাহ পরে পোস্ট করবো। আর মাইক হওয়ার পূর্বে মানুষকে মুখে মুখে সংবাদ
পৌঁছানো হতো। কিন্তু কেউ একজন মাইকে অথবা উচ্চস্বরে মৃত্যুর সংবাদ ঘোষণা করা
স্পষ্ট সহীহ
হাদীস দ্বারা নিষিদ্ধ]
সাধারণত
আমি কারো সামনা-সামনি প্রশংসা করা ঘৃণা করি, কারণ তা একজন ব্যক্তির জন্যে ফেতনার কারণ
হতে পারে। আমি দুয়া করছি, আমার এই লেখা যদি শায়খের কাছে পৌঁছায়, তাহলে আল্লাহ যেনো
তাঁকে এর ফিতনাহ থেকে হেফাজত রাখেন। আল্লাহ যেনো শায়খের গুনাহ-খাতা মাফ করেন, তাঁর
দাওয়াত ও দ্বীনের খেদমত কবুল করে তাঁকে জান্নাতুল ফেরদাউদ দান করেন, আমিন।
সর্বশেষঃ বৈঠক খতমের দুয়া দ্বারা আজকের মতো
এখানেই শেষ করছি। আপনারা এই দুয়াটা অবশ্যই আরবী দেখে মুখস্থ করবেন, এবং যেকোন বৈঠকের
শেষে পড়ার জন্যে অভ্যাস গড়ে তুলবেন।
সুবহা’নাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহা’মদিকা আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লা আংতা
আস্তাগফিরুকা ওয়াআতুবু ইলাইকা।