আজ (২রা মার্চ, ২০১৬) আমাদের মসজিদে নিয়মিত ক্বুরানের
তাফসীরের ক্লাস ছিলো। শুরুতেই ইমাম সাহেব আফসোস করে বললেন, (টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ) খেলা দেখার কারণে আজকে
অনেক ভাইয়েরা আসে নাই। আমিও বিষয়টা খেয়াল করে দেখলাম, পরিচিত কিছু মানুষের চেহারা অনুপস্থিত!
বুদ্ধিমান ভাই ও বোনেরা একটু চিন্তা করে দেখুন; নিয়মিত নামায পড়ে, ক্বুরানের ক্লাস
করে এমন লোকদের অবস্থা যদি এতো খারাপ হয় যে সামান্য দুই পয়সার হারাম জুয়া খেলার
কারণে ক্বুরান শিক্ষার মতো এই দুনিয়ার সবচাইতে দামী জিনিস বর্জন করে, তাহলে কলেজ
ইউনিভার্সিটির বেনামাযী, বেহায়া, বেপর্দা, প্রেম ভালোবাসা, যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত,
হারাম ও অবৈধ ইনকাম করে এমন নারী ও পুরুষেরা ক্বুরানের সাথে কত বড় গাদ্দারি করছে?
_______________________
মদ এবং জুয়া খেলা সম্পূর্ণ “হারাম” এবং “কবীরাহ গুনাহ”। একথার দলিল স্বয়ং আল্লাহ তাআ’লা ক্বুরানে দিয়েছেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! এই যে #মদ, #জুয়া, মূর্তিপূজা এবং ভাগ্য-নির্ধারক তীর, এই সবগুলো হচ্ছে শয়তানের অপবিত্র, নোংরা কাজ। সুতরাং, তোমরা এইগুলো থেকে দূরে থাক, যাতে করে তোমরা সফলকাম হও।” [সুরা আল-মায়ি’দাহঃ ৯০]
সুতরাং, ক্বুরানের স্পষ্ট আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা মদ এবং জুয়াকে শয়তানের ‘নাপাক’ কাজ বলে ঘোষণা করেছেন।
এবার আসি জুয়া প্রসংগে। “জুয়া” কি?
ইসলামী শরিয়াতের পরিভাষায়, জুয়া হচ্ছে এমন
একটা খেলা যেখানে হার জিতের জন্যে টাকা-পয়সা লেন-দেনের ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ,
যেই খেলার জন্যে খেলোয়াড়কে টাকা দিয়ে ভাড়া করে আনা হবে বা খেলোয়াড়কে “মজুরী” হিসেবে টাকা দেওয়া হবে, এবং যেই খেলোয়াড়
জয়ী হবে তাকে টাকা বা অর্থ-সম্পদ দেওয়া হবে তাহলে সেটা জুয়া। সেটা যেই খেলাই হোক
না কেনো, টাকার বিনিময়ে যেই খেলা হবে, সেটাই “জুয়া” বলে গণ্য হবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সর্বপ্রকার খেলা-ধূলা হারাম।
শুধুমাত্র তিনটি বিষয় এই খেলা-ধূলার অন্তর্ভুক্ত নয়।
(১) তীর-ধনুক চালনা করা,
(২) ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দান করা,
(৩) নিজ আহলিয়া (স্ত্রীর) সাথে শরীয়তসম্মত হাসি-তামাশা করা।”
[মুসতাদরাক আল-হাকিম]
_______________________
মুবারকময় ইসলামী শরিয়াতের এই মহান নীতি
অনুযায়ী বাংলাদেশ এবং পাকিস্থানের কিছু খেলোয়াড়ের মাঝে যদি টাকার বিনিময়ে কোন ‘ফুটবল’ বা ‘ক্রিকেট’ খেলার আয়োজন করা হয়, তাহলে সেই খেলাটা
জুয়াতে পরিণত হবে। এই খেলাগুলো যারা খেলবে (মাশরাফি, আশরাফুল, তামিম, সাকিব এবং
অন্যান্যরা), অবৈধ খেলা থেকে টাকা উপার্জন করার কারণে ইসলামী শরিয়াহ অনুযারী তারা “জুয়াখোর” বলে চিহ্নিত হবে। জুয়া খেলা দেখাও হারাম,
সেটা খেলার মাঠে হোক, কিংবা টিভিতে দেখাই হোক অথবা রেডিওতে শোনাই হোক। এই সবগুলো
কাজ হারাম এবং নিষিদ্ধ।
_______________________
আমরা যখন নিষিদ্ধ এবং হারামের মতো কোন
বিষয়ের উপরে লিখি, তখন এই সমস্ত হারাম কাজে লিপ্ত একশ্রেণীর মুসলমান(!) নারী ও
পুরুষেরা গালি দিতে আরম্ভ করে। আমি সেই সমস্ত অতি জ্ঞানী ভাই ও বোনদেরকে বলবো,
আপনাদের কাছে আমার এই লেখা যদি সঠিক মনে না হয়, তাহলে আপনার আশেপাশে সবচাইতে বড়
যেই মাদ্রাসা আছে সেখানের সবচাইতে বড় মুফতি সাহেবকে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, “এই যে টি টুয়েন্ট, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, ফুটবল
খেলা দেখা জায়েজ আছে কিনা?”
যদি এতোটুকু কষ্ট করতে না চান আর প্রবৃত্তির অনুসরণ চালিয়ে যেতে চান, তাহলে সেটা
করুন। কিন্তু কোন ইসলামী পেইজে এসে গালিগালাজ করে আপনার নোংরা ও আহাম্মকি চরিত্রটা
দুনিয়ার সামনে প্রকাশ করবেন না। পাপ করছেন সেটা গোপন রাখেন, আর গোপনেই আল্লাহর
কাছে তোওবাহ করতে থাকেন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চান যেনো এই হারাম ও খবিস কাজ থেকে বের
হয়ে আসতে পারেন। কিন্তু প্রবৃত্তির অনুসরণ করতে গিয়ে কোন হালাল কাজকে হারাম বা
হারাম কাজকে হালাল ফতুয়া দিয়ে নিজেকে জাহান্নামের খড়ি-কাঠি বানাবেন না।
_______________________
প্রবৃত্তির পূজারী লোকদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ্ তাআ’লার বক্তব্য, “(হে
নবী!) আপনি কি তার
দিকে লক্ষ্য করেন নি, যে তার নিজের হাওয়া (প্রবৃত্তিকে) মাবূদ হিসেবে গ্রহণ করেছে?
তবুও কি আপনি তার যিম্মাদার হবেন? আপনি কি মনে করেন যে, তাদের অধিকাংশ শোনে অথবা
বোঝে? তারা তো চতুস্পদ জন্তুর মত; বরং তার চাইতেও পথভ্রষ্ট।” [সুরা আল-ফুরক্বানঃ ৪৩-৪৪]
মহান আল্লাহ্ তাআ’লা আরো বলেন, “আর আমি সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য
বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর আছে, কিন্তু তার দ্বারা তারা চিন্তা-ভাবনা করে না,
তাদের চোখ আছে কিন্তু তার দ্বারা তারা দেখেনা, আর তাদের কান আছে কিন্তু তার
দ্বারা তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চাইতেও নিকৃষ্টর। তারাই
হল উদাসীন ও শৈথিল্যপরায়ণ।”
[সুরা আল-আ’রাফঃ ১৭৯]
_______________________
সর্বশেষ, কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার পূর্বে একের পর এক নিত্য-নতুন ফেতনা যখন
মুসলমানদেরকে গ্রাস করবে, তখনকার যুগে মানুষের ঈমানের যেই হবে সে সম্পর্কে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আঁধার রাতের অবিরাম খন্ডের মত কৃষ্ণ-কালো ফেতনা আবর্তিত হওয়ার পূর্বেই
তোমরা দ্রুত নেক কাজে মনোনিবেশ কর। (এমন একটা সময় আসবে যখন) মানুষ সকাল বেলা মুমিন
কিন্তু বিকেল বেলা সে হবে কাফের। আবার কেউ সন্ধ্যা বেলা মুমিন হবে তো সকাল বেলা
হবে কাফের। দুনিয়াবি সামান্য স্বার্থের বিনিময়ে সে দ্বীনকে বিক্রি করে ফেলবে।” [সহীহ মুসলীম]
_______________________