জনপ্রিয় হওয়া এক জিনিস, আর আল্লাহপ্রিয় হওয়া ভিন্ন
জিনিসঃ
(১) আমাদের পেইজে নোমান
আলী খান এবং তার মতো আরো কিছু জনপ্রিয় ‘ইসলামিক বক্তার’ সমালোচনা করা হয়ে দেখে
একজন প্রশ্ন করেছেন,
“আমার প্রশ্ন হল উনার যখন আক্বিদাই ঠিক নাই তাহলে তিনি এত জনপ্রিয়
কেন?”
উত্তরটা খুব সহজ। আপনি
যদি হক্ক কথা না বলেন,
শিরক
এবং বিদাতের ব্যপারে এবং মুসলমানদের মাঝে যেই সমস্ত পথভ্রষ্ট দলগুলো শিরক ও বিদাতকে
লালন-পালন করে, তাদের ব্যপারে চুপ থাকেন, তাহলে দেখবেন
=> লোকেরা সকলেই আপনাকে পছন্দ
করবে,
=> আপনার কথা শুনতে চাইবে,
=> আপনাকে তাদের অনুষ্ঠানে
দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাবে।
কারণ, আপনি তাদের শিরক ও বিদাতের
সমালোচনা থেকে বিরত আছেন,
এতেই
তারা আপনার উপর খুশি হবে।
বিষয়টা আমি আরেকটু স্পষ্ট
করে বলি। বিংশ শতাব্দীতে মুসলমানদের মাঝে সৃষ্ট দুইটি বড় বিদাতপন্থী দল হচ্ছে ‘জামাতে ইসলামী’ (শুরুঃ ১৯৪১ সালে) এবং ‘তাবলীগ জামাত’ (শুরুঃ ১৯২৭ সালে)। আপনি
নোমান আলী খান, মুফতি মেঙ্ক, ইয়াসীর ক্বাদী. . .এমন
সেলেব্রিটি স্পিকারদের হাজার হাজার ঘন্টার লেকচার খুঁজে দেখুন, এই সমস্ত বিদাতী দলগুলোর
ব্যপারে তাদের কোন সমালোচনা খুঁজে পাবেন না। তাদের ওয়াজ লেকচারে বিদাতপন্থী দলগুলোকে
বিদাত বর্জন করে সুন্নাহর দিকে ফিরে আসার জন্যে স্পষ্ট কোন দাওয়াত বা মেসেজ খুঁজে পাবেন
না। বরং, অস্পষ্ট বক্তব্য বা আকার-ইংগিতে
আপনি তাদেরকে বিদাতপন্থী দলগুলোর ভক্ত,
অনুরাগী
বা প্রশংসাকারী হিসেবেই পাবেন। স্বাভাবিকভাবে যারা আহলে সুন্নাহর আক্বিদাহ ও মানহাজ
থেকে বিচ্যুত হয়েছে,
তাদের
ভ্রষ্টতার ব্যপারে এমন নীরবতা বা মৌন সম্মতি তাদেরকে খুশি করবে। আর আপনারা হয়তো সকলেই
জানেন, মুসলমানদের মাঝে মোট ৭৩টি
দলের মাঝে একটিমাত্র দল নাজাত পাবে,
আর বাকী
৭২টি দলই জাহান্নামে যাবে। সুতরাং হক্কপন্থী আলেম এবং তাদের অনুসারী সম সময়েই কম হবে, আর বিদাতপন্থী, ভ্রষ্ট আলেম এবং তাদের
অনুসারী হবে ঝাঁকে ঝাঁক।
(২) এ ব্যপারে শায়খ মুজাম্মেল
হক্ক এর সুন্দর একটা স্ট্যাটাস কপি করছিঃ
“আলেম হয়ে যদি আপনি ‘হক্ক’ কথা বলা আরম্ভ করেন, দেখবেন মানুষ আপনাকে পছন্দ
করবেনা। বক্তৃতার মঞ্চে তথাকথিত ‘হেকমত’ এর ব্যূহ ভেদ করে ‘হক্ক’ কথা বলুন, দেখবেন আপনাকে তারা হজম
করতে পারছেনা। ইমাম হলে কমিটির মর্জির একচুল বাইরে কিছু বলতে পারছেন না। আপনি মানুষের
ভুল আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেন,
এটা আপনার
অপরাধ। তাই বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব থাকছেনা। আত্মীয়ের সাথে সম্পর্ক থাকছেনা। নিজ পরিবারের
লোক ও আপনাকে নিয়ে সুখ অনুভব করছেনা। উপরন্ত ‘হক্ক’ কথা না বলতে উপদেশ দিয়ে
চলেছে। অদৃশ্য আল্লাহ ছাড়া আপনার জন্য আর কেউ অবশিষ্ট থাকছেনা। এসবই কি নির্মম সত্য
নয়? এসবই কি মুমিনের জন্য আখেরাতের
বদলায় দুনিয়া বিক্রি নয়?
এমনটি
কি আল্লাহ আল ক্বুরআনে উল্লেখ করেন নাই?
(দেখুন
সুরা তাওবাঃ ১১১)।
নবী সালেহ আঃ এর ভাষায়
আল্লাহ বলেছেন, “হে আমার জনপদের মানুষ! তোমাদের কাছে আল্লাহর বাণী হামেশাই পৌঁছে
দিলাম এবং কতইনা উপদেশ দিলাম। কিন্তু সবশেষে এটাই বলতে বাধ্য হলাম যে, তোমরা উপদেশ দান কারীদেরকে
পছন্দ করনা।” আ’রাফঃ ৭৯।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার সামনে সকল জাতিকে উপস্থিত করা হোল। দেখলাম এক নবী তার সঙ্গে
অল্প কিছু মানুষ। আর একজন নবী দেখলাম যার সাথে মাত্র একজন মানুষ। আর একজন নবী যার সাথে
দুইজন লোক। এবং দেখলাম আর একজন নবী,
যার সাথে
কেউ নেই!” সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম এবং তিরমিযী।
উপরের আয়াত ও হাদিস প্রমাণ
করে যে যিনি প্রকৃত ‘হক’ পন্থী হবেন, তার জন্যে এমন বাস্তবতার
সম্মুখীন হওয়াই স্বাভাবিক। অথচ,
আলেম
নামের অনেককে দেখি জনপ্রিয় হওয়ার জন্য কি কি না করছেন? সত্যি অবাক লাগে। মনে হয়
যেন তারা নবীদের চাইতে বেশি হেকমত জানেন। প্রখ্যাত তাবেঈ, সুফিয়ান আস সাউরি রাহিমাহুলাহ
বলেছিলেন, “যদি দেখ আলেমের অনেক বন্ধু, তাহলে জেনে নিও সে আলেম
নয়, বরং মুখাল্লেত।”
**মুখাল্লেত অর্থ মিকচার
মেশিন, যার ভিতরে ‘হক’ ও ‘বাতিল’ একসাথে মিশ্রিত হয়।
উম্মতের এই ক্রান্তিলগ্নে, যেখানে আজ মানুষ প্রকাশ্যে
শিরক বিদআ’তে লিপ্ত,
সেখানে
মিকচার মেশিন কাম্য নয়।
(৩) প্রশ্নকারী আরেকটি
প্রশ্ন করেছেন, “তাহলে অনেক সহি আক্বীদাহর পেইজে কেনো নোমান আলী খানের লেকচার
প্রচার করা হয়?”
উত্তরঃ কথিত সেই সমস্ত সহীহ
আক্বীদাহর পেইজগুলোও ওদের মতোই। হয় তারা নিজেরা জাহিল, একারণে কার কথা গ্রহণ করা
উচিত, কার কথা
বর্জন করা উচিত, এ সম্পর্কে তাদের জ্ঞান নেই। অথবা, তারা জানে তাদের কথা শোনা
ঠিক নয়, কিন্তু
তাদের লেকচার দিলে কিছু লাইক/শেয়ার বা ফলোয়ার বাড়ে, একারণে জনপ্রিয়তার লোভে সেইগুলো
প্রচার করছে। জনপ্রিয়তার প্রতি মোহ খুব খারাপ জিনিস, যা মানুষের ইখলাসকে নষ্ট করে
দেয়। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাচ্ছি।