রমযান ও
রোযা (পর্ব-১)
বিসমিল্লাহ।
আলহা’মদুলিল্লাহ।
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ।
(১) রোযার ‘নিয়ত’ কিভাবে করতে হয়?
উত্তরঃ নিয়ত শব্দের অর্থ হচ্ছে “কোন কাজ করতে ইচ্ছা
করা” বা
“সংকল্প
করা”। নিয়ত
করতে হবে অন্তরে, মুখে উচ্চারণ করে বিশেষ কোন দোয়া পড়ে নয়। রমযান মাসে রোযা থাকা ফরয। রাতের বেলা আপনার
যদি নিয়ত থাকে যে, আপনি আগামীকাল রোযা থাকবেন, অথবা সাহরীর সময় উঠে খাওয়া-দাওয়া করেন এবং মনে মনে চিন্তা করেন যে,
আজ আমি রোযা রাখবো, তাহলেই আপনার নিয়ত
করা হয়ে যাবে। রোযার নিয়ত করার জন্য বিশেষ কোন দুয়া পড়তে হয়না, শুধুমাত্র মনে ইচ্ছা বা স্থির সিদ্ধান্ত থাকলেই হবে যে, আজ আপনি রোযা রাখবেন।
রোযার
নিয়ত হিসেবে প্রচলিত সাহরী ও ইফতারির ক্যালেন্ডার বা বিভিন্ন ধর্মীয় বই-পুস্তকে যে
দুয়া “নাওয়াইতুয়ান
আসামু গাদামান...”, লেখা থাকে, এই দুয়া কুরআন ও হাদীসের কোথাও নাই। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এই দুয়া পড়ে রোযার নিয়ত করতেন না। এটা আমাদের দেশীয় মাওলানা সাহেবরা
বানিয়ে নিয়েছেন, যা সুস্পষ্ট বিদআ’ত। আর বিদআ’ত মানেই হলো
পথভ্রষ্টতা এবং বাতিল।
অন্তরে নিয়ত করা ফরয, কিন্তু মুখে উচ্চারণ করা নিয়তের দুয়া পড়া বিদআ’ত।
(২) অনেকে অলসতা করে শেষ রাতে উঠে
সাহরী খেতে চায় না, এটা মারাত্মক ভুল। রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার সুন্নতকে ভালোবাসল, সে যেন আমাকেই ভালোবাসল। আর যে ব্যক্তি আমাকে ভালোবাসলো, সে আমার সাথে জান্নাতে থাকবে।” বুখারী ও মুসলিম, মিশকাতঃ ৩০।
বছরে মাত্র এক মাস রোযা রাখা ফরয, তার জন্যে সাহরী খাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা সুন্নতকে অবহেলা করা
মোটেও ঠিকনা।
একটু চিন্তা করে দেখুন, কি আশ্চর্য সুন্দর ধর্ম এই ইসলাম, যা আল্লাহ
রাব্বুল আ’লামিনের
পক্ষ থেকে মুহা’ম্মদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর নাযিল করা হয়েছে। এই ধর্মের অনুসারীদের
খাওয়া পানাহার করাও (সাহরী/ইফতারি ইত্যাদি) ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। সুবহা’নাল্লাহ!
সুতরাং, ঈমানদারদের জন্য কোনমতেই গ্রহণযোগ্য নয় যে তারা এইভাবে সুন্নতকে অবহেলা
করে। যাই হোক, সাহরী খাওয়ার ফযীলত সম্পর্কে রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা সাহরী খাও, কারণ সাহরীতে রয়েছে বরকত।” সহীহ বুখারীঃ ১৯২৩, সহীহ মুসলিমঃ ১০৯৫।
ইচ্ছাকৃতভাবে বা অলসতা করে সাহরী
না খাওয়া নিন্দনীয়, কারণ এতে আহলে-কিতাবীদের সাথে সামাজস্য
হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমাদের
রোযা আর কিতাবধারীদের রোযা (ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের) রোযার মধ্যে পার্থক্য হচ্ছেঃ
সাহারী খাওয়া।” সহীহ
মুসলিমঃ ২৬০৪।
(৩) যতক্ষণ পর্যন্ত বান্দা রোযা
অবস্থায় থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত
আল্লাহ তার দুয়া কবুল করেন। সহীহ ইবনে খুযাইমা ও ইবনে হিব্বান গ্রন্থে এসেছে, নবী সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন,
“তিন ব্যক্তির দুয়া ফেরত দেওয়া হয় না।
i. রোযাদার ব্যক্তি ইফতার করা পর্যন্ত,
ii. ন্যায়পরায়ণ ইমাম বা শাসক,
iii. মযলুম ব্যক্তির দুয়া।
এই (তিন প্রকার ব্যক্তির) দুয়া
আল্লাহ আকাশে মেঘমালার উপরে তুলে নেন এবং এর জন্য আকাশের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়
এবং মহান রব্ব বলেন, আমার সম্মান ও মর্যাদার কসম করে বলছি,
অবশ্যই আমি তোমাকে সাহায্য করবো, কিছু
সময় পর হলেও।”
আহমাদঃ ২/৩০৫; তিরমিযীঃ ৩৫৯৮; হাদীসটি ‘হাসান
সহীহ’।
সুতরাং, রোযা অবস্থায় বেশি বেশি দুয়া করতে হবে, আপনারা
কখনো দুয়া করতে হতাশ বা উদাসীন হবেন না। ঈমানদার বান্দার প্রতিটি নেক দুয়া আল্লাহ
কবুল করেন, দ্রুত অথবা দেরীতে। এই দুনিয়াতে না পেলে,
পরকালে এই দুনিয়াতে যা চাইছেন, তার
চাইতে অনেক উত্তম ও চোখ জুড়ানো প্রতিদান আল্লাহ তাঁর বিশ্বাসী বান্দাদের জন্যে
রেখেছেন।
ওয়া সোয়াল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামা আ’লান-নাবী।
আখুকুম ফিল্লাহ,
আনসারুস সুন্নাহ।