অদৃশ্য জগতের কথা (পর্ব-৭)
(পর্ব ১-৬)
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/1751676758198397/?type=3&theater
______________________
(১) মৃত্যুর ফেরেশতারা যখন কোন মানুষের আত্মা কবজ করেন, তখন
ফেরেশতাদের চেহারা, কথা ও আচরণ দ্বারাই একজন মানুষ বুঝতে পারে, দুনিয়াতে সে যেই আমল
করেছে, কবরে তার জন্যে কি প্রতিদান অপেক্ষা করছে। আল্লাহর প্রতি সঠিক ঈমান এনে, আল্লাহকে
ভয় করে ও ভালোবেসে তাঁর আদেশ-নিষেধ মেনে যে ব্যক্তি দুনিয়াতে নেক জীবন অতিবাহিত করে,
মৃত্যুর সময়ই ফেরেশতারা কবরে ও আখেরাতের জীবনে তার জন্যে আল্লাহ যে সুখের জীবন প্রস্তুত
করে রেখেছেন, সেই সুসংবাদ শোনাতে থাকে। যেকারণে কোন নেককার ব্যক্তির জানাযা শেষে যখন
তার লাশ কাঁধে বহন করে কবরের দিকে নেওয়া হয়, সেই মৃত নেককার ব্যক্তিটি তখন বলতে থাকে,
“তোমরা আমাকে দ্রুত
(কবরের দিকে) নিয়ে চলো, আমাকে তোমরা দ্রুত নিয়ে চলো।” পক্ষান্তরে কোন পাপী ব্যক্তির মৃত্যুর সময়ই
দুনিয়াতে তার কৃত খারাপ কাজের শাস্তি শুরু হয়ে যায়। আর ফেরেশতারা কবরে ও আখেরাতের জীবনে
তার জন্যে আল্লাহ যে কঠিন শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন, সেই দুঃসংবাদ শোনাতে থাকে।
যেকারণে কোন পাপী ব্যক্তির জানাযা শেষে যখন তার লাশ কাঁধে বহন করে কবরের দিকে নেওয়া
হয়, সেই মৃত পাপী ব্যক্তিটি আফসোস করে বলতে থাকে, “হায়! তোমরা আমকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ। হায়! তোমরা আমকে কোথায়
নিয়ে যাচ্ছ।” তার এই চিৎকার মানুষ
ব্যতীত সমস্ত প্রাণী শুনতে পায়। মানুষ যদি পাপী ব্যক্তিদের এই ভয়ংকর চিৎকার শুনতে পেতো,
তাহলে বেহুঁশ হয়ে যেত। সহীহ বুখারীঃ ১৩১৪, নাসায়ীঃ ১৯০৯। একারণে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা জানাযার (লাশ) নিয়ে যেতে তাড়াতাড়ি কর।
কেননা, সে যদি পুণ্যবান হয়, তাহলে ভালো; ভালো (গন্তব্যের) দিকেই তোমরা তাকে পেশ করবে।
আর যদি তা এর উল্টো হয়, তাহলে তা মন্দ; যা তোমরা তোমাদের ঘাড় থেকে নামিয়ে দেবে।” সহীহ বুখারীঃ ১৩১৫, সহীহ মুসলিম ৯৪৪।
(২) শয়তান দুই প্রকার, জিন শয়তান ও মানুষ শয়তান। মানুষের
মাঝে যারা শয়তানের বন্ধু, শয়তান তাদের কাছে ওয়াহী (প্রত্যাদেশ) পাঠাইয়। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “নিশ্চয়ই শয়তান তার আওলিয়া (বন্ধুদের) কাছে ওয়াহী প্রেরণ
করে, যাতে তারা যেন তোমাদের সাথে তর্ক করে। সুতরাং (হে মুসলমানেরা সাবধান!) তোমরা যদি
শয়তানের বন্ধুদের আনুগত্য করো, তাহলে তোমরা মুশরেক হয়ে যাবে।” সুরা আন’আম আয়াতঃ ১২১। গণক বা জ্যোতিষীরা শয়তানের বিশেষ দোসর, যাদের
উপর শয়তান নাযিল হয় এবং তারা শয়তানের নাযিল করা কথাগুলোর সাথে আরো ৯৯-টা মিথ্যা
যুক্ত করে মানুষকে বলে। আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “(হে
নবী!) আমি কি আপনাকে বলে দেব, শয়তানরা কার উপর অবতরণ করে? শয়তানরা অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক
মিথ্যাবাদী, গোনাহগারের উপরে। তারা শোনা কথা এনে দেয় এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।” সুরা শুআ’রাঃ ২২১-২২৩।
(৩) আল্লাহ তাআ’লা নক্ষত্র বা আকাশের তারাগুলোকে সৃষ্টি করেছেন তিনটি উদ্দেশ্যে।
প্রথমতঃ প্রদীপের মতো মিষ্টি ও নরম আলো দিয়ে আসমানের সৌন্দর্য বর্ধন করার জন্যে। দ্বিতীয়তঃ
শয়তানেরা যখন ফেরেশতাদের কথা শোনার জন্যে আসমানের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করে, তখন এগুলোকে
উল্কারূপে তাদের উপর নিক্ষেপ করা হয়। তৃতীয়তঃ মানুষ যেনো এই নক্ষত্রগুলো দেখে জাহাজে
করে সমুদ্রে ও স্থলে পথ ও দিক নির্ণয় করতে পারে। সুরা মুলকঃ ৫, সুরা আনআ’মঃ ৯৭।
(৪) হাজার অর্থ পাথর, আর আসওয়াদ অর্থ কালো। সুতরাং, হাজরে
আসওয়াদ অর্থঃ কালো পাথর। এই পাথরটি আল্লাহ তাআ’লা জান্নাত থেকে ফেরেশতাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন, যা ইব্রাহীম
ও ইসমাঈল আ’লাইহিস সালাম কাবাঘর
নির্মানের সময় কাবার দক্ষিণ-পূর্ব দেয়ালে স্থাপন করেছিলেন। প্রথম যখন পাথরটি আনা হয়েছিলো
তখন তার রঙ ছিলো দুধের চাইতে সাদা। কিন্তু পাপী মানুষের স্পর্শের কারণে আস্তে আস্তে
এটা কালো বর্ণ ধারণ করে। কেয়ামতের দিন আল্লাহ এই হাজরে আসওয়াদকে এমনভাবে উত্থিত করবেন
যে, তার দুটি চোখ থাকবে যার দ্বারা সে দেখতে পারবে, তার একটা জিহবা থাকবে যার দ্বারা
সে কথা বলবে। যে ব্যক্তি দুনিয়াতে ঈমানের সহিত এই পাথরটিকে চুম্বন করবে, কেয়ামতের দিন
হাজরে আসওয়াদ তাকে চিনতে পারবে এবং তার ঈমানের পক্ষে সাক্ষ্য দেবে। উল্লেখ্য, এই পাথরের
নিজের ক্ষমতা নেই যে, সে মানুষের কোন ভালো বা মন্দ করবে। যেহেতু আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের
এই পাথরটিকে ভালোবেসে চুমু খেয়েছিলেন, সেজন্যে আমাদের জন্যেও তাঁর অনুসরণে সুন্নত হচ্ছে
পাথরটিকে চুমু দেওয়া। তিরমিযীঃ ৯৬১, তিরমিযীঃ ৭৮৮, সনদ সহীহ।
(৫) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ ঘুমাতে যায়, শয়তান তখন তার মাথায়
তিনটা গিঁট লাগিয়ে দেয়। প্রত্যেক গিঁট লাগানোর সময় সে বলে, “এখনো অনেক রাত্র বাকী আছে” অথাৎ তুমি শুয়ে থাক। যখন সে জেগে উঠে, সে যদি
আল্লাহর যিকর করে (অর্থাৎ আল্লাহকে স্মরণ করে), তাহলে একটি গিঁট খুলে যায়। অতঃপর সে
যদি ওযু করে, তাহলে আরো একটি গিঁট খুলে যায়। আর সে যদি সালাত আদায় করে, তাহলে সবগুলো
গিঁট খুলে যায় এবং তার সকালটা হয় আনন্দ ও উদ্দীপনার সহিত। আর সে যদি (ঘুম থেকে না উঠে,
আল্লাহকে স্মরণ না করে, ওযু না করে এবং ফযরের নামায না পড়ে), তাহলে তার সকালটা হয় ক্লান্ত
ও বিষাদময়।” সহীহ বুখারীঃ ১১৪২,
সহীহ মুসলিমঃ ৭৭৬, নাসায়ীঃ ১৬১০।
(৬) নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কেউ ঘুম থেকে উঠবে, সে যেন নাকে
পানি দিয়ে তিনবার নাক ঝেড়ে নেয়। কেননা, শয়তান তার নাকের ভেতর রাত্রি যাপন করে।” সহীহ বুখারী ৩২৯৫, সহীহ মুসলিম।
(৭) কোন ব্যক্তি সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত ঘুমিয়ে ফযরের নামায
কাযা করে ফেললে শয়তান তার কানে পেশাব করে দেয়। সহীহ বুখারীঃ ৫৪/৪৯২।
(৮) নামাযরত কোন ব্যক্তি ও তার সুতরার জায়গার মধ্য দিয়ে
কালো কোন কুকুর হেঁটে গেলে তার নামায ভেংগে যাবে। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কালো কুকুর হচ্ছে শয়তান।” সহীহ মুসলিমঃ ১০৩২, তিরমিযীঃ ৩৩৮। একারণে নবী
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কালো
কুকুর এবং কুকুরদের মাঝে যেইগুলো হিংস্র, সেগুলোকে হত্যা করতে বলেছেন। সহীহ মুসলিমঃ
৩৮১৩, আবু দাউদঃ ২৮৩৯।
(৯) কল্যাণের দেশ শাম, হাশরের ময়দান শামঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন, “আমি তাঁকে (ইব্রাহীম) ও লুতকে উদ্ধার করে সেই দেশে পৌঁছিয়ে দিলাম,
যেখানে আমি বিশ্বের জন্যে কল্যাণ রেখেছি।” সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭১।
উল্লেখিত আয়াতে যেই স্থানের কথা বলা হয়েছে, সেটা হচ্ছে শাম,
যেই এলাকা বর্তমানে বৃহত্তর সিরিয়া ও ফিলিস্থিন নামে পরিচিত। এই শামে অধিকাংশ নবী-রসুলদেরকে
পাঠানো হয়েছিলো, এবং সেখান থেকেই তাঁদের উপর নাযিলকৃত শরিয়ত পৃথিবীর অন্যান্য দেশে
প্রচারিত হয়েছিলো। এমনকি কিয়ামতের পর পুনরুত্থান ও হাশরও হবে এই শামে। আল্লাহর রসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“আল-শাম হচ্ছে হাশরের
ও পুনরুত্থানের ময়দান।” মুসনাদে আহমাদ, সনদ
সহীহ।
আল্লাহর আদেশে ইসরাফীল আ’লাইহিস সালাম সিংগায় প্রথমবার ফুঁ দিলে কিয়ামত সংগঠিত হবে।
এরপর দ্বিতীয়বার সিংগায় ফুঁ দেওয়া হবে, যার ফলে লোকেরা কবর থেকে উঠবে। বিচারের জন্যে
তখন লোকদেরকে শামের দিকে তাড়িয়ে নেওয়া হবে। বিচারের জন্যে সবাইকে শামে বিশাল এক ময়দানে
একত্রিত করাকে ‘হাশর’ বা মহা-সমাবেশ বলা হয়। আল-মানাভী, ফাতহুল ক্বাদীরঃ
৪/১৭১।