বার্মাতে মুসলিমদের
গণহত্যার ব্যপারে শায়খ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহর উপদেশঃ
(১) প্রশ্নকর্তাঃ সম্মানিত শায়খ! আল্লাহ আপনাকে উত্তম
প্রতিদান দান করুন। বার্মাতে বৌদ্ধদের দ্বারা মুসলিম ভাইদের গণহত্যার ব্যপারে
মুসলিমদের উদ্দেশ্যে আমরা আপনার মূল্যবান উপদেশ কামনা করছি। উল্লেখ্য, সম্প্রতি
বার্মাতে মুসলিমদের উপরে যে গণহত্যা হচ্ছে, এটা নতুন কোন
ঘটনা নয়। বরং, দশকের পর দশক ধরে মুসলিম গণহত্যা ও ‘এথনিক ক্লিনজিং’ (সাম্প্রদায়িক
নিশ্চিহ্নকরণের) ধারাবাহিকতা মাত্র। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এ ব্যপারে সম্পূর্ণ
নীরবতা অবলম্বন করছে।
শায়খের উত্তরঃ “মুসলিম গণহত্যা শুধুমাত্র বার্মাতেই
সীমাবদ্ধ নয়, বরং বর্তমানে অনেক মুসলিম দেশেই ইসলামকে অপমানিত করা
হচ্ছে, ইসলামকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। কাফের
জাতিগুলো মুসলিমদের উপর বিজয়ী হয়ে তাদের উপর কর্তৃত্ব করছে। কাফেররা কখনোই চায় না
যে, মুসলিমরা কোন রাষ্ট্র গঠন করুক। তারা ইসলামের নাম-নিশানা
সহ্য করতে পারেনা। ইসলামকে মুছে ফেলার জন্যে তারা যা করা সম্ভব, সবই করছে। তোমরা সকলেই জানো, কাফেররা মুসলিমদের উপর
কি পরিমান অন্যায়-অত্যাচার করছে। কাফেররা গণতন্ত্র অনুসরণ করার দাবী করে, এবং তাদের এই তরীকা ও কুফুরী আইন মুসলিমদের উপরে চাপিয়ে দিতে চায়। তারা
তাদের রচিত কুফুরী আইন আমাদের মুসলিমদের উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে, আর এর নাম দিয়েছে “গণতন্ত্র ও
ধর্মনিরপেক্ষতা”। কিন্তু
(তাদের এই ইচ্ছা কখনোই পূরণ হবেনা) কারণ, আল্লাহ অবশ্যই তাঁর নূরের (ইসলামের, কুরআনের)
পূর্ণতা দান করবেন। সুতরাং, আমাদের জন্য জরুরী হচ্ছে,
সমস্ত মুসলিম ভাই ও বোনদের জন্যে অত্যন্ত বিনীতভাবে, আন্তরিকতার সহিত বার বার আল্লাহর কাছে দুয়া করা। আল্লাহ যেন তাদেরকে
সাহায্য করেন এবং তাদেরকে শত্রুদের হাত থেকে মুক্তি দান করেন (আমীন)। আমাদের উচিত
দুয়া করা, এই মুহূর্তে আমরা দুয়া ভিন্ন অন্য কিছু করার
ক্ষমতা রাখিনা। তবে যার সামর্থ্য আছে এর অতিরিক্ত কিছু করার, সে যেন তা করার জন্যে জোর প্রচেষ্টা চালায়। নাআ’ম।” (ক)
(২)
অনেকে সচেতনতা তৈরীর জন্যে ফেইসবুক, ইউটিউব, ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ
মাধ্যমগুলোতে ফিলিস্থিনে, সিরিয়াতে, ইন্ডিয়াতে, বার্মাতে ইত্যাদি স্থানে নির্যাতিত
মুসলিমদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের ছবি, ভিডিও ও প্রেজেন্টাশান প্রচার করে থাকে।
এইগুলোর কোনটাতে দেখা যায় ক্ষত-বিক্ষত, টুকরা টুকরা করা কোন মুসলিমের লাশ, কোনটাতে
অমানুষিক নির্যাতনে কোন মুসলিমকে হত্যা করার ভিডিও...এইগুলো দেখে অনেক কোমলমতি,
সংবেদনশীল কিশোর-কিশোরী ও নারীরা পেরেশানি বোধ করেন, অসহ্য মানসিক যন্ত্রনার শিকার
হন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বীভৎস, ভয়ংকর ছবি ও ভিডিও মানুষের মাঝে প্রচার
করা এক প্রকাক ‘মানসিক অত্যাচার’।
প্রশ্ন হচ্ছে ইসলাম প্রচার, দাওয়াত-তাবলীগ, মুসলিমদের উপর অত্যাচার-নির্যাতন
সম্পর্কে জানানোর জন্যে এধরণের হৃদয় বিদারক, বীভৎস ছবি বা ভিডিও প্রচার করা
শরিয়তের দৃষ্টিতে জায়েজ?
এ সম্পর্কে শায়খ
সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “এই কাজ করা মোটেও ঠিক না, আহত লোকদের (বীভৎস
ছবি) তোলা #জায়েজ_নয়। আমাদের করণীয় হচ্ছে, মুসলিমদেরকে তাদের নির্যাতিত ভাইদেরকে
সাদাকাহ দেওয়ার জন্যে আহবান জানানো। আর নির্যাতিত মুসলিমরা খারাপ অবস্থার মাঝে
আছে, এটা অন্য মুসলিমদেরকে (মুখে বলার মাধ্যমে কিংবা লেখনীর দ্বারা) জানানো উচিত। যেকোন
ধরণের ছবি বা আহত মানুষের ছবি মুসলিমদেরকে দেখানো ব্যতীত এই কাজ করতে হবে। কারণ,
এতে (প্রাণীর) ছবি প্রস্তুত করা হছে, (যা শায়খের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরাহ
গুনাহ)। এছাড়া, এই সমস্ত (বীভৎস, করুণ) ছবি দ্বারা মুসলিমদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল
করা হচ্ছে। কারণ, তুমি যখন বিকৃত করা হয়েছে এমন কোন মুসলিমের লাশ দেখাবে, অথবা
মুসলিমদের কর্তিত অংগ-প্রত্যংগ দেখাবে, এটা মুসলিমদের মনে ভীতির সৃষ্টি করবে। এটা
কাফেরদের নৃশংসতার ব্যপারে মুসলিমদেরকে ভীত করবে। আর এটা ওয়াজিব হচ্ছে যে,
মুসলিমদের কোন দুর্বলতা মানুষের মাঝে প্রচার করবেনা। মুসলিমদের উপর আপতিত কোন বিপর্যয়ের
ছবি মানুষকে দেখানো যাবেনা। বরং, এই সমস্ত ছবি গোপন রাখতে হবে, যাতে করে মুসলিমদের
শক্তি দুর্বল হয়ে না পড়ে। নাআ’ম।” (খ)
বিঃদ্রঃ সাধারণ
মানুষকে আল্লাহ তাআ’লা আদেশ করেছেন, “যদি তুমি না জানো, তাহলে ‘আহলে যিকির’ (যারা জ্ঞানী/আলেম) তাদের
কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও।” সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭।
সুতরাং, দ্বীনের কোন
বিষয়ে মতামত জানানো বা ফতোয়া দেওয়া, এটা শুধুমাত্র আলেমদের দায়িত্ব ও অধিকার।
আলেমদের ডিংগিয়ে কোন সাধারণ মানুষ নিজের অল্প ইলম নিয়ে কখনোই ফতোয়া দিবেনা, এটা
একজনের দ্বীনকে ধ্বংস করে এবং সাধারণ মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর সৃষ্টি
দেয়। উপরে দুইটি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সৌদি আরবের প্রখ্যাত আলেমে-দ্বীন ও ফকীহ,
আল্লামাহ সালিহ আল-ফাউজান হা’ফিজাহুল্লাহ। তাঁর ব্যপারে সৌদি আরবের বিগত প্রধান মুফতি
ইমাম আব্দুল আ’জিজ বিন
বাজ (মৃত্যুঃ ১৯৯৯) রাহিমাহুল্লাহ বলেছিলেন, “শায়খ সালিহ
আল-ফাউজান হচ্ছে শ্রেষ্ঠ আলেমদের একজন, তাঁর আকিদাহ ও গুণ প্রশংসনীয়। তিনি একজন
ফকিহ (দ্বীনের ব্যপারে গভীর জ্ঞানের অধিকারী)।” (গ)
দয়া করে এই পোস্টের
কমেন্টে আলোচিত বিষয়ের উপর কেউ কোন মতামত, ফতোয়া ব্যক্ত করবেনা না। আল্লাহ আমাদেরকে
হেফাজত করুন, আমীন।
শায়খের মূল ফতোয়ার
অডিও টেপ, আরবী ও ইংরেজী অনুবাদসহ –
(ক) https://www.youtube.com/watch?v=xUvV9FsDux4&feature=youtu.be
(খ) https://www.youtube.com/watch?v=iYx7JzvOgs0
(গ) https://www.youtube.com/watch?v=pbVEjdMczPo&feature=youtu.be