মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষ নবী
যুগে যুগে মানব জাতির হেদায়েত (সঠিক পথ)
দেখানোর জন্যে আল্লাহ তাআ’লা অনেক নবী ও রাসুলদেরকে পাঠিয়েছেন,
আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি শান্তি বর্ষণ করুন। কিন্তু আমাদের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-কে পাঠানোর মাধ্যমে, তাঁর উপরে শ্রেষ্ঠ আসমানী
কিতাব ‘কুরআনুল
কারীম’ নাযিল করার মাধ্যমে
নবুওতের এই সিলসিলা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর আল্লাহ তাআ’লা আর কোন নবী বা রাসুল পাঠাবেন না। এটা ইসলামী
আকিদাহর গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক, যা অস্বীকার করলে বা যা সন্দেহ করলে কোন ব্যক্তির
ঈমান নষ্ট হয়ে সে বেঈমান হয়ে যাবে।
আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের ইমাম, হানাফী মাযহাবের
প্রখ্যাত আলেম আবু জাফর
আত-ত্বাহাবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২১ হিজরী) লিখেছেন, “নিশ্চয় মুহাম্মদ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নির্বাচিত বান্দা, মনোনীত নবী এবং সন্তোষপ্রাপ্ত রাসূল। তিনি
নবীগণের মধ্যে সর্বশেষ নবী, মুত্তাক্বীদের
ইমাম, রাসূলগণের নেতা এবং সৃষ্টিকুলের রব্বের হাবীব (বন্ধু)। আর তাঁর পরবর্তী যুগে নবুওয়াতের যে সব দাবী
উত্থাপিত হয়েছে, তার
সবগুলোই ভ্রষ্টতা ও প্রবৃত্তির অনুসরণ। তিনি সত্য, হিদায়াত, নূর ও জ্যোতিসহকারে সকল জিন ও সমস্ত মাখলুকের প্রতি প্রেরিত।” আকীদাহ আত-তাহাবীয়া।
এ কথার দলিলঃ
(১) আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
مَا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِنْ رِجَالِكُمْ وَلَٰكِنْ رَسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
অর্থঃ
মুহাম্মাদ তোমাদের মধ্যে কোন পুরুষের পিতা নয়, বরং সে আল্লাহর রাসুল ও খাতামান-নাবিয়্যিন
(সর্বশেষ নবী)। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ। সুরা আহজাবঃ
৪০।
আয়াতের তাফসীরঃ خَاتَمٌ মোহরকে বলা হয়। আর মোহর সর্বশেষ কর্মকে বলা
হয়। (যেমন পত্রের শেষে মোহর মারা হয়।) অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে নবুওত ও রিসালাতের রাস্তা
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁর পর যে কেউ নবী হওয়ার দাবী করবে, সে নবী নয়;
বরং মিথ্যুক ও দাজ্জাল বলে গণ্য হবে। উক্ত বিষয়ে হাদীস
গ্রন্থসমূহে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে এবং এ ব্যপারে উম্মতের
সকলেই একমত।
কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে ঈসা আ’লাইহিস সালাম-এর অবতরণ হবে, যা সহীহ ও
সূত্রবহুল প্রসিদ্ধ বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। তবে তিনি নবী হয়ে আসবেন না; বরং শেষ নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত হয়ে আসবেন। যার ফলে তাঁর অবতরণ হওয়া ‘খাতমে নবুঅত’-এর আকীদার সাথে
সাংঘর্ষিক
নয়।
(২) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “অচিরেই আমার উম্মতের মধ্যে ত্রিশ (৩০)
জন মিথ্যাবাদীর আবির্ভাব ঘটবে, তারা প্রত্যেকেই নিজেকে নবী হওয়ার দাবি করবে। অথচ,
আমিই হচ্ছি সর্বশেষ নবী। আমার পরে আর কোন নবী আসবেনা।” সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ।
প্রাসংগিক কিছু
আলোচনাঃ
(১) ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে ‘কাদিয়ান’ নামক একটি স্থানে জন্ম গ্রহণকারী মির্জা
গোলাম আহমেদ কাদিয়ানী (১৮৩৫-১৯০৮) উনিশ শতকে প্রথমে নিজেকে
‘ইমাম মাহদী’ বলে দাবী করে. . .আস্তে আস্তে শিরক ও কুফুরীতে উন্নতি করতে করতে এক পর্যায়ে
সে নিজেকে ‘নবী’ এবং পরবর্তীতে ‘মাসীহ’ দাবী করে। সে মুখে মুখে নিজেকে মুসলমান দাবী করতো এবং কুরআনের প্রতি বিশ্বাস
আছে বলে দাবী করতো। কিন্তু সে সুরা আহজাব-এর ৪০ নাম্বার আয়াতের ভুল
ব্যখ্যা করে নিজেকে ইসলামের ‘ছায়া নবী’ হিসেবে দাবী করে। তার
প্রচারিত মতবাদকে তার জন্মস্থানের সাথে মিল রেখে ‘কাদিয়ানী ধর্ম’ বলা হয়, অবশ্য তারা কখনো কখনো
নিজেদেরকে ‘আহমাদীয়া মুসলিম’ বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। যাই হোক, মিথ্যা নবীর প্রতি ঈমান আনার কারণে আরব-অনারব
সমস্ত মুসলিম আলেমদের মতে, কাদিয়ানীরা অমুসলিম এবং কাফের। এদের বানানো উপসনায়লয়ে
মুসলিমদের জন্যে নামায পড়া জায়েজ নয়।
(২) ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরে কোন ব্যক্তি যদি তার রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠাতা
বা কোন দেশের নেতাকে সম্মান ও ভক্তি জানাতে গিয়ে যদি বলে, “তিনি আমাদের দেশের নবী”, এমন কথা বললে
সেই ব্যক্তির ঈমান নষ্ট হয়ে যাবে। সে যদি মুসলিম থাকতে চায়, তাহলে তাকে পুনরায়
কালেমা পড়ে ঈমান আনতে হবে। মুসলমান নামধারী কোন নারী বা পুরুষ যদি এমন কথা লাইক বা
শেয়ার করে, তাহলে তারাও ঐ ব্যক্তির সমান বলে গণ্য হবে।
সর্বশেষঃ কেয়ামত
সংঘটিত হওয়ার পূর্বে একের পর এক নিত্য-নতুন ফেতনা মুসলমানদেরকে গ্রাস করবে। সে সময়ের কঠিন ফিতনাহ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আঁধার রাতের অবিরাম খন্ডের মত
কৃষ্ণ-কালো ফেতনা আবর্তিত হওয়ার পূর্বেই তোমরা দ্রুত নেক কাজে মনোনিবেশ কর। (এমন
একটা সময় আসবে যখন) মানুষ সকাল বেলা মুমিন কিন্তু বিকেল বেলা সে হবে কাফের। আবার
কেউ সন্ধ্যা বেলা মুমিন হবে তো সকাল বেলা হবে কাফের। দুনিয়াবি সামান্য স্বার্থের
বিনিময়ে সে দ্বীনকে বিক্রি করে ফেলবে।” সহীহ মুসলীম।
সুতরাং, হে
মুসলিম ভাই ও বোনেরা! আপনারা দ্বীন শিক্ষা করুন, নিজেদের ও নিজেদের পরিবারের মাঝে
দ্বীনের চর্চা গড়ে তুলুন। আর কুফুরী, শিরক ও ফিতনাহ সম্পর্কে সজাগ থাকুন,
অন্যদেরকেও সতর্ক করুন। আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক, আর ওয়াকীল হিসেবে আল্লাহই আমাদের
জন্য যথেষ্ঠ।