সুরা আ’সর
কুরআনুল কারীমের
একটা নাম হচ্ছে ‘যিকির’, অর্থ হচ্ছেঃ উপদেশ। এ কথা আল্লাহ তাআ’লা
কুরআনে অনেক আয়াতেই উল্লেখ করেছেন। যেমন, সুরা তাকভীরে
আল্লাহ তায়া'লা বলেছেন, “ইন হুয়া ইল্লা
যিকরুল্লিল আ’লামীন।”
অর্থঃ এই (কুরআন)
তো জগতবাসীর জন্যে যিকির (উপদেশ) স্বরূপ। সুরা তাকভীরঃ ২৭।
এজন্যে একজন নেককার লোক বলেছেন, “যে ব্যক্তি উপদেশ
গ্রহণ করতে চায়, সে যেন আল্লাহর কিতাব পাঠ করে।”
আজ আল্লাহর ইচ্ছা ও দয়ায় কুরআনুল কারীম থেকে ছোট্ট,
কিন্তু অনেক ভারী উপদেশ রয়েছে এমন একটা সুরার বাংলা উচ্চারণ ও তর্জমা আমি আপনাদের
সামনে পেশ করছি। আমি আপনাদের সকলকে উৎসাহিত
করবো, আরবী দেখে এই মহা উপদেশের সুরাটা আপনারা মুখস্থ করে নিন, এটা বেশি বেশি করে
তেলাওয়াত করুন, এই সুরার অর্থ ও তাফসীর জানার ও বোঝার চেষ্টা করুন।
সুরা আসর নিয়ে দুটি
কথাঃ
(১) দুইজন সাহাবীর (আল্লাহ তাদের সকলের প্রতি সন্তুষ্ট
থাকুন) অভ্যাস ছিলো, তারা যখন তাদের পরস্পরের সাক্ষাত হতো,
তখন একজন এই সুরাটি পড়তেন এবং অপরজন শুনতেন। তারপর সালাম বিনিময় করে বিদায় নিতেন।
মাসয়া’লাঃ আত্মীয় বা বন্ধুদের সাথে দেখা
দেখা-সাক্ষাত হলে এই সুরা একজন আরেকজনকে পড়ে শোনানোর মাধ্যমে অন্যকে উপদেশ দেওয়া
এবং নিজে উপদেশ গ্রহণ করা আমাদের জন্যে একটা
উত্তম আমল।
(২) ইমাম শাফেয়ী (আল্লাহ তার প্রতি রহম করুন) বলেছেন, “মানুষ যদি এই একটি
মাত্র সুরা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে ও মনোযোগের সাথে পাঠ করে এবং তার অর্থ অনুধাবন করে, তাহলে তার হেদায়েতের জন্যে এই একটা মাত্র
সুরাই যথেষ্ঠ হবে।” সুবহা’নাল্লাহ!
উপরের দুইটি কথার উৎস
হচ্ছেঃ তাফসীর ইবনে কাসীর, ১৮-তম খন্ড।
সুরা আ’সর। মাক্কী সুরা।
সুরা নং-১০৩, আয়াত সংখ্যা ৩। রুকু ১।
আ’উযুবিল্লাহিমিনাশ-শাইত্বানির রাযীম।
বিসমিল্লাহ-হির-রাহ’মানির রাহী'’ম।
(১) ওয়াল আ’সরি।
অর্থঃ কসম সময়ের।
(২) ইন্নাল ইংসানা লাফী খুসরি।
অর্থঃ নিশ্চয়ই মানুষ তো রয়েছে ক্ষতির মধ্যে।
(৩) ইল্লাল্লাযীনা আমানু ওয়া আ’মিলুস-সোয়ালিহা’তি
অর্থঃ কিন্তু (তারা ক্ষতিগ্রস্থ নয়) যারা ঈমান আনে ও নেক
কাজ করে।
ওয়াতা ওয়া সোয়াও বিল হা’ক্কি ওয়াতা ওয়া
সোয়াও বিস সাবর।
অর্থঃ আর একজন আরেকজনকে সত্যের দিকে দাওয়াত দেয় এবং একজন
আরেকজনকে ধৈর্য ধারণ করার উপদেশ দেয়।
বিঃদ্রঃ আমি বাংলা
উচ্চারণ দিয়েছি যাতে করে যারা আরবী থেকে পড়তে পারেন না, তাদের সাহায্যের জন্যে। কিন্তু মনে রাখবেন, আরবীর উচ্চারণ
বাংলাতে সঠিকভাবে লিখা যায়না, আর বাংলা উচ্চারণ দেখে পড়লে উচ্চারণ ভুল হয়ে অর্থের
বিকৃতি হয়ে যায়। সেইজন্যে কুরআন আরবী দেখেই পড়তে হবে, কোথাও আটকে গেলে আবংলা উচ্চারণ দেখে সাহায্য নিতে পারেন, কিন্তু সরাসরি বাংলা উচ্চারণ দেখে পড়া
যাবেনা। যারা আরবী পড়তে পারেন না, তাদের পুরুষেরা পুরুষদের কাছ থেকে এবং নারীরা
নারীদের কাছ থেকে অথবা মাহরামদের কাছ থেকে শিখে নেবেন। আমাদের উম্মতের মাঝে এমন
লক্ষ লক্ষ নারী ও পুরুষ দরকার, যারা নিজেদের অবসর সময়ে কোন টাকা পয়সা ছাড়াই
শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে মানুষকে আল্লাহর কিতাব পড়তে শিক্ষা দিবে।
আল্লাহ আমাদেরকে তোওফিক দান করুন, আমিন।