সোমবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৬

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ফতোয়া দিতে পারেন না; ফতোয়া নিতে হয় আলেমদের কাছ থেকে

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার ফতোয়া দিতে পারেন না; ফতোয়া নিতে হয় আলেমদের কাছ থেকে (পর্ব-২)
গতকাল আমাদের পেইজে এ প্রসংগে একটা পোস্ট করা হয়েছিলো, পোস্টের লিংক
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2015/03/blog-post_56.html
সেই পোস্টে অনেকগুলো প্রশ্ন এসেছিলো। সেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাদের সাথে শেয়ার করা হলো, আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে ইংশায়াল্লাহ। সময় ও সুযোগের অভাবে সবগুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সম্ভব হলোনা বলে দুঃখ প্রকাশ করছি। উল্লেখ্য, অনেকে অপ্রাসংগিক বা আমাদেরকে আক্রমন করে, অজ্ঞতাবশত কিছু অসংগত মন্তব্য করেছেন। আমাদের পেইজের নিয়ম অনুযায়ী সেই সমস্ত মন্তব্যের ব্যপারে কোন উত্তর প্রদান থেকে বিরত থাকা হয়েছে।   
.
প্রশ্নঃ কোন হাদীসে লিখা আছে যে, শুধুমাত্র আলেম বা মুফতিরাই ফতোয়া দিতে পারবে?
উত্তরঃ কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ইসলামী বিষয়ে সমস্যার সমাধান দেওয়া, সময়ের সাথে সাথে মানব সমাজে উদ্ভুত নিত্য-নতুন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া...এক কথা ফতোয়া দেওয়ার অধিকার শুধুমাত্র মুসলিম সমাজের যোগ্য ইসতেম্বাতকারী, জ্ঞানী ব্যক্তিদের, যাদেরকে আমরা প্রচলিত ভাষায় আলেম বা মুফতি বলে থাকি। এনিয়ে কুরআন ও হাদীসে অনেক বক্তব্য রয়েছে। নীচে দুইটি আয়াত ও তার তর্জমা ও তাফসীর উল্লেখ করা হলো।  
(১) আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
উচ্চারণঃ ফাস-আলু আহলায-যিকরি ই কুতুম লা তাআলামুন।
অর্থঃ যদি তুমি না জানো, তাহলে আহলে যিকির (যারা জ্ঞানী/আলেম) তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও। সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭।
আয়াতের তাফসীরঃ এই আয়াতে কোন বিষয় জানা না থাকলে তা আলেমদের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাকীদ দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অপরিহার্য; যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সুতরাং এই আয়াতের অর্থ হল, আলেমদের সাহায্য নিয়ে শরীয়তের উক্তি ও বক্তব্য সম্পর্কে জেনে নাও। (আহসানুল বায়ান)
(২) আল্লাহ তাআলা আরো বলেছে,
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنْبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا
অর্থঃ আল্লাহ তাআলা বলেছে, আর যখন তাদের নিকটে কোন শান্তি বা ভীতিজনক কোন সংবাদ আসে, তখন তারা সেটা রটনা করতে থাকে। কিন্তু তারা যদি এটা (না করে) সেই সংবাদ রাসুল কিংবা তাদের উলুল আমর (দায়িত্বশীলদের) প্রতি সমর্পণ করত, তাহলে তাদের মধ্যে যারা ইস্তেম্বাতকারী (তত্তানুসন্ধানীগন) তার প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করতে পারত সুরা নিসাঃ ৮৩।
আয়াতের তাফসীরঃ তাবেয়ী বিদ্বান হযরত কাতাদাহ (রহঃ) থেকে বর্ণিত আলোচ্য আয়াতের ব্যাখায় তিনি বলেছেন, ই আয়াতে ইলা উলিল আমরি মিনহুম এর অর্থ হলঃ তারা যদি তাদের সম্মানিত আলেমদের নিকট বিষয়টি উত্থাপন করত, তাহলে যারা ইস্তেম্বাতকারি (তথ্য সম্বন্ধে গবেষণা করে) এবং তাদের গুরুত্ব দেয়, তারা সেই বিষয়টির সত্যতা যাচাই করতে পারত (তাফসিরে তাবারি, সুরা নিসা, আয়াত ৮৩-এর তাফসীর দ্রষ্টব্য)
উপরের দুইটি আয়াত থেকে স্পষ্টঃ দ্বীনি জ্ঞান অনুসন্ধানী সাধারণ মানুষদের জন্যে আল্লাহর আদেশ হচ্ছে, তারা ইস্তেম্বাতকারী বা আলেমদের নিকট থেকে দ্বীনি জ্ঞান অর্জন করবে, ফতোয়া জানার জন্যে নিজে নিজে কুরআন হাদীস গবেষণা করে মনগড়া উত্তর বের করবেনা, বা অল্প ইলম নিয়ে ফতোয়াবাজি করে বেড়াবেনা।
.
প্রশ্নঃ
মুফতী কাকে বলা হয়?
উত্তরঃ বিস্তারিত জানার জন্যে এই পোস্ট দেখুন -
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2016/06/blog-post.html.
.
প্রশ্নঃ আলেম বা মুফতিদেরকে না পেলে কাকে প্রশ্ন করবো?
উত্তরঃ যদিও আমাদের দেশে ব্যঙ্গের ছাতার মতো যত্র তত্র মুফতি টাইটেলধারী লোক দেখা যায়, কিন্তু প্রকৃত আলেম বা মুফতি আসলে খুব কমই হয়। আর রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর হাদীস অনুযায়ীঃ কেয়ামতের একটা লক্ষণ হচ্ছে আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে আলেমদের সংখ্যা আস্তে আস্তে কমে যাবে, যা বর্তমানে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাই হোক, আলেমরা তাঁদের অর্জিত জ্ঞান তাঁদের ছাত্রদের মাঝে বিতরণ করে যান। সেই ছাত্ররা তাঁরা নিজেরা সেই মানের বড় আলেম না হলেও, তাঁরা আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করে থাকেন। আমরা সাধারণ মানুষেরা আলেমদের কাছে পৌঁছতে না পারলে, আলেমদের ছাত্রদের মাঝে যারা নির্ভরযোগ্য, তাঁদেরকে প্রশ্ন করে আমাদের সমস্যার সমাধান নিতে পারি।
.
প্রশ্নঃ মুফতি সাহেবরা কি ইসলামের পেটেন্ট নিয়ে রেখেছেন যে, তাঁরা ছাড়া বাকী লোকেরা সঠিক কথা বলার অধিকার নেই?
উত্তরঃ সঠিক কথা বলার অধিকার বলতে আপনি কি বুঝাচ্ছেন? সঠিক কথা বলতে যদি বোঝানো হয় নিজে আলেম-উলামাদের কাছ থেকে ইসলাম শিখে, ইখলাসের সাথে মানুষের কাছে সেই ইলম পৌঁছে দেওয়া, অবশ্যই এটা করার অনুমতি আছে। যারা সত্যিকার অর্থেই দ্বীন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করেছেন, তাঁদের উপর দাওয়াতের এই মহান কাজ করা ফরয। কিন্তু আপনি যদি ঠিক কথা বলার অধিকার বলতে বুঝান, ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন না করেই নিজে নিজে ফতোয়া দেওয়া শুরু করা এটা হারাম, এমনকি কখনো সেটা কুফুরীর মতো জঘন্য কাজ হিসেবে বিচবেচিত হবে।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি (বিশুদ্ধ) জ্ঞান ছাড়া ফতোয়া দেয় এর গুনাহ ফতোয়া দাতার ওপর হবে। আবু দাউদঃ ৩৬৫৭, হাদীসটি হাসান সহীহ, শায়খ আলবানী।
আন্দাজে বা অল্প ইলম নিয়ে হালালকে হারাম বলে ফতোয়া দেওয়া অথবা হারাম জিনসকে হালাল বলে ফতোয়া কুফুরী কাজ এবং এর দ্বারা আললাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা হয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন, তোমরা জিহবা দিয়ে (মনগড়া ফতোয়াবাজি করে) বলোনা এইটা হালাল এইটা হারাম। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ, এমনকি এর দ্বারা কেউ দ্বীন থেকে খারেজ হয়ে কাফের হয়ে যেতে পারে (নাউযুবিল্লাহি মিং যালিক)।
.
প্রশ্নঃ আব্দুর রাজ্জাক বিন ইউসুফ, মতিউর রহমান মাদানী তারা ফতোয়া দিবার যোগ্য কিনা?
উত্তরঃ না, তাঁদের কেউই নিজস্ব ফতোয়া দেন না। তাঁরা হচ্ছেন আলেমদের ছাত্র, তাঁরা ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্য মুফতি বা প্রকৃত আলেমদেরকে অনুসরণ করেন।
.
প্রশ্নঃ আলেম কে? একজন আলেমের কি কি যোগ্যতা থাকা চাই?
উত্তরঃ বিস্তারিত জানার জন্যে এই পোস্ট দেখুন

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2015/04/blog-post_16.html