কোন আমল ‘মসজিদে নববীতে এক মাস ইতিকাফ করার’ চাইতেও উত্তম?
বিসমিল্লাহ।
আলহা’মদুলিল্লাহ।
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ।
আম্মা বাআ’দ।
আপনার “দ্বীন” কেমন হবে, সেটা আপনি কার কাছ থেকে ইসলাম শিখছেন তাঁর ঈমান,
ইলম ও ব্যক্তিত্বের উপরে নির্ভর করে। আপনি যদি কোন জাহেল (মূর্খ) ব্যক্তিকে নিজের
উস্তাদ হিসেবে নেন, আপনি নিজের অজান্তেই কুরআন ও হাদীস শিখার আড়ালে “মূর্খতা” শিখবেন। আপনি যদি কোন পথভ্রষ্ট বিদআ’তী লোকের কাছ থেকে দ্বীন শিখেন, তাহলে আপনিও
শিরক-বিদআতকে “সঠিক দ্বীন” বলে মনে করবেন। আপনি যদি কোন তাকফিরী-খারেজী
চরমপন্থী মতবাদের অনুসারী কোন ব্যক্তির কাছ থেকে দ্বীন শিখেন, তাহলে বোমা মেরে
নিরীহ মানুষ হত্যা, জংগীবাদ, মুসলিম দেশে ফিতনাহ-ফাসাদ সৃষ্টি করাকেই “হক্কপন্থী দল” বলে মনে করবেন। পক্ষান্তরে আপনি যদি আলেমদের কাছ থেকে
দ্বীন শিখেন, তাহলে আপনার দ্বীন হবে “নূরান্বিত”,
জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত, চরমপন্থা ও উদাসীনতা থেকে মুক্ত, মধ্যমপন্থার অনুসরণকারী।
এছাড়া আলেমদের দারসে, বক্তব্য ও লিখনীর মাঝে আল্লাহর রহমত, বরকত থাকে, যা জ্ঞানী ও
দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের অজানা নয়। আলেমদের ইখলাস ও দ্বীনের প্রতি আন্তরিকতার কারণে
তাদের কাছ থেকে শেখা ইলমে বরকতও বেশি থাকে। আপনি দেখবেন, একজন আলেমের শোনা একটা
কথা দীর্ঘদিন আপনার মনে থাকবে, সেটার উপর আমল করতে আগ্রহ কাজ করবে। কিন্তু অল্প
ইলম সম্পন্ন, আধা ইসলামিক বক্তাদের, কোন রিয়াকারী ব্যক্তির বা লোকের কাছে সম্মান
কুড়ানোর জন্যে যেই সমস্ত দাওয়াতী কাজ চলে ইউটিউব, ফেইসবুক বা ইন্টারনেট, তাদের কাছ
থেকে সারাদিন কুরআন ও হাদীস শুনবেন, কিন্তু ব্যক্তি জীবনে তার কোন প্রভাব দেখতে
পারবেন না।
.
আলেমদের কাছ থেকে
শোনা কোন কথা যে অন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে শোনা কথার চাইতে অনেক বেশি উপকারী
হয়, আমি আমার ব্যক্তিগত একটা উদাহরণ থেকে বলি। কয়েক বছর পূর্বে আমি
মিশরীয় একজন আলেম, আল্লামাহ সাঈদ রাসলান হা’ফিজাহুল্লাহর একটা টেপ থেকে একটা হাদীস শুনেছিলাম।
এতো সুন্দর ও আশ্চর্যজনক একটা হাদীস, এতোদিন পরেও আজ পর্যন্ত
যতবারই হাদীসটার কথা মনে পড়ে, সাথে সাথে শায়খ রাসলানের কথা মনে পড়ে যায়। নীচে আমি
হাদীসটার তর্জমা আপনাদের সামনে পেশ করছি। আমি আপনাদেরকে উৎসাহিত করবো জনপ্রিয়তা
লোভী, অল্প ইলম সম্পন্ন বক্তা ও লিখকদের কথা না শুনে আহলে সুন্নাহর আলেমদের কথা
শোনার জন্যে। সেটা হতে পারে আলেমদের লেকচার শোনার মাধ্যমে, তাদের বইয়ের অনুবাদ
পড়ে। অথবা সরাসরি আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেছেন, এমন তালিবুল ইলমদের ওয়াজ-লেকচার
শোনার মাধ্যমেও আপনারা আলেমদের থেকে উপকৃত হতে পারেন।
.
আব্দুল্লাহ ইবনে
উমার রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা থেকে বর্ণিত।
তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে এসে বললো, “ইয়া রাসুলুল্লাহ! মানুষের মাঝে আল্লাহর কাছে
সবচাইতে বেশি প্রিয় কারা? আর কোন আমল আল্লাহর কাছে সবচাইতে বেশি প্রিয়?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সবচাইতে বেশি
প্রিয় হচ্ছে তারা, যারা মানুষের জন্যে সবচাইতে বেশি উপকারী ব্যক্তি। আর আল্লাহর
কাছে সবচাইতে বেশি প্রিয় আমল হচ্ছেঃ একজন মুসলমানকে খুশি করা, অথবা তার কোন একটা
দুঃখ দূর করা, অথবা তার ঋণ মাফ করে দেওয়া অথবা ক্ষুধার্ত অবস্থায় তাকে খাদ্য
দেওয়া। মদীনার এই মসজিদে (মসজিদে নববীতে) এক মাস ইতিকাফ করার চাইতে কোন এক মুসলমান
ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করার জন্যে তার সাথে হাঁটা আমার কাছে বেশি প্রিয়। যে ব্যক্তি
নিজের রাগ দমন করে আল্লাহ তার দোষত্রুটি গোপন রাখবেন।”
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আসবাহানী এবং ইবনে আবি দুনিয়া।
শায়খ সাঈদ রাসলান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “হাদীসটি হাসান লি গায়রি।”
.
উপরোক্ত হাদীস অনুযায়ী, আল্লাহর কাছে
সবচাইতে প্রিয় হচ্ছে যারা মানুষের জন্যে সবচাইতে বেশি উপকারী। সুতরাং, আল্লাহর
ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায় হচ্ছে মানুষের উপকার করা। সেটা হতে পারে কথার দ্বারা, অর্থের
দ্বারা, শক্তি দ্বারা. . .এমন যেকোন কিছু। আর একজন মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য পূরণের
জন্যে চেষ্টা করা, সেই উদ্দেশ্যে কিছু সময় ও শক্তি ব্যয় করা মসজিদে নববীতে এক
মাস ইতিকাফ করার চাইতেও উত্তম।
সুবহা’নাল্লাহ!
চিন্তা করে দেখুন, মানুষের উপকার করা কত বড়
সওয়াবের একটা কাজ!
.
মানুষকে উপকার করার কয়েকটি মাধ্যমঃ
(১) মুসলিম ব্যক্তিকে রক্ত দেওয়া বা তার
চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া। এটা অনেক বড় একটা সাদাকাহ।
(২) মুসলিম ব্যক্তির অভাব পূরণের জন্যে বৈধ
পন্থায় তার হয়ে কারো কাছে কোন কিছুর জন্যে সুপারিশ করা।
(৩) মুসলিম ভাইয়ের কর্ম সংস্থানের জন্যে
সাহায্য করা, অবশ্যই সেটা বৈধ কোন পন্থায়। ঘুষ, অন্যায় লবিং, প্রশ্ন ফাঁস এমন
হারাম কোন মাধ্যমে নয়।
(৪) মুসলিম ভাই বোনদের বিয়ের জন্যে সৎ
পাত্র-পাত্রীর চেষ্টা করা।
(৫) মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়া, অথবা তারা
যাতে সঠিক জ্ঞানের উৎস খুঁজে পায়, সে ব্যপারে সাহায্য করা।
এমন আরো অনেক মাধ্যম রয়েছে। আপনি চেষ্টা
করলে আল্লাহই আপনাকে নেক আমলের জন্যে রাস্তা দেখাবেন। তবে মনে রাখবেন, যখনই কোন
নেক আমল করবেন, তার পূর্বে অন্তরকে ইখলাসা দ্বারা পবিত্র করে নিবেন। নেক আমলের
উদ্দেশ্য হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, লোক দেখানো, সামাজিকতা রক্ষা,
কারো মন রাখা, লোকের আবদার রক্ষা করা, করতে হয় এইজন্যে করা, এমন দায়সারা যাতে না
হয়। তাহলে কোন সওয়াব পাওয়া যাবেনা। শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা –
এই উদ্দেশ্যে অন্তরে রাখলে নেক আমলের সওয়াব পাওয়া যাবে। অন্তরে সওয়াবের আশা ও নিয়ত
না থাকলে, অথবা নিয়তে খারাপী থাকলে, সেটা যতই ভালো আমল হোকনা কেনো, তার জন্যে এক
ফোঁটা সওয়াব দেবেন না। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার ও আমল করা তোওফিক দান করুন, আমিন।
.
বিঃদ্রঃ পোস্টটা এমনিতেই বড় হয়ে গেলেও একটা
কথা না বলে পারছিনা। দ্বীন শিক্ষার্থী ভাই ও বোনদের দ্বীন শিখার আদব নিয়ে শায়খ
রাসলানের খুব সুন্দর ও অত্যন্ত উপকারী একটা বই রয়েছে।
অনলাইনে আপনারা বইটা ফ্রী পাবেন এই লিংকে-
https://www.missionislam.com/knowledge/books/mannersknowseeker.pdf
.
শায়খ রাসলান হা’ফিজাহুল্লাহর
খুতবার ছোট্ট একটা অংশ দেখতে পারবেন এই লিংকে –
https://www.youtube.com/watch?v=a5JcbmjgHsg
এই ভিডিওটার বাংলা অনুবাদও
করা হয়েছে –
https://www.youtube.com/watch?v=P_V40z7bPJA
.