গল্পে
গল্পে ইসলামী আকিদাহ শিক্ষা (পর্ব-১)
ফারজানার
খুব ইচ্ছে উচ্চ শিক্ষার জন্যে বিদেশে যাবে। কিন্তু তার বাবা-মা মেয়েকে একাকী বিদেশে
যেতে দিতে রাজীনা। বিদেশে গিয়ে কত মেয়ে খারাপ হচ্ছে, কত মেয়ের
সর্বনাশ হচ্ছে, কত মেয়ে লিভ-টুগেদার নাম দিয়ে জিনা-ব্যভিচারে
লিপ্ত হচ্ছে, ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদেরকে বিয়ে করছে, বিদেশে একাকী জীবন-যাপন করে পরে বাবা-মায়ের কথা আর শোনেনা, অনেকে তো মুর্তাদও হয়ে যাচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে মুসলিম বাবা-মায়েরা মেয়েকে একাকী
বিদেশে যেতে দিতে চাইবেনা, এটাই স্বাভাবিক। অনেক বোঝানোর পরেও
ফারজানা কিছুতেই বুঝবেনা। শেষে তার বাবা “মেয়েদের একাকী সফর করা
জায়েজ নয়”, শরিয়াতের এই হুকুমের কথা বলে মেয়ে আটকানোর শেষ চেষ্টা করলেন। কিন্তু ততদিনে
অনেক দেরী হয়ে গেছে, কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে কিছু বাংলা,
কিছু ইংরেজী, আর কিছু ইসলাম পড়ে ফারজানা এখন হাদীসের
ধার ধারেনা, নিজের মনমতো কুরআন-হাদীসের অপব্যখ্যা নিয়েই সন্তুষ্ট।
সুতরাং, রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর কথা না শুনে উল্টা তার পরিবার তার উচ্চ শিক্ষা, তার জীবনের উন্নতির জন্যে বাঁধা দিচ্ছে বলে মনে করলো। সেইজন্যে বাবার মুখে
ইসলামী আইন শুনে তার পরিবার “ফতোয়া ঝুলিয়ে দিয়ে” তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাচ্ছে বলে কটাক্ষ করলো। মানব কল্যাণের মহান উদ্দেশ্য
নিয়ে সে রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশকে উপেক্ষা
করে, বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে ফারজানা বিদেশে পাড়ি জমালো।
.
নারীদের
জন্য একাকী সফর করা হারামঃ
নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যে নারী আল্লাহ ও পরকালের প্রতি
বিশ্বাস রাখে জেনে রাখ! তার জন্য অনুমতি নেই যে সে আপন স্বামী অথবা মাহরাম পুরুষ ছাড়া
সফর সমান দূরত্বে একাকী ভ্রমণ করবে।” সহীহ মুসলিম,
হাদীস নং ১৩৩৮।
এমনকি
কোন নারী হজ্জের মতো ফরজ কাজের উদ্দেশ্যেও মক্কাতে একাকী যেতে পারেনা। নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোন নারী নিজ মাহরাম সংগী ছাড়া
একাকী সফর করবেনা।” তখন উপস্থিত এক সাহাবী আরয করলেন,
“আমি
তো অমুক জিহাদে যাচ্ছি। আর এদিকে আমার স্ত্রী হজ্বে যেতে যাচ্ছে। (আমি কি করবো)? জিহাদে বের হবো, নাকি স্ত্রীর সাথে হজ্বের সফরে বের হব।?
কারণ আমি ছাড়া তার অন্য কোন মাহরারম সঙ্গী নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বললেন, “তুমি জিহাদে না গিয়ে তোমার স্ত্রীর সাথে হজ্বের
সফরে যাও।” সহীহ বুখারী, হাদীস নং- ৩০০৬।
.
ইসলামের
কোন বিষয়কে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা বা হেয় মনে করা কুফুরী এবং মুনাফেকের লক্ষণঃ
অনেক
নারী ও পুরুষকে যখন ইসলামী শরিয়ান অনুযায়ী কোন হুকুম বর্ণনা করা হয়, অজ্ঞতা কিংবা দুর্বল ঈমানের কারণে অনেকে আল্লাহর আইন নিয়ে হাসি-ঠাট্টা বা কটাক্ষ
করে। এটা একটা কুফুরী কাজ, যেকারণে মানুষের ঈমান নষ্ট হয়ে যায়।
আজকাল হরহামেশা অনেক লেখক, সাহিত্যিক ইসলাম নিয়ে তির্যক লেখা
লিখেন, না জেনে বা না বুঝে এ বিষয়ে পান্ডিত্য দেখাতে গিয়ে ডুবে
যান কুফুরীর অতল সাগরে। মুসলমানী নামটুকু ছাড়া তার আর কিছুই বাকী থাকেনা। আল্লাহ পাক
এমন লোকদেরকে বলছেন,
► “(হে নবী!) আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, তারা বলবে,
আমরাতো হাসি তামাশা করছিলাম। আপনি বলে দিন, তোমরা
কি আল্লাহকে নিয়ে এবং তার আয়াতসমূহ ও তার রাসুলকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করছ?
তোমরা কোন অযুহাত দেখিয়ো না, তোমরা তো ঈমান আনার
পরে কুফুরী করে ফেলেছো।” সুরা তওবাঃ ৬৫-৬৬।
► “তোমরা
কি কিতাবের কিছু অংশকে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখান কর? তোমাদের যারা এমন করে তাদের পার্থিব জগতে লাঞ্ছনা ও অবমাননা ছাড়া আর কী প্রতিদান
হতে পারে? এবং ক্বিয়ামতের দিন তারা কঠিন শাস্তির মধ্যে নিক্ষিপ্ত
হবে, আর তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ্ গাফেল নন।” সুরা আল-বাক্বারাঃ ৮৫।
► মুনাফেকদের প্রথম পরিচয় ছিল, তারা মুসলমানদেরকে নিয়ে
হাসি তামাশা করতো, তাদেরকে বোকা ভাবতো। আল্লাহ পাক তাদেরকে ধমক
দিয়ে বলেছেন, “তারাই বোকা অথচ নিজেরা তা জানে না।” সুরা আল-বাকারাহঃ ১৩।
► ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, “কোন ব্যক্তি যদি স্বেচ্ছায় কিংবা
কেউ যদি স্পষ্টভাবে এমন কোন কথা বলে যা আল্লাহ ও তার রাসূলের কোন বিধানকে তুচ্ছ করে, তা অবশ্যই কুফুরী।”
► ইমাম কুরতুবী (রহঃ) লিখেছেন, “মজা করার জন্য হোক কিংবা সত্যি
সত্যিই হোক, ইসলামের কোন সাধারণ বিষয় নিয়ে হাসি তামাশা
করা কুফুরী। এতে কারো দ্বিমত নেই।”
► ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেন, “দ্বীনের যে কোন স্পষ্ট
বিষয় নিয়ে ঠাট্টা করা কুফুরী। যে এমন করল তার ঈমান ধ্বংস হয়ে কুফুরীতে পরিণত হল।”