বৃহস্পতিবার, ২৪ মার্চ, ২০১৬

হৃদয় গলানো উপদেশ

হৃদয় গলানো উপদেশ
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মুবারকময় জবান থেকে মূল্যবান উপদেশ সম্বলিত কয়েকটি হাদীস বর্ণনা করা হলো। নিন্ম বর্ণিত সবগুলো হাদীস তাওহীদ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ইমাম ইবনে হাজার আসকালনি রাহিমাহুল্লাহর সংকলিত অমূল্য গ্রন্থ তাহক্বীক বুলুগুল মারাম থেকে সংগৃহীত, এবং সবগুলো হাদীস-ই সহীহ।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
(১) নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক চিরঞ্জীব, দানশীল। তাঁর কোন বান্দা নিজের দুই হাত তুলে তাঁর নিকট দুয়া করলে তিনি বান্দাকে শূণ্য হাত বা তাকে নিরাশ করে ফিরিয়ে দিতে লজ্জা বোধ করেন। আবু দাউদঃ ১৪৮৮, তিরমিযীঃ ৩৫৫৬।
(২) আল্লাহ যার কল্যাণ চান, তাকে তিনি দ্বীনের ইলম (জ্ঞান) দান করেন। বুখারীঃ ৭১, মুসলিমঃ ১০৩৭।
(৩) যে ব্যক্তি সন্দেহজনক জিনিসগুলো থেকে বেঁচে থাকবে সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। বুখারীঃ ৫২, মুসলিমঃ ১৫৯৯।
(৪) তুমি দুনিয়াতে এমনভাবে থাকো, যেন তুমি (অল্প সময়ের জন্যে) একজন প্রবাসী বা মুসাফির। বুখারীঃ ৬৪১৬, তিরমিযীঃ ২৩৩৩।
(৫) নিশ্চয়ই আল্লাহ ঐ বান্দাকে ভালোবাসেন, যে ব্যক্তি মুত্তাক্বী (আল্লাহ ভয়ে পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে), মুখাপেক্ষাহীন (আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপর নির্ভরশীল নয়), এবং আত্মগোপনকারী ( নিজের গুণ প্রকাশে অনিচ্ছুক)। মুসলিমঃ ২৯৬৫, আহমাদঃ ১৪৪৪।
(৬) পিতা-মাতার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি (লাভ হয়), আর তাঁদের অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর আসন্তুষ্টি রয়েছে। তিরমিযীঃ ১৯০০,ইবনে মাজাহঃ ২০৮৯।
(৭) নেকী হচ্ছে সুন্দর ব্যবহার আর পাপ হচ্ছে যা তোমরা অন্তরে খটকা জাগায় এবং মানুষ সেই বিষয়টা জানুক, তুমি সেটা অপছন্দ কর। মুসলিমঃ ২৫৫৩, আহমাদঃ ১৭১৭৯।
(৮) যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যে বিনয় ও নম্রতা প্রকাশ করে, আল্লাহ তাকে উঁচু করে দেন। মুসলিমঃ ২৫৮৮, তিরমিযীঃ ২০২৯।
(৯) যে ব্যক্তি তার কোন মুসলিম ভাইয়ের অসাক্ষাতে তার সম্মান হানিকর বস্তুকে প্রতিহত করবে, আল্লাহ তার মুখমন্ডল হতে কেয়ামতের দিন জাহান্নামের আগুনকে দূর করে দেবেন। তিরমিযীঃ ১৯৩১, আহমাদঃ ২৬৯৮৮।
(১০) যে ব্যক্তি কোন এক দল লোকের কথার দিকে কান লাগাল, অথচ সেই লোকগুলো এটা পছন্দ করেনা যে, সেই ব্যক্তি তাদের কথা শুনুক, তাহলে কেয়ামতের দিন তার দুই কানে (গরম) সীসা ঢেলে দেওয়া হবে। বুখারীঃ ২২২৫, মুসলিমঃ ২১১০।
(১১) যে ব্যক্তি নিজের মনে নিজেকে বড় বলে মনে করে, চলার সময় অহংকার করে চলে, তাহলে সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎকালে আল্লাহ সেই ব্যক্তির উপর রাগান্বিত অবস্থায় থাকবেন। বুখারীঃ ৫৪৯, মুসলিমঃ ৬২৩।
(১২) চোগলখোর কক্ষনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। বুখারীঃ ৬০৫৬, আবু দাউদঃ ৪৮৯৯।*যে ব্যক্তি একজনের কথা আরেকজনের কাছে লাগিয়ে মানুষের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ সৃষ্টি করে অথবা দুইজনের মাঝে সম্পর্ক নষ্ট করে, তাকে চোগলখোর বলা হয়।
(১৩) তোমরা কৃপণতা হতে নিজেকে বাঁচাও, কারণ এটা আগের জাতিগুলোকে ধ্বংস করছিলো। মুসলিমঃ ২৫৭৮, আহমাদঃ ১৪০৫২।
(১৪) একজন ঈমানদার ব্যক্তি কখনো লোকদেরকে তিরস্কারকারী, অভিসম্পাত দানকারী, অশ্লীল ভাষী, নির্লজ্জ ইতর প্রকৃতির হতে পারেনা। তিরমিযীঃ ২০০।
(১৫) শয়তান বাম হাতে খায় এবং বাম হাতে পান করে। মুসলিমঃ ২০২০, তিরমিযীঃ ১৭৯৯।
(১৬) কিছু লোক আল্লাহর দেওয়া সম্পদ অন্যায়ভাবে খরচ করে, কেয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত রয়েছে। বুখারীঃ ৩১১৮, তিরমিযীঃ ২৩৭৪।
(১৭) যখন তোমাদের কেউ যখন জুতা পড়ে, তখন সে যেন ডান পা দিয়ে শুরু করে, আর যখন জুতা খুলবে তখন সে যেন বাম পা দিয়ে শুরু করে। যাতে পড়ার সময় দুই পায়ের মধ্যে ডান পা প্রথমে হয় আর খোলার সময় শেষ হয়। বুখারীঃ ৫৮৫৫, মুসলিমঃ ২০৯৭ 

(১৮) প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই বলে দুয়া করতেন, হে আল্লাহ তুমি আমাকে যেই ইলম দান করছো, তার দ্বারা আমাকে উপকৃত করো। তুমি আমাকে সেই ইলম দান করো, যা আমাকে উপকৃত করবে। আর আমার ইলম আরো বাড়িয়ে দাও। ইবনে মাজাহঃ ১/৪৭।  

মঙ্গলবার, ২২ মার্চ, ২০১৬

মুজিজাহ


<3 <3 #মুজিজাহ <3 <3
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর প্রেরিত দূত এবং একজন সত্য নবী, এরপক্ষে অনেক মুজিজাহ (অলৌকিক ঘটনা) রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনে সবচাইতে বড় মুজিজা হচ্ছে ক্বুরানুল কারীম। আফসোসের বিষয় হচ্ছে, আমরা অধিকাংশ মুসলমানেরাই জানিনা বা বুঝিনা, ক্বুরানের মাঝে আশ্চর্যের বিষয় এমন কি আছে? কাফেরদেরকে বুঝাবো তো পরের কথা! এমনকি আমরা ক্বুরান খুলে দেখতেও চাইনা, এর মাঝে কি লিখা আছে। যাই হোক,  ক্বুরান ছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জীবনে আরো অনেক আশ্চর্যজনক ঘটনা তিনি তাঁর সংগী সাথী এবং কাফের মুশরেকদের দেখিয়েছিলেন, যা নিঃসন্দেহেভাবে তাঁর নবুওতের প্রমান করে। আমি তাঁর মধ্যে থেকে কয়েকটা উল্লেখ করছি।
(১) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আঙ্গুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছিলোঃ
আনাস ইবন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, একবার মক্কাবাসী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে তার নবুওয়াতের নিদর্শন দেখানোর দাবী জানাল। তিনি তাদেরকে চাঁদ দুই খণ্ড করে দেখালেন। এমনকি তারা সকলেই চাঁদের দুইখণ্ডের মাঝখানে হেরা পাহাড়কে দেখতে পেল।
আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন চাঁদ দ্বিখন্ডিত হয়, তখন আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সঙ্গে ছিলাম। তিনি আমাদেরকে বললেন, তোমরা সাক্ষী থাক। তখন আমরা দেখলাম চাঁদের একটি খণ্ড হেরা পাহাড়ের দিকে চলে গেল। [সহীহ বুখারীঃ ৩৮৬৮-৭১]
এটা কেয়ামতের একটা লক্ষনের অন্তর্ভুক্ত, এনিয়ে ক্বুরানুল কারীমেও বলা হয়েছে।
বিসমিল্লাহ-হির রাহমানির রাহীম। কেয়ামত খুব কাছে চলে এসেছে এবং চাঁদ দুই ভাগ হয়েছে। [সুরা আল-ক্বামারঃ ১]
(২) মুসলমানদের প্রথম জিহাদ, বদরের যুদ্ধে একজন সাহাবীর চোখে তীর লেগে তাঁর একটা চোখ খুলে মাটিতে পড়ে যায়। তিনি তাঁর সেই চোখ হাতে করে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে নিয়ে আসলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরজন্যে তাঁকে পরকালে পুরষ্কারের সুসংবাদ দিলেন। কিন্তু সাহাবী নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে তাঁর চোখ ফিরে যাওয়া কিনা, একথা জানতে চাইলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুলে যাওয়া সেই চোখটিকে সাহাবীর চোখে ধরে লাগিয়ে দিলেন, আর সেই সাহাবী অমনি সেই চোখে আবার দেখতে শুরু করলেন সুবহানাল্লাহ! শুধু তাইনা, তিনি তাঁর বাকি জীবনে সেই চোখ দিয়ে অন্য চোখের চাইতে বেশি দেখতেন! [আর রাহীখুল মাক্বতুম]
(৩) একবার এক জিহাদের লম্বা সফরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবাদের কাফেলাতে কোন পানি ছিলোনা। এদিকে তাঁরা তখন মরুভূমির মাঝখানে, কোন জায়গা থেকে যে পানি সংগ্রহ করবেন, সেই সুযোগ নেই। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে একটা পানির পাত্র আনতে বললেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেই পানির পাত্রে তাঁর মুবারক হাত রাখলেন, আর তাঁর আংগুলগুলো থেকে অঝোর ধারায় ঝরণা বা পানির ট্যাপের মতো পানি বের হতে লাগলো। এইভাবে পানি সমস্ত কাফেলার লোকদের জন্যে যথেষ্ঠ হয়ে গেলো।

(৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনাতে আসলেন তখন মসজিদে প্রথমে গাছের একটা কান্ড রাখা ছিলো, যার বিপরীতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে তিনি জুমুয়াহর খুতবা দিতেন। পরে যখন তাঁর জন্যে একটা মিম্বার বানিয়ে দেওয়া হলো, তিনি তাঁর উপরে দাঁড়িয়ে খুতবাহ দিতেন, যার ফলে সেই গাছের কান্ডটাকে একপাশে সরিয়ে দেওয়া হলো। তিনি যখন প্রথমদিন এইভাবে জুমুয়াহর খুতবাহ দিতে শুরু করলেন, হঠাৎ করে সমস্ত সাহাবারা শুনতে পেলেন, সেই গাছের কান্ডটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহচর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখে ছোট বাচ্চার মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না শুরু করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিষয়টা বুঝতে পেরে মিম্বার থেকে নেমে এসে গাছটাকে আদর করে জড়িয়ে ধরলেন, এরপরে সেই গাছটা কান্না থামালো। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি! কি আশ্চর্যের বিষয়!! নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহচর্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার দুঃখে বিবেক বুদ্ধিহীন সামান্য একটা গাছও কান্না শুরু করে দিলো! আর সেই নবীকে হারানোর বেদনায়, কাছ থেকে না দেখতে পাওয়ার বেদনায়, আমাদের কতটুকু দুঃখবোধ করা উচিৎ?
আসুন আমরা সকলেই পড়িঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া-লা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া-লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া-লা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারা-কতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া-লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।

প্রশ্ন উত্তর

নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়েছেন শায়খ আব্দুল হামীদ মাদানীঃ
(১) পানি ব্যবহার করা উত্তম, ,কিন্তু পানি থাকা সত্বেও কেউ যদি পেশাব পায়খানার পরে টিস্যু দ্বারা নাপাকী দূর করে হবে কিনা? এটা অনেকেই করে।
উত্তরঃ নাপাকী দূর হয়ে গেলে জায়েজ হবে।
(২) সুরা মুলকের ফযীলত পাঔয়ার জন্যে কি রাতেই পড়তে হবে নাকি দিনে রাতে যেকোণ এক সময়ে পড়লে হবে?
উত্তরঃ দিনে রাতে যেকোন এক সময়েই পড়লে হবে...শোবার সময় পড়া সুন্নত।
(৩) ইমাম ইবনে তাইমিয়া, শায়খ বিন বাজ নারীদের ঋতু অবস্থায় কুরান পড়া বৈধ বলেছেন। কোন নারী এই ফতোয়া মানলে গুনাহ হবে?
উত্তরঃ হ্যা, প্রয়োজনে স্পর্শ না করে নিজে পড়তে বা অন্যদেরকে পড়াতে পারবে।
(৪) নামাযে নারীদের পা ঢাকতেই হবে? অনেক নারীই ঢাকেনা।
উত্তরঃ এনিয়ে আলেমদের মাঝে মতভেদ আছে। সন্দেহমুক্ত থাকার জন্যে ঢেকে নেওয়াই ভালো।
(৫) অনেক নারীর চুল লম্বা, উল্টা দিক থেকে মাসাহ করতে গেলে এলোমেলো হয়ে যায়।উল্টা দিক থেকে মাসাহ করা ফরয নাকি, না করলেও হবে?
উত্তরঃ চুলের উপরে হাত ফিরিয়ে সামনের দিকে নিয়ে আসবে।
____________________________
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমাদের দেওয়াঃ
১. ফরজ নামাজে যেখানে যেখানে ক্বিরাত জোরে পড়া হয়, মেয়েরা যখন ঘরে একা নামাজ পড়বে তখন কি মেয়েদেরকেও ফরজ নামাজের ক্বিরাতগুলো শব্দ করে পড়তে হবে?
উত্তরঃ কোন গায়ের মাহরাম পুরুষ না থাকলে পুরুষদের মতো জোরে কিরাত পড়ার জায়গায় নারীরাও জোরে পড়তে পারবে এবং নিজেদের কিরাত নিজেরা বা ঘরে লোকেরা শুনতে পারে। অবশ্য গায়ের মাহরাম পুরুষ থাকলে চুপে চুপে পড়তে হবে।
২. কোন অসুবিধাজনক পরিস্হিতিতে যদি মেয়েরা একা নামাজ পড়ার সময় ফরজ নামাজের ক্বিরাত জোরে পড়তে না পারে তাহলে কোন অসুবিধা হবে?
উত্তরঃ কোন অসুবিধা নেই, একাকী জোরে কিরাত পড়া নারী বা পুরুষ কারো জন্যেই ফরয নয়।
৩. ক্বিরাত শব্দ করে পড়া ফরজ, সুন্নাত নাকি ওয়াজিব?
উত্তরঃ একাকী হলে সুন্নত।
৪. মেয়েরা যখন বাসায় একা নামাজ পড়বে তখন কি ইকামত দিবে?
উত্তরঃ হ্যা দিতে পারে, তবে দেওয়া ফরয নয়।
৫. ইকামত দেয়া ফরজ, সুন্নাত নাকি ওয়াজিব?
উত্তরঃ সুন্নত।
৬. ওয়াক্ত হয়ে যাবার পর কিন্তু মসজিদে আযান দেয়ার আগেই যদি মেয়েরা ঘরে নামাজ পড়া শুরু করে তাহলে কি আযান দিয়ে নামাজ শুরু করতে হবে?
উত্তরঃ ওয়াক্ত হয়ে গেলে ওয়াক্তের প্রথম দিকে নামায পড়া বেশি সওয়াবের কাজ। আমাদের দেশের মসজিদে আযান দিতে অহেতুক দেরী করে, যা সুন্নত সম্মত নয়। তাই নারীরা ফযর, জোহর, আসর ওয়াক্তের শুরুর দিকেই পড়ে নেবে, আযান দিতে দেরী করলেও তারা পড়তে পারবে। তাদেরকে আযান দিতে হবেনা। অবশ্য এশার নামায একটু দেরী রাতের এক তৃতীয়াংশ পড়ে পড়া ভালো।
৭. যদি করতে হয় তাহলে এই আযান দেয়া ফরজ, সুন্নাত নাকি ওয়াজিব?

উত্তরঃ একটা এলাকায় একটা মসজিদে আযান দিলে বাকী সবার জন্যে যথেষ্ঠ, এরপরে বাকি সবার জন্যে সুন্নত।

শনিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৬

#রাষ্ট্রধর্ম


#রাষ্ট্রধর্ম

একজন মুসলমান চাইবে প্রতিটা জায়গায় ইসলাম মেনে চলতে, আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আদেশ ও নিষেধ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করতে। সেটা ব্যক্তি জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে কিংবা রাষ্ট্রীয় জীবনে হোক, একজন ঈমানদার সর্বদাই, সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি অনুগত থাকার জন্য অংগীকারাবদ্ধ। কখনো এমন হবেনা যে, কোন মুসলমান ইসলামের কিছু বিষয় মানবে আর কিছু বিষয়কে অস্বীকার করবে। কেউ যদি বলে, আমি আল্লাহর এই আইন মানি আর অমুক আইন মানিনা, বা বর্তমান যুগে এই আইন মানা সম্ভব না, এটা এক প্রকার কুফুরী, যা মুনাফেকীর অন্তর্ভুক্ত। আমাদের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী আইন মানা হয়না। সত্যি কথা বলতে আমাদের দেশ ও আইন-আদালত ক্বুরান ও সুন্নাহ দ্বারা নয় বরং, ইংল্যান্ডের খ্রীস্টানদের বানানো মানব রচিত আইন দ্বারা পরিচালিত হয়। তারপরেও কোন একভাবে নামমাত্র হলেও বাংলাদেশের সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম একথাটি লিখা হয়েছিলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম দেশের প্রায় ৮৫ ভাগ মানুষের পূর্ণ সমর্থনে বলবৎ ছিলো। কিন্তু কিছু মানুষ যারা ইসলাম পছন্দ করেনা, দেশের মানুষের অন্তর থেকে ইসলামকে মুছে দিতে চায়, তারা চায়না বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকুক। তারা চায়, বাংলাদেশ যেনো রাশিয়ার মতো নাস্তিক কিংবা সেকুলার (ধর্মহীন) রাষ্ট্রে পরিণত হোক। এরা আমাদের মুসলমানদের দেশ ও জনগণের শত্রু। আমাদের মুসলমানদের এমন ধর্মদ্রোহী লোকদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিৎ, তাদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সকলকে সচেতন করে তোলা উচিৎ। মানুষকে আস্তে আস্তে ঈমানহারা করে নাস্তিক বানানোর জন্যে কথিত এই সেকুলার গোষ্ঠীর ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্যে আমাদের মুসলমানদের কার্যকরী ভূমিকা পালন করা উচিৎ।  

শুক্রবার, ১৮ মার্চ, ২০১৬

শায়খ মতিউর রহমান মাদানী হাফিজাহুল্লাহর উল্লেখযোগ্য লেকচারের লিংক

বাংলা ভাষায় সঠিক আক্বিদাহ ও দ্বীন সম্পর্কে জানার জন্যে শায়খ মতিউর রহমান মাদানী হাফিজাহুল্লাহর ক্বুরান ও সুন্নাহ ভিত্তিক অনেকে ওয়াজ-লেকচার রয়েছে। তার মাঝে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য লেকচারের লিংক নিচে দেওয়া হলো, যা শ্রবণ করলে আশা করি আপনারা অনেক উপকৃত হবেন, ইন শা আল্লাহ। আমি দুয়া করি, কাবার প্রভু মহান আল্লাহ যেনো শায়খ মতিউর রহমান মাদানীর ভুল-ত্রুটি মাফ করেন, তাঁর প্রতি রহম করুন এবং তার মেহনত কবুল করে নিন, আমিন।
___________________________
কবরের আজাবের বর্ণনাঃ
https://www.youtube.com/watch?v=i_TXrN6Yypk
___________________________
কবর পূজা বনাম ইসলামঃ
https://www.youtube.com/watch?v=PTeAhPM6eLs
___________________________
ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ)
https://www.youtube.com/watch?v=rOPwyXfuZLI
___________________________
মা আয়েশাহর (রাঃ) জীবনীঃ
Part 1
https://www.youtube.com/watch?v=eTSyPoccR5s
Part 2
https://www.youtube.com/watch?v=xnOHiuCRIOs
___________________________
মরণের অবস্থাঃ
https://www.youtube.com/watch?v=LXiR3ifRxFs
___________________________
প্রচলিত বিদাতঃ
https://www.youtube.com/watch?v=IIxdTCbdarI
___________________________
কিভাবে রিযিক বৃদ্ধি করা যায়ঃ
Part 1
https://www.youtube.com/watch?v=5teyyx8y6B8
Part 2
https://www.youtube.com/watch?v=hNY6NW7tgyM
___________________________
অন্তরের ব্যাধিঃ
https://www.youtube.com/watch?v=0DhMFpvJozk
___________________________
দেওবন্দী আকিদাহ, চরমোনাই পীর পার্ট-৬
https://www.youtube.com/watch?v=GqmBZR01bVY

___________________________

বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০১৬

বিতির নামাযের পরে দুই রাকাত নফল নামাযের বিবরণ

বিতির নামাযের পরে দুই রাকাত নফল নামাযের বিবরণ
রাতে ঘুমানোর পূর্বে কেউ যদি বিতির নামায পড়ে নেয়, আর তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্যে মাঝরাতে ঘুম থেকে উঠতে পারবে কিনা ,এনিয়ে নিশ্চিত না থাকেনতাহলে বিতির নামায পড়ার পরে তাহাজ্জুদের নিয়তে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নিতে পারে। এর ফলে, সে যদি তাহাজ্জুদ পড়ার জন্যে ঘুম থেকে উঠতে না পারেন, তাহলে এই দুই রাকাত তার জন্যে যথেষ্ঠ হবে।
আল্লামাহ মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর আমল দ্বারা প্রমানিত হওয়ার কারণে বিতিরের পরে দুই রাকাত নফল নামায পড়া যায়। (এ ব্যপারে শুধুমাত্র তাঁর আমলই নয়) বরং, উক্ত দুই রাকাত নামায আদায় করার জন্যে তিনি তাঁর উম্মতকে নির্দেশ দিয়েছেন একবার সফরে থাকাকালীন অবস্থায় ইশার নামাযের পরে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, নিশ্চয়ই এই (সফরে) রাত্রি জাগরণ ভারী ও কষ্টসাধ্য। সুতরাং, তোমাদের কেউ যখন বিতির নামায পড়বে, তখন সে যেন দুই রাকাত নফল নামায পড়ে নেয়। অতঃপর, সে যদি রাতে জাগতে পারে (তাহলেতো ভালো), আর নয়তো (তাহাজ্জুদ হিসেবে) এই দুই রাকাত তার জন্যে যথেষ্ঠ হবে।  
[সহীহ ইবনে খুজাইমাঃ ১১০৬; দারেমীঃ ১৫৫৫; হাদীসটি সহীহ; সিলসিলাহ সহীহাহঃ ১৯৯৩। এছাড়াও এনিয়ে আরো দলিল রয়েছেঃ সহীহ মুসলিমঃ ৭৩৮; আবু দাউদঃ ১৩৪০; নাসাঈঃ ১৭১৮; ইবনে মাজাহঃ ১১৯১; হাদীসের সনদ সহীহ]
একটি প্রশ্নের উত্তরঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা বিতিরকে তোমাদের রাতের শেষ নামায হিসেবে নির্ধারণ করো। [সহীহ বুখারীঃ ৯৯৮; সহীহ মুসলিমঃ ৭৫১]
এখানে যেই আদেশ দেওয়া হয়েছে সেটা ঐচ্ছিক বা মুস্তাহাব হিসেবে, আবশ্যিক হিসেবে নয়। সুতরাং, কেউ যদি বিতিরকে রাতের শেষ নাময বানায় এবং এর পরে কোন ধরণের নফল নাময না পড়ে, এটা উত্তম। কিন্তু কেউ যদি চায় বিতিরের পরে অন্য নফল নামায পড়তে, এটা জায়েজ আছে। হারাম (নিষিদ্ধ) বা মাকরুহ (অপছন্দনীয়) হবেনা। এই ফতোয়া দিয়েছেনঃ
(১) ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ, দেখুন তাঁর ফতোয়ার গ্রন্থ মাজমুঃ ৩/৫১২।
() আল্লামাহ মুহাম্মদ নাসির উদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ, তাঁর তারাবীহ ও ইতিক্বাফ গ্রন্থের বিতির পরবর্তী দুই রাকাআত সালাত এর হাশিয়া।
নিয়তঃ বিতিরের পরে দুই রাকাত নফল নামাযের জন্যে আলাদা কোন নিয়ত বা দুয়া নেই। আমি ক্বিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ এর দুই রাকাত নফল নামায পড়ছি, মনে মনে এতটুকু নিয়ত বা চিন্তা করে নিলেই হয়ে যায়। এরপর অন্য নফল নামাযের মতো স্বাভাবিক নিয়মে দুই রাকাত নফল নামায পড়তে হবে
নামাযের ক্বিরাতঃ এই দুই রাকাতের প্রথম রাকাতে সুরা যিলযাল এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা কাফিরুন পড়া মুস্তাহাব[সহীহ ইবনে খুজাইমাঃ ১১০৪, মুসনাদে আহমাদঃ ২২৩০০, সিফাতু সালাতিন নাবীঃ পৃষ্ঠা ১২৪]
অনেকে মনে করেন এই দুই রাকাত নামায বসে বসে পড়তে হয়, এটা ভুল ধারণা। বরং, অন্য যেকোন নামাযের মতোই এই দুই রাকাত দাঁড়িয়ে পড়তে হয়। তবে কেউ অসুস্থ বা দুর্বল হলে ভিন্ন কথা। সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ বিনা কারণে নফল নামায কেউ ইচ্ছা করলে বসে পড়তে পারেন, কিন্তু এতে তার নামাযের সওয়াব অর্ধেক পাবেন।

আল্লাহ আমাদের সকলকে এই আমল করার তোওফিক দান করুন, আমিন।