বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১৬

লাইলাতুল ক্বদর কত তারিখে?

লাইলাতুল ক্বদর কত তারিখে?
(১) শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ তাঁর রমযান মাসের ৩০ আসর নামক বইয়ে লিখেছেন,
লাইলাতুল ক্বদর রমযান মাসের শেষ সাত দিনের মধ্যে (২৩-৩) যেকোন এক দিনে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কেননা, আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে কতিপয় সাহাবী রমযানের শেষ সাত দিনে লাইলাতুল ক্বদর স্বপ্নে দেখেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি দেখতে পাচ্ছি যে তোমাদের সবার স্বপ্ন শেষ সাত দিনের ব্যাপারে এসে একাত্মতা ঘোষণা করছে। সুতরাং, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ক্বদরের রাতকে নির্দিষ্ট করতে চায়, সে যেন শেষ সাত দিনের মধ্যে তা নির্ধারণ করে সহীহ বুখারীঃ ২০১৫, সহীহ মুসলিমঃ ১১৬৫।
অনুরূপভাবে সহীহ মুসলিমের হাদীসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা রমযানের শেষ দশ রাতে লাইলাতুল ক্বদর অন্বেষণ কর। যদি তোমাদের কেউ দুর্বল থাকে অথবা অক্ষম হয়, তাহলে সে যেন শেষ সাত রাতে সেটা খুঁজতে অপারগ না হয় সহীহ মুসলিমঃ ১১৯৫।
আর শেষ সাত দিনের বেজোড় রাতগুলোর মধ্যে ২৭-তম রাত্রিটিই লাইলাতুল ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, উবাই ইবন কাআব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, আল্লাহর কসম! আমি অবশ্যই সে রাতটিকে জানি, যে রাতটিতে কিয়াম করার (নামায পড়ার) জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন। আর তা হচ্ছে, রমযানের ২৭-তম রাত সহীহ মুসলিমঃ ৭৬২ 
(২) শায়খ মুহাম্মাদ নাসির উদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ তাঁর তারাবীহ ও ইতিকাফ নামক বইয়ে লিখেছেন,
সবচাইতে অগ্রগণ্য মত অনুযায়ী ২৭শে রমযানের রাত্রিই হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর তাঁর এই মতের পক্ষে তিনি দলিল হিসেবে নীচের এই হাদীসটিকে পেশ করেছেন।
উবাই ইবনে কাআব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, যিনি ছাড়া আর কোন (সত্য) উপাস্য নেই, সেই সত্ত্বার কসম! লাইলাতুল ক্বদর রমযান মাসেই লুক্কায়িত রয়েছ। (এ কথা বলার সময়) তিনি ইন শা আল্লাহ না বলেই কসম করলেন। তারপর বললেন, আল্লাহর কসম! সেটি কোন রাত? আমি অবশ্যই সে রাতটিকে জানিলাইলাতুল ক্বদর হচ্ছে সেই রাত, যে রাতে নামায পড়ার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেছেন। আর তা হচ্ছে, ২৭শে রমযানের রাতলাইলাতুল ক্বদরের নিদর্শন হচ্ছেঃ ঐ রাত শেষে সকালে সূর্য এমন পরিষ্কারভাবে উঠবে যে, তাঁর কোন কিরণ থাকবেনা।
অন্য একটি বর্ণনায় এটিকে তিনি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মারফূ সূত্রে বর্ণনা করছেন।

সহীহ মুসলিমঃ ৭৬২, আবু দাউদঃ ১৩৭৮, মিশকাতঃ ২০৮৮, সহীহ আবু দাউদঃ ১২৪৭। 

মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬

সিদরাতুল মুনতাহা ও রফরফ

সিদরাতুল মুনতাহা ও রফরফ
আরবী সিদরাহ শব্দের অর্থ হচ্ছে কুল বা বড়ই গাছ, আর মুনতাহা শব্দের অর্থ হচ্ছে শেষ সীমানা। সুতরাং, সিদরাতুল মুনতাহা অর্থ হচ্ছেঃ একেবারে শেষ সীমানায় অবস্থিত বড়ই গাছ। এই গাছটি সাত আসমানের উপরে, একেবারে শেষ সীমানায় অবস্থিত, যা অত্যন্ত সুন্দর ও সুসজ্জিত। এই গাছটিকে সিদরাতুল মুনতাহা বলা হয় কারণ এটা হচ্ছে আল্লাহ তাআলার আরশ ও তাঁর সমগ্র সৃষ্টির মাঝে একটা সীমানা বা বাউন্ডারী। সিদরাতুল মুনতাহার উর্ধে কোন ফেরেশতা গমন করতে পারেনা, এমনকি আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত কোন ফেরেশতাও না। সিদরাতুল মুনতাহার উর্ধে আল্লাহর আরশে মুল্লাকা অবস্থিত।
মিরাজের রাত্রিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম সিদরাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে একা রেখে চলে যান, কারণ সিদরাতুল মুনতাহার সীমানা অতিক্রম করে আরশের দিকে অগ্রসর হলে আল্লাহ তাআলার নূরে জিব্রাঈল আলাইহিস সালাম-এর ডানাগুলো পুড়ে যেত। আর তাঁর যাওয়ার অনুমতিও ছিলোনা।
আল্লাহ তাআলা যত ওয়াহী (আদেশ বা বিধানাবলী) নাযিল করেন, তা আরশ থেকে প্রথমে সিদরাতুল মুনতাহা নাযিল করা হয়। অতঃপর, সেখান থেকে ওয়াহী বহনকারী সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাদের মাধ্যমে তা দুনিয়াতে প্রেরিত হয়। অনুরূপভাবে, বান্দাদের আমলনামা সমূহ প্রথমে সিদরাতুল মুনতাহা নিয়ে আসা হয়। অতঃপর, এখান থেকে আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। ফেরেশতা বা নবী-রাসুল কেউই সিদরাতুল মুনতাহার স্থান অতিক্রম করতে পারেননি, একমাত্র আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছাড়া।
মিরাজের রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এসে সিদরাতুল মুনতাহা সম্পর্কে বলেছিলেন, আমি সিদরাতুল মুনতাহা দেখলাম। এর ফল (বড়ই) যেন হাজার নামক স্থানের (বড়) মটকার ন্যায়। আর তার পাতা যেন হাতীর কানের মতো বড়। সিদরাতুল মুনতাহার মূল থেকে চারটি ঝরনা প্রবাহিত হয়েছে। দুইটি ঝরণা ভেতরে, আর দুইটি ঝরণা বাইরে। এই (চারটি ঝরণা) সম্পর্কে আমি জিবরাঈলকে জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, ভেতরের দুইটি ঝরণা জান্নাতে অবস্থিত। আর বাইরের ঝরণা দুইটির একটি হল (ইরাকের) ফুরাত, আর অপরটি হল (মিশরের) নীল নদ।
সিদরাতুল মুনতাহা অতিক্রম করার পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রফরফ নামক একটি বাহন আরশে মুআল্লাকা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। রফরফ আরবী শব্দ, যার অর্থ হচ্ছেঃ রেশমী কাপড়, বালিশ, চাদর, মাদুর ইত্যাদি। রফরফ হল সবুজ রংয়ের গদি বিশিষ্ট একটা পালকী বিশেষ, এক প্রকার বাহন, যার মাধ্যমে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিদরাতুল মুনতাহা থেকে আরশে মুআল্লাকা গিয়েছিলেন।
অতঃপর, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এক টুকরা মেঘ আচ্ছাদিত করে ফেলে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সিজদায় লুটিয়ে পড়েন। এসময় মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার অতীব নিকটে আসেন এবং তাঁর দিকে ঝুকে পড়েন। এ সময় উভয়ের মাঝে দূরত্ব ছিল দুই ধনুক বা, দুই গজেরও কম। তখন আল্লাহ তাঁকে ওয়াহী করেন। এই ঘটনা আল্লাহ তাআলা কুরআনুল কারীমেও উল্লেখ করেছেন, অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন এবং ঝুলে গেল। তখন (তাঁদের মাঝে ব্যবধান ছিলো) দুই ধনুকের ব্যবধা বা তার চাইতেও কম। তখন আল্লাহ স্বীয় বান্দার প্রতি যা ওয়াহী (প্রত্যাদেশ) করার তা করলেন সুরা আন-নাজমঃ ৮-১০।

উল্লেখ্য, মিরাজের রাতে আল্লাহ তাআলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে যা ওয়াহী করেছিলেন, তার মাঝে অন্যতম ছিলোঃ দিনে-রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বা নামায ফরয করার বিষয়টি। প্রথমে আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছিলেন। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন এই আদেশ নিয়ে ফিরে আসছিলেন, তখন সাইয়্যিদিনা মুসা লাইহিস সালাম তাঁকে বলেন, হে মুহাম্মাদ আপনার উম্মতের লোকদের জন্যে দিনে-রাতে পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায আদায় করার বোঝা ভারী হয়ে যাবে, যার কারণে তারা তা আদায় করবেনা। সুতরাং, আপনি আল্লাহর কাছে আবার যান এবং নামায কমিয়ে নিন। এভাবে কমাতে কমাতে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ নামাযকে কমিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেন। এরপরে আরো কমানোর জন্যে আল্লাহর কাছে যেতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সংকোচ বোধ করলেন। কিন্তু আল্লাহ তাআলা তাঁর দয়াবশত আমাদের জন্যে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করলে তার জন্য প্রথমে নির্ধারিত পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাযের সওয়াব দান করবেন বলে ঘোষণা করলেন। সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী, সুবহানাল্লাহিল আযীম।  

সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬

মওদুদীর ভ্রান্ত আকিদাহ

আমাদের দেশের জামাতে ইসলামী ভক্ত অনুরাগী লোকদের শীয়া প্রেম কারো অজানা কোন বিষয় নয়। একারণে, জামাতে ইসলামীর ধর্মীয় গুরু, দেলোয়ার হোসেন সাঈদী খোমেনী নামক মুশরেক ও শয়তানকে ইমাম খোমেনি বলে সম্বোধন করতেন। জামাতে ইসলামীর প্রতি দুর্বল পত্রিকা নয়া দিগন্ততে ইরানী আলেমদের(!) সাক্ষাৎকার ছাপানো হয়। যাই হোক, অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, নিজেদেরকে সুন্নী মুসলমান দাবী করেও কেনো জামাতে ইসলামীর লোকেরা নিকৃষ্ট এই বিদাতীদের সাথে মোহব্বত রাখে। এর উৎস হচ্ছে, জামাতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী। যেহেতু জামাতে ইসলামী দলের অনুসারারীরা তাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদীর মতবাদ দ্বারাই পরিচালিত হয়, একারণে তারাও মওদুদীর মতো শিয়াদের প্রতি মহব্বত রাখে।
একবার একজন শীয়া লেখা চিঠির জবাবে সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী সাহেব বলেছিলেন, শীয়াদের জন্য জামাতে ইসলামীর দরজা কখনও বন্ধ ছিল না। আর আপনাদের কাছ থেকে এটি দাবি করছি না যে, আপনারা শীয়া আকীদাহ বা মাযহাব ত্যাগ করবেন। আর না আপনারা আমার কাছে সুন্নী মাযহাব ত্যাগ করার জন্যে দাবি করবেন। আমার সুন্নি শীয়া মুসলিম মিলে ইসলামের খিদমত করব
গ্রন্থঃ মাকাতিব, সাইয়েদ আবুল আলা মুাওদূদী। ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৬। ইসলামী পাবলিশার্স, শাহ আলম মার্কেট, লাহোর

মন্তব্যঃ উপরের বক্তব্য দ্বারা মওদুদীর আকিদাহ স্পষ্ট, সে শিয়াদেরকে তোওবা করে আহলে সুন্নাহর আকিদাহ গ্রহণ করতে দাওয়াত দেয়না। বরং, সে এতেই খুশি যে, শিয়ারা তার দলে যোগ দিবে, যদিও তারা অন্তরে নিকৃষ্ট কুফুরী ও শিরকি আকিদাহ পোষণ করবে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে শত্রুতা পোষণ করবে।  

শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬

লাইলাতুল ক্বদর সম্পূর্ণ

সুরা আল-ক্বদর
উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম। বিসমিল্লাহির-রাহমানির রাহীম।
(১) আমি কুরআনকে নাযিল করেছি ক্বদরের রাতে।
(২) তুমি কি জান, ক্বদরের রাত কী?
(৩) ক্বদরের রাত হাজার মাসের চাইতেও উত্তম।
(৪) এ রাতে ফেরেশতা আর রূহ (জিব্রাঈল আঃ) তাদের রব্বের অনুমতিক্রমে প্রত্যেক কাজে অবতীর্ণ হয়।
(৫) (এ রাতে বিরাজ করে) শান্তি আর শান্তি, ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত।
আয়াত ১-৫।
______________________
লাইলাতুল ক্বদর কোন দিনে, এ্টা আল্লাহ আমাদেরকে নিশ্চিতভাবে জানান নি। তবে বিভিন্ন হাদীস সমূহ একত্রিত করে এতোটুকু বলা যায়ঃ লাইলাতুল ক্বদর রমযান মাসের শেষ দশ দিনের যেকোন এক বেজোড় রাত্রিতে রয়েছে। অর্থাৎ, রমযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখ রাতে। এর মাঝে কোন কোন আলেম মনে করেন, এটা ২৭ তারিখের রাতে রয়েছে। কিন্তু এটার উপরে নির্ভর করা নিরাপদ নয়। ২৭ তারিখে লাইলাতুল ক্বদর আশা করে সেইদিন ইবাদতের ব্যপারে বেশি জোর দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু, রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপদেশ অনুযায়ী রমযানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ বা ২৯ তারিখে - এই সবগুলো রাতেই লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করতে হবে।
আমাদের দেশে এবার ২১শে রমযানের রাত্রি হচ্ছে আগামী ২৬শে জুন, রবিবার রাতে। সে হিসাবে বেজোড় রাত্রিগুলোতে ইবাদতের ব্যপারে যত্নশীল হতে হবে।
______________________
লাইলাতুল ক্বদরের রাতটি চেনার কিছু আলামত সহিহ হাদীসে পাওয়া যায়। তা নিন্মরুপঃ
(১) রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
(২) নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
(৩) মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।
(৪) সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
(৫) কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
(৬) ঐ রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
(৭) সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত।
সহীহ ইবনু খুযাইমাহঃ ২১৯০, সহীহ বুখারীঃ ২০২১, সহীহ মুসলিমঃ ৭৬২।
______________________
লাইলাতুল ক্বদরে যেই আমলগুলো করতে হবেঃ
(১) নামাযঃ দুই রাকাত, দুই রাকাত করে তারাবীহ বা তাহাজ্জুদের নামায পড়বেন। এই নামাযে সুরা ক্বদর বা সুরা ইখলাস এতোবার পড়তে হবে, এমন কোন ধরাবাঁধা নিয়ম নেই। অন্য যেকোনো নফল নামাযের মতোই দুই রাকাত নফল নামায পড়বেন। চেষ্টা করবেন দীর্ঘ কিরাতে নামায লম্বা করার জন্য। বড় সুরা না পারলে এক রাকাতে ছোট সুরা ২-৩টা পড়ে বড় করা যাবে।
নিচের আমলগুলো ঋতুবতী নারীসহ সকলেই করতে পারবেনঃ
(২) কুরআন তেলাওয়াত। আরবী কুরান স্পর্শ না করে ঋতুবতী নারীরা মুখস্থ অথবা বাংলা অর্থ দেওয়া আছে এমন কুরান থেকে, মোবাইল থেকে বা হাতে রুমাল বা কাপড় দিয়ে স্পর্শ করে কুরআন পড়তে পড়তে পারবে, আলেমদের এই মতটাই সঠিক। তবে সন্দেহের কারণে কেউ ক্বুরান তেলাওয়াত করতে না করতে চাইলে, অথবা যেই সমস্ত আলেম ঋতুবতী নারীদের কুরান তেলাওয়াত হারাম মনে করেন, এটার সাথে একমত হলে, কুরানের তাফসীর, হাদীস, দ্বীনি অন্যান্য বই-পুস্তক পড়তে পারেন।
(৩) তোওবাহঃ সারা জীবনের সমস্ত গুনাহর জন্য কান্নাকাটি করে তোওবা করা ও মাফ চাওয়া। বাংলা বা আরবী যেকোনো ভাষায়, অতীতের ভুলের জন্য লজ্জিত হয়ে আন্তরিকভাবে ভবিষ্যতে আর না করার সংকল্প নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আরবীতে করতে চাইলে - আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আতুবু ইলাইহি হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি ও তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করছি, এতোটুকু পড়ে বা ক্বুরান হাদীসে বর্ণিতে অন্য দুয়া দিয়ে তোওবা করা যাবে।
(৪) দুনিয়া ও আখেরাতের সমস্ত কল্যানের জন্য দুয়া করা। নিজের জন্য, মাতা পিতা বা ভাই বোন, স্ত্রী-সন্তান ও জীবিত ও মৃত সমস্ত মুসলমানদের জন্য দুয়া করতে হবে।
(৫) জান্নাতুল ফিরদাউস পাওয়ার জন্য দুয়া করতে হবে।
(৬) যিকির আযকারঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ১০০বার, ৩৩ বার সুবাহানাল্লাহ, ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ, ৩৪ বার আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহাদাহু লা শারীকালাহু...... ১০ বার বা ১০০ বার করে সহ, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। আরো দুয়া পড়ার জন্য হিসনুল মুসলিম দেখুন। মুখস্থ না পারলে বই খুলে পড়তে পারবেন। আরবী দুয়াগুলো না পারলে বাংলাতেই পড়ুন।
(৭) দুরুদঃ দুরুদের ইব্রাহীম বা নামাযে যেই দুরুদ পড়া হয় সেটা পড়াই সবচাইতে বেশি সওয়াব। আর দুরুদের হাজারী, লাখী, জামিল, মাহী, দুরুদে আকবর এইরকম যত্তগুলো দুরুদ দেওয়া আছে ওযীফার বেদাতী কিতাবে এইসবগুলো দুরুদ হচ্ছে বানোয়াট বেদাতী দুরুদ, এর ফযীলত যা দেওয়া আছে সমস্তটাই হচ্ছে ধোঁকা। এইগুলো পড়া বেদাত ও হারাম।
(৮) সাধ্যমতো কিছু দান-সাদাকাহ করতে পারেন। দান ছোট হোক, কোনটাই কম নয়, এমনকি হাদীস শুকনো একটা খেজুর দান করে হলেও জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্যে চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।
(৯) জাহান্নামের আগুনের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্যে ফকীর মিসকীনকে খাদ্য দেওয়া অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ একটা ইবাদত, সুতরাং শবে কদরের রাতে সম্ভব হলে গরীবকে খাবার দিতে পারেন।
______________________
লাইলাতুল কদরের বিশেষ দুয়াঃ
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দুয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি বলঃ
আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুব্বুন তুহিব্বুল্ আফওয়া ফাঅফু আন্নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা করতে তুমি ভালোবাস। সুতরাং, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
মুসনাদে আহমদঃ ৬/১৮২।
______________________
শবে কদরের একটি রাতে এই রকম ইবাদতের মাধ্যমে আপনি ৮৩ বছর ৪ মাসের ইবাদতের চাইতে বেশি সওয়াব অর্জন করতে পারেন। ইবাদতের এই সুবর্ণ সুযোগ যেন হাত ছাড়া না হয়। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।

রবিবার, ১৯ জুন, ২০১৬

মা দিবস, বাবা দিবস, জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস পালন করা জায়েজ নয়

(৯০) মাতৃ দিবসের উৎসব পালন করার হুকুম কি?
ইসলামী শরীয়তে যে ঈদ রয়েছে, তা ব্যতীত সকল প্রকার ঈদ বা উৎসব পালন করা বিদ্‌আত, যা সালাফে সালেহীনের যুগে ছিলনা। হতে পারে এটি অমুসলিমদের কাছ থেকে আমদানী করা। তাই এতে অমুসলিমদের সাথে সদৃশ্য থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মুসলমানদের ঈদ মাত্র দুটি। ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। তাছাড়া সপ্তাহিক ঈদ হল শুক্রবার। এই তিনটি ঈদ ব্যতীত মুসলমানদের অন্য কোন ঈদ নেই। এছাড়া যত ঈদ রয়েছে, ইসলামী শরীয়তে সবই বিদ্‌আত এবং প্রত্যাখ্যাত এবং বাতিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ
যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন নতুন বিষয় তৈরী করবে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত হবে। তিনি আরো বলেনঃ
যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করবে, যে বিষয়ে আমার অনুমোদন নেই, তা প্রত্যাখ্যাত। সুতরাং প্রশ্নে বর্ণিত উৎসব পালন করা বৈধ নয়। এতে ঈদের মত আনন্দ প্রকাশ এবং উপহার বিনিময় করাও বৈধ নয়। মুসলমাদের অবশ্য কর্তব্য তাদের দ্বীন নিয়ে গর্ববোধ করা। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল কর্তৃক নির্ধারিত সীমার মধ্যে থাকা। আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাদের জন্য যে দ্বীন মনোনীত করেছেন, কোন প্রকার বাড়ানো বা কমানো ছাড়াই তার অনুসরণ করা। প্রত্যেক মতবাদ এবং আহবায়কের পিছনে ছুটে যাওয়া মুসলমানদের উচিৎ নয়। বরং তার উচিৎ আল্লাহর দ্বীন মোতাবেক জীবন গঠন ও পরিচালনা করা। অন্য ধর্মের কাউকে অনুসরণ না করা; বরং মানুষই তার অনুসরণ করবে এবং সে হবে তাদের জন্য আদর্শ স্বরূপ। কারণ ইসলামী শরীয়তকে সকল দিক থেকে পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন,
আজকের দিনে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম। তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম। (সূরা মায়েদাঃ ৩) বছরে মাত্র একবার মাতৃ দিবস পালন করাই যথেষ্ট নয়। বরং সন্তানের উপর মায়ের রয়েছে অনেক হক, যা আদায় করা একান্ত জরুরী। আল্লাহর অবাধ্যতা ব্যতীত সকল ক্ষেত্রে মায়ের আনুগত্য করতে হবে। এর জন্য কোন স্থান বা সময় নির্ধারণ করার প্রয়োজন নেই।
(৯১) সন্তানদের জন্ম দিবস উপলক্ষে উৎসব পালন করা এবং বিবাহ উপলক্ষে উৎসব পালন করার হুকুম কি?
ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এবং সপ্তাহের ঈদ শুক্রবার ব্যতীত ইসলামে কোন ঈদের অস্তিত্ব নেই। অনুরূপভাবে আরাফা দিবসকে হাজীদের ঈদ হিসেবে নাম রাখা হয়েছে। ঈদুল আযহার পরের তিন দিনও ঈদ হিসেবে পরিচিত কোন মানুষের জম্ম দিবস পালন করা বা তার সন্তানের জম্ম দিবস পালন করা অথবা বিবাহ উপলক্ষে প্রতি বছর ঈদ বা উৎসব পালন করা শরীয়ত সম্মত নয়; বরং বিদ্‌আতের নিকটবর্তী বরং এসমস্ত কাজ বিধর্মী খৃষ্টানদের অনুসরণ ছাড়া অন্য কিছু নয়।
উৎসঃ ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ঈমান অধ্যায়

ফতোয়া দিয়েছেনঃ সম্মানিত শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ। 

স্বর্ণের যাকাত কিভাবে হিসাব করতে হবে?

স্বর্ণের যাকাত কিভাবে হিসাব করতে হবে?
কারো কাছে যদি ৭.৫ ভরি বা তার থেকে বেশি পরিমান স্বর্ণ অথবা ৫২.৫ ভরি বা তার থেকে বেশি পরিমান রূপা পূর্ণ এক চন্দ্র বছর জমা থাকে, তাহলে তাকে সেটার মোট মূল্যের ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা, শতকরা ২.৫ টাকা (প্রতি ১০০ টাকায় ২.৫ টাকা) হারে যাকাত দিতে হবে।
উদাহরণঃ যেমন ধরুন, কারো কাছে ১০ ভরি স্বর্ণ আছে। এটা নিসাবের পরিমানের থেকে বেশি, তাই তাকে যেইভাবে হিসাব করতে হবেঃ
১০ * প্রতি ভরি স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্য * ০.০২৫ = যেই টাকা আসবে, সেই পরিমান টাকা তাকে যাকাতের খাতগুলোতে ব্যয় করতে হবে।
অনুরূপভাবে রূপার বা ক্যাশ টাকার যাকাত হিসাব করতে হবে (মোট মূল্য * ০.০২৫ =...টাকা)।
এবছর (৩১শে মে, ২০১৬ তারিখ অনুযায়ী) ২১ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরি মূল্য হচ্ছে ৪৩,৮৫৬ টাকা।
সে হিসেবে,
(১) ২০% মূল্য বাদ দিয়ে আপনার হাতে যে স্বর্ণ আছে তার বিক্রয় মূল্য = ৪৩৮৫৬*০.৮০= ৩৫,০৮৫ টাকা।
(২) ২.৫% হারে ১ ভরি স্বর্ণের যাকাত আসবে = ৩৫,০৮৫ * ০.০২৫ = ৮৭৮ টাকা (প্রায়)
যার কাছে সাড়ে সাত ভরির বেশী আছে, তিনি ৮৭৮ এর সাথে মোট যত ভরি সেটা গুণ করলেই কত টাকা যাকাত দিতে হবে সেটা পেয়ে যাবেন।
কয়েকটি মাসয়ালাঃ
=> নিসাব পরিমান স্বর্ণ, রূপা, ক্যাশ টাকা পূর্ণ এক বছর না হওয়া পর্যন্ত যাকাত দেওয়া ফরয হবেনা। যেইদিন বছর পূর্ণ হবে সেইদিন যাকাত দেওয়া ফরয হবে। রমযান মাসে যাকাত দিতে হবে এমন কোন কথা নেই, যার উপর যেইদিন যাকাত ফরয হবে তখনই যাকাত দিতে হবে। উল্লেখ্য, বছর গণনা করতে হবে চাঁদের হিসাব অনুযায়ী, সৌর বৎসর নয়।
=> যাকাত পুরো সম্পদের উপরেই দিতে হয়। অনেকে মনে করে নিসাব পরিমানের উপরে যেটা হয়, শুধুমাত্র সেই পরিমানের উপরে যাকাত দিতে হয় এটা ঠিকনা।
=> স্বর্ণ, রূপা ও নগদ টাকার নিসাব আলাদা আলাদা হিসাব করা হবে, একসাথে করে যাকাত দিতে হবেনা। অর্থাৎ, কারো কাছে ৬ ভরি স্বর্ণ আর ৪৮ তোলা রুপা আছে, তাহলে তাকে দুইটার মূল্য যোগ করে একসাথে নিসাব হিসাব করে যাকাত দিতে হবেনা। কারণ, দুইটার নিসাব আলাদা, তাদের হিসাবও আলাদা হবে।
=> মেয়ে বা মা, বোনদের যদি মালিক করে গয়না উপহার দেওয়া হয়, তাহলে তাদের প্রত্যেকের হিসাব আলাদা হবে। যেমন ধরুন, ৩ বোনের মিলে ৭.৫ ভরি বা তার বেশি ১০/১৫ ভরি স্বর্ণ হয়, কিন্তু এককভাবে কারোরই যদি ৭.৫ ভরি স্বর্ণ না হয়, তাহলে কাউকেই যাকাত দিতে হবেনা। তবে, কেউ যদি নিজের মেয়েদের স্থায়ী মালিক না করে, গয়নাগুলো শুধু ব্যবহার করতে দেয়, তাহলে সবগুলো মিলিয়ে ৭.৫ ভরি বা তার বেশি হলে তার সম্পূর্ণটার উপরে তাকে যাকাত দিতে হবে।

=> নারীরা যেই গহনাগুলো ব্যবহার করেন, সেইগুলোর উপরেও যাকাত দিতে হবে। 

শনিবার, ১৮ জুন, ২০১৬

অনুপ্রেরণাদায়ী ঘটনাঃ ইস্তিতগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা
একবার প্রখ্যাত তাবেয়ী, হাসান আল-বাসরী রাহিমাহুল্লাহর নিকট এক ব্যক্তি এসে বললো, আমাদের এখানে খরা এবং অনাবৃষ্টি শুরু হয়েছে। আমরা কি আমল করলে আল্লাহ আমাদেরকে বৃষ্টি দেবেন? হাসান আল-বাসরী তাকে বললেন, তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো
আরেক ব্যক্তি এসে তার দারিদ্রতার কথা বললো এবং কি আমল করলে আল্লাহ তাকে সম্পদ দেবেন, সেটা জানতে চাইলো। হাসান আল-বাসরী তাকে উপদেশ দিলেন, তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো  
তৃতীয় এক ব্যক্তি এসে জানতে চাইলো, মার কোন ছেলে-মেয়ে নেই। কোন দুয়া পড়লে আল্লাহ আমাকে একটি সন্তান দেবেন। হাসান আল-বাসরী তাকে উপদেশ দিলেন, তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো
চতুর্থ একব্যক্তি এসে বললো, যে তার বাগানে ফসল হচ্ছে না। তিনি তাকে উপদেশ দিলেন, তুমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো
এভাবে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে হাসান আল-বাসরী রাহিমাহুল্লাহ সবাইকে একই উত্তর দিচ্ছেন, এটা দেখে উপস্থিত লোকেরা আশ্চর্য হয়ে তাঁর নিকট এর ব্যাখা জানতে চাইলো। হাসান আল-বাসরী রাহিমাহুল্লাহ বললেন, এটা আমার মনগড়া কোন মতামত নয় কেননা, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তালা সুরা নূহে এরশাদ করেছেন, আর তোমরা তোমাদের রব্বের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিসন্দেহে আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (যদি তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো তাহলে) আল্লাহ তোমাদের উপর অঝোর ধারায় বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, এবং তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান সন্ততি দিয়ে সাহায্য করবেন, তোমাদের জন্যে বাগ-বাগিচা ও উদ্যান স্থাপন করবেন, তিনি সেখানে নদীনালা প্রবাহিত করবেন। (সুরা নূহঃ আয়াত ১০-১২)  
উৎসঃ তাফসীর আল-কুরতুবীঃ ১৮/৩০১-৩০২।
একজন হাদীসের বর্ণনাকারীর কাছে জানতে চাওয়া হল, ইস্তেগফার বা আল্লাহর কাছে কি বলে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে? এর উত্তরে তিনি বললেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন আস্তাগফিরুল্লাহ, আস্তাগফিরুল্লাহ

অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। সহীহ মুসলিম

গালি দেওয়া ভারী মজা?

গালি দেওয়া ভারী মজা?
কিছু মানুষ আমাকে গালি গালাজ করে ব্যপক মজা পায়, এমনকি সংযমের এই রমযান মাসেও তারা থেমে থাকেনি। অবশ্য আমি এতে রাগ করিনা বা কষ্ট পাইনা, বরং খুশি হই। সত্যি কথা বলতে, আমাকে গালি দেওয়া যদি কোন হারাম কাজ না হতো, তাহলে আরো বেশি গালি দেওয়ার জন্যে আমি তাদেরকে উৎসাহিত করতাম। কারণ, তারা নামায রোযা করবে, আর আমাকে গালি দিয়ে ফ্রী ফ্রী কিছু সওয়াব তারা আমার আমলনামায় হাদিয়া হিসেবে দিয়ে যাবে (ইন শা আল্লাহ)।
=> গালিবাজ লোকদের উদ্দেশ্যে শায়খ মুক্ববিল বিন হাদী রাহিমাহুল্লাহর মতো আমিও বলতে চাই,
আমার শত্রুরা আমার বিরুদ্ধে যা বলতে চায় বলুক, কারণ আমার পাপ অনেক। আমি আশা করি তাদের গীবতের কারণে আমার পাপকে হালকা করা হবে, আর তাদের উপর সেই পাপের বোঝা চাপানো হবে।
=> যে কোন মুসলমানকে গালি দেয়, সে একজন ফাসেকঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদেরকে গালমন্দ করা ফাসেকী, আর তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা কুফরী। সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
=> যে কোন মুসলমানকে কাফের বলে, সে নিজেই কাফেরঃ
কছু অহংকারী লোককে এই হাদীস দিলে তারা আমাকে কাফের বা মুনাফেক বলে। নাউযুবিল্লাহি মি্ং যালিক, তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই হাদীস পেশ করছি,
যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে, তাহলে তা দুইজনের যেকোন একজনের দিকে ফিরবে। যদি সে যা (কাফের) বলেছে বাস্তবে তাই হয়, তাহলেতো ঠিক আছে। আর সে যদি কাফের না হয় তাহলে উক্ত বিষয়টি (কুফুরী) যে বলেছে, তার দিকেই ফিরে আসবে। সহীহ মুসলিমঃ ২২৫।
=> ইসলামের কথা, ক্বুরান ও হাদীসের কথা শুনলে যারা কটুক্তি করে, মিথ্যা অপবাদ দেয়, তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটা হাদীস পেশ করছি, যে ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তি সম্পর্কে এমন কটূক্তি করবে, যা তার মাঝে প্রকৃতপক্ষে নেই, আল্লাহ তাকে রাদগাতুল খাবাল তথা জাহান্নামীদের গলিত রক্ত-পূজের স্তুপে বসবাস করাবেন। আবূ দাউদ, বিচার অধ্যায়, ৩১২৩ নং হাদীস।
=> সর্বশেষ, কুরআন ও হাদীসের কথা বললে, আহলে সুন্নাহর মহান পথের অনুসরণ করলে, মনপূজারী ও বিদাতী লোকেরা গালি দিবে, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, এ ব্যপারে আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।
শায়খ আব্দুল কাদের জীলানী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যুঃ ৫৬১ হিজরী) বলেছেন,
বিদআতীদের লক্ষণ হচ্ছে আহলে হাদীসদের গালি দেওয়া এবং তাদেরকে বিভিন্ন খারাপ নামে সম্বোধন করা। এগুলি সুন্নাতপন্থীদের বিরুদ্ধে তাদের দলীয় বিদ্বেষ ও অন্তঃর্জ্বালার বহিঃপ্রকাশ ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্য কোন নাম নেই, একটি নাম ছাড়া। আর সেটি হচ্ছে আসহাবুল হাদীছ বা আহলে হাদীস। গুনিয়া-তুত্তালিবিনঃ ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৯০।



Be Aware of Extreme Criticizers

________________________
________________________
(1) Golden Advice by Shaykh Sãlih as-Suhaymi from the Prophet’s Masjid ()
https://www.youtube.com/watch?v=nlI9c6SJh50
________________________
(2) This talk was given in this January, 2016
Shaykh Saalih as-Suhaymee - Criticising People MUST LISTEN
https://www.youtube.com/watch?v=QhMfQSZpG8o
________________________
(3) Advice To The Salafis of the UK & the US - Sheikh Muhammad Ibn Rabee Al-Madkhali
https://soundcloud.com/ulamaaudio/advice-to-the-salafis-of-the-uk-the-us-sheikh-muhammad-ibn-rabee-al-madkhali
________________________
(4) Find a better Khateeb! by Sh Saalih bin Fawzaan Al Fawzaan
https://www.youtube.com/watch?v=d03xQamme98
________________________
(5) Advice To The Callers Of America And Britain By Shaykh Khalids Uthmans al-Misri
Audio
https://soundcloud.com/salafievents/shaykh-hasan-al-banna-on-shaykh-khalids-advice-to-the-callers-of-america-and-the-uk
Transcript
http://www.salafievents.com/advice-to-the-callers-of-america-and-britain
________________________
(6) Shaykh Hassan Abdul Wahab al-Banna Supports Shaykh Khalids Uthmans Statement
http://www.salafievents.com/new-shaykh-hassan-abdul-wahab-al-banna-supports-shaykh-khalids-uthmans-statement
________________________
________________________