রবিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৬

পথভ্রষ্ট সেলেব্রিটি বক্তাঃ ইয়াসির ক্বাদী

পথভ্রষ্ট সেলেব্রিটি বক্তাঃ ইয়াসির ক্বাদী
(১)
আজকাল অনেক নারী ও পুরুষেরা দ্বীন শেখার জন্যে বিদাতী কিংবা মনপূজারী কিন্তু জনপ্রিয়, এমন বক্তাদের কথা শুনে বা তাদের লেখা পড়ে। আর তারা বলেঃ আমরা মানুষের ভালোটা নেই আর খারাপটা বর্জন করি। অথচ, বিদাতপন্থী লোকদের কাছ থেকে দ্বীন শিক্ষা করা, তাদের সাথে উঠা-বসা করা, তাদের কথা শোনা, তাদের সাথে তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হওয়া অত্যন্ত বিপদজনক একটি বিষয়। কারণ বিদাতীরা অনেক সময় এমন কথা বলে, যা শুনতে আপাতদৃষ্টিতে যৌক্তিক বা সঠিক বলে মনে হয়, কিন্তু শরিয়তের দৃষ্টিতে আসলে তা ভুল বা গোমরাহী। এমন চাকচিক্যময়, আকর্ষণীয় কথা বা লেখার দ্বারা তারা প্রায়ই সাধারণ মুসলমানদেরকে বিদাত/গোমরাহীর দিকে আহবান করে, বা লোকদের অন্তরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করে। এইভাবে, ইলমের অভাবে অনেক সৎ মুসলিমরাও বিদাতীদের ছলনায় পড়ে সরল পথ থেকে গোমরাহ হয়ে যায়। এ ব্যপারে পূর্ববর্তী আলেমরা আমাদেরকে খুব সতর্ক করেছেন।
(ক) ফুযাইল ইবনে আইয়ায রাহিমাহুল্লাহ বলেন, তুমি কোন আহলুল বিদআহর লোকের সাথে বসবেনা। আমি ভয় করি যে, তুমি যদি কোন বিদআতির সাথে বসো, তাহলে আল্লাহর অভিশাপ তোমার উপরেও আসবে। ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
(খ) ইমাম সুফিয়ান আস-সাউরি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি একজন বিদআতির কথা শ্রবণ করে, সে আল্লাহর হেফাজত থেকে নিজেকে বের করে নিলো, এবং তাকে তার উপরেই ছেড়ে দেওয়া হবে। ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
(গ) ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, কোন বাক্তির মাঝে বিদআত প্রকাশ পেলে, তুমি তার কাছ থেকে সাবধান থেকো। কেননা, সে যা প্রকাশ করে, তা অপেক্ষা সে যা গোপন করে তা অনেক বেশী ভয়ংকর। ইমাম আল-বারবাহারী, শরাহুস সুন্নাহ।
ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেছেন, বিদআতিরা হচ্ছে বিছার মত। বিছা নিজের মাথা ও সারা দেহকে মাটিতে লুকিয়ে রাখে এবং কেবল হুলটিকে বের করে রাখে। অতঃপর যখনই সুযোগ পায়, তখনই হুল দিয়ে আঘাত করে। অনুরূপ, বিদআতি লোকেরা নিজেদের বিদআতকে লুকিয়ে রাখে। কিন্তু যখন সুযোগ পায়, তখন নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করে। তাবাকাতুল হানাবিলাহঃ ২/৪৪।
(ঘ) শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ বলেছেন, বিদাত সেটা ছোট হোক কিংবা বড়, তুমি কোনটাকে তুচ্ছ মনে করবেনা। কারণ, ছোট্ট একটা ম্যাচের কাঠি থেকে জ্বালানো আগুন দ্বারা বিশাল বড় বনও জ্বালিয়ে শেষ করে দেওয়া যায়। ঠিক তেমনি, ছোট্ট একটা বিদাত যদি কারো অন্তরে প্রবেশ করে, আস্তে আস্তে সেটা একজন ব্যক্তির সমগ্র দ্বীনকে নষ্ট করে দিতে পারে।
(২)
বিদাতীরা কিন্তু কাফের নয় বিদাতীরা মুসলমান, কিন্তু মনগড়া ইবাদত করার কারণে বা দ্বীনের ব্যপারে বানোয়াট কথা বলার কারণে তারা পাপী, পথভ্রষ্ট; যদিওবা তারা নামায পড়ে, রোযা রাখে, কুরআন ও হাদীস নিয়ে অনেক বড় বড় কথা বলে। আমাদের আলেমদের দৃষ্টিতে মুসলমান কিন্তু বিদাতী, এমন ব্যক্তিদের কাছ থেকে দ্বীন শেখা যদি এতো মারাত্মক বিষয় হয়, তাহলে চিন্তা করুনঃ একজন ইয়াহুদী বা খ্রীস্টান, একজন কাফের, কিংবা একজন নাস্তিকের কাছ থেকে কেউ যদি ইসলাম শিখতে যায়, দ্বীনের কোন বিষয়ে ডিগ্রী নিতে যায়, তাহলে তার ঈমান-আকিদাহর কি মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে? কারণ, কাফেররা কোনদিন মুসলমানদের ভালো চায়না। কাফেররা ইসলামের উপরে ডিগ্রী দিচ্ছে, তার মানে এর পেছনে তাদের বিশেষ কোন উদ্দেশ্য আছে। যদিও তারা মুখে দাবী করে, আমরা ইসলামের উপরে ডিগ্রী দিচ্ছি, কিন্তু এর দ্বারা তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের অধীনে অধ্যায়নরত ছাত্র-ছাত্রীদেরকে দ্বীন থেকে বিচ্যুত করা। এটা কাফেরদের মজ্জাগত স্বভাব, যে ব্যপারে আল্লাহ তাআআলা কুরআনে আমাদেরকে সাবধান করেছেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন হে ঈমানদারগণ! তোমরা তোমাদের আপনজন (মুসলিম) ব্যতীত অন্য কাউকে (কোন কাফের ব্যক্তিকে) অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা (কাফেরা) তোমাদের অনিষ্ট সাধনে চেষ্টার কোন ত্রুটি করবে না। তোমরা যাতে বিপদে পড়ো, তারা সেটাই কামনা করে। তাদের মুখে সেই বিদ্বেষ প্রকাশ পায় এবং যা তারা তাদের অন্তরে গোপন করে রাখে, সেটা আরও ভয়ংকর। আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করছি, যাতে তোমরা বুঝতে পারো। সুরা আলে-ইমরানঃ ১১৮।
.
কাফেরদের এমনই একটা ষড়যন্ত্র হচ্ছেঃ তারা তাদের কলেজ ইউনিভার্সিটিগুলোতে ইসলামী বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রী দেয়। কাফেরদের ষড়যন্ত্রের কথা জেনেই হোক বা না জেনেই হোক, কাফের দেশে বসবাসরত অনেক মুসলিম ছেলে-মেয়েরা সেই সমস্ত ডিগ্রী নেওয়ার জন্যে ভর্তি হচ্ছে, যেখানে ইয়াহুদী/খ্রীস্টান, কাফের-মুশরেক, নাস্তিক কিংবা পথভ্রষ্ট মুসলিম বা নামে মুসলিম, কিন্তু অন্তরের দিক থেকে আসলে মুনাফেক. . .এমন লোকেরা শিক্ষা দেয়। এইভাবে দ্বীন শিখতে গিয়ে অনেকেই ভ্রান্ত আকিদাহ গ্রহণ করছে, অনেকে দ্বীনের ব্যপারে সন্দেহের মাঝে পড়ে নাস্তিক (atheist) বা সংশয়বাদী (agnostic) হয়ে যাচ্ছে। এমনই একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এমেরিকার কানাটিকাটে অবস্থিত ইয়েল ইউনিভার্সিটি, যেখানে ইসলামী আকিদাহর উপরে গবেষণা ও পিএইচডি ডিগ্রী চালু রয়েছে। অনেকে দ্বীন শিখার জন্যে নির্ভরযোগ্য ও সৎ আলেমদের কাছে না গিয়ে, সহীহ আকিদাহর অনুসারী মাদ্রাসায় ভর্তি না হয়ে, উন্নত জীবন-যাপনের সুবিধা পাওয়ার জন্যে, কাফেরদের কাছ থেকে ডিগ্রী পাওয়ার লোভে কাফেরদের দ্বারা পরিচালিত সেই সমস্ত ইউনিভার্সিটিতে দ্বীন শিখতে বা দ্বীন নিয়ে গবেষণা করতে যাচ্ছে। সেখানে কাফেররা ইসলামের যেই সমস্ত বিষয় নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে বা প্রশ্ন তুলে, সেই সমস্ত বিষয় দ্বারা তারা তাদের ছাত্রদের অন্তরে কুফুরী ও মুনাফেকীর বিষ ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কাফেরদের শুবুহাত (সন্দেহ) বা প্রশ্নের সঠিক উত্তর না জানার কারণে সেই সমস্ত ছাত্রদের অনেকে কাফের বা সংশয়বাদী হয়ে যাচ্ছে, অথবা কাফেরদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে তারা ইসলামকেই পরিবর্তন করে ফেলছে।
এতক্ষণ আমি যা বললাম তার প্রমান দেখুনঃ নীচের এই ভিডিওতে ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রী নেওয়া, একসময়ের পীস টিভি বক্তা ডা. ইয়াসির ক্বাদী নিজের মুখে স্বীকার করছেঃ তার ইউনিভার্সিটিতে ইসলামী বিষয় পড়তে গিয়ে অনেক মুসলিম নাস্তিক বা এগনস্টিক হয়ে গেছে, অনেকে দ্বীনের মৌলিক বিষয়কে অস্বীকার করছে, যা তাদেরকে কাফের বানিয়ে দেওয়ার জন্যে যথেষ্ঠ। এমনকি খোদ ইয়াসির ক্বাদীও এমন কিছু শুবুহাত (দ্বীনের ব্যপারে সন্দেহের) শিকার হয়েছেন যে, সেইগুলোর উত্তর তিনি জানেন না।
সতর্কতাঃ ভিডিওটাতে পর্দার লংঘন করে একজন মহিলাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। সেজন্যে ভাইয়েরা এই ভিডিওটা অন করার সময় অন্য ট্যাব অন করে রাখবেন, অথবা ব্রাউজার মিনিমাইজ করে রাখবেন, যাতে করে বেপর্দা মেয়ে মানুষকে দেখতে না হয়। নারীদের অসংগতভাবে প্রদর্শন করার দোষ আসলে তাদের যারা অনুষ্ঠানটি আয়োজন করেছে, এবং বক্তা সাহেবের, যারা দ্বীনের নির্দেশনা অমান্য করে দ্বীন প্রচার করতে চায়। কোন নারীর ভিডিও প্রচার করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই, আমি ভিডিওটার লিংকটা দিয়েছে যাতে করে ডা. ইয়াসির ক্বাদীর ভক্ত নারী ও পুরুষের এই অভিযোগ করতে না পারে যে, আমি তাদের উস্তাদের নামে মিথ্যা রচনা করছি।
https://www.youtube.com/watch?v=drYvaxpejpI
.
যাই হোক প্রশ্ন আসতে পারে, ইয়াসির ক্বাদী নিজে স্বীকার করেছেন, ইয়েলের মতো ওয়েস্টার্ণ ইউনিভার্সিটিগুলোতে পড়ে অনেকে পথভ্রষ্ট হয়েছে, অনেকে দ্বীনকে পরিবর্তন করেছে, কিন্তু ইয়াসির ক্বাদী, তার নিজের কি অবস্থা?
সত্যি কথা হচ্ছে, ইয়াসির ক্বাদী নিজেও কাফেরদের শুবুহাতের স্বীকার হয়েছেন, কাফেরদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তিনি নিজেও তার আকিদাহ, তার দ্বীনকে পরিবর্তন করেছেন। একারণে, আমরা দেখতে পাই, মদীনাহ থেকে পড়া-শোনার পরে তার প্যান্ট ছিলো টাখনুর উপরে, আর এখন তার কাপড় সব সময়ে টাখনুর নীচে। পূর্বে তিনি মানুষকে কিতাবুত তাওহীদ শিক্ষা দিতেন, ঈমান-আকিদাহ শিক্ষা দিতেন আর এখন তিনি রাজনীতি, সামাজিক সমস্যা, বিদাতীদের সাথে বন্ধুত্ব, কাফেরদের প্রশংসা ও তাদের প্রতি মহব্বত রাখা, বেহায়া নারী ও পুরুষদেরকে পাবলিকলি যৌন শিক্ষা(!) দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন. . .আল্লাহু মুস্তাআন।
যাই হোক, এতো গেলো, বাইরের বিষয় সমূহ...এমনকি ইয়াসির ক্বাদীর ঈমান-আকিদাহর বিষয়েও পরিবর্তন এসেছে। ইয়াসির ক্বাদীর অন্তরে কুফুরী প্রবেশ করেছে, যা তিনি নিজে স্বীকার করেছেন। এমনকি, ইয়াসির ক্বাদী তার কুফুরী বিশ্বাস গোপনে অন্যদেরকেও শিক্ষা দিচ্ছেন, যা তিনি পাবলিকলি তার শ্রোতাদেরকে এই মুহূর্তে জানতে দিতে চান না। কারণ, মানুষ যদি এখন বুঝতে পারে যে, তার কুফুরী আকিদাহ রয়েছে, লোকেরা তার কথা আর শুনবেনা।
এ ব্যপারে ইয়াসির ক্বাদীর বক্তব্য এবং সেইগুলো নিয়ে ডিটেইলস আলোচনা করেছে ইমরান বিন মানসুর নামে একজন ব্যক্তি। লিংক
What Happens BEHIND The Scenes In The Da'wah Scene!!!
https://www.youtube.com/watch?v=Gpm2M2VZ7qA
.
ইমরান বিন মানসুর কোন আলেম নয়, এমনকি তার কথা ও বক্তব্যের উপস্থাপন ত্রুটিপূর্ণ। আমি আপনাদেরকে ইমরানের অন্য কোন ভিডিও দেখার জন্যে আহবান করবোনা। তবে, এই ভিডিওটাতে সে ইয়াসির ক্বাদী সম্পর্কে কিছু কথা একত্রিত করে সে সম্পর্কে কিছু সত্যি কথা তুলে ধরেছে। আশা করি যারা ইয়াসির ক্বাদীর কথার দ্বারা বিভ্রান্তির শিকার হয়ে আছেন, এগুলো তাদের হক্ক বুঝতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে, ইন শা আল্লাহ।
আপনাদের কেউ মনে করবেন না, ইমরান বিন মানসুর হঠাত করে ইয়াসীর ক্বাদী সম্পর্কে এই কথাগুলো বলছেন। বরং, বিগত ৭-৮ বছর ধরে ইয়াসির ক্বাদীর বিভ্রান্তিকর কথা থেকে অনেক আগেই বিষয়টি পরিষ্কার ছিলো, ইয়াসীর ক্বাদী তার দ্বীনকে পরিবর্তন করে ফেলছে, মদীনা থেকে শিখা ইসলামকে ছুড়ে ফেলে সে নিজে নিজে ইসলামের নতুন রূপ দিতে চাচ্ছে। ইয়াসীর ক্বাদী নিয়ে আপনারা নীচের এই লিংকগুলো মনোযোগ সহকারে study করলে এ সম্পর্কে আরো ভালো ধারণা পাবেন ইন শা আল্লাহ।
.
২০১৪ সালের ২৫শে এপ্রিলে আমাদের পেইজে প্রকাশিত পোস্টঃ
প্রসংগঃ Shake ইয়াসীর ক্বাদী (The Unqualified Qadhi)
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/752030364829713/?type=3&hc_ref=SEARCH
.
Be aware of American Islam
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/1496079073758168/?type=3&hc_ref=SEARCH
.
Why Are You Doing This to the Muslims? | Abu Mussab Wajdi Akkari
https://www.youtube.com/watch?v=d6ux72MnP-s
.
সর্বশেষ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদীস দিয়ে আজকের মতো এখানেই শেষ করছিঃ  মানুষের মাঝে অচিরেই এমন এক সময় আসবে যখন ধোঁকাবাজি বাড়বে, তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী মনে করা হবে আর সত্যবাদীকেই মিথ্যাবাদী মনে করা হবে, আমানতদারকে খিয়ানতকারী মনে করা হবে আর খিয়ানতকারীকেই আমানতদার মনে করা হবে, আর রুয়াইবিদারা কথা বলবে। জিজ্ঞাস করা হলো, রুয়াইবিদা কারা? তিনি বললেন, সাধারণ মানুষের কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করে (নীচু মানের, ফালতু) এমন ব্যক্তি।
ত্বাবারানি, কিতাবুল ফিতান, বাব সিদ্দাতুয যামনঃ ২/৩২৬১।
.

(সমাপ্ত) 

শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৬

খিলাফাহ নিয়ে প্রশ্নের উত্তর

আস সালামু আলাইকুম। আমার একটা প্রশ্ন ছিল, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে। এখন যে অবস্থা, তাতে মুসলিম উম্মাহর কি কোন কিছু করনীয় নেই সুন্নাহ অনুযায়ী? খিলাফাহ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হলে কিভাবে সম্ভব? নাকি খিলাফাহ কায়েম করতে মুসলিমদের চিন্তা ভাবনা করা জরুরী নয়? যদি জরুরী হয় শুরু কিভাবে করা উচিত?
উত্তরঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি বারাকাতুহু।
(১) মুসলিম উম্মাহর কি কোন কিছু করনীয় নেই সুন্নাহ অনুযায়ী?
মুসলিম উম্মাহর করণীয় হচ্ছে তারা শিরক, কুফর ও কবীরাহ গুনাহ ত্যাগ করে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করবে। তাহলে আল্লাহ তাদের অবস্থার সংশোধন করে দিবেন। নিজেরা শিরক, কুফর বা ভ্রান্ত মতবাদে জড়িত থাকবে...আর উমার ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো একজন খলিফাহ এসে রাতারাতি এই অবস্থা থেকে আমাদেরকে উদ্ধার করবেন...এমনটা ভাবতে ভালোই লাগে, কিন্তু তা বাস্তবতা বিবর্জিত একটা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছুইনা। আর কুরআন ও সুন্নাহ আমাদেরকে এমন সাথে বিপরীত।
(ক) বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রনা হতে আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
৫৫. তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদেরকে সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। (আমি যাদেরকে সাহায্য করবো) তারা শুধুমাত্র আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য।
৫৬. নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।
সুরা নূরঃ ৫৫-৫৬।
(খ) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
যখন তোমরা ঈনা পদ্ধতিতে (ব্যবসা নাম দিয়ে কৌশলে সুদ খাওয়ার একটা পদ্ধতি) কেনা-বেচা করবে, গরুর লেজ আকড়ে থাকবে (অর্থাৎ পশু পালনে বেশি মনোযোগী হয়ে যাবে), কৃষিকাজ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের দ্বীনে প্রত্যাবর্তন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে সেই অপমান উঠিয়ে নেওয়া হবেনা।
সিলসিলাতুল আহাদীস আস-সহীহাহঃ ১১।
(গ) উমার ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন,
আমরা তো মর্যাদাহীন লোক ছিলাম, আল্লাহ আমাদেরকে ইসলাম এর নিয়ামত দিয়ে সম্মানিত করেছেন। সুতরাং, আল্লাহ আমাদেরকে যা দ্বারা সম্মানিত করেছেন, আমরা যদি সেই ইসলাম থেকে দূরে সরে গিয়ে অন্য কোথাও সম্মান খুঁজি, তাহলে আল্লাহ পুনরায় আমাদেরকে অপমানিত করবেন।
(ঘ) বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা নিয়ে শায়খ ফাউজানের গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/photos/a.130928300273259.14132.125167817515974/1473524002680342/?type=3
.
(২) খিলাফাহ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হলে কিভাবে সম্ভব? নাকি খিলাফাহ কায়েম করতে মুসলিমদের চিন্তা ভাবনা করা জরুরী নয়? যদি জরুরী হয় শুরু কিভাবে করা উচিত?
(ক) খিলাফাহ কি? আমিরুল মুমিনিন কে?
মুসলমানদের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী নেতা হচ্ছেন খলিফাহ, যার অর্থ হচ্ছে প্রতিনিধি। খলিফার দায়িত্ব হচ্ছেঃ আল্লাহর রাসুল আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অবর্তমানে তাঁর প্রতিনিধি হয়ে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী মুসলমানদের কাজগুলো পরিচালনা করা ও কেন্দ্রীয়ভাবে তাদের নেতৃত্ব দেওয়া। মুসলমানদের বৈধ খলিফার একটি উপাধি হচ্ছে আমিরুল মুমিনিন, যার অর্থ হচ্ছে বিশ্বাসীদের আমির বা নেতা। উল্লেখ্য, ইসলামের আদর্শ খলিফাহর সময়কাল মাত্র ৩০ বছর স্থায়ী ছিলো। একথা স্বয়ং রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলে গেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে খিলাফাহ ৩০ বছর পর্যন্ত জারী থাকবে, অতঃপর হবে রাজতন্ত্র। মুসনাদে আহমাদ, শায়খ আরনাউত হাদিসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
(খ) খিলাফাহ পুনরায় ফিরিয়ে আনতে হলে কিভাবে সম্ভব?
- এক আল্লাহর ইবাদত ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুন্নাহর অনুসরণের মাধ্যমে।
আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির প্রকৃত কারণসমূহঃ

https://www.facebook.com/dawati.kaj/posts/1767218066883684:0

আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির প্রকৃত কারণসমূহ

আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির প্রকৃত কারণসমূহ
গ্রন্থের নামঃ রমযান মাসের ৩০ আসর
সংকলনঃ আল্লামাহ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ
.
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর মর্যাদায় মহান, তাঁর দমনে প্রবল পরাক্রমশালী, বান্দার গোপন ও প্রকাশ্য সকল অবস্থা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানী, জিহাদকারীর উপর বিজয় প্রদানের মাধ্যমে বদান্যতা প্রদর্শনকারী, তাঁর জন্য বিনয় অবলম্বনকারীকে উঁচু মর্যাদায় আসীনকারী, তিনি ছত্র লেখার সময় কলমের খচখচ শব্দ শুনতে পান, জনমানবহীন মরুপ্রান্তরে পিপড়ার চলার গতি দেখতে পান। আমি তার প্রশংসা করছি তাকদীরের ফয়সালা, তা মিষ্ট হোক কিংবা তিক্ত।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, এ সাক্ষ্য তার স্মরণকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল, যাকে তিনি জলে-স্থলে সর্বস্থানের সৃষ্টিকুলের প্রতি রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন।
আল্লাহ তাঁর উপর সালাত পেশ করুন আর তাঁর সাথী আবু বকরের উপর, যিনি তাঁর অন্তরে আছড়ে পড়া ঈমান নিয়ে সর্বপ্রথম সাড়া দিয়েছিলেন, অনুরূপ উমারের উপর, যিনি তাঁর সাবধানতা ও নিয়ন্ত্রণক্ষমতা দ্বারা ইসলামকে সম্মানিত করেছেন, আর উসমানের উপর, যিনি ছিলেন দুই নূরের মালিক, কঠিন বিপদের মধ্যে নিজের বিষয়ে পূর্ণ ধৈর্যশীল। তদ্রূপ আলীর উপর, যিনি ছিলেন তাঁর চাচাতো ভাই ও জামাতা। আর তাঁর সকল পরিবার-পরিজনের উপর, সকল সাহাবীর উপর এবং তাদের সকল সুন্দর অনুসারীর উপর যতদিন মেঘ তার বৃষ্টি নিয়ে বদান্যতা দেখাবে। আর আল্লাহ তাদের সবার উপর যথাযথ সালামও প্রদান করুন।
.
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আল্লাহ তাআলা মুমিনদের বহু স্থানে সাহায্য করেছেন। যেমন, বদর, আহযাব, মক্কা বিজয় ও হুনাইনের যুদ্ধসহ অন্যান্য স্থানে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাদেরকে তার কৃত অঙ্গীকার পূরণার্থে,
তিনি বলেছেনঃ
আর মুমিনদের সাহায্য করা আমার কর্তব্য। সূরা আর-রূম, আয়াত: ৪৭।
তিনি আরও বলেন,
নিশ্চয় আমরা আমাদের রাসূলদেরকে এবং যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে সাহায্য করব দুনিয়ার জীবনে, আর যেদিন সাক্ষীগণ দাঁড়াবে। যেদিন যালিমদের ওজর-আপত্তি তাদের কোন কাজে আসবে না। আর তাদের জন্য রয়েছে লানত এবং তাদের জন্য রয়েছে নিকৃষ্ট আবাস।। সূরা গাফির:৫১-৫২।
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে এ কারণে সাহায্য করেছেন যে, মুমিনরা তাদের দ্বীন ইসলামের উপর অটল থেকেছে। আর ইসলাম এমন একটি দ্বীন যাহা অন্যসব দ্বীনের উপর বিজয়ী। অতঃপর যে ব্যক্তি এ মহান দ্বীনকে আকড়ে ধরেছে সে অবশ্যই অন্যান্য জাতির উপর বিজয়ী হবে।
তিনিই সে মহান সত্তা যিনি তার রাসূলকে প্রেরণ করেছেন হেদায়াত ও সত্যদ্বীনসহ যেন তিনি অন্যসব দ্বীনের উপর দ্বীন ইসলামকে বিজয়ী করতে পারেন। যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে থাকে।
মহান আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করেন; কেননা তারা বস্তুগত ও মানসিক উভয় প্রকার সাহায্য ও বিজয় লাভের উপকরণ নিয়ে আল্লাহর জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁদের কাছে ছিল এমন দৃঢ়তা যা তাদেরকে শত্রুদের বিরুদ্ধে জয়ী করেছিল। তারা গ্রহণ করেছিল আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তাদের জন্য প্রদত্ত দিক-নির্দেশনা, তারা তাঁর দেওয়া হেদায়াত অনুসারে চলেছিল আর তিনি তাদেরকে সৃদৃঢ় করেছিলেন।
আর তোমরা নিষ্ঠুর হয়ো না, হতাশ হয়ো না। আর তোমরাই বিজয়ী হবে; যদি তোমরা মুমিন হয়ে থাক। যদি তোমাদেরকে আঘাত স্পর্শ করে থাকে তবে তোমাদের মতই তাদের উপরও ইতিপূর্বে আঘাত এসেছিল। আর এভাবেই আমরা দিনগুলো মানুষের মাঝে চক্রাকারে ঘুরিয়ে থাকি। সূরা আলে-ইমরানঃ ১৩৯-১৪০।
আর আর শত্রু সম্প্রদায়ের সন্ধানে তোমরা হতোদ্যম হয়ো না। যদি তোমরা যন্ত্রণা পাও তবে তারাও তো তোমাদের মতই যন্ত্রণা পায় এবং আল্লাহ্‌র কাছে তোমরা যা আশা কর ওরা তা আশা করে না। আর আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। সূরা আন-নিসা: ১০৪।
কাজেই তোমরা হীনবল হয়ো না এবং সন্ধির প্রস্তাব করো না, যখন তোমরা প্রবল; আর আল্লাহ্ তোমাদের সঙ্গে আছেন এবং তিনি তোমাদের কর্মফল কখনো ক্ষুণ্ণ করবেন না। দুনিয়ার জীবন তো শুধু খেল-তামাশা। সূরা মুহাম্মাদ: ৩৫-৩৬।
সুতরাং তারা এ শক্তি ও সৃদৃঢ়করণ দ্বারা শক্তি, দৃঢ়তা ও পূর্ণ আন্তরিকতার সঙ্গে পথ চলেছিল এবং সব ধরণের শক্তি থেকে কিছু অংশ নিতে সক্ষম হয়েছিল।
* এ ব্যাপারে তারা আল্লাহর নির্দেশের আনুগত্য করেছেন। তিনি বলেন,
আর তোমরা তোমাদের সাধ্যানুযায়ী শক্তি সামর্থ্য নিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ কর। সূরা আল-আনফালঃ ৬০।
আল্লাহ তাআলা তাদেরকে অপ্রকাশ্য আত্মশক্তি এবং প্রকাশ্য সৈন্যশক্তি দিয়ে যুদ্ধে সাহায্য করেছিলেন; কারণ তারা তার দ্বীনকে সাহায্য-সহযোগিতায় নিজেদের নিয়োজিত করেছিল।
* আল্লাহ বলেন,
﴿وَلَيَنصُرَنَّ ٱللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ ٤٠ ٱلَّذِينَ إِن مَّكَّنَّٰهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ ٤١ [الحج: ٤٠، ٤١]
আর অবশ্যই আল্লাহ তাদের সাহায্য করবেন যারা আল্লাহকে সাহায্য করবে, নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিশালী ও প্রবল পরাক্রমশালী। যাদেরকে আমরা যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত প্রদান করে, সৎ কাজের আদেশ দেয় ও অসৎ কাজের নিষেধ করে। আর আল্লাহর জন্যই সকল কাজের পরিণাম ফল নির্ধারিত হয়ে আছে। সূরা আল-হজঃ ৪০-৪১।
উল্লেখিত আয়াত দুটিতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে বিজয় ও সাহায্য করার ওয়াদা দিচ্ছেন যারা তার দ্বীনকে সাহায্য করবে। আর এ ওয়াদা শব্দগত ও অর্থগত সবধরণের তাগিদের মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে।
o তন্মধ্যে শব্দগত তাগিদ হচ্ছে: গোপন শপথ, কারণ, এখানে অর্থ হচ্ছে, আল্লাহর শপথ অবশ্যই অবশ্যই আল্লাহ তাদেরকে সাহায্য করবেন যারা আল্লাহকে সাহায্য করে। অনুরূপভাবে লাইয়ানসুরান্না শব্দের মধ্যে লাম এবং নূন নিয়ে আসা হয়েছে, যা তাগিদের জন্য ব্যবহৃত হয়।
o আর অর্থগত তাকিদ হচ্ছে: মহান আল্লাহর বাণী, إِنَّ ٱللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিশালী ও প্রবল পরাক্রমশালী এ কথার মধ্যে। এর দ্বারা বোঝা গেল যে, মহান আল্লাহ শক্তিমান তাকে কেউ দুর্বল করতে পারে না, তিনি প্রবল প্রতাপশালী তাকে কেউ হীন করার ক্ষমতা রাখে না। সুতরাং যে কোনো শক্তি ও প্রতাপ তাঁর বিপরীতে দাঁড়াতে চাইবে সে অবশ্যই অপমানিত ও দুর্বল হতে বাধ্য।
* অনুরূপভাবে আল্লাহর বাণী, وَلِلَّهِ عَٰقِبَةُ ٱلۡأُمُورِ আর আল্লাহর জন্যই সকল কাজের পরিণাম ফল নির্ধারিত হয়ে আছে। এর মাধ্যমে মুমিনদের অন্তরকে সুদৃঢ় করা হয়েছে, যখন মুমিনের দৃষ্টিতে সাহায্য আসা সুদূর পরাহত মনে হবে, কারণ তার সাহায্য আসার মত উপায়-উপকরণ অবলম্বন করতে পারে নি। তাই আল্লাহ তাআলা মুমিনকে সান্ত্বনা ও তার অন্তরকে দৃঢ়তা প্রদান করার জন্যই বলেছেন, সবকিছুর শেষ পরিণাম তো আল্লাহর হাতেই, সুতরাং তিনি তাঁর প্রজ্ঞা অনুসারে যখন ইচ্ছা অবস্থা পরিবর্তন করে দিতে সক্ষম।
আর এ আয়াত দুটিতে: যে সব গুণাবলী থাকলে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার অধিকারী হয় তার বর্ণনা রয়েছে। মুমিন এগুণগুলো যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর অর্জন করবে, সুতরাং যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে সে যেন গর্ব, অহংকার, অহমিকা, সীমালঙ্গন ও ফেতনা-ফাসাদে জড়িত না হয়, বরং এ প্রতিষ্ঠিত হওয়া যেন আল্লাহর দ্বীনের জন্য শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং দ্বীনকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরে, এটাই শিক্ষা দেওয়া হয়েছে।
.
আল্লাহর সাহায্য পাওয়ার জন্য অপরিহার্য গুণাবলি:
প্রথম গুণ: যাদেরকে আমরা যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত করলে তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে।
তবে যমীনে প্রতিষ্ঠা লাভের পূর্বশর্ত হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহর ইবাদত বাস্তবায়ণ করা। ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট না করা (অর্থাৎ শির্ক বন্ধ না করা) পর্যন্ত যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠা লাভ করতে পারবে না। যেমন,
আল্লাহ তাআলা বলেন:
﴿وَعَدَ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنكُمۡ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ لَيَسۡتَخۡلِفَنَّهُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ كَمَا ٱسۡتَخۡلَفَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمۡ دِينَهُمُ ٱلَّذِي ٱرۡتَضَىٰ لَهُمۡ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّنۢ بَعۡدِ خَوۡفِهِمۡ أَمۡنٗاۚ يَعۡبُدُونَنِي لَا يُشۡرِكُونَ بِي شَيۡٔٗاۚ﴾ [النور: ٥٥]
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনবে এবং সৎকাজ করবে, তাদের সঙ্গে আল্লাহর ওয়াদা হলো, আল্লাহ অবশ্যই পৃথিবীতে তাদেরকে প্রতিনিধি বানাবেন, যেমন পূর্ববর্তীদের বানিয়েছিলেন। আর তাদের জন্য মনোনীত দ্বীন (ইসলাম) কে তিনি তাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করে দেবেন, তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে নিরাপত্তা দান করবেন, যারা শুধুমাত্র আমার ইবাদত করবে, আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করবে না। সূরা আন-নূরঃ ৫৫।
সুতরাং বান্দা যখন তার কথা, কাজ ও ইচ্ছায় একান্তভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করবে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের সফলতাই তার লক্ষ্য থাকবে, কোনো মান-মর্যাদা, সম্পদ, মানুষের প্রশংসা বা জাগতিক অন্য কিছু তার কাম্য হবে না, সুখে দুঃখে বিপদাপদে সর্বাবস্থায় অবিচলভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদতে অটল থাকবে তখন আল্লাহ তাদেরকে পৃথিবীর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করবেন।
তাহলে বুঝা গেল যে, যমীনের বুকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে হলে এর আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ অর্জন করতে হবে, আর সেটি হচ্ছে: একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা, যার কোনো শরীক নেই।
আর যমীনের বুকে প্রতিষ্ঠিত ও ইখলাসের পর আসবে দ্বিতীয় গুণটি।
.
দ্বিতীয় গুণ: সালাত প্রতিষ্ঠা করা:
আর সালাত প্রতিষ্ঠা করার অর্থ হচ্ছে, বান্দার কাছ থেকে যেভাবে সালাত আদায় চাওয়া হয়েছে সেভাবে সেটা সংঘটিত হওয়া, তার সকল শর্ত, রুকন ও ওয়াজিবসমূহ যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠা করা।
আর এর পূর্ণরূপ হচ্ছে, সালাতের যাবতীয় মুস্তাহাব পালন করা, সুতরাং সুন্দরভাবে অযু করবে, রূকু, সিজদা, কিয়াম ও বসা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করবে, সময়ের প্রতি যথাযথ যত্নবান হবে, জুমআ ও জামাআতের প্রতি গুরুত্ব দিবে, সালাতে খুশু তথা বিনয়াবনত হবে, আর তা হচ্ছে, সালাতে মন উপস্থিত রাখা ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুস্থির রাখা। কেননা সালাতের মূল ও প্রাণই হচ্ছে বিনয়াবনত থাকা। বিনয়াবনত ব্যতীত সালাত আদায় যেন আত্মা ব্যতীত শরীর।
* আম্মার ইবন ইয়াসের রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয় কোনো লোক সালাত থেকে ফিরে এমতাবস্থায় যে তার সালাতের এক দশমাংশ লিখা হয়েছে, এক নবমাংশ, এক অষ্টমাংশ, এক সপ্তমাংশ, এক ষষ্ঠাংশ, এক পঞ্চমাংশ, এক চতুর্থাংশ, এক তৃতীয়াংশ, অর্ধেক লেখা হয়েছে।
.
তৃতীয় গুণ: যাকাত প্রদান
﴿وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ﴾ যাকাতের বিধান অনুসারে তার সঠিক প্রাপককে কোনো প্রকার ত্রুটি ছাড়া খুশি মনে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় যাকাত দেওয়া। এর মাধ্যমে নিজের আত্মার পরিশুদ্ধি, সম্পদের পবিত্রতা এবং গরীব দুঃখী ইত্যাদি অভাবী ভাইদের উপকার হয়। যাকাতের হকদার কারা এ বিষয়টি সপ্তদশ আসরে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।
.
চতুর্থ গুণ: সৎকাজে আদেশ করা
﴿وَأَمَرُواْ بِٱلۡمَعۡرُوفِ﴾ মারূফ হচ্ছে, আল্লাহ তাঁর রাসূল কর্তৃক নির্দেশিত সকল ওয়াজিব ও মুস্তাহাব কাজ। সুতরাং যারা আল্লাহর সাহায্য পেতে চায় তারা শরীয়তের পূনর্জীবন দান করা, বান্দাদের সংস্কার এবং আল্লাহর রহমত ও সন্তুষ্টি কামনায় এ কাজগুলো করে থাকে।
বস্তুত মুমিন হচ্ছে দেয়ালের মত। যার একটি ইট অপরটিকে মজবুত করে। সুতরাং একজন মুমিন যেভাবে নিজের জন্য পছন্দ করে যে সে তার রবের আনুগত্যে সদা তৎপর থাকবে, সেভাবে সে নিজের মত করে তার অন্যান্য ভাইদের জন্যও আল্লাহর আনুগত্যে অটল থাকা পছন্দ করা ওয়াজিব।
সৎকাজের নির্দেশ যদি সত্যিকারের ঈমান ও সততার মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় সেটা আবশ্যক করে যে নির্দেশদাতা নিজেও সেটা যথাযথভাবে পালন করবে; কেননা সে সৎকাজের আদেশের উপকারিতা ও ইহ ও পারলৌকিক ফলাফল সম্পর্কে ঈমান ও পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের কারণেই সে সেটার নির্দেশ প্রদান করে থাকে।
.
পঞ্চম গুণ: মন্দের প্রতিকার
﴿وَنَهَوۡاْ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۗ﴾মুনকার বলতে বুঝায়: এমন প্রত্যেক বিষয় যা থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল নিষেধ করেছেন। ইবাদতের সাথে সংশ্লিষ্ট কিংবা চরিত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট অথবা লেন-দেনের সাথে সম্পৃক্ত সকল কবীরা গুনাহ, সগীরা গুনাহ এর অন্তর্ভু্ক্ত। সুতরাং যারা আল্লাহর সাহায্য পেতে চায় তারা আল্লাহর দ্বীনকে হেফাযত করার জন্য, আল্লাহর বান্দাদের রক্ষা করার জন্য এবং ফেতনা-ফাসাদ ও শাস্তির কারণসমূহ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য এসকল কাজ থেকে নিষেধ করে থাকেন।


বস্তুত উম্মতের স্থায়িত্ব, সম্মান ও একতা বজায় রাখার জন্য সৎ কাজের আদেশ প্রদান এবং মন্দের প্রতিবিধান দুটি শক্তিশালী স্তম্ভবিশেষ। যাতে করে উম্মতকে প্রবৃত্তির তাড়না বিচ্ছিন্ন করতে এবং বিভিন্ন মত ও পথ তাদেরকে ছিন্ন-ভিন্ন করতে সক্ষম না হয়। আর এজন্যই সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ দ্বীনের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়; যা সকল মুসলিম নারী-পুরুষের ওপর সাধ্যানুযায়ী ফরয।
* আল্লাহ তাআলা বলেন:
আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম। আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বিভক্ত হয়েছে এবং মতবিরোধ করেছে তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর। আর তাদের জন্যই রয়েছে কঠোর আযাব। সূরা আলে ইমরানঃ ১০৪-১০৫।
যদি ভালো কাজের আদেশ প্রদান আর মন্দের প্রতিবিধান না থাকতো তবে মুসলিম সমাজ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। এমন হতো যে, প্রত্যেক দলই তার কাছে যা আছে তা নিয়ে খুশী হয়ে যেতো। (অথচ সত্য কখনো মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে না।)
এ আহ্বান থাকার ফলেই এ উম্মত অন্যদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করতে পেরেছে। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। সূরা আলে ইমরানঃ ১১০।
যারা সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করে না তাদের সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন:
বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদেরকে দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখে লানত করা হয়েছে। তা এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছে এবং তারা সীমালঙ্ঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ থেকে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত, তা কতইনা মন্দ! সূরা আল-মায়িদাহ্‌ঃ ৭৮-৭৯।


o উল্লেখিত পাঁচটি গুণসহ আল্লাহর নির্দেশিত সতর্কতা, দৃঢ়তা ও বাহ্যিক বস্তুগত শক্তি যখন লাভ করবে, তখন আল্লাহর সাহায্য অবশ্যই আসবে। আল্লাহ তাআলা বলেন:
আল্লাহর ওয়াদা। আল্লাহ তাঁর ওয়াদা খেলাফ করেন না। কিন্তু অধিকাংশ লোক জানে না। তারা দুনিয়ার জীবনের বাহ্যিক দিক সম্পর্কে জানে, আর আখিরাত সম্পর্কে তারা গাফিল। সূরা আর-রূমঃ ৬-৭।
সুতরাং এ গুণগুলো অর্জিত হলে উম্মত অকল্পনীয় আসমানী সাহায্য দ্বারা ধন্য হবে। আর আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থাশীল ব্যক্তি নিশ্চিতরূপে জানে যে বাহ্যিক উপকরণ যতই শক্তিশালী হোক তা এগুলোর স্রষ্টা ও অস্তিত্বদানকারী আল্লাহর শক্তির সামনে অতি নগণ্য।
* আদ সম্প্রদায় নিজেদের শক্তিমত্তায় অন্ধ হয়ে ঘোষণা করেছিল:
অর্থাৎ কে আমাদের চেয়ে বেশি শক্তিমান?!!
আল্লাহ তাআলা তার উত্তরে বলেন, তবে কি তারা লক্ষ্য করেনি যে, নিশ্চয় আল্লাহ যিনি তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী? আর তারা আমার আয়াতগুলোকে অস্বীকার করত। তারপর আমি তাদের উপর অশুভ দিনগুলোতে ঝঞ্ঝাবায়ু পাঠালাম যাতে তাদেরকে দুনিয়ার জীবনে লাঞ্ছনাদায়ক আযাব আস্বাদন করাতে পারি। আর আখিরাতের আযাব তো অধিকতর লাঞ্ছনাদায়ক এবং তাদেরকে সাহায্য করা হবে না। সূরা ফুসসিলাত, আয়াত: ১৫-১৬।
* ফিরআউন কতই না দম্ভ করেছিল তার মিসরের রাজত্ব নিয়ে এবং যে সকল নদী-নালা তার নিম্নভাগে প্রবাহিত আছে তা নিয়ে!!
অতঃপর আল্লাহ তাকে সে পানিতেই ডুবে মেরেছিলেন যা নিয়ে সে অহংকারে ফেটে পড়েছিল। আর তার রাজত্বের ওয়ারিস বানিয়েছেন মূসা ও তার জাতিকে; যারা ছিল ফেরআউনের দৃষ্টিতে হীন ও কথা বলতে অক্ষম।
* আর এই যে কুরাইশ, তারা তাদের মর্যাদা আর শ্রেষ্ঠত্বের অহংকারে অন্ধ হয়ে সর্বশক্তি নিয়ে তাদের নেতা ও কর্তা ব্যক্তিরা গর্ব ও লোকদেখানোর জন্য বেরিয়ে পড়েছিল। তারা ঘোষণা দিয়েছিল, আমরা ততক্ষণ কখনো ফিরবো না যতক্ষণ না বদরে পৌঁছব, সেখানে উট যবেহ করব, মদ পান করব, আমাদের উপর গায়ক-গায়িকা, নর্তকীরা গান গাইবে এবং আমরা সেটা উপভোগ করব, আর আরবরা সেটা শুনবে এবং সব সময়ের জন্য আমাদেরকে ভয় পেতে থাকবে!!
কিন্তু তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার সাহাবীদের হাতে সবচেয়ে নিকৃষ্টতম ও শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছিল। আর তাদের লাসগুলো বদরের দুর্গন্ধময় কূপে টেনে-হেঁচড়ে ফেলা হয়েছিল। এভাবে তারা অপমান-অপদস্থের জন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে মানুষের মুখে কিয়ামত পর্যন্ত আলোচিত হবে।
আমরা মুসলিমরা যদি এ যুগেও আল্লাহর সাহায্যের জন্য অপরিহার্য গুণাবলি অর্জন করতে পারি, যদি দীনের প্রতিটি নির্দেশ মান্য করে চলতে পারি, যদি আমরা অন্যদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারি, অন্যদের অনুসারী না হয়ে পথপ্রদর্শক হতে পারি, অনুসরণকারী না হয়ে অনুসরণীয় হতে পারি, ন্যায়-নিষ্ঠা আর পরিশুদ্ধ মানসিকতা নিয়ে যুদ্ধের যাবতীয় আধুনিক সামগ্রী অবলম্বন করতে পারি, তাহলে অবশ্যই আল্লাহ আমাদেরকে শত্রুর ওপর বিজয়ী করবেন; যেমন অতীতে আমাদের পূর্বসূরীদের সাহায্য করেছিলেন, আল্লাহ তাঁর ওয়াদা সত্য করেছিলেন, তাঁর বান্দাকে সাহায্য করেছিলেন এবং যাবতীয় বিরোধী শক্তিকে একাই পরাস্ত করেছিলেন।
তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদের ব্যাপারে এটি আল্লাহর নিয়ম; আর আপনি আল্লাহর নিয়মে কোনো পরিবর্তন পাবে না। সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৬২।
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের জন্য আপনার এমন সাহায্যের উপায়-উপকরণগুলোর ব্যবস্থা করে দিন, যাতে রয়েছে আমাদের বিজয়, ইয্‌যত, সম্মান আর ইসলামের জন্য উঁচু মর্যাদা ও কুফরি ও অবাধ্যতার জন্য অপমান ও হীনতা। নিশ্চয় আপনি দানশীল ও দাতা।

আর আল্লাহ সালাত ও সালাম পেশ করুন আমাদের নবী মুহাম্মাদ, তার পরিবার-পরিজন ও সকল সাহাবীর উপর।

ভাগে গরু কোরবানী দেওয়া

ভাগে গরু কোরবানী দেওয়ার বিষয়ে সৌদি আরবের উলামা পরিষদের স্থায়ী কমিটির ফতোয়াঃ
ভাগে কোরবানী দেয়ার ব্যাপারে স্থায়ী কমিটিকে জিজ্ঞাসা করা হলে কমিটির সদস্যগণ এই জবাব প্রদান করেছেনঃ
কোরবানীতে একটি গরু বা একটি উট সাতজনের পক্ষ হতে যথেষ্ট। এই সাতজন লোক একই পরিবারভুক্ত হোক অথবা আলাদা আলাদা সাত পরিবারের লোক হোক। চাই এই সদস্যদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকুক আর নাই থাকুক। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদের একাধিক লোক মিলে উট বা গরু কোরবানী দেয়ার অনুমতি দিয়েছেন। তাদের মাঝে আত্মীয়াতার সম্পর্ক থাকতে হবে কি না এমন কোনো কথা বলেন নি। লাজনায়ে দায়িমার কথা এখানেই শেষ।
ইসলাম ওয়েবের প্রশ্নোত্তর বিভাগে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল যে সাতজনের কম লোক মিলে গরু কোরবানী দিতে পারবে কি না?

 জবাবে বলা হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ। একটি গরুতে সাতজনের অংশগ্রহণ করা জায়েয আছে। দেখুন প্রশ্ন নং-৪৫৭৫৭। সাতজনের অংশগ্রহণ জায়েয হলে সাতজনের কমের অংশগ্রহণ আরো উত্তমভাবেই জায়েয হবে।
সুনানে তিরমিযীর ভাষ্যকার আল্লামা আব্দুর রাহমান মোবারকপুরী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আমি বলছি, হাদী দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর যামানায় সাহাবীগণ উট ও গরুতে অংশগ্রহণ করতেন। এমনিভাবে সাব্যস্ত হয়েছে যে, তারা একটি ছাগলেও অংশগ্রহণ করতেন। তবে ছাগলে অংশগ্রহণের বিষয়টি একই পরিবারের সাত সদস্যের মধ্যে সীমিত। আর গরুতে সাত পরিবারের সাতজনের অংশগ্রহণ জায়েয দেখুন তুহফাতুল আহওয়াযী৪/১৫৯।