মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

#রুয়াইবিদা

#রুয়াইবিদা
বর্তমান যুগে বাংলা বা ইংরেজী ভাষাভাষী অনেকেই রয়েছে, যারা দ্বীনের ব্যপারে কথা বলছে। মিষ্টি ভাষায় দীর্ঘ আর্টিকেল লিখে কিংবা হৃদয় গলানো ভিডিও পাবলিশ করে উম্মতকে দ্বীন শিখানোর জন্যা তারা দিন-রাত যুদ্ধ-জিহাদ করে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা নিজেরাই দ্বীনের ব্যপারে সঠিক ও পূর্ণাংগ জ্ঞান অর্জন না করার কারণে, আলেম-ওলামাদের সংস্পর্শে না আসার কারণে তাদের অজ্ঞতাপূর্ণ, বিভ্রান্তিকর লিখালিখি দ্বারা সাধারণ মুসলমানদেরকে ভ্রষ্টতার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত নির্বোধ ও ফালতু লোক, সাধারণ মুসলমানেরা ইলমের দৈন্যতার কারণে যাদেরকে আলেম বলে ধোঁকা খাচ্ছে, কিন্তু মূলত তারা জাহেল, হাদীসের পরিভাষায় এদেরকে রুয়াইবিদা বলা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষের মাঝে অচিরেই এমন একটা সময় আসবে যখন ধোঁকাবাজি বাড়বে। তখন মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী মনে করা হবে আর সত্যবাদীকেই মিথ্যাবাদী মনে করা হবে। আমানতদারকে খিয়ানতকারী মনে করা হবে আর খিয়ানতকারীকেই আমানতদার মনে করা হবে। আর রুয়াইবিদারা কথা বলবে। আল্লাহর রাসুলকে জিজ্ঞাসা করা হলোঃ রুয়াইবিদা কারা? তিনি বললেন, সাধারণ মানুষের কর্মকান্ডে হস্তক্ষেপ করে এমন ব্যক্তি। ত্বাবারানি, কিতাবুল ফিতান, বাব সিদ্দাতুয যামানঃ ২/৩২৬১।
হাদীসের অন্য বর্ণনায় রয়েছে, জিজ্ঞাসা করা হল, রুয়াইবাদা কে? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, অপদার্থ ব্যক্তি
.
ইসলামী বক্তা বা লেখক, কুরআন এক্সপার্ট, মডার্ণ ফকিহ, নারীবাদী লেখিকা, জিহাদী আলেম. . .ইত্যাদি টাইটেলধারী লোকেরা যারা আলেম হিসেবে পরিচিত কিন্তু প্রকৃতপক্ষে জাহিল, এমন লোকদের কথা যারা শুনবে, তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে, তারাও নিন্মমানের লোকদের অন্তর্ভুক্ত।
আলী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বলেছেন,
মানুষ হচ্ছে তিন প্রকার,
(১) আলিম (শিক্ষিত বা দ্বীনের ব্যপারে জ্ঞানী ব্যক্তি),
(২) মুতাআল্লিম (দ্বীনের শিক্ষার্থী),
- এই দুই প্রকারের লোকজনই হচ্ছে মুক্তির পথে।
(৩) নিম্নমানের এমন লোকজন, যারা যেকোন লোকের কথা অনুসরণ করে এবং তার ডাকে সাড়া দেয়।
উসুলুস সুন্নাহ (বাংলা), পৃষ্ঠা-১০৭।
ফেইসবুকে এমন রুয়াইবিদা এবং তাদের অনুসারী নারী ও পুরুষের সংখ্যা কম নয়, বরং একটু বেশিই।
সুতরাং, সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা!
আলেমদেরকে চিনুন, আলেমদের কাছ থেকে উপকৃত হন এবং নীচু মানের, ফালতু লোকদেরকে বর্জন করুন। ফিতনাহ থেকে বাঁচুন, অন্যদেরকেও সতর্ক করুন।
.
বন্ধু...
সব রোগেরই চিকিৎসা আছে,
কিন্তু দ্বীনের মাঝে যেই ব্যধি, তার চিকিৎসা কোথায়? 

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

বিয়ের জন্যে কেমন ছেলে বা মেয়ে দেখতে হবে? (পর্ব-১)


বিয়ের জন্যে কেমন ছেলে বা মেয়ে দেখতে হবে? (পর্ব-১)
(১) পাত্র অথবা পাত্রীকে সবার প্রথম ঈমানদার, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযী মুসলিম ব্যক্তি হতে হবে।
(২) আহলে সুন্নত ওয়াল জামাআ'ত বা "সুন্নী" আকিদাহর অনুসারী এবং প্রকাশ্য শিরক, কুফর ও বিদাত মুক্ত থাকতে হবে।
(৩) বিদাতী, পথভ্রষ্ট ব্যক্তি বা দলের কুপ্রভাব ও অনুকরণ থেকে মুক্ত থাকতে হবে।
(৪) দ্বীনদার, চরিত্র ভালো ও কোমল হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে।
(৫) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ কি, তা জানতে, বুঝতে ও মানার আন্তরিক চেষ্টা থাকতে হবে।
(৬) আল্লাহকে ভয় করে এমন গুণাবলী ও তার বহিঃপ্রকাশ থাকতে হবে।
(৭) পাত্রকে হালাল ও সৎ জীবিকা নির্বাহ করতে হবে।
(৮) পাত্রীকে হিজাব-পর্দা করতে হবে।
(৯) দ্বীন শিক্ষার্থী হতে হবে।
(১০) স্বামী, স্ত্রী একজন আরেকজনের উপর কি অধিকার ও হক্ক তা জানার এবং মানার আন্তরিক ইচ্ছা থাকতে হবে।
(১১) প্রতিদিন নিয়মিত ক্বুরান তেলাওয়াতকারী হতে হবে।
(১২) জীবনে ব্যপারে সব সময়েই আশাবাদী এবং আল্লাহর রহমতের আকাংখী হতে হবে। হাতাশাবাদী বা নিরাশ হলে চলবেনা।
(১৩) কোনমতেই ধূমপান করা যাবেনা।
(১৪) স্বামীর অবাধ্য হওয়া যাবেনা।
(১৫) মা-বোনের কথা শুনে স্ত্রীর হক্ক নষ্ট করা যাবেনা।
(১৬) একজন আরেকজনকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার জন্যে অংগীকারবদ্ধ থাকতে হবে। এমন না যে বিয়ের পরে বলবেঃ আমি তোমাকে বিয়ে করে ভুল করে ফেলেছি, তুমি তোমার পথ দেখো, আমার কথা না মানলে চলে যাও ইত্যাদি।
(১৭) টিভিতে নাচ-গান, হারাম অনুষ্ঠান, কার্টুন, খেলাধূলা দেখার নেশা থেকে বিরত থাকতে হবে, হারাম পত্রিকা ম্যাগাজিন থেকে দূরে থাকতে হবে।
(১৮) আহলে সুন্নাহর আলেমদেরকে ভালোবাসতে হবে।
(১৯) যত্রতত্র ছবি তোলা এবং নির্বোধের মতো সেলফি, ফেইসবুকে ছবি আপলোডের মতো বিরক্তিকর সংস্কৃতির অন্ধ অনুসারী হওয়া যাবেনা।
(২০) কাফির মুশরিক এবং ইসলামের দুশমনদের প্রতি ও তাদের সংস্কৃতির প্রতি অন্তর থেকে ঘৃণা ও শত্রুতা পোষণকারী হতে হবে। এটা must, এ ব্যপারে কোন আপোষ চলবেনা।
(২১) দুনিয়ার লোভে গণতান্ত্রিক শিরকি মতবাদের অনুসারী, পথভ্রষ্ট রাজনৈতিক দলগুলোর পদলেহনকারী হওয়া যাবেনা।
(২২) দাঁড়ি রাখতে হবে, প্যান্ট টাখনুর উপরে পড়তে হবে।


সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদের নামায এবং ঈদের কিছু মাসয়ালা

ঈদের শুভেচ্ছা, ঈদের নামায এবং ঈদের কিছু মাসয়ালা
আলহামদুলিল্লাহ।
বাংলাদেশ, ভারতসহ অনেক দেশে আজ ১০-ই জিলহজ্জ, খুশির ঈদুল আযহা। ঈদ উপলক্ষ্যে দ্বীনি ভাই ও বোনদেরকে জানাই প্রাণঢালা ঈদের শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক মোবারকবাদ।
تَقَبَّلَ اللّهُ مِنَّ وَ مِنْكُمْ
উচ্চারণঃ তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিংকুম।
অর্থঃ আল্লাহ আমাদের এবং আপনাদের নেক আমলগুলো কবুল করুন। (আমিন)
.
ঈদ উপলক্ষ্যে কতিপয় মাসয়ালা
=> ঈদ উপলক্ষ্যে নারীরা হাতে-পায়ে মেহেদী দিয়ে সাজতে পারে, কোন সমস্যা নাই। পায়েও দিতে পারে, এতে বেয়াদবী হবেনা বা মোটেও খারাপ কোন কিছু নয়। তবে গায়ের মাহরাম পুরুষদেরকে শরীরের যেকোন অংগ দেখানো সম্পূর্ণ হারাম। রোযার পরেই বেহায়া শ্রেণীর কিছু নারী লম্পট লোকদের সাথে নষ্টামি করার জন্যে বেড়িয়ে পড়ে। আর দাইয়ুস শ্রেণীর গার্জিয়ানেরা ব্যক্তি স্বাধীনতা, নারী স্বাধীনতা, আধুনিকতার নামে নারীদেরকে ফ্রী ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আশা করি জাহান্নামী নারী ও পুরুষদের কাজ থেকে সতর্ক থাকবেন।
=> পুরুষের জন্য মেহেদী দেওয়া জায়েজ নয়, শুধুমাত্র সাদা হয়ে গেলে দাঁড়ি ও চুলে দিতে পারবে।
=> ঈদের আগের রাতের বিশেষ কোন ফযীলত সহীহ হাদীসে নেই, এই রাতে দুয়া কবুল হয় বা এতো এতো ফযীলত এ সম্পর্কিত হাদীসগুলো জাল নয়তো জয়ীফ। সুতরাং, সেইগুলো বিশ্বাস করা যাবেনা।
=> ঈদ উপলক্ষ্যে যারা শেইভ করে তাদের উচিৎ তোওবা করা, কারণ তারা দ্বীন শিক্ষা না করে ফাসেকী কাজে লিপ্ত।
=> ঈদ উপলক্ষ্যে যেই সমস্ত টিভি চ্যানেল নাটক-সিনেমা, হারাম অনুষ্ঠান দেখায়, এরা শয়তানের গোলাম। ঈদ হচ্ছে আনন্দের দিন, আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের দিন। এই দিনে যারা গান-বাজনা, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও, বেপর্দা, বেহায়া নারীদেরকে মুসলমানদেরকে হারাম ও আল্লাহর অবাধ্যতার দিকে আহবান করে, এরা মানুষ শয়তান। আদম সন্তানেরা যদি এই মানুষ শয়তানদেরকে না চিনে এবং এদের ধোঁকায় পড়ে হারাম কাজে লিপ্ত হয়, সে নিজের জন্য জাহান্নামের শাস্তিকে অবধারিত করে নিবে।
.
ঈদের সালাত পড়ার নিয়মঃ
ঈদের সালাত পড়া ফরয/ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, এই দুই রকম মত পাওয়া যায়। তবে সত্য সন্ধানী যেই সমস্ত আলেম মনে করেন যে, ঈদের সালাত পড়া প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর উপর ফরয তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
(১) ইমাম আবু হানীফা
(২) ইমাম আহমাদ থেকে একটি ফতোয়া
(৩) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা
(৪) ইমাম শাওকানী
(৫) সাবেক সউদী প্রধান মুফতী, শায়খ বিন বাজ
(৬) বিগত শতাব্দীর অন্যতম আলেম এ দ্বীন, শায়খ উসাইমিন
(৭) বিংশ শতাব্দীর অবিস্মরণীয় মুহাদ্দিস শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী।
উপরোক্ত আলেমদের ফতোয়া হচ্ছে, ঈদের নামায পড়া নারী পুরুষ সবার জন্যেই ফরয।
তাদের ফতোয়ার পক্ষে দলীল হচ্ছেঃ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে বর্ণিত একটি হাদীস। যেখানে রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদেরকে ঈদের সালাত পড়তে আদেশ করেছেন। আর আল্লাহর রাসুল যদি তাঁর উম্মতকে কোনো আদেশ করেন, সেটা পালন করা আমাদের জন্য ফরয।
উম্মে আতিয়্যা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে (অর্থাৎ নারীদেরকে) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের জন্য ঘর থেকে বের হতে বলেছেন। এমনকি ঋতুবতী নারীদেরকেও। ঋতুবতী নারীগণ সালাতে অংশগ্রহণ করবেনা। ঈদগাহের একপাশে থাকবে এবং (খুতবার মাঝে) দুয়ায় শরীক হবে। উম্মে আতিয়্যা বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের প্রত্যেকের পর্দা করার মতো চাদর নাই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তর দিলেন, সে তার বোনের চাদর নিয়ে হলেও ঈদের সালাতে শরীক হবে। সহীহ বুখারীঃ ৩২৪, সহীহ মুসলিমঃ ৮৯০।
এই হাদীস থেকে স্পষ্ট, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক করেছেন যে, তারা অবশ্যই ঈদের সালাতে উপস্থিত হবে। নারীদের জন্যই যদি এই সালাতে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক হয়, তাহলে পুরুষের জন্য ফরয না হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা।
আমাদের দেশে বিভিন্ন অযুহাতে নারীদের ঈদগাহ থেকে দূরে রাখা হয়। অথচ হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার জন্য কতো জোর দিয়েছেন, এমনকি ঋতুবতী নারীরা সালাত না পড়লেও তাদেরকে ঈদগাহের দোয়ায় শরীক হতে আদেশ করেছেন।
আজকে মুসলমানদের ঘরের নারীরা ঈদের নামায পড়তে বাইরে যায়না, কিন্তু বেহায়াপনা করতে মার্কেট, পার্কে ঠিকই যায়। ঈদে, জুমুয়া'তে, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাতে নারীদের জন্য ইসলাম শেখার কোন জায়গা নাই, কুররান হাদীস শেখার সুযোগ নেই, বেশিরভাগ নারীই ইসলাম সম্পর্ক অজ্ঞ হয়ে বড় হয়ে উঠে। পরবর্তীতে ঈমান ও ইলমের ব্যপারে দুর্বল এই নারীগুলো বড় হয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। নিজে বিপথগামী হয়, তার আশেপাশের পুরুষদের জন্যও ফেতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, যার ফলে আজকে সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারী জাতির ফেতনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমার মনে হয়, দ্বীনদার বোনদের এই ব্যপারে সচেতন হওয়া উচিত, প্রতিকূল অবস্থার মাঝে থেকেও, ফেতনা এড়িয়ে সঠিক ইসলাম শিক্ষা করার জন্য আত্মনিয়োগ করা উচিত। একটা মেয়ে ইসলামের আলোয় আলোকিত হওয়া মানে একটা পরিবার ইসলামের ছায়ায় প্রবেশ করা।
সচেতন মুসলিম বোনদের মধ্যে যাদের ঈদগাহে যাওয়ার সুযোগ নেই বা ভাইদের মধ্যে অনিবার্য কারণবশত যাদের জামাত মিস হবে, তাদের উচিত বাসায় জামাতে বা একা একা ঈদের সালাত আদায় করে নেয়া। এরকম ঘটনা সাহাবাদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। হাদীসের রেফারেন্স দেখুন সহীহ বুখারীঃ ১৯৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহঃ ৫৮০২।
.
সর্বশেষ, ঈদের সালাত দুই রাকাত ১২টি অতিরিক্ত তাকবীরের সহিত পড়তে হয়। তাকবীর = সালাতের শুরুতে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরিমার মতো দুই হাত উপরে তুলে ইশারা করা।
প্রথম রাকাতে আল্লাহু আকবর বলার পরে বুকে হাত বাঁধবেন (নারী ও পুরুষ উভয়ে), এর পরে সানা পড়বেন এরপরে অতিরিক্ত ৭টি তাকবীর (আল্লাহু আকবর বলে দুই হাত তুলে ইশারা করবেন এবং হাত ছেড়ে রাখবেন, এইভাবে মোট ৭বার) করবেন। এরপরে আ'উযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, সুরা ফাতেহা, ক্বিরাত পড়ে বাকী রাকাত পূর্ণ করবেন। দ্বিতীয় রাকাতের জন্য স্বাভাবিক সালাতের মতো দাঁড়ানোর সুরা-ক্বেরাত পড়ার পূর্বে মোট ৫টি অতিরিক্ত তাকবীর দিবেন। এর পরে বিসমিল্লাহ, সুরা ফাতেহা, ক্বিরাত পড়ে দ্বিতীয় রাকাত পূর্ণ করবেন। শেষ বৈঠক, সালাম ফিরিয়ে সালাত শেষ করবেন।
সহীহ হাদীসের দলীল দেখুনঃ তিরমিযীঃ ৪৪২, আবু দাউদঃ ১০১৯, দারা কুতনীঃ ১৭১০, বায়হাকীঃ ৩/২৮৬, এবং অন্যান্যরা।
কেউ যদি প্রচলিত ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিয়ে সালাত পড়েন, তাহলে ইমাম যেইভাবে পড়বেন সেইভাবেই পড়বেন। তাকবীরের ব্যপারে ইমামের বিরোধীতা করা যাবেনা। অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলা সুন্নত। উল্লেখ্য, আমাদের দেশে প্রচলিত ৬টি তাকবীরের বর্ণনা কোনো সহীহ হাদীসতো দূরের কথা, এমনকি কোনো যয়ীফ বা দুর্বল হাদীসেও নাই।
মূল উৎসঃ
(১) শায়খ আব্দুল হামীদ মাদানি ফাইযী

(২) Islamqa.com

#কুরবানী

#কুরবানী
(১) কুরবানী অনেক বড় ও মর্যাদাপূর্ণ একটা ইবাদত, তাওহীদবাদীদের নেতা, নবী ইব্রাহীম আলাইহিস সালাম-এর সুন্নত। কুরবানী নিয়ে কুরআনে দুইটি আয়াত রয়েছেঃ
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন, (হে নবী) সুতরাং আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কুরবানী করুন। সুরা আল-কাউসারঃ ২।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আরো বলেছেন, (হে নবী) আপনি বলুনঃ নিশ্চয়ই আমার নামায, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও আমারা মৃত্যু, শুধুমাত্র বিশ্ব জাহানের পালনকর্তা আল্লাহর জন্যে। সুরা আল-আনআমঃ ১৬২।
(২) অধিকাংশ আলেম কুরবানী করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলে মনে করেন। যদিও কিছু সংখ্যক আলেম একে ওয়াজিব বলে মনে করেন। তবে কুরবানী করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা হোক আর ওয়াজিব হোক, যারা সামর্থ্যবান তাদের এই ইবাদত পালনে চেষ্টা করা উচিৎ। যাদের সামর্থ্য নেই, আল্লাহ কারো উপর তার চাইতে বেশি বোঝা চাপিয়ে দেন না।
(৩) কুরবানী করা দান করার চাইতে বেশি সওয়াব। লোক দেখানোর জন্যে বা গোশত খাওয়া নয়, ইখলাস অর্থাৎ শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে কুরবানী করলে আপনার সম্পূর্ণ টাকা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় হলো, যা পরকালের সম্পদ হিসেবে জমা থাকবে। অধিকন্তু, কুরবানী থেকে আপনার ও আপনার পরিবারের গোশত খাওয়া আল্লাহ তাআলা বৈধ করেছেন। এটা আল্লাহর অনেক বড় একটা অনুগ্রহ। সুবহানাল্লাহ!
(৪) কোন ব্যক্তির কুরবানী দেওয়া উচিৎ, যাকাতের মতো এমন কোন নিসাব বা নির্দিষ্ট পরিমান সম্পদের কথা উল্লেখ করা নেই। ঈদুল আযহা বা ১০-ই জিলহজ্জের পূর্বে আপনার কাছে যদি এমন পরিমান সম্পদ হাতে থাকে যে, আপনি ধার-কর্জ না করে বা নিজেকে কষ্ট না দিয়ে সহজেই কুরবানীর জন্যে পশু কিনতে পারবেন, আপনি তাহলে কুরবানী কিনবেন।
(৫) একটা পশু, সেটা গরু হোক কিংবা ছাগল, ছোট কিংবা বড় কুরবানী হিসেবে আপনার পুরো পরিবারের জন্যে যথেষ্ঠ, যদিও আপনার পরিবারে সদস্য সংখ্যা অনেক।
(৬) একটা গরুতে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হয়ে কুরবানী দিতে পারবে। তবে খেয়াল রাখতে হবে, যারা শরীক হবে তাদের সবাইকে নামাযী, মুসলিম হতে হবে। বেনামাযী, কবর-মাযার পূজারী, ধর্ম নিরপেক্ষতা মতবাদে বিশ্বাসী কাউকে কুরবানীতে শরীক বানোনা যাবেনা, কারণ তাদের নিজেদের কুরবানী আল্লাহ কবুল করবেন না। শরীক ব্যক্তিদের নিয়ত বা উদ্দেশ্য যেনো সঠিক হয়, কারো উদ্দেশ্য যেনো লোক দেখানো বা গোশত খাওয়া না হয়। সবার কুরবানীর টাকা যেনো হালাল উপার্জনের হয়ে থাকে। ব্যংকের উপার্জন, হারাম চাকরী বা ব্যবসা, সুদ-ঘুষের হারাম টাকা থেকে কুরবানী করলে আল্লাহ কবুল করেন না। আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া অন্য কিছু কবুল করেন না।
(৭) বেনামাযী অর্থাৎ, যে ব্যক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়েনা, মসজিদে পড়েনা, বাসাতেও পড়েনা, তার ঈমান নেই। আর ঈমান ছাড়া কোন ব্যক্তির ইবাদতঃ নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত বা কুরবানী, কোনকিছুই আল্লাহ কবুল করেন না। সুতরাং, বেনামাযী ব্যক্তি কুরবানী করতে চাইলে তাকে অবশ্যই প্রথমে লজ্জিত হয়ে, আন্তরিক তোওবা করে, নামায কায়েম করার দৃঢ় ইচ্ছা নিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে হবে।
(৮) গরুতে ভাগে আকিকা দিলে সেই আকিকাহ হবেনা। আকিকা দিতে হয় জন্মের সপ্তম দিনে, ঈদের দিনে নয়। আর আকিকাহ দিতে হয় মেয়ে হলে একটা ছাগল, আর ছেলে হলে দুইটা। অবশ্য, কারো সামর্থ্য না থাকলে সে ছেলের জন্যে একটা ছাগল দিয়ে আকিকাহ করতে পারে। কিন্তু গরু বা উট দিয়ে আকিকাহ করা যাবেনা, গরু বা উট দিয়ে আকিকাহ করার কোন দলিল নেই। আর কুরবানীর সময় ভাগে আকিকাহ করার তো প্রশ্নই আসেনা। কারণ, আকিকাহ করতে হয় পশুর প্রাণ দিয়ে, এক পশুকে ভাগে আকিকাহ করার কোন দলিল নেই।
(৯) কুরবানী হয় কোন ব্যক্তির ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে, নামে নয়, নাম হবে আল্লাহর নামে। আমরা যেকোন কাজের পূর্বে বলিঃ বিসমিল্লাহ অর্থ হচ্ছে আমি এই কাজটা আল্লাহর নামে শুরু করছি। অনুরূপভাবে, আমরা দান করি, কুরবানী করি আল্লাহর নামে বা আল্লাহর জন্যে। আর বলতে হবে বা নিয়ত করতে হবে, হে আল্লাহ এই কুরবানী আমার ও আমার পরিবারের পক্ষ থেকে। যেই সমস্ত ভাইয়েরা কুরবানী করবেন, আপনারা নিজেদের সাথে আপনাদের অধীনে বা পরিবারের সবার পক্ষ থেকে এই কুরবানী, এইভাবে নিয়ত করবেন, এতে সবাই সওয়াব পেয়ে যাবে ইংশাল্লাহ।
(১০) কোন ব্যক্তি একা গরু কুরবানী করছে, তার জন্যে গরু জবাই করার পূর্বে সাত জনের নামের লিস্ট বানানোর কোন দরকার নেই, বরং এটা অজ্ঞতা। একজন ব্যক্তির কুরবানী, সেটা গরু বা ছাগল যা হোক, তার পরিবারের সবার জন্যে, এমনকি যদিওবা তার পরিবারের লোক ৫০ জন হোক।
(১১) কুরবানীর গোশত নিজের জন্যে, আত্মীয়ের জন্যে এবং ফকির-মিসকীনদের জন্যে এই তিন ভাগে ভাগ করা উত্তম বা ভালো, তবে এটা করা ফরজ বা ওয়াজিব নয়। যার পরিবারের লোক সংখ্যা বেশি, তিনি তার প্রয়োজন অনুযায়ী গোশত রেখে বাকিটা দান করবেন। দরিদ্রদেরকে যেটা দেওয়া হবে, সেটা সাদাকাহ হিসেবে গণ্য হবে।
(১২) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কিংবা রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত হয়নি।
(১৩) কুরবানীর গোশত ফ্রীজে রেখে বা শুকিয়ে সাত দিনের বেশি খাওয়া যাবে, এতে কোন দোষ নেই।
(১৪) কুরবানী জবাই ও গোশত প্রস্তুত করার কাজে নিয়োজিত লোকদেরকে কুরবানীর গোশত দিয়ে পারিশ্রমিক দেওয়া যাবেনা। তাদেরকে আলাদা মূল্য দিয়ে পারিশ্রমিক দিতে হবে। তবে কেউ যদি চায়, তাদেরকে গোশত থেকে দান করতে বা হাদিয়া দিতে, সেটা তার ব্যক্তিগত ব্যপার।
(১৫) কুরবানীর পশুর ভূড়ি, মগজ, খাওয়ার যোগ্য এমন যেকোন অংশ খাওয়া যাবে। কুরবানীর পশুর গোশতের মতোই চামড়া কেউ যদি নিজে প্রসেস করে ব্যবহার করতে পারে, তাহলে সে তা করতে পারবে। আর নিজে প্রসেস করতে না পারলে তাহলে যদি বিক্রি করে, তাহলে সেই টাকা দান করে দিতে হবে।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

শয়তান সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে বর্ণিত কয়েকটি আয়াত

শয়তান সম্পর্কে কুরআনুল কারীমে বর্ণিত কয়েকটি আয়াত
(১) হে আদমের সন্তানেরা! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, তোমরা শয়তানের ইবাদত করোনা, সেতো তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর তোমরা শুধুমাত্র আমারই ইবাদত কর এটাই হচ্ছে সিরাত্বাল মুস্তাক্বীম (সরল-সঠিক পথ) (ইতিঃপূর্বে) শয়তান তোমাদের অনেক দলকে পথভ্রষ্ট করেছে তবুও কি তোমরা বুঝনি? সুরা ইয়াসীনঃ ৬০-৬২।
(২) হে আদমের সন্তানেরা! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে; যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে এমতাবস্থায় যে, তাদের পোশাক তাদের থেকে খুলিয়ে দিয়েছি, যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয় সে (ইবলীস শয়তান) এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখতে পারে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখনা আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা ঈমান আনে না সুরা আরাফঃ ২৭
(৩) শয়তান তোমাদেরকে দারিদ্রতার ভয় দেখায় এবং ফাহেশাহ (অশ্লীল বা জঘন্য কাজের) আদেশ দেয় পক্ষান্তরে, আল্লাহ তোমাদেরকে নিজের পক্ষ থেকে ক্ষমা ও অধিক অনুগ্রহের ওয়াদা করেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সুবিজ্ঞসুরা বাক্বারাহঃ ২৬৮
(৪) আর আমি তোমাদেরকে (মানুষকে) সৃষ্টি করেছি, এরপর আকার-অবয়ব, তৈরী করেছি অতঃপর আমি ফেরেশতাদেরকে বলেছি, তোমরা আদমকে সেজদা কর তখন সবাই সেজদা করেছে, কিন্তু ইবলীস সে সেজদাকারীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল না আল্লাহ (ইবলীস শয়তানকে) বললেন, আমি যখন নির্দেশ দিয়েছি, তখন তোকে (আদমকে) সেজদা করতে কিসে বারণ করল? সে (ইবলীস) বলল, আমি আদমের চাইতে শ্রেষ্ঠ। কারণ, আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন আর আদমকে সৃষ্টি করেছেন মাটির দ্বারা আল্লাহ বললেন, তুই এখান থেকে বেরিয়ে যা এখানে অহংকার করার কোন অধিকার তোর নাই। অতএব, তুই বের হয়ে যা তুই হীনতমদের অন্তর্ভুক্তইবলীস বলল, আমাকে কেয়ামত দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন আল্লাহ বললেন, তোকে সময় দেয়া হল। সুরা আরাফঃ ১১-১৫
(৫) সে (ইবলীস শয়তান) বললঃ, হে আমার পলনকর্তা! আপনি যেমন আমাকে পথভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের (আদম আঃ ও তার সন্তানদের) সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যের দিকে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করে দেব তবে আপনার মনোনীত বান্দাদের ছাড়া আল্লাহ বললেন, এটা আমার পর্যন্ত সিরাত্বাল মুস্তাক্বীম (সরল-সঠিক পথ) যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোর কোন ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রষ্টদের মধ্য থেকে যারা তোর পথে চলে (তাদেরকে তুই পথভ্রষ্ট করতে পারবি)সুরা হিজরঃ ৩৯-৪২
(৬) যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনেনা, আর ঈমান আনেনা কেয়ামত দিবসের প্রতি, তাদের সাথী হয় শয়তান, শয়তান যার সাথী হয় সেতো হল সবচাইতে খারাপ সাথীসুরা নিসাঃ ৩৮
(৭) (হে নবী!) আপনি কি লক্ষ্য করেননি যে, আমি কাফেরদের উপর শয়তানদেরকে ছেড়ে দিয়েছি। তারা তাদেরকে বিশেষভাবে (খারাপ কাজে) উৎসাহিত করেসুরা মারইয়ামঃ ৮৩
(৮) এরা যে রয়েছে (মানুষেরর মাঝে কাফের, মুশরেক ও মুনাফেক যারা দ্বীনের ব্যপারে বাঁধা সৃষ্টি করে), এরা হচ্ছে (মানুষ) শয়তান এরা নিজেদের বন্ধুদের (কাফের সৈন্যবাহিনীর) ব্যাপারে তোমাদেরকে ভয় দেখায়সুতরাং, তোমরা তাদেরকে ভয় করো না আর তোমরা যদি সত্যিকারের ঈমানদার হয়ে থাক, তবে শুধু আমাকেই ভয় করসুরা আলে-ইমরানঃ ১৭৫

(৯) যখন সব কাজের ফায়সলা হয়ে যাবে, তখন শয়তান বলবেঃ নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে যে সত্য ওয়াদা দিয়েছিলেন (আজ তা সত্যি হলো), আর আমি তোমাদের সাথে যে ওয়াদা করেছি, অতঃপর আজ আমি তা ভঙ্গ করেছি তোমাদের উপরতো আমার কোন ক্ষমতা ছিল না, কিন্তু এতটুকু যে, আমি তোমাদেরকে (খারাপ কাজের দিকে) ডেকেছি, অতঃপর তোমরা আমার কথা মেনে নিয়েছ অতএব তোমরা আমাকে ভৎর্সনা করো না বরং তোমরা নিজেদেরকেই ভৎর্সনা কর আমি তোমাদের উদ্ধারে সাহায্যকারী নই এবং তোমরাও আমার উদ্ধারে সাহায্যকারী নও ইতোপূর্বে তোমরা আমাকে যে আল্লাহর শরীক করেছিলে, আজি আমি তা অস্বীকার করছি নিশ্চয় যারা জালেম, তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তিসুরা ইব্রাহীমঃ ২২

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

মৃত ব্যক্তির আত্মা ‘ভূত’ হয়ে দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ায়, কথাটা কি সত্যি?

প্রশ্নঃ আত্মহত্যাকারী বা অপঘাতে মৃত ব্যক্তির আত্মা ভূত হয়ে দুনিয়াতে ঘুরে বেড়ায়, কথাটা কি সত্যি?
উত্তরঃ আমাদের মুসলমানদের সমস্যা হচ্ছে, আমরা দিন-রাত ২৪ ঘন্টা কাফের মুশরেকদের বানানো নাটক-সিনেমা আর গল্পের বই নিয়ে পড়ে থাকি, ইন্টারনেট, ফেইসবুকে ফাসেক বোকা লোকদের কথার অনুসরণ করি, কিন্তু দিনের অন্তত কিছুটা সময় বের করে কুরান হাদীস পড়ার মতো সময় আমাদের হয়না! আমরা এতো ব্যস্ত যে, জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য কি করতে হবে, সেটা জানার ও বোঝার মতো সময় আমাদের হয়না! কিন্তু কাফের মুশরেকদের দেশ ঘুরে বেড়ানো, বিনোদনের নামে অশ্লীল ও নোংরা অপসংস্কৃতি, হারাম গান-বাজনা, নাটক সিনেমা, গল্পের বই উপন্যাস, কার্টুন আর ফুটবল-ক্রিকেটের মতো খেলা দেখার মতো ফালতু কাজের জন্য সময় বের করতে আমরা বড়ই উস্তাদ! যার ফলে বর্তমানের আমাদের অবস্থা কি হয়েছে?
অধিকাংশ মানুষ ইসলাম সম্পর্কে অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞান রাখেনা। কাফের মুশরকদের ও বেদ্বীন লোকদের বানানো নাটক-সিনেমাতে প্রচারিত শিরকি ও কুফুরী আকীদাহ মুসলমানদের মাঝে ঢুকে গেছে। দুঃখের বিষয় হলো, আমাদের অনেকে জানেইনা যে এইগুলো শিরকি কুফুরী ভ্রান্ত বিশ্বাস। দ্বীন সম্পর্কে গভীর দূরের কথা (যা ছাড়া ইবাদত করা খুব কঠিন), সাধারণ ঈমান ইসলামের অর্থ কি, সংজ্ঞা কি, অনেক মানুষই এইগুলো সম্পর্কে জানেনা। ক্বুরানের অন্তত দশটা-বিশটা ছোট সুরার অর্থ, এমনকি সুরা ফাতেহার অর্থ ও তাফসীর অনেকে জানেনা। নামায পড়ে ঠিকই, কিন্তু নামায কেনো পড়া হচ্ছে, নামাযে কি পড়া হচ্ছে, সেটা অনেক নামাযীই জানেনা। সঠিকভাবে নামাযের অর্থ ও নিয়ম না জানা থাকার কারণে অনেকেই নামাযের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করতে পারছেনা। শুধু মন্ত্র পড়ার মতো আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হয়েছে আমাদের অধিকাংশ মুসলমানদের নামাযগুলো।
যাই হোক, যে প্রসংগে এই কথাগুলো বলা। মৃত ব্যক্তির আত্মার ভাগ্যে কি হয় সেটা আল্লাহ তাআলা ক্বুরানুল কারীমে সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন। মানুষ দুইটি জিনিসের সমন্বয়ে গঠিতঃ রুহ বা আত্মা এবং শরীর বা দেহ। মৃত ব্যক্তির দেহকে তো আমরা কবর মাটি চাপা দেই, যা সময়ের ব্যবধানে পচে গলে মাটির সাথে মিশে যায়। উল্লেখ্য, সহীহ হাদীসে উল্লেখ আছে নবী রাসূলদের দেহ মাটি খেতে পারেনা। তাই আমাদের বিশ্বাস সমস্ত নবী রাসুলদের দেহ তাঁদের কবরে অক্ষত অবস্থায় আছে। কিন্তু অন্যদের দেহ মাটির সাথে মিশে যায়।
আর মৃত ব্যক্তির আত্মাগুলো কোথায় যায়? এটা নির্ভর করে, আত্মাটা কি ধরণের মানুষের, তার উপরে। মৃত ব্যক্তি যদি ঈমানদার, ধার্মিক ও পবিত্র জীবন যাপনকারী কেউ হয়, তাহলে তার আত্মাটাকে আসমানের উপরে ইল্লিয়্যিনে সম্মানের সহিত রাখা হয়। যেখানে সে আল্লাহর নেয়ামত ও সন্তুষ্টির সাথে বসবাস করতে থাকে। আর আত্মাটা যদি হয় কাফের, মুশরেক, পাপাচারী ও খবিস জীবন যাপনকারী কোন ব্যক্তির, তাহলে আসমানের দরজা তার জন্য উন্মুক্ত করা হয়না এবং আকাশ থেকে জমীনের নীচে, সিজ্জিনে ছুঁড়ে ফেলা দেয়া হয়। সেইখানে তার আত্মাটা গ্রেফতার করা অবস্থায়, আল্লাহ তার উপর ক্রোধান্বিত এমন অবস্থায় বন্দী হয়ে থাকে।
এই সম্পর্কে কুরআনের সুরা মুতাফফিফীনে বলা হয়েছেঃ
উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।

(৭) নিশ্চয় পাপাচারীদের আমলনামা সিজ্জীনে আছে।
(৮) (হে নবী!) আপনি কি জানেন, সিজ্জীন কি?
(৯) এটা লিপিবদ্ধ খাতা।
(১০) সেদিন দুর্ভোগ মিথ্যারোপকারীদের,
(১১) যারা বিচারের দিনকে মিথ্যারোপ করে।
(১২) প্রত্যেক সীমালংঘনকারী, পাপিষ্ঠই কেবল এই (বিচারের দিনকে) মিথ্যা বলে।
(১৩) তার কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করা হলে সে বলে, এতো প্রাচীনকালের উপকথা।
(১৪) কখনও না, বরং তারা যা করে তাই তাদের হৃদয় মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।
(১৫) কখনও না, তারা সেদিন তাদের পালনকর্তার থেকে পর্দার আড়ালে থাকবে।
(১৬) অতঃপর তারা জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
(১৭) এরপর তাদেরকে বলা হবে, এই (বিচার দিন, জাহান্নামের শাস্তিকে) তো তোমরা মিথ্যারোপ করতে।
(১৮) কখনও না, নিশ্চয় সৎলোকদের আমলনামা আছে ইল্লিয়্যীনে।
(১৯) (হে নবী!) আপনি কি জানেন, ইল্লিয়্যীন কি?
(২০) এটা লিপিবদ্ধ খাতা।
(২১) আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ একে প্রত্যক্ষ করে।
সুরা মুতাফফিফিনঃ ৭-২১।
এখন যার আত্মা ইল্যিয়িনে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নেয়ামত ভোগ করছে, তার আত্মাতো কোনোদিন দুঃখ-দুর্দশার দুনিয়াতে আসতে চাইবেনা, আর আসতে চাইলেও তাকে আসতে দেওয়া হবেনা! আর যার আত্মা সিজ্জিনে বন্দী অবস্থায় থাকবে, শাস্তির ভয়ে সেতো সেখান থেকে পালাতেই চাইবে, কিন্তু তাকেও সিজ্জিন থেকে বের হতে দেওয়া হবেনা। মৃত ব্যক্তির আত্মা দুনিয়াতে ঘোরাফেরা করে, মৃত্যুর ৭দিন বা ৪০দিন পর্যন্ত আত্মীয় স্বজনদের কাছে থাকে, মৃতের খুনি বা নির্যাতনকারীকে হত্যা করে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে, পীর ফকিরেরা মৃত্যুর পর তাদের মুরীদদেরকে বা মানুষদেরকে সাহায্য করে, এই ধরণের কথা বার্তা সম্পূর্ণ কুফুরী, যার উৎস হলো হিন্দু বা অন্য বাতিল ধর্ম। জিন সত্যি, কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমানিত আল্লাহ তাআলার বিশেষ সৃষ্ট এক ধরণের প্রাণী হলো জিন। জিন জাতির অস্তিত্ব যে অস্বীকার করে সে পরিষ্কার কাফের। কিন্তু, মৃত ব্যক্তির আত্মা দুনিয়াতে ভূত-প্রেত হিসেবে অবস্থান করে, এধরণের আকীদা বা বিশ্বাস ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক। অথচ, কত লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি মানুষ আছে, যারা নিজেদেরকে মুসলমান মনে করে, নামায-রোযা করে কিন্তু ইয়াহুদী-খ্রীস্টান, কাফের-মুশরেকদের বানানো হ্যারি পটার, কিরণ মালা, লর্ড অব দ্যা রিংস, বিভিন্ন হিন্দী-ইংরেজী নাটক, সিনেমা, ডিটেকটিভ, ভৌতিক গল্প উপন্যাস পড়ছে বা দেখছে যেখান যাদু, কুফুরী কালাম, জ্যোতিষি ও গণকের তাগুত, শয়তান, মুশরেকদের ধর্ম, মূর্তি পূজার দিকে দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে। সামান্য বিনোদন ও আমোদ ফূর্তির জন্যে এই মুসলমানেরা নাটক সিনেমা বা গল্প উপন্যাসের লোভ ছাড়তে পারেনা যেখানে শিরক দেখানো হচ্ছে, দাজ্জাল যখন বের হবে এরা দাজ্জালের ধোঁকা থেকে নিজেদের ঈমানকে কিভাবে রক্ষা করবে?

চিন্তা করে দেখুন, আজ থেকে ১২৫০ বছর পূর্বেই আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের প্রসিদ্ধ একজন ইমাম, মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭৬১ খ্রীস্টাব্দ) বলেছিলেন, আমার মনে হয় আজকে যদি দাজ্জাল বের হয় তাহলে মনপূজারী, বিদআতীরা তাকেই অনুসরণ করবে। শরাহ উসুল আল-ইতিক্বাদ আহলে সুন্নাহঃ ১/১৩১।