মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৭

রাজতন্র

(১) রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস অনুযায়ী, মুসলিম উম্মাহর মাঝে খুলাফায়ে রাশেদা ত্রিশ (৩০) বছর পর্যন্ত জারী ছিলো। এরপর আমীরে মুয়াবিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে রাজতন্ত্র শুরু হয়। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে যে, মুসলিম জাতির ইতিহাসে সাহাবীদের যুগেই রাজতন্ত্র শুরু হয়। কিন্তু এমন কোন প্রমান নেই যে, কোন একজন সাহাবী ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম, এই ফতোয়া দিয়ে তৎকালীন রাজা-বাদশাহদেরকে অস্বীকার করেছিলেন।
(২) সাহাবীদের যুগের পরে তাবেয়ীদের যুগেও রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু এমন কোন প্রমান নেই যে, কোন একজন তাবেয়ী ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম, এই ফতোয়া দিয়ে তৎকালীন রাজা-বাদশাহদেরকে অস্বীকার করেছিলেন।
(৩) পূর্ব যুগের সম্মানিত ইমাম ও আলেমদের মধ্যেঃ
(ক) ইমাম আবু হানীফা রাহিমাহুল্লাহর সময়ে রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিলো।
(খ) ইমামের মালেক রাহিমাহুল্লাহর সময়েও রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিলো।
(গ) ইমাম শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহর সময়েও রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিলো।
(ঘ) ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহর সময়ে রাজতন্ত্র বিদ্যমান ছিলো।
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রসিদ্ধ এই চার জন ইমাম, এবং তাঁদের পূর্বের ও পরের আলেমগণ - সকলেই ক্বুরআন ও হাদীস গবেষণা করে কেউই এই ফতোয়া দিতে পারেন নি যে, ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম
কিন্তু ১৯০০-২০১৭ এই সময়ের মাঝে কিছু অল্প ইলম সম্পন্ন, স্বঘোষিত মুফতি মুহাদ্দিস বের হয়েছে, যারা ক্বুরআন ও হাদীস গবেষণা করে ইসলামকে নতুনভাবে(!) আবিষ্কার করেছে। বিগত ১৪০০ বছরের অধিক সময় ধরে মুসলিম উম্মাহ যা জানতে পারেনি, তাদের প্রচারিত এই নতুন ইসলামের কারণে মুসলিম উম্মত জানতে পারলো যে, ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম। নতুন(!) এই ইসলামে ফতোয়া দেওয়া শুরু হলো যে, ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম
দেখা যাচ্ছে কোন একজন আলেম ফতোয়া দেন নি যে, ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম। তাহলে ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম - এই ফতোয়া কারা দিচ্ছে? যদি কোন আলেম এই ফতোয়া না দিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই এই ফতোয়া হচ্ছে একজন জাহেল (মূর্খ) ব্যক্তির।
ফুটনোটঃ
(১) এই সমস্ত জাহেল মুফতি-মুহাদ্দিসদের অনুসরণ করেছে এবং তাদের প্রচারিত গোমরাহী মানুষের মাঝে প্রচারিত করে লোকদেরকে গোমরাহ করছে, এমন কিছু বিদআতী দলের নাম হচ্ছেঃ জামাতে ইসলামী, হিযবুত তাহরীর, হিযবুত তাওহীদ, ইখোয়ানুল মুসলিমিন, আল-কায়েদাহ, আইসিস।  
(২) দেশের রাজা যদি ক্বুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করেন, তাহলে কল্যাণকর কাজে তাঁর আনুগত্য করা ওয়াজিব। তাঁর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম এবং কবীরাহ গুনাহ।
(৩) খিলাফত ঘোষণা করার কোন জিনিস নয়। মুসলিম উম্মতের প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবান নেতা ও রব্বানী আলেমরা যদি একত্রিত হয়ে যোগ্য কোন ব্যক্তিকে খলিফাহ হিসেবে নির্বাচন করেন, তাহলে তিনি বৈধ মুসলিম খলিফা বলে গণ্য হবেন। ছোট-খাট দুয়েকটা দেশ দখল করে আর মুসলিম উম্মাহর সাথে পরামর্শ না করে কিংবা অনুমতি না নিয়ে যে ব্যক্তি নিজেই নিজেকে খলিফাহ বলে দাবী করবে, সে একজন পথভ্রষ্ট ও নির্বোধ ব্যক্তি।

(৪) আমি ভালো করেই জানি, আমার এই লেখা অনেকের শরীরে জ্বালা ধরাবে। তাদেরকে বলবোঃ যদি পারেন, আধুনিক যুগের জাহেল মুফতি-মুহাদ্দিসদের বাদ দিয়ে, ইসলামের ইতিহাসে বিগত ১৪০০ বছরের মধ্যে রেফারেন্স দেখান যে, কোন একজন আলেম ইসলামে রাজতন্ত্র হারাম - এমন ফতোয়া দিয়েছেন। কোন আলেমের পক্ষ থেকে এই ফতোয়া দেখাতে না পারলে, জাহেল হয়ে নিজে নিজে ফতোয়াবাজি বন্ধ করুন। আল্লাহকে ভয় করুন এবং জ্ঞান অর্জন করুন। জ্ঞান ছাড়া আন্দাজে ফতোয়াবাজি করে নিজেকে জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত করবেন না।