জান্নাতে যাওয়ার
সহজ আমলঃ
আল্লাহ তাআ’লা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন দুর্বলভাবে।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “আর মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে দুর্বলভাবে।” সুরা আন-নিসাঃ ২৮।
মানবিক এই
দুর্বলতার কারণে ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায়, জেনে হোক কিংবা না জেনে, নিজের
কু-প্রবৃত্তির অনুসরণ করে, শয়তানের ধোঁকায় পড়ে, মানুষের চাপে পড়ে, প্রলোভনের শিকার
হয়ে কিংবা খারাপ সংগীর পাল্লায় পরে মানুষ ছোট কিংবা বড় গুনাহতে লিপ্ত হয়ে পড়ে।
মানুষের এমন অনেক পাপ রয়েছে, যা মানুষ নিজে বুঝতেই পারেনা যে কোন কথা বা কাজের
কারণে বাম পাশের ফেরেশতা তার আমল নামায় পাপ লিখে ফেলছেন। মানুষ তার দুর্বলতার
কারণে পাপে লিপ্ত হওয়ার কারণে, কোন মানুষের পক্ষে আল্লাহ তাআ’লার রহমত ছাড়া
শুধুমাত্র নিজের আমল দ্বারা জান্নাতে যেতে পারবেনা।
উম্মুল মুমিনিন আয়ি’শাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা একবার রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ!
আল্লাহ তাআ’লার রহমত এবং করুণা
ছাড়া কেউ জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এমন কোন মানুষ নেই যে, আল্লাহ তাআ’লার রহমত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” তখন আয়ি’শাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা আবার জিজ্ঞেস
করলেন, “এমনকি আপনিও নন ইয়া
রাসুলুল্লাহ?” তিনি বললেন, “না, এমনকি আমিও না। তবে আল্লাহ তাআ’লা তাঁর স্বীয় রহমত দ্বারা আমাকে ঢেকে
রাখবেন।” এ কথাটি
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম তিনবার বললেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মিশকাতুল মাসাবিহঃ ৪০৮
পৃষ্ঠা।
মানুষ যাতে আল্লাহর
রহমত পেতে পারে সেইজন্য আল্লাহ তাআ’লা বান্দাদেরকে তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য ইবাদতের পদ্ধতি
শিক্ষা দিয়েছেন। সেই ইবাদত করে মানুষ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে পারে, বিনিময়ে আল্লাহ
তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে জান্নাত দিবেন। কুরআন ও সহীহ হাদীসে বর্ণিত এমন বিশেষ কিছু
ইবাদত বর্ণনা করা হলো, যা বান্দাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে।
(১) আন্তরিক
বিশ্বাসের সাথে কালেমার সাক্ষ্য দেওয়া ও তার হক্ক আদায় করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ
তাআ’লা
এমন ব্যক্তির উপর জাহান্নামের আগুন হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’
বলে সাক্ষ্য দিয়েছে।” সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে
ব্যক্তি এই সাক্ষ্য দেবে যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই এবং মুহা’ম্মাদ
তাঁর রাসুল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।”
সহীহ বুখারীঃ ৩৪৩৫, সহীহ মুসলিমঃ ২৮, সুনানে তিরমিযিঃ ২৬৩৮।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
এই সাক্ষ্য দান করল যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই। তিনি একক,
তাঁর কোন শরীক নেই। মুহা’ম্মদ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসুল। ঈসা আ’লাইহিস সালাম আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। তিনি (ঈসা) তাঁর
এমন এক কালিমা (বাক্য), যা তিনি মারইয়াম আ’লাইহিস সালামের
প্রতি প্রেরণ করেছেন, এবং তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত রূহ (আত্মা)। জান্নাত
সত্য, জাহান্নাম সত্য। সে ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআ’লা জান্নাত দান
করবেন,
তার আমল যাই হোক না কেন।” সহীহ বুখারী, সহীহ
মুসলিমঃ ৮০।
(২)
শিরক থেকে মুক্ত থাকা এবং তাওহীদের উপরে মৃত্যুবরণ করাঃ
ছোট কিংবা বড়, প্রকাশ্য
কিংবা গোপন, সমস্ত প্রকার শিরক থেকে বেঁচে থেকে তাওহীদের
উপরে মৃত্যুবরণ করা একজন মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ তাআ’লা বলেছেন, “হে আদম সন্তান! তুমি
যদি দুনিয়া পরিমান গুনাহ নিয়ে আমার কাছে হাজির হও, আর আমার সাথে কাউকে
শরিক না করা অবস্থায় মৃত্যু বরণ কর, তাহলে আমি দুনিয়া পরিমাণ
মাগফিরাত (ক্ষমা) নিয়ে তোমার দিকে এগিয়ে আসবো।” সুনানে তিরমিযীঃ
২৩৫৭, হাদীসটির সনদ হাসান।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক না করে মৃত্যু বরণ করবে, সে জান্নাতে প্রবেশ
করবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করে মৃত্যু বরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।” সহীহ বুখারীঃ ২৮৫৬, সহীহ
মুসলিমঃ ১৫৩।
সাহাবী মুআ’য বিন জাবাল
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে
বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের
পিছনে একটি গাধার পিঠে বসে ছিলাম। তিনি আমাকে ডাক দিয়ে বললেন, “হে মুআ’য! তুমি কি জানো, বান্দার
উপর আল্লাহর কি অধিকার রয়েছে? আর আল্লাহর উপর বান্দার কি অধিকার
আছে?” আমি
বললাম, “আল্লাহ ও
তাঁর রাসুলই ভালো জানেন।” তিনি বললেন, “বান্দার উপর আল্লাহর অধিকার হচ্ছে এই যে, তারা
শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না। আর আল্লাহর উপর
বান্দার অধিকার হচ্ছে, যারা তাঁর সাথে কাউকে শরিক করবে না, তাহলে
তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন না।” আমি (মুআ’য) বললাম, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমি
কি এই সুসংবাদ লোকদেরকে জানিয়ে দেব না?” তিনি বললেন, “তুমি তাদেরকে এই
সুসংবাদ দিওনা, তাহলে তারা ইবাদত ছেড়ে দিয়ে (আল্লাহর উপর ভরসা করে) হাত
গুটিয়ে বসে থাকবে।” সহীহ মুসলিমঃ ৪৬, সহীহ বুখারীর ‘কিতাবুল রিক্বাক’, হাদীস নং-৫০৭।
অনেক মুসলিম রয়েছে,
যারা জেনে কিংবা না জেনে অনেক সময় এমন কথা বলে ফেলে, কিংবা অজ্ঞতাবশত এমন কাজ করে
বসে যা আসলে শিরকের অন্তর্ভুক্ত। শিরকি কথা ও কাজ থেকে বাঁচার জন্য প্রতিটি
মুসলিমের উপর ফরয দায়িত্ব হচ্ছে কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী কোন কাজগুলো শিরক, এ
ব্যপারে পূর্ণাংগ জ্ঞান অর্জন করা। এজন্য আমাদের তাওহীদ ও শিরকের উপরে লিখিত কিতাবগুলো
পড়া উচিত এবং সহীহ আকিদার অনুসারী আলেমদের ওয়াজ-লেকচার শোনা উচিত। বিশেষ করে
শায়খুল ইসলাম মুহা’ম্মদ ইবনে আব্দুল
ওহহাব রাহিমাহুল্লাহর ‘কিতাবুত তাওহীদ’ বইটা সকলের পড়া ও বুঝা উচিত, যাতে করে তারা
শিরক থেকে সতর্ক হতে পারে ও বেঁচে থাকতে পারে।
জানা-অজানা যেকোন
শিরক থেকে বাঁচার জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামের শেখানো ছোট্ট একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকাল ও বিকালবেলা একবার করে এই দুয়াটা পড়ে, তাহলে আশা
করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন। দুয়াটা হচ্ছেঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ
উচ্চারণঃ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আ’উযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আ’লাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা
লিমা লা আ’লাম।
অনুবাদঃ
হে আল্লাহ! আমার জানা
অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
আর আমার
অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে আমি তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
দুয়াটা
পাবেন হিসনুল মুসলিম বইয়ের ২৪৬ পৃষ্ঠায়। মুসনাদে আহমাদ ৪/৪০৩,
হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩।
দুয়াটা মুখস্থ করে
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায়, সালাম ফেরানোর পূর্বে কিংবা মুনাজাতে পড়া উচিত।
(৩) প্রকাশ্যে ও
গোপনে,
সর্বদা ‘তাক্বওয়া’
অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাঃ
তাক্বওয়ার প্রতিদান
সম্পর্কে আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“(সেই দিন) মুত্তাক্বীদের জন্য
জান্নাতকে নিকটবর্তী করা হবে।” সুরা আশ-শুআ’রাঃ ৯০।
“আর যে ব্যক্তি তার
প্রতিপালকের সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করে, তার জন্য রয়েছে দুইটি
(জান্নাতের) বাগান।” সুরা
আর-রাহ’মানঃ ৪৬।
“আর যারা পরম দয়াময়
(আল্লাহকে) না দেখে ভয় করে, এবং (আল্লাহ) অভিমুখী অন্তর নিয়ে উপস্থিত হয়,
(তাদেরকে বলা হবে) তোমরা শান্তির সাথে (জান্নাতে) প্রবেশ কর;
এটা অনন্ত জীবনের দিন। সেখানে তারা যা কামনা করবে, তাই পাবে এবং আমার নিকট রয়েছে তারও অধিক*” সুরা আল-ক্বফঃ ৩৩-৩৫। *এই
আয়াতে ‘অধিক’ অর্থ হচ্ছে, জান্নাতে আল্লাহকে দেখতে পাওয়ার নেয়ামত।
“আর যে ব্যক্তি তার
পালনকর্তার সামনে দাঁড়ানোকে ভয় করেছে এবং প্রবৃত্তি বা খেয়াল-খুশি থেকে নিজেকে
বিরত রেখেছে, তার ঠিকানা হবে জান্নাত।” সুরা আন-নাযিআ’তঃ ৪০-৪১।
আবু হুরায়রাহ
রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লামকে প্রশ্ন করা হল, কোন আমল সবচাইতে বেশি পরিমাণে মানুষকে
জান্নাতে নিয়ে যাবে? তিনি বলেন, “তাক্বওয়া, সদাচরণ
ও উত্তম চরিত্র।” তাঁকে
আবার প্রশ্ন করা হল, কোন আমল সবচাইতে বেশি পরিমাণে মানুষকে
জাহান্নামে নিয়ে যাবে? তিনি বললেন, “মুখ ও লজ্জাস্থান।” ইবনে মাজাহ, তিরমিযীঃ ২০০৪, মিশকাতঃ ৪৬২১।
(৪)
মৃত্যুর পূর্বে “লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ” বলাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন “যার জীবনের
শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’, সে
ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।” আবু দাউদঃ ৩/১৯০, হাদীসটি
সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ তিরমিযীঃ
৩/১৫২।
এজন্য যে ব্যক্তি
মনে করবে যে তার মৃত্যুর সময় চলে এসেছে, তাহলে সে একটু পরপর ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বলতে
থাকবে। মুমূর্ষ ব্যক্তিকে তার কাছের আত্মীয়-স্বজনেরা ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বলার
জন্য স্বরণ করিয়ে দিবে। খেয়াল রাখতে হবে, কোন কথা বলে ফেললে
কথা শেষ করে পুনরায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলতে হবে। যাতে করে তার মুখ দিয়ে উচ্চারিত
সর্বশেষ কথাটা হয় ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’। ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বলার
পর কিছুক্ষণ চুপ করে বা অজ্ঞান থাকার পরেও যদি মৃত্যু হয়, তবুও
তার সর্বশেষ কথা ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বলে
ধরে নেওয়া হবে, এবং সে ব্যক্তি এই হাদীসে বর্ণিত ফযীলত,
অর্থাৎ জান্নাত পাবে বলে আশা করে যায়।
(৫)
ওযুর পরে ‘কালিমা
শাহাদাত’ পাঠ
করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন “যে ব্যক্তি
পূর্ণভাবে ওযু করবে, অতঃপর কালিমা শাহাদাত পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে যেটা দিয়ে ইচ্ছা
জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” মুসলিমঃ ১/২০৯, মিশকাতঃ
২৮৯।
কালিমা শাহাদাত
হচ্ছেঃ “আশহাদু আল-লা
ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ’দাহু লা
শারিকা-লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহা’ম্মাদান আ’বদুহু ওয়া রাসুলুহ।”
(৬) পাঁচ
ওয়াক্ত সালাত ওয়াক্ত অনুযায়ী আদায় করতে যত্নবান হওয়াঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয
করেছেন। সুতরাং, যে ব্যক্তি (এই পাঁচ ওয়াক্ত) সালাতের হক্কের
ব্যপারে কোন প্রকার কমতি ও তাচ্ছিল্য না করে সঠিকভাবে সেইগুলো আদায় করবে, তার জন্য আল্লাহ এই অংগীকার করেছেন যে, তিনি তাকে
জান্নাত দান করবেন। আর যে ব্যক্তি এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের ব্যাপারে কমতি ও
তাচ্ছিল্য করে তা আদায় করবে, তার প্রতি আল্লাহর কোন অংগীকার
নেই। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেন, আবার ক্ষমাও করতে পারেন।” হাদীসটি মুয়াত্তা
ইমাম মালিক, মুসনাদে ইমাম আহমাদ, সুনানে আবু
দাউদ, নাসায়ী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে। শায়খ আলবানী
হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। অনুরূপ হাদীস বর্ণিত হয়েছে সহীহ বুখারীঃ ২৬৭৮, সহীহ
মুসলিমঃ ১০৯।
(৭) ফযর ও আসরের
সালাত সঠিক সময়ে আদায় করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন “যে ব্যক্তি
দুইটি ঠান্ডা সময়ের (অর্থাৎ, ফযর ও আসর) সালাতের হেফাজত করবে,
সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে।” সহীহ বুখারীঃ ৫৭৪, সহীহ মুসলিমঃ ১৪৭০।
এই দুইটি সময়ে
ব্যস্ততা বা ঘুমের কারণে অনেকেই উদাসীন হয়ে সালাত কাযা করে ফেলে। একারণে এই দুইটি
সালাত হেফাজত করার বিশেষ ফযীলত হিসেবে সে জান্নাতে যাবে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিকদের নিকট সর্বাধিক কঠিন ও ভারী সালাত হচ্ছে ইশা ও ফজরের সালাত। এই দুই সালাত আদায়ের মধ্যে কি পরিমান কল্যাণ ও সওয়াব রয়েছে, যদি তারা সে সম্পর্কে জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা এই দুই সালাতের (জামাতে) অংশগ্রহণ করত।” সহীহ বুখারীঃ ৬৫৭, সহীহ মুসলিমঃ ৬৫১।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুনাফিকদের নিকট সর্বাধিক কঠিন ও ভারী সালাত হচ্ছে ইশা ও ফজরের সালাত। এই দুই সালাত আদায়ের মধ্যে কি পরিমান কল্যাণ ও সওয়াব রয়েছে, যদি তারা সে সম্পর্কে জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা এই দুই সালাতের (জামাতে) অংশগ্রহণ করত।” সহীহ বুখারীঃ ৬৫৭, সহীহ মুসলিমঃ ৬৫১।
(৮) পিতা-মাতার সেবা-যত্ন
করা ও তাদের সাথে উত্তম আচরণ করাঃ
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর বান্দাদেরকে ‘তাওহীদ’ (অর্থাৎ, শুধুমাত্র তাঁর ইবাদত করা এবং সমস্ত শিরক থেকে
বেঁচে থাকার) পর দ্বিতীয় যেই মহা আদেশ দিয়েছেন তা হচ্ছেঃ পিতা-মাতার সাথে
সদ্ব্যবহার করা।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তোমার প্রতিপালক এই নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে
ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করবে না, এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করবে। তাদের একজন
অথবা উভয়েই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে কখনো তাদের প্রতি বিরক্তিসূচক ‘উহ’ শব্দটাও বলো না এবং তাদেরকে কখনো ধমক দিয়ো না; বরং তাদের
সাথে সম্মানসূচক নম্রভাবে কথা বলো। তাদের সামনে তুমি ভালোবাসার সাথে বিনয়াবনত থেকো
এবং বলো, “হে আমার প্রতিপালক!
আপনি তাদের উভয়ের প্রতি সেইরূপ দয়া করুন; যেইভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন-পালন
করেছে।” সুরা বানী ইসরাঈলঃ
২৩-২৪।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “আমি মানুষকে তার মাতা-পিতার সাথে সদ্ব্যবহার করতে
নির্দেশ দিয়েছি।” সুরা আ’নকাবুতঃ ৮।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরণের নির্দেশ
দিয়েছি। তার জননী কষ্টের পর কষ্ট সহ্য করে সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে এবং তার
স্তন্যপান ছাড়াতে দুই বছর সময় অতিবাহিত হয়। সুতরাং তুমি আমার (আল্লাহর) প্রতি ও
তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও।” সুরা লুকমানঃ ১৪।
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং কোন কিছুকে তাঁর সাথে শরীক
করো না। আর তোমরা পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, পিতৃহীন, অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় ও
অনাত্মীয় প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী, পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের
প্রতি সদ্ব্যবহার কর।” সুরা আন-নিসাঃ ৩৬।
সঠিক সময়ে ফরয
সালাত আদায়ের পর সর্বোত্তম আমল হচ্ছে পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। পিতা-মাতার
সাথে সদ্ব্যবহার করা এমনকি জিহাদের চাইতে আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়।
আ’ব্দুল্লাহ ইবনু মাসউ’দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “আমি নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করলাম, কোন আমল
আল্লাহর নিকট সবচাইতে বেশি প্রিয়?” তিনি বললেন, “যথা সময়ে সালাত আদায় করা।” আমি বললাম, “তারপর কোনটি?” তিনি বললেন, “পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা।” আমি বললাম, “তারপর কোনটি?” তিনি বললেন, “আল্লাহর পথে জিহাদ করা।” সহীহ বুখারীঃ ৫২৭, সহীহ মুসলিমঃ ৮৫, তিরমিযীঃ ১৭৩।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “পিতা-মাতা জান্নাতের দরজা সমূহের মধ্যে
সর্বশ্রেষ্ঠ দরজা। সুতরাং তুমি যদি চাও, তাহলে এই দরজাকে নষ্ট কর অথবা তার
রক্ষণা-বেক্ষণ কর।” তিরমিযীঃ ১৯০০,
ইবনু মাজাহঃ ২০৮৯, আহমাদঃ ২১২১০। হাদীসটি হাসান সহীহ, শায়খ আলবানী।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তার নাক ধূলি-ধূসরিত হোক, অতঃপর তার নাক
ধূলি-ধূসরিত হোক, অতঃপর তার নাক ধূলি-ধূসরিত হোক, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতাকে
বৃদ্ধ অবস্থায় পেল; একজনকে অথবা দু’জনকেই। কিন্তু সে (তাদের খিদমত করার মাধ্যমে আল্লাহর
সন্তুষ্টি অর্জন করে) জান্নাত যেতে পারল না।” সহীহ মুসলিমঃ ২৫৫১, আহমাদঃ ৮৩৫২।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকেই বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে প্রশ্ন করল, “হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার সবচাইতে বেশি কার?” তিনি বললেন, “তোমার মায়ের।” সে বলল, “তারপর কার?” তিনি বললেন, “তোমার মায়ের।” সে বলল, “তারপর কে?” তিনি বললেন, “তোমার মায়ের।” সে বলল, “তারপর কে?” তিনি বললেন, “তোমার বাবার।”
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকেই বর্ণিত। তিনি বলেন, একটি লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে প্রশ্ন করল, “হে আল্লাহর রাসুল! আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার সবচাইতে বেশি কার?” তিনি বললেন, “তোমার মায়ের।” সে বলল, “তারপর কার?” তিনি বললেন, “তোমার মায়ের।” সে বলল, “তারপর কে?” তিনি বললেন, “তোমার মায়ের।” সে বলল, “তারপর কে?” তিনি বললেন, “তোমার বাবার।”
অন্য এক বর্ণনায়
আছে, “হে আল্লাহর রাসুল!
আমার কাছ থেকে সদ্ব্যবহার পাওয়ার অধিকার সবচাইতে বেশি কার?” তিনি বললেন, “তোমার মা, তারপর তোমার মা, তারপর তোমার মা,
তারপর তোমার বাবা, তারপর যে তোমার সবচাইতে বেশি নিকটবর্তী।” সহীহ বুখারীঃ ৫৯৭১, সহীহ মুসলিমঃ ২৫৪৮, ইবনু
মাজাহঃ ২৭৩৮।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “পিতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং
পিতার অসন্তুষ্টিতেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি।” তিরমিযীঃ ১৮৯৯, হাকিমঃ ৭২৪৯, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী।
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহুমা বলেন, “আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য মায়ের সাথে ভালো আচরণের চাইতে উত্তম কোন আমল
আমার জানা নাই।” আদাবুল মমুফরাদঃ ৪, বাযযার, হাদিসটি
সহীহ, শায়খ আলবানী।
(৯) জিহবা ও
লজ্জাস্থানের হেফাযত করাঃ
মানুষের সবচেয়ে
বড় দায়িত্ব হল তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করা। কারণ, এই দুইটি অংগের কারণে
সবচাইতে বেশি মানুষ জাহান্নামে যাবে। সুতরাং যে ব্যক্তি এই দুইটি জিনিসের হেফাযতের
দায়িত্ব নিবে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
তার জান্নাতের ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
তার দুই চোয়ালের মধ্যবর্তী (জিহবা) এবং দুই পায়ের মধ্যবর্তী (লজ্জাস্থান)
হেফাযতের নিশ্চয়তা দিবে, আমি তার জান্নাতের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দেব।” সহীহ বুখারী।
জিহবার হেফাজত করার
মধ্যে রয়েছে কুফুরী, শিরকি কিংবা আল্লাহর নাফরমানির কথা বলা, গীবত, চোগলখুরী,
মিথ্যা, অপবাদ, অন্যায়ভাবে অভিসম্পাত, গালি-গালাজ, অহংকার করা, কাউকে মনে কষ্ট
দিয়ে কথা বলা, ইত্যাদি খারাপ কাজ থেকে
জিহবাকে সংযত রাখা। আর লজ্জাস্থান হেফাযতের মধ্য রয়েছে অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা,
পরকীয়া, জিনা-ব্যভিচার, সমকামীতা, হস্তমৈথুন ইত্যাদি অশ্লীল কাজ থেকে বিরত
থাকা।
(১০)
প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে ‘আয়াতুল কুরসী’ পাঠ করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করে, মৃত্যু ছাড়া আর কোন কিছুই
তাকে জান্নাতে প্রবেশ করা থেকে বিরত রাখতে পারবে না।” নাসায়ী, ইবনু হিব্বান, হাদীসটি সহীহ, শায়খ
আলবানী।
(১১)
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যাবেলায় আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে ‘সাইয়েদুল ইস্তেগফার’ পড়াঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “সাইয়েদুল
ইস্তিগফার হচ্ছে বান্দার এই কথা বলা যে, “আল্লা-হুম্মা আংতা রাব্বি. . .শেষ পর্যন্ত”। যে ব্যক্তি দিনে
(সকাল বেলা) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই দুয়াটি পড়বে, অতঃপর সে যদি সেইদিন
সন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতীদের
অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে (সন্ধ্যাবেলা) এই দুয়াটি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে
পড়ে, অতঃপর সে যদি সেই রাতে ভোর হওয়ার পূর্বেই মারা যায়,
তাহলে সে জান্নাতীদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত হবে।” সহীহ বুখারীঃ ৬৩০৬, তিরমিযীঃ ৩৩৯৩, নাসায়ী।
‘সাইয়েদুল ইস্তিগফার’ অর্থ হচ্ছে, বান্দার কৃত গুনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য সর্বোত্তম দুয়া।
(১২)
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যায় তিনবার জান্নাতের জন্য দুয়া করা ও তিনবার জাহান্নাম থেকে
মুক্তির জন্যে দুয়া করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
আল্লাহর কাছে তিনবার জান্নাত প্রার্থনা করে, তখন জান্নাত আল্লাহর কাছে
দুয়া করে, “হে আল্লাহ
তুমি তাকে জান্নাত দান করো।”
আর যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে তিনবার জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা
করে, তখন জাহান্নাম আল্লাহর কাছে দুয়া করে, “হে আল্লাহ তুমি
তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দাও”। তিরমিযিঃ ২৫৭২, ইবনে মাজাহঃ ৪৩৪০, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী, সহীহ
আল-জামিঃ ৬২৭৫।
জান্নাত প্রার্থনা
করা ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য দুয়াঃ
اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারণঃ
আল্লা-হুম্মা ইন্নী আস-আলুকাল জান্নাতা, ওয়া আ’উযুবিকা মিনান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ!
আমি আপনার কাছে জান্নাত প্রার্থনা করছি, আর আমি আপনার কাছে
জাহান্নাম থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
(১৩)
প্রতিদিন সুরা মুলক পড়াঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “কুরআনে
ত্রিশ আয়াত বিশিষ্ট এমন একটি সুরা আছে, যা তার পাঠকারীর জন্য
সুপারিশ করবে এবং শেষা পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে। আর সেটা হলো ‘তাবা-রাকাল্লাযী
বিইয়াদিহিল মুলক’ (সুরাহ
মুলক)।” তিরমিযীঃ
২৮৯১, আবু দাউদঃ ১৪০০, ইবনে মাজাহঃ
৩৭৮৬, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানী।
(১৪)
অহংকার, গুলুল ও ঋণ থেকে মুক্ত থাকাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
অহংকার,
গুলুল ও ঋণ; এই তিনটি জিনিস থেকে মুক্ত থাকা
অবস্থায় মারা যাবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে।” ইবনে মাজাহঃ ২৪০৩, তিরমিযীঃ ১৫৭২, হাদীসটি সহীহ, শায়খ
আলবানী, সহীহ তিরমিযী।
‘গুলুল’ হচ্ছে জিহাদে প্রাপ্ত
গনীমতের সম্পদ বন্টন করার পূর্বেই লুকিয়ে রেখে বা চুরি করে আত্মসাৎ করা।
(১৫)
মনোযোগী হয়ে, আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে আযানের উত্তর দেওয়াঃ
আযানের সময়
মুয়াজ্জিন যা যা বলে, তার সাথে তাই বলতে হবে। শুধুমাত্র মুয়াজ্জিন
যখন “হাইয়্যা আ’লাস সালাহ” ও “হাইয়্যা আ’লাল ফালাহ” বলবে, তখন
তার উত্তরে সেটা না বলে বলতে হবে “লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ”।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
আন্তরিক বিশ্বাসের সাথে আযানের উত্তর দেয়, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব
হয়ে যায়।” সহীহ
মুসলিমঃ ৩৮৫।
(১৬)
আযানের দুয়া পড়াঃ
মুয়াজ্জিনের সাথে
আযানের জবাব দেওয়ার পর, যেকোন সহীহ একটা দুরুদ পাঠ করে, অতঃপর আযানের যেই দুয়া রয়েছে সেটা পড়তে হয়।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “আযান শুনে
কেউ যদি আযানের দুয়া পড়ে, কিয়ামতের দিন ঐ ব্যাক্তির জন্য সুপারিশ করা
আমার জন্য অনিবার্য হয়ে যাবে।” সহীহ বুখারীঃ ৬১৪, তিরমিযীঃ
২১১১।
(১৭)
সুরা ইখলাসকে ভালোবাসাঃ
একদিন এক সাহাবী
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন “হে আল্লাহর রাসুল! আমি এই (সুরা) ক্বুল
হুওয়াল্লাহু আহা’দকে
ভালবাসি।” তখন
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “এই (সুরার প্রতি) ভালবাসা তোমাকে জান্নাতে
প্রবেশ করাবে।” সহীহ
বুখারী, তিরমিযী ২৯০১, আহমাদ ১২০২৪।
সুরা ইখলাসকে
ভালোবাসার উপায় হচ্ছে এটা অধিক পরিমানে তেলাওয়াত করা, এর
অর্থ ও তাফসীর জানা, এর শিক্ষা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা,
মানুষকে তাওহীদের দিকে দাওয়াত দেওয়া। আর বিশেষ করে ফযর, মাগরিবের সুন্নত সালাতের দ্বিতীয় রাকাতে, এবং বিতির
সালাত তিন রাকাত পড়লে, তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পাঠ করা।
এছাড়া প্রত্যেক ফরয সালাতের পরে তিন ক্বুল সুরা পড়া ইত্যাদি।
(১৮)
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের আদেশ-নিষেধ মেনে চলা, তাঁর
সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “আমার
উম্মতের সকলেই জান্নাতে যাবে, শুধুমাত্র যারা জান্নাতে যেতে অস্বীকার
করবে তারা ছাড়া।” সাহাবীগণ
আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এমন কে আছে যে,
জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে? রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম তখন বললেন, “যে ব্যক্তি
আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে, আর যে আমার নাফরমানী করবে ও
অবাধ্য হবে, সে যেন জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে।” সহীহুল বুখারীঃ ৭২৮০।
(১৯)
জিহাদকারী ব্যক্তির জন্য জান্নাত নিশ্চিতঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ ঐ
ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন, যে ব্যক্তি শুধুমাত্র
আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তাঁর কালিমাকে সত্য বলে প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে ঘর
থেকে বের হয়। আল্লাহ তাকে শহীদের সাওয়াব দান করবেন অথবা, গণীমত লাভে ধন্য করে
গাজী হিসাবে ঘরে ফিরিয়ে আনবেন।” সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
সামান্য পরিমান সময়
জিহাদ করার ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
উটের দুধ দোহনের মধ্যবর্তী সময়টুকু (অর্থাৎ, সামান্য সময়) আল্লাহর রাস্তায়
জিহাদ করেছে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব।” নাসায়ীঃ ৩১৪১, আবু দাউদঃ ২৫৪১, তিরমিযীঃ ১৬৫৭, হাদীসটি সহীহ।
(২০) শান্তির সাথে
নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য চারটি আমলঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “হে মানব
সকল! তোমরা বেশি বেশি করে সালাম আদান-প্রদান কর, মানুষকে খাদ্য দান কর, আত্মীয়তার
সম্পর্ক বজায় রাখ, আর রাতের বেলা লোকেরা যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন তোমরা নফল সালাত
আদায় কর। তাহলে তোমরা শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে।” সুনানে তিরমিযী, ইবনে
মাজাহ ও আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(২১) আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য বৈধ উপার্জন দ্বারা সঠিক নিয়মে হজ্জ করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “এক উমরাহ
থেকে আরেক উমরাহর মধ্যবর্তী সকল গুনাহের জন্য কাফফার স্বরূপ। আর ‘হজ্জে মাবরুর’ (যেই হজ্জ কবুল
হয়েছে বলে আশা করা যায়), তার প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়।’’ সহীহ বুখারী, সহীহ
মুসলিম।
(২২) আল্লাহর
সন্তুষ্টির জন্য দান-সাদাকাহ করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর
সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান-খয়রাত করে, এর প্রতিদান হিসাবে তাকে জান্নাতে দেওয়া
হবে।” ইমাম আহমাদ
হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(২৩) বিপদগ্রস্থ ঋণ
গ্রহীতাকে সময় দেওয়া বা ঋণ থেকে কিছু অংশ ছাড় দেওয়াঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “এক ব্যক্তি
মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার পর তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হলো। তাকে জিজ্ঞাসা করা
হলো, “তুমি কি আমল করেছ?” উত্তরে লোকটি বললো, “আমি মানুষের সাথে কেনাবেচা করতাম।
বিপদগ্রস্ত দরিদ্রদেরকে ঋণ পরিশোধের সময় দিতাম এবং কিছু টাকা-পয়সা মাফ করে
দিতাম। ফলে আল্লাহ আমাকেও মাফ করে দিয়েছেন।” সহীহ মুসলিম।
(২৪) প্রত্যেক ফরয
সালাতের পর ও ঘুমানোর পূর্বে তাসবীহ পাঠ করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “কোন মুসলমান
ব্যক্তি যদি দুইটি অভ্যাস আয়ত্ত করতে পারে, তাহলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে। জেনে রাখ! সেই দুইটি অভ্যাস আয়ত্ত করা সহজ,
কিন্তু সে তুলনায় খুব অল্প সংখ্যক লোকই সেই আমল করে থাকে। আমল দুইটি হচ্ছেঃ (১) প্রত্যেক ওয়াক্তের (ফরয) সালাতের
পর দশবার সুবহা’নাল্লাহ, দশবার
আলহা’মদুলিল্লাহ ও দশবার
আল্লাহু আকবার বলবে। (পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর মোট তাসবীহ) মুখের উচ্চারণে হবে
একশত পঞ্চাশবার (৫*৩০=১৫০), কিন্তু মীযানে (দাঁড়ি পাল্লায়) এটা হবে (১৫০*১০=১৫০০) দেড় হাজার হবে। (২) আর ঘুমাতে যাওয়ার সময় তুমি
সুবহা’নাল্লাহ, আলহা’মদুলিল্লাহ ও আল্লাহু আকবার
বলবে একশ বার, (প্রথম দুইটি ৩৩ বার ও শেষেরটি ৩৪ বার, এই মোট ১০০ বার), এভাবে তা মীযানে
(১০০*১০=১০০০) এক হাজারে রূপান্তরিত হবে। তোমাদের মাঝে কোন ব্যক্তি একদিন ও
রাতে দুই হাজার পাঁচশ গুনাতে লিপ্ত হয়? (অর্থাৎ এই ১৫০+১০০০ বার
তাসবীহ দ্বারা ২৫০০ গুনাহ ক্ষমা যোগ্য হবে)।” সাহাবীগণ বললেন, “কোন ব্যক্তি এরূপ (জান্নাতে যাওয়ার) ইবাদাত কেনো সবসময়
করবে না?”
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমাদের কেউ সালাতে
অবস্থানকালে শয়তান তার কাছে এসে বলতে থাকে, এটা মনে কর, ওটা
মনে কর। ফলে সেই নামাযী ব্যক্তি (শয়তানের ধোঁকাবাজির মাঝে থাকা অবস্থায়) সালাত
শেষ করে। আর সালাতের পর উক্ত তাসবীহ আমল করার সুযোগ সে
পায়না। আবার, তোমাদের কেউ যখন শোওয়ার জন্য শয্যা গ্রহণ করতে আসে, শয়তান তার নিকট এসে তাকে ঘুম
পাড়ায় এবং সে তাসবীহ পাঠ না করেই ঘুমিয়ে পড়ে।” হাদিসটি সহিহঃ
ইবনু মাজাহঃ ৯২৬।
হাতের আংগুল দ্বারা
তাসবীহ গণনা করা সুন্নাহঃ
আ’বদুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেন, “আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে সালাতের পর নিজের
হাতের আংগুল দ্বারা তাসবীহ গণনা করতে দেখেছি।”
(২৫) কিয়ামতের
দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি বা জান্নাত পাওয়ার জন্য সহজ আমলঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ (তাঁর বান্দাদের
সাথে) ওয়াদা করেছেন, যে ব্যক্তি প্রত্যেক দিন সকালে তিনবার ও সন্ধ্যা বেলায় তিনবার
এই দুয়া পড়বে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট থাকবেন।”
رَضِيْتُ بِاللهِ رَبـاًّ، وَبِاْلإِسْلاَمِ دِيْنـًا، وَبِمُحَمَّدٍ نَبِيـًّا
উচ্চারণঃ
রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বাহ, ওয়াবিল ইসলা-মি দ্বীনাহ, ওয়াবি মুহা’ম্মাদিং সাল্লাল্লা-হু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামা
নাবিয়্যাহ।
অর্থঃ
আমি আল্লাহকে পালনকর্তা হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে ও মুহা’ম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামকে আমার নবী হিসেবে গ্রহণ করে সন্তুষ্ট।” আহমাদঃ ১৮৯৬৭, নাসাঈ, ইবনুস সুন্নীঃ ৬৮, আবু দাউদঃ ১৫৩১,
তিরমিযীঃ ৩৩৮৯। শায়খ আব্দুল আজীজ ইবনে বায রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘তুহফাতুল
আখইয়ার’
বইয়ের ৩৯ পৃষ্ঠায় হাদীসটিকে হাসান সহীহ বলেছেন।
(২৬) প্রতিদিন সকাল
ও সন্ধ্যায় দশবার দুরুদ পাঠ করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “যে ব্যক্তি সকাল
বেলা আমার উপর দশবার দরুদ পাঠ করবে এবং বিকাল বেলা দশবার দরুদ পাঠ করবে, কিয়ামতের
দিন আমার সুপারিশ দ্বারা সে সৌভাগ্যবান হবে।” ইমাম তাবরানী হাদীসটি দুইটি সনদে সংকলন করেছেন, যার একটি
হাদীসের সনদ হাসান। মাজমা’উয-যাওয়ায়েদঃ
১০/১২০, সহীহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীবঃ ১/২৭৩।
সর্বোত্তম দুরুদ
হচ্ছে দুরুদে ইব্রাহীম, যা আমরা সালাতে পড়ি। এছাড়া সবচাইতে ছোট দুরুদ, “সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম” এটা পড়লেও হবে। ছোট আরেকটা
সহীহ একটা দুরুদঃ
اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ عَلَى نَبَيِّنَا مُحَمَّدٍ.
উচ্চারণঃ
আল্লা-হুম্মা সাল্লি ওয়া সাল্লিম আ’লা নাবিয়্যিনা মুহা’ম্মাদ।
অর্থঃ হে আল্লাহ!
আপনি আমাদের নবী মুহাম্মাদের উপর সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন।
তবে বিভিন্ন
দুয়া-দুরুদ ও ওযীফার বইয়ে বানোয়াট দুরুদ ও কবিতা যেমন দুরুদে হাজারী, দুরুদে লাখী,
দুরুদে নারিয়া, দুরুদে শিফা, দুরুদে মাহী, দুরুদে আকবার, দুরুদে ইয়া হাবিবি
কুমকুম, দুরুদে তাজ, দুরুদে তুনাজ্জিনা – এইগুলো মানুষের বানানো দুরুদ। এইগুলো পড়লে কোন সওয়াব নেই,
বরং এইরকম বিদাতী দুরুদ পড়লে গুনাহ হবে।
(২৭) চারটি কাজে নারীর জান্নাতঃ
রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “যে নারী পাঁচ
ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে, (রমযান) মাসের সাওম পালন করবে, লজ্জাস্থানের হেফাজত
করবে এবং স্বামীর আনুগত্য করবে, তাকে বলা হবে, “তুমি জান্নাতের যেই দরজা দিয়ে ইচ্ছা কর সেই দরজা দিয়ে
জান্নাতে প্রবেশ কর।” সহীহ ইবনে
হিব্বানঃ ৪১৬৩, মুসনাদে আহমদঃ ১৬৬১।
(২৮) ক্রোধ বা রাগ
দমন করা, লোকদেরকে ক্ষমা করা এবং ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিশোধ গ্রহণ করা থেকে
বিরত থাকাঃ
আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “আর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে
দ্রুত অগ্রসর হও, যেই জান্নাতের প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী দূরত্বের
সমান, যা তৈরী করা হয়েছে মুত্তাকী (আল্লাহ ভীরু লোকদের) জন্য। (মুত্ত্বাক্বী হচ্ছে
তারাই), যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল, উভয় অবস্থাতেই দান করে, যারা নিজেদের ক্রোধ সংবরণ
করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে থাকে। আর আল্লাহ মুহসিন (বিশুদ্ধচিত্ত, সৎকর্মশীল)
লোকদেরকে ভালবাসেন।” সুরা আলে-ইমরানঃ
১৩৩-১৩৪।
একবার জনৈক ব্যক্তি
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লামকে বলল, “আমাকে কিছু উপদেশ দিন।” আল্লাহর রাসুল বললেন, “তুমি রাগ করো না।” লোকটি বার বার আল্লাহর রাসুলের নিকট উপদেশ
চায়, আর আল্লাহর রাসুল তাকে প্রত্যেকবার একই উপদেশ দিয়ে বললেন, “তুমি রাগ করো না।” সহীহ বুখারীঃ ৬১১৬, ফাতহুল বারীঃ ১০/৪৫৬।
রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
আরো বলেছেন, “তুমি রাগ করো না,
তাহলে জান্নাত তোমার হবে।” হাদীসট সহীহ, সহীহ
আল-জামিঃ ৭৩৭৪, আল-তাবারানী, ফাতহুল বারীল ৪/৪৬৫।
রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
আরো বলেছেন, “সে প্রকৃত বীর নয়,
যে কুস্তীতে কাউকে হারিয়ে দেয়। বরং সেই প্রকৃত বাহাদুর, যে ক্রোধের সময় নিজেকে
নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম।” সহীহ বুখারীঃ ৫৬৮৪।
রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যক্তি নিজের
রাগ বাস্তবায়ন করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা নিয়ন্ত্রন করে, মহান আল্লাহ কিয়ামতের
দিন তাকে সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যে কোন হুরকে নিজের
ইচ্ছামত বেছে নেওয়ার অধিকার দেবেন।” তিরমিযীঃ ২০২১, আবু দাউদঃ ৪৭৭৭, ইবনে মাজাহঃ ৪১৮৬, হাদীসটি
হাসান, শায়খ আলবানী।
(২৯) কন্যা শিশুদের
লালন-পালন করা, তাদের সাথে উত্তম আচরণ করা, তাদেরকে দ্বীনের উপরে গড়ে তুলাঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যে ব্যক্তি দুইটি কন্যা সন্তানকে তাদের
সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন-পালন করবে, কিয়ামতের দিন আমি এবং সেই ব্যক্তি এই দুইটি
আঙ্গুলের মত পাশাপাশি থাকবো।”
অতঃপর তিনি তাঁর আঙ্গুলগুলি মিলিত করে দেখালেন। সহীহ মুসলিমঃ ২৬৩১, তিরমিযীঃ ১৯১৪,
আহমাদঃ ১২০৮৯।
আ’য়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা কর্তৃক বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা তার
দুইটি মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমার নিকট ভিক্ষা চাইতে আসল। অতঃপর সে আমার নিকট একটি
খুরমা ব্যতীত কিছুই পেল না। সুতরাং আমি সেই একটিমাত্র খুরমা তাকে দিয়ে দিলাম।
মহিলাটি তার দুইটি মেয়েকে খুরমাটি ভাগ করে দিল এবং সে নিজে তা থেকে কিছুই খেল না,
অতঃপর সে উঠে বের হয়ে গেল। ইতোমধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এলেন। আমি তাঁকে
বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি বললেন, “যাকে এই কন্যা সন্তান দিয়ে কোনো পরীক্ষায় ফেলা হয়, তারপর সে
যদি তাদের সাথে উত্তম ব্যবহার করে, তাহলে এই কন্যারা তার জন্য জাহান্নামের আগুন
থেকে পর্দার মতো (বাঁধা) হবে।”
সহীহ বুখারীঃ ১৪১৮, সহীহ মুসলিমঃ ২৬২৯, তিরমিযীঃ ১৯১৫, আহমাদঃ ২৩৫৩৬।
(৩০) উত্তমরূপে
পূর্ণাংগ ওযু করার পর, খুশু ও খুজুর সাথে একাগ্রচিত্তে তাহিয়্যাতুল ওযুর দুই রাকাত
নফল সালাত আদায় করাঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সুন্দর
করে (পূর্ণাংগ) ওযু করে, অতঃপর উপস্থিত মন নিয়ে ও একাগ্রচিত্তে দুই রাকাত সালাত
আদায় করবে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।” সহীহ মুসলিম।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেন, “যে ব্যক্তি আমার
দেখানো এই পদ্ধতিতে ওযু করে, অতঃপর মনের মধ্যে অন্য কোনো চিন্তা করা ছাড়া দুই
রাকাত সালাত আদায় করে, সেই ব্যক্তির পূর্বে সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।” সহীহ বুখারীঃ ১৫৯।
সহীহ মুসলিমের অন্য
হাদীসে বর্ণিত হয়েছেঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে।” মুসলিমঃ ২২৬।
উল্লেখ্যঃ এই
হাদীসে সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে এবং জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে, তার জন্য শর্ত হলো
সালাতে অন্য কোনো কিছু চিন্তা করা যাবেনা। তাই এই সালাতের পূর্ণ ফযীলত পেতে হলে
সেইদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
(৩১) ইয়াতীম,
দরিদ্র ও বিধবাদের অভাব ও কষ্ট দূর করার জন্য চেষ্টা করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি ও ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তি জান্নাতে এইভাবে
(পাশাপাশি) থাকব।” এই কথা বলার সময় তিনি (তাঁর) তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুল দুইটি
মিলিয়ে উভয়ের মাঝে সামান্য একটু ফাঁক রেখে ইশারা করে দেখালেন। সহীহ বুখারীঃ ৫৩০৪,
তিরমিযীঃ ১৯১৮, আবু দাউদঃ ৫১৫০।
হাদীসটির অর্থ
হচ্ছেঃ পাশাপাশি দুইটি আংগুল যেমন খুব নিকটে থাকে, ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী
ব্যক্তি ঠিক এইভাবেই জান্নাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের
কাছাকাছি থাকবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বিধবা ও মিসকীনদের অভাব দূর করায় চেষ্টারত
ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।” (হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন,) আমি ধারণা করছি যে, তিনি একথাও বলেছেন
যে, “(বিধবা ও মিসকীনদের
অভাব দূর করায় চেষ্টারত) ব্যক্তি ক্লান্ত না হয়ে (দিন-রাত) নফল সালাত আদায়কারীর
মত, এবং একটানা (নফল) সাওম পালনকারীর মত।” সহীহ বুখারীঃ ৫৩৫৩, সহীহ মুসলিমঃ ২৯৮২, তিরমিযীঃ ১৯৬৯।
(৩২) সহজ-সরল ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলা এবং কথা, কাজ ও চরিত্রে কোমলতা অবলম্বন করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সহজ-সরল ও কোমল হবে, সে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ জাহান্নামকে হারাম করে দেবেন।” সহীহ আল-জামিঃ ৬৪৮৪।
(৩৩) তর্ক-বিতর্ক ও
ঝগড়া পরিহার করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “আমি সেই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি ঘরের জন্য
জিম্মাদার হব, যেই ব্যক্তি বিতর্ক পরিহার করেছে, যদিও সে হক্ব পথেই ছিলো।” আবু দাউদঃ ৫/১৫০, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামিঃ ১৪৬৪।
(৩৪) মসজিদ নির্মাণ
করা বা মসজিদ নির্মাণে অংশগ্রহণ করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের
জন্য একটি মসজিদ নির্মান করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করবেন।” সহীহ মুসলিমঃ ১২১৭, তিরমিযীঃ ২৯২।
অনেকে বলতে পারেন আমারতো এতো সামর্থ্য নেই যে, একা একটি মসজিদ নির্মাণ করবো। তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে যে, তিনি যদি তার সামর্থ্য অনুযায়ী কোন মসজিদ
নির্মাণে অংশগ্রহণ করেন, তাহলে তিনিও এই সওয়াব আশা করতে
পারেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহর
সন্তুষ্টি লাভের আশায় পাখির বাসার মত অথবা, তার চাইতে ছোট আকারের একটি মসজিদ বানিয়ে দেয়, তাহলে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করে দিবেন।” ইবনে মাজাহ, সুনান, জামেঃ ৬১২৮।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি তিতির
পাখির (পোকা-মাকড় খোঁজার উদ্দেশ্যে) আঁচড়ানো স্থান পরিমাণ আয়তনের অথবা, তার চাইতে ছোট আকারের মসজিদ নির্মাণ করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি
ঘর নির্মাণ করবেন।” ইবনে খুযাইমাহ, হাদীসটী সহীহ, সহীহ আত-তারগীবঃ ২৬৫।
(৩৫) সালাতের কাতারে
ফাঁকা স্থান পূরণ করাঃ
আল্লাহর
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি সালাতের কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করলো, এর
দরূন আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন।” আত-তাবারানী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
.
.
অল্প পরিশ্রমে অনেক
বড় সওয়াবঃ
(১) একবার, তিনবার
বা দশবার সুরা ইখলাস পাঠ করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম সুরা ইখলাস সম্পর্কে বলেছেন, “নিঃসন্দেহে এই (সুরা ইখলাস) ক্বুরআনের এক তৃতীয়াংশের
সমান।” সহীহ
মুসলিমঃ ৮১২, তিরমিযীঃ ২৮৯৯।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার সাহাবীদেরকে বললেন, “তোমরা কি রাতে এক
তৃতীয়াংশ ক্বুরআন পড়তে পার না?” প্রস্তাবটি সাহাবাদের কাছে কঠিন মনে হল। তাই তাঁরা বলে
উঠলেন, “হে আল্লাহর
রাসুল! এই কাজ আমাদের মধ্যে কে করতে পারবে?” আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, “ক্বুল হুওয়াল্লাহু
আ’হাদ, আল্লাহুস
স্বামাদ, (সুরা ইখলাস) ক্বুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান।” (অর্থাৎ এই সুরা
পড়লে ক্বুরআনের এক তৃতীয়াংশ পড়ার সমান।) সহীহ বুখারীঃ ৫০১৫, নাসায়ীঃ ৯৯৫, আবু দাউদ
১৪৬১।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি
সুরা ইখলাস দশ বার পাঠ করবে, তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর বানানো হবে।” সহীহ আল-জামি
আস-সগীরঃ ৬৪৭২।
(২) অধিক পরিমান
দুরুদ পাঠ করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার উপর একবার
দরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ এর প্রতিদান হিসেবে তার উপর দশটি রহমত (করুণা) অবতীর্ণ
করবেন।”
সহীহ মুসলিমঃ ৩৮৪, তিরমিযীঃ ৩৬১৪, নাসায়ীঃ ৬৭৮, আবু দাউদঃ ৫২৩, আহমাদঃ ৬৫৩২।
(৩) জান্নাতের একটি ধন-সম্পদের ভাণ্ডারঃ
একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম একজন সাহাবীকে বলেছিলেন, “হে আব্দুল্লাহ ইবন কায়েস! আমি কি জান্নাতের ধন-সম্পদের একটি ভাণ্ডার সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করব
না?” সেই সাহাবী বললেন, “নিশ্চয়ই হে আল্লাহর রাসুল।” আল্লাহর রাসুল বললেন, “তুমি বল,
لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ
উচ্চারণঃ লা- হা’উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লা-হ।
অর্থঃ আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ
করার) কোনো শক্তি কারো নেই।
সহীহ বুখারীঃ ৪২০৬; সহীহ মুসলিমঃ ২৭০৪।
(৪) জামাতের ৫-১০
মিনিট পূর্বে মসজিদে গিয়ে প্রথম কাতারে স্থান দখল করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “লোকেরা যদি জানত যে, আযান দেওয়া ও সালাতের প্রথম কাতারে দাঁড়ানোর মধ্যে কি ফযীলত রয়েছে, তাহলে (আযান দেওয়া ও প্রথম কাতারে স্থান পাওয়ার জন্য) যদি
লটারী ছাড়া অন্য কোন উপায় না থাকতো, তবে তারা অবশ্যই সেই ক্ষেত্রে লটারীর সাহায্য
নিত।” সহীহ বুখারীঃ ৬১৫, সহীহ মুসলিমঃ ৪৩৭, তিরমিযীঃ ২২৫,
নাসায়ীঃ ৫৪০, ইবনু মাজাহঃ ৭৯৭।
(৫) ইশা ও ফযরের
সালাত জামাতের সহিত আদায় করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইশা সালাতের জামাতে হাযির হবে, তার জন্য অর্ধেক রাত পর্যন্ত
কিয়াম (নফল সালাত আদায়) করার সমান নেকী হবে। আর যে ব্যক্তি ইশা সহ ফজর সালাত
জামাতের সহিত আদায় করবে, তার জন্য সারারাত ধরে কিয়াম করার
সমান নেকী হবে।” সহীহ মুসলিমঃ ৬৫৬, তিরমিযীঃ ২২১, আবু দাউদঃ ৫৫৫, আহমাদঃ
৪১০।
(৬) ফযর সালাতের পর
জায়নামাযে বসে থেকে সূর্য উঠা পর্যন্ত ক্বুরআন তেলাওয়াত, বিভিন্ন যিকির-আযকার ও
দুয়া-দুরুদ পড়ে সময় অতিবাহিত করা এবং সূর্য উঠার পর ইশরাকের দুই রাকাত নফল সালাত
আদায় করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “যে ব্যক্তি ফজরের
সালাত জামাআ’তে আদায় করে, অতঃপর সূর্য উঠা পর্যন্ত বসে বসে আল্লাহ তাআ’লার যিকর করে, তারপর দুই রাকাত সালাত আদায়
করে, তার জন্য একটি হজ্জ ও একটি উমরার সমান সওয়াব রয়েছে।” আনাস রাদিয়াল্লাহ আনহু আরো বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ (একটি হাজ্জ ও একটি
উমরার সমান সাওয়াব)।” তিরমিযীঃ ৫৮৬, তাআ’লীকুর রাগীবঃ
১/১৬৪, ১৬৫, মিশকাতঃ ৯৭১। হাদীসটিকে শায়খ
আব্দুল আ’জিজ ইবনে
বাজ রাহিমাহুল্লাহ ‘হাসান লিগাইরি’ এবং শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ ‘হাসান সহীহ’ বলেছেন।
(৭) ‘ওয়াজ’ বা ইসলামিক লেকচার
শোনার জন্য কোন মসজিদে গমন করাঃ
রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “কোন
ব্যক্তি যদি শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্য নিয়ে মসজিদে যায় যে, সে
নিজে কোন কল্যাণকর জিনিস (ইলম) শিখবে অথবা অন্যকে শিক্ষা দিবে, তাহলে সে এমন একজন হাজীর সমান সওয়াব পাবে, যে তার হজ্জ সম্পাদন করেছে।” আত-তাবারানী, শায়খ
আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
(৮) কোন মুসলিমকে
সাহায্য করার জন্য তার সাথে কিছুক্ষণ হাঁটাঃ
রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, “মদীনার এই মসজিদে
(অর্থাৎ মসজিদে নববীতে) এক মাস ইতিকাফ করার চাইতে কোন এক মুসলমান ভাইয়ের প্রয়োজন
পূরণ করার জন্যে তার সাথে হাঁটা আমার কাছে অধিক প্রিয়।” হাদীসটি বর্ণনা করেছেন আসবাহানী এবং ইবনে
আবি দুনিয়া। শায়খ সাঈদ রাসলান হা’ফিজাহুল্লাহ
হাদীসটি ‘হাসান লি গায়রি’ বলেছেন।
(৯) সদকায়ে জারিয়া,
উপকারী ইলম বিতরণ ও নেক সন্তান গড়ে তোলাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে, তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধুমাত্র তিনটি আমল মৃত্যুর পরও বাকী থাকে (এবং সেইগুলোর সওয়াব আমলকারীর কবরে
পৌঁছানো হয়।)
(ক) সদকায়ে জারিয়া। (এমন দান বা সাদাকাহ, যার সুফল অব্যাহত থাকে। যেমন, মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, রাস্ত ইত্যাদি নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করা বা
সাহায্য করা),
(২) উপকারী জ্ঞান। (যেমন মানুষের মাঝে
উপকারী জ্ঞান বিতরণ করা, বই প্রকাশ বা প্রচার করা, দ্বীন শিক্ষার্থীদের খচর
চালানো ইত্যাদি, যার ফলে মৃত্যুর পরও তার জ্ঞানের মাধ্যমে অন্য
মানুষের উপকার অব্যাহত থাকে।),
(৩) এমন নেক সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করবে।”
সহীহ মুসলিমঃ ১৬৩১, তিরমিযীঃ ১৩৭৬।
হাদীসটি সম্পর্কে
প্রয়োজনীয় কিছু কথাঃ ‘সদকায়ে জারিয়া’ হচ্ছে এমন দান বা সাদাকাহ, যার সুফল অব্যাহত থাকে। যেমন,
মসজিদ, মাদ্রাসা, হাসপাতাল, রাস্ত ইত্যাদি নির্মাণকাজে অংশগ্রহণ করা বা সাহায্য করা। আর ‘উপকারী জ্ঞান” হচ্ছেঃ যেমন মানুষকে দ্বীন শিক্ষা দেওয়া বা মানুষের মাঝে উপকারী জ্ঞান বিতরণ করা, দ্বীনি বই-পুস্তক প্রকাশ বা প্রচার
করা, দ্বীন শিক্ষার্থীদের খরচ চালানো ইত্যাদি, যার ফলে মৃত্যুর
পরও তার জ্ঞানের মাধ্যমে অন্য মানুষের উপকার অব্যাহত থাকে।
রাসুলুলাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া
সাল্লাম আরো বলেছেন, “এমন সাতটি জিনিস রয়েছে, যা বান্দার মৃত্যুর পরে
কবরে থাকা অবস্থাতেও তার জন্য সওয়াব জমা করতে থাকেঃ (১) এমন
ব্যক্তি যাকে সে শিক্ষা দিয়েছে, (২) যেই খাল সে খনন করেছে,
(৩) যেই কূপ সে নির্মান করেছে, (৪) যেই খেজুর
গাছ সে রোপন করেছে, (৫) যেই মসজিদ সে নির্মান করেছে,
(৬) যেই ক্বুরআন সে দান করেছে এবং (৭) এমন
সন্তান, যে সেই বান্দার মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।” আল-বাজ্জারঃ ৭২৮৯, শায়খ
আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন, জামি আস-সাগীর।
হাদীসটি সম্পর্কে
প্রয়োজনীয় কিছু কথাঃ
(২+৩) অন্য সহীহ
হাদীসে রয়েছে মানুষের মাঝে পানি বিতরণ করার জন্য পানির উৎস যেমন কুয়া বা পুকুর খনন
করা শ্রেষ্ঠ সাদাকাহ সমূহের একটি। যেহেতু বর্তমান যুগে এইগুলোর প্রচলন কম, তাই
বর্তমান যুগে এইগুলোর পরিবর্তে নলকূপ, পানির মটর বা ফিল্টার বিকল্প বলে গণ্য হবে।
(৪) হাদীসে
নির্দিষ্টভাবে খেজুর গাছের কথা বলা হলেও, আম, জাম, কাঁঠাল, এমন যেকোন ফলদায়ক গাছ
লাগানো সাদকায়ে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত এবং তার জন্য অনেক বড় সওয়াব রয়েছে। কোন
ব্যক্তির লাগানো ফলের গাছ থেকে ফল কোন পাখি খেলে, কোন মানুষ খেলে, কোন মানুষ বা
পশু এর ছায়ায় বসলে, এই সবগুলো গাছের রোপনকারী ব্যক্তির জন্য সাদাকাহ হিসেবে কবুল
হবে।
(১০) ইশার পরে এক
সালামে চার রাকাত নফল সালাত আদায় করাঃ
আ’ব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইশার
পরে চার রাকাত সালাত আদায় করে, এটা তার জন্য লায়লাতুল ক্বদরে চার রাকাত
সালাত আদায় করার মতোই।” মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহঃ ২/৩৪২।
আ’য়িশাহ রাদিয়াল্লাহু
আ’নহা বলেছেন, “ইশার পরে চার রাকাত
সালাত লায়লাতুল ক্বদরে চার রাকাত সালাত আদায় করার মতোই।” মুসান্নাফ ইবনে
আবি শায়বাহঃ ২/৩৪২।
(১১) সকাল ও
সন্ধ্যায় ফযীলতপূর্ণ এই যিকির তিনবার পড়াঃ
মুমিনদের জননী জুয়াইরিয়াহ বিনতে হারেস রাদিয়াল্লাহু আ’নহা হতে বর্ণিত। একদিন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ভোরবেলা ফজরের
সালাত শেষ করে তাঁর নিকট থেকে বাইরে গেলেন। আর তিনি
(জুয়াইরিয়াহ) তাঁর জায়নামাজে বসে (যিকির-আযকারে লিপ্ত) থাকলেন। তারপর চাশতের সময় আল্লাহর নবী যখন ফিরে এলেন, তখনও জুয়াইরিয়াহ সেখানেই বসে (যিকিরে
লিপ্ত) ছিলেন। এটা দেখে আল্লাহর
নবী তাঁকে বললেন, “আমি যেই অবস্থায় তোমাকে ছেড়ে
বাইরে গেলাম, সে অবস্থাতেই তুমি রয়েছ?” তিনি বললেন, হ্যাঁ।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তোমার নিকট থেকে যাবার পর আমি চারটি বাক্য তিনবার পড়েছি। যদি সেইগুলিকে তোমার সকাল থেকে (এ যাবত) পঠিত দুয়া (ও যিকিরের) মুকাবিলায় ওজন করা যায়, তাহলে তা ওজনে সমান হয়ে যাবে। আর তা হচ্ছে এই যে,
سُبْحَانَ اللهِ وَبِحَمْدِهِ: عَدَدَ خَلْقِهِ، وَرِضَا نَفْسِهِ، وَزِنَةَ عَرْشِهِ وَمِدَادَ كَلِمَاتِهِ
উচ্চারণঃ সুবহা’নাল্লা-হি ওয়া বিহা’মদিহী, আ’দাদা খালক্বিহী,
ওয়া রিদ্বা নাফসিহী, ওয়া যিনাতা আ’রশিহী, ওয়া মিদা-দা কালিমা-তিহি।
অর্থঃ আমি আল্লাহর সপ্রশংস পবিত্রতা ঘোষণা করছি; তাঁর সৃষ্টির সমান সংখ্যক, তাঁর নিজ ইচ্ছা অনুযায়ী, তাঁর আরশের ওজন বরাবর ও তাঁর বাণীসমূহের সমান সংখ্যক প্রশংসা।
সহীহ মুসলিমঃ ২৭২৬, তিরমিযীঃ ৩৫৫৫, নাসায়ীঃ ১৩৫২, ইবনু মাজাহঃ ৩৮০৮, আহমাদঃ
২৬২১৮।
উল্লেখ্য, আল্লাহর কথা বা বাণীর কোন শেষ নেই।
(১২) পূর্বের ও
পরের সমস্ত মুসলিমদের জন্য দুয়া করাঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলিম
পুরুষ ও মুসলিম নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য একটি করে সওয়াব আল্লাহ তার আমলনামায় লিখে
দেন।” আত-তাবারানী, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।
শায়খ আব্দুর
রাজ্জাক্ব বিন আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন, “যে ব্যক্তি মুসলিম
পুরুষ ও মুসলিম নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, তাহলে সেই ব্যক্তি প্রত্যেক
মুসলিমের জন্য একটি করে সওয়াব পাবে। কেউ যদি এই বলে দুয়া করে, “আয় আল্লাহ! আমার এবং সকল মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারী, জীবিত ও মৃত, সবার গুনাহ আপনি মাফ করে দিন”, তাহলে এর
প্রতিদান হিসেবে আদম আ’লাইহিস সালাম থেকে কেয়ামত পর্যন্ত, এই দুনিয়াতে বসবাসকারী
কোটি কোটি মুসলিম সবার জন্য একটি করে সওয়াব তার আমলনামায় লেখা হবে।”
আপনারা নিজের জন্য,
নিজের পিতা-মাতার জন্য এবং সমস্ত মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীদের ক্ষমা প্রার্থনার
জন্য ছোট্ট, সুন্দর এই কুরআনী এই দুয়াটা মুখস্থ করে নিতে পারেনঃ
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণঃ রব্বানাগ-ফিরলি ওয়ালি ওয়ালি-দাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াক্বুমুল হি’সাব।
অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল ঈমানদার লোকদেরকে আপনি সেইদিন
ক্ষমা করে দিও, যেইদিন হিসাব কায়েম করা হবে। সুরা
ইব্রাহিমঃ আয়াত ৪১।
(১৩) অসুস্থ
মুসলিমদের দেখতে যাওয়াঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যখন কোন ব্যক্তি তার কোন অসুস্থ মুসলিম ভাইকে
দেখতে যায়, তখন সে না বসা পর্যন্ত যেন জান্নাতের ফল আহরণে বিচরণ করতে থাকে। অতঃপর যখন
সে (রোগীর পাশে) বসে, (আল্লাহর) রহমত তাকে ঢেকে ফেলে। (রোগীকে দেখতে যাওয়ার) সেই সময়টা
যদি হয় সকাল বেলা, তাহলে সত্তর হাজার ফেরেশতা সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত তার ক্ষমা ও কল্যাণের
জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করতে থাকে। আর যদি সময়টা হয় বিকাল বেলা, তাহলে সত্তর হাজার
ফেরেশতা সকাল হওয়া পর্যন্ত তার ক্ষমা ও কল্যাণের জন্য আল্লাহর কাছে দুয়া করতে থাকে।” তিরমিযীঃ ৯৬৯; ইবন মাজাহঃ ১৪৪২, হাদীসটি সহীহ,
শায়খ আলবানী, সহীহুত তিরমিযী।
(১৪) বাজারে প্রবেশের দুয়া পড়াঃ
বাজারে প্রবেশ করার সময় নীচের এই দুয়া পড়লে আল্লাহ তাআ’লা
(ক) তার আমলনামায় দশ লক্ষ সওয়াব দান
করবেন,
(খ) তার আমলনামা থেকে দশ লক্ষ গুনাহ
মুছে দেবেন,
(গ) তার মর্যাদা ১০ লক্ষ গুণ উন্নীত
করবেন,
(ঘ) জান্নাতে তার জন্য একটা ঘর বানাবেন।
সহীহ তিরমিযীঃ ২/১৫২; হাকিমঃ ১/৫৩৮। দুয়াটা
হচ্ছেঃ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ، وَلَهُ الْحَمْدُ، يُحْيِي وَيُمِيتُ، وَهُوَ حَيٌّ لاِ يَمُوتُ، بِيَدِهِ الْخَيْرُ، وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণঃ লা- ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ’দাহু লা শারীকালাহ;
লাহুল-মুলকু ওয়ালাহুল হা’মদু ইয়ুহ’ঈ ওয়াইয়ুমীত; ওয়াহুয়া হা’য়্যুল-লা ইয়ামুত; বিয়াদিহিল খাইর, ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাই’ইং ক্বাদীর।
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই,
রাজত্ব তাঁরই, প্রশংসা শুধুমাত্রই তাঁর। তিনিই জীবন দান
করেন এবং তিনিই মৃত্যু দান করেন। আর তিনি চিরঞ্জীব,
তার মৃত্যু নেই। সকল প্রকার কল্যাণ তাঁর হাতে নিহিত। তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
তিরমিযীঃ ৩৪২৮; ইবন মাজাহঃ ৩৮৬০; হাকেম ১/৫৩৮। শাইখ আলবানী হাদীসটিকে হাসান হাদীস বলেছেন।
উল্লেখ্যঃ বাজার হচ্ছে গাফিলতি, ঔদাসীন্যের জায়গা যেখানে মানুষ আল্লাহকে
ভুলে যায়, দুনিয়া নিয়ে মগ্ন হয়ে পড়ে। এছাড়া সেখানে খারাপ
লোক বেশি জমা হয় যারা মিথ্যা, প্রতারণা, নারীদেরকে উত্যক্ত করা, খারাপ পুরুষ ও
মহিলাদের মাঝে দেখা-সাক্ষাত, গান-বাজনা ইত্যাদি
নানাবিধ হারাম কাজ বেশি সংগঠিত হয়। একারণে আল্লাহর
কাছে সবচাইতে ঘৃণিত জায়গা হচ্ছে বাজার। আর একারণেই সেখানে
আল্লাহর যিকিরের জন্য, আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশের জন্যে এই দুয়া পড়লে এতো বেশি সওয়াব
পাওয়া যায়।
সুতরাং বন্ধুরা দেরী না করে আজকেই এই দুয়া মুখস্থ করে নিন এবং যখনই ছোট-বড়
যেকোন বাজারে প্রবেশ করবেন, একদিনে যতবারই বাজারে যাবেন, এই দুয়া পড়তে কখনোই
ভুলবেন না।
(১৫) সুন্নতী পদ্ধতিতে জুমুয়া’হর সালাতের জন্য পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়াঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমুয়া’হর
দিন গোসল করবে এবং তার স্ত্রীকে গোসল করাবে, সকাল-সকাল ও আগে-আগে (মসজিদে যাওয়ার
জন্য) প্রস্তুত হয়, জুমুয়া’হর জন্য কোন যানবাহনে চড়ে নয়, বরং পায়ে
হেঁটে মসজিদে যাবে এবং সেখানে অনর্থক কোন কথা না বলে চুপ করে থাকে, ইমামের নিকটে
বসে মনোযোগ সহকারে খুতবাহ শুনবে, তার (মসজিদে যাওয়ার) প্রতিটি পদক্ষেপ সুন্নাত
হিসেবে গণ্য হবে এবং প্রতিটি পদক্ষেপের বিনিময় সে এক বছর যাবত (নফল) সিয়াম পালন ও
রাত্রিতে (নফল) সালাত আদায় করার (সমান) সওয়াব পাবে।”
আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ, তিরমিজিঃ ৪৯৬, শায়খ আলবানী হাদীসটিকে
সহীহ বলেছেন, সহীহ তিরমিযীঃ ৪১০, সহীহ আত-তারগীবঃ ৬৮৭।
ইমাম ইবনে কাইয়িম
রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “তার স্ত্রীকে গোসল করাবে অর্থ হচ্ছে স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে।
ইমাম ওয়াকী ‘স্ত্রীকে
গোসল করাবে’ এইভাবেই
অর্থ করেছেন।” যাদ
আল-মাআ’দঃ ১/২৮৫।
সুতরাং,
যে ব্যক্তি তার বাড়ি থেকে ১০০ কদম পায়ে হেঁটে জামে মসজিদে পৌঁছাবে, তার আমলনামায়
১০০ বছর নফল সালাত ও সাওম পালনের সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। সুবহা’নাল্লাহ!
(১৬)
দশজন
দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব ও সশস্ত্র ফেরেশতা দল দিয়ে নিরাপত্তাসহ অনেক বড় ফযীলতের
একটা দুয়াঃ
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণঃ লা-
ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ’দাহু, লা
শারীকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হা’মদু, ইয়ুহ’য়ী
ওয়াইয়ূমীত, ওয়াহুয়া আ’লা কুল্লি শাই’ইং ক্বাদীর।
অর্থঃ একমাত্র
আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবূদ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তারই এবং সমস্ত
প্রশংসা তাঁর। তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দান করেন। আর তিনি সকল কিছুর
উপর ক্ষমতাবান।
এই দুয়া ফযর ও
মাগরিবের সালাতের পর পড়লেঃ
(ক) আল্লাহ তাআ’লা ঐ ব্যক্তির জন্য সশস্ত্র ফেরেশতাদের দল
পাঠাবেন যারা তাকে সকাল পর্যন্ত যেকোন ক্ষতি হতে পাহারা দিয়ে রাখবেন।
(খ) তার আমলনামায়
দশটি নেকী লিখে দেওয়া হবে।
(গ) তার আমলনামা
থেকে দশটি ধ্বংসাত্মক গুনাহ মুছে দেওয়া হবে।
(ঘ) দশ জন ঈমানদার
দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব তাকে দেওয়া হবে।
সুনানে তিরমিযীঃ
৩৫৩৪, হাদীসটি হাসান সহীহ, দারুস সালাম তাহকীক।
বিঃদ্রঃ লক্ষ্য
করুন দুয়াটাতে অতিরিক্ত “ইয়ুহ’য়ী ওয়াইয়ূমীত”, এই কথাটা অতিরিক্ত আছে, এটাসহ পড়তে হবে।
(১৭) জানাযার সালাত
আদায় করা এবং কবরস্থ করা পর্যন্ত লাশের অনুসরণ করাঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি (আল্লাহর
প্রতি) ঈমান রেখে এবং সওয়াবের আশা রেখে কোনো মুসলিমের জানাযার সাথে যাবে এবং তার
জানাযার সালাত আদায় করবে এবং তাকে দাফন করা পর্যন্ত তার সাথে থাকবে, সে দুই
ক্বীরাত্ব পরিমান সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে। এক ক্বীরাত হচ্ছে উহুদ পাহাড়ের সমান।
আর যে ব্যক্তি জানাযার সালাত আদায় করবে কিন্তু মৃতকে কবরস্থ করার পূর্বেই ফিরে
আসবে, সে এক কীরাত্ব পরিমান সওয়াব নিয়ে (বাড়ি) ফিরবে। সহীহ বুখারীঃ ১৩২৪, সহীহ
মুসলিমঃ ৯৪৫, তিরমিযীঃ ১০৪০, নাসায়ীঃ ১৯৯৪।
(১৮) রুকুর পরে ফযীলতপূর্ণ একটি দুয়াঃ
রিফায়া ইবনে রাফি যুহকী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে سَمِـعَ اللهُ لِمَـنْ حَمِـدَه উচ্চারণঃ “সামিআ’ল্লা হুলিমান হা’মিদাহ” বললেন, তখন পিছন থেকে একজন সাহাবী رَبَّنـا وَلَكَ الحَمْـدُ حَمْـداً كَثـيراً طَيِّـباً مُـبارَكاً فيه উচ্চারণঃ “রব্বানা ওয়া লাকাল হা’মদ, হা’মদান কাসিরান ত্বইয়িবান মুবারাকান ফিহ” বললেন। সালাত শেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এই কথাটা কে বলেছিল? সেই সাহাবী বললেন, আমি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি দেখলাম ত্রিশ জনের বেশি ফেরেশতা এই (দুয়াটার) সওয়াব কে আগে লিখবেন, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন। সহীহ বুখারীঃ ৭৬৩।
(১৮) রুকুর পরে ফযীলতপূর্ণ একটি দুয়াঃ
রিফায়া ইবনে রাফি যুহকী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে সালাত আদায় করছিলাম। তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে سَمِـعَ اللهُ لِمَـنْ حَمِـدَه উচ্চারণঃ “সামিআ’ল্লা হুলিমান হা’মিদাহ” বললেন, তখন পিছন থেকে একজন সাহাবী رَبَّنـا وَلَكَ الحَمْـدُ حَمْـداً كَثـيراً طَيِّـباً مُـبارَكاً فيه উচ্চারণঃ “রব্বানা ওয়া লাকাল হা’মদ, হা’মদান কাসিরান ত্বইয়িবান মুবারাকান ফিহ” বললেন। সালাত শেষ করে নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এই কথাটা কে বলেছিল? সেই সাহাবী বললেন, আমি। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি দেখলাম ত্রিশ জনের বেশি ফেরেশতা এই (দুয়াটার) সওয়াব কে আগে লিখবেন, তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন। সহীহ বুখারীঃ ৭৬৩।
(১৯) ৩৬০টি সদকাহ
করার সমান সওয়াবঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “মানুষের শরীরে ৩৬০ টি জোড়া রয়েছে।
অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সদকাহ করা।” সাহাবারা বললেন, “ইয়া রাসুলুল্লাহ্! কার শক্তি আছে
এই কাজ করার?” রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “মসজিদে কোথাও কারো থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা, রাস্তায় কোন ক্ষতিকারক কিছু
দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত সালাতই এই (৩৬০টি সদকাহর)
জন্য যথেষ্ট হবে।” আবু দাউদঃ ৫২২২।
উল্লেখ্য, ইশরাকের দুই
রাকাত সালাত আদায় করলে চাশতের দুই রাকাত সালাত আদায় হয়ে যাবে। ইশরাকের সালাত আর চাশতের
সালাত - একই সালাত দুই সময়ে পড়লে দুই নামে ডাকে হয়।
(২০)
জামাতে সালাত আদায় করার ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কোন ব্যক্তির জামাতে সালাত আদায় করা, তার ঘরে কিংবা বাজারে একাকী সালাত আদায় করার তুলনায় পঁচিশ গুণ বেশি সওয়াব বয়ে আনে।
কারণ, সে যখন উত্তমরূপে ওযু করে কেবল মসজিদের উদ্দেশ্যে
বের হয়, তখন তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে দরজা (মর্যাদা) উঁচু হয়, এবং তার একটি
করে পাপ মোচন হয়। সালাত শেষে যতক্ষণ পর্যন্ত সে (ওযু অবস্থাতে) সালাতের স্থানেই বসে
থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতারা তার জন্য এই বলে রহমতের দোয়া করতে থাকেন, “হে আল্লাহ! আপনি তার প্রতি দয়া করুন, হে আল্লাহ! আপনি তাকে রহমত ভূষিত
করুন।” আর সালাতের জন্য অপেক্ষার সময়টুকুও তোমাদের
কারো জন্য সালাতের মধ্যেই বলে গণ্য হয়।” সহীহ মুসলিমঃ ৬১১।
(২১) নফল-সুন্নত সালাত
নিজ ঘরে আদায় করার ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন মসজিদে (ফরয) সালাত
আদায় করে, তখন তার উচিৎ, সে যেন তার সালাতের কিছু অংশ (সুন্নত সালাত) নিজের বাড়ির জন্য
রেখে দেয়। কারণ বাড়িতে পড়া ঐ কিছু সালাতের মধ্যে আল্লাহ কল্যাণ নিহিত রেখেছেন।” সহীহ মুসলিমঃ ৭৭৮।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “হে মানব সকল! তোমরা নিজেদের ঘরে
(নফল-সুন্নত) সালাত আদায় কর। কেননা, ফরয সালাত ছাড়া মানুষের জন্য শ্রেষ্ঠতম সালাত হচ্ছে তার নিজ ঘরে পড়া
(নফল-সুন্নত) সালাত।” নাসাঈ, ইবনে খুযাইমাহ, হাদীসটি সহীহ, সহীহ তারগীবঃ ৪৩৭।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যেখানে লোকে দেখতে পায় না, সেখানে
মানুষের নফল সালাত আদায় করার চাইতে যেখানে লোকে দেখতে পায়, সেখানের সালাতের তুলনায়
২৫ গুণ।” আবু ইয়া’লা, জামে ৩৮২১নং হাদীস।
(২২) সুরা কাফিরুনের ফযীলতঃ
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, “ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল কাফিরুন কুরআনের চার ভাগের এক ভাগের
সমান।” তিরমিযীঃ ২৮৯৪, বায়হাকী, হাকিমঃ
২০৮৭, সহীহ আত-তারগীবঃ ৫৮৩। হাদীসটির সনদ সহীহ, ইমাম হাকিম, শায়খ আলবানী।
হারিস ইবনু হাবালাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে এমন কিছু
শিখিয়ে দিন, যা আমি ঘুমানোর সময় পাঠ করবো। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
বললেন, “তুমি যখন বিছানায়
শয়ন করতে যাবে, তখন ক্বুল ইয়া আইয়্যুহাল
কাফিরুন সুরা পাঠ করবে। কেননা এতে শিরক থেকে মুক্তি লাভ করা যাবে।” আবু দাউদঃ ৫০৫৫,
তিরমিযীঃ ৩৪০৩, আহমাদঃ ২৪০০৯। শায়খ আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন। সহীহ
আত-তারগীবঃ ৬০৫।
ফযর ও মাগরিবের দুই রাকাত সুন্নত সালাতের প্রথম রাকাতে সুরা কাফিরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস, বিতির সালাত
তিন রাকাত পড়লে প্রথম রাকাতে সুরা আ’লা, দ্বিতীয় রাকাতে সুরা
কাফিরুন এবং তৃতীয় রাকাতে সুরা ইখলাস পড়া মুস্তাহাব
বা উত্তম। এছাড়া বিছানাতে শোবার পর ঘুমানোর পূর্বে সুরা কাফিরুন একবার পড়া মুস্তাহাব।