মাওলানা আহমাদ শফি
দ্বীন শিক্ষার জন্য বাংলাদেশের
প্রচলিত মাদ্রাসাগুলো প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত।
(১) “ক্বওমী
মাদ্রাসা”। সাধারণত অধিকাংশ ক্বওমী
মাদ্রাসাগুলো হিন্দুস্থানের ‘দেওবন্দ মাদ্রাসা’ এবং
দেওবন্দী আলেমদের অনুসরণ করে থাকে।
(২) “আলিয়া
মাদ্রাসা”। যেখানে সীমিত সংখ্যক আরবীর
পাশাপাশি বাংলা ও ইংরেজী শিক্ষা দেওয়া হয়। অনেকের মতে, ভারতীয় উপমহাদেশের
মুসলমানদেরকে বিশুদ্ধ ক্বুরআন ও সুন্নাহর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে দূরে রাখার জন্য
ব্রিটিশদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটা দুর্বল সিলেবাস সম্বলিত আলিয়া মাদ্রাসাগুলো ইসলামের
বিরুদ্ধে সুদূরপ্রসারী একটা ষড়যন্ত্র।
যাইহোক, ক্বওমী মাদ্রাসাগুলোর মাঝে
চট্টগ্রামের ‘হাটহাজারী মাদ্রাসা’ অনেক
পুরনো এবং দেশের সবচাইতে বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত। হাটহাজারী মাদ্রাসার
প্রিন্সিপাল হচ্ছেন মাওলানা আহমাদ শফি (আল্লাহ তাকে হেদায়েত করুন)। তার ভক্ত ও
অনুরাগীদের কাছে তিনি ‘আল্লামাহ শফি’ নামে বেশি
পরিচিত। দেওবন্দী আক্বিদাহর অনুসারী আলেমরা মাওলানা আহমাদ শফিকে আমাদের দেশের
সবচাইতে বড় আলেম বলে মান্য করেন।
অন্যান্য দেওবন্দী আলেমদের মতো
মাওলানা আহমাদ শফি সাহেবও ‘সূফীবাদের’ অনুসরণ
করেন। তিনি সূফীদের মাঝে প্রচলিত ‘চিশতী’ তরীকার
অনুসরণ করেন। আপনারা চিশতী তরীকা সম্পর্কে
বিস্তারিত জানার জন্য আহমাদ শফি সাহেবের নিজের লেখা কিতাব ‘ফুয়ুজাতে
আহমাদিয়া’ পৃষ্ঠা-৬৬ দেখুন।
মাওলানা আহমাদ শফি সাহেব ‘পীর-মুরিদী’ প্রথার
সমর্থন করেন, এবং তিনি নিজে ‘পীর’ হিসেবে
চিশতী তরীকার
উপরে তার ভক্তদের ‘বাইয়াত’ গ্রহণ করে
থাকেন। ইউটিউবে মাওলানা আহমাদ শফি সাহেবের একটা ভিডিও রয়েছে, যেখানে তিনি তার অনেক
ভক্তদের উদ্দেশ্যে একটা রশি নিক্ষেপ করেন এবং ক্বুরআনের একটা আয়াতের অপব্যবহার করে
তার ভক্তদের কাছ থেকে বিদআতী বাইয়াত গ্রহণ করেন। এছাড়া এক সময়ের পীস টিভি বক্তা
হাসান জামিল সাহেব মাওলানা আহমাদ শফি সাহেবকে তার নিজের পীর বলে স্বীকার করেছিলেন।
যদিও একশ্রেণীর মানুষ মাওলানা আহমাদ
শফি সাহেবকে ‘আল্লামাহ’, ‘হাক্কানী
পীর’, ‘আল্লাহর বড়
অলি’, ‘মহা
বিদ্বান’ ইত্যাদি নজরকাড়া উপাধিতে ভূষিত করে
থাকেন, কিন্তু অন্যান্য সূফীদের মতো তিনিও শিরক ও বিদআরী আমলের চর্চা ও ভ্রান্ত
আক্বিদাহ লালন করে থাকেন। আল্লাহর অনুমতিক্রমে নীচে আমি তার একটা উদাহরণ
দিচ্ছি।
মাওলানা আহমাদ শফি সাহেব তার ভক্তদের
জন্য একটা কিসসা বর্ণনা করেছেন, যা নিন্মরূপঃ
হোসাইন আহমদ মাদানীকে (একজন দেওবন্দী
আলেমকে) মদীনায় তার ছাত্ররা প্রশ্ন করলো, “রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কি কবরে
জীবিত?” হোসাইন
আহমদ মাদানী বললেন, “আলমে মেছালীতে
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম জীবিত। কিন্ত
তার ছাত্ররা দলিল-প্রমাণাদী পেশ করলো যে, কোরআনে সুরা যুমারের ৩০নং আয়াতে বলা হয়েছে
“(হে
নবী!) নিশ্চয় আপনি মৃত্যুবরণ করবেন আর তারাও মৃত্যুবরণ করবে।”
হোসাইন আহমদ মাদানী ছাত্রদেরকে
বিভিন্ন দলিলের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করলেন, কিন্ত তারা বুঝতে অপ্রস্তুত।
এরপর হোসাইন আহমদ মাদানী ছাত্রদেরকে নিয়ে ‘রওযায়ে
আতহার’ (অর্থাৎ, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের কবরের) কাছে
নিয়ে গেলেন এবং হাত দিয়ে ইশারা করলেন। এই ইশারাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ‘রওযা’ থেকে মাথা
উঠিয়ে সকলকে দেখা দিয়ে আবার মাটির নিচে লুকিয়ে গেলেন।”
মাওলানা আহমাদ শফি সাহেব সাহেবের
নিজের লিখা কিতাব “ইরশাদাতে মুরশিদী”, পৃষ্ঠা
৪২।
মন্তব্যঃ
(১) এই ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে নির্জলা মিথ্যা
অপবাদ। কোন মানুষের ডাকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কবর থেকে
বের হয়ে এসেছেন (নাউযুবিল্লাহি মিং সাররি যালিক), এমন কথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান ও
মর্যাদার জন্য অসম্মানজনক। আর কোন নবী অথবা রাসুল (আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি
শান্তি প্রেরণ করুন) সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলা কুফুরী।
(২) সূফীদের মাঝে বদ একটা চরিত্র
হচ্ছে নিজেদের পীর ও মাশায়েখকে উঁচু করার জন্য ‘কারামত’ নাম দিয়ে
উদ্ভট ও মিথ্যা কাহিনী প্রচার করা। এমনকি কখনো তারা বেপরোয়া হয়ে এমন কাহিনী রচনা
করে যা শিরক কিংবা কুফরে গিয়ে পৌঁছে, উপরের বানোয়াট ঘটনাটা তারই একটা উদাহরণ। ঠিক
এমনই অন্য একটা মিথ্যা কিসসা বর্ণনা করেছেন প্রচলিত ‘তাবলীগ
জামাত’ এর লেখক মাওলানা জাকারিয়া কান্ধলবী সাহেব
(আল্লাহ তাকে উপযুক্ত প্রতিদান দিন)। কাহিনীটির বিস্তারিত বর্ণনা এবং সে সম্পর্কে
আরব বিশ্বের বড় আলেমদের ফতোয়ার অনুবাদ দেখুন এই লিংকে –
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1442257325807010
এছাড়া মাওলানা আহমাদ শফি সাহেবের আরো
কিছু বিদআ’তী আমল নিন্মে বর্ণনা করা হলোঃ
(১) “চিশতী” তরীকা
ধরতে হবে। ফুয়ুজাতে আহমাদিয়া, পৃষ্ঠা ৬৬।
(২) প্রতিদিন নির্জনে আধা ঘন্টা “মোরাকাবা
মাইয়্যিয়াত” বা ধ্যান করতে হবে। ফুয়ুজাতে আহমাদিয়া,
পৃষ্ঠা ২৫।
(৩) প্রতদিন এক ঘন্টা “যিকরে পাছে
আনফাছ” করতে
হবে। ফুয়ুজাতে আহমাদিয়া, পৃষ্ঠা ২২।
(৪) “আল্লাহু
আল্লাহু আল্লাহু” জিকির করতে হবে প্রতিদিন ৫০
হাজার বা ১লক্ষ ২৫ হাজার বার। ফুয়ুজাতে আহমাদিয়া, পৃষ্ঠা ২৪।
(৫) “ইল্লাল্লাহ
ইল্লাল্লাহ” - অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া, আল্লাহ ছাড়া, (নাউযুবিল্লাহ!) এই যিকির করতে হবে ৪০০
বার। ফুয়ুজাতে আহমাদিয়া, পৃষ্ঠা ৬৬।
মন্তব্যঃ ইল্লাল্লাহ অর্থ আল্লাহ
ছাড়া বা আল্লাহ নেই, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। পূর্ণ কালিমা ‘লা ইলাহা
ইল্লাল্লাহ’ বাদ দিয়ে শুধু ‘ইল্লাল্লাহ
ইল্লাল্লাহ’ শব্দ দিয়ে যিকির করা বিদআ’ত এবং এই
কথাটা কুফুরী।
আল্লাহ আমাদেরকে শিরক ও বিদআ’তের শয়তানী
ধোঁকা থেকে হেফাজত রাখুন, আমিন।
.
বিঃদ্রঃ আমি ভালো করেই জানি, শিরক ও
বিদআ’তে লিপ্ত আলেমদের সমালোচনা করলে তাদের
অনুসারীরা আমাদের উপর রাগ করেন এবং কটু মন্তব্য করে দাওয়াতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা
করেন। এছাড়া পথভ্রষ্ট ব্যক্তি বা দলের প্রতি দুর্বল বা অনেক আবেগী মুসলমান, যাদের
ইলম কম কিন্তু জিহবা লম্বা, তাদের কেউ কেউ আমাদের বিরোধীতা করে বলেনঃ
(১) আমরা অন্যের নামে গীবত করছি,
(২) আমরা উম্মতের মাঝে বিভক্তি
সৃষ্টি করছি,
(৩) আমাদের দাওয়াত ফেতনাহ সৃষ্টি
করছে...
যারা অন্ধ হয়ে আবেগের ঘোড়ায় সওয়ারী
হয়ে চলেন, ইলম ও আলেমদের থেকে দূরে নিজেদের অজ্ঞতা কিংবা আন্দাজের উপর মিথ্যা তর্ক
করে আমাদের সময় নষ্ট করেন, অন্যায় গালি-গালাজে লিপ্ত হয়ে আমাদের দাওয়াতে বাঁধা
দিতে চায়, তাদের জন্য দুয়া করা ছাড়া আমাদের আর কিছু বলার নাই। আর যারা ক্বুরআন ও
সুন্নাহ থেকে প্রণীত আমাদের পূর্ববর্তী আলেম-উলামাদের নীতি সম্পর্কে জানতে চান,
তাদেরকে নীচের এই দুইটা লিংক মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
আপনারা
আলেমদের সম্পর্কে গীবত করেন কেনো? (পর্ব-১)
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/1824106874288718
আপনারা
আলেমদের সম্পর্কে গীবত করেন কেনো? (পর্ব-২)
হাদীস
এবং ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ কর্তৃক হাদীসের বিস্তারিত ব্যখ্যাঃ
https://www.facebook.com/dawati.kaj/posts/1845138912424932
(সমাপ্ত)