সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

ডা. জাকির নায়েক (পর্ব-২)

ডা. জাকির নায়েক (পর্ব-২)
(১) ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহ একজন বিখ্যাত তাবেয়ী। তিনি ১১১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেছিলন। আজ হচ্ছে ১৪৩৭ হিজরী। অর্থাৎ, তিনি প্রায় ১৩২৬ বছর পূর্বে আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর একটা কথা খুব বিখ্যাত ও স্বরণযোগ্য। কথাটা এতো গুরুত্বপূর্ণ যে, সহীহ মুসলিমের সংকলক ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর সহীহ মুসলিম এর ভূমিকাতেই কথাটা উল্লেখ করেছেন।
ইমাম ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, মানুষেরা পূর্বে হাদীসের সনদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতোনা। কিন্তু যখন ফিতনাহ এসে পড়ল, তখন তারা বলা শুরু করলেন, তোমাদের হাদীসের রাবী বা বর্ণনাকারীর নাম বল। এরপর কেবল আহলুস সুন্নাহ ব্যক্তিদের হাদীস গ্রহণ করা হত। আর আহলুল বিদআহ হলে তার কাছ থেকে হাদীস গ্রহণ করা হতোনা। সহীহ মুসলিম, মুক্বাদ্দিমাহ অধ্যায়।
আপনার আহলে হাদীস লাইব্রেরী প্রকাশনী কিংবা ইসলামী ফাউন্ডেশান থেকে অনুদিত সহীহ মুসলিমের প্রথম খন্ডের ভূমিকাতেই এই কথাটি খুঁজে পাবেন।
.
(২) ইমাম ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহর এই কথার দ্বারা প্রমানিত হয় যে, রাসুলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস মোতাবেক মুসলিমদের মধ্যে যে মোট ৭৩-টি দল-উপদল সৃষ্টি হবে, সেইগুলোর মাঝে একমাত্র নাজাতপ্রাপ্ত দলটি অন্তত ১৩২৬ বছর পূর্ব থেকে নিজেদেরকে আহলুস সুন্নাহ বলে পরিচয় দিয়ে আসছে। ইমাম ইবনে সিরীন রাহিমাহুল্লাহর মৃত্যুর পরে ১৩২৬ বছরের মাঝে মুসলিম উম্মাহর মাঝে নক্ষত্রের মতো যেই সমস্ত আলেম গত হয়েছেন, তাঁদের কয়েকজন হচ্ছেনঃ
- নূমান বিন সাবিত রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৫০ হিজরী), যিনি ইমাম আবু হানীফা নামে পরিচিত।
- মালেক বিন আনাস রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৭৯ হিজরী), যিনি ইমাম মালেক নামে পরিচিত।
- মুহাম্মদ ইবনে ইদরীস রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২০৪ হিজরী), যিনি ইমাম শাফেয়ী নামে পরিচিত।
- আহমাদ ইবনে হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২৪১ হিজরী), যিনি ইমাম আহমাদ নামে পরিচিত।
- মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২৫৬ হিজরী), যিনি ইমাম বুখারী নামে পরিচিত।
- মুহাম্মদ ইবনে আল-হাজ্জাজ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ২৬৪ হিজরী), যিনি ইমাম মুসলিম নামে পরিচিত।
- ইমাম তাহাবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২১ হিজরী)
- আব্দুল ক্বাদির জিলানী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৫৬১ হিজরী)
- ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৬৭৬ হিজরী)
- ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৭২৮ হিজরী)
- ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৮৫২ হিজরী)
আধুনিক যুগের আলেমদের মধ্যে রয়েছেনঃ
- সৌদি আরবের বিগত প্রধান মুফতি, আল্লামাহ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৪২০ হিজরী)
- বিগত শতাব্দীর প্রধান মুহাদ্দিস, আল্লামাহ নাসির উদ্দীন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১৪২০ হিজরী)।
.
উপরে যাদের নাম উল্লেখ করা হলো, তাঁরা সকলেই ক্বুরানুল কারীম হিফজ করেছেন, তাঁর আয়াত সমূহ পড়েছেন, বুঝেছেন, সেইগুলো নিয়ে গবেষণা করেছেন এবং সেই অনুযায়ী উম্মতকে শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁদের সকলেই ক্বুরানুল পড়তেন, যেখানে এই আয়াতটিও পড়তেন
আল্লাহ তাআলা বলেছেন, তার চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে, যে ব্যক্তি মানুষকে আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়, নেক আমল করে এবং বলেঃ আমি একজন মুসলিম (আজ্ঞাবহ)? সুরা হা মীম আস-সাজদাহঃ ৩৩।
.
উপরে উল্লেখিত সমস্ত আলেমগণ সুরা হা মীম আস-সাজদাহর ৩৩ নাম্বার আয়াত পড়তে, বুঝতেন, কিন্তু আজ পর্যন্ত আলেমদের মধ্যে কোন একজন আলেম এই ফতোয়া দেন নি যে,
- ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রহিমাহুল্লাহ হক্কপন্থী মুসলিমদেরকে আহলুস সুন্নাহ নামে ডেকে ভুল করেছেন।
অথবা,
- নিজেকে আহলুস সুন্নাহ বা সুন্নী নাম বলে পরিচয় দেওয়া যাবে না, দিলে সেটা সুরা হা মীম আস-সাজদাহর ৩৩ নাম্বার আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে যায়।
বরং, উপরে উল্লেখিত সমস্ত আলেমরা ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে সিরীন রহিমাহুল্লাহর মতোই নিজেকে আহলুস সুন্নাহ বা সংক্ষেপে সুন্নী নামে পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরা নিজেরাও আহলুস সুন্নাহর অনুসারীদের আকিদাহ, মূলনীতি, কর্মপদ্ধতি কি, এনিয়ে কত শত বই লিখেছেন।
.
কিন্তু ১৯৬০ সালে পাকিস্থানের মাসুদ আহমেদ বি.এস.সি. নামক জনৈক এক ব্যক্তি জামাতে মুসলিমিন নামে নতুন একটি চরমপন্থী, বিদআতী দল গঠন করলেন এবং মুসলিমদের সামনে এই থিওরী পেশ করলেনঃ
আমাদেরকে শুধুমাত্র মুসলিম বলে পরিচয় দিতে হবে, অন্য কোন নাম (যেমন সুন্নী, সালাফী) নামে পরিচয় দেওয়া চরম অপরাধ।
.
আশা করি, আমার বক্তব্য পরিষ্কার। আর পোস্টের শুরুতে একটা নাম উল্লেখ করেছি, তাঁর নাম কেনো উল্লেখ করলাম, বিস্তারিত উল্লেখ করলাম না। বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের জন্য ইশারাই যথেষ্ঠ।
.
আহলে সুন্নাহ নামে পরিচয় দেওয়া কি ক্বুরানের সাথে সাংঘর্ষিক?
https://www.facebook.com/dawati.kaj/posts/1847270068878483
.
সর্বশেষ, যারা আমাদের পেইজ আনলাইক করতে চান, আমাদেরকে গালি দিতে চান, জ্ঞান ছাড়াই কথা বলে বা তর্ক করে নিজেদের ও আমাদের সময় নষ্ট করতে চান, তাদের জন্য ক্বুরানের একটি আয়াত পেশ করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছিঃ
উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
(হে নবী!) সুতরাং আপনি আমার বান্দাদেরকে সুসংবাদ দিন। (আমার সেই সমস্ত বান্দাদের জন্যে সুসংবাদ), যারা মনোযোগ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর তারা মাঝে যা উত্তম, তার অনুসরণ করে। আল্লাহ তাদেরকেই সৎপথ প্রদর্শন করেন এবং তারাই হচ্ছে সত্যিকারের বুদ্ধিমান সুরা আয-যুমারঃ ১৭-১৮।

.