‘আইয়ামে
বীয’ এর রোজাঃ
‘হিজরী’ বা চাঁদের ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আজ মাগরিবের
পর থেকে ১৪৩৭ হিজরী সনের ‘সফর’ মাসের ১৩ তারিখ শুরু হলো। সুতরাং, যারা
আইয়ামে বীজ-এর রোজা রাখতে চান, তারা আজ থেকে সাহরী খেয়ে ইন শা আল্লাহ আগামীকাল
থেকে বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার –
এই মোট তিন দিন রোজা থাকবেন। ঢাকায় আজকে সাহরীর শেষ সময়ঃ ৫:০০ মিনিট এবং আগামীকাল ইফতার
শুরুঃ ৫:১১ মিনিটে।
________________________
প্রশ্নঃ আইয়ামে বীয কি?
উত্তরঃ চন্দ্র মাসের ১৩,
১৪ ও ১৫, এই দিনগুলোকে “আইয়ামে বীয” বা আলোকিত দিনসমূহ বলা হয়। কারণ এই
দিনগুলোতে চাঁদ সবচাইতে বেশি আলোকিত থাকে।
________________________
প্রশ্নঃ আইয়ামে বীয এর দিনগুলোর বিশেষ ফযীলত কি?
উত্তরঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম মাসের এই তিনদিন নিয়মিত
রোযা রাখতেন। তাই মাসের ৩টা রোযার জন্য এই ৩ দিনকে বেছে নিলে ভালো।
(১) আবু দরদা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “আমার
প্রিয় বন্ধু (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এমন তিনটি কাজের
অসিয়ত করেছেন, যা
আমি যতদিন বেঁচে থাকব, কখনোই ত্যাগ করব না। সেগুলো হচ্ছে,
প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা (আইয়ামে বীজ এর ৩দিন) পালন করা, চাশতের নামায পড়া এবং বিতির না পড়ে ঘুমাতে না যাওয়া।”
সহীহ মুসলিমঃ ৭২২,
আবু দাউদঃ ১৪৩৩, আহমাদঃ ২৬৯৩৫।
(২) আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু
থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রত্যেক মাসে (নফল) রোযা পালন করলে
(শুক্লপক্ষের) ১৩,
১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করো।”
তিরমিযীঃ ৭৬১,
নাসায়ীঃ ২৪২৪, শায়খ আলবানীর মতে হাসান সহীহ,
তাহকীক রিয়াদুস সালেহীন।
(৩) ক্বাতাদাহ ইবনে মিলহান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ “রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে শুক্লপক্ষের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার
জন্য আদেশ করতেন।”
আবু দাউদঃ ২৪৪৯,
নাসায়ীঃ ২৪৩২।
(৪) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বাড়ীতে থাকাবস্থায় অথবা সফরে থাকাবস্থায়, কখনোই আইয়ামে বীযের রোযা
ছাড়তেন না।”
নাসায়ী ২৩৪৫,
শায়খ আলবানীর মতে হাসান সহীহ, তাহকীক রিয়াদুস
সালেহীন।
________________________
প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোযা রাখার ফযীলতঃ
প্রত্যেক মাসে ৩টা করে রোযা রাখলে সারা বছর নফল রোযা রাখার সমান পাওয়া যায়, সুবহা’নাল্লাহ! কারণ, আল্লাহ যেকোনো ভালো কাজের
প্রতিদান অন্তত ১০ থেকে ৭০০ গুণ, বা তাঁর রহমত অনুযায়ী চাইলে
আরো অনেক বেশি দান করেন। ৩*১০=৩০, এইভাবে প্রত্যেক মাসে ৩টি
রোযা রাখলে সারা বছরই নফল রোযা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে, ইন শা’ আল্লাহ।
আ’ব্দুল্লাহ
ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখা, সারা বছর ধরে রোযা রাখার
সমান।”
সহীহুল বুখারীঃ ১১৫৯,
১৯৭৫।
***উল্লেখ্য কোনো কারণে আইয়ায়মে বীজ-এর এই ৩ দিন রোযা রাখতে না পারলে, মাসের অন্য যেকোনো ৩দিন
রাখলেও ‘সারা
বছর রোযা রাখার এই ফযীলত’
পাওয়া যাবে।
________________________
উল্লেখ্য, আগামীকাল বৃহস্পতিবার, সুতরাং যারা আগামীকাল রোযা থাকবেন তারা
বৃহস্পতিবার রোযা রাখা সুন্নত, অন্তরে অতিরিক্ত সেই নিয়তও করে রাখবেন। এইভাবে
নিয়তের দ্বারা একদিন রোজা রেখে দুইটি সুন্নতের উপর আমল করার দ্বিগুণ সওয়াব পাওয়া
যাবে ইন শা’
আল্লাহ। আর যাদের ‘কাজা
রোজা’ বাকী আছে, তারা সাহরীর ওয়াক্ত শেষ হওয়ার
পূর্বেই ফরজ কাজা এই নিয়ত করে নেবেন। কারণ, ফজরের ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বেই ‘ফরজ রোজার নিয়ত’ না করলে সেটা ফরজ বলে গণ্য হবেনা, নফল রোজা
হিসেবে গণ্য হবে।
________________________
#আনসারুস
সুন্নাহ।