প্রাণীর ছবি আঁকা বা মূর্তি, স্ট্যাচু,
এন্টিক বানানো হারাম। এ সম্পর্কে হাদীসের বক্তব্যঃ
১. আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে
বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি কোন (প্রাণীর) ছবি তৈরি করে,
আল্লাহ্ তাআ’লা
তাকে শাস্তি দিবেন,
যতক্ষণ পর্যন্ত না তার মাঝে (সেই মূর্তি বা ছবিতে) প্রাণ দিতে না
পারে। আর তাতে সে কক্ষনো প্রাণ দিতে পারবে না।”
সহীহ বুখারী, চতুর্থ খণ্ড, হাদিস নং ২০৮৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশান অনুবাদ।
২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
আরো বলেছেন, “(কিয়ামতের দিন) মানুষের
মধ্যে সবচাইতে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা (প্রাণীর) ছবি
বানায়।”
সহীহ বুখারী, নবম খণ্ড, হাদিস নং ৫৫২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশান অনুবাদ।
প্রাণীর ছবি আঁকা বা মূর্তি বানানো হারাম
কেনো?
মহান আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লার বাণীঃ
“আর তারা (নূহ আঃ এর যুগের কাফের-মুশরেকরা)
বড় রকমের ষড়যন্ত্র করেছিলো। এবং (তাদের নেতারা জাতির লোকদের উদ্দেশ্যে) বলেছিলো, তোমরা কখনো তোমাদের
দেব-দেবীদেরকে ত্যাগ করো না; ত্যাগ করো না ওয়াদ্দ্, সুওয়া’,
ইয়াগূস, ইয়াঊ’ক ও নাসরকে।”
সুরা নূহঃ ২২-২৩।
আয়াতের তাফসীর ও শিক্ষাঃ “ছবি ও মূর্তি থেকেই মূর্তিপূজার সূচনা
হয়েছিলো”
(১) আদম আ’লাইহিস
সালাম থেকে নূহ আ’লাইহিস
সালাম এর পর্যন্ত প্রায় ১০০০ বছর সময় ব্যবধান ছিলো। এই সময়ের মাঝে কেউই মূর্তিপূজা
বা শিরক করতোনা। মানব জাতির ইতিহাসে নূহ আ’লাইহিস সালাম এর জাতির লোকেরা প্রথম আল্লাহ
তাআ’লাকে বাদ দিয়ে মূর্তিপূজা করেছিলো।
(২) নূহ আ’লাইহিস সালাম কে ‘আল্লাহর রাসূল’ হিসেবে পাঠানোর পূর্বে ওয়াদ্দ, সুওয়া’, ইয়াগূস, ইয়াঊ’ক
ও নাসর নামে পাঁচ জন নেককার লোক ছিলো, যাদেরকে তাদের জাতির লোকেরা আল্লাহওয়ালা
মানুষ হিসেবে খুব ভালোবাসতো ও সম্মান করতো।
(৩) তারা যখন মৃত্যু বরণ করলো, শয়তান তখন
তাদের ভক্তদেরকে কুমন্ত্রনা দিলো, তোমরা এই নেককার লোকদের মূর্তি বানিয়ে নিজেদের
ঘরে ও দোকানে স্থাপন করে রাখ। যাতে করে, তোমরা তাদেরকে সর্বদা মনে রাখতো পারো এবং
তাদের স্মৃতি মনে রেখে তোমরাও তাদের মতো নেক কাজ করতে পার। তারা তাই করলো, তাদের
নেককার লোকদের স্মৃতি রক্ষার্থে পাঁচ জনের মূর্তি বানিয়ে রাখলো। তারা কিন্তু এই
মূর্তিগুলো ‘পূজা’ করার জন্যে বানায়নি, তাদের উদ্দেশ্য
আপাতদৃষ্টিতে ভালো ছিলো। এই মূর্তিগুলো দেখে দেখে তাদের মতো নেক কাজ করবে।
(৪) যাই হোক, যারা এই মূর্তিগুলো বানিয়েছিলো
তারা যখন মৃত্যুবরণ করল,
তখন শয়তান তাদের বংশধরকে এই বলে ধোঁকা দিলো যে, “তোমাদের বাপ-দাদারা তো ওয়াদ্দ, সুওয়া’, ইয়াগূস, ইয়াঊ’ক
ও নাসর - এদের পূজা করত, এ কারণেই তাদের মূর্তি বানিয়ে বাড়িতে ও দোকানে স্থাপন করে রেখেছিলো।”
(৫) লোকেরা শয়তানের ধোঁকা বিশ্বাস করে সেই
মূর্তিগুলোকে উপাস্য হিসেবে তাদের পূজা করা শুরু করলো। আর এইভাবে, শয়তানের ধোঁকায়
পড়ে মানব জাতির মাঝে প্রথম মূর্তিপূজার নিকৃষ্ট ‘শিরক’ চালু হয়েছিলো।
(৬) নূহ আ’লাইহিস সালাম কে আল্লাহ রাসূল হিসেবে পাঠান,
যাতে করে তাঁর জাতির লোকদেরকে মূর্তিপূজার শিরক ছেড়ে এক আল্লাহর উপাসনা করার
জন্যে। তারা তা মানতে অস্বীকার করে, এবং তাদের জাতির লোকদের মাঝে নেতারা সেই দেব
দেবীর পূজাতে অটল থাকার জন্যে লোকদেরকে উৎসাহিত করতে এই কথা বলেছিলো, “তোমরা কখনো তোমাদের দেব-দেবীদেরকে ত্যাগ করো
না; ত্যাগ করো
না ওয়াদ্দ্, সুওয়া’, ইয়াগূস, ইয়াঊ’ক
ও নাসরকে।”
উৎসঃ সহীহুল বুখারীঃ সূরা নূহের তাফসীর,
তাফসীর ইবনে কাসীর, তাফসীর আহসানুল বায়ান।
মূর্তিপূজার দরজা চিরতরে বন্ধ করে দেওয়ার
জন্যে ‘ইসলামী শরিয়াতে’ ছবি অংকন করা বা প্রতিমা, মূর্তি, স্ট্যাচু
নির্মান করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে, এবং এই পাপের জন্যে ক্বিয়ামতের দিন কঠিন
শাস্তি দেওয়া হবে বলে সতর্ক করা হয়েছে। শুধু মুশরিকরাই নয়, যাদেরকে আসমানী কিতাব
দেওয়া হয়েছিলো (ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদেরকে), তারাও একই রকমভাবে তাদের নবী-রাসূলদের
ও নেককার লোকদের ছবি-মূর্তি বানিয়ে রাখতো, একারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম তাদেরকে সবচাইতে নিকৃষ্ট প্রাণী বলেছেন।
একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর স্ত্রী উম্মু সালামাহ রাদিয়াল্লাহু আ’নহা তাঁকে ইথিওপিয়ার একটি
গির্জার কথা বললেন, যেটির দেওয়ালে তিনি অনেকগুলো ছবি
দেখেছিলেন । তার কথা শুনে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “তাদের মধ্যে কোন পুণ্যবান ব্যক্তি মারা গেলে
তারা তাদের কবরের উপর উপাসানালয় নির্মাণ করতো এবং এ ধরণের চিত্র অংকন করে রাখতো।
আল্লাহর দৃষ্টিতে তারাই হচ্ছে সৃষ্ট জীবের মাঝে সবচাইতে নিকৃষ্ট।”
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম।
সুতরাং, একইভাবে আজকে কোন মুসলমান যদি কোন অলি-আওলিয়ার
কবরের উপরে মসজিদ বানায় এবং তাদের ছবি বা মূর্তি বানিয়ে রাখে, তাহলে একইরকমভাবে আল্লাহর
দৃষ্টিতে তারাও সৃষ্ট জীবের মাঝে সবচাইতে নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে। এবার তাহলে চিন্তা
করুন,
(ক) যারা অলি-আওলিয়াদের কবরের উপরে মসজিদ,
মাযার বানিয়ে সেইগুলোকে উপাসনালয় বানিয়েছে, ক্বিয়ামতের দিন এদের অবস্থা কি হবে?
(খ) যারা নেতা-নেত্রী, শহীদ, পথভ্রষ্ট
বুদ্ধিজীবী, লেখক ও শিল্পীদের ছবি, মূর্তি বানায়, সেইগুলো ঝুলিয়ে রাখে, তাদের
জন্মবার্ষিকী, মৃত্যুবার্ষিকী বা স্মৃতি দিবসে মুশরিকিনদের মতো সেইগুলোতে ফুলের শ্রদ্ধাঞ্জলি,
পুষ্পাঞ্জলি দিইয়ে ভক্তি-শ্রদ্ধা করে, সেইগুলো সামনে ২মিনিট ৫ মিনিট খাম্বার মতো
নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে, ক্বিয়ামতের দিন তাদের কি কঠিন শাস্তিই না হবে?
আল্লাহ
আমাদেরকে তাঁর আযাব ও গজব থেকে রক্ষা করুন, আমাদের জাতির লোকদেরকে শহীদদের
শ্রদ্ধার নামে নব্য মূর্তিপূজা থেকে হেফাজত করুন, আমিন।