শুক্রবার, ৬ নভেম্বর, ২০১৫

আমার বান্দাদের মাঝে অল্প সংখ্যক লোকেই কৃতজ্ঞ

#শুকরিয়া
তাক্বদীর বা আল্লাহর নির্ধারিত ভাগ্যের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর নিয়ামতের জন্যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা জীবনে সুখী হওয়ার জন্য সবচাইতের জরুরী।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন,
আমার বান্দাদের মাঝে অল্প সংখ্যক লোকেই কৃতজ্ঞ। সুরা সাবাঃ ১৩।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আরো বলেছেন,
সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরলে স্মরণ রাখবো। আর তোমরা আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; আমার প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়ো না। সুরা বাক্বারাহঃ ১৫২।
______________________
জীবনে সুখী হওয়ার একটা শর্ত হচ্ছে, রিদা মিন ক্বালিল বা অল্পে তুষ্ট থাকা। দুনিয়াতে অনেকে আপনার চাইতে অধিক ভোগ-বিলাসে জীবন কাটাবে, আবার দুনিয়াতে অনেকে আপনার চাইতে অনেক বেশি দুঃখ-কষ্টে সময় পার করবে। আপনি যদি দুনিয়ার ব্যপারে আপনার চাইতে অধিক নেয়ামতপ্রাপ্ত কারো দিকে তাকান, তাহলে আল্লাহ্ আপনাকে যা দিয়েছেন সেগুলোকে অনেক কম মনে হবে। যার ফলে আপনি আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া না করে উল্টা না পাওয়ার জন্য আফসোস করে নাশোকরী করে বসবেন। আর দ্বীনের ব্যপারে যদি আপনি আপনার চাইতে নিকৃষ্ট কোন ব্যক্তির দিকে তাকান, তাহলে নিজের পাপ কাজগুলোকে অনেক কম মনে হয়ে নিজেকে আল্লাহর ওয়ালী ভাবতে শুরু করবেন। সেইজন্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা সবসময় দুনিয়ার ব্যপারে তোমাদের চাইতে নিচু কারো প্রতি লক্ষ্য করবে, আর দ্বীনের ব্যপারে তোমাদের চাইতে উত্তম কোন ব্যক্তির দিকে লক্ষ্য করবে। এতে করে তোমরা তোমাদের প্রতি আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতগুলোর কথা স্বরণ করতে পারবে এবং এটা তোমাদেরকে আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞশীল হতে সাহায্য করবে।
______________________
অল্পে তুষ্ট থাকা নিয়ে বিখ্যাত কবি শেখ সাদী রহঃ এর একটা সুন্দর কবিতার বাংলা অনুবাদঃ
একদা ছিলনা জুতা চরণ যুগলে
দহিল হৃদয়-অমন সেই ক্ষোভানলে,
ধীরে ধীরে চুপি চুপি দুঃখাকুল মনে
গেলাম ভজনালয়ে ভজন কারণে।
দেখি সেথা একজন পদ নাহি তার
অমনি জুতার খেদ ঘুচিল আমার।
পরের দুঃখের কথা করিলে চিন্তন
আপনার মনে দুঃখ থাকে কতক্ষণ?
______________________
একটু চিন্তা করে দেখুনঃ আমাদের দুই পা, দুই চোখ, দুই কান, অংগ প্রত্যংগ গুলো আমাদের জন্য কত বড় নেয়ামত, যা না চাইতেই আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন। অথচ আমরা এই নেয়ামতগুলোর ব্যপারে উদাসীন!
আল্লাহ্‌ সুবহানাহু তাআলা বলেন, (হে নবী! আপনি তাদেরকে) বলুন, তিনিই (হচ্ছেন মহান আল্লাহ্ যিনি) তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং তোমাদেরকে দিয়েছেন কান, চোখ এবং অন্তর। (কিন্তু তোমরা) তোমরা খুব সামান্যই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। সুরা মুলকঃ ২৩।
দুনিয়ার অনেক মানুষ আছে যারা চোখে দেখতে পারেনা, কানে শুনতে পারেনা, হাটা চলা করতে পারেনা, হাত-পা না থাকার কারণে পংগু হয়ে আছে, রোগ বা বয়সের ভারে হাসপাতালে বা বিছানায় অসহায় হয়ে পড়ে আছে. . .তার বিপরীতে আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ-সমর্থ্য রেখেছেন, হাটা চলা করার শক্তি দিয়েছেন, সেজন্য আমাদের উচিৎ সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। সত্যি কথা হচ্ছে, না চাইতেই এই নেয়ামতগুলো পেয়ে যাওয়ায়, দিন-রাত ২৪ ঘন্টা এই নেয়ামত ভোগ করলেও আমাদের কখনো মনেই হয়না যে এইগুলো আল্লাহ্‌ আমাদেরকে দান করেছেন। এমন অনেক নেয়ামত আমাদের জীবনে রয়েছে যা আল্লাহর দান কিন্তু আমরা বুঝতে পারিনা বা স্বীকার করিনা। এইজন্য আল্লাহ্‌ তাআআলা বলেছেন,
যে সকল বস্তু তোমরা চেয়েছ, তার প্রত্যেকটি থেকেই তিনি তোমাদেরকে দান করেছেন। যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামতসমূহ গণনা কর, তবে সেইগুলো গুণে শেষ করতে পারবে না। নিশ্চয় মানুষ হচ্ছে অত্যন্ত জালেম (অন্যায়কারী) ও অকৃতজ্ঞ। সুরা ইব্রাহীমঃ ৩৪।
সর্বশেষ, আমরা কেনো সর্বদা আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো, তাঁর নির্ধারিত তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকবো, আশা করি নিচের এই হাদীসটা পড়লে সেটা বুঝতে আমাদেরকে সাহায্য করবে।
রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রভাত করে এমন অবস্থায় যে, শরীরিকভাবে সে সুস্থ আছে, তার জান-মালের নিরাপত্তা আছে এবং তার কাছে ঐ দিনের খাদ্য মওজুদ আছে, তবে তাকে যেন সমস্ত দুনিয়া দিয়ে দেওয়া হয়েছে।