জিহাদ নয় ফাসাদঃ
আজ (১৪ই নভেম্বর, ২০১৫) ফ্রান্সের রাজধানী
প্যারিসে একটি ফুটবল খেলার মাঠে, তার পার্শবর্তী রাস্তায় ও কনসার্ট হলে ৮জন
আত্মঘাতী হামলাকারী গ্রেনেড ও বোমা হামলা করে এবং AK-47 দিয়ে গুলি করে ১৫০ জনের বেশি মানুষকে হত্যা
করে ও এবং তারা নিজেরাও নিহত হয়। ঘটনার পর পরেই অজ্ঞাত স্থান থেকে ‘আইসিস’ দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিচ্ছে এবং ওয়েস্টার্ন
মিডিয়া ও সরকার ‘মুসলিম
সন্ত্রাসীদেরকে’ দোষী
সাব্যস্ত করছে।
১/ ইসলামের শত্রুরা যাতে মিথ্যা সংবাদ দিয়ে
মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে,
সেই জন্য আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা কোন ‘ফাসেক’ (পাপাচারী) মুসলিম ব্যক্তিও
যদিও কোন সংবাদ দেয়, সেটা যাচাই-বাছাই করে দেখতে আদেশ
করেছেন। আল্লাহ সুবহা’নাহু
তাআ’লা বলেন, “হে মুমিনগণ! যদি কোন ‘ফাসেক’ (পাপাচারী) ব্যক্তি তোমাদের
কাছে কোন সংবাদ নিসে আসে, তবে তোমরা সেটা পরীক্ষা করে
দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন জাতির ক্ষতিসাধন করতে
উদ্ধত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।” [সুরা হুজুরাতঃ ৬]
সুতরাং, ফ্রান্স এমেরিকার মতো ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের
সরকার ও তাদের পদলেহনকারী দেশি-বিদেশি মিডিয়াগুলো (যেমন BBC, CNN, রয়টার্স, প্রথম আলো, এটিএন নিউজ ইত্যাদির)
কথা নিজে যাচাই না করে বিশ্বাস করার প্রশ্নই আসেনা।
২/ ঘটনার পরপরই ইয়াহুদী ও খ্রীস্টান সন্ত্রাসীরা
সিরিয়া থেকে পালিয়ে আসা উদ্বাস্তু হিসেবে ফ্রান্সে বসবাসরত মুসলিমদের ক্যাম্পে
আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে। ‘চার্লি
হেবডোর’ ঘটনার পর পরে মাত্র ৩ দিনে ৫০টা মসজিদে
আক্রমন ও অনেক মুসলিমদেরকে হত্যা, গুম, নির্যাতন ও লাঞ্চিত করার মতো ঘটনাও হয়তো
ইতিমধ্যে অনেক ঘটছে...যা মুসলিম বিদ্বেষী মিডিয়াগুলো কোনদিন প্রচার করবেনা।
একমাত্র ভুক্তভোগী মুসলিমরা ছাড়া আর কেউই জানবেনা।
৩/ ইতিমধ্যেই সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের ধোঁয়া
তুলে আমেরিকা, ন্যাটো, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর মতো কাফির সংঘগুলো হয়তোবা নতুন কোন
মুসলিম দেশ আক্রমন করে ধ্বংস করা অথবা পূর্বেই আক্রমন করা মুসলিম দেশে আরো বেশি
করে ড্রোন হামলা ও বোম্বিং করে মুসলিম হত্যার ছক কষছে। হে আল্লাহ! মুসলিমদেরকে
তুমি রক্ষা করো ও কাফির ও মুশরিকদেরকে তুমি দমন করো। (আমিন)।
৪/ এই ঘটনার জন্যে যেই দায়ী থাকুক, তার সাথে
ইসলাম বা মুসলিমদের নূন্যতম সম্পর্ক নেই। সুতরাং, এর জন্যে মুসলিমদের লজ্জিত হওয়া
বা ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তবে মুসলিমরা এমন অন্যায় রক্তপাত ও জমিনে ফাসাদ
সৃষ্টি করার সমালোচনা করে ও প্রত্যাখ্যান করে।
৫/ এই ঘটনা আল-কায়েদাহ, আইসিস এর মতো পথভ্রষ্ট
দলের লোকেরা করতে পারে, আবার মুসলিমদেরকে বিপদে ফেলার জন্যে ইসরায়েলী বা ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের
কোন গুপ্ত দলও করে থাকতে পারে। আমাদের দেশে জাপানের নাগরিক কুনিও হত্যার পেছনে প্রথম
দিকে ‘আইসিস’ দায়ী বলে এমেরিকা নানারকম প্রোপাগান্ডা
চালিয়েছিলো। অথচ শেষে দেখা গেলো, কুনিও একজন মুসলিম যে কিনা কয়েকমাস পূর্বে ইসলাম
ধর্ম গ্রহণ করেছিলো। ইতিহাসে এমন উদাহরণ আছে, ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানদের গোপন
সংস্থাগুলো নিজেদের দেশে ক্ষতি করে মুসলিমদেরকে দোষ দিয়েছে।
৬/ এ ধরণে আক্রমনগুলো যারাই করে থাকুক না
কেনো, এটা প্রমানিত সত্যি যে, আল-কায়েদাহ, আইসিস, বোকো হারাম এমন নামধারী
কিছু সংগঠন যারা নিজেদেরকে মুসলিম দাবী করে কিন্তু মুসলিম কিংবা কাফের, যেকোন
দেশেই হামলা করে অন্যায়ভাবে নির্বিচারে ‘মুসলিম’ অথবা ‘কাফের’ হত্যা করে জান্নাতে যাওয়ার মতবাদে
বিশ্বাসী। তাদের আবগেপূর্ণ যুক্তির দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে ‘ইলম’ থেকে বঞ্চিত বহু নারী ও পুরুষ তাদের মানুষ
হত্যা ও ফাসাদের পক্ষে ফেইসবুক, টুইটার, ইন্টারনেটে ইনিয়ে বিনিয়ে লিখালিখিও করে
থাকে। এই সমস্ত পথভ্রষ্ট ব্যক্তি, দল বা সংগঠন থেকে সাবধান! এরা মুসলিম নাম দিয়ে
ইসলাম এর সবচাইতে বড় ক্ষতি করছে।
৭/ আনোয়ার আল-আওলাকি, জসীম উদ্দিন রাহমানী
এবং এমন আরো কিছু পথভ্রষ্ট বক্তা ও লিখক “ইয়াহুদী
খ্রীস্টানদের মতো বোমা হামলা করে ‘সিভিলিয়ান
মানুষ’ হত্যা করার মতো মানবতা বিরোধী কার্যকলাপ
পক্ষে” ফতোয়া(!) দিয়ে অনেক নারী ও পুরুষকে
বিভ্রান্ত করেছে। এমনকি তার তাদের পক্ষে ক্বুরান ও সুন্নাহর মনগড়া ব্যখ্যাও উপস্থাপন
করে। আপনারা এমন বক্তা এবং তাদের ভক্ত-শ্রোতা, সে যেই হয়ে থাকুক না কেনো, তাদের
ব্যপারে সাবধান থাকবেন এবং অন্যদেরকেও সাবধান করবেন।
৮/ একটা প্রশ্ন আসা খুব স্বাভাবিক, আজকে
মুসলিমরা এতো দুর্বল ও অসহায় কেনো? এই সমস্যার সমাধান কি?
মুসলিমরা এতো দুর্বল ও অসহায় এর কারণ হচ্ছে,
মুসলিমরা আল্লাহর সাহায্য থেকে বঞ্চিত। মুসলিমদের সমাজে প্রকাশ্য বড় শিরক ও কুফুরী
কাজ ও বড় বড় পাপাচার ব্যপকতা লাভ করেছে। মুসলিমরা বিপদে কারণ এমনও লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি
মানুষ পাওয়া যাবে যারা নিজেদের মুসলিম দাবী করে কিন্তু কবরে শায়িত বাবার পূজা করে
করে, জিন্দা নেংটা বাবার কাছে স্ত্রীকে নিয়ে যায় সন্তান পাওয়ার জন্যে, জ্যোতিষী ও
যাদুর মতো কুফুরী-কালামে লিপ্ত, দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে দুনিয়ার পেছনে ছুটছে,
অধিকাংশ মানুষই বেনামাযী, তাদের একজন শেষ কবে যে ক্বুরানের পাতা খুলে দেখেছিলো
সেটা বলতে পারবেনা। আমাদের মাঝে কতজন অন্তত ক্বুরান পড়তে পারে, সেটা বলতে গেলেই
লজ্জাজনক অবস্থার সৃষ্টি হবে। শাসকেরা নিজেদের খেয়াল-খুশি সংবিধান বানিয়ে সেইগুলোকে
পবিত্র জ্ঞান করছে ও দেশবাসীর উপরে চাপিয়ে দিচ্ছে। মুসলিমরা যতদিন পর্যন্ত না শিরক
ত্যাগ করে আল্লাহর দ্বীনে ফিরে আসবে, বিদাত ও গোমরাহী ত্যাগ করে সুন্নাহকে আঁকড়ে
ধরে ঐক্যবদ্ধ হবে, ততদিন পর্যন্ত তাদের সমস্যার সমস্যার সমাধান হবেনা।
সুতরাং, মুসলিম ভাই ও বোনদের প্রতি আমি
অনুরোধ করবো, আপনারা যদি মুসলিম উম্মাহর কল্যান চান এবং নির্যাতিত মুসলিম ভাই ও
বোনদের জন্যে কাজ করতে চান, তাহলে প্রথমে নিজে দ্বীন শিক্ষা করুন। মুসলিম সমাজ
থেকে শিরক উৎখাত করার আন্দোলনে শরীক হন। শিরক ও বিদাত মুক্ত হয়ে মুসলিমদের ঐক্যের
জন্যে সংগ্রাম করুন।
আমি
অন্তর থেকে আল্লাহ তাআ’লার কাছে দুয়া করি, তিনি যেন সমস্ত
মুসলিম ভাই ও বোনদেরকে হেফাজত করুন। বিশেষ করে ইরাক, সিরিয়া, ফিলিস্থিনের মতো
আক্রান্ত দেশগুলোতে ও ফ্রান্স, ইটালি ইত্যাদি মুসলিম বিদ্বেষী দেশগুলোর মুসলিমদের প্রতি রহমত করুন। আমিন।