শনিবার, ২১ জুন, ২০১৪

ভয়ংকর গোপন শিরকঃ- “রিয়া” বা লোক দেখানো ইবাদত



ভয়ংকর গোপন শিরকঃ- “রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত

আপনি বলুনঃ নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি এবং আমার জীবন ও মৃত্যু - বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।
সুরা আল-আনআমঃ ১৬২।

আপনি বলুনঃ আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ। আমার কাছে ‘ওয়াহী করা হয় যে, তোমাদের ইলাহ হচ্ছেন ‘একমাত্র ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন নেক আমল করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে।
সুরা আল-কাহফঃ ১১০।

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক থেকে খুব ভয় করছি। সাহাবীরা বললেন – ইয়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! ছোট শিরক কি? রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ তা হলো “রিয়া বা লোক দেখানো ইবাদত। যেদিন আল্লাহ তাআলা বান্দাদের আমলের পুরস্কার প্রদান করবেন, সেদিন রিয়াকারীদেরকে বলবেনঃ যাও, দুনিয়াতে যাদেরকে দেখানোর জন্য আমল করতে, তাদের কাছে যাও। দেখো তাদের কাছ থেকে কোনো পুরস্কার পাও কিনা?”
মুসনাদে আহমাদ, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হাদীসটি সহীহ – শায়খ আলবানী।

কোনো কিছু করার ইচ্ছাকে ইসলামে “নিয়ত বলা হয়। নিয়ত ভালো ও খারাপ, দুটোই হতে পারে। কোন ব্যক্তি যখন শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তাআলার উদ্দেশ্যে কোনো ইবাদত করে সেটাকে “ইখলাস বলা হয়। আর কেউ যখন লোক দেখানো বা অন্য কোনো উদ্দশ্যে হাসিলের জন্য “ইবাদত করে, যেমন- দুনিয়াবী কোন স্বার্থ হাসিল করা, টাকা পয়সা পাওয়া, আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে খুশি করা, মানুষ ধার্মিক বলুক বা প্রশংসা করুক, এমন খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে কোন ইবাদত করলে সেটাকে “রিয়া বলা হয়। সহজ ভাষায় – রিয়া হচ্ছে লোক দেখানো ইবাদত করা।

নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, ইসলাম বিষয়ক কিতাব লেখা, ব্লগে ইসলামিক আর্টিকেল লেখা - যেকোনো ইবাদত আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি বা উদ্দেশ্য ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে করলে সেটা আল্লাহ তাআলা কস্মিনকালেও কবুল করবেন না। বরং, এইরকম লোকদেখানো বা অন্যকে খুশি করার জন্য ইবাদত করার কারণে এটা – “শিরক এবং এর প্রতিদানে সে যদি তোওবা না করে তাহলে তাকে কঠোর শাস্তি দিবেন। এর জন্য পূর্বেকার সলফে সালেহীনগন কোনো আমল করার পূর্বে ভালোভাবে চিন্তা করতেন তাদের “নিয়ত বিশুদ্ধ আছে কিনা বা ইবাদতে ‘ইখলাস আছে কিনা। উল্লেখ্য রিয়া একপ্রকার শিরক, কিন্তু এটা শিরকে আসগার বা ছোট শিরক। ছোট শিরক মারাত্মক কবীরা গুনাহ, তবে কেউ ছোট শিরক করলে সে মুশরেক, কাফের বা চির জাহান্নামী হয়না। ছোট শিরকের হুকুম হচ্ছে – এটা যদি কেউ করে তাহলে সে বড় গুনাহগার হলো, তোওবা করলে মাফ পাবে, আর তোওবা না করেই মারা গেলে যতই নেককার হয়ে থাকুক না কেনো কেয়ামতের দিন ছোট শিরকে লিপ্ত হওয়ার কারণ আল্লাহ তাকে জাহান্নামে শাস্তি দিবেন। তবে কাফের, মুশরেকের মতো চিরজাহান্নামী না হয়ে শাস্তি মোচন হলে সে জান্নাতে যাবে।

ইখলাস না থাকলে তার পরিণতি কি হবে সেটা আল্লাহ পাক কোরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেনঃ

(আমি ছাড়া অন্যের সন্তুষ্টির জন্য) তারা যেসব আমল করবে, আমি তাদের কৃতকর্মের প্রতি মনোনিবেশ করব, অতঃপর সেইগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব।
সুরাহ আল-ফুরকানঃ ২৩।

কিয়ামতের দিন ‘রিয়াকারী বা লোক দেখানো আমলকারীর বিচার সবার প্রথম হবেঃ

কিয়ামতের দিন প্রথমে যেসব লোকের বিচার করা হবে তাদের মধ্যে একজন হচ্ছে ‘শহীদ ব্যক্তি। তাকে উপস্থিত করে আল্লাহ তাঁর নেয়ামতসমূহ স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে তা স্বীকার করবে। অতঃপর, আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন আমার দেয়া নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছ? উত্তরে সে বলবেঃ আমি আপনার দেওয়া নেয়ামতের বিনিময়ে আপনার রাস্তায় জিহাদ করে শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছে; বরং তুমি এই উদ্দেশ্যে জিহাদ করে শহীদ হয়েছিলে যাতে করে লোকেরা তোমাকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করে। পৃথিবীতে তা বলা হয়ে গেছে। অতঃপর তাকে মুখের উপর উপুড় করে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

অতঃপর, এমন একজন ‘আলেমকে উপস্থিত করা হবে যে দ্বীনি ইলম অর্জন করেছে এবং মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন পাঠ করেছে। অতঃপর তাকে আল্লাহর নেয়ামতসমূহ স্মরণ করানো হবে। সেও তা স্বীকার করবে। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেনঃ আমার দেয়া নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছ? সে বলবেঃ আমি আপনার দেওয়া নেয়ামতের বিনিময়ে দ্বীনি ইল্ম অর্জন করেছি, অন্যকে তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনার জন্যে কুরআন পাঠ করেছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো; বরং তুমি এই জন্যে বিদ্যা শিক্ষা করেছিলে যাতে করে মানুষ তোমাকে আলেম বলে। আর এই জন্যে কুরআন পাঠ করেছিলে যাতে লোকেরা তোমাকে কারী বলা হয়। পৃথিবীতে তোমাকে এই সব বলা হয়ে গেছে। এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপের আদেশ দেয়া হবে। অতঃপর নাক ও মুখের উপর উপুড় করে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

এরপর ঐ ব্যক্তিকে আনা হবে যাকে আল্লাহ নানারকম ধন-সম্পদ দান করেছিলেন। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, আমার দেয়া নেয়ামতের বিনিময়ে তুমি কি আমল করেছ?
সে বলবেঃ আপনি যেসমস্ত পথে খরচ করা পছন্দ করেন তার কোন পথই আমি বাদ দেইনি, সকল পথেই খরচ করেছি। আল্লাহ বলবেনঃ তুমি মিথ্যা বলছো; বরং তুমি এই জন্য খরচ করেছো যাতে করে মানুষ তোমাকে ‘দানশীল বলে। পৃথিবীতে তোমাকে তা বলা হয়ে গেছে। অতঃপর তাকে মুখ ও নাকের উপর উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপের আদেশ দেয়া হবে এবং তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
সহীহ মুসলিমঃ কিতাবুল ইমারাহ।

রাসূলে আকরাম (সাঃ) বলেছেনঃ
কিয়ামাতের দিন যখন আল্লাহ তায়ালা তাঁর সত্ত্বার কিয়দংশ উন্মোচিত করবেন, তখন ঈমানদার নারী-পুরুষগণ সকলেই তাঁর সম্মুখে সিজদায় পড়ে যাবে। তবে সিজদা থেকে বিরত থাকবে কেবল ঐ সমস্ত লোক, যারা দুনিয়াতে মানুষকে দেখানোর জন্য ও প্রশংসা পাওয়ার জন্য সিজদা (সালাত আদায়) করতো। তারা সিজদা করতে চাইবে বটে, কিন্তু তাদের পিঠ ও কোমর কাঠের তক্তার মত শক্ত হয়ে যাবে।
বুখারী, মুসলিম, মিশকাতঃ ৫৩০৮।

ইচ্ছায বা অনিচ্ছায় যেকোনো শিরক থেকে বাঁচার গুরুত্বপূর্ণ একটা দুয়াঃ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শেখানো একটা দুয়া আছে, কেউ যদি প্রতিদিন সকাল বিকাল একবার করে পড়েন, তাহলে আশা করা যায় আল্লাহ তাকে শিরক থেকে হেফাজত করবেন।
আপনি কি জানেন, সেই দুয়াটা কি? 
দুয়াটা হচ্ছেঃ

اللَّهُمَّ  إِنِّي أَعُوذُ بِكَ أَنْ أُشْرِكَ بِكَ وَأَنَا أَعْلَمُ، وَأَسْتَغْفِرُكَ لِمَا لاَ أَعْلَمُ

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আউযুবিকা আন উশরিকা বিকা ওয়া আনা আলাম, ওয়া আস-তাগফিরুকা লিমা লা আলাম।
অনুবাদঃ হে আল্লাহ! আমার জানা অবস্থায় তোমার সাথে শিরক করা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আর আমার অজানা অবস্থায় কোনো শিরক হয়ে গেলে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
আহমাদ ৪/৪০৩, হাদীসটি সহীহ, সহীহ আল-জামে ৩/২৩৩।
হিসনুল মুসলিমঃ পৃষ্ঠা ২৪৬।

শিরক থেকে বাচার উপায় জানার জন্য পুরো পোস্ট দেখুন এই লিংকেঃ-

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_17.html

রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য এই লেকচারটা দেখুনঃ


https://www.youtube.com/watch?v=TQ0P0rWx56g