#গুরুত্বপূর্ণ_একটি_পোস্ট
আজকের কুইজ ও তার উত্তরঃ (ব্যখ্যা-বিশ্লেষণসহ)
‘বিশ্বকাপ
ফুটবল’ উপলক্ষে
আমাদের বিশেষ কুইজ ছিলোঃ
বিশ্বকাপ ফুটবল বা ক্রিকেট উপলক্ষে অনেকেই প্রিয় (কাফের/মুশরেক)
খেলোয়াড়ের নাম লেখা জার্সি কিনে পড়ে, অথবা কাফের/মুশরেকদের দেশের পতাকা কিনে উড়ায়।
এইকাজগুলো করার হুকুম কি?
১. জায়েজ। কুরান-হাদীসে এর বিপক্ষে কোন কিছু আসে নাই।
২. সম্পূর্ণ হারাম
৩. কাফের মুশরেকদের সম্মান করার কারণে এটা কুফুরী কাজ
৪. কিছুইনা, সব ব্যপারে ধর্মকে টেনে আনা ঠিকনা
____________________
প্রথমে ভুল উত্তরগুলো নিয়ে আলোচনা করি, কারণ অনেকে ভুল উত্তরগুলো
দিয়েছেন…
১. জায়েজ। কুরান-হাদীসে এর বিপক্ষে কোন কিছু আসে নাই।
=> যারা এটা বলেছেন,
তাদের কাছে আমার প্রশ্নঃ
কোন আলেম এই ফতোয়া দিয়েছেন, ফুটবল খেলা দেখা জায়েজ? আপনি কি
নির্ভরযোগ্য কোন আলেমের কাছ থেকে ফতোয়া শুনে এই কথা বলেছেন, নাকি নিজেই এই কথা দাবী
করছেন?
উত্তর হচ্ছে, এইরকম ফতোয়া কোন আলেম দেন নি। বরং, আপনি নিজে
নিজে মনগড়া ফতোয়াবাজি করেছেন, এইটা মারাত্মক একটা কবীরা গুনাহ, যা অনেক সময় কুফুরী
পর্যন্ত হতে পারে (নাউযুবিল্লাহ)!
যারা আলেম না, কুরান ও হাদীস সম্পর্কে যারা অভিজ্ঞ নন তারা
দ্বীনের ব্যপারে আন্দাজে নিজে নিজে কোন ফতোয়া (মত) দেওয়া বড় হারাম। সাধারণ মানুষেরা
দ্বীনের ব্যপারে যারা “আলেম” তাদের কাছে জিজ্ঞাস করে তাদের প্রশ্নের উত্তর জেনে নেবেন।
এই ব্যপারে মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ
“অতএব
তোমরা যদি না জান, তবে যারা জ্ঞানী তাদেরকে জিজ্ঞেস কর।”
সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭।
অতএব, দ্বীনের ব্যপারে এইরকম নিজে নিজে মনগড়া কথা বলা থেকে,
আমার মনে হয় এইটা, আন্দাজ/অনুমানভিত্তিক কথা থেকে আপনাদের জিহবাকে সতর্ক রাখবেন। জিহবার
কারনে অনেকে জাহান্নামের অতলে ডুবে যাবে – এই ব্যপারে অনেক হাদীস আছে।
আর আরেকটা কথা, এইখানে বলা হয়েছিলো, কুরান হাদীসে এই ব্যপারে
নাকি কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি……?
এই কথা আপনাকে কে বললো, আপনি কি সবগুলো কুরানের আয়াতের অর্থ
ও তাফসীর পড়েছেন, সবগুলো হাদীসের অর্থ ও শরাহ পড়েছেন? আপনি কুরান হাদীস না পড়েই, নিজে
নিজে বানিয়ে বলছেন, কুরান হাদীসে এইকরম কোন নিষেধাজ্ঞা আসেনি?
আল্লাহকে ভয় করুন, দ্বীন শিখুন, অজ্ঞতা মানুষের থাকতে পারে
এটা সবারই আছে, কিন্তু অজ্ঞতা তখন আপনার জন্য অভিশাপ হয়ে যাবে - যখন আপনি এই অজ্ঞতা
নিয়ে বসে থাকবেন, দ্বীন না শিখে মনগড়া ফতোয়াবাজি করে বেড়াবেন।
আর বাকি সকলকে বলতে চাই, বর্তমানে টিভি, পত্রিকা, ফেইসবুক,
মসজিদ মাদ্রাসায় এমন বহু লোক আছে, যারা আসলে জাহেল (অজ্ঞ/মূর্খ লোক), কিন্তু আলেমের
লেবাস ধরে মনগড়া ফতোয়াবাজি করে সাধারণ মানুষদেরকে গোমরাহ করছে। আপনারা এইকম মূর্খ/ভন্ড
আলেমদের থেকে সতর্ক থাকবেন।
কুরানের যেই আয়াতগুলোতে ফালতু, বাকোয়াজ কথা ও কাজকর্মকে হারাম
ঘোষণা করেঃ
“(ঈমানদারদের
বৈশিষ্ট্য হচ্ছে) যারা অনর্থক কথা-বার্তায় নির্লিপ্ত।”
সুরা আল-মুমিনুনঃ ৩।
“এবং
যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মের সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে
ভদ্রভাবে চলে যায়”।
সুরা আল-ফুরক্বানঃ ৭২।
আর খেলা-ধূলা নিয়ে বিস্তারিত আমাদের এই পোস্ট দেখুনঃ
https://www.facebook.com/photo.php?fbid=776130425753040&set=a.130928300273259.14132.125167817515974&type=1&relevant_count=1
______________________
৪. কিছুইনা, সব ব্যপারে ধর্মকে টেনে আনা ঠিকনা
=> এই কথাটা প্রথম অপশন থেকে আরো মারাত্মক, কারণ এটা ডাইরেক্ট
কুফুরী একটা কথা। যারা এই কথা বলছেন – তারা এই লেখা পড়ে সাথে সাথে কুফুরী কথা বলার
কারণে তোওবা করে নেবেন। “সব ব্যাপারে ধর্মেক টেনে আনা ঠিকনা” – এইটা
নাস্তিক, মুর্তাদ ও সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী) লোকদের কথা, যারা দ্বীনকে অস্বীকার
করে, দ্বীনের হুকুম আহকাম মানতে চায়না, তাদের কথা।
আপনি যখন, কালেমা পড়ে #ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করেছেন, আল্লাহকে
একমাত্র ‘ইলাহ’ (মাবূদ)
ও রব্ব (মালিক ও প্রতিপালক) হিসেবে মেনে নিয়েছেন – এর পরে আর কোন সুযোগ নেই, আপনি এমন
কথা বলবেন, আমি দ্বীনের ঐ ব্যপার মানবো, ঐ ব্যপারে দ্বীনের কোন কিছু বলার থাকতে পারেনা।
বরং, ইসলাম একটা পূর্ণাংগ দ্বীনি ব্যবস্থা, যা মানব জীবনের প্রত্যেক ব্যপারই নিয়ন্ত্রন
করে। যে এই কথাকে অস্বীকার করে, সে কাফের হয়ে যাবে। বিস্তারিত পড়ুন এই লেখাটাতেঃ-
http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/03/blog-post_9196.html
________________________
২. সম্পূর্ণ হারাম
৩. কাফের মুশরেকদের সম্মান করার কারণে এটা কুফুরী কাজ
এই দুইটা কথাই ঠিক আছে, দুইরকম ক্ষেত্রে…
=> কেউ কাফের মুশরেক হওয়ার কারণে তাদেরকে অপছন্দ করে, কিন্তু
ব্যক্তিগত প্রবৃত্তির কারণে, তাদের খেলাধূলা দেখে, তাদের খেলার কারণে পছন্দ করে – এমনভাবে
এই কাজগুলো করলে – সে নিকৃষ্ট, হারাম একটা কাজ করলো। এদের ব্যপারে, যারা কাফেরদের ভালোবাসে,
তাদের ফ্যান হিসেবে তাদের জার্সি পড়ে, পতাকা উড়ায় এদের ব্যপারে্ রাসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই হাদীস প্রযোজ্যঃ
“যে যাকে
ভালোবাসে কেয়ামতের দিন সে তার সাথেই থাকবে”।
সহীহ আল-বুখারী।
=> আর কেউ যদি মনে করে, কোন কাফের এতো মহান যে, তাকে ভালোবাসা
জায়েজ, তাকে ঘৃণা করাটা বাড়াবাড়ি হবে, বা যারা ঘৃণা করে তারা চরমপন্থী, গোড়া, কট্টরপন্থী
– তারা কুফুরীতে লিপ্ত – কারণ – তারা ঈমানের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ “আল-ওয়ালা ওয়াল
বা’রাহ” – কাউকে
শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, কাউকে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যেই ঘৃণা করা – এই বিষয়টাকে
অস্বীকার করেছেন।
________________________
সর্বশেষ, কুইজ নিয়ে কিছু সন্দেহের জবাবঃ
অনেকে দেখলাম কেনো আমরা প্রশ্ন করি, প্রশ্ন করে আমরা নাকি ফেতনা
সৃষ্টি করছি, লাইক পাওয়ার জন্য প্রশ্ন করি…এইরকম বিভিন্ন বাকোয়াজ করছেন!
এরা আসলে শরীয়ত সম্পর্কে অজ্ঞ। ফেইসবুকে একটা সমস্যা হচ্ছে,
যে যার মতো মন্তব্য করতে পারে, কমেন্ট বক্স সবার জন্য উন্মুক্ত থাকায় মনগড়া ফতোয়াবাজি
করতে কোন বাধা নেই, কাউকে ব্যন না করা পর্যন্ত। অথচ, না জেনে, আন্দাজে অনুমানে কথা
বলা – এটা চরম একটা মিথ্যা কথা – এবং সুরা নজমে এটাকে কাফের ও মুশরেকদের একটা স্বভাব
বলা হয়েছে।
সন্দেহের জবাবঃ
আপনি যদি সহীহ মুসলিমের এক নাম্বার হাদীসটা খুলে দেখেন, দেখতে
পাবেন – হাদীসের মূল বিষয়টাই হচ্ছে প্রশ্ন ও উত্তর নির্ভর। সবসময় শুধু দ্বীনি বিষয়
বর্ণনা না করে, মাঝে মাঝে প্রশ্ন করা ইসলাম শিক্ষার আদবের একটা অংশ। রাসুলুল্লাহ সাঃ
মাঝে মাঝে সাহাবাদেরকে এমন প্রশ্ন করেছেন, এমনকি আল্লাহ সুবহা’নাহু
তাআ’লাও
কুরানুল কারীমে তার পাঠককে বিভিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন, যাতে করে তারা চিন্তা ভাবনা
করে। তবে একটা বিষয় লক্ষণীয়, কেউ যদি সঠিক উত্তর না জানেন, তিনি বলবেন – আমি জানিনা,
আল্লাহু আ’লাম
(আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন)…এইরকম বলা ইসলাম শিক্ষার আদবের অংশ। না জানলে অনুমান ভিত্তিক
কথা বলা, আমার মনে হয় এইটা…এইরকম বলা সম্পূর্ণ নিষেধ – কারণ এর ফলে সম্ভাবনা আছে অজ্ঞতাবশত
আপনি মারাত্মক গুনাহ হয় এমন কথা বলে বসলেন। প্রশ্ন করলে এতে করে, পাঠক বিষয়টা নিয়ে
আগ্রহী হয় সঠিক উত্তর জানার জন্য। যারা জানেন না তারা এর মাধ্যমে তাদের জানার মাঝে
ত্রুটি আছে বিষয়টা স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করতে পারেন, আর যারা জানেন তারা আবার জেনে নিয়ে
বিষয়টা ঝালাই করে নিতে পারেন।
আর অন্য সকলকে উদ্দেশ্য করে আমাদের পেইজে অনেক গালিবাজ, ফেতনাবাজ,
মনগড়া ফতোয়াবাজেরাও একটিভ আছেন যার নিয়মিত বিভিন্ন আজে-বাজে মন্তব্য করে। তাই কমেন্ট
বক্সে কে কি লিখছে সেই দিকে লক্ষ্য করবেন না। অনেকে এসে মনগড়া প্রশ্নের উত্তর দিতে
থাকে, কমেন্ট বক্সে কোন প্রশ্নের অন্য কেউ উত্তর দিলে তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক
নেই – অনেকে সঠিক উত্তর দেয়, অনেকে ভুল উত্তরও দেয়, বিষয়টা খেয়াল রাখবেন।
অনেকে বলছেন, সৌদি আরবের লোকেরা ক্রিকেট খেলে…
এটা হচ্ছে যারা ঘুরায়া ফিরাইয়া হারামকে হালাল করতে চায় তাদের
যুক্তি…
আলহা’মদুলিল্লাহ সৌদি আরবে অনেক নেককার ধার্মিক লোকও আছে, আবার
ফাসেক পাপাচারী, শেইভ করে, ভুয়া হিজা করে কিন্তু আসলে বেপর্দা এমন অনেক লোকও আছে। তাহলে
আপনি কি তাদের হারাম কাজকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করবেন? আর আপনার জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি
যে, সৌদি আরবের বহু বড় বড় উলামাবৃন্দ (যেমন, শায়খ মুহা’ম্মাদ
বিন ইব্রাহীম রহঃ, শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রহঃ, শায়খ সালেহ আল-ফাওজান
হাফিঃ এইরকম অনেক আলেম) এইসমস্ত হারাম ও মুনকার কাজের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিয়েছেন। আরব
দেশের আলেমদের বাদ দিয়ে জাহেলদের কাজকর্মকে দলীল হিসেবে নিতে হবে – এইরকম কথা কুরান
হাদীসে কোথায় আছে?
অনেকে বলছেন, আমি অমুক মুসলিম দেশ, আমি ইরান ইত্যাদি। যেই কাজটাই
হারাম, সেই কাজটা কাফের দেশের লোকেরা করুক, আর মুসলিম দেশের লোকেরা করুক – কাউকেই সমর্থন
করা যাবেনা। করলে আপনি নিজেও গুনাহগার হবেন। আর ইরান কোন মুসলিম দেশ না, এইটা শিয়া
খারেজীদের দেশ। আপনি ইরানকে সমর্থন করেন মানে আপনি ঈমান আকীদাহ সম্পর্কে কিচ্ছু জানেন
না। ফেইসবুক বাদ দিয়ে আলেমদের শরণাপণ্ণ হন, ইসলাম সম্পর্কে জানার জন্য।
____________________
যদিও পোস্টটা এমনিতেই অনেক বড় হয়ে গেছে, তারপরেও যারা হেদায়েতের
অনুসরণ করবেন তাদের জন্য সুখবর নিয়ে নাযিল করা কুরানের এই আয়াতগুলো শেয়ার না করে পারলাম
না!
“যারা
মনোযোগ সহকারে কথা শুনে, অতঃপর যা উত্তম, তার অনুসরণ করে, তাদেরকেই আল্লাহ সৎপথ প্রদর্শন
করেন এবং তারাই হচ্ছে বুদ্ধিমান”।
সুরা আল-যুমারঃ ১৮।
“আল্লাহ যার বুক ইসলামের জন্যে উম্মুক্ত করে দিয়েছেন, অতঃপর
সে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে আগত “নূর” (আলোর) মাঝে আছে। (সে কি তার সমান, যে এরূপ
নয়) যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে কঠোর, তাদের জন্যে দূর্ভোগ। তারা সুস্পষ্ঠ
গোমরাহীতে রয়েছে”।
সুরা আল-যুমারঃ ২২।