সোমবার, ২ জুন, ২০১৪

শাবান মাস: সুন্নত উপেক্ষিত বিদআত সমাদৃত।

শাবান মাস: সুন্নত উপেক্ষিত বিদআত সমাদৃত
________________________________

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ

প্রাণ প্রিয় ভাই, রামাযানুল মোবারকের প্রস্তুতির মাস শাবান আমাদের মাঝে উপস্থিত মাসে আমাদের জন্য রয়েছে কিছু করণীয় রয়েছে কিছু বর্জনীয় বিষয়টি নিয়েই আজকের এই পোস্টের অবতারণা এতে মোট ৭টি বিষয় আলোচিত হয়েছে  যথা:

) শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে বর্ণিত সহীহ হাদীস সমূহ
) শাবান মাসের পনের তারিখের ব্যাপারে একটি হাদীস পর্যালোচনা তার শিক্ষা
) শাবান মাস সম্পর্কে কতিপয় প্রচলিত জাল যঈফ হাদীস|
) কুরআন কোন রাতে অবর্তীণ হয়? শাবান মাসের শবে বরাতে নাকি রামাযান মাসের শবে কদরে?
) শবে বরাত উদ্যাপন করা বিদআত
) শাবান মাসে প্রচলিত কতিপয় বিদআত
) সারাংশ
_____________________________________________

) শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে বণির্ত সহীহ হাদীস সমূহ:
শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে নিন্মে সম্পর্কীত কয়েকটি  হাদীস উল্লেখ করা হল:
) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোযা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোযা রাখা আর বাদ দিবেন না আবার যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা করবেন না তবে তাঁকে রামাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি”[1]
) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন তিনি বলতেন: “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাযই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা সল্প হয় তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামায পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন[2]
) উসামা বিন যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমান রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না এর কারণ কী? তিনি বললেন: “রজব এবং রামাযানে মধ্যবর্তী মাসটি সম্পর্কে মানুষ উদাসিন থাকে অথচ এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে, মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় আমি চাই রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক”[3]
) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বণির্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “শাবান মাস অধের্ক হয় গেলে তোমরা রোযা রাখিও না” [4] হাদীসের অর্থ হল: যে ব্যক্তি শাবান মাসের প্রথম থেকে রোযা রাখে নি সে যেন  অর্ধ শাবানের পর আর রোযা শুরু না করে করে তবে যে ব্যক্তি শাবান মাসের শুরু থেকে রোযা রেখেছে, বা যার উপর গত বছরের রোযা কাজা আছে অথবা যার প্রতি সোম বৃহ:বার রোযা রাখা অভ্যাস সেও পনের তারিখের পর রাখতে পারে
) কারো যদি রামাযানের রোযা ছুটে যায় তবে সে তা শাবান মাসে কাযা করে নিতে পারে যেমন, আবু সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছি, আমার রামাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না[5]অর্থাৎ আয়েশা (রা:) গত রমাযানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোযাগুলো শাবান মাসে কাযা করতেন
_________________________________________

) শাবান মাসের পনের তারিখে ব্যাপারে একটি হাদীস, পর্যালোচনা তার শিক্ষা:
অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে নিম্নোক্ত হাদীসটি সহীহ না যঈফ ব্যাপারে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে তবে আল্লামা আলবানী সহ একদল মুহাদ্দিস হাদীসটিকে বিভিন্ন সনদের সমন্বয়ে সহীহ বলেছেন পক্ষান্তরে অন্য একদল মুহাদ্দিস এটিকে দূর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন হাদীসটি  হল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলছেন:
((إن الله ليطلع في ليلة النصف من شعبان ، فيغفر لجميع خلقه ، إلا لمشرك أو مشاحن))
আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (পৃথিবীর) দিকে তাকিয়ে দেখে মুশরিক এবং বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন
(উক্ত হাদীসটি সহীহ যঈফ হওয়ার ব্যাপারে একটি পর্যালোচনা টিকাতে দেখুন)[6]
হাদীসে নিসফে শাবানের ফযীলত প্রমাণিত হলেও
এতে বিশেষ কোন ইবাদত প্রমাণিত হয় না এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামও রাতে বিশেষ কোন এবাদত করেন নি বা করতে বলেন নি সুতরাং এটাকে কেন্দ্র করে চৌদ্দ তারিখ দিনে রোযা রাখা এবং রাতে একশ রাকাত নামায পড়া এবং উপলক্ষ্যে অন্যান্য অনুষ্ঠানাদী পালন করা কিভাবে গ্রহণ যোগ্য হতে পারে?
 বরং উক্ত হাদীসে শিরকের ভয়াবহতা প্রমাণিত হয় যে ব্যক্তি আল্লাহর নাম, গুণাবলী, কাজ বা ইবাদতে অন্যকে অংশীদার করবে তাকে মুশরিক বলা হয়সুতরাং ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া কোন সৃষ্টি জীবের কাছে বিপদ-মুসিবত থেকে মুক্তির জন্য প্রার্থনা জানাবে সে শিরক করবে যে পীর-ওলী, নবী বা ফেরেশতার নিকট সাহায্যের হাত পাতবে সে শিরক করবে যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু যবেহ করবে বা মান্নত করবে সে শিরক করবে আল্লাহ তায়ালা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না বলে কুরআন সহীহ হাদীসে বিভিন্ন স্থানে স্পষ্টভাবে সর্তক করেছেন
ইমাম আওযাঈ (রাহ:) বলেন: হাদীসে বিদ্বেষ পোষণকারীবলতে সে সকল বিদাতপন্থীকে বুঝানো হয়েছে, যারা দন্দ-কলহ করে মুসলমানদের জামাআত থেকে বের হয়ে যায় সুতরাং হাদীস থেকে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হয় দ্বীন ইসলামের মধ্যে বিদআত করা এবং       মুসলমানদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করার কতটা ভয়াবহ!
অনুরূপভাবে হাদীসে পরস্পরে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানী, মারামারীতে লিপ্ত থাকার ভয়াবহতা সম্পর্কেও জানা যায় কিন্তুবাস্তবতা হচ্ছে, মুসলমানগণ এসব বিষয়কে কত নগণ্য মনে করে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে হেফাযত করুন
___________________________________________

) শাবান মাস সম্পর্কে কতিপয় প্রচলতি জাল যঈফ হাদীস:
শাবান মাস এবং এতে বিশেষ নামায পড়া সম্পর্কে বর্ণিত এমন কতিপয় হাদীস বিশেষজ্ঞগণ যেগুলোকে  যঈফ অথবাজালহিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যেমন:
) রজব আল্লাহর মাস শাবান আমার মাস এবং রামাযান আমার উম্মতের মাস”[8]
)যখন শাবান মাসের পনের তারিখ আসে তোমরা দিনে রোযা রাখ আর রাতে নফল নামায আদায় কর কারণ, কারণ রাতে আল্লাহ তায়ালা নিচের আসমানে নেমে আসেন এবং বলতে থাকেন: এমন কেউ আছো যে আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তাকে ক্ষমা করে দিব, এমন কেউ আছো যে আমার নিকট রিযিক চাও আমি তাকে রিযিক দিব এমন কেউ আছো যে আমার কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাও আমি তাকে বিপদ থেকে মুক্তি দিবএভাবে আল্লাহ তায়ালা ফজর উদীত হওয়া পর্যন্ত ডাকতে থাকেন কোন মুহাদ্দিসের মতে এটি দূর্বল আর কারও মতেএটি একটি জাল হাদীস দেখুন [9]
) “হে আলী, যে ব্যক্তি অর্ধ শাবানের রাত্রিতে এমনভাবে একশত রাকাত নামায আদায় করবে যে, প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার পরে দশবার কুল হুওয়াল্লাহু আহাদসূরা পাঠ করবে আল্লাহ তাআলা তার সে রাত্রির যাবতীয় প্রার্থনা পূরণ করবেন”[10]
) আয়েশা (রা:) হতে বণির্ত  এক রাতে আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে (আমার ঘরে) পেলাম না তাই তাকে খুঁজতে বের হলাম খুঁজতে খুঁজতে তাকে বাকী গোরাস্থানে পেলাম তিনি আমাকে দেখে বললেন: “তুমি কি আশংকা কর যে, আল্লাহ এবং তার রাসূল তোমার প্রতি অবিচার করবেন?”  আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল, আমি ধারণা করে ছিলাম যে, আপনি হয়ত আপনার অন্য কোন স্ত্রীর ঘরে গিয়েছেন একথা শুনে তিনি বললেন: “আল্লাহ তায়ালা অর্ধ শাবানের রাতে নিচের আসমানে নেমে আসেনএবং কালব গোত্রের ছাগল সমূহের লোম সমপরিমান মানুষকে ক্ষমা করে দেন”[11]
) যে ব্যক্তি অর্ধ শাবানের রাতে বার রাকাত নামায পড়বে-প্রতি রাকাতে কুল হুওয়াল্লাহু আহাদসূরাটি পড়বে ত্রিশ বার-তাহলে সে জান্নাতে তার আসন না দেখে বের হবে না”[12]
_______________________________________

) কুরআন কোন রাতে অবর্তীণ হয়? শাবান মাসের শবে বরাতে নাকি রামাযান মাসের শবে কদরে?
আল্লাহ তাআলা বলেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُبَارَكَةٍ إِنَّا كُنَّا مُنْذِرِينَ * فِيهَا يُفْرَقُ كُلُّ أَمْرٍ حَكِيمٍ
Óআমি ইহা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে কেননা, আমি মানুষকে সতর্ককারী রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয়
বরকতময় রাত‘  দ্বারাকোন রাত উদ্দেশ্য?
উক্ত আয়াতে উল্লেখিত রাত দ্বারা কোন রাত বুঝানো হয়েছে? শবে কদর না শবে বরাত?
অধিকাংশ তাফসীর বিশারদগণ বলেন: এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল শবে কদর যা রামাযান মাসে রয়েছে যারা বলেন, শবে বরাত তাদের কথা ঠিক নয় নিম্নে ব্যাপারে পর্যালোচনা উপস্থাপন করা হল:
তাফসীর ইব্ কাসীর (রাহ.) বলেন: উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা মর্মে সংবাদ দিচ্ছেন যে, তিনি কুরআনকে এক বরকতময় রাতে অবর্তীণ করেছেন আর সেটি হল কদরের রাত যেমন আল্লাহ বলেন:
إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْر
Óআমি তো ইহা (কুরআন) কদরের রাতে অবর্তীণ করেছি”[13] আর রাতটি ছিল রামাযান মাসে যেমন আল্লাহ বলেন:
شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ
Óরামাযান মাস যে মাসে আমি কুরআন অবর্তীণ করেছি”[14]
প্রসঙ্গে হাদীসগুলো সূরা বাকারায় উল্লেখ করেছি যা পূণরোল্লেখ করার নিষ্প্রয়োজন মনে করছি আর যারা বলে যে উক্ত রাতটি হল অর্ধ শাবানের রাত-যেমন ইকরিমা বর্ণনা করেছেন-তাদের মত অনেক দূরবর্তী কারণ, তা কুরআনের সুস্পষ্ট বক্তব্য বিরোধী[15]
ইকরিমা রাহ. উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন: রাত হল অর্ধ শাবানের রাত রাতেই সারা বছরের সকল ফয়সালা চুড়ান্ত করা হয়”[16] কিন্তু দাবী মোটেও গ্রহণযোগ্য নয় কারণ তা সরাসরি কুরআন বিরোধী আর সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসগুলো সহীহ তো নই বরং সেগুলো ভিত্তিহীন যেমনটি ইব্নুল আরাবী প্রমুখ গবেষক আলেমগণ দৃঢ়তার সাথে করেছেন সেই সাথে সেগুলো কুরআনের সাথে সাংর্ঘষিক (যেমনটি উল্লেখ করা হয়েছে) সুতরাং অবাক হতে হয় সে সকল মুসলমানদের অবস্থা দেখে যারা কুরআন সহীহ হাদীসের দলীল ছাড়া কুরআনের স্পষ্ট ব্যক্তবের বিরোধীতা করে[17]
_______________________________________

) শবে বরাত উদ্যাপন করা বিদআত:
শবে বরাতে ব্যক্তিগতভাবে বাড়ীতে বা মসজিদে কি বিশেষ কিছু এবাদত-বন্দেগী করা যায় কি? ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য কথা হল, শবে বরাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন ইবাদত-বন্দেগী করা বিদআতের অর্ন্তভূক্ত চাই তা বাড়ীতে হোক বা মসজিদে হোক একাকী হোক বা দলবদ্ধভাবে হোক (যদিও কতিপয় আলেম মনে করেন এতে দোষের কিছু নেই কিন্তু তাদের কথা দলীল দ্বারা সমর্থিত নয়)
মোটকথা, শবে বরাতের রাতের বিশেষ ফযীলতে বিশুদ্ধ কোনদলীল নেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন প্রমাণ নেই যে তারা রাতে কোন এবাদত-বন্দেগী করতেন সুতরাং এটি একটি দ্বীনের মধ্যে একটি সংযোজিত বিদআত যার পক্ষে কুরআন, সুন্নাহর দলীল নেই এবং সাহাবী-তাবেঈগণেরও এজমা তথা সম্মিলিত কোন সিদ্ধান্তও পাওয়া যায় না
____________________________________________

নিম্নে পূর্ববর্তী পরবর্তী যুগের কয়েকজন আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হল:
) হাফেয ইব্ রাজাব (রাহ:) (মৃত্যু: ৭৯৫ হিজরী) বলেন: শামের কতিপয় তাবেঈ যেমন খালেদ ইব্ মাদান, মাকহুল, লোকমান ইব্ আমের প্রমূখ অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত) কে ¤§v করতেন এবং রাতে বেশী বেশী ইবাদত-বন্দেগী করতেন তাদের নিকট থেকে অন্যান্য মানুষ অর্ধ শাবানের ফযীলত এবং মর্যাদার বিষয়টি গ্রহণ করে বলা হয়ে থাকে যে, তারা ব্যাপারে কিছু ইসরাঈলী বর্ণনা পেয়েছিলেন এঁদের নিকট থেকে বিষয়টি বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মাঝে দ্বিধা-বিভক্তি সৃষ্টি হয়ে গেল কিছু মানুষ তাদের মতকে সমর্থন করে অর্ধ শাবানের রাতটিকে সন্মানের সাথে পালন করতে আরম্ভ করল যারা মতকে সমর্থন করল তারা হল ইরাকের বাসরা এলাকার কতিপয় আবেদ এবং অন্যান্য আরো কিছু লোক আর হেজাযের অধিকাংশ আলেম যেমন, আত্বা, ইব্ আবী মুলাইকা প্রমূখ এর বিরোধীতা করলেন আব্দুর রহমান বিন যায়দ বিন আসলাম বর্ণনা করেন যে, মদীনার ফকীহগণও মতের বিরোধীতা করলেন ইমাম মালেক এবং তার সহচরদেরও মতমতও অনুরূপ তারা সকলেই বলেন, এসব কার্যক্রম বিদআত
ইবন রাজাব (রাহ) আরও বলেন: অর্ধ শাবানের রাতে নামায পড়ার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরাম থেকে কোন দলীল প্রমাণিত হয় নি তবে শামের কয়েকজন ফেকাহবীদ রাতে কিছু এবাদত-বন্দেগী করতেন বলে তথ্য পাওয়া যায়”[18]
) আবু শামা (রহ:) (মৃত্যু: ৬৬৫হি:/১২৬৭খৃ:) বলেন: হাফেয আবুল খাত্তাব বিন দেহিয়া তার শবান মাস সম্পর্কিত লিখিত কিতাবে বলেন: ইলমুল জারহি ওয়াত তাদীলবিশেষজ্ঞ আলেমগণ বলেছেন, অর্ধ শাবানের রাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই[19]
) শাইখ ইব্ বায (রহ:) বলেন: অর্ধ শাবানের রাত (শবে বরাত)এর ফযীলতের ব্যাপারে কিছু দূর্বল হাদীস বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর উপর নির্ভর করা জায়েয নেই আর রাতে নামায পড়ার ব্যাপারে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই জাল যেমনটি অনেক আলেম সতর্ক করেছেন”[20]
মোটকথা:
যেহেতু শবে বরাতে বিশেষ কোন এবাদত করার কথা বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয় তাই রাতে বিশেষ কোন এবাদত করা- চাই তা একাকী হোক বা দলবদ্ধভাবে হোক, প্রকাশ্যে হোক বা গোপনে হোক সর্বাবস্থায় তা বিদআত হিসেবে পরিত্যাজ্য হবে কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
من عمل عملاً ليس عليه أمرنا فهو رد
যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নেই তা পরিত্যাজ্য
_____________________________________________

) শবে বরাত উপলক্ষ্যে প্রচলিত কতিপয় বিদআত:
) শবে বরাত উপলক্ষ্যে একশত রাকাআত নামায আদায় করা:
রাতে এক অদ্ভূত পদ্ধতিতে একশত রাকাআত নামায আদায় করা হয় পদ্ধাতিটি হল নিম্নোরূপ:
মোট একশত রাকাআত নামায পড়তে হয় প্রতি দু রাকাত পর সালাম ফিরাতে হবে প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহার পর দশ বার সূরা ইখলাস পাঠ করতে হবে একশত রাকাআত নামাযে সূরা ইখলাস পাঠ করতে হয় মোটএক হাজার বার তাই নামাযকে সালাতে আলফিয়া বলা হয়[22]
শবে বরাতেএকশত রাকাআত নামায পড়ার বিধান:
ইসলামে ধরণের নামায পড়ার নিয়ম সম্পূর্ণ নতুন আবিস্কৃত বিদআত ব্যাপারে সর্ব যুগের সমস্ত আলেমগণ একমত কারণ, তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং খোলাফায়ে রাশেদীন কখনো তা পড়েন নি তাছাড়া ইমাম আবু হানীফা, ইমাম মালেক,ইমাম শাফেঈ, আহমদ বিন হাম্বল, সুফিয়ান সাওরী, আওযাঈ, লাইস প্রমূখ যুগ শ্রেষ্ঠ ইমামগণ কেউ ধরণের বিশেষ নামায পড়ার কথা বলেন নি সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসটি হাদীস বিশেষজ্ঞদের মতে বানোয়াট এবং জাল যেমন, ইব্নুল জাওযী উক্ত হাদীসটি মাওযুআত (জাল হাদীস সংগ্রহ) কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ  করে বলেছেন, এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিাকংশরই পরিচয় অজ্ঞাত আরো কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দূর্বল সুতরাং হাদীসটি নিশ্চিতভাবে জাল[23]
নামায কে কখন কীভাবে চালু করল?
ইমাম তরতূশী (রাহ:) বলেন: শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে একশত রাকআত নামায পড়ার পদ্ধতি সর্ব প্রথম যে ব্যক্তি চালু করে তার নাম হল ইব্ আবুল হামরা তিনি ছিলেন ফিলিস্তিনের নাবলুস শহরের অধিবাসী তিনি ৪৪৮ হিজরী সনে বাইতুল মাকদিসে আসেন তার তেলাওয়াত ছিল খুব সুন্দর তিনি শাবান মাসের পনের তারিখ রাতে মসজিদুল আকসায় এসে নামায শুরু করে আর এক লোক তার পেছনে এক্তেদা করে অতঃপর আর একজন আসে কিছুক্ষণপর আরে আরও একজন এভাবে নামায শেষে দেখা গেল বিরাট জামাআতে পরিণত হয়েছে
পরিবর্তী বছর শবে বরাতে সে ব্যক্তির সাথে প্রচুর পরিমাণ মানুষ নামাযে শরীক হয় এভাবে নামাযটি মসজিদে আক্বসা সহ বিভিন্ন মসজিদে পড়া আরম্ভ হয়ে গেল কিছু মানুষ নিজেদের বাড়িতে নামায পড়া শুরু করে দিল পরিশেষে এমন অবস্থা দাঁড়ালো যেন এটি একটি সুন্নাত[24]

) রাতে কুরআন অবর্তীণ হওয়া এবং রাতেই মানুষের আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারিত হওয়ার ধারণা
) হালুয়া-রুটি খাওয়া: শবে বরাত উপলক্ষ্যে ঘরে ঘরে হালওয়া-রুটি খাওয়র হিড়িক পড়ে যায় শুধু তাই নয় বরং সে দিন গরীব মানুষও টাকা হাওলত করে হলেও এক বেলা গোস্ত কিনে খায় কারণ, সে দিন যদি ভাল খাবার খাওয়া যায় তাহলে নাকি সারা বছর ভাল খাবার খাওয়া যাবে আর হালওয়া-রুটি খাওয়ার কারণ হিসেবে বলা হয়, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওহুদ যুদ্ধে দাঁত ভাঙ্গার পর শক্ত খাবার খেতে পারেন নি তাই তাঁর প্রতি সমবেদনা জানানোর উদ্দেশ্যে দিন ঘটা করে হালওয়া রুটি খাওয়া হয়
কিন্তুবাস্তবতা কি তাই? আমরা জানি ওহুদের এক রক্তক্ষয়ী অসম যুদ্ধে কাফেরদের আঘাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাঁত ভেঙ্গে গিয়ে ছিল কিন্তু শাবান মাসে তো ওহুদ যুদ্ধ হয় নি বরং তা হয়েছিল ৩য় হিজরী শাওয়াল মাসের সাত তারিখে তাহলে সমবেদনা শাবান মাসের পনের তারিখে টেনে নিয়ে আসার অর্থ কী?
২য় কথা হল, তিনি নরম খাবার কি শুধু একদিন খেয়ে ছিলেন? তাহলে কেমন ভালবাসা? আপনি শাবান মাসের পনের তারিখে কিছু  হালওয়া-রুটি খেলেন আবার কিছুক্ষণ পর গরুর গোস্ত তো ঠিকই চাবিয়ে চাবিয়ে ভক্ষণ করতে থাকেন??
৩য়ত: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো কাফেরদের সাথে এক কঠিন রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে বীরে মত যুদ্ধ করে তার পবিত্র দাঁত হারিয়েছেন কিনআমাদের এসব নবী ভক্তের অধিকাংশের অবস্থা হল, আল্লাহর নবীর রেখে যাওয়া সাধারণ সুন্নতগুলোও পালন করে না অনেকে তো ফরজ নামাযই ঠিকমত আদায় করে না এটাই হল এদের তথাকথিত ভালবাসার নুমনা!
) ছবি মূর্তি তৈরি: শবে বরাত উপলক্ষ্যে দেখা যায় নানা রং-বেরঙ্গের ছবি মূর্তি তৈরি কৃত মিষ্টান্নতে বাজার ছেয়ে যায় অথচ ছবি মূর্তি-প্রকৃতি ইত্যাদি তৈরি করা ইসলামে হারাম আবার আল্লাহর দেয়া রিযিক নিয়ে এভাবে খেল-তামাশা?!

) মীলাদ যিকির: শবে বরাত উপলক্ষ্যে মসজিদ, খানকাহ দরগায় সমূহে শুরু হয় মীলাদ মাহফিল চলে মিষ্টি খওয়ার ধুম চলতে থাকে বিদআতী পন্থায় গরম যিকিরের মজলিশ সব কাজ দ্বীনের মধ্যে বিদআত ছাড়া কিছু নয়
) কবর যিয়ারত: এক শ্রেণীর মানুষ রাতে গোরস্থান বা মাযার জিয়ারতে বের হয় এমনকি কোথাও কোথাও প্রথাও দেখা যায় যে, একদল মানুষ রাতে ধারাবাহিকভাবে এলাকার সকল কবর যিয়ারত করে থাকে এদের দলীল হল, শাবান মাসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাকী গোরসান যিয়ারতের হাদীস অথচ মুহাদ্দসিগণ উক্ত হাদীসটি জাল হিসেবে সাব্যস- করেছেনচিচি যেমনটি পূর্বে আলোচনা করেছি
) আলোক সজ্জা: শবে বরাত উপলক্ষ্যে রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি, মসজিদ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা হয় মূলত: এসব কাজ একদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা শুধু অপচয় করা হয় না তেমনি এটা অগ্নি পুজকদের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ
) মৃতদের আত্মার দুনিয়াতের পূণরাগমনের বিশ্বাস: উপলক্ষ্যে দেখা যায় মহিলাগণ ঘর-বাড়ি পরিস্কার পরিচ্ছন্ন করে আতর সুগন্ধি লাগিয়ে পরিপাটি করে রাখে বিশেষ করে বিধবা মহিলাগণ এমনটি করেন এমনকি তারা কিছু খাবার একটুকরো কাপড়ে পুরে ঘরে ঝুলিয়ে রাখে কারণ, তাদের বিশ্বাস হল, তাদের মৃত স্বামী-স্বজনদের আত্মা রাতে ছাড়া পেয়ে নিজ নিজ পরিবারের সাথে দেখা করতে আসে এটা যে কতবড় মূর্খতা তা একমাত্র আল্লাহ জানেন
মানুষ মারা গেলে তাদের আত্মা বছরের কোন একটি সময় আবার দুনিয়াতে ফিরে আসা মুসলমানদের আকীদাহ নয় বরং অনেকটা তা হিন্দুয়ানী আকীদার সাথে সাঞ্জস্যপূর্ণ
_____________________________________

সারাংশ:
- শাবান মাসে যথাসম্ভব বেশি বেশি নফর রোযা রাখা
- শিরক, বিদআত মুসলমানদের মাঝে হিংসা বিদ্বেষ, হানাহানী, শত্রুতা পরিহার
- কুরআন অবর্তীণ হয়েছে রামাযানুল মোবারকের কদরের রাতে শাবানের পনের তারিখ বা শবে বরাতে নয়
- শবে বরাত উপলক্ষ্যে শুধু চৌদ্দ তারিখ দিনে রোযা এবং পনের তারিখে রাত জেগে নফল নামায, মীলাদ যিকির ইত্যাদি পালন করা বিদআত
- সমাজে প্রচলিত কিছু বিদআত সম্পর্কে আলোচনা আমাদের জন্য প্রয়োজন সকল প্রমাণহীন অনুষ্ঠানাদী বর্জন করা এবং সঠিক দ্বীনের দিকে ফিরে আসা
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সকল বিদআত গোমরাহী থেকে হেফাযত করুন আমীন
____________________________________

[1]   বুখারী, কিতাবুস্সাওম মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম
[2] বুখারী, কিতাবুস্সাওম মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম
[3]    মুসনাদ আহমাদ ৫ম খন্ড ২০১ পৃষ্ঠা সুনান নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম আলবানী রা. বলেন, সনদটি হাসান দ্র: সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ্ হাদীস নং ১৮৯৮
[4] মুসনাদ আহমাদ (/৪৪২), আবু দাউদ, অনুচ্ছদে, এমনটি করা অর্থাৎ অবচ্ছিন্নিভাব শাবান রামাযান রোযা রাখা অনুচতি
[5]বুখারী, কিতাবুস্সাওম মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম ইয়াহয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন
[6]  সুনান ইব্ মাজাহ অধ্যায়: সালাত প্রতিষ্ঠা করা বূসীরী রাহ. তাঁর যাওয়াযেদ ইব্ মাজাহ কিতাবে বলেন: আবু মূসার সনদে বর্ণিত হাদীস যঈফ  আব্দুল্লাহ বিন লাহীআ থেকে এবং ওলীদ বিন মূসা তাদলীস থেকে আবু মূসা অধিক দূর্বল ত্ববারানী রাহ. হাদীসটি আল মুজামুল কাবীর গ্রন্থেমুআয বিন জাবাল রা. থেকে বর্ণনা করেন ইমাম হায়সামী মাজমাউয যাওয়ায়িদ গ্রন্থে বলেন: ত্ববারানী (রাহ.) তাঁর কাবীর এবং আওসাত  গ্রন্থে হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং এর বর্ণনাকারীগণ সকলেই গ্রহণ যোগ্য ইব্ হিব্বানও তার সহীহ ইব্ হিব্বান গ্রন্থেহাদীসটি উল্লে করেছেন উল্লেখ করেন তবে আল্লামা আলবানী (রহ:) হাদীসটিকে একাধিক সূত্রের সমন্বয়ে সহীহ বলে সাব্যস্ত করেছেন দেখুন সিলসিলা সহীহাহ মুখতাসারাহ: হাদীস নং ১৫৬৩
[7]    বুখারী অধ্যায়: তাহাজ্জুদ, মুসলিম, অধ্যায়: মুসাফিরদের নামায
[8]ইমাম সুয়ূতী (রাহ:) কর্তৃক লিখিত আল জামিউল কাবীর বা জামউল জাওয়ামিগ্রন্থে ১২৮৩০ নং হাদীস তিনি নিজেই বলেছেন: হাদীসটি মুরসাল আরও হাদীসটি দায়লামী (আনাস রা:) থেকে বর্ণনা করেন আল্লামা আলবানী (রাহ:) বলেন: হাদীসটি যঈফ বা দূর্বল দেখুন: সিলসিলা যঈফা মুখতাসারাহ হাদীস নং ৪৪০০ মাকতাবা শামেলা
[9]ইবন মাজাহ, নামায অধ্যায়: নামায প্রতিষ্ঠা করা বুসিরী যাওয়ায়েদে ইবনে মাজাতে বলেন: আবু মূসার সনদে বর্ণিত হাদীসটি দূর্বল কারণ, এর সনদে রয়েছে আব্দুল্লাহ বিন লাহিয়া এবং ওলীদ বিন মুসলিমের তাদলীস যদিও সহীহে ইবনে হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে কিন্তুউপরোক্ত সমস্যাগুলো থাকার কারণে হাদীসটি সহীহ নয় বরং আল্লামা আলাবানী (রাহ:) জাল হিসেবে চিহিৃত করেছেন
[10]  ইব্নুল জাওযী উক্ত হাদীসটি মাওয়ুআত কিতাবে তিনটি সনদে উল্লেখ  করে বলেছেন, এটি যে বানোয়াট তাতে কোন সন্দেহ নেই তিনটি সনদেই এমন সব বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের অধিাকংশরই পরিচয় অজ্ঞাত আরও কতিপয় বর্ণনাকারী খুব দূর্বল সুতরাং হাদীসটি নিশ্চিতভাবে জাল অথচ আমরা অনেক মানুষকে দেখি যারা সারা রাত ধরে নামায পড়ার পর এদের ফজর নামায ছুটে যায় কিংবা সকালে যখন উঠে অলসতা সহকারে উঠে কিছু মসজিদের ইমাম শবে বরাতের সব নামাযকে সাধারণ জনগণকে একত্রিত করার এবং এর মাধ্যমে নিজেদের রুটি-রুযি উন্নতির মাধ্যমে হিসেবে গ্রহণ করেছে এরা জনগণকে একত্রিক করে তাদের আলোচনা সভাগুলোতে বিভিন্ন কিচ্ছা-কাহিনী আলোচনা করে থাকে মুলত সবই ভ্রান্ত এবং হকের সাথে সম্পর্ক হীন
ইব্নুল কায়্যেম জাওযিয়াহ আল মানারুল মুনীফ কিতাবে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে বলেন: জাল হাদীস সমূহের মধ্যে অর্ধ শাবানের রাত্রের নামায পড়া সম্পর্কীত উক্ত হাদীসটি অন্যতম এর পর তিনি বলেন: আজব ব্যাপার হল, কিছু মানুষ যারা হাদীসের কিছু ঘ্রাণ পেয়েছে তারাও সকল উদ্ভট হাদীস দেখে প্রতারিত হয়ে শবে বরাতের নামায পড়া শুরু করে দেয়
অনুরূপভাবে ইমাম সুয়ূতী রা. উপরোক্ত হাদীসটি আল লাআলী আল মাসনূআকিতাবে উল্লেখ করে সেটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন তদ্রুপ ইমাম শাওকানী রা. এটিকে আল ফাওয়ায়েদুল মাজমূআহ কিতাবে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন

[11]তিরমিযী অনুচ্ছেদ; অর্ধ শাবানের ব্যাপারে যা এসেছে তবে তিনি নিজেই এর পরে উল্লেখ করেছেন, মুহাম্মাদ অর্থাৎ ইমাম বুখারী (রাহ:)কে বলতে শুনেছি তিনি হাদীসটিকে যঈফ  বলেছেন ইমাম দারাকুতনী (রাহ:) বলেন: হাদীটি একাধিক সূত্রে বর্ণিত হয়েছে তবে সনদগুলো মুযতারাব এবং সুপ্রমাণিত নয় বর্তমান শতকের শ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ আল্লামা আলবানী (রাহ:) হাদীসটিকে যঈফ বলে সাব্যস্থা করেছেন দেখুন: সহীহ ওয়া যঈফ তিরমিযী, হাদীস নং ৭৩৯, মাকতাবা শামেলা)
[12]  হাদীসটিও ইব্নুল জাওযী রা. তার আল মাওযূআত কিতাবে উল্লেখ করেছেন হাদীসটিও জাল হাদীসটির সনদে এমন একদল বর্ণনাকারী রয়েছে যাদের সকলের পরিচয় অজ্ঞাত অনুরূপভাবে ইমাম সূয়ূতী রাহ. আল লাআলী কিতাবে এবং ইমাম ইব্নুল কয়্যেম (রাহ:) আল মানারুল মুনীফ কিতাবে উক্ত হাদীসটি উল্লেখ করে এটিকে জাল হাদীস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন
[13]    সূরা কাদর:
[14]   সূরা বাকারা: ১৮৫
[15]   তাফসীর ইব্ কাসীর ৪র্থ খন্ড ৫৭০ পৃষ্টা
[16]    আল জামেউল কুরতুবী ১৬/১২৬
[17]    আযওয়াউল বায়ান /৩১৯
[18]  লাতায়িফুল মাআরিক: ১৪৫ পৃষ্ঠা
[19]  আল বায়েস পৃষ্টা নং ৩৩
[20]  আত তাহযীর মিনাল বিদা: ১১ পৃষ্ঠা
[21]  বুখারী মুসলিম
[22]  ইমাম গাযালী (রাহ.) পদ্ধতিটি এহিয়া উলুমুদ্দীন কিতাবে উল্লেখ করেছেন দেখুন: ১ম খন্ড ২০৩ পৃষ্ঠা
[23]আল মাউযূআত ২য় খন্ড ১২৭-১৩০ পৃষ্ঠা

[24]  আত্ত্বারতুশী রচিত আত্তাহযীর মিনাল বিদা পৃষ্টা: ১২১ ১২২