কার্টুন দেখা, ইলেকট্রনিক্স গেমস খেলা কি জায়েজ?
কার্টুন দেখা নিয়ে প্রশ্নঃ
‘কার্টুন
ছবি’ দিয়ে
বানানো ইসলামিক মুভি দেখা ও এইগুলো কেনার ব্যপারে শরীয়তের হুকুম কি? উল্লেখ্য, এইগুলোতে
শিশুদের জন্য তাতপর্যপূর্ণ শিক্ষামূলক কাহিনী থাকে যা ভালো চরিত্র, মাতা-পিতার প্রতি
অনুগত হওয়া, সততা, নিয়মিত সালাত আদায় করা ইত্যাদি বিষয়ের দিকে শিশুদেরকে উতসাহিত করে।
এই ইসলামিক কার্টুনগুলোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, টিভির বিকল্প হিসেবে প্রতিস্থাপন করা যা কিনা
ব্যপকতা লাভ করেছে। যাইহোক, বর্তমানে আমরা যে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি সেটা হচ্ছে –
এই কার্টুনগুলোতে হাতে আকা মানুষের ও প্রাণীর ছবি থাকে। প্রাণীর ছবি আকা এই কার্টুনগুলো
দেখা কি আমাদের জন্য জায়েজ হবে? দয়া করে আমাদেরকে উপদেশ দিন। আল্লাহ আপনাদেরকে সর্বোত্তম
পুরষ্কার দিন।
উত্তরঃ কার্টুন ছবি ক্রয় করা, বিক্রি করা বা এইগুলো কোন কাজে
ব্যবহার করা জায়েজ নয় – কারণ এতে হারাম ছবি বিদ্যমান। সন্তানদেরকে লালন-পালন করা, তাদেরকে
শিক্ষা দেওয়া, আদব-কায়দা শেখানো, সালাত আদায় করতে এবং সালাতের ব্যপারে যত্নবান হতে
উতসাহিত করা – এইরকম বিষয়গুলো শিক্ষা দিতে হবে ইসলাম সম্মত উপায়েই।
আল্লাহ আমাদেরকে সফলতা দান করুন। আল্লাহ আমাদের নবী মুহা’ম্মাদ,
তার পরিবার ও তার সাহাবীদের প্রতি শান্তি ও রহমত বর্ষণ করুন।
ফাতওয়া আল-লাজনাহ আদ-দাই’য়িমাহঃ ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ৩১৫।
স্থায়ী ফাতওয়া কমিটির ফাতওয়া নং– ১৯,৯৩৩।
স্থায়ী ফাতওয়া কমিটির সদস্যবৃন্দঃ-
১. সদস্যঃ আল্লামাহ, শায়খ বাকর আবু জায়েদ রাহি’মাহুল্লাহ
২. সদস্যঃ আল্লামাহ, শায়খ সালেহ আল-ফওজান হা’ফিজাহুল্লাহ
৩. ডেপুটি চেয়ারম্যানঃ আল্লামাহ, শায়খ আব্দুল আ’জিজ
ইবনে আবদুল্লাহ আলে-শায়খ হা’ফিজাহুল্লাহ
৪. চেয়ারম্যানঃ “ইমাম” আব্দুল আ’জিজ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে বাজ
রাহি'মাহুল্লাহ
মূল ফতোয়ার লিংকঃ-
http://alifta.net/Search/ResultDetails.aspx?languagename=en&lang=en&view=result&fatwaNum=true&FatwaNumID=19933&ID=10695&searchScope=7&SearchScopeLevels1=&SearchScopeLevels2=&highLight=1&SearchType=EXACT&SearchMoesar=false&bookID=&LeftVal=0&RightVal=0&simple=&SearchCriteria=AnyWord&PagePath=&siteSection=1&searchkeyword=#firstKeyWordFound
________________________
অনুবাদকের নোটঃ
সম্মানিত আলেমদের ফতোয়া হচ্ছে, হাতে অংকন করা প্রাণীর ছবি থাকায়
এই কার্টুনগুলো, যদিও এইগুলো ‘ইসলামিক’ বলে দাবী করা হচ্ছে – তবুও এইগুলো দেখা বা
ক্রয় করা হারাম।
কারণ, হাতে ছবি অংকন করা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ। প্রাণীর
ছবি অংকন করা কবীরা গুনাহ ও চিত্র অংকনকারীদেরকে কঠিন শাস্তি দেওয়া হবে – এনিয়ে কিছু
সহীহ হাদীসঃ-
১. সাঈদ ইবনে আবুল হাসান (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। এমন সময়ে তাঁর কাছে এক ব্যক্তি
এসে বলল, হে আবু আব্বাস! আমি এমন ব্যক্তি যে, আমার জীবিকা হস্তশিল্পে। আমি এসব ছবি
তৈরি করি। ইবনে আব্বাস (রা) তাঁকে বলেন, (এ বিষয়) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লামকে আমি যা বলতে শুনেছি, তাই তোমাকে শোনাব।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে আমি বলতে শুনেছিঃ
“যে ব্যক্তি
কোন প্রাণীর ছবি অংকন করে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে শাস্তি দিবেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না
সে ছবির মাঝে প্রাণ দিতে পারে। আর সেই ছবির মাঝে সে কখনোই প্রাণ দিতে পারবে না।”
(এ কথা শুনে) লোকটি ভীষণভাবে ভয় পেয়ে গেল এবং তার চেহারা ফ্যাকাশে
হয়ে গেল। এতে ইবনে আব্বাস (রা) বললেন, আক্ষেপ তোমার জন্য! তুমি যদি এ কাজ না-ই ছাড়তে
পার, তবে এ গাছপালা এবং যে সকল জিনিসের প্রাণ নেই, তা অংকন করতে পার।
সহীহ আল-বুখারী, চতুর্থ খণ্ড, হাদিস নং- ২০৮৪ (ইসলামী ফাউন্ডেশান)।
২. মুসলিম (রহঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরুকের
সাথে ইয়াসার ইবনে নুমায়রের ঘরে ছিলাম। মাসরুক ইয়াসারের ঘরের আঙ্গিনায় কতগুলো মূর্তি
দেখতে পেয়ে বললেনঃ আমি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন যেঃ
“(কিয়ামতের
দিন) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি বানায়।”
সহীহ বুখারী, নবম খণ্ড, হাদিস নং- ৫৫২৬ (ইসলামী ফাউন্ডেশান)।
৩. মা আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম (তাবূক যুদ্ধের) সফর থেকে প্রত্যাগমন করলেন। আমি আমার ঘরে পাতলা
কাপড়ের পর্দা টাঙ্গিয়েছিলাম। তাতে ছিল (প্রানীর) অনেকগুলো ছবি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এটা দেখলেন, তখন তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেনঃ
“কিয়ামতের
সে সব মানুষের সবচেয়ে কঠিন আযাব হবে, যারা আল্লাহ্র সৃষ্টির (প্রানীর) অনুরূপ তৈরি
করবে”।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, এরপর আমরা তা দিয়ে একটি বা দু'টি বসার আসন
তৈরি করি।
সহীহ আল-বুখারী, নবম খণ্ড, হাদিস নং- ৫৫৩০ (ইসলামী ফাউন্ডেশান)।
____________________________
ইলেকট্রনিক্স গেমস নিয়ে আলোচনাঃ
অনেক মুসলমান ভাই ও বোনেরা মোবাইল, কম্পিউটারে গেমস খেলার নেশায়
আসক্ত। একটু সুযোগ পেলেই গেমস খেলায় মেতে উঠেন। অথচ এইগুলোর মাঝে অনেক হারাম জিনিস
জড়িত।
বর্তমান স্মার্টফোন, প্লে স্টেশন, কম্পিউটারে বেশিরভাগ গেমনগুলোর
মাঝে প্রাণীর চরিত্র অংকন করা থাকে, সুতরাং উপরের আলোচনা থেকে এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কারঃ-
যেই সমস্ত গেমসগুলোতে হাতে আকা প্রাণীর ছবি থাকে, সেইগুলো খেলা
হারাম। এছাড়া এই গেমসগুলোতে আরো অনেক হারাম বিষয় যুক্ত আছে। যেমনঃ-
১. মিউজিক, গান, বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র।
২. বেপর্দা নারীদের নগ্ন ও অশ্লীল ছবি।
৩. কাফেরদেরকে সম্মান করা, তাদের নষ্ট সংস্কৃতিকে প্রচার করে
মুসলিম যুব সমাজকে ধ্বংস করা।
৪. অনেক গেমসে কুরানুল কারীম, কাবা, মুসলিমদেরকে কৌশলে হেয়
করা, এইগুলোকে অপমান করা হয়। অনেক মুসলমান এইগুলো না জেনেইে খেলতে থাকে।
৫. কাফেরদের ধর্মীয় শিরকি-কুফুরী বিশ্বাস ও কাফেরদের চিহ্নকে
কৌশলে মুসলিমদের মাঝে প্রচার করা।
৬. অপ্রয়োজনীয় বেহুদা কাজে প্রচুর সময় নষ্ট, যেই কাজটা আসলে
ইলম শিক্ষা করা, ইবাদতের জন্য ব্যয় করা দরকার ছিলো। জান্নাতে গেলেও মানুষ অবসর সময়কে
নষ্ট করার জন্য আফসোস করবে!
৭. হ্যারি পটারসহ অনেক কার্টুন, সিনেমা ও গেমসে যাদু, জোতিষি এই জিনিসগুলোর মতো শিরকি কথাবার্তা প্রচার করা হয়।
মুসলিমদের সন্তানেরা দ্বীন জানেনা, এই সমস্ত শিরকি জিনিস নিয়েই পড়ে আছে, নাউযুবিল্লাহ!
৮. মদ, জুয়াতে ছোট বাচ্চাদেরকে অভস্ত করা। এইভাবে ভার্চুয়াল
মদ, জুয়ার ছবি দিয়ে মুসলমানদেরকে এইগুলোর প্রতি নমনীয় ও আকৃষ্ট করা হচ্ছে, আস্তে আস্তে
যাতে করে সত্যিকারের মদ জুয়াতে লিপ্ত হয়।
সুতরাং, মুসলিম ভাই ও বোনদের প্রতি অনুরোধ –
মোবাইল, কম্পিউটার থেকে হারাম কার্টুন ও হারাম গেমস ডিলিট করুন
– আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করুন।