শনিবার, ২৮ জুন, ২০১৪

“ইকামতে দ্বীন” এর অর্থ নিয়ে মাওলানা মওদুদীর অপ-তাফসীর

“ইকামতে দ্বীন” এর অর্থ নিয়ে মাওলানা মওদুদীর অপ-তাফসীরঃ

বর্তমানে “ইকামতে দ্বীন” এর অর্থ বলতে অনেকে মনে করেন -

– “ইসলামিক রাষ্ট্র” প্রতিষ্ঠা করা
– “ইসলামিক হুকুমত” কায়েম করা
– রাষ্ট্রে “শরিয়াহ” বাস্তবায়ন করা

“ইকামতে দ্বীন” নাম দিয়ে “ইসলামী রাষ্ট্র” বা “ইসলামী হুকুমত” (শাসনব্যবস্থা) কায়েম করা “ফরয” - এই মতবাদের প্রবক্তা হচ্ছেন “জামাতে ইসলামীর” প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ আবুল আলা মওদুদী, যিনি মাওলানা মওদুদী নামে বেশি পরিচিত।

এইসবগুলো অর্থ হচ্ছে ভুল, মওদুদী সাহেবের নিজের মনগড়া অপতাফসীর।

“ইকামতে দ্বীন” এর অর্থ হচ্ছে - একমাত্র আল্লাহ তাআ’লার ইবাদত প্রতষ্ঠিত করা। দলীলঃ-

“তিনি তোমাদের জন্যে দ্বীনের ক্ষেত্রে সে পথই নিধারিত করেছেন, যার আদেশ দিয়েছিলেন নূহকে, যা আমি প্রত্যাদেশ করেছি আপনার প্রতি এবং যার আদেশ দিয়েছিলাম ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে এই মর্মে যে, “আক্বীমুদ-দ্বীন” তোমরা দ্বীনকে কায়েম বা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং তাতে অনৈক্য সৃষ্টি করো না।”
সুরা শুরাঃ ১৩ নাম্বার আয়াত।

আর, এই দ্বীনকে কায়েম করা বা দ্বীন প্রতিষ্ঠা করার ৩টি স্তর রয়েছে যা “হাদীসে জিব্রাঈল” থেকে পাওয়া যায়।

হাদীসে জিব্রাঈলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছিলেন, জিব্রাঈল (আঃ) তোমাদেরকে “দ্বীন” শিক্ষা দিতে এসেছিলেন।

সেখানে “দ্বীন” এর স্তর হিসেবে ৩টি বিষয় উল্লেখ করা হয়েছিলোঃ

১ – ইসলাম (শাহাদাতাইন বা ২টি স্বাক্ষী দেওয়া- আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, নামায কায়েম করা, যাকাত দেওয়া, রমযান মাসে রোযা রাখ ও সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করা)।

২ – ঈমান (আল্লাহর প্রতি, ফেরেশতাদের প্রতি, আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি, নবী-রাসূলদের প্রতি, আখেরাত বা মৃত্যুর পরের জীবনের প্রতি ও তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা)। 

৩ – ইহসান (এমনভাবে ইবাদত করা যেন আমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছি, এটা না হলে অন্তত এই ধারণা রেখে ইবাদত করা যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাকে দেখছেন)

এইভাবেই একজন ঈমানদার “ইকামাতে দ্বীন” বা দ্বীন কায়েম করবে, আল্লাহর ইবাদত বাস্তবায়ন করার মাধ্যমে।

এখানে সবাইকে নিজ নিজ সীমানার মাঝে জিজ্ঞাসা করা হবে। ঈমানদার হিসেবে কার কতটুকু সীমানা সেটা জেনে নেন এই হাদীস থেকে -

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“জেনে রেখো! তোমাদের প্রত্যেকেই একজন দায়িত্বশীল, আর তোমরা প্রত্যেকেই নিজ অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব ইমাম, যিনি জনগনের দায়িত্বশীল, তিনি তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবেন। পুরুষ (গৃহকর্তা) তার পরিবারের দায়িত্বশীল, সে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। নারী তার স্বামীর পরিবার, সন্তান-সন্ততির উপর দায়িত্বশীল, সে এসব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। কোন ব্যক্তির দাস, স্বীয় মালিকের সম্পদের দায়িত্বশীল, সে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। অতএব জেনে রাখ, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং তোমাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ দায়িত্বাধীন বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।
সহিহ বুখারী, খন্ড ৯, অধ্যায় ৮৯, হাদিস নং- ২৫২।

সুতরাং, দেখা যাচ্ছে – কুরান হাদীসে কোথাও “ইকামতে দ্বীন” অর্থ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করা” অথবা “ইসলামিক হুকুমত কায়েম করা” – এইরকম কোন কথা নেই!

সুতরাং এইরকম যত মনগড়া অর্থ করেছেন – বিংশ শতাব্দীর কিছু দার্শনিক আর চিন্তবিদেরা – এই সবগুলোই ভুল, কুরান ও হাদীসে যার কোন প্রমান নেই।


আপনারা আরো জানার জন্য নির্ভরযোগ্য তাফসীরের কিতাব যেমন ইমাম ইবনে জারীর তাবারানী, ইমাম ইবনে কাসীর, ইমাম কুরতুবীর তাফসীরের কিতাব এর সাথে মাওলানা মওদুদীর সুরা শুরাঃ ১৩ নাম্বার আয়াতের অপতাফসীরকে মিলিয়ে দেখবেন – তিনি যে মনগড়া ব্যখ্যা দাড় করিয়েছেন “ইকামতে দ্বীনের” আপনাদের কাছে বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যাবে।