আক্বাবার ২য় শপথঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওতের ১৩-তম বছরে
মদীনা থেকে ৭০ জনেরও অধিক মুসলিম মক্কায় আসেন হজ্জ করতে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম তখনও হিজরত করে মদীনায়
যান নি, মক্কায়
মুশরিকদের অত্যাচার নির্যাতনে দিন কাটাচ্ছেন। মদীনা থেকে হজ্জ করতে আসা মুসলিমরা
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম কে এই অত্যাচার থেকে বাঁচানোর জন্য তাঁকে হিজরত করে মদীনাতে চলে আসার
জন্যে আহবান করার চিন্তা করলেন। তাঁরা ঠিক করলেন মুশরিকদের থেকে আলাদা হয়ে হজ্জের
১২ই জিলহজ্জ তারিখে রাতের বেলায় গোপনে জামারাহ আক্বাবার নিকটে যে সুড়ংগ রয়েছে, সেখানে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে দেখা করবেন।
নির্দিষ্ট দিনে মুসলিম দলটি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে দেখা করে কথা
বললেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে ক্বুরান থেকে কিছু অংশ তেলাওয়াত করে শোনালেন, তাদের সামনে আল্লাহর
দ্বীনের দাওয়াত পেশ করলেন...এইভাবে তাঁদের অন্তরে ইসলামের প্রতি অনুরাগ সৃষ্টি
করলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু শর্ত দিয়ে তাঁদের
কাছ থেকে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করলেন। এই শপথকে ‘আক্বাবার ২য় শপথ’ বলা হয়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যদি মক্কা থেকে মদীনাতে
গিয়ে দ্বীনের দাওয়াত শুরু করেন আর মদীনার মুসলিমরা তাঁকে সাহায্য করে, স্বাভাবিকভাবে মক্কার
মুশরিকরা এতে ক্ষুব্ধ হবে। যার ফলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর দ্বীনের দাওয়াতকে
কেন্দ্র করে মক্কার প্রভাবশালী লোকদের সাথে মদীনার মুসলিমদের যুদ্ধ বা সংঘাত
অনিবার্য। আর তখন মদীনার মুসলিমরা যাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি সমর্থন ধরে রাখে, এবং তাঁকে সর্বাত্মকভাবে
সাহায্য করে এই নিশ্চয়তা নেওয়ার জন্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আক্বাবার ২য় শপথে
অন্যান্য শর্তের সাথে গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি শর্ত দেনঃ
“আমি যখন হিজরত করে তোমাদের (মদীনায়
মুসলিমদের) কাছে চলে যাবো,
তখন তোমরা আমাকে সাহায্য করবে এবং যেমনভাবে নিজেদের সন্তান এবং
সম্পদের হেফাজত করো ঠিক সেইভাবে আমাকে হেফাকত করবে।”
সাহাবীরা এই কঠিন ও ভারী শর্তে রাজী হন, তবে তাঁদের এই ত্যাগের
বিনিময়ে কি প্রতিদান রয়েছে, সেটা জানতে চান।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিনিময়ে তাঁদেরকে
জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেন।
সাহাবীরা এতে রাজি হয়ে বাইয়াত গ্রহণ করার
জন্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম কে তাঁর হাত মুবারক বাড়িয়ে দিতে বলেন।
উৎসঃ আল্লামাহ শফীউর রহমান মুবারকপুরী
রাহিমাহুল্লাহ, আর-রাহীখুল
মাখতুম।