আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আপনারা কেমন আছেন? আলহা’মদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি, দুনিয়ার অনেকের
চাইতে আল্লাহ ভালো রেখেছেন, আলহা’মদুলিল্লাহ। অনেক ভাই বোনেরা ফেইসবুক
ব্যবহার করতে পারছেন না, তাদের জন্যে খারাপ লাগে, লিখতে ইচ্ছে করেনা। তারপরেও যারা
আছেন তাদের জন্যে লিখি, কে কতদিন বাচবে তারতো কোন গ্যারান্টি নেই। সেইজন্য বি
ইজনিল্লাহি তাআ’লা,
যতটুকু সুযোগ পাই আল্লাহর কথা প্রচার করার চেষ্টা করি। আপনারা নিজেরা সঠিকভাবে যা
জানেন, তা অন্যদের কাছেও পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন ইনশা’আল্লাহ। মনে রাখবেন, দাওয়াতের সবচাইতে
শক্তিশালী মাধ্যম হচ্ছে মুখে মুখে অন্যের কাছে পৌঁছে দেওয়া। টিভি চ্যানেল, ফেইসবুক
এইগুলো আজ আছে কাল নেই, তার উপরে এইগুলোর নিয়ন্ত্রনে রয়েছে ইসলামের শত্রুরা।
কিন্তু যতদিন মুসলিমরা থাকবে, মুসলিমদের মুখ কেউ বন্ধ করতে পারবেনা। মুসলিম হিসেবে
আমাদের জানা উচিৎ, ইসলামের জন্যে কিভাবে আমাদের জবানকে ব্যবহার করতে হয়। আল্লাহ আমাদের
তোওফিক দান করুন, আমিন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসে বর্ণিত কেয়ামতের
পূর্বে লক্ষণ সমূহের মাঝে মুসলিমদের মাঝে কবীরাহ গুনাহ, পাপাচার ও হারাম কাজ ও নোংরামি
এবং মুসলমানদের উপর চতুর্দিকে জুলুম-অত্যাচার বেড়েই চলেছে। আমি সম্পূর্ণভাবে পত্রিকা
এবং টিভি বর্জন করার চেষ্টা করি, এমনকি সংবাদের জন্যেও এইগুলো ফলো করা জায়েজ বলে মনে
করিনা। প্রত্যেকটা টিভি চ্যানেল এবং সংবাদপত্রের পাতায় পাতায় অর্ধ-নগ্ন, বেপর্দা মেয়েদের
ছবি, মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ, যাবতীয় নোংরামি, হারাম এবং পাপাচার দিয়ে মানুষদেরকে আল্লাহর
রাস্তা থেকে বিরত রেখে শয়তানের দাস বানানোর অস্ত্র হচ্ছে এই মিডিয়াগুলো। সুতরাং দ্বিনি
ভাই ও বোনেরা এইগুলো বর্জন করবেন, এদেরকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবেন এবং এদের ভণ্ডামি সম্পর্কে
মুসলিমদেরকে সতর্ক করবেন। যাই হোক, সম্প্রতি দুইটা সংবাদ শুনে সত্যিই দুঃখ পেলাম। রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর আগমনের পূর্বে ‘আইয়ামে জাহেলিয়াতের’ নমুনা আবার ফিরে আসছে, তাও মুসলিমদের মাঝে।
১/ সরকার দলীয় প্রভাবশালী একলোক তার বাড়ীর গৃহকর্মীকে
ধর্ষণ করে, যার ফলে মেয়েটি গর্ভবতী হয়ে পড়ে। শুনতে খারাপ শোনালেও আসলে এমন অনেক হচ্ছে,
অভাবের তাড়নায় বহু নারী অরক্ষিত অবস্থায় কাজ করতে গিয়ে গৃহকর্তা বা উর্ধতন লোকদের কাছে
যৌন নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে, বা অনেকে কাজের মহিলার সাথে কুকর্মে লিপ্ত হচ্ছে। সুতরাং,
স্ত্রীদের দায়িত্ব হচ্ছে কাজের মেয়েদেরকে বাড়ির পুরুষদের সাথে কোন অবস্থাতেই একা অবস্থান
করতে না দেওয়া, সে তার ভাই, স্বামী যেই হোক না কেনো। ইসলাম কাউকে বিনা কারণে অবিশ্বাস
করতে বলেনা, আবার কুকর্ম করার সুযোগ খোলা রাখতেও বলেনা। আর একারণে গায়ের মাহরাম নারী
পুরুষ একাকী অবস্থান করা, দেখা-সাক্ষাৎ করা ইসলাম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছে। মনে রাখবেন,
নারী পুরুষ একাকী অবস্থান করা, দেখা-সাক্ষাৎ করার সুযোগ থাকা জিনা-ব্যভিচারের প্রধান
একটি কারণ। যাই হোক, সেই লোকের বিরুদ্ধে মেয়েটির পরিবার মামলা করলে পুলিশ উলটা মেয়েটির
ভাইকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় এবং ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে সে তার বোনকে ধর্ষণ করেছে
– এটা স্বীকার করতে বাধ্য করে। আল্লাহু মুস্তায়ান,
এমন অত্যাচারী, বর্বর লোকদেরকে আল্লাহ হেদায়েত করুন। আর এদের নসীবে যদি হেদায়েত না
থাকে, তাহলে আল্লাহ তাদেরকে ধ্বংস করে তাদের দুষ্কৃতি থেকে দেশবাসীকে নিরাপদ রাখুন,
আমিন।
২/ অনেকে স্ত্রী ফেলে দীর্ঘদিন বাইরে থাকে,
নিজেরাও বাইরে খারাপ কাজ করে বেড়ায় আর তাদের স্ত্রীরাও জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত থাকে।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম প্রবাসীর স্ত্রীদের সাথে দেখা
করতে পুরুষদেরকে বিশেষভাবে সতর্ক করেছেন। কারণ, একজন প্রবাসীর
স্ত্রী জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা অন্য নারীদের থেকে বেশি থাকে। এমনই এক
প্রবাসী লোকের স্ত্রী পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। তাদের দুইজনের পথে ঐ মহিলার দুইটি সন্তান
বাঁধা। সুতরাং সেই নিষ্ঠুর মা তার অবৈধ প্রেমিকের বুদ্ধি অনুযায়ী নিজেই তার দুইটি
সন্তানকে গলাটিপে হত্যা করে ফেলে। এ যেনো মক্কার মুশরিকদের মতো অবস্থা, যারা
দারিদ্রতার ভয়ে নিজেদের কন্যা সন্তানদেরকে হত্যা করে ফেলতো। বিয়ে বহিঃর্ভূত প্রেম-ভালোবাসা
ও যৌন সম্পর্ক মানুষকে সাময়িক আনন্দ দিতে পারে, কিন্তু এটা মানুষের অন্তরকে নষ্ট
করে পশুর পর্যায়ে নিয়ে যায়। একবার ভেবে দেখুন, জিনা-ব্যভিচার আল্লাহর দৃষ্টিতে কতটা
জঘন্য ও চরম অপরাধ! একজন মুশরিক মূর্তিপূজারীকে আল্লাহ দুনিয়ার জীবনে সাময়িক অবকাশ
দিয়েছেন, তাকে হত্যা করার আদেশ আমাদেরকে দেন নি। কিন্তু একজন বিবাহিত মহিলা বা
পুরুষ যদি আদালতে জেনাকারী বলে প্রমানিত হয়, তাহলে তাদেকে হত্যা করার আদেশ
দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তাদেরকে রজম অর্থাৎ, অর্ধেক মাটিতে পুঁতে পাথর মেরে মেরে
নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করতে বলেছেন, তাও প্রকাশ্যে মানুষের সামনে। যাতে করে অবৈধ যৌন
সম্পর্কের দুনিয়াবী কঠোর শাস্তি দেখে অন্যরা এটা থেকে ভয়ে বিরত থাকে।
আমি আল্লাহর অসীম দয়া ও আমাদের প্রতি তাঁর অপরিসীম
মমতাকে ওসীলা করে দুয়া করছি, আয় আমাদের রব্ব! আপনি আমাদের প্রতি রহম করুন,
আমাদেরকে ক্ষমা করুনা, আমাদেরকে নিরাপদ ও পবিত্র রাখুন, আমাদের পরিবারকে নিরাপদ ও
পবিত্র রাখুন, সারা বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানকে আপনি নিরাপদ রাখুন, তাদের জান-মাল ও
ইজ্জতের আপনি হেফাজত করুন, আমিন।