তাবলীগ জামাত,
জামাতে ইসলামী, চরমোনাই পীর ইত্যাদি দলের শিরক, বেদাত ও ভুলগুলো নিয়ে পোস্ট দিলে অনেকেই
প্রশ্ন করেন…
“তাহলে কোন
দলটি সঠিক?”
উত্তরঃ যদিও
এই পোস্টটাই একটু বড় হয়ে গেছে, তারপরেও আপনারা যদি আমাদের আগের এই পোস্টটা না পড়ে থাকেন
– তাহলে এটা পড়ে নিন – তাহলে এই পোস্টটা বুঝতে সহজ হবে।
https://www.facebook.com/Back.to.Allah.bangla/posts/765496046816478
তাবেয়ীদের যুগ
থেকে নিয়ে আজ পর্যন্ত, যুগে যুগে মুসলিম উম্মতের ৭৩টা দলের মাঝে একমাত্র সঠিক ও নাজাতপ্রাপ্ত
দল হচ্ছে “আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের” অনুসারীরা।
“আহলে সুন্নত”
– কথাটির অর্থ হচ্ছে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম এর “সুন্নত বা আদর্শের” অনুসারী। নাজাতপ্রাপ্ত দলের লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেই তাদের “একমাত্র
এবং চূড়ান্ত আদর্শ” বলে মনে করে, তার কথার বিপরীতে কোন ইমাম, দল,
তরীকা, বুজুর্গ, মতবাদ কোন কিছুকেই গ্রহণ করেনা।
“ওয়াল জামাত”
– কথাটি দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে সাহাবাদের জামাত ও তারা যেই আদর্শের উপর ছিলেন তার অনুসারী।
নাজাতপ্রাপ্ত দলের লোকেরা ইসলামকে সেইভাবে গ্রহণ করে, কুরান ও সুন্নাহকে সেইভাবে ব্যাখ্যা
করে, বুঝে ও আমল করে, যেইভাবে সাহাবারা করেছিলেন। কারণ - এই উম্মতের মাঝে দ্বীনের ব্যপারে
সবচাইতে জ্ঞানী লোকেরা হচ্ছেন সাহাবারা। আর কুরানুল কারীমে আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে
– সাহাবারা যেইভাবে ঈমান এনেছে সেইভাবে ঈমান আনার জন্য, সাহাবারা যেই তরিকার উপরে ছিলো
সেইভাবেই ইসলাম পালন করার জন্য। এছাড়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি সহীহ হাদীসে সঠিক দল কারা – এর উত্তরে বলেছেন যারা আমার
ও আমার সাহাবাদের অনুসরণ করে তারা।
এখানে একটা
ব্যপার লক্ষণীয় – তাবলিগ জামাত, জামাতে ইসলামী, বেরেলভী কবর মাযার পূজারী, সূফীবাদী
দেওবন্দী, পীর ফকির - এরা সবাইতো নিজেদেরকে হক্ক দাবী করে!! নিজেদেরকে আহলে সুন্নত
ওয়াল জামাতের অনুসারী মনে করে!!!
এইজন্যই কারো
মুখের কথা বা শুধু আমল দেখেই বলা যায়না – কে হক্ক আর কে বাতিল। এই সবগুলো দলই যদি সঠিক
হতো, তাহলেতো তাদের মাঝে এতো এতো তরীকা হতোনা – সবাই আলাদা ভাগ না হয়ে একটা দলই হতো।
তাই, মানুষের
মুখের কথায় না ভুলে আপনাকে একটু যাচাই বাছাই করে দেখতে হবে – কিছু পড়াশোনা ও মেহনত
করতে হবে, যারা নিজেদেরকে আহলে সুন্নত দাবী করছে – তারা আসলেই কুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী
সঠিক।
________________________
বিভিন্ন দলের
মাঝে যে তর্ক বিতর্ক হচ্ছে – এর মাঝে কারা আসলে হক্কপন্থী? নিচে প্রচলিত কিছু দল যারা
নিজেদের হক্ক দাবী করে তাদের ব্যপারে আলোকপাত করা হলোঃ
কবর মাযার পূজারী
ফেরকা – ইসলামে মাযার বানানোই হারাম (মুসলিম ও মুসনাদে আহমাদ), রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আদেশ করেছেন – উচু ও পাকা করা কোন কবর (মাযার)
দেখতে পেলে সেটা ভেঙ্গে টুকরা টুকরা করে দাও – আর সেখানে মাযার পূজারীদের ধর্মই
হচ্ছে মাযার বানিয়ে সেটার পূজা করা। যাদের আকীদা ও আমলে শিরকের ব্যপক প্রাদুর্ভাব –
এরা আবার নিজেদের “সুন্নী আন্দোলন” নাম দেয়। আর যারা শিরক বেদাতের সমালোচনা করে তাদেরকে
তারা ওহাবী বলে গালি দেয়!
__________________________
জামাতে ইসলামী
– রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন থেকে ইসলাম
কায়েমের দুটি পথ পাওয়া যায় – দাওয়াত ও জিহাদ। কিন্তু, শিরকি পদ্ধতির (গণতন্ত্র) কাছে
আত্মসমর্পণ করে – কুরান হাদীসের অপব্যখ্যা করে ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের পদ্ধতিতে ইসলাম
কায়েম করতে হবে, এই কথা কুরান হাদীসের কোথায় আছে?
আর এদের মূল
নেতা হচ্ছে – মওদুদী সাহেব – যিনি নিজে সারাজীবন গণতন্ত্রের বিরোধীতা করেছেন, গণতন্ত্রকে
শিরক কুফর বলেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই আবার শেষে এই গণতন্ত্রে গিয়ে তার অনুসারীদেরকে
বিভ্রান্ত করেছেন। বর্তমানে তারা “ইসলামী গণতন্ত্র” নাম দিয়ে ইসলামের অপব্যখ্যা করে
তাদের অনুসারীদেরকে বিভ্রান্ত করছে। মদের আগে যেমন “ইসলাম” শব্দটি বসিয়ে দিলেই সেটা
হালাল হয়ে যায়না, ঠিক তেমনি গণতন্ত্রের মতো শিরকি ব্যবস্থার আগে ইসলাম বসিয়ে দিলেই
সেটা জায়েজ হয়ে যায়না।
তারপর “ইসলামী
রাজনীতি” নাম দিয়ে হরতাল, বিক্ষোভ, মিছিল ভাংচুর, না খেয়ে থাকা (রোযা দিবস), লাঠি নিয়ে
বন্দুকের সামনে পাখির মতো গুলি খেয়ে মরা – আমি তাদের সবাইকে চ্যালেঞ্জ করলাম – যদি
তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকো – কুরান ও হাদীস খুলে আমাকে দেখাও – কোথায় আছে, মুসলমানদের
এইরকম কাফেরদের অনুকরণ করে এইগুলো করতে হবে? এছাড়াও, তাদের অনেক আকীদাই ও দৃষ্টিভঙ্গি
আসলে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের বিপরীত।
_____________________
তাবলিগ জামাত
– মানুষকে দাওয়াত দিতে হবে, তাবলীগ করতে হবে কুরান ও সুন্নাহর, এবং দাওয়াতের পদ্ধতি
হতে হবে - নবী মুহা’ম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর
তরীকা মোতাবেক।
কিন্তু জাল, জয়ীফ হাদীস আর বানোয়াট শিরকি বেদাতী বুজুর্গদের
কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে, মিথ্যা ফযীলতের ধোকা দিয়ে উম্মতকে ভুলিয়ে ইসলামের তাবলীগ করতে
হবে এই কথা কুরান হাদীসের কোথায় আছে? এই তরীকা ইসলামের নয়, বরং এই তরীকা এসেছে তাদের
দলের মূল প্রতিষ্ঠাতা, মাওলানা ইলিয়াস সাহেবের কাছ থেকে।
ইলিয়াস সাহেব নিজেই বলেছে – “আমার দলের শিক্ষা হবে আশরাফ আলী
থানবীর (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নয়!) আর এই দলের তরীকা
হবে আমার (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নয়!)”।
সে স্বপ্ন দেখেছে
– আর সেই স্বপ্ন থেকে “চিল্লা” দেওয়ার তরীকা বের করে কোটি কোটি মুসলিমদেরকে চিল্লা
দেওয়ানোর তরীকা আবিষ্কার করেছে। এইরকম চিল্লা দেওয়ার তরীকাটাই বেদাত – তার উপরে এই
চিল্লাতে কুরান হাদীস বাদ দিয়ে আছে শুধু ফাজায়েলে! না কোন আকায়েদ, না আছে ফিকহ!
এই ফাজায়েলে
আমলের একটা শিরকি কাহিনী তুলে ধরছি। তাবলীগ জামাতের লোকেরা তাদের অনুসারীদের যে বই
পড়তে দেয় তার মাঝে একটা হলো “ফাযায়েলে সাদাকাত”।
ফাযায়েলে সদাকাতের
২৪নং শিরোনামে জনাব জাকারীয়া সাহেব “কবরে গিয়ে মৃত ব্যক্তির কাছে কোন কিছু চাওয়া বা
দুয়া করার” শিক্ষা দিচ্ছেন – কবরে গিয়ে মৃত ব্যক্তির কাছে চাওয়াই হচ্ছে কবর পূজার মূল
শিক্ষা।
“মিশরে একজন
নেক বখত লোক ছিলেন। অভাব গ্রস্থ হইয়া কোন লোক তাহার নিকট আসিলে তিনি চাঁদা উসুল করিয়া
তাহাকে দিয়া দিতেন। একদা জনৈক ফকীর আসিয়া বলিল আমার একটা ছেলে হইয়াছে। তাহার এছলাহের
ব্যবস্থার জন্য আমার নিকট কিছুই নাই। এই ব্যক্তি উঠিল ও ফকীরকে অনেক লোকের নিকট লইয়া
গিয়াও ব্যর্থ হইয়া ফিরিল। অবশেষে নৈরাশ হইয়া একজন দানবীর ব্যক্তির কবরের নিকট গিয়া
সমস্ত কথা তাহাকে শুনাইল। অতঃপর সেখান হইতে ফিরিয়া নিজের পকেট হইতে একটা দীনার বাহির
করিয়া উহাকে ভাঙ্গাইয়া অর্ধেক নিজে রাখিল ও বাকী অর্ধেক ফকীরকে কর্জ দিয়া বলিল ইহা
দ্বারা প্রয়োজন মিটাও। আবার তোমার হাতে পয়সা আসিলে আমার পয়সা আমাকে দিয়া দিও। রাত্রি
বেলায় সেই লোকটি কবরওয়াকে স্বপ্নে দেখিল যে সে বলিতেছে আমি তোমার যাবতীয় অভিযোগ শুনিয়াছি
কিন্তু বলিবার অনুমতি দেওয়া হয় নাই। তুমি আমার ঘরে গিয়া পরিবারস্থ লোকদিগকে বল ঘরের
অমুক অংশে যেখানে চুলা রহিয়াছে, উহার নীচ একটা চীনা বরতনে পাঁচ শত আশরাফী রহিয়াছে তাহারা
যেন উহা উঠাইয়া সেই ফকীরকে দিয়া দেয়। ভোর বেলায় সেই কবরওয়ালার বাড়ীতে গেল ও তাহাদিগকে
তাহার স্বপ্নের কথা শুনাইল। তাহারা বাস্তবিকই সেখান হইতে পাঁচশত আশরাফী উঠাইয়া ফকীরকে
দিয়া দিল। লোকটি বলিল ইহা একটি স্বপ্ন মাত্র। শরীয়ত মতে ইহাতে আমল জরুরী নয়। তোমরা
ওয়ারিশ হিসাবে ইহা তোমাদের হক্ব। তারা বলিল, বড়ই লজ্জার ব্যাপার, তিনি মৃত হইয়া দান
করিতেছেন আর আমরা জীবিত হইয়াও দান করিব না? অতএব সে টাকা লইয়া ফকীরকে দিয়া দিল ফকীর
সেখান হইতে একটা দীনারের অর্ধেক নিজে রাখিল ও অর্ধেক তাহার ঋণ পরিশোধ করিল, তারপর বলিল
আমার জন্য একদীনারই যথেষ্ট বাকীগুলি দিয়া আমি কি করিব? সে ঐ গুলি ফকীরদের মধ্যে বণ্টন
করিয়া দিল। ছাহেবে এতহাফ্ বলেন, এখানে চিন্তা করিবার বিষয় এই যে সবচেয়ে বড় দাতা হইল
কে? কবর ওয়ালা না তার ওয়ারিশান? না ফকীর? আমাদের নিকটতো ফকীরই সবচেয়ে বড় দাতা, সে যেহেতু
নিজে ভীষন অভাব গ্রস্থ হওয়া সত্ত্বেও অর্ধেক দীনারের বেশী নিল না।”
ফাজায়েলে সাদাকাত
২য় খণ্ড-৩৯৩ পৃঃ।
এইরকম - অসংখ্য
ভুয়া শিরকি কাহিনী দিয়ে তাবলীগ জামাতের লোকেরা তালীম করে আর নিজেদেরকে হক্ক দাবী করে।
______________________
পীর, ফকির –
পীর ফকিরেরা “আল্লাহর ওয়ালী” দাবী করে তার মুরীদদের জান্নাতে নেওয়ার গ্যারান্টি দেয়!
তারা গায়েব জানে, তাদের কবরের আযাব থেকে বাচাবে, ঈমানের সহিত মৃত্যু হবে, কেয়ামতে জান্নাতে
নিয়ে যাবে – এইরকম মিথ্যা ধোকা দিয়ে সাধারণ সরলমনা লোকদের মুরীদ বানায় আর তাদেরক কাছ
থেকে কোটি কোটি টাকা খায়!
অনেকে বলে হাক্কানী
পীর ভালো, ভণ্ড পীর খারাপ!
হাক্কানী পীরেরাই
সূফীবাদ নাম দিয়ে জঘন্য শিরকি কুফুরি কথা-বার্তা বলে, মানুষের মাঝে প্রচার করে, জান্নাতের
গ্যরান্টি দেয় মুরীদদের, বাশ ধরে নাচা, বাশের উপরে উঠে বানরের মতো ঝুলে থাকে আর দাবী
করে এইভাবে নাকি তারা মাওলাকে পেয়ে গেছে…হাক্কানী পীরদের মাঝেই এতো ভন্ডামি তাহলে চিন্তা
করে দেখুন, ভন্ড পীরেরা কত বড় ভন্ড!
তথাকথিত এক
হাক্কানী পীর চরমোনাই সম্পর্কে জানতে এই পোস্ট দেখুন –
সর্বশেষঃ আমাদের
করণীয় – আমাদের উচিত নির্ভরযোগ্য আলেম দ্বীনদের কাছ থেকে সত্যিকারে দ্বীন শেখা, কুরান
ও হাদীস শিক্ষা করা, সেই অনুযায়ী জীবন গড়ার জন্য সর্বাত্বক চেষ্টা করা, সমস্ত প্রকার
শিরক, বেদাত, পাপাচার ও ভ্রান্ত ফেরকা বা দলগুলো থেকে দূরে থাকা। আল্লাহ আমাদের সকলে
সেই তোওফিক দান করুন – আমিন।