রবিবার, ১১ মে, ২০১৪

ঈমানের শাখা সমূহ কি কি?



ঈমানের শাখা সমূহ কি কি?
_______________________

প্রশ্নঃ আলেমগণ ঈমানের যে সমস্ত শাখা বর্ণনা করেছেন তার সারাংশ বর্ণনা করুন।

উত্তরঃ  ইবনে হিব্বান (রহঃ) কর্তৃক বর্ণিত ঈমানের শাখাগুলো হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফতহুল বারীতে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন।

এই শাখাগুলো তিন প্রকার। যথাঃ
১. এমন কিছু শাখা আছে যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত।
২. কিছু শাখা আছে যা জবানের সাথে সম্পৃক্ত এবং
৩. এমন কিছু শাখা রয়েছে, যা শরীরের সাথে সম্পৃক্ত।

প্রথমত, অন্তরের কাজসমূহঃ
নিয়ত ও বিশ্বাস হচ্ছে অন্তরের কাজ। ঈমানের যেসমস্ত শাখা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত তার সংখ্যা ২৪টি। নিম্নে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হল।
১. আল্লাহর প্রতি ঈমান। আল্লাহর যাত (স্বত্তা), সিফাত (গুণাবলী) এবং একত্ববাদের প্রতি ঈমান আনয়নও আল্লাহর প্রতি ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। তবে স্মরণ রাখা জরুরী যে, আল্লাহ্ স্বীয় সত্বা ও গুণাবলী কোন সৃষ্টির মত নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر
“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি শুনেন এবং দেখেন।”
সূরা শুরাঃ ১১।
২. এই বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য সকল বস্তুই ধ্বংসশীল।
৩. এমনিভাবে আল্লাহর ফেরেশতা
৪. আসমানী কিতাব
৫. নবী-রাসূল
৬. তাকদীরের ভাল ও মন্দ এবং
৭. আখেরাতের প্রতি ঈমান। কবরের প্রশ্নোত্তর, পুনরুত্থান, হিসাব, আমলনামা প্রদান, মীযান (দাঁড়িপাল্লা), পুলসিরাত, জান্নাত এবং জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়ন করাও অন্তরের কাজ সমূহের অন্তর্ভূক্ত।
৮. আল্লাহকে ভালবাসা, আল্লাহর জন্যেই কাউকে ভালবাসা, আল্লাহর জন্যেই কাউকে ঘৃণা করা।
৯. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসা ও তাঁকে সম্মান করাও অন্তরের কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর দরূদ পাঠ ও তাঁকে ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন তার অন্তর্ভূক্ত।
১০. তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা
১১. একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর এবাদত করা আবশ্যক-এর প্রতি ঈমান আনয়নও অন্তরের কাজের অন্তর্ভূক্ত। “রিয়া” তথা লোক দেখানো আমল ও মুনাফেকী পরিহার করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
১২. তাওবা করা
১৩. আল্লাহকে ভয় করা
১৪. আল্লাহর রহমতের আশা রাখা
১৫. আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
১৬. ওয়াদা বা অঙ্গিকার পূর্ণ করা
১৭. ধৈর্য ধারণ করা
১৮. তাকদীরের লিখনের উপর সন্তুষ্ট থাকা
১৯. আল্লাহর উপর ভরসা করা
২০. বিনয়-নম্রতা প্রদর্শ করা, বড়কে সম্মান করা ও ছোটকে স্নেহ করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
২১. অহঙ্কার ও তাকাব্বরী বর্জন করা
২২. হিংসা বর্জন করা
২৩. কাউকে ঘৃণা না করা এবং
২৪. ক্রোধ বর্জন করা।

দ্বিতীয়ত, জবানের কাজসমূহ তথা জবান দ্বারা উচ্চারিত শব্দ ও বাক্যসমূহঃ
ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক জবানের সাথে তার সংখ্যা হল সাতটি। যথা-
১. তাওহীদের বাক্য অর্থাৎ মুখে “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্” উচ্চারণ করা
২. কুরআন তেলাওয়াত করা
৩. ইলম শিক্ষা করা
৪. অপরকে ইলম শিক্ষা দেয়া
৫. দু’আ করা
৬. যিকির করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করাও এর অন্তর্ভূক্ত
৭. অযথা কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকা।

তৃতীয়ত, শরীরের কাজসমূহঃ
ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক শরীরের সাথে, তার সংখ্যা হল ৩৮টি। এ শাখাগুলো আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা-

ক. কতিপয় শাখা ব্যক্তি বিশেষের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা পনেরটি। যথা-
১. বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা অর্জন করা
২. মিসকীন ও অসহায়কে খাদ্য দান করা
৩. মেহমানকে সম্মান করা
৪. ফরজ রোজা পালন করা
৫. নফল রোযা পালন করা
৬. ইতেকাফ করা
৭. লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা
৮. হজ্জ পালন করা
৯. উমরা পালন করা
১০. কাবা ঘরের তাওয়াফ করা
১১. দ্বীন ও ঈমান নিয়ে টিকে থাকার জন্যে হিজরত বা দেশ ত্যাগ করা
১২. দ্বীন ও ঈমান বাঁচানোর জন্যে কাফের রাষ্ট্র ত্যাগ করে ইসলামী রাজ্যে চলে যাওয়া
১৩. মানত পূর্ণ করা
১৪. ঈমান বৃদ্ধির চেষ্টা করা ও
১৫. কাফফারা আদায় করা।

খ. কতিপয় শাখা আছে, যা ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা মোট ৬টি। যথা-
১. বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র পবিত্র রাখা
২. পরিবারের জন্য ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা
৩. পিতা-মাতার সেবা করা, তাদের অবাধ্য না হওয়া
৪. সন্তান প্রতিপালন করা
৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
৬. মনিবের প্রতি অনুগত থাকা ও অধীনস্তদের সাথে নরম ব্যবহার করা।

গ. এমন কতিপয় শাখা রয়েছে,যা সকল মুসলমানের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা হচ্ছে ১৭টি। যথা-
১. ইনসাফের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করা
২. মুসলিম জামাআতের অনুসরণ করা,
৩. শাসকদের আনুগত্য করা
৪. মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেয়া। বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
৫. সৎকাজে পরস্পর সহযোগিতা করা, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজের নিষেধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
৬. “হুদুদ” বা দণ্ডবিধি কায়েম করা।
৭. আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা ও ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়াও জেহাদের অন্তর্ভূক্ত।
৮. আমানত আদায় করা এবং গণীমতের মালের পাঁচভাগের একভাগ আদায় করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
৯. ঋণ পরিশোধ করা
১০. প্রতিবেশীকে সম্মান করা
১১. মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করা
১২. হালালভাবে সম্পদ উপার্জন করা এবং বৈধ পন্থায় তা খরচ করা এবং অপচয় না করা
১৩. সালামের উত্তর দেয়া
১৪. হাঁচি দানকারীর উত্তর প্রদান করা
১৫. মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা
১৬. খেলা-তামাশা থেকে বিরত থাকা ও
১৭. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিষ সরিয়ে দেয়া।

এই হল ঈমানের ৬৯টি শাখা। কতিপয় শাখাকে অন্য শাখার সাথে একত্রিত গণনা না করে আলাদাভাবে হিসাব করলে ৭৭টি হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

উৎসঃ কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে দু শতাধিক প্রশ্নোত্তরে নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদা শীর্ষক কিতাব থেকে (প্রশ্ন নং-১৫৮)।
লেখকঃ হাফেজ হাকামী (রহঃ)

অনুবাদকঃ আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানী