!!! কুর'আন হাদিসের আলোকে শবে মিরাজ উদযাপনের হুকুম !!!
শবে মিরাজের উদযাপন হুকুমঃ
নিঃসন্দেহ ইসরা ও মিরাজ আল্লাহর নিদর্শন সমূহের মধ্যে বড় একটি নিদর্শন। যা রাসূল (সঃ) সত্যতা ও তাঁর আল্লাহ্র নিকট প্রিয় পাত্র হওয়ার বড় প্রমাণ। সঙ্গে সঙ্গে এর দ্বারা আল্লাহর অসীম কদুরত এবং তিনি যে সৃষ্টি কুলের ওপরে রয়েছেন তাও প্রমাণিত হয়।
আল্লাহ্ তাআ’লা বলেনঃ
سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَى بِعَبْدِهِ لَيْلاً مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ البَصِيرُ
“পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্ত্বা তিনি, যিনি তার বান্দাকে রাত্রি বেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম (কাবা) থেকে মসজিদে আকসা(১) পর্যন্ত যার চার দিকে আমি পর্যাপ্ত বরকত দান করেছি যাতে আমি তাঁকে কুদরতের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দেই। নিশ্চয়ই তিনি পরম শ্রবণকারী ও দর্শনশীল।”
সূরা বনী ইসরাঈল আয়াতঃ ১।
(১) ফিলিস্তীনে অবস্থিত বাইতুল মাকদিস, যা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল।
মুতাওয়াতির বা বহু বর্ণনা কারীর সূত্রে প্রমাণিত যে, রাসূল (সঃ) আকাশ ভ্রমণ করেছেন। তাঁর জন্য আকাশ সূমহের দরজা খুলে দেয়া হয়, তিনি সপ্তম আকাশ অতিক্রম করেন, অতঃপর তাঁর রব তাঁর সাথে কথা বলেন এবং ওপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেন।
প্রথমত আল্লাহ্ তা'আলা পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করেন, অতঃপর আমাদের নবী মুহাম্মদ (সঃ) সালাত সংখ্যা কমানোর জন্য আল্লাহ্র নিকট বারবার দরখাস্ত করেন, যার ফলে তিনি পাঁচ ওয়াক্ত সালাত চূড়ান্ত করে দেন। আল্লাহ্ তা'আলা আরো ঘোষণা দেন যে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ, তবে প্রতিদিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত সালাতের বরাবর দেয়া হবে, কারন প্রত্যেক নেকীর বদলা তার দশগুন করে দেয়া হয়।
প্রথম কথা হচ্ছে, ইসরা ও মিরাজ কোন রাতে সংঘটিত হয়েছিল সহিহ হাদিসে তার নিদিষ্ট তারিখের কোন বর্ণনা নেই। যা রয়েছে তা আবার মুহাদ্দিসীনের কিরামের নিকট প্রমাণিত নয়।
মিরাজের তারিখ নিদিষ্ট না থাকার পেছনে আল্লাহর বিরাট রহস্য ও হিকমত রয়েছে। দ্বিতীয়ত, এর তারিখ নির্ধারণ থাকার পেছনে ধর্মীয় কোন ফায়দা ছিল না, আর না থাকতে কোন ক্ষতিও নেই। কারন এ রাতে নিদিষ্ট কোন ইবাদত বা এ রাতকে গুরুত্ব প্রদান করার কোন বিধান ইসলামে নেই। নবী (সঃ) ও তার সাহাবা (রাঃ) আনহুম এ রাতে কোন অনুষ্ঠান উদযাপন করেননি। যদি শবে মিরাজ উদযাপন সওয়াব বা বৈধ কাজ হত তবে অবশ্যই রসূল (স) তা করতেন এবং উম্মতকে তা বলে যেতেন। তার সাহাবায়ে কেরাম আমাদের পর্যন্ত তা পৌঁছে দিতেন। কারন, সাহাবায়ে কেরাম নবী (স) থেকে প্রমাণিত উম্মতের প্রয়োজন সব কিছুই নফল করেছেন, এ ব্যাপারে তাঁরা সামান্য শিথিলতা প্রদর্শন করেননি। আরেকটি বিষয় প্রণিধান যোগ্য যে, সাহাবায়ে কেরাম কল্যাণের ব্যাপারে আমাদের চেয়ে অনেক অগ্রগামী ছিলেন, যদি শবে মিরাজ উদযাপন শরিয়ত সম্মত হত, তবে সে ব্যাপারে তাঁরাই সবার আগে থাকতেন।
অতএব, শবে মিরাজের ওপর গুরুত্ব প্রদান, শবে মেরাজ উদযাপন ইত্যাদি ইসলামের অন্তভুর্ক্ত হলে রসূল (স) অবশ্যই তা উম্মতের নিকট পৌঁছে দিতেন।যেহেতু তিনি তা করেননি, তাই প্রমাণিত যে, শবে মিরাজের আনুষ্ঠানিকতা ইসলামি কোন বিষয় নয়। আল্লাহ্ তা'আলা এ উম্মতের জন্য তাদের দীনকে পরিপূর্ণ করেছেন ও অফুরন্ত নেয়ামত দিয়েছেন এবং এ দীনের মধ্যে যে ব্যাক্তি নতুন কিছু প্রবর্তন করবে যার তিনি অনুমোদন দেননি তাকে তিনি অপছন্দ করেন। আল্লাহ্ তা'আলা বলেন ---
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلاَمَ دِينًا
“আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।”
সূরা মায়েদা আয়াত -৩
আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেন –
أَمْ لَهُمْ شُرَكَاء شَرَعُوا لَهُم مِّنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَن بِهِ اللَّهُ وَلَوْلَا كَلِمَةُ الْفَصْلِ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ وَإِنَّ الظَّالِمِينَ لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“তাদের কি এমন শরীক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্যে সে ধর্ম সিদ্ধ করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি ? যদি চুড়ান্ত সিন্ধান্ত না থাকত, তবে তাদের ব্যাপারে ফয়সালা হয়ে যেত। নিশ্চয় যালেমদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।”
সূরা শূরা আয়াত - ২১
আল্লাহ্ তা'আলা অন্য আয়াতে বলেন –
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
“নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রসূলের আনুগত্য কর যাতে তোমরা অনুগ্রহ প্রাপ্ত হও।”
সূরা নূর আয়াত -৫৬
আল্লাহ্ তা'আলা আরো বলেন –
مَّنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللّهَ وَمَن تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا
“যে লোক রসূলের হুকুম মান্য করবে সে আল্লাহরই হুকুম মান্য করল। আর যে লোক বিমুখতা অবলম্বন করল, আমি আপনাকে (হে মুহাম্মদ), তাদের জন্য রক্ষণাবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি।”
সূরা নিসা আয়াত -৮০
তাই আমাদের সবাইকেই রাসূল (স) এর দিকে ফিরে যেতে হবে যাদি তা না করি তাহলে রাসূল (স) এর বিরুদ্ধতা করা হলো যা নিকৃষ্ট বিদা'আত হবে কারন রাসূল (স) তার সম্মানিত সাহাবায়ে একরামরা শবে মেরাজ পালন করেন নাই।
এই
ব্যাপারে রাসূল (স) সহিহ হাদিস
দ্বারা প্রমাণিত যে, বিদা'আত মাত্রই গুমরাহী বা ভ্রষ্ঠতা। রাসূল (স) এ থেকে বিরত থাকার জন্য কাঠোর হুশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
বিদআতের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে আমরা আরও ভয়াবহ চিত্র দেখতে পাব।
বিদআত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা) এরশাদ করেন।
من
أحدث في أمرنا هذا ما ليس منه فهو رد- صحيح البخاري
“যে ব্যক্তি আমার এই দীনের মাঝে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তা প্রত্যাখ্যাত।”
তিনি (সঃ) আরও বলেন,
كل
بدعة ضلالة وكل ضلالة في النار-
“প্রত্যেকটি নব উদ্ভাবিত জিনিষই পথভ্রষ্টতা আর পথভ্রষ্টতা দোজখের দিকে নিয়ে যায়।”
বোখারী / মুসলিম।
কারণ আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তাআলা স্পষ্টভাবে এটা করতে নিষেধ করেছেন।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন –
“যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিষ্কার করবে বা কোন নবাবিষ্কারকারীকে আশ্রয় দিবে তার উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ……. তার ফরয ইবাদাত বা তাওবাহ , নফল ইবাদাত বা ফিদইয়া কবুল করা হবে না ….।”
বুখারী কিতাবুল জিযিয়াহ হাদিস নাম্বার -৩১৮০ ।
বিদআত পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত বিদআতীর কোন প্রকার তওবাহ করার সুযোগ জুটবে না –
“আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিদআতির বিদআতকে পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তওবার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন।” –
সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ১/১৩০ পৃষ্টা হাদীস নং ৫৪
বিদআতী নবী (সাঃ) এর হাওযে কাওসারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে আবু হাসেম হতে বর্ণিত , তিনি বলেন আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছেন ,
“আমি তোমাদের পূর্বেই হাওযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না । কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে , আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে । অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে । রাসূল (সাঃ) বলবেন - তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত । তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে । তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো --দূর হয়ে যা , দূর হয়ে যা।”
সহীহ মুসলিম হাদিস নাম্বার -৪২৪৩ ।
বিদআত সৃষ্টিকারী তার নিজের ও তার অনুসরণকারী বিদআতের সাথে জড়িত প্রত্যেক ব্যক্তির সমপরিমাণ গুনাহের অংশীদার হবে -- রাসূল (সাঃ) বলেছেন –
“যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে আহবান করবে সে তার গুণাহ ও তার অনুসাররি গুণাগ বহন করবে । অনুসরণকারীদের গুণাহ সমূহে সামান্য পরিমাণ ঘাটতি না করেই।”
বুখারী ও মুসলিম।
কোন সন্দেহ নেই বিদআতের দিকে আহবান করা বা তার উপর আমল করা পথভ্রষ্টতারই একটি অংশ। কারণ রাসূল (সাঃ) বলেছেন – “সব বিদআতই হচ্ছে পথভ্রষ্টতা।”
রাসূল (স) এর সাহাবাগণ এবং তাঁদের পর সালাফে সালেহিনগণ বিদা'আত থেকে বিরত থাকার জন্য হুশিয়ারি উচ্চারণ ও ভীতি প্রদর্শন করেছেন। মূলত বিদা'আত দীনের মদ্ধে অতিরঞ্জন এবং আল্লাহ দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি ও নয়া জিনিসের উদ্ভাবন মাত্র। যার কারণে দীন ইসলামের ওপর অসম্পূর্ণ তার অপবাদ বর্তায়। আর এটাই হচ্ছে বড় ধরনের ফাসাদ ও জঘন্য অপরাধ এবং আল্লাহ্র বাণী اليوم اكملت اكم دينكم এর সাথে সাংর্ঘষিক ও বিদা'আতের ভয়াবহতায় বর্ণিত হাদিস সমূহের বিরুদ্ধাচারণ।
আশা করি সত্যান্বেষীর জন্য শবে মিরাজ উদযাপন বাতুলতা প্রমাণ হওয়ার জন্য উপস্থাপিত এসব প্রমাণাদীই যথেষ্ট। শবে মেরাজের ঘঠনার বিস্তারিত জানতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত সহিহ বোখারী ৬ষ্ঠ খন্ড হাদিস নাম্বার দেখুন -৩১০৬/৩৬০৮
সবশেষে কিছু কথা বলতে চাই- - আল্লাহ্ তা'আলা মুসলমাদের পরস্পর কল্যাণকামী হতে ও অবিকৃতভাবে তাঁর দীন প্রচার করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বরং তাঁর রাসূল (স) মাধ্যমে বলে দিয়েছেন যে, দীন ইলম গোপন করা হারাম। তাই লেখক দেশে দেশে প্রচলিত বিদা'আত থেকে মুসলমানদের সর্তক করা প্রয়োজন মনে করছেন।
আল্লাহর নিকট প্রার্থনা, তিনি যেন সমস্ত মুসলমাদের অবস্থা সংশোধন করেন, দীনের সঠিক জ্ঞান দান করেন এবং সকল প্রকার বিদা'আত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করেন। আমিন।
আল্লাহ্ তাঁর বান্দা ও রাসূল (স), আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর বংশধর ও সাহাবিগণের প্রতি দরুদ,সালাম ও বরকত দান করেন।আমীন
Collected from Md Asad