দুঃখ-কষ্ট ও বিপদ-আপদ স্পর্শ
করেছে? চিন্তা করছেন, কি পাপ করেছিলাম??
শুনে রাখুন, আপনার পাপ
থাকুক আর না থাকুক - প্রতিটা ঈমানদারকে পরীক্ষা করা হবে, কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী
তা প্রমান করে দেওয়ার জন্যঃ
আ’উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম। বিসমিল্লাহির-রাহ’মানির রাহীম।
আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি
মনে করে যে, আমরা বিশ্বাস করি একথা বলেই তারা পার পেয়ে যাবে, এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা
হবে না? আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন
যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে। সুরা আন-কাবুতঃ ১-৩।
দুনিয়াতে নেককারদের জন্য
পরীক্ষা অনেক বড় হতে পারে, এমনকি দেখুন নবী রাসূল ও তাঁদের সাথে শ্রেষ্ঠ সংগীরা কিভাবে
আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাতো!
“তোমাদের কি এই ধারণা যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাবে, অথচ তোমরাতো সেই লোকদের অবস্থা
এখনো অতিক্রম করনি, যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট,
আর এমনি ভাবে তাঁদেরকে ভয়ে কম্পিত হতে হয়েছে যে, যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল
তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, ‘কখন আসবে আল্লাহর সাহায্যে’! তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্যে অতি নিকটে।”
সুরা
আল-বাক্বারাহঃ ২১৪।
ঈমানদার হলে বিপদ-আপদে
পতিত হলে সে ধৈর্য ধারণ করে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং বিনীত হয়ে তাঁর কাছে সাহায্য চায়,
নিজের অন্তরের মুনাফেকী, আল্লাহ বিমুখতা, অবাধ্যতা, ফাসেকী, দুনিয়ার প্রতি লোভ, পরকালের
প্রতি উদাসীনতা দূর হয়, ঈবাদতের প্রতি যত্নবান হয়। এর দ্বারা ঈমানদারদের আমল সুন্দর
হয়, ইহজীবনে ধৈর্য ধরার মাধ্যমে অন্তরে শান্তি লাভ করে ও পরকালের জন্য বেহিসাব প্রতিদানের
যোগ্য হয়। এইজন্য হাদীসে বলা হয়েছে, বিপদ-আপদও মুমিনদের জন্য কল্যানকর!
অপরদিকে, শুধু মুখে ঈমান
দাবী করা লোকদের যারা গৎবাঁধা নামায রোযা করে যায়, কিন্তু ঈমান যাদের অন্তরে প্রবেশ
করেনি, বিপদে পড়লেই তারা আল্লাহকে ভুলে যায়, আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আর নিজের
দুর্ভাগ্য নিয়ে হা-হুতাশ করে। যার ফলে দুনিয়ার জীবনে সে চরম অসুখী থাকে, পরকালে সে
নাফরমানী করার কারণে কঠিন শাস্তি। এই হচ্ছে অন্তরে মুনাফেকী রেখে মুখে ঈমান দাবী করার
চূড়ান্ত পরিণতি। মূলত তারা যে ঈমানের মিথ্যা দাবী করে, এটা প্রকাশ করে দেওয়ার জন্যই
এই পরীক্ষা। এইভাবে পরীক্ষা করার মাধ্যমে কে সত্যিকারে আল্লাহর প্রতি ঈমানদার, ধৈর্যশীল
ও অনুগত প্রমানিত হয়।
যত বড়ই বিপদ হোক, যত কষ্টের
মাঝেই থাকুন না কেনো, আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা হারাবেন না। তাকিদীরের ভালো মন্দ
– সবকিছুই পরীক্ষা – এইগুলোর জন্য ধৈর্য ধরবেন। কারণ,
“নিশচয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি,
অবশ্যই কষ্টের সাথেইতো
রয়েছে স্বস্তি।”
সুরা ইনশিরাহ।
একজন ‘সালাফ’ (পূর্ববর্তী যুগের আলেম) বলেছেনঃ
“আপনি যদি বিপদে ধৈর্য ধরেন তাহলে বিপদ হবে একবার, কিন্তু ধৈর্য না ধরলে একই বিপদ
আপনার জন্য অনেক বিপদের কারণ হয়ে যাবে। এর ফলে আপনার ইহজীবনের সুখ-শান্তি নষ্ট হলো
ও পরজীবনে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হয়ে দুই দিকের জীবনেই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।”
আর বিপদে পড়লে সবসময় আপনার
থেকে যারা বেশি দুঃখ কষ্টে আছে, বা এমনিতেও সবসময় আপনার থেকে যারা বেশি সমস্যার মাঝে
আছে তাদের দিকে লক্ষ্য করবেন। দুনিয়ার ব্যপারে আল্লাহ যাকে বেশি দিয়েছেন, তাদের দিকে
কখনোই লক্ষ্য করবেন না - তাহলে আপনি আল্লাহর নাশোকরীতে লিপ্ত হবেন।
মনে রাখবেন - দুনিয়ার সুখ-শান্তি,
ভোগ-বিলাস যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন তাকেও দেন, যাকে ভালোবাসেন না তাকেও দান করেন। কিন্তু
আখেরাত আল্লাহ শুধু তাকেই দান করবেন যাকে তিনি ভালোবাসেন। আর সুরা মুতাফফিফিনে বলেছেন,
পরকালের ভোগ বিলাস নিয়েই আমাদের প্রতিযোগিতা করা উচিত…
( 18 ) কখনও না, নিশ্চয় সৎলোকদের আমলনামা আছে ইল্লিয়্যীনে।
( 19 ) আপনি জানেন ইল্লিয়্যীন কি?
( 20 ) এটা লিপিবদ্ধ খাতা।
( 21 ) আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ একে প্রত্যক্ষ
করে।
( 22 ) নিশ্চয় সৎলোকগণ থাকবে পরম আরামে,
( 23 ) সিংহাসনে বসে অবলোকন করবে।
( 24 ) আপনি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে
পাবেন।
( 25 ) তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে।
( 26 ) তার মোহর হবে কস্তুরী। এ বিষয়ে প্রতিযোগীদের
প্রতিযোগিতা করা উচিত।
( 27 ) তার মিশ্রণ হবে তসনীমের পানি।
( 28 ) এটা একটা ঝরণা, যার পানি পান করবে নৈকট্যশীলগণ।