অনেকে প্রশ্ন
করে, গণতন্ত্র না করে মুসলিমরা কিভাবে ক্ষমতায় যাবে?
মুসলিমরা কিভাবে
ক্ষমতায় যাবে প্রশ্ন না করে, আসলে প্রশ্ন করা উচিত বর্তমান মুসলিমরা কি ক্ষমতা (=আল্লাহর
সাহায্য) পাওয়ার যোগ্য?
সিরিয়ায় মুসলিমদের
গণহত্যা করা হচ্ছে, ফিলিস্তিনে বিগত প্রায় ৬৭ বছর ধরেই চলছে মুসলিমদের উপর নির্যাতন
চলছে, ইরাক, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, চেচনিয়া, বসনিয়া, মালি, আফ্রিকান বিভিন্ন দেশে,
ভারতসহ প্রায় সবদেশেই মুসলিমরা আজ নির্যাতিত।
এছাড়াও মুসলিমরা
আজ আল্লাহর অবাধ্য, দ্বীন থেকে বেড়িয়ে অনেকে কাফের মুশরেকদের সাথে মিশে যাচ্ছে। আপনি
দেখে বুঝবেন না, কে গণেশ কার্তিক আর কে হাসান, কে হুসাইন! কে স্বরস্বতী কে আয়িশাহ,
ফাতেমা। নামধারী মুসলিমরা হিন্দুদের মতো কপালে সিদুর, তিলকচিহ্ন পড়ে, ধুতি পড়ে, উল্কি
আকে, শহীদ মিনার স্মৃতি স্তম্ভ বানিয়ে মুশরেদের মতো ইট পাথরের পূজা করে, অলি আওলিয়া
নাম দিয়ে, মাযার বানিয়ে, পীরের পূজা করে এইগুলোকে দেবতার মতো উপাসনা করে…
এইরকম আল্লাহদ্রোহীতার
কারণে মুসলিমদেরকে আল্লাহ বিভিন্ন ভাবে শাস্তি দিচ্ছেন। আমাদের দেশের সাভারে একটা মাত্র
বিন্ডিং ধসে প্রায় ১৫০০র মতো মানুষ মারা গেলো, গত সপ্তাহে আফগানিস্থানে পাহাড় ধসে অল্প
কিছু সময়ের মাঝেই পুরো গ্রামের ২৫০০র বেশি মানুষ নিহত হলো – এইগুলো আল্লাহর গজব – কারণ
মুসলিমদের মাঝে শিরক বেদাত, হারাম, ফাসেকী ঢুকে গেছে। এইভাবে আজাব গজন দিয়ে মুসলিমদের
দ্বীনে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করেন আল্লাহ তাআ’লা।
মহান আল্লাহ
তাআ’লা বলেনঃ
“আল্লাহ কোন
জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন
করে।”
সুরা রা’দঃ
আয়াত ১১।
আল্লাহ তাআ’লা
আরো বলেনঃ
“তোমাদের মধ্যে
যারা ঈমান আনে ও নেককাজ করে, আল্লাহ তাদের সাথে ওয়াদা করেছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে
শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকতৃ্ত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্বে যারা ঈমানদার
ছিলো তাদেররকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ
করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা শুধুমাত্র
আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না।”
সুরা নূরঃ ৫৫।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যখন তোমরা
ঈনা পদ্ধতিতে (ব্যবসা নাম দিয়ে কৌশলে সুদ খাওয়ার একটা পদ্ধতি) কেনা-বেচা করবে, গরুর
লেজ আকড়ে থাকবে (অর্থাৎ পশু পালনে বেশি মনোযোগী হয়ে যাবে), কৃষিকাজ নিয়েই সন্তুষ্ট
থাকবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তোমাদের উপর অপমান চাপিয়ে দেবেন। যতক্ষণ
পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের “দ্বীনে” প্রত্যাবর্তন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে
সেই অপমান উঠিয়ে নেওয়া হবেনা।”
হাদীসটি সহীহ,
সিলসিলাতুল আহা’দীস আস-সহীহা’হঃ ১১।
সুতরাং দেখা
যাচ্ছে যে, বর্তমানে মুসলিমদের উপর যে দুঃখ দুর্দশা এসেছে, যে লাঞ্চনা-গঞ্জনা, কাফেরদের
পক্ষ থেকে নির্যাতন ও অপমানের শিকার হচ্ছে মুসলিমরা প্রতিনিয়ত, বিভিন্ন আসমানী জমীনের
বালা মুসীবত আসছে মুসলিমদের উপরে, যেমন -
১. ইন্দোনেশিয়াতে
সুনামিতে লক্ষাধিক মানুষ পানিতে ডুবে নিহত
২. বাংলাদেশের
সাভারে বিন্ডিং ধ্বসে ~১৫০০র মতো নিহত
৩. আফগানিস্তানে
ভূমিধ্বসে নিমিষের মাঝে ~২৫০০র মতো মাটিচাপা পড়ে নিহত
৪. বার্মা,
ভারতের গুজরাট, আসাম, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে, মিশর, সিরিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের
মুসলিমদের গণহত্যা, খুন, ধর্ষণ, বাড়ি থেকে উচ্ছেদ ইত্যাদি
এসবই হচ্ছে
মুসলিমদের পাপের ফসল। মুসলিমদেরকে আল্লাহ তাআ’লা বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন
(আল্লাহর ইবাদত করা, মানুষকে সেইদিকে আহবান করা…) সেটা তারা করছেনা – এরফলে তাদের উপর
অপমানের বোঝা চাপিয়ে দিয়েছেন আল্লাহ। এই অপমানের ও আজাবের শিকার হয়েও যারা নিজেদের
সংশোধন করবেনা, পাপাচার ও অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকবে, আল্লাহ তাদের কাছ থেকে দ্বীনকে কেড়ে
নিয়ে তাদের পরিবর্তে অন্য জাতিকে আনবেন। যেমনটা আমরা দেখতে পাই, আন্দালুস বা স্পেনে।
এক সময় সেখানে মুসলিমদের রাজত্ব ছিলো, কিন্তু সেখানকার মুসলিমরা দ্বীনকে ভুলে দুনিয়াকে
নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে, ইমাম ইবনে হাজম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, মুসলিম সমাজের অবস্থা এতো
খারাপ হয়েগেছিলো যে, মেয়েরা প্রকাশ্যে তাদের কপালে টাকার অংক লিখে রাখতো। একের পর এক
মুসলিম দেশের পতন হচ্ছিলো – মুসলিমরা আল্লাহর দ্বীনে ফিরে না এসে পাপাচারে লিপ্ত ছিল।
তাদের আল্লাহদ্রোহীতা ও সীমা লংঘনের জন্য দেখুন – আজকে স্পেনে স্থানীয় মুসলিম নেই বললেই
চলে, সেখানকার মসজিদগুলো হয়ে গেছে যাদুঘর!
আজকে বাংলাদেশসহ
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করে দেখুন –
১. কোটি কোটি
মানুষ কবর মাযার পূজা, পীর পূজায় লিপ্ত। সূফীবাদের শিরক, বেদাত ও কুসংস্কারে ডুবে আছে
গোটা সমাজের লোকেরা। এমন অনেক মুসলমান আছে যাদের আকীদা আসলে কাফের মুশরেকদের মতোই।
যেমনটা রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, আমার উম্মতের একটা অংশ মুশরেকদের সাথে মিশে যাবে, তারা
মূর্তি পূজা করবে।
২. দেশ চলে
হয় খ্রীস্টান আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র, নয়তো নাস্তিক কার্ল মার্ক্স, লেলিন এর সমাজতন্ত্র,
জাতীয়তাবাদ সহ বিভিন্ন ইসলামবিরোধী মানবরচিত মতবাদ, আইন ও সংবিধান দিয়ে (আল্লাহর আইনের
বিপরীতে মানব রচিত আইন=কুফুরী, শিরক)।
৩. অধিকাংশ
মানুষই হচ্ছে বেনামাযী (বেনামাযী=কাফের)।
৪. রাস্তাঘাটে,
প্রত্যেকে মোড়ে মোড়ে সুদী ব্যংক বা এনজিওর ব্রাঞ্চ। (সুদখোর=আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে
যুদ্ধে লিপ্ত)।
৫. রাস্তা-ঘাটে
প্রকাশ্যে খুন করছে অত্যাচারী, জালেম সম্প্রদায় কোন বিচার নেই, আইন আদালাত নেই।
৬. বেহায়া,
বেপর্দা, অর্ধনগ্ন নারী যারা পতিতা শ্রেণী নারীদেরকে (দেশি-বিদেশী নায়িকা, গায়িকা)
অনুকরণ করে (জীবনযাত্রা, চালচলন, পোশাক আশাকে)।
৭. স্কুল কলেজ,
অফিস রাস্তা-ঘাটসহ পুরো সমাজ ব্যবস্থায় জিনা ব্যভিচার, পরকীয়া, অশ্লীলতার ব্যপকতা।
যতদিন পর্যন্ত
না, মুসলিমরা নিজেদের সংশোধন করে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করে ততদিন পর্যন্ত তাদের সমস্যার
সমাধান হবে না। আবার একশ্রেণীর মানুষ যেটা মনে করে, দ্বীন প্রতিষ্ঠ মানে শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে
ইসলামী আইন চালু করা – না, কুরান হাদীসে শুধু খলিফা, সুলতান, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীকে
সংশোধন করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে – জাতির পরিবর্তন, মুসলিম
জাতিকে দ্বীনে ফিরে আসা।